বাংলায় মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠার সূচনা করেন বখতিয়ার খলজি । এ পর্বের প্রথম পর্যায় ছিল ১২০৪ থেকে ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত । এ যুগের শাসনকর্তাদের পুরোপুরি স্বাধীন বলা যাবে না। তাঁদের কেউ ছিলেন বখতিয়ারের সহযোদ্ধা খলজি মালিক, আবার কেউ কেউ তুর্কি বংশের শাসক । শাসকদের সকলেই দিল্লির সুলতানদের অধীনে বাংলার শাসনকর্তা হয়ে এসেছিলেন । পরবর্তীকালে অনেক শাসনকর্তাই দিল্লির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে স্বাধীন হতে চেয়েছেন । তবে তাঁদের বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি । দিল্লির আক্রমণের মুখে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে । মুসলিম শাসনের এ যুগ ছিল বিদ্রোহ-বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ । তাই ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারানী বাংলাদেশের নাম দিয়েছিলেন 'বুলগাকপুর' । এর অর্থ ‘বিদ্রোহের নগরী' ।
বখতিয়ার খলজির মৃত্যুর পর তাঁর সহযোদ্ধাদের মধ্যে শুরু হয় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব । তাঁর সহযোদ্ধা তিনজন খলজি মালিকের নাম জানা যায় । তাঁরা হচ্ছেন- মুহম্মদ শিরান খলজি, আলি মর্দান খলজি এবং হুসামউদ্দিন ইওজ খলজি । অনেকেরই ধারণা ছিল আলী মর্দান খলজি বখতিয়ার খলজির হত্যাকারী। এ কারণে খলজি আমির ও সৈন্যরা তাঁদের নেতা নির্বাচিত করেন মুহম্মদ শিরান খলজিকে । তিনি কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। আলি মর্দান খলজিকে বন্দী করা হয় । পরে আলি মর্দান পালিয়ে যান এবং দিল্লির সুলতান কুতুবউদ্দিনের সহযোগিতা লাভ করেন । শিরান খলজির শাসনকাল মাত্র এক বছর স্থায়ী ছিল। এরপর ১২০৮ খ্রিষ্টাব্দে দেবকোটের শাসনকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন হুসামউদ্দিন ইওজ খলজি । দিল্লির সহযোগিতায় দুই বছর পর ফিরে আসেন আলি মর্দান খলজি । ইওজ খলজি স্বেচ্ছায় তাঁর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেন । আলি মর্দান খলজি ১২১০ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং নিজের নাম নেন আলাউদ্দিন আলি মদান খলজি । খুব কঠোর শাসক ছিলেন তিনি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ক্রমে বিক্ষোভ বাড়তে থাকে। খলজি মালিকরা একজোট হয়ে বিদ্রোহ করে । তাঁদের হাতে নিহত হন আলি মর্দান খলজি । ইওজ খলজি দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসেন । তিনি এ পর্যায়ে গিয়াসউদ্দিন ইওজ খলজি নাম নিয়ে স্বাধীন সুলতান হিসেবে বাংলা শাসন করেন। ১২১২ থেকে ১২২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর তিনি বাংলার সুলতান ছিলেন ।
Read more