ভগ্নাংশের গসাগু ও লসাগু
গসাগুর সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। গসাগু মানে হল গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক। এখানে দুটো বিষয় আবার মনে করার চেষ্টা করি। গসাগু নির্ণয় করতে হলে অন্তত দুটি সংখ্যার মধ্যকার তুলনা করতে হয়। কিসের তুলনা? তাদের গুণনীয়ক বা উৎপাদকগুলোর তুলনা। এখন ভেবে দেখো তো গুণনীয়ক বা উৎপাদক কোনগুলো? কিংবা সাধারণ গুণনীয়ক কোনগুলো? ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার জন্য দুটি আলাদা সংখ্যার গুণনীয়ক বা উৎপাদকগুলোর মাঝে এক বা একাধিক গুণনীয়ক পাওয়া যেতে পারে, যারা উভয় সংখ্যারই গুণনীয়ক। সেই গুণনীয়কটি কিংবা গুণনীয়কগুলোকে বলা হয় সাধারণ গুণনীয়ক। পরবর্তীতে যে সাধারণ গুণনীয়কটি সবচেয়ে বড়, সেটিই হয় গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক। ভেবে দেখো তো, দুটি সংখ্যার একটিমাত্র সাধারণ গুণনীয়ক থাকলে কী হয়?
ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার পাশাপাশি, সাধারণ ভগ্নাংশের ক্ষেত্রেও কি এভাবে গসাগু নির্ণয় করা সম্ভব? চলো এ বিষয়টি নিয়ে ভাবি।
সাধারণ ভগ্নাংশের গুণনীয়ক
প্রথমে একটি ভগ্নাংশের গুণনীয়ক নিয়ে চিন্তা করি। পূর্ণসংখ্যার গুণনীয়কের সাথে তুলনা করে আমরা দেখতে পাই, কোন একটি পূর্ণসংখ্যার গুণনীয়ক সেই পূর্ণসংখ্যাগুলো, যেগুলো দ্বারা পূর্ণসংখ্যাটি নিঃশেষে বিভাজ্য। যেমন ১২ সংখ্যাটি ১, ২, ৩, ৪, ৬ এবং ১২ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। এখন আমরা ১২ কে ৫ দ্বারা ভাগ করলে কি কোন পূর্ণসংখ্যা পাই? উত্তর হবে না।
কাজ: ১৮ এর গুণনীয়কগুলো কি হবে? |
এখন একটি সাধারণ ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে কী হবে বিষয়টি? চলো আগে একটি খেলা খেলি।
গুণনীয়ক খুঁজি
প্রথমেই একটি কাগজ নাও।
এবার কাগজটিকে সমান দুই ভাগ করে কাটো। তাহলে একটি খণ্ডিত অংশ হবে মূল কাগজের অংশ। এবার আবার আরও ৩ টি কাগজ নাও এবং সেগুলোকে যথাক্রমে সমান ৩, ৪ ও ৫ খণ্ডে বিভক্ত করো ও নিচের ছকটি পূরণ করো ।
দেখো, ছক থেকে কিন্তু আমরা কয়েকটি ভগ্নাংশ পেয়ে গেলাম। এবার আমরা সমদ্বিখণ্ডিত করা ২ টি খন্ড থেকে একটি নিই। খণ্ডটিকে আমরা কিন্তু বলতে পারি ।
এবার চিন্তা করো তো, এই খন্ডটিকে কি তুমি সমান দুই ভাগে ভাঁজ করতে পারবে? এখন ভাবো তো, ভাঁজ করার পর যে দুটি ভাগ পাওয়া যাবে সেগুলো খন্ডটির কত ভাগ? খুব সহজেই বলা যায়, এটিও কিন্তু খন্ডটির ভাগ হবে। কিন্তু আমরা দেখে এসেছি, খন্ডটি কিন্তু নিজে । তাহলে মূল যে কাগজ ছিল, সেটির কত অংশ হবে এই একেকটি ভাগ? সহজেই বলা যায় অংশ। এবার তাহলে চিন্তা করো, সমান ২ ভাঁজের জায়গায়, সমান ৩ ভাঁজ করা হলে, প্রতিটি ভাগ মূল কাগজের কত ভাগ হত? কিংবা সমান ৪, ৫ ও ৬ ভাঁজ করা হলে তা মূল কাগজের কত ভাগ হত? সেটি নিচের ছকে পূরণ করো।
ছক ১.২
(আংশিক পূর্ণ করা আছে। তোমাদের কাজের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করো. প্রয়োজনে নিজের খাতায় ছকটি অঙ্কন করে পূরণ করো।)
এখন তাহলে কি দেখতে পাচ্ছো? তুমি কিন্তু প্রত্যেকবারই পূর্ণসংখ্যকবার সমান ভাঁজ করছো এবং সেটির সাপেক্ষে একটি ভগ্নাংশ পাচ্ছো
কাজ: তুমি পূর্বে ছক ১.১ এর জন্য ৩, ৪ ও ৫টি সমান খন্ডে টুকরা করা কাগজগুলো থেকে একটি করে খণ্ড নাও এবং প্রত্যেকটির জন্য, খাতায় ছক ১.২ এর অনুরূপ ছক এঁকে তা সম্পূর্ণ করো। |
এখন ভেবে দেখো তো এভাবে ভাঁজের মাধ্যমে আমরা কী পাচ্ছি? উপরের উদাহরণের ওই খন্ড থেকে চিন্তা করি খণ্ডটিকে সমান ৩ ভাঁজ করার মানে আসলে সেটিকে ৩ দিয়ে ভাগ করা। তার মানে আমরা এই কাগজ ভাঁজের খেলা থেকে মূলত আমরা একটি ভগ্নাংশকে একটি পূর্ণ সংখ্যা দ্বারা ভাগ করছি। অর্থাৎ, যে কয়টি সমান ভাঁজ করছি, সেই পূর্ণসংখ্যা দিয়ে ভগ্নাংশকে ভাগ করা হচ্ছে।
এভাবে আসলে কী পাওয়া যাচ্ছে ভাবো তো? ভগ্নাংশের যে গুণনীয়ক, সেটিই কিন্তু এভাবে নির্ণয় হচ্ছে।
তাহলে ভগ্নাংশের গুণনীয়ক কোনগুলো? একটি ভগ্নাংশকে একটি পূর্ণসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে আমরা যে আরেকটি ভগ্নাংশ বা পূর্ণসংখ্যা পাই, সেটিই ওই ভগ্নাংশটির একটি গুণনীয়ক।
এখন, চিন্তা করো, আমাদের খণ্ডটিকে সমান ১ ভাগে ভাঁজ করার মানে কি হতে পারে? এতে কিন্তু আসলে কোন ভাঁজ হচ্ছে না। সেই কাগজটিই কোন ভাঁজ ছাড়া থাকছে। তার মানে কি? ভগ্নাংশটি নিজেও কিন্তু ওই ভগ্নাংশের একটি গুণনীয়ক। কারণ ১ ও তো একটি পূর্ণসংখ্যা। তাই, ১ দিয়ে ভাগ করলেও কিন্তু একটি পূর্ণসংখ্যা বা ভগ্নাংশই পাওয়া যাচ্ছে।
এবার তাহলে চলো আমরা নিচের ছকটি পূরণ করে একটি গুণনীয়ক টেবিল তৈরি করি। তোমরা প্রতিটি ভগ্নাংশেরই প্রথম ১০ টি করে গুণনীয়ক নির্ণয় করবে। ছকটি আংশিকভাবে পূর্ণ করা হয়েছে।
দেখো, এভাবেই তুমি চাইলে যেকোনো ভগ্নাংশের গুণনীয়ক নির্ণয় করতে পারবে।
কাজ: তুমি তোমার পছন্দমত ৫ টি সাধারণ ভগ্নাংশ নাও এবং তাদের ১০ টি করে গুণনীয়ক নির্ণয় করো। |
এখন চিন্তা করে দেখো তো, আমরা কিন্তু প্রত্যেকবারই ১০ টি করে গুণনীয়ক নির্ণয় করছি। আমরা এখন চাই সবগুলো গুণনীয়ক নির্ণয় করতে। এবার তোমরা নিজের খাতায় ভগ্নাংশটির সবগুলো গুণনীয়ক নির্ণয় করার চেষ্টা করো
তুমি কি সবগুলো গুণনীয়ক নির্ণয় করতে পেরেছো? হিসাব করলে দেখবে তুমি কখনই সবগুলো গুণনীয়ক নির্ণয় করতে পারবে না। কারণ, পূর্ণসংখ্যা আসলে অসীমসংখ্যক আছে। তাই একটি সাধারণ ভগ্নাংশকে অসীমসংখ্যক পূর্ণসংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যাবে। আর কোন সাধারণ ভগ্নাংশকে পূর্ণ সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হলে, সেটিকে অবশ্যই একটি ভগ্নাংশ বা পূর্ণসংখ্যা আকারে প্রকাশ করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ, সাধারণ ভগ্নাংশের গুণনীয়ক কিন্তু পূর্ণসংখ্যার গুণনীয়ককের মত নির্দিষ্ট সংখ্যক নয়। সাধারণ ভগ্নাংশের গুণনীয়ক অসীমসংখ্যক হয়।
একাধিক সাধারণ ভগ্নাংশের সাধারণ গুণনীয়ক ও গসাগু
এপর্যন্ত আমরা সাধারণ ভগ্নাংশের গুণনীয়ক সম্বন্ধে জেনেছি। আমরা এখন, একাধিক সাধারণ ভগ্নাংশের জন্য সাধারণ গুণনীয়ককের ধারণাটি বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে মূল ধারণাটি কিন্তু আমাদের পূর্ণ সংখ্যার যে সাধারণ গুণনীয়ককের ধারণা, সেটিই। অর্থাৎ, সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয় করতে হবে, একাধিক সাধারণ ভগ্নাংশের গুণনীয়কের তুলনার মাধ্যমে।
এক্ষেত্রে চলো একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বোঝা যাক। দুটি ভগ্নাংশ নিই।
এখন এই দুটি ভগ্নাংশের ১০ টি করে সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয় করব আমরা। সেটি নিচের ছকে লেখা হয়েছে।
উপরের ছকে চিহ্নিত করো তো কোন ভগ্নাংশ দুটি উভয় সারিতেই রয়েছে? খুব সহজেই দেখতে পারবে এবং ছকের উভয় সারিতেই রয়েছে। তাহলে পূর্ণসংখ্যার সাধারণ গুণনীয়ককের ধারণা থেকে এক্ষেত্রেও বলা যে এবং হলো এর সাধারণ গুণনীয়ক।
কাজ: ১০ টি করে গুণনীয়ক নির্ণয়ের মাধ্যমের নিচের ভগ্নাংশগুলোর সাধারণ গুণনীয়কগুলো নির্ণয় করো। |
এখন আমরা আবার পূর্বের উদাহরণে চলে যাই। সেখান থেকে আমরা সাধারণ গুণনীয়কগুলো পেয়েছি এবং । এবার বলো তো এদের মধ্যে কোনটি বড়?
তোমরা কিন্তু সমহরবিশিষ্ট ভগ্নাংশ তৈরি করা শিখেছো। উদাহরণ হিসেবে আমরা চাইলে ও ভগ্নাংশ দুটি দেখতে পারি। এদেরকে সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশ করতে হলে কী করতে হবে? প্রথমেই সমহর কথাটি যখন আসছে, বোঝাই যাচ্ছে, দুটি ভগ্নাংশের হরকে সমান করতে হবে। এক্ষেত্রে কি হবে? দুটি ভগ্নাংশেরই হর হবে ৬। কেননা ২ ও ৩ এর লসাগু হয় ৬। এখন ভগ্নাংশ দুটির লবের কথাও তো চিন্তা করতে হবে। নতুন সমহর ভগ্নাংশের লব কি হবে? এক্ষেত্রে আমরা আবার গ্রিডের সাহায্য নিয়ে ভাবতে পারি।
গ্রিড থেকে কী দেখা যাচ্ছে? হর ৬ হলে এর লব হবে ৩। কারণটি কিন্তু খুব সহজ। গ্রিড থেকে পাই, হর ৬ হতে হলে, মূল কাঠামোটিকে পূর্বের ২ ভাগের জায়গায় ৬ ভাগ করা হচ্ছে। এতে বেগুনি রঙের ঘরের সংখ্যা ভাগ ১ থেকে বেড়ে হয় ৩। অর্থাৎ, মোট ঘরসংখ্যা ৬ হলে, বেগুনি রঙের ঘরের সংখ্যা ৩ হচ্ছে। তার মানে হর যে গুণিতকে বাড়ছে, লবও সেই গুণিতকে বাড়বে। তাহলে, লব হবে ( ১ ৩)=৩ তাহলে নতুন ভগ্নাংশটি হচ্ছে তেমনিভাবে এই ভগ্নাংশটির হর এখন ৬। সেক্ষেত্রে নতুন ভগ্নাংশটি হবে ।
এখান থেকে খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে এর মানে হল , ।
এবার চিন্তা করে দেখো তো ও এর মাঝে কোনটি বড়?
এখানে ভগ্নাংশ দুটির হরের লসাগু ৪৮। তাহলে সমহরের ধারণা থেকে সহজেই নির্ণয় করা যায় , =
অর্থাৎ,
তার মানে বড়। তাহলে এই ই - হল ভগ্নাংশ দুটির জন্য গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয় বা গসাগু।
কাজ: ভগ্নাংশগুলোর সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয় করেছো তোমরা। এখন সেটির সাহায্যে গসাগু নির্ণয় করো |
এখন তোমরা চিন্তা করো আমরা এতক্ষণ এমন দুটি ভগ্নাংশ নিয়ে কাজ করেছি, যাদের লব শুধুমাত্র ১। এবার একটু ভিন্ন কিছু নিয়ে ভাবা যাক। এবার চলো আমরা ভগ্নাংশ হিসেবে ও নিই। এদের গসাগু নির্ণয় করতে হবে। তাহলে চলো প্রথমেই গসাগু নির্ণয়ের নিয়ম অনুযায়ী এদের গুণনীয়কগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। প্রথমেই এর গুণনীয়কগুলো কি হবে? আমরা কিন্তু জানি সবগুলো গুণনীয়ক খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। তাহলে ১০ টি গুণনীয়ক বের করার চেষ্টা করি।
এখন ভাবো তো এর গুণনীয়কগুলো কি হবে? চলো খুঁজে দেখার চেষ্টা করি।
এখান থেকে দেখো, ১০ টি করে গুণনীয়ক নির্ণয়ের পর খুব সহজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি একটি সাধারণ গুণনীয়ক পাওয়া যাচ্ছে। সেটি হলো । প্রশ্ন হলো আমরা এটিকেই গসাগু বলতে পারব কিনা? কারণ সাধারণ ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে কিন্তু পূর্ণসংখ্যার মত করে নির্দিষ্ট সংখ্যক গুণনীয়ক থাকে না। এর মানে হলো, সাধারণ গুণনীয়কের সংখ্যাও কিন্তু আসলে নির্দিষ্ট নয়। অর্থাৎ, একাধিক সাধারণ দশমিক ভগ্নাংশের সাধারণ গুণনীয়কগুলোর সংখ্যাও অসীম।
এবার তাহলে তোমার এপর্যন্ত করা কাজের মাধ্যমে সাধারণ গুণনীয়কগুলোর মাঝে কি কোন সম্পর্ক পাওয়া যায়? আমরা যদি পূর্বে আমাদের দেখানো উদাহরণ এর কথা ভাবি, তাহলে দেখতে পারবো যে, ভগ্নাংশ দুটির সাধারণ গুণনীয়ক ছিল ও ।
এবার চলো আমরা এই বিষয়ে আরেকটু কাজ করি। আমরা এবার এই ভগ্নাংশ দুটির ১২ টি করে গুণনীয়ক নির্ণয় করব।
এখান থেকে কি দেখা যাচ্ছে? আমরা কি নতুন কোন সাধারণ গুণনীয়ক পেয়েছি? চিহ্নিত অংশ থেকে দেখতে পাবে, ও এই ভগ্নাংশ দুটির সাধারণ গুণনীয়ক।
এখন একটি বিষয় চিন্তা করো। আমরা কিন্তু সাধারণ গুণনীয়কগুলোর মাঝেও চাইলে একটি সম্পর্ক নির্ণয় করতে পারব। নিচে দেখো,
অর্থাৎ, ক্রমানুযায়ী গুণনীয়ক নির্ণয় করে প্রাপ্ত প্রথম সাধারণ গুণনীয়কটির সাহায্যে চাইলে অন্য সাধারণ গুণনীয়কগুলো পাওয়া সম্ভব। যেভাবে আমরা ভাগ করে করে ভগ্নাংশের সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয় করেছি সেভাবেই প্রথম প্রাপ্ত সাধারণ গুণনীয়কটিকে ক্রমানুযায়ী পূর্ণসংখ্যাগুলো দ্বারা ভাগ করে গেলেই সাধারণ গুণনীয়কগুলো নির্ণয় করা যাবে।
এখন চিন্তা করো, তুমি যখন কাগজ ভাঁজ করেছিলে, ভাঁজ করে পাওয়া ভাগগুলো বড় ছিল নাকি কাগজটি বড় ছিল? অবশ্যই কাগজটি বড় ছিল, কারণ সেই একটি কাগজের মাঝেই বারবার ভাগ করা হচ্ছিল। এখান থেকে কিন্তু সহজেই ধারণা করা যায়, একটি ভগ্নাংশকে আরেকটি পূর্ণসংখ্যা দ্বারা ভাগ করা হলে নতুন পাওয়া ভাগফল বা ভগ্নাংশটি অবশ্যই মূল ভগ্নাংশের তুলনায় ছোট হবে।
এখন তাহলে এখান থেকে কি বুঝলে বলো তো? ক্রমানুযায়ী যদি সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয় করা হয়, তাহলে একদম প্রথমে যে সাধারণ গুণনীয়কটি পাওয়া যাবে, সেটিই হবে সবচেয়ে বড় সাধারণ গুণনীয়ক বা গসাগু।
এখন তাহলে কি বলা যায় বলো তো? আমরা ১০ টি করে গুণনীয়ক নির্ণয় করে ও এর এর যে একমাত্র সাধারণ গুণনীয়কটি পেয়েছি, সেই ই হল ভগ্নাংশ দুটির গসাগু।
এবার চিন্তা করো তো , ও এর গসাগু নির্ণয় করতে পারব কীনা? তাহলে চলো ১০ টি করে গুণনীয়ক নিয়ে গসাগু নির্ণয় করার চেষ্টা করি।
কাজ: ছক ২.৩ এর ন্যায় -এর গুণনীয়কগুলো নির্ণয় ও যাচাই করো। |
এখন বলো তো এই ভগ্নাংশ দুটির সাধারণ গুণনীয়ক কত? ছক থেকে কিন্তু কোন সাধারণ গুণনীয়ক পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ভগ্নাংশ দুটির অবশ্যই একটি সাধারণ গুণনীয়ক রয়েছে। এবার তাহলে চলো আমরা মোট ১৫ টি করে সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয় করার চেষ্টা করি।
এবার দেখো, আমরা কিন্তু একটি সাধারণ গুণনীয়ক পেয়েছি, সেটি হল এখন কিন্তু আমরা বলতে পারব যে এই ই ই ভগ্নাংশ দুটির নির্ণেয় গসাগু।
একটি বিষয় চিন্তা করো, ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার ক্ষেত্রে গুণনীয়ককের সংখ্যা নির্দিষ্ট ছিল। তাই চাইলেই এভাবে গুণনীয়ক নির্ণয় করে আমরা সাধারণ গুণনীয়ক কিংবা গসাগু নির্ণয় করতে পেরেছি। কিন্তু ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে বিষয়টি নির্দিষ্ট নয়। একারণে আমরা চাইলে বুঝতে পারব না যে ঠিক কতটি করে গুণনীয়ক নেয়া প্রয়োজন। যেমন এর ক্ষেত্রে ৪ টি করে গুণনীয়ক বের করলেই কিন্তু আমরা গসাগুটি পেতে পারতাম। আবার ও এর ক্ষেত্রে আমাদের ন্যূনতম ৮ টি গুণনীয়ক নির্ণয় করা প্রয়োজন ছিল গসাগু নির্ণয় করার জন্য। আবার পরবর্তীতে ও এর ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের ১০ টি গুণনীয়ক নির্ণয় করলেই হয় না। অন্তত ১২ টি গুণনীয়ক নির্ণয় করতে পারলে গসাগুটি পাওয়া যাবে। এটি কিন্তু অনেক সময় সাপেক্ষ এবং প্রতিটি ভগ্নাংশের জন্য ন্যূনতম কতটি গুণনীয়ক নির্ণয় করলে প্রথম সাধারণ গুণনীয়ক বা গসাগুটি পাওয়া যাবে, সেই সংখ্যাটি অনির্দিষ্ট।
তাহলে এবার চলো তো চিন্তা করা যাক এই সমস্যার কোন সমাধান করা যায় কিনা?
এখানে চিন্তা করে দেখো, আমরা সমহরের ধারণাটি এখানে কোনভাবে প্রয়োগ করতে পারি কিনা?
দেখো, ও কে কিন্তু চাইলেই সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে রুপান্তর করা যায়।
৪ ও ১১ এর লসাগু হল ৪৪। তারমানে সমহরে রুপান্তর করা হলে, পাওয়া যাবে, = । কারণ হরে ৪ এর সাথে ১১ গুণ করা হলে ৪৪ পাওয়া যায়। তাহলে লবেও ১১ গুণ করতে হবে সমতার জন্য।
তেমনিভাবে = =
এখন চিন্তা করে দেখো, আমাদের দুটি ভগ্নাংশের জন্য হর কিন্তু একই। তাহলে আমাদের কিন্তু হর নিয়ে আর কিছু ভাবতে হচ্ছে না। এখন ভাবো আমরা যদি দুটি ভগ্নাংশকেই ৪৪ দিয়ে গুণ করতাম, তাহলে দুটি পূর্ণ সংখ্যা পেতাম, সেগুলো হল, ১১ ও ১২। এখন বলো তো ১১ ও ১২ এর গসাগু কত? তোমরা কিন্তু ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার গসাগু কীভাবে নির্ণয় করতে হয় তা জানো। আমরা বলতে পারি ১১ ও ১২ এর গসাগু কিন্তু ১ হবে।
আবার সমতা করার জন্য ১১ ও ১২ এর গসাগুকে কিন্তু ৪৪ দিয়ে ভাগ করা প্রয়োজন। কারণ আমাদের প্রাপ্ত ভগ্নাংশ দুটি ছিল = অর্থাৎ, গসাগু হবে
এখান থেকে তাহলে কি বোঝা যায়? একাধিক সাধারণ ভগ্নাংশের যদি হর একই হয়, অর্থাৎ ভগ্নাংশগুলো সমহরবিশিষ্ট হয়, তাহলে, ভগ্নাংশগুলোর গসাগুও একটি ভগ্নাংশ হবে, যে ভগ্নাংশের হরটি সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশগুলোর হর হবে এবং লবটি সমহরবিশিষ্ট ভগ্নাংশের লবগুলোর গসাগু হবে।
সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশ দুটির লবের মধ্যে কোনটি বড়? অবশ্যই ১১ ও ১২ এর মাঝে কিন্তু ১২ বড়। এখন চিন্তা করো তো এই দুটি ভগ্নাংশের জন্য আমাদের গসাগু পাওয়ার জন্য ন্যূনতম কতটি করে গুণনীয়ক নির্ণয় করতে হয়েছিল?
কাজ: সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে রুপান্তরের মাধ্যমে পূর্বে প্রদত্ত সকল ভগ্নাংশের জোড়ার গসাগু নির্ণয় করো। এরপর গসাগুর সাহায্যে ১০ টি করে সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয় করো। |
এখন তাহলে চলো আমরা দেখি আরও কিছু গসাগু নির্ণয় করতে পারি কিনা ধরো আমাদের ভগ্নাংশ দুটি হল ও
কাজ: গুণনীয়ক নির্ণয়ের মাধ্যমে ভগ্নাংশ দুটির সাধারণ গুণনীয়ক ও গসাগু নির্ণয় করো। উভয় ভগ্নাংশের জন্যেই ন্যূনতম কতটি গুণনীয়ক নির্ণয় করা হলে গসাগু পাওয়া যায়? |
আবার চলো আমরা ভগ্নাংশ দুটিকে সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে রুপান্তর করার চেষ্টা করি। ভগ্নাংশ দুটির হর ৫ ও ১৩ এর গসাগু ৬৫। তাহলে সমহরে রুপান্তরিত ভগ্নাংশ দুটি হবে
এবারকী করতে হবে? হরকে ঠিক রেখে, লবে ৩০ ও ৩৯ এর গসাগু নির্ণয় করতে হবে। ৩০ ও ৩৯ এর গসাগু হল ৩।
কাজ: গসাগু নির্ণয়ের যেকোনো একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে ৩০ ও ৩৯ এর গসাগু নির্ণয় করো। |
অর্থাৎ, ভগ্নাংশ দুটির নির্ণেয় গসাগুটি হবে
এখন এই সমহরবিশিষ্ট ভগ্নাংশ দুটির লবের গসাগু কিন্তু ৩। তার মানে যদি ভগ্নাংশ দুটিকে ৩ দিয়ে ভাগ করতাম, তাহলে যে দুটি ভগ্নাংশ পেতাম সেটি কত হত? এবং । এদের লবগুলোর মধ্যে কোনটি বৃহত্তম? তুমি পূর্বে গুণনীয়ককের সাহয্যে যেভাবে গসাগু নির্ণয় করে এসেছিলে সেখানে সাধারণ গুণনীয়ক বা গসাগুটি পাওয়ার জন্য ন্যূনতম কতটি গুণনীয়ক নির্ণয় করার প্রয়োজন হয়েছিল?
তুমি চাইলে এভাবে ধাপে ধাপে কিন্তু কাজটি করতে পারো। নিচে পূর্বে নির্ণয় করে আসা দুটি ভগ্নাংশের গসাগু নির্ণয়ের ধাপ দেখানো হল।
এখন একটি বিষয় ভাবো। আমরা কিন্তু পুরো প্রক্রিয়ায় উদাহরণ হিসেবে ২ টি করে ভগ্নাংশ নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু তুমি চাইলে পূর্বে দেখানো সকল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুই এর অধিক ভগ্নাংশেরও গসাগু নির্ণয় করতে পারবে।
কাজ: ১) গুণনীয়ক নির্ণয়ের মাধ্যমে এবং সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে রুপান্তরের মাধ্যমে নিম্নোক্ত ভগ্নাংশগুলোর গসাগু নির্ণয় করো ২) ১ নং কাজের প্রতিটি সমস্যায় প্রতিটি ভগ্নাংশের জন্য ন্যূনতম কতটি করে গুণনীয়ক বের করতে হয়েছিল তা লেখো। ৩) সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে রুপান্তরের পর লবের উপাদানগুলোর তুলনা করে কি তুমি ২ নং কাজের সাথে কোন সম্পর্ক নির্ণয় করতে পারো? |
আমরা কিন্তু ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার গুণিতক কী সেটি জানি। ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার গুণিতক কোনগুলো বলো তো? একদম সহজে বলা যায়, কোন নির্দিষ্ট ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাথে আরেকটি ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা গুণ করলে গুণফল পাওয়া যায়, সেটিই ওই নির্দিষ্ট ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার গুণিতক। যেমন ৩ এর গুণিতকগুলো কি হতে পারে? ৩, ৬, ৯, ১২, ... এভাবে অসীমসংখ্যক। কারণ আমরা জানি পূর্ণসংখ্যা অসীমসংখ্যক। তাহলে উদাহরণ অনুযায়ী ৩ এর সাথে গুণ করার জন্য অসীমসংখ্যক পূর্ণসংখ্যা পাওয়া সম্ভব। তাই যেকোনো ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার গুণিতকও অসীমসংখ্যাক থাকতে পারে।
লসাগুর সাথে গুণিতকের সম্পর্ক রয়েছে। লসাগুর পূর্ণরূপ হলো লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও একাধিক সংখ্যার প্রয়োজন লসাগু নির্ণয় করতে হলে। আমরা একাধিক সংখ্যার গুণিতক নির্ণয় করলে দেখা যায়, এক বা একাধিক সংখ্যা রয়েছে যা উক্ত সকল সংখ্যারই গুণিতক। সেই একটি বা একাধিক গুণিতককে বলা হয় সাধারণ গুণিতক। এদের মধ্যে যে গুণিতকটি সবচেয়ে ক্ষুদ্র অর্থাৎ, লঘিষ্ঠ সেই গুণিতকটিই হল লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক। ভেবে বলো তো একটি মাত্র সাধারণ গুণিতক থাকলে কি হয়?
ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার পাশাপাশি, সাধারণ ভগ্নাংশের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতিতে লসাগু নির্ণয় করা সম্ভব।
সাধারণ ভগ্নাংশের গুণিতক
তোমরা সাধারণ ভগ্নাংশের গুণনীয়ক সম্পর্ক জেনেছো। এবার চলো আমরা সাধারণ ভগ্নাংশের গুণিতক সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। এবারও তাহলে চলো আমরা একটি খেলা খেলি। এখানেও আমরা গুণনীয়ক নির্ণয়ের খেলার মত খেলা খেলব। তবে এবার উল্টোভাবে ।
গুণিতক খুঁজি
তোমরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে যাও। এবার আগের মতই একটি কাগজকে সমান দুই ভাগে কাটো। এভাবে কাগজটি দুটি খণ্ড হলো এবং প্রতিটি খন্ডই কিন্তু মূল কাগজটির অংশ। তুমি এরকম কতটি খন্ড পেলে যেটি মূল কাগজের অংশ? ২ টি। এবার আরও কিছু কাগজ কেটে এরকম ২০ টি খণ্ড তৈরি করো। প্রতিটি খন্ডের উপরে লিখে চিহ্নিত করো।
একইভাবে গুণনীয়কের খেলায় তুমি যেভাবে আরও ৩ টি কাগজ নিয়ে, সেই কাগজগুলোকে যথাক্রমে সমান ৩, ৪ ও ৫ খণ্ডে বিভক্ত করেছিলে এবারও তাই করো। তুমি যদি ছক ১.১ সম্পূর্ণ করে আসো, তাহলে দেখতে পাবে সমান ৩ খণ্ডে বিভক্ত করলে প্রতিটি খণ্ড হবে এভাবে বাকিগুলোও নির্ণয় করা যাবে। এখন তুমি আরও কাগজ কেটে, এর মোট ২০ টি খন্ড তৈরি করো। এটিরও প্রতি খন্ডের উপর লিখে চিহ্নিত করো
একইভাবে বাকি দুটি ভিন্ন আকারের খণ্ডের জন্যেও ২০ টি করে খণ্ড তৈরি করো এবং উপরের নিয়মে চিহ্নিত করো।
এবার প্রথমেই তোমরা আকারের খণ্ডগুলো নাও। খণ্ডগুলোকে ক্রমান্বয়ে পাশাপাশি সাজাবে।
বসানোর মানে হলো প্রতিবারে গুণ করে যাওয়া। তাহলে এভাবে ক্রমান্বয়ে মোট ২০ টি খন্ড বসাও এবং এর প্রেক্ষিতে নিচের ছক পূরণ করো।
ছক ৪.১
(আংশিক পূর্ণ করা আছে। তোমাদের কাজের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করো পরবর্তীতে চিত্রের সাহায্যে ধারণা নিয়ে, নিজের খাতায় ছক এঁকে পাশাপাশি বসানো টুকরার সংখ্যা ১১ হতে ২০ এর জন্য ছক পূরণ করো)
এখন তাহলে কি দেখতে পাচ্ছো? তুমি কিন্তু প্রত্যেকবার একটি করে খণ্ড পাশাপাশি বসাচ্ছো এবং সেটির সাপেক্ষে একটি ভগ্নাংশ বা পূর্ণসংখ্যা পাচ্ছো।
কাজ: ৩, ৪ ও ৫টি সমান খন্ডে টুকরা করা কাগজগুলোর খন্ডগুলোর জন্য, খাতায় ছক ৪.১ এর অনুরূপ ছক এঁকে তা সম্পূর্ণ করো। |
ভাবো তো এই প্রক্রিয়ায় আমরা আসলে কি পাচ্ছি? উদাহরণের ওই খন্ড থেকে চিন্তা করি। ৩টি খণ্ড পাশাপাশি বসানো মানে হলো আসলে সেটিকে ৩ দিয়ে গুণ করা। তার মানে আমরা এই কাগজের টুকরা বসানোর খেলা থেকে মূলত আমরা একটি ভগ্নাংশকে একটি পূর্ণ সংখ্যা দ্বারা গুণ করছি। অর্থাৎ, যে কয়টি টুকরা (একই ভগ্নাংশ) পাশাপাশি বসানো হচ্ছে, সেই টুকরার সংখ্যা (যেটি একটি পূর্ণসংখ্যা) দিয়ে ভগ্নাংশটিকে গুণ করা হচ্ছে
এভাবে আসলে কি পাওয়া যাচ্ছে ভাবো তো? মনে করে দেখো, ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা ক্ষেত্রেও কিন্তু আমরা, কোন নির্দিষ্ট ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাকে এভাবে আরেকটি ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা দিয়ে গুণ করে ওই নির্দিষ্ট ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাটির গুণিতক পেয়েছি। সাধারণ ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে যখন এই কাজটি করছি, তখন সেগুলো সাধারণ ভগ্নাংশের গুণিতক হচ্ছে, কারণ গুণিতক বা গুণফলটি কিন্তু একটি ভগ্নাংশ অথবা পূর্ণসংখ্যা হচ্ছে।
অর্থাৎ, একটি ভগ্নাংশের সাথে একটি পূর্ণসংখ্যা গুণ করলে আমরা যে আরেকটি ভগ্নাংশ বা পূর্ণসংখ্যা পাই, সেটিই ওই ভগ্নাংশটির একটি গুণিতক।
এখন তাহলে আমরা নিচের ছকটি পূরণ করে একটি গুণিতক টেবিল তৈরি করে ফেলি। তোমরা প্রতিটি ভগ্নাংশেরই প্রথম ১০ টি করে গুণিতক নির্ণয় করবে। ছকটি আংশিকভাবে পূর্ণ করা হয়েছে।
এভাবেই তুমি চাইলে যেকোনো সাধারণ ভগ্নাংশের গুণিতক নির্ণয় করতে পারবে।
কাজ: তুমি তোমার পছন্দমত ৫ টি সাধারণ ভগ্নাংশ নাও এবং তাদের ১০ টি করে গুণিতক নির্ণয় করো।
এখন চিন্তা করে দেখো তো, তুমি কি কোন ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার সবগুলো গুণিতক নির্ণয় করতে পারো? পারো না কিন্তু। পূর্বেই জেনে এসেছি ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার গুণিতক অসীমসংখ্যক হতে পারে, যেহেতু ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার সংখ্যা অসীম। তেমনি একইভাবে উপর থেকে কিন্তু তোমরা দেখতে পারছো যে সাধারণ ভগ্নাংশের গুণিতক সংখ্যাও অসীম। কারণ একটি সাধারণ ভগ্নাংশের সাথে আরেকটি পূর্ণসংখ্যা গুণ করলে আমরা সবসময়ই ভগ্নাংশ অথবা পূর্ণসংখ্যা পাই।
সাধারণ ভগ্নাংশের সাধারণ গুণিতক ও লসাগু
এপর্যন্ত আমরা সাধারণ ভগ্নাংশের গুণিতক কী সেটি দেখেছি। এখন, সাধারণ ভগ্নাংশের জন্য সাধারণ গুণিতক আসলে কী সেটি বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে মূল ধারণাটি কিন্তু আমাদের ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাধারণ গুণিতকের ধারণার মতই। অর্থাৎ, একাধিক সাধারণ ভগ্নাংশের গুণিতকের তুলনা করে সাধারণ গুণিতক নির্ণয় করতে হবে।
চলো আমরা গুণিতক খোঁজার খেলায় তৈরি করা কাগজের টুকরাগুলো নিয়ে আবার খেলার চেষ্টা করি। আবার তোমরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে যাও।
আমরা জানি সাধারণ গুণিতক নির্ণয় করতে হলে কিন্তু একাধিক ভগ্নাংশের মাঝে তুলনা করা লাগে। তাই তোমাদের নিচের ভগ্নাংশগুলোর তুলনা করতে হবে।
এভাবে আবার এর পাশে এর আরেকটি টুকরা এবং এর পাশে এর আরেকটি টুকরা বসাও। এরকম করে চলবে। এবার তোমার কাজ হলো এটি চিহ্নিত করা কোন কোন জায়গায় গিয়ে টুকরাগুলো মিলে যাচ্ছে। এখানে সাহায্যের জন্য চিত্রটি দেখো। তোমরা দেখো, দুটি এর খণ্ড এবং ৩ টি এর খণ্ড এবং ৩ এর খণ্ড এক জায়গায় গিয়ে মিলেছে টি ।
ভাল করে খেয়াল করলে দেখতে পারবে উভয়েই ১ অংশে বা একটি কাগজের সমান অংশে গিয়ে মিলেছে। এভাবে ২০ টি খণ্ডই বসাও। আর যে যে জায়গায় একসাথে হচ্ছে সেগুলো চিহ্নিত করো এবং ছকে পূরণ করো। এভাবে ২), ৩) এবং ৪) এর জন্যেও একইভাবে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করো এবং সেই অনুযায়ী ছক ৪.৩ পূরণ করো
ছক ৪.৩
আংশিক পূরণ করা আছে। নির্দেশিত কাজের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করতে হবে)
এই ছক থেকে তোমরা কি বুঝতে পারলে?
এবার চলো আমাদের জানা একটি উদাহরণ দেখা যাক। আমরা আবার ও ভগ্নাংশ দুটি নিই। এখন এই দুটি ভগ্নাংশেরই ১০ টি করে গুণিতক নির্ণয় করব আমরা। সেটি নিচের ছকে নির্ণয় করা হয়েছে দেখো।
উপরের ছকে চিহ্নিত করো তো কোন ভগ্নাংশ বা পূর্ণসংখ্যা দুটি উভয় সারিতেই রয়েছে? খুব সহজেই দেখতে পারবে এবং ১ ছকের উভয় সারিতেই রয়েছে। তাহলে পূর্ণসংখ্যার সাধারণ গুণিতকের ধারণা থেকে এক্ষেত্রেও বলা সম্ভব যে এবং ১ হলো ও এর সাধারণ গুণিতক।
কাজ: ১০ টি করে গুণিতক নির্ণয়ের মাধ্যমের নিচের ভগ্নাংশগুলোর সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয় করো। |
এখন আমরা আবার পূর্বের উদাহরণে চলে যাই। সেখান থেকে আমরা সাধারণ গুণিতকগুলো পেয়েছি এবং ১ এবার বলো তো এদের মধ্যে কোনটি ছোট? সাধারণ ভগ্নাংশের গসাগু নির্ণয় করার সময় কিন্তু আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করে দেখেছি। এখান থেকে সহজেই বলা যায় এবং ১ এর মাঝে হলো ছোট। তাই বলা যায় হল এর সবচেয়ে ছোট কিংবা লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক।
কাজ: ভগ্নাংশগুলোর সাধারণ গুণিতক নির্ণয় করেছো তোমরা। এখন সেটির সাহায্যে লসাগু নির্ণয় করো |
এখন তোমরা চিন্তা করো আমরা এতক্ষণ এমন দুটি ভগ্নাংশ নিয়ে কাজ করেছি, যাদের লব শুধুমাত্র ১। এবার একটু ভিন্ন কিছু নিয়ে ভাবা যাক। এবার চলো আমরা ভগ্নাংশ হিসেবে নিই। এদের লসাগু নির্ণয় করতে হবে। তাহলে চলো প্রথমেই লসাগু নির্ণয়ের নিয়ম অনুযায়ী এদের গুণিতকগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। প্রথমেই এর গুণিতকগুলো কি হবে? ছকে এর ১০ টি গুণিতক বের করার চেষ্টা করি।
ছক ৫.১
এখন ভাবো তো এর গুণিতকগুলো কি হবে? চলো খুঁজে দেখার চেষ্টা করি।
ছক ৫.২
এখান থেকে দেখো, খুব সহজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি দুটি ভগ্নাংশের যাচ্ছে। সেটি হলো ২। এখন প্রশ্ন হলো আমরা কি এটিকেই লসাগু বলতে পারব কিনা?
এখন চিন্তা করে দেখো, সাধারণ ভগ্নাংশের লসাগু কিন্তু প্রায় পুরোটাই পূর্ণ সংখ্যার মত নিয়ম মেনে চলে। পূর্ণসংখ্যার লসাগু নির্ণয় করার সময় আমরা কি দেখেছি, দুটি সংখ্যার মাঝে একদম প্রথম যে সাধারণ গুণিতকটি পাওয়া যায় সেটিই লসাগু। যেমন শুধু ৬ এবং ৮ এর লসাগু কি হয়?
৬ এর গুণিতক গুলো হলো: ৬, ১২, ১৮, ২৪, ... | ৮ এর গুণিতকগুলো হলো: ৮, ১৬, ২৪, ৩২, ... |
এখানে, ২৪, ৬ ও ৮ দুটিরই সাধারণ গুণিতক এবং আমরা বলতে পারি এটিই আসলে ৬ ও ৮ এর লসাগু। আবার যদি পূর্বে নির্ণয় করা এর ১২ টি করে গুণিতক নির্ণয় করি, তাহলে নিচের ছকটির মত পাব।
ছক ৫.৩
এখন দেখো, আগের বারে তুলনায় আমরা আরেকটি নতুন একটি সাধারণ গুণিতক পাচ্ছি এবং সেটি হল । এখন একটি বিষয়টি দেখো। আমরা কিন্তু সাধারণ গুণনীয়কগুলোর মত চাইলে সাধারণ গুণিতকগুলোর মাঝেও সম্পর্ক সম্পর্ক নির্ণয় করতে পারব। নিচে দেখো,
অর্থাৎ, গুণনীয়কের মতই যদি ক্রমানুযায়ী গুণিতক নির্ণয় করা হয়, তাহলে প্রাপ্ত প্রথম সাধারণ গুণিতকটির সাহায্যে চাইলে অন্য সাধারণ গুণিতকগুলোও পাওয়া সম্ভব। অর্থাৎ, গুণ করে করে একটি সাধারণ গুণিতক নির্ণয় করা গেলে এরপর বাকি সাধারণ গুণিতকগুলোও নির্ণয় করা যাবে। সেক্ষেত্রে প্রথম প্রাপ্ত সাধারণ গুণিতকটিকে আমার ক্রমান্বয়ে পূর্ণসংখ্যা দ্বারা গুণ করা হলেই পরবর্তী সাধারণ গুণিতকগুলো পাওয়া যাবে।
এবার গুণিতক খোঁজার খেলায় যখন কাগজের টুকরা বারবার পাশাপাশি বসানো হচ্ছিল তখন কি হচ্ছিল? প্রতিবারই কিন্তু মোট অংশটি আমদের ভগ্নাংশ খণ্ডের চেয়ে বড় পাচ্ছিলাম এবং একটা সময় গিয়ে দেখা যায় কিছু ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে কিন্তু সেগুলো মূল কাগজ তথা ১ অংশের চেয়েই বড় হচ্ছিল।
এখন এখান থেকে কি সিদ্ধান্তে আসা যায় ভাবো তো? আমরা প্রতি ক্ষেত্রেই দেখতে পাচ্ছি যে ভগ্নাংশের সাথে পূর্ণসংখ্যা গুণ করা হলে পরবর্তীতে আগের রাশির চেয়ে তুলনামূলক বড় একটি রাশি পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ, একটি ভগ্নাংশকে আরেকটি পূর্ণসংখ্যা দ্বারা গুণ করা হলে নতুন পাওয়া গুণফল অবশ্যই মূল ভগ্নাংশের তুলনায় বড় হবে। আবার ভগ্নাংশগুলো হতে আমরা প্রথম যে সাধারণ গুণিতক পাই, সেটিকে ক্রমান্বয়ে পূর্ণসংখ্যা দ্বারা গুণ করা হলে পরবর্তী সাধারণ গুণিতক গুলো পাওয়া যাচ্ছে।
অর্থাৎ, একাধিক ভগ্নাংশের মধ্যে গুণিতক নির্ণয় করা হলে, প্রথম যে সাধারণ গুণিতকটি পাওয়া যাবে সেটি সর্বদাই সাধারণ গুণিতকগুলোর মাঝে সবচেয়ে ছোট হবে। আর একদম প্রথমে পাওয়া সেই সাধারণ গুণিতকটিই হবে লসাগু।
এখন তাহলে কি বলা যায় বলো তো? আমরা ১০ টি করে গুণিতক নির্ণয় করে এর যে একমাত্র সাধারণ গুণনীয়কটি পেয়েছি, সেই ২ ই হল ভগ্নাংশ দুটির লসাগু এবার চিন্তা করো তো এর লসাগু নির্ণয় করতে পারব কীনা? তাহলে চলো ১০ টি করে গুণিতক নিয়ে লসাগু নির্ণয় করার চেষ্টা করি।
কাজ: ছক ৫.২ এর ন্যায় এর গুণিতকগুলো নির্ণয় করো। |
এখন বলো তো এই ভগ্নাংশ দুটির সাধারণ গুণিতক কত? ছক থেকে কিন্তু কোন সাধারণ গুণিতক পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ভগ্নাংশ দুটির অবশ্যই সাধারণ গুণিতক থাকবে। এবার তাহলে চলো, গসাগু নির্ণয়ের মত করে এটিরও আমরা মোট ১৫ টি করে সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয় করার চেষ্টা করি।
এখন দেখো, আমরা কিন্তু একটি সাধারণ গুণিতক পেয়েছি। সেটি হল ৩। তাহলে এই ৩ ই কিন্তু ভগ্নাংশ দুটির সাধারণ গুণিতক।
তোমরা যদি সাধারণ ভগ্নাংশের গসাগু থেকে দেখে আসো, তাহলে কিন্তু বুঝতে পারবে আমরা শুধু গুণনীয়কের সাহায্যে গসাগু নির্ণয় করতে গিয়ে যে সমস্যায় পড়েছিলাম, সেই একই সমস্যায় আমরা পড়ছি শুধু গুণিতকের সাহায্যে লসাগু নির্ণয় করতে গিয়ে। এখন মজার বিষয়টি হলো, আমরা আসলে ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার ক্ষেত্রে যেভাবে গুণিতক নির্ণয় করে লসাগু নির্ণয় করি, সাধারণ ভগ্নাংশের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতিটি একদম একই। পূর্ণসংখ্যার ক্ষেত্রেও কিন্তু শুধু এভাবে গুণিতক দিয়ে লসাগু বের করা অনেক সময় সাপেক্ষ কাজ হয়। কারণ ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার গুণিতকের সংখ্যা কিন্তু সেটির গুণনীয়কের মত নির্দিষ্ট না। একইভাবে সাধারণ ভগ্নাংশের গুণিতকের সংখ্যাও অনির্দিষ্ট এবং অসীম সংখ্যক।
একারণে, পূর্বে দেখে আসা গুণনীয়কের মত এক্ষেত্রেও আমরা চাইলে বুঝতে পারব না যে ঠিক কতটি করে গুণিতক নেয়া প্রয়োজন।
যেমন এর ক্ষেত্রে ৪। ৪ টি করে গুণিতক নির্ণয় করেই কিন্তু আমরা লসাগু পেতে পারতাম। আবার এর ক্ষেত্রে, উভয় ভগ্নাংশের ন্যূনতম ৮ টি গুণিতক নিতে হত লসাগুটি পাওয়ার জন্য।
অপরদিকে ভগ্নাংশ দুটির ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি ১০ টি গুণিতক নির্ণয় করলেই হবে না। অন্তত ১২ টি নির্ণয় করতে পারলে লসাগুটি পাওয়া যাবে। এই বিষয়টি অনেক সময় সাপেক্ষ এবং প্রতিটি ভগ্নাংশের জন্য ন্যূনতম কতটি গুণিতক নির্ণয় করলেই প্রথম সাধারণ গুণিতক তথা লসাগুটি পাওয়া যাবে, সেই সংখ্যাটিও অনির্দিষ্ট।
তোমরা যদি গসাগু অংশটি দেখে আসো, তাহলে কিন্তু তোমরা খুব সহজেই জানো যে এর একটি সহজ সমাধান রয়েছে। সেটি হল যে সকল ভগ্নাংশের লসাগু নির্ণয় করতে হবে, তাদের সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে রূপান্তর করা।
আমরা পূর্বেই দেখে এসেছি কে সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে রূপান্তর করা হলে যা পাওয়া যায় সেটি হলো । তেমনিভাবে
আবার পূর্বের গসাগুর ক্ষেত্রে আমরা কি দেখে এসেছি? দুটি ভগ্নাংশের হর এক বলে আমরা ভগ্নাংশ দুটিকে সমহর বা ৪৪ দিয়ে গুণ করে পাচ্ছি ১১ ও ১২। এখন এসে আমাদের কিন্তু আগের মত গসাগু নির্ণয় করলে হবে না। আমাদের লসাগু নির্ণয় করতে হবে। তোমরা পূর্ণসংখ্যার লসাগু নির্ণয় করতে পারো কিন্তু। সেই ধারণা থেকে বলা যায়, ১১ ও ১২ এর লসাগু হবে ১৩২।
যেহেতু আমাদের কারণ আমাদের গৃহীত ভগ্নাংশ দুটি ছিল তাই সমতা করার জন্য ১১ ও ১২ এর লসাগুকে ৪৪ দিয়ে ভাগ করতে হবে।
অর্থাৎ, লসাগুটি হবে = ৩। এখান থেকে তাহলে কি বোঝা যায়? একাধিক সাধারণ ভগ্নাংশের হরগুলো যদি একই হয়, অর্থাৎ ভগ্নাংশগুলো সমহরবিশিষ্ট হয়, তাহলে, ভগ্নাংশগুলোর লসাগুও একটি ভগ্নাংশ হবে, যে ভগ্নাংশের হরটি সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশগুলোর হর হবে এবং লবটি সমহরবিশিষ্ট ভগ্নাংশের লবগুলোর লসাগু হবে।
মনে রাখতে হবে আমরা যে লসাগুটি পাব সেটিকে অবশ্যই লঘিষ্ঠ আকারে নিয়ে প্রকাশ করতে হবে। দেখো, উপরে সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশ দুটির লবের মধ্যে কোনটি বড়? অবশ্যই ১১ ও ১২ এর মাঝে কিন্তু ১২ বড়। এখন চিন্তা করো তো এই দুটি ভগ্নাংশের লসাগু পাওয়ার জন্য ন্যূনতম কতটি করে গুণিতক নির্ণয় করতে হয়েছিল?
কাজ: সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে রুপান্তরের মাধ্যমে পূর্বে প্রদত্ত সকল ভগ্নাংশের লসাগু নির্ণয় করো। এরপর লসাগুর সাহায্যে ১০ টি করে সাধারণ গুণিতক নির্ণয় করো। |
এখন তাহলে চলো আমরা দেখি আরও কিছু লসাগু নির্ণয় করতে পারি কিনা।
ধরো ভগ্নাংশ দুটি হল
কাজ: গুণিতক নির্ণয়ের মাধ্যমে ভগ্নাংশ দুটির সাধারণ গুণিতক ও লসাগু নির্ণয় করো। উভয় ভগ্নাংশের জন্যেই ন্যূনতম কতটি গুণিতক নির্ণয় করা হলে লসাগু পাওয়া যায়? |
চলো আমরা ভগ্নাংশ দুটিকে সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে রুপান্তর করার চেষ্টা করি। আমরা পূর্বেই দেখে এসেছি সমহরবিশিষ্ট ভগ্নাংশে রুপান্তর করা হলে নতুন প্রাপ্ত ভগ্নাংশ দুটি হবে
এবার আমাদের কী করতে হবে? হরকে ঠিক রেখে, লবে ৩০ ও ৩৯ এর লসাগু নির্ণয় করতে হবে। ৩০ ও ৩৯ এর লসাগু হল ৩৯০।
কাজ: লসাগু নির্ণয়ের যেকোনো একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে ৩০ ও ৩৯ এর লসাগু নির্ণয় করো। |
তাহলে ভগ্নাংশ দুটির নির্ণেয় লসাগুটি হবে । এটিকে লঘিষ্ঠ আকারে নিলে দেখা যাবে লসাগু হবে ৬। আমরা কিন্তু আগে দেখে এসেছি, এই সমহরবিশিষ্ট ভগ্নাংশ দুটির গসাগু কিন্তু ৩। তার মানে যদি ভগ্নাংশ দুটিকে ৩ দিয়ে ভাগ করতাম, তাহলে যে দুটি ভগ্নাংশ পেতাম সেটি কত হত? এবং । এদের লবগুলোর মধ্যে কোনটি বৃহত্তম? তুমি পূর্বে গুণিতকের সাহয্যে যেভাবে লসাগু নির্ণয় করে এসেছিলে সেখানে সাধারণ গুণিতক বা লসাগুটি পাওয়ার জন্য ন্যূনতম কতটি গুণিতক নির্ণয় করার প্রয়োজন হয়েছিল?
তুমি চাইলে এভাবে ধাপে ধাপে কিন্তু কাজটি করতে পারো। নিচে পূর্বে নির্ণয় করে আসা দুটি ভগ্নাংশের গসাগু নির্ণয়ের ধাপ দেখানো হল।
সাধারণ ভগ্নাংশের গসাগুর মত, লসাগুর ক্ষেত্রেও কিন্তু আমরা পুরো প্রক্রিয়ায় উদাহরণ হিসেবে ২ টি করে ভগ্নাংশ নিয়ে কাজ করেছি। তবে এখানে দেখানো সকল প্রক্রিয়া দুইয়ের অধিক ভগ্নাংশের লসাগু নির্ণয়ের জন্যেও কার্যকর।
কাজ: ১) গুণিতক নির্ণয়ের মাধ্যমে এবং সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে রুপান্তরের মাধ্যমে নিম্নোক্ত ভগ্নাংশগুলোর লসাগু নির্ণয় করো। ২) (১) এর প্রতিটি সমস্যায় প্রতিটি ভগ্নাংশের জন্য ন্যূনতম কতটি করে গুণিতক নির্ণয় প্রয়োজন তা লেখো। ৩) সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে রুপান্তরের পর লবের উপাদানগুলোর তুলনা করে কি তুমি ২ নং কাজের সাথে কোন সম্পর্ক নির্ণয় করতে পারো? |
দশমিক ভগ্নাংশের গসাগু ও লসাগু
গুণনীয়ক এবং গুণিতক ব্যবহার করে কীভাবে পূর্ণসংখ্যা ও সাধারণ ভগ্নাংশের গসাগু ও লসাগু নির্ণয় করতে হয় আমরা এ বিষয়গুলো দেখে এসেছি। এখানে আমরা দশমিক ভগ্নাংশের গসাগু ও লসাগু শেখার চেষ্টা করব।
প্রথমেই মনে করার চেষ্টা করো তো, দশমিক ভগ্নাংশ কি? কোন সাধারণ ভগ্নাংশকে দশমিক আকারে প্রকাশ করা হলে সেটি দশমিক ভগ্নাংশ। যেমন: ০.২৫ একটি দশমিক ভগ্নাংশ। এটির সাধারণ ভগ্নাংশ রূপ হল ।
এখন চিন্তা করো কীভাবে ০.২৫ থেকে পাওয়া যায়? তোমরা এ বিষয়টি কিন্তু শিখেছো। তবুও সংক্ষেপে বলা যায়, ০.২৫ এ, দশমিকের পর ২ টি অঙ্ক রয়েছে। তার মানে এটির সাধারণ ভগ্নাংশ রূপ হবে । এখন আমরা কিন্তু সাধারণত লঘিষ্ঠ আকারে প্রকাশ করে থাকি কোন সাধারণ ভগ্নাংশকে। তাহলে ভগ্নাংশটির লঘিষ্ঠ আকারটি হবে, =
দশমিক ভগ্নাংশের গসাগু
এক্ষেত্রে আমরা দুটি পদ্ধতিতে দশমিক ভগ্নাংশের গসাগু ও লসাগু শেখার চেষ্টা করব।
প্রথমেই দুটি দশমিক ভগ্নাংশ নিব। ১.২ ও ০.১৮। আমরা এই দুটি দশমিক ভগ্নাংশ সংখ্যার গসাগু নির্ণয় করার চেষ্টা করব।
এখন গসাগু নির্ণয় করতে গেলে আমরা সরাসরি গুণনীয়ক কিংবা গুণিতক নিয়ে কাজ করব না। আমরা আগে চিন্তা করে দেখব কীভাবে দশমিক ভগ্নাংশ দুটিকে পূর্ণসংখ্যায় রুপান্তর করা যায়। দেখো, ১.২ এ, দশমিকের পর একটি অঙ্ক রয়েছে। তাহলে ১০ দিয়ে যদি এই দশমিক ভগ্নাংশটিকে গুণ করা হয়, তাহলেই কিন্তু একটি পূর্ণসংখ্যা পাওয়া যেতে পারে। কেন এই ব্যাপারটি ঘটবে তা কিন্তু তুমি দশমিক ভগ্নাংশ থেকে সাধারণ ভগ্নাংশে রুপান্তরের ধারণা থেকে দেখে এসেছো। অর্থাৎ,
তাহলে
এখন দেখো, ০.১৮ এর ক্ষেত্রে আমরা কি করব? এখানে দশমিকের পরে কিন্তু দুটি অঙ্ক রয়েছে। তাই, এই দশমিক ভগ্নাংশটিকে আমরা কিন্তু এবার ১০ দিয়ে গুণ না করে ১০০ দিয়ে গুণ করব। এক্ষেত্রেও পূর্বের ন্যায় পাওয়া যায়, ।
এখন গসাগু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সেটি হল, শুধু পূর্ণসংখ্যায় রুপান্তর করলেই হবে না। প্রত্যেকটি দশমিক ভগ্নাংশ সংখ্যাকেই একই সংখ্যা দিয়ে গুণ করে দশমিক ভগ্নাংশ থেকে পূর্ণ সংখ্যায় রুপান্তর করতে হবে। উপরের উদাহরণে দেখা যাচ্ছে, ১.২ এর সাথে ১০ গুণ করা হয়েছে, কিন্তু ০.১৮ এর সাথে ১০০ গুণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ১০ ও ১০০ সমান নয়।
তাহলে ভেবে দেখো তো, ০.১৮ কে ১০ দিয়ে গুণ করলে সেটি কি পূর্ণসংখ্যা থাকত?
দেখা যাচ্ছে ১.৮ কিন্তু পূর্ণসংখ্যা নয়।
এবার দেখো তো ১.২ কে ১০০ দিয়ে গুণ করলে সেটি পূর্ণসংখ্যা হয় কিনা?
১২০ কিন্তু একটি পূর্ণসংখ্যা।
তাই গসাগু নির্ণয় করার উপযুক্ত আকারে যাওয়ার জন্য উভয় দশমিক ভগ্নাংশকেই ১০০ দিয়ে গুণ করে পূর্ণসংখ্যায় রুপান্তর করতে হবে।
১) উদাহরণটিতে দেখো, ১০ ও ১০০ এর মধ্যে যে সংখ্যাটি বড়, অর্থাৎ ১০০ দিয়ে উভয় সংখ্যাকে গুণ করা হল। কেন বড় সংখ্যাটিকে নেয়া হল? ২) নিচের দশমিক ভগ্নাংশগুলোকে গসাগু নির্ণয়ের জন্য উপযুক্ত পূর্ণসংখ্যায় রুপান্তর করো। i) ০.২, ০.৩ |
এখন চিন্তা করো, ১০০ দিয়ে গুণ করা হলে আমরা কিন্তু দুটি পূর্ণসংখ্যা ১৮ ও ১২০ পাচ্ছি। তোমরা কিন্তু পূর্ণসংখ্যার গসাগু নির্ণয় করার পদ্ধতি জানো। সংখ্যা দুটির গসাগু হবে, ৬।
কাজ: গসাগু নির্ণয়ের যেকোনো একটি পদ্ধতির সাহায্যে ১৮ ও ১২০ এর গসাগু নির্ণয় করো। |
দেখো, আমরা কিন্তু ১.২ ও ০.১৮ এর গসাগু নির্ণয় করতে চেয়েছিলাম। ১২০ ও ১৮ এর নয় কিন্তু। আমরা ১.২ ও ০.১৮ এর সাথে ১০০ গুণ করে ১২০ ও ১৮ পাই এবং সেটির গসাগু নির্ণয় করলাম। অর্থাৎ, ১০০ সংখ্যাটি কিন্তু বেশি গুণাকারে রয়েছে। তাই এবার এটির কিন্তু সমতা করা প্রয়োজন। তাহলে সমতা করার জন্য নির্ণীত গসাগু হতে ১০০ ভাগ করতে হবে।
অতএব গসাগু হবে, = ০.০৬ এটি ছিল আমাদের প্রথম পদ্ধতি।
এবার আরেকটি পদ্ধতি রয়েছে কিন্তু। সেটি হলো, দশমিক ভগ্নাংশকে, সাধারণ ভগ্নাংশে রুপান্তর করে, সাধারণ ভগ্নাংশের সাহায্যে গসাগু নির্ণয়।
সাধারণ ভগ্নাংশে রূপান্তরের পদ্ধতিতে যাওয়ার আগে চিন্তা করে দেখো তো, প্রথম পদ্ধতিতে দেখে আসা সমতা করার পদ্ধতিটি কি একটু চেনা লাগছে? চিন্তা করো, পূর্বে যখন আমরা সাধারণ ভগ্নাংশের গসাগু নির্ণয় করতে চেয়েছিলাম, তখন কিন্তু ভগ্নাংশ দুটিকে সমহরে রুপান্তর করেছিলাম। পরে গসাগু নির্ণয়ের সময় আলাদা করে লবের গসাগু নির্ণয় করে পরবর্তীতে সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশের হর দিয়ে ভাগ করেছিলাম। চলো, এই উদাহরণটির সাহায্যেই দেখি। ১.২ কে সাধারণ ভগ্নাংশে রূপান্তর করা হলে কত হবে?
১.২ = (এখানে আমাদের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু দশমিক ভগ্নাংশ আকারে গসাগু নির্ণয় করা। তাই গণনার স্বার্থে আমরা হরে ১০ কিংবা ১০০ প্রভৃতি জাতীয় রাশি রাখার চেষ্টা করব)
আবার ০.১৮ কে সাধারণ ভগ্নাংশে রুপান্তর করলে কি পাব? ০.১৮ =
এখন ভাবো, আমরা এবং এর গসাগু কীভাবে নির্ণয় করতে পারি? খুব সহজেই সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে রুপান্তর করে গসাগুটি নির্ণয় করতে পারি। ১০ ও ১০০ এর লসাগু কত হয়? ১০০। তাহলে সমহর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে রুপান্তর করতে ভগ্নাংশ দুটি কত হবে? অপরদিকে আগের আকারেই থাকে।
পরবর্তীতে কিন্তু আমরা সাধারণ ভগ্নাংশের গসাগু যে পদ্ধতিতে নির্ণয় শিখেছি, সেই পদ্ধতিতেই গসাগু নির্ণয় করব। অর্থাৎ, গসাগুটি হবে একটি ভগ্নাংশ, যার হর হবে সমহরবিশিষ্ট ভগ্নাংশ দুটির হর এবং লব হবে, সমহরবিশিষ্ট ভগ্নাংশ দুটির গসাগু
চিন্তা করো, আমরা প্রথম পদ্ধতিতে কি করেছি? আলাদাভাবে উভয়রাশিকে ১০০ দিয়ে গুণ করে ১২০ ও ১৮ পেয়েছিলাম এবং পরবর্তীতে ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাদুটির গসাগু নির্ণয় করেছিলাম। সর্বশেষে সমতা করার জন্য গসাগুটিকে আবার ১০০ দিয়ে ভাগ করেছিলাম।
এখন কি তোমরা বুঝতে পারছো, এই দুটি পদ্ধতি আসলে একটি পদ্ধতিকেই নির্দেশ করে? অর্থাৎ, আমরা যে মূলত পূর্ণসংখ্যায় রুপান্তরের জন্য যে গুণ প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করছি, সেটি আসলে সাধারণ ভগ্নাংশ এবং এর সমহরে রূপান্তরের ধারণা থেকেই আসে।
উপরে যে প্রক্রিয়ায় গসাগু নির্ণয় করা হলো, সেই প্রক্রিয়াতে চাইলে কিন্তু একসাথে দুইয়ের অধিক দশমিক ভগ্নাংশের গসাগু নির্ণয় করা সম্ভব।
কাজ: নিচের দশমিক ভগ্নাংশগুলোর গসাগু নির্ণয় করো। ১) ০.২, ০.৩ |
দশমিক ভগ্নাংশের লসাগু
দশমিক ভগ্নাংশের লসাগু নির্ণয়ের প্রক্রিয়া কিন্তু প্রায় পুরোটাই দশমিক ভগ্নাংশের গসাগু নির্ণয়ের মত। আশা করা যায়, তোমরা দশমিক ভগ্নাংশের গসাগু নির্ণয় করতে পারো। এবার চলো একটি ভিন্ন উদাহরণের সাহায্যে দশমিক ভগ্নাংশের লসাগু নির্ণয়ের ব্যাপারটি লক্ষ্য করি। আমরা ১.৫, ০.১২ এবং ১ এর লসাগু নির্ণয় করার চেষ্টা করব। এখানে চিন্তা করো তো কি করতে হবে? আমরা কিন্তু জেনেছি যে আসলে একটি প্রক্রিয়াতেই দশমিক ভগ্নাংশের গসাগু বা লসাগু নির্ণয় করা যায়।
চলো দশমিক ভগ্নাংশ ৩ টিকে আগে সাধারণ ভগ্নাংশে রুপান্তর করলে কি হয় সেটি দেখি।
এখানে একটি বিষয় লক্ষ করে দেখো, আমরা কিন্তু এখানে একটি পূর্ণসংখ্যা নিয়েছি। এখন তোমরা কিন্তু জানো, পূর্ণসংখ্যাকেও ভগ্নাংশ আকারে প্রকাশ সম্ভব। যে পূর্ণসংখ্যাটি আছে, সেটির হরে ১ বসিয়ে কিন্তু পূর্ণসংখ্যাকে ভগ্নাংশ আকারে প্রকাশ সম্ভব।
এবার দেখো, দশমিক ভগ্নাংশগুলোকে, সাধারণ ভগ্নাংশ আকারে প্রকাশ করা হলে, তিনটি হর পাওয়া যায় ১, ১০ এবং ১০০। তোমরা কিন্তু জানো, ১, ১০ এবং ১০০ এর লসাগু হয় ১০০। তাহলে আমাদের পূর্ণসংখ্যায় রুপান্তরের পদ্ধতিতে প্রতিটি সংখ্যাকেই ১০০ দিয়ে গুণ করতে হবে। গুণ করে প্রাপ্ত ফল হলো,
১.৫ x ১০০ = ১৫০ | ০.১২ x ১০০ = ১২ | ১ × ১০০ = ১০০ |
এবার চিন্তা করো আমাদের কাজটি কি? আমাদের কাজটি কিন্তু এখন সহজ। তোমরা যদি গসাগু নির্ণয়ের পদ্ধতিটি মনে করো, তাহলে বুঝতে পারবে আমাদের আসলে রুপান্তরিত এই ৩ টি পূর্ণসংখ্যাকে লসাগু করতে হবে। তোমরা লসাগু নির্ণয়ের পদ্ধতি কিন্তু জানো। সেখান থেকে সরাসরি বলা যায়, ১৫০, ১২ ও ১০০ এর লসাগু হবে, ৩০০।
কাজ: তোমার জানা যেকোনো একটি পদ্ধতিতে ১৫০, ১২ ও ১০০ এর লসাগু নির্ণয় করো। |
এবার বলো তো কি করতে হবে আমাদের?
এখন সেই সমতার প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। আমরা প্রতিটি সংখ্যাকে ১০০ দিয়ে গুণ করেছিলাম। এরপরে যে পূর্ণসংখ্যা গুলো পাই সেটির লসাগু নির্ণয় করেছি। তাই এবার লসাগুকে ১০০ দিয়ে ভাগ দিব।
অর্থাৎ, সংখ্যা ৩ টির লসাগু হবে
কাজ: নিচের দশমিক ভগ্নাংশগুলোর লসাগু নির্ণয় করো। ১) ০.২, ০.৩ |
আরও দেখুন...