বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রিন্টার রয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত প্রিন্টারের গুলোর বৈশিষ্ট্য নিচে তুলে ধরা হলো-
■ ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার (Dot matrix Printer)
এটি একটি ধাক্কা প্রিন্টার । বিভিন্ন ডট প্যাটার্নের সাহায্যে ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারসমূহ তাদের কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। অর্থাৎ অনেকগুলো ডট সমন্বিত হয়েই ক্যারেক্টার গঠিত হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে ব্যবহৃত অনেক গতি সম্পন্ন এবং উচ্চগুণ সম্পন্ন ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার বাজারে পাওয়া যায়। যেমন-৯ পিন, ২৪ পিন ইত্যাদি। প্রিন্ট হেডকে বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে নড়াছড়া করার ব্যবস্থা আছে। একটি বর্ণ ছাপা হওয়ার পর প্রিন্টহেড একটু সরে যায় ফলে একই লাইনের পরের বর্ণ ছাপা হয়। একটি পুরো লাইন ছাপা হয়ে গেলে কাগজ একটু সরে গিয়ে পরের লাইন চলে আসে আর প্রিন্টহেডও সেই সঙ্গে বাঁদিকের শেষ প্রান্তে সরে গিয়ে আবার ছাপাতে শুরু করে। তবে কিছু ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার উভয়মুখী (Bidirectional) অর্থাৎ, এগুলো বাঁম দিক থেকে ডান ও ডান থেকে বামদিক উভয় দিকেই ছাপাতে পারে। এক্ষেত্রে একটি লাইন বামদিক থেকে ও পরের লাইন ডানদিক থেকে, এভাবে ছাপা হয়। এতে ছাপা অপেক্ষাকৃত দ্রুততর হয়। ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারে সেকেন্ডে ৫০ থেকে ৫০০টি বর্ণ ছাপা যায়। এর একটি সুবিধা হলো ডট ম্যাট্রিক্স সারি ও স্তম্বের সংখ্যা পরিবর্তিত করে বর্ণের সাইজ বা গড়ন পাল্টানো যায়।
ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারে লেখা ছাড়াও ছবি বা গ্রাফ ছাপানো যায়। এ ধরনের প্রিন্টারে বর্ণগুলো কতিপয় বিন্দু দ্বারা ছাপা হওয়ায় লেখা সুদৃশ্য হয় না। তবে অধিক পিন সংবলিত ডট ম্যাট্রিক্স ব্যবহার করলে লেখা প্ৰায় সাধারণত ছাপার লেখার মতোই হয়। যে ধরনের প্রিন্টারে ভালো ছাপার অক্ষরের মতো লেখা হয় তাদের লেটার কোয়ালিটি (Letter quality) প্রিন্টার বলে। বর্ণগুলো বিচ্ছিন্ন বিন্দু না এঁকে অবিচ্ছিন্ন রেখা দ্বারা আঁকলে তবেই লেটার কোয়ালিটি ছাপানো সম্ভব।
ডট মেট্রিক্স প্রিন্টারের বৈশিষ্ট্যসমূহ
১. এ ধরনের প্রিন্টারের মাধ্যমে প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে প্রতিটি ক্যারেক্টারকে জেনারেট করতে ডট ব্যবহার করা হয়।
২. এত সাধারণত ৭, ৯ অথবা ২৪ পিন থাকে।
৩. এত ব্যবহৃত প্রচলিত ডট ম্যাট্রিক্সগুলো হচ্ছে ৭×৫, ৯×৭, ১২×৯, ২৪×৯, ৪০×১৮ ইত্যাদি।
৪. প্রতি সেকেন্ডে ৫০-৫০০ টি ক্যারেক্টার ছাপানো যায়।
৫. ডট-মেট্রিক্সের সারি ও কলাম সংখ্যা পরিবর্তন করে বর্ণের সাইজ বা গঠন পাল্টানো যায় ।
৬. এর গতি অন্যান্য প্রিন্টারের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম।
৭. প্রিন্ট কোয়ালিটি তেমন ভালো নয়।
৮. প্রিন্টিংয়ের সময় শব্দ হয়।
৯. প্রিন্টিং খরচ কম।
১০. কিছু কিছু ডট-মেট্রিক্স প্রিন্টার উভয়মুখী অর্থাৎ উভয় দিক হতেই প্রিন্ট করতে পারে।
ইঙ্কজেট প্রিন্টার (Ink Jet Printer): যে প্রিন্টার কালি ছড়িয়ে বা স্প্রে করে কম্পিউটারের ফলাফল প্রিন্ট করে থাকে তাকে ইঙ্কজেট প্রিন্টার বলে। এই প্রিন্টারে তরল কালি ব্যবহৃত হয়। তাপের দ্বারা এ চার্জযুক্ত কালি ক্ষুদ্রাকৃতি নজেল দিয়ে পরিমিতভাবে কাগজের উপর নিক্ষেপিত হয়। এ প্রিন্টার ইদানিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ সাদা-কালো বা রঙিন উভয় প্রকার ছবি মুদ্রণ করা যায়। তবে এর কালির কার্টিজের দাম বেশি বলে, গড়পড়তা পৃষ্ঠা প্রতি খরচ বেশি পড়ে। প্রিন্টিং প্রেসে রঙিন ছবি ছাপার আগে, প্রুফ শিটে রঙিন ছবির মান যাচাই করার জন্য এই প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়। বন্ধু-বান্ধবদের রঙিন কার্ড, ছবি তৈরির জন্যও ইঙ্কজেট প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়।
ইঙ্কজেট প্রিন্টারের বৈশিষ্ট্য
১. ইঙ্কজেট প্রিন্টারের গতি ১-২০ পিপিএম হয়ে থাকে।
২. প্রিন্টারের সাহায্যে সম্পাদিত লেখাসমূহ কাগজে কী আকৃতিতে উপস্থিত হয়, তা প্রিন্ট কোয়ালিটির মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। ইঙ্কজেট প্রিন্টারের প্রিন্ট কোয়ালিটি তুলনামূলক ভালো।
৩. ইঙ্কজেট প্রিন্টারের দুই ধরনের কার্টিজ থাকে। যথা- ব্লাক কার্টিজ এবং কালার কার্টিজ।
৪. ফ্রন্ট প্যানেল থেকে এবং প্রিন্টিং সফটওয়্যার দ্বারা প্রিন্ট মোড সেট করা যায়।
৫. এটি পেপার সাইজ শনাক্ত করতে পারে এবং প্রিন্টিং মোড সেট করার ক্ষমতা রাখে।
৬. ইঙ্কজেট প্রিন্টারের দাম লেজার প্রিন্টারের চেয়ে কম কিন্তু প্রিন্টিং খরচ লেজার প্রিন্টারের চেয়ে বেশি।
লেজার প্রিন্টার
লেজার রশ্মি ব্যবহার করে কাগজে লেখা ফুটিয়ে তোলা হয় বলে একে লেজার প্রিন্টার বলে। এটি একটি ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রিন্টার। লেজার রশ্মির প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে প্রতি একক সময়ে একসাথে একটি পৃষ্ঠা প্রিন্ট করে। উচ্চগতি, সর্বাধুনিক, সুন্দরতম ও নির্ভরশীল হওয়ায় লেজার প্রিন্টারের ব্যবহার অনেক বেশি। কৌশলগত দিক থেকে এটি অনেকাংশে ফটোকপিয়ারের (Photocopier) মতো। একটি লেজার প্রিন্টারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আলোক সক্রিয় ( Photosensitive) ড্রাম। এই ড্রামের গায়ে সেলেনিয়াম জাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে যা আলোক সক্রিয় করে। লেজার প্রিন্টারের মুদ্রণ মান অত্যন্ত মসৃণ হয়ে থাকে। এছাড়া এর মুদ্রণ গতিও বেশ দ্রুত। তবে পৃষ্ঠা প্রতি এর খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি। সাধারণত ট্রেসিং পেপারে মিরর ইমেজে ডকুমেন্ট ছাপানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। বেশ কয়েকটি কোম্পানি লেজার প্রিন্টার তৈরি করে। যেমন-ক্যানন (Cannon), এইচপি লেজার জেট (HP Laser jet), অ্যাপেল রাইটার (Apple Writer) ইত্যাদি। এই প্রিন্টারের কালির নাম টোনার কার্টিজ। লেজার প্রিন্টার দিয়ে মিনিটে ৪ থেকে ২০ পৃষ্ঠার অধিক ছাপানো সম্ভব। সাধারণ ছাপার তুলনায় ৫০ গুণ দ্রুততার সঙ্গে কাজ করে থাকে। 600 DPI প্রিন্টারের তুলনায় 1200 DPI প্রিন্টারের মুদ্রণ মান ভালো। DPI যত বেশি হবে ছাপার মানও তত বেশি উন্নত হবে। DPI এর পূর্ণ নাম হচ্ছে Dot Per Inch
লেজার প্রিন্টারের বৈশিষ্ট্য
১. প্রিন্টিং কোয়ালিটি খুবই উন্নতমানের।
২. প্রিন্টিং এর সময় কোনো শব্দ হয় না।
৩. প্রতি মিনিটে ৪-২০ তার বেশি পৃষ্ঠা প্রিন্ট হয়।
৪. প্রিন্টিং রেজুলেশন ৩০০-১২০০ বা তারও অধিক।
৫. মাল্টিপল বা অধিক কপি প্রিন্ট করা যায়।
৬. প্রিন্টিং কন্ট্রোল ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা যায়।
৭. টোনার রিফিল করা যায়।
৮. ডেস্কটপ পাবলিশিং এর কাজে লেজার প্রিন্টার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
বহুল ব্যবহৃত প্রিন্টারসমূহ হলো ডট মেট্রিক্স প্রিন্টার, ইঙ্কজেট প্রিন্টার এবং লেজার প্রিন্টার। নিম্নে তাদের সুবিধা ও অসুবিধা দেওয়া হলো-
■ ডট মেট্রিক্স প্রিন্টার
ডট মেট্রিক্স প্রিন্টার ছোট পিন ব্যবহার করে প্রিন্ট করে। যদিও এই প্রযুক্তিটি পুরানো তবুও ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারগুলো আজও বহুল ব্যবহৃত। যেহেতু অপারেশনের একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তাদের অনেক সুবিধা রয়েছে। ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারের সুবিধা ও অসুবিধা নিম্নরূপ—
ডট মেট্রিক্স প্রিন্টারের প্রধান সুবিধা-
• সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো ব্যয় কম। এই সরঞ্জামগুলোর দাম ইঙ্কজেট বা লেজার প্রিন্টারগুলোর বিপরীতে দশগুণ কম ।
• অপারেটিং সময় অন্যান্য প্রিন্টারের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। রং কালি ফিতাটি হঠাৎ শুকিয়ে যায় না, এটি সর্বদা আগাম দেখা যায়, কারণ মুদ্রিত পাঠ্যের মানটি কিছুটা বিবর্ণ হতে শুরু করে। কার্টিজ চার্জ করার সময় না থাকলে অন্য ধরনের ডিভাইসগুলো গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
• যে কোনো প্রকার কাগজে প্রিন্ট করা যায়।
• ডিভাইসটি কার্বন অনুলিপি প্রিন্টিং সরবরাহ করে, যা একই ধরনের পাঠ্যের দ্রুত নকল করতে দেয়।
ডট মেট্রিক্স প্রিন্টারের প্রধান অসুবিধা
• এই সরঞ্জামগুলো ফটো প্রিন্ট করতে পারে না।
• প্রিন্ট কোয়ালিটি তেমন ভালো নয় ।
• তুলনামূলকভাবে গতি কম ।
• প্রিন্ট করার সময় উচ্চ শব্দ হয়।
ইঙ্কজেট প্রিন্টার কাগজের উপর ইঙ্কনোজল দিয়ে তরল কালি স্প্রে এর মাধ্যমে প্রিন্ট করে। এই প্রিন্টারের সুবিধা ও অসুবিধা নিম্নরূপ-
▪️ইস্কজেট প্রিন্টারের সুবিধাসমূহ-
• কম খরচে রঙিন চিত্র এবং ফটোগ্রাফ প্রিন্ট করার ক্ষমতা আছে। রং-কে লেজার মডেলের চেয়ে আরও ভালভাবে মিশ্রিত করে।
• চকচকে এবং এমনকি কিছু ধরনের কাপড়সহ বিভিন্ন পৃষ্ঠের মুদ্রণ নেওয়া যায়।
• কাজ শুরু করার আগে গরম করার দরকার নেই।
• কার্টিজগুলো রিফিল করা যায় ফলে খরচ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমানো সম্ভব।
• ব্যবহার সহজ, ছোট আকার এবং ওজন কম ।
ইস্কজেট প্রিন্টারের অসুবিধাসমূহ-
• কালি ব্যয়বহুল ।
• কালি তরল থাকে ফলে প্রিন্ট করার পর কাগজের উপর পানি পড়লে তা নষ্ট হয়ে যায়।
কাজের গতি কম।
• প্রিন্টিং হেড ঘন ঘন পরিষ্কার করা প্রয়োজন ।
• দীর্ঘসময় ব্যবহার না করলে কালি শুকিয়ে প্রিন্টিং হেড ব্লক হয়ে যায় ফলে আর প্রিন্ট হয় না।
আরও দেখুন...