বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বাণিজ্য

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - | NCTB BOOK
5

যোগাযোগ ব্যবস্থা যাত্রী- পণ্য পরিবহণ করে অভ্যন্ত্রীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থনীতিতে কার্যকরী অবদান রাখে। দেশের একস্থান থেকে অন্যস্থানে কাঁচামাল ও লোকজনের নিয়মিত চলাচল, উৎপাদিত দ্রব্যের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ, উৎপাদনের উপকরণসমূহের গতিশীলতা বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা আনয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করে থাকে। এই যোগ ব্যবস্থা প্রতাশিত করে বাণিজ্যকে। বাণিজ্য দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা কৃষি  শিল্প প্রভৃতির ভারসাম্য আনে ।

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

কয়লা, সিমেন্ট, ডিজেল
সাইকেল, রেডিও, ঘড়ি
কাচ, মোটরগাড়ি, রবার
পাট, চা, চামড়া

পরিবহন ব্যবস্থা (Transport System)

3

পরিবহন ব্যবস্থা বলতে আমরা বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগের মাধ্যমে এবং মালপত্র ও লোক চলাচলের মাধ্যমকে বুঝি।

বাংলাদেশের যাতায়াত ব্যবস্থা ৩ ধরনের । যথাঃ ১। স্থলপথ ২। জলপথ ৩। আকাশপথ । স্থলপথকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা হয় । ক) সড়কপথ ও খ) রেলপথ
সড়কপথ হচ্ছেঃ জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও কাঁচা সড়ক । রেলপথ হচ্ছে ঃ মিটারগেজ, ব্রডগেজ ও ডুয়েলগেজ । জলপথকেও ২ ভাগে ভাগ করা হয় । ক) নৌপথ খ) সমুদ্রপথ
 

সড়কপথ (Roads)

উৎপাদিত কৃষিপণ্য বণ্টন, দ্রুত যোগাযোগ ও বাজার ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সড়কপথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রেলপথের মাধ্যমে যোগাযোগ সব স্থানে সম্ভব না তাই সড়কপথ থাকা প্রয়োজন। সড়কপথ গড়ে ওঠার জন্য নিম্নোক্ত ভৌগোলিক অবস্থা প্রভাব ফেলে।

 অনুকূল অবস্থা            সড়কপথ                প্ৰতিকূল অবস্থা        

                                                সড়কপথ গড়ে ওঠার অনুকূল অবস্থা

 সমতলভূমি  মৃত্তিকার গঠন   সমুদ্রের অবস্থান ও শিল্পক্ষেত্রের অবস্থান
 সমতলভূমি সড়কপথ গড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এজন্য ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে অনেক সড়কপথ গড়ে উঠেছে।  মৃত্তিকার বুনন যদি স্থায়ী বামজবুত হয় তবে বৃষ্টিতে কম ক্ষয় হয়। শক্ত মৃত্তিকার উপর সড়কপথ গড়ে উঠলে তা স্থায়ী হয় । সমুদ্র উপকূলে বন্দর গড়ে ওঠে। বন্দর ও শিল্পক্ষেত্রকে কেন্দ্র করেও অনেক সড়কপথ গড়ে ওঠে। এজন্য মংলা এবং চট্টগ্রাম ও অন্যান্য শিল্প অঞ্চলে সড়কপথ গড়ে উঠেছে .

                                          সড়কপথ গড়ে ওঠার প্রতিকূল অবস্থা

 বন্ধুর ভূপ্রকৃতি  ভূমির ঢাল  নিম্নভূমি ও নদীপূর্ণ অঞ্চল
 উঁচুনিচু ও বন্ধুর প্রকৃতির ভূমিরূপের জন্য পার্বত্য এলাকায় সড়কপথ নির্মাণ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। এজন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে সড়কপথ আছে, কিন্তু কম ।  ঢালযুক্ত স্থানে সড়কপথ তৈরি করা কষ্টকর ও ব্যয়বহুল। এতে গাড়ির জ্বালানি খরচ বেশি হয়। অর্থাৎ বেশি ঢাল সড়কপথ তৈরির ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ। এজন্য বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সড়কপথের ঘনত্ব কম।  নিম্নভূমি ও নদীপূর্ণ অঞ্চলে বেশি কালভার্ট ও ব্রিজ নির্মাণে খরচ বেশি হয়। এজন্য এ সকল অঞ্চলে সড়কপথ কম গড়ে ওঠে। তাই বাংলাদেশের সিলেটের হাওর অঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে সড়কপথ কম। নৌপথ এ অঞ্চলে অগ্রাধিকার পায়।

বাংলাদেশের সড়কপথগুলো বসতির বিন্যাসের উপর নির্ভর করে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ সড়ক স্থানীয় যোগাযোগ রক্ষার জন্য রেলপথ ও নৌপথের পরিপূরক হিসেবে নির্মিত হয়েছে। সাধারণত কাঁচা সড়কগুলোকেই উন্নত করে পাকা সড়ক করা হয়। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিভিন্ন শ্রেণির সড়কপথের পরিমাণ নিয়ে সারণিতে দেখানো হলো :

সারণি ১ : সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে বিভিন্ন শ্রেণির সড়কপথ

 সাল  ২০১৪  ২০১৮  ২০১৯
 জাতীয় মহাসড়ক (কিলোমিটার)  ৩,৫৪৪  ৩,৮১৩  ৩,৯০৬
 আঞ্চলিক মহাসড়ক (কিলোমিটার)  ৪,২৭৮  ৪,২৪৭  ৪,৪৮৩
 জেলা সড়ক (কিলোমিটার)  ১৩,৬৫৯  ১৩,২৪২  ১৩,২০৭
 মোট  ২১,৪৮১  ২১,৩০২  ২১,৫৯৬

উৎস : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৯* (ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত)।

কাজ : উপরের পরিসংখ্যান থেকে তথ্য নিয়ে নিচের ছক পূরণ কর। 

 সড়কপথের নাম  বেড়েছে  কমেছে   কারণ
 জাতীয় মহাসড়ক      
 আঞ্চলিক মহাসড়ক      
 জেলা সড়ক      

আমাদের দেশের সড়কপথগুলো বৃষ্টি, বর্ষা প্রভৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়, ফলে কাঁচা সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে সারাবছরই সড়ক মেরামত করতে হয়। এছাড়া নদীবিধৌত হওয়ায় কালভার্ট নির্মাণ ও মেরামত করতে হয়, যা সড়কপথের বাধা হিসেবে কাজ করে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে সড়কপথ ঢাকা কেন্দ্রিক। রুটসমূহ নিম্নরূপ :

ঢাকা ←→ আরিচা নগরবাড়ি হয়ে পাবনা, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর ও তেঁতুলিয়া।
ঢাকা ←→ দৌলতদিয়া হয়ে ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা ও বরিশাল।
ঢাকা টাঙ্গাইল, জামালপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ।
ঢাকা ←→ কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও টেকনাফ ।
ঢাকা ←→ বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গ

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সড়কপথের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বর্তমানে সড়কপথের উন্নয়নের জন্য যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সড়কপথ সারা দেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে। তাই এ দেশের সকল স্থানেই সড়কপথে যাওয়া যায়। বাজার ব্যবহারে উন্নতি, সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন ও বণ্টন, শিল্পোন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি, কর্মসংস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রে সড়কপথ যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে।





 

Content added By

রেলপথ (Railways)

2

বাংলাদেশ রেলপথের পরিমাণ অল্প হলেও ভারী দ্রব্য পরিবহন, শিল্প ও কৃষিজ দ্রব্য, শ্রমিক পরিবহন প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটা দেশের প্রধান বন্দর, শহর, বাণিজ্য ও শিল্প কেন্দ্রের সঙ্গে সংযোগ সাধন করে (চিত্র ১২.১)।

বাংলাদেশের রেলপথ
১। ব্রডগেজ রেলপথ যমুনা নদীর পশ্চিমাংশে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে ৬৫৯ কিলোমিটার।

২। ডুয়েলগেজ রেলপথ জামতৈল থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ৩৭৫ কিলোমিটার।

৩। মিটারগেজ রেলপথ যমুনা নদীর পূর্বাংশ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ১,৮৪৩ কিলোমিটার। রেলপথ সব স্থানেই কি গড়ে উঠতে পারে? ভৌগোলিক কিছু উপাদান রেলপথ গড়ে ওঠাকে প্রভাবিত করে।


রেলপথ গড়ে ওঠার অনুকূল অবস্থা

সমতলভূমি
 সমতলভূমি রেলপথ নির্মাণের জন্য সুবিধাজনক। এতে খরচ কম হয় ও সহজে নির্মাণ করা যায়। বালাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চল সমতল। এজন্য পাহাড়ি, বনাঞ্চল ও জলাভূমি ছাড়া প্রায় সব স্থানেই রেলপথ গড়ে উঠেছে।

সমুদ্রের অবস্থান
সমুদ্র উপকূল অঞ্চলে বন্দর গড়ে ওঠে। এই বন্দরের কারণে অন্যান্য সমস্যা থাকলেও রেলপথ গড়ে ওঠে। এজন্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল বাদ দিয়ে বন্দরকে কেন্দ্র করে সমতলভূমিতে রেলপথ গড়ে উঠেছে।

 রেলপথ গড়ে ওঠার প্রতিকূল অবস্থাঃ বন্ধুর ভূপ্রকৃতি উঁচুনিচু ও বন্ধুর প্রকৃতির ভূমিরূপের জন্য পাবর্ত্য এলাকায় রেলপথ নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। তাই বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড়ের গা বেয়ে রেলপথ নেই।

নিম্নভূমি ও মৃত্তিকাঃ মৃত্তিকার বুনন যথেষ্ট মজবুত না হলে রেলপথ গড়ে ওঠে না। এছাড়া নদী বেশি থাকলে রেলপথ গড়ে ওঠাও কঠিন। তাই বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে রেলপথ কম।
১ মিটার প্রস্থ রেলপথ মিটারগেজ এবং ১.৬৮ মিটার | প্রস্থ রেলপথ ব্রডগেজ নামে পরিচিত। বর্তমানে তিস্তামুখঘাট ও বাহাদুরাবাদঘাট এবং সিরাজগঞ্জ ও জগন্নাথগঞ্জের মধ্যে ২টি রেলওয়ে ফেরি চালু রয়েছে ।

ঢাকার কমলাপুর দেশের বৃহত্তম রেল স্টেশন। ঢাকা থেকে দেশের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ শহরে রেলযোগে যাতায়াত করা যায়। বাংলাদেশে সর্বমোট ৪৭৪টি রেল স্টেশন আছে (উৎস : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান পকেটবুক ২০১৭, সারণি ৮.০৪)। কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ, কাঁচামাল ও জনসাধারণের নিয়মিত চলাচল, , উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ, শ্রমিক স্থানান্তর, কর্মসংস্থান তথা বাংলাদেশের সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও পুনর্গঠনে রেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের বাণিজ্যিক ও আর্থিক সফলতা অর্জনে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি যুগোপযোগী ও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিণত হবে।

  কাজ : খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, বরিশাল, পটুয়াখালী, মাদারিপুর, শরীয়তপুর, মেহেরপুর, কক্সবাজার ও লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে কোনো রেলপথ নেই । উক্ত অঞ্চলগুলোতে রেল যোগাযোগ নেই কেন ভৌগোলিক কারণসমূহ বের কর। দলগতভাবে কারণগুলো মিলিয়ে ব্যাখ্যা করে শিক্ষকের কাছে জমা দাও ।
 

জলপথ : জলপথকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় । ১) নৌপথ ২) সমুদ্রপথ

 

Content added By

নৌপথ (River transport )

1

নদীমাতৃক বাংলাদেশের সর্বত্র নৌপথ জালের মতো ছড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক গঠন নৌপথের অনুকূলে। যে কারণে নৌপথ বিস্তার করেছে তা বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করলে তা সহজে বোঝা যায় ৷

                                              নৌপথ গড়ে ওঠার অনুকূল অবস্থা
                      নিম্নভূমি          নদীবহুল অঞ্চল
   

নৌপথ বাংলাদেশের সুলভ পরিবহণ ও যাতায়াত ব্যবস্থা। অসংখ্য নদী ও খালবিলের সমন্বয়ে গঠিত প্ৰায় ৮,৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ নাব্য জলপথ আছে। এর মধ্যে প্রায় ৫,৪০০ কিলোমিটার সারাবছর নৌচলাচলের উপযুক্ত থাকে। অবশিষ্ট ৩,০০০ কিলোমিটার শুধু বর্ষাকালে ব্যবহার করা যায়। দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের নদীগুলো নৌ-চলাচলের জন্য বেশি উপযোগী। বর্তমানে বাংলাদেশের নৌ পরিবহণের সামগ্রিক অবস্থা নিম্নরূপ :

                                     সামগ্রিক অবস্থা

  লঞ্চঘাট


 ফেরিঘাট

        ৩৮০টি

          ৫৩টি

 

    সাল   অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহনের আয় (কোটি টাকায়)

২০১৩-২০১৪

২০১৪-১৫

২০১৫-১৬

২০১৬-১৭

২০১৭-১৮*

 ৩২০.০৪

৩৫৪.৫৮

৫০৬.৬৪

৬০৩.৪০

৪৭৭.৫০

উৎস : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৮* সাময়িক, (BIWTA, Ministry of Shipping)

কাজ : ‘নৌপথ সাশ্রয়ী পথ' ব্যাখ্যা কর।

নদীবন্দর (River ports ) : নদীবন্দরের মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গোয়ালন্দ, বরিশাল, খুলনা, ভৈরববাজার, আশুগঞ্জ, মোহনগঞ্জ, চাঁদপুর, ঝালকাঠি, আরিচা, আজমিরীগঞ্জ ও মাদারিপুর উল্লেখযোগ্য (চিত্র ১২.২)।

বাণিজ্য, পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ করে বাংলাদেশ নৌপথ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। 

 কাজ : বাংলাদেশের প্রধান নদীবন্দরগুলো মানচিত্রে চিহ্নিত কর এবং শিক্ষকের কাছে জমা দাও।


 

Content added || updated By

সমুদ্রপথ (Ocean Shipping )

4

সমুদ্রপথ গড়ে ওঠার জন্য দেশের অবস্থান অবশ্যই সমুদ্রের তীরে হওয়া প্রয়োজন। শুধু সমুদ্র থাকলেই হবে না, তার ভৌগোলিক কিছু বৈশিষ্ট্যও দরকার যা থাকলে সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা যাবে। বন্দর গড়ে উঠলে তবেই সমুদ্রপথ উন্নতি লাভ করবে।

                        সমুদ্রপথ গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণ
 পোতাশ্রয়   উপকূলের গভীরতা  সুবিস্তৃত সমভূমি  জলবায়ু
 পোতাশ্রয় থাকলে ঝড়- বন্দরের উপকূলস্থ সমুদ্র ঝাপটা, সমুদ্রের ঢেউ  প্রভৃতির কবল থেকে  আধুনিক জাহাজ রক্ষা পায় ।
 
 বন্দরের উপকূলস্থ সমুদ্র  বেশ গভীর হওয়া বাঞ্ছনীয় । এতে সব ধরনের আধুনিক জাহাজ বন্দরে যাতায়াত  করতে পারে ।  বন্দরের জাহাজ মেরামত ও জেটি নির্মাণের জন্য সুবিস্তৃত সমভূমি থাকা প্রয়োজন ।
 
 বরফ, কুয়াশা প্রভৃতি সমুদ্র যোগাযোগের বাধাস্বরূপ, যা বাংলাদেশের উপকূলে অনুপস্থিত । আর এ কারণে সমুদ্র যোগাযোগ প্রসার লাভ করেছে।

দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জলপথ তথা নৌপথ ও সমুদ্রপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের তিনটি সমুদ্রবন্দর আছে— চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের মোট আমদানির প্রায় ৮৫ শতাংশ এবং রপ্তানির ৮০ শতাংশ বাণিজ্য সম্পন্ন হয়। মংলা বন্দর দিয়ে মোট রপ্তানির প্রায় ১৩ শতাংশ এবং আমদানির প্রায় ৮ শতাংশ বাণিজ্য সম্পন্ন হয়। অর্থনৈতিক দিক থেকে অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থার চেয়ে নৌপথ ও সমুদ্রপথের অবদান উল্লেখযোগ্য।

আকাশপথ (Airways)ঃ

যাত্রী চলাচল এবং পচনশীল দ্রব্য প্রেরণেও আকাশপথের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। যুদ্ধবিগ্রহ, দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি জাতীয় দুর্যোগের সময় আকাশপথ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে আকাশপথকে বাদ দিয়ে সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ কল্পনাও করা যায় না। শিক্ষা, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনে আকাশপথের গুরুত্ব অপরিসীম। 

                        আকাশপথ গড়ে ওঠার অনুকূল অবস্থা
  সমতলভূমি   কুয়াশামুক্ত ও ঝড়ঝঞ্ঝার স্বল্পতা
 বিমান অবতরণ এবং উড্ডয়নের জন্য পর্যাপ্ত
সমতলভূমি প্রয়োজন ।
 আকাশপথের জন্য কুয়াশামুক্ত ও ঝড়ঝঞ্ঝামুক্ত বন্দর প্রয়োজন ।

বিমানের অভ্যন্তরীণ সার্ভিসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর, বরিশাল প্রভৃতি স্থানে যাতায়াত করা যায় (চিত্র ১২.৩)। অভ্যন্তরীণ রুটে বেসরকারি বিমান সার্ভিসও চালু রয়েছে। ঢাকার ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর' বাংলাদেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এছাড়াও আরও দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে তা হলো— চট্টগ্রাম শাহ আমানত ও সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
 

বাণিজ্য (Trade)
মানুষের অভাব ও চাহিদা মেটানোর উদ্দেশে পণ্যদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় এবং এর আনুষঙ্গিক কার্যাবলি হচ্ছে বাণিজ্য। আমাদের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো একই স্থানে উৎপাদন বা তৈরি হয় না যার ফলে পণ্যগুলো বণ্টনের প্রয়োজন দেখা দেয়, তখনই বাণিজ্যের প্রয়োজন হয়। বাণিজ্য নিম্নরূপ :

                                  বাণিজ্য
   অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য               আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
                                         আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
  আমদানি বাণিজ্য      রপ্তানি বাণিজ্য

অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (Internal trade)
আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সাধারণত গ্রাম বা হাট থেকে কাঁচামাল, খাদ্য-শস্য সংগ্রহ করা হয় এবং উৎপাদিত শিল্পদ্রব্য জেলা সদর, গঞ্জ ও হাটে বণ্টন করা হয়। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে দেশের চাহিদা ও ভোগের সমন্বয় ঘটে। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে বাংলাদেশে যাতায়াত ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথ। এই পথগুলো বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য, উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ সহজ করে ।

 কাজ : তোমার এলাকায় বিভিন্ন দোকানে কী কী পণ্য অন্য অঞ্চল থেকে আসে এবং কোন দ্রব্য বা
পণ্য অন্য অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে তার তালিকা তৈরি কর ।

 কাজ : তোমার এলাকায় বাণিজ্যের সঙ্গে যাতায়াতের সম্পর্ক দেখাও ।
 পণ্যদ্রব্য তোমার অঞ্চল থেকে যাচ্ছে   যাতায়াত ব্যবস্থা  পণ্যদ্রব্য তোমার অঞ্চলে আসছে
     

 

Content added By

বৈদেশিক বাণিজ্য (Foreign trade)

1

এক সময় বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য ছিল বেশিরভাগ কাঁচামাল রপ্তানি। বর্তমানে আমাদের রপ্তানির প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ আয় হচ্ছে তৈরি পোশাক ও নিটওয়্যার থেকে এবং দিন দিন কৃষিপণ্য রপ্তানির পরিমাণ কমে আমদানি বাড়ছে। বর্তমানে খাদ্য-শস্য ও শিল্পজাত দ্রব্য আমদানি করতে হয় এবং দেখা যায় রপ্তানির চেয়ে আমদানি দ্রব্য বেশি। আর এ সকল বৈদেশিক বাণিজ্য চলে সমুদ্রপথে। তবে জরুরিভিত্তিতেও পচনশীল দ্রব্য আকাশপথে আনা নেওয়া করা হয়।

বৈদেশিক বাণিজ্যে রপ্তানি বৃদ্ধি করে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এজন্য উৎপাদন বৃদ্ধি, পণ্যের মান উন্নয়ন, উৎপাদন ব্যয় হ্রাস, রপ্তানি শুল্ক হ্রাস, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, রপ্তানিযোগ্য পণ্যের ব্যাপক প্রচার প্রভৃতি অপরিহার্য। বাংলাদেশ চীন, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, হংকং, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে। বাংলাদেশের পণ্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস,কানাডা, ইতালি প্রভৃতি দেশে রপ্তানি হয়। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, কিন্তু মূলধন ও প্রযুক্তিবিদ্যার অভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না, ফলে আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে ভারসাম্য থাকছে না।

আমদানি ও রপ্তানি পণ্য (Import and export products)

বাংলাদেশে বর্তমানে শ্রমনির্ভর শিল্পের রপ্তানি উপযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পণ্যের প্রধান আমদানিকারক দেশ হিসেবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র তালিকার শীর্ষে রয়েছে। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ।

প্রধান রপ্তানি পণ্যসমূহ
১। প্রাথমিক পণ্য : হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, কাঁচা পাট, চা ও অন্যান্য প্রাথমিক পণ্য ।
২। শিল্পজাত পণ্য : তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার, রাসায়নিক দ্রব্য, প্লাস্টিকসামগ্রী, চামড়া, চামড়াজাত পণ্য,হস্তশিল্প,পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, পাদুকা, সিরামিকসামগ্রী ও প্রকৌশল দ্রব্যাদি।

 অর্থবছর

রপ্তানি আয় (মিলিয়ন ইউএস ডলার)

 আমদানি ব্যয় (মিলিয়ন ইউএস ডলার)
 ২০১৫-২০১৬  ৩৪,২৫৭.১৮  ৪৩,১২২.০
 ২০১৬-২০১৭  ৩৪,৬৫৫.৯০  ৪৭,০০৫.০
 ২০১৭-২০১৮  ৩৬,৬৬৮.১৭  ৫৮,৮৬৫.০
 ২০১৮-২০১৯*  ২৭,৬৫২.৮০  ৪০,৮৯৫.০

উৎস : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯* (ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত)

বাংলাদেশের আমদানি ক্ষেত্রে চীন-এর অবস্থান শীর্ষে। ২০১৮-২০১৯ (ফেব্রুয়ারি) অর্থবছরে দেশের মোট আমদানির শতকরা ২৯.৪৩ ভাগ চীন থেকে আসে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভারত ও সিঙ্গাপুর।

প্রধান আমদানি পণ্যসমূহ
১। প্রধান প্রাথমিক দ্রব্যসমূহ : চাল, গম, তেলবীজ, অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম ও তুলা ৷
২। প্রধান শিল্পজাত পণ্যসমূহ : ভোজ্যতেল, সার, ক্লিংকার, স্টেপল ফাইবার ও সুতা।
৩। মূলধনী দ্রব্যসমূহ ।
৪। অন্যান্য পণ্য (ইপিজেড-এর সহায়ক পণ্য) ।

Content added By
Promotion