বাংলাদেশে সমবায় সমিতির সমস্যা দূ্রীকরণের উপায়সমূহ

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | | NCTB BOOK

বাংলাদেশে দারিদ্র্য, অনগ্রসরতা ও অভাব-অনটন থেকে নিম্নবিত্তসম্পন্ন ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে উদ্ধার করে উন্নয়নের নতুন পথ দেখাতে হলে সমবায় আন্দোলন যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ লক্ষ্যে অনেক পূর্ব হতেই এদেশে সমবায় আন্দোলন শুরু হলেও কিছু সমস্যার কারণে তা সফলতার মুখ দেখতে পারছে না ।

নিম্নে এ সকল সমস্যা দূরীকরণের প্রয়োজনীয় উপায় উল্লেখ করা হলো:

১. লাল ফিতার দৌরাত্ম্য হ্রাস (Reduction of red tapism ) : লাল ফিতার দৌরাত্ম্য তথা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সমবায় সমিতির অগ্রসরতার জন্য কম-বেশি দায়ী। এক্ষেত্রে গতিশীলতা আনতে হলে সমবায় মন্ত্রণালয়, সমবায় বিভাগ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অফিসে দক্ষ ও সমবায়ের মন্ত্রে আস্থাশীল কর্মঠ জনবল নিয়োগ করা যেতে পারে।

২. সমবায়মূলক শিক্ষার ব্যবস্থাকরণ (Arrangement of co-operative oriented education): সমবায় আন্দোলনকে বেগবান করতে হলে দেশের সমবায়মূলক শিক্ষার প্রচলন করতে হবে। উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং পাঠ্যক্রমে এ বিষয়ক আলোচনা অন্তর্ভুক্ত করে সমবায় শিক্ষা জোরদার করা যেতে পারে ।

৩. সমবায় উন্নয়নে বৃহৎ পরিকল্পনা (Master plan for development of co- operatives): সমবায় সমিতির মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ বিবেচনায় রেখে একটি বৃহৎ বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। সরকারি উদ্যোগে কেন্দ্রীয়ভাবে গৃহীত এ পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত সাধারণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে ।

৪. প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ (Adopting training programme): সমবায় সমিতির সাথে পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তিবর্গ এবং সাধারণ সদস্যদের স্বল্পকালীন এবং কখনো বা দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে সংশ্লিষ্ট সকলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, কৃষিকাজসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাস্তব ধারণা অর্জনে সক্ষম হবে।

৫. দুর্নীতি ও স্বজন-প্রীতি রোধ ( Measures to prevent corruption and nepotism) : দুর্নীতি ও স্বজন-প্রীতি অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায় সমবায়েও শক্তিশালী ভিত গড়েছে। এ ভিতকে উপড়ে ফেলতে হলে নিরপেক্ষভাবে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৬. সমবায়ের সুফল সম্পর্কিত প্রচারণা (Publicity regarding the merits of co- operatives): সমবায়ের কল্যাণমুখী ভূমিকা সম্পর্কে বেতার, টিভি, সংবাদপত্র ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে সাধারণ জনগণ সমবায় সম্পর্কে সচেতন হবে এবং এ বিষয়ে উৎসাহী হয়ে উঠবে ।

৭. সাধারণ শিক্ষার সম্প্রসারণ (Expansion of general education): একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক খাত হিসেবে সমবায় আন্দোলন জাতীয়ভিত্তিক আন্দোলনের গুরুত্ব পাবার অবকাশ রাখে। এ কারণে দেশের জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন করে তোলা দরকার। দেশের দরিদ্র, অসচেতন সাধারণ লোকের মধ্যে শিক্ষার আলো জ্বালাতে পারলে এ বিষয়ে ইতিবাচক ফল আশা করা যায় ।

৮. প্রণোদনার ব্যবস্থা (Taking incentive measures): এ সংগঠনের সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে সমবায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী, ব্যবস্থাপক এবং সদস্যদের বিশেষ পারদর্শিতার ভিত্তিতে প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রাথমিক স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য নিরপেক্ষভাবে পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৯. কার্যকর সমন্বয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ (Taking effective measures for co-ordination): প্রাথমিক, কেন্দ্রীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সমবায় সংগঠনসমূহের মধ্যে এবং সমবায়ের বিভিন্ন দপ্তর, সমবায় বিভাগ ও সমবায় সমিতির সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব সমবায়ের উন্নয়নে একটি বড় অন্তরায়। এজন্য এসব ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও কার্যকর সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সমবায়ের বিকাশ ঘটাতে হবে ।

১০. সহজ শর্তে ঋণদান (Providing credit with simple terms & condition): মূলধনের স্বল্পতা সমবায় সমিতিগুলো সচল রাখার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। সমবায়ের সম্প্রসারণে সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে এ সমস্যা দূর করতে পারে ।

১১. সরকারি সহযোগিতা বৃদ্ধি (Increasing government co-operation): এ সেক্টরের উন্নয়নের জন্য আর্থিক ও অন্যান্য বিষয়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক মন্ত্রণালয় কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

১২. গতিশীল তথ্য ব্যবস্থা (Dynamic information system): সমবায় সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতে হলে এ সম্পর্কিত তথ্য প্রদানের ব্যবস্থাও থাকা দরকার। এ কারণে বিভিন্ন প্রকার প্রকাশনা, মুদ্রণ ও তার যথাযথ বিতরণসহ সকল তথ্য প্রদানের ব্যবস্থা সুষ্ঠু ও গতিশীল হতে হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে সমবায় আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে উপরিউক্ত ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ করতে হবে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি বিভাগসমূহকে এগিয়ে আসতে হবে। সমবায়ের উৎপত্তি হওয়া বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে সরকার ও জনগণকে তাই একযোগে কাজ করে যেতে হবে।

Content added By
Promotion