বস্ত্র ছাপা ও রংকরণ

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - | NCTB BOOK

বস্ত্রশিল্পে ছাপা রংকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারখানায় যখন বস্ত্র প্রস্তুত হয় তখন তাকে গ্রে ফেব্রিক বলে। সত্যিকার অর্থে এরূপ কত্র সরাসরি বাজারে খুব একটা ছাড়া হয় না। বত্রে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ছাপা রংকরণের পর বাজারজাত করা হয়। এতে করে বস্ত্রের আকর্ষণ ক্ষমতা ব্যবহার উপযোগিতা বৃদ্ধি পায়। রুচি প্রকাশের জন্য বস্ত্রের উপর স্থান বিশেষে বিভিন্ন রং প্রতিফলিত করার প্রণালিকে বস্ত্র ছাপা বলে। পদ্ধতিতে কাপড়ের উপর রং বেরং এর নকশা তৈরি করে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তোলা হয়। ব্লক, বাটিক, স্ক্রিন, স্টেনসিল, রোলার ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতিতে বরে ছাপার কাজ করা যেতে পারে। অন্যদিকে রংকরণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কাপড়টি রঙের দ্রবণে ডুবিয়ে সব জায়গায় সমানভাবে রং লাগিয়ে দেওয়া হয়। রংকরণের প্রক্রিয়াটি কর তৈরির পূর্বে অর্থাৎ তত্ত্ব বা সুভার মধ্যেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। আবার অনেক সময় টাই-ডাই পদ্ধতিতে সুকৌশলে কাপড়টি বেঁধে রঙের দ্রবণে ডোবালেও সুন্দর একটি নকশা কাপড়ে ফুটিয়ে তোলা যায়

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :

সুমনা তার ঈদের জামাটিতে ব্লক ছাপা করবে বলে ১” পুরু বাবলা কাঠ বাছাই করল। এবং নিম্নের রঙের মিশ্রণ তৈরি করল। এরপর ইচ্ছামতো নকশা করার জন্য কাজ শুরু করল। কিন্তু ছাপার মান আশানুরূপ

হলো না।

 

প্রুসিয়ান রং          : ৬%

ফুটন্ত গরম পানি  : ১০%

গলানো গাম         : ৬২%

খাবার সোডা         : ৩%

 

 

 

ক) প্রুসিয়ান রঙের পরিমাণে
খ) ফুটন্ত গরম পানির পরিমাণে
গ) গলানো গামের পরিমাণে
ঘ) খাবার সোডার পরিমাণে
ক) ব্রাশ, পেন্সিল
খ) রং, সূঁচ ও সুতা
গ) রং, প্রিন্টিং, টেবিল
ঘ) কালার ট্রে ও আর্ট পেপার

বস্ত্র ছাপা

বস্ত্রশিল্পে প্রিন্টিং বা ছাপা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কত্রকে আকর্ষণীয় করার এটি অন্যতম গম্বা। কত্র ছাপার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। একজন প্রিন্টার তার প্রয়োজন, সামর্থ্য, পরিবেশ, পরিস্থিতি অনুসারে ছাপার নির্দিষ্ট পদ্ধতি বেছে নেন। বস্ত্র রং করা ছাপার মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে, প্রথমটিতে সম্পূর্ণ করটিকে ধারাবাহিকভাবে একই বর্ণে, একই গাঢ়ত্বে সমভাবে রঞ্জিত করে তোলা হয়। আর ছাপা পদ্ধতিতে বস্ত্রের নির্দিষ্ট স্থানে এক বা একাধিক বর্ণের সমারোহ ঘটিয়ে কত্রটিকে নকশানুযায়ী ফুটিয়ে তোলা হয়।

আবার রং করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মাত্রায় রং নিয়ে, তার সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি বা অন্য কোনো দ্রবণ যোগ করা হয়। ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম ঘনত্বের দ্রবণে মোটামুটি অনেক সময় ধরে বস্ত্রকে নিমজ্জিত রাখা হয়। প্রথম দিকে তাপমাত্রা কম থাকলেও পরবর্তী সময়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করা হয়, যাতে বস্ত্রের সব জায়গায় সমানভাবে রং লাগে। কিন্তু ছাপার বেলায় বেশি ঘনত্বের রঙের পেস্ট ব্যবহার করা হয়।

বস্ত্রের উপরিভাগে শুধুমাত্র নকশাযুক্ত স্থানে প্রয়োগ করা হয়। এরপর দ্রুত শুকিয়ে তাপ বা বাষ্প ব্যবহার করে সেই রংকে বস্ত্রের অভ্যন্তরে নির্দিষ্ট জায়গায় অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে বাকি রং ধুয়ে বের করে ফেলা হয়।

বত্রছাপা রংকরণের প্রণালি ভিন্ন হওয়ার কারণে ছাপার কাজে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় রংকরণের ক্ষেত্রে সেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় না। তবে বত্র ছাপা রংকরণ উভয় ক্ষেত্রেই প্রক্রিয়া শুরুর আগে বস্ত্রের মাড় দূর করে, ধুয়ে, ইস্ত্রি করে নিতে হয়।

কাজ - বস্ত্র রংকরণ ছাপার পার্থক্য উল্লেখ কর।

প্রকৃতপক্ষে বস্ত্র ছাপা রংকরণ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত মূল উপকরণ হচ্ছে রং। আর রঙের সাহায্যে বস্ত্ৰকে আকর্ষণীয় করার ক্ষেত্রে ব্লক ছাপা, টাইডাই ছাপ বাটিক ছাপা উল্লেখযোগ্য।

Content added By

ব্লক ছাপা

সত্যিকার অর্থে কত্র ছাপার ইতিহাসে সর্বপ্রথম যে কৌশল বা উপকরণ অবলম্বন করা হয়েছিল তা হচ্ছে ব্লক। অন্যান্য প্রিন্টিং পদ্ধতির পাশাপাশি ব্লক প্রিন্টিং-এর মাধ্যমে আমরা এখনো পরিধানের কাপড়, বিছানার চাদর, টেবিল ক্লথ ইত্যাদি প্রিন্ট করে থাকি এবং আমাদের কুটিরশিল্পে এর জনপ্রিয়তাও অনেক বেশি।

ব্লক তৈরি- ব্লক প্রিন্টে ব্যবহৃত কাঠের ব্লকগুলো - ইঞ্চি বা .০৮১০.১৬ সে.মি. পুরু হওয়া উচিত। নতুবা এরা টেকসই হবে না। ব্লকের আকৃতি যদিও ডিজাইনের উপর নির্ভর করবে, তবে লম্বায় ১২-১৬ ইঞ্চি বা 0.88-80.68 সে.মি. বেশি না হওয়াই ভালো। ব্লক তৈরির জন্য কাঠ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাবলা, গাব, লিনোলিয়াম (শিরীষ) ইত্যাদিকে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে। আলু, ঢেঁড়শ ইত্যাদিও ব্লক প্রিন্টে তাৎক্ষণিক কাজের জন্য ব্যবহার করা যায়।

ডিজাইনের যে অংশ কাপড়ের উপর ফুটিয়ে তুলতে হবে, সে অংশ ব্লকের উপরে উঁচু করে রেখে বাকি অংশ গভীরভাবে কেটে তুলে ফেলতে হবে। এর ফলে কালার ট্রেতে যখন ব্লক ডুবিয়ে কাপড়ে ছাপ দেওয়া হবে, তখন কেবল ডিজাইন যুক্ত অংশেরই রং কাপড়ে ফুটে উঠবে। একই কাপড়ের উপর একাধিক রঙের ডিজাইন ছাপানো যায়। ক্ষেত্রে প্রত্যেক রঙের জন্য নির্দিষ্ট ব্লকের কাজ শেষ করার পর দ্বিতীয় ব্লকের কাজ শুরু করতে হবে।

প্রিন্টিং টেবিল কালার ট্রে প্রস্তুত ব্লক প্রিন্ট এর জন্য পাথর, সিমেন্ট, লোহা, ষ্টিল কিংবা ভালো কাঠের তৈরি মজবুত টেবিল হলে সুবিধা হয়। টেবিলের উপর কয়েক প্রস্থ কম্বল বিছিয়ে তার উপর কোরা কাপড় এমনভাবে পিন দিয়ে আটকিয়ে দিতে হয় যাতে প্রিন্টিংয়ের সময় কাপড় টানটান করে ছড়িয়ে থাকে বা কোনো ভাঁজ সৃষ্টি না হয়। ছাপার রঙের জন্য একটি কালার ট্রে-এর নিচে রাবার ক্লথ দিয়ে আটকিয়ে তার উপর মাপমতো - সে.মি. পুরু ফোমের টুকরা বিছিয়ে দিতে হয়। এবার ফোমের উপর এক টুকরা পশমি কাপড় বা চট বিছিয়ে তার উপর রং প্রয়োগ করে ব্রাশের সাহায্যে রং ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ছাপা কাজের সময় ব্লকটি পশমি কাপড় বা চটে / বার লাগিয়ে প্রকৃত কাপড়ে ছাপ দেওয়া হয়। কাজের শেষে ব্লক ধুয়ে রাখতে হয়

 

রং প্রস্তুত (গ্লসিযান) - ব্লক প্রিন্টিংয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুত রং বাজারে কিনতে পাওয়া যায়, যা বুকে ভালোভাবে লাগিয়ে কাপড়ের উপর ছাপ দিলেই ছাপা হয়ে যায়। তবে রঙের প্রডুত প্রণা না থাকলে নিজের পছন্দমতো রং তৈরি করে কাপড়ে ছাপ দেওয়া যায়। এখানে প্রুশিয়ান পেস্ট তৈরি ও ছাপা পদ্ধি উল্লেখ করা হলো।

পেস্টের উপকরণ ও শতকরা হিসাব

मियांग झर

ফুটন্ত গরম পানি

ইউরিয়া সার

বার সোডা

কাপড় কাচার সোডা

রেজিস্ট স

গ্লিসারিন

পেষ্ট তৈরি – পেস্ট তৈরির ২৪ ঘণ্টা লাগেই মাথা লিটার পানিতে ১ তোলা ফাইন গাম মিশিয়ে রাখতে হয়। এরপর পরিষ্কার পাত্রে হালকা গরম পানিতে রং গুলে ইউরিয়া সার, খাবার সোডা, কাপড় কাচার সোডা, রেজিস্ট সট রঙের সাথে মিশিয়ে তৈরিকৃত গামের সাথে একত্র করে মেশাতে হবে (বর্ষাকালে ইউরিয়া সার ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই)।

প্রিন্টিং পদ্ধতি - পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে ছাকনির সাহায্যে হেঁকে গ্লিসারিন মিশিয়ে কাপড় ফিস্ট করতে হবে। এই পেস্ট দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কাজ করাই উত্তম। কেননা ৪ ঘণ্টা পর এর গুণগত মান নষ্ট হরে বার। খ্রিস্ট করা হয়ে গেলে ছায়ায় এবং কিছুদিন রোদে শুকাতে হবে। প্রুসিয়ান রঙে ব্লক প্রিন্ট করার পর স্টিম ও খোলাই করতে হয়। স্টিমিং-এর জন্য একটি হাঁড়িতে পানি ফুটাতে হবে। এবার চট দিয়ে কাপড়টি ঢেকে হাঁড়ির উপ একটি চালনি বসিয়ে, তার উপর কাপড়টি রেখে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে স্টিমিং করা যেতে পারে।

কাজ- শ্রেণিকক্ষে একটি টেবিল রুথে ব্লক ছাপা করে দেখাও।

Content added By
Promotion