যীশু মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য পিতার দ্বারা প্রেরিত হয়ে এ পৃথিবীতে এসেছেন। তিনি মানবজাতির জন্য পিতার ভালোবাসার চূড়ান্ত প্রমাণ দিয়েছেন। যে পরিত্রাণকর্ম তিনি সাধন করেছেন তা সারা পৃথিবীতে প্রচার করার জন্য তিনি তাঁর শিষ্যদের প্রেরণ করেছেন। মণ্ডলী পরিত্রাণের বাণীপ্রচার আর প্রেরণকাজ এক করে দেখে। কারণ মানুষের কাছে কথার চেয়ে কাজের গুরুত্ব বেশি। মণ্ডলী যা প্রচার করে তা কাজেও দেখিয়ে থাকে। মণ্ডলীর এ কাজগুলো হলো মুক্তিদাতা যীশু খ্রিষ্টের মনোভাবেরই প্রতিফলন। এই অধ্যায়ে আমরা মণ্ডলীর প্রেরণকাজের অর্থ, বিশেষ বিশেষ প্রেরণকাজ বা সেবাকাজ এবং কীভাবে মণ্ডলীর প্রেরণকাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা যায়, সে সম্পর্কে জানব।
যীশু তাঁর শিষ্যদের সেবাকাজে পাঠানোর সময় বলেন : “তোমরা গিয়ে সকল জাতির : মানুষকে আমার শিষ্য কর; পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে তাদের দীক্ষাস্নাত কর। আমি তোমাদের যা-কিছু আদেশ দিয়েছি, তাদের তা পালন করতে শেখাও। আর জেনে রাখ, জগতের সেই অন্তিমকাল পর্যন্ত আমি সর্বদাই তোমাদের সঙ্গে আছি” (মথি ২৮: ১৯-২০)। এই কথাগুলো বলে যীশু প্রেরিতশিষ্যদের সেবাকাজ করার উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন। গুরুর দ্বারা প্রেরিত হয়ে প্রেরণকাজ বা সেবাকাজ করতে হলে প্রেরিত শিষ্যদেরকে নিশ্চয়ই তাঁদের গুরুর মতোই হতে হবে। তাঁদের নিশ্চয়ই মনে আছে গুরুর কথাগুলো। তিনি নিজেই নিজের সম্পর্কে বলেন : “মানবপুত্র তো সেবা পাবার জন্যে আসে নি, সে এসেছে সেবা করতে এবং বহু মানুষের মুক্তিপণ হিসাবে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতে” (মার্ক ১০:৪৫)।
সুতরাং সেবাকাজকে আমরা যেরকম সহজ মনে করি সেরকম সহজ নয়। সেবাকাজে গুরু নিজেই নিজেকে সম্পূর্ণ বিলিয়ে দিয়েছেন। এমন গুরুর শিষ্য হয়ে প্রেরিত শিষ্যগণ তো আরামের পথ বা সেবা পাবার পথ বেছে নিতে পারেন না। যদি তাঁরা তা করেন, তবে তাঁরা এমন গুরুর উপযুক্ত শিষ্য হতে পারেন না। সেবাকাজের জন্য পাঠাবার আগে যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেন : “তোমরা আমাকে মনোনীত কর নি, আমিই তোমাদের মনোনীত করেছি আর নিযুক্তও করেছি; আমি চেয়েছি, তোমরা কাজে এগিয়ে যাও, তোমরা সফল হও। স্থায়ী হোক তোমাদের কাজের ফল; তাহলে পিতার কাছে আমার নামে তোমরা যা-কিছু চাইবে, তিনি তাই তোমাদের দেবেন। তোমাদের আমি এই আদেশ দিচ্ছি: তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবে” (যোহন ১৫ : ১৬-১৭)।
নিম্নে মণ্ডলীর প্রধান প্রধান প্রেরণ কাজগুলো তুলে ধরা হলো :
শিক্ষা: মণ্ডলীর একটি প্রধান প্রেরণকাজ হলো শিক্ষা। একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলা যায়। এটি মণ্ডলী খুব ভালোভাবেই বুঝেছে।
স্বাস্থ্য: মানুষের শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক নিরাময়তায় মণ্ডলীর ভূমিকা প্ৰথম থেকেই খুব জোরালো। যীশু নিজেই মানুষকে সুস্থ করে তুলেছেন এবং তাঁর শিষ্যদের সুস্থতা দান করার ক্ষমতা প্রদান করেছেন ।
কারিগরি শিক্ষা: যেসব যুবক-যুবতী সাধারণ শিক্ষা বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না, মণ্ডলী তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে। এই শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে।
আর্ত মানবতার সেবা : মণ্ডলী সমাজের দুঃস্থ অসহায় মানুষদের সেবা করে থাকে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সন্ন্যাসসংঘ এসব দিকে প্রচুর অবদান রেখে যাচ্ছে। এই বিষয়ে মাদার তেরেজার প্রতিষ্ঠিত সংঘের নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। দরিদ্র, অভাবী ও অসহায় ভাইবোনদের জন্য মণ্ডলী সবসময় সেবাদানের জন্য প্রস্তুত ।
নারীদের ক্ষমতায়ন : মণ্ডলী ও দেশের উন্নতির জন্য নারীশিক্ষা, নেতৃত্ব ও তাদের ক্ষমতায়ন খুব দরকার। মণ্ডলী সর্বদা এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিয়েছে এবং নারীদের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
দারিদ্র্য বিমোচন : পরিবার ও সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়নে মণ্ডলী বিশেষ চেষ্টা করে থাকে। খ্রিষ্টমণ্ডলীর উদ্যোগে ও বিভিন্ন খ্রিষ্টভক্ত পরিচালিত এনজিও বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই দিকে বহু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
পরিবার কল্যাণ : পরিবার হলো ক্ষুদ্র মণ্ডলী বা গৃহমণ্ডলী। এটি হলো সমাজের প্রাণকেন্দ্র । :: পরিবারগুলোকে সুগঠন দেওয়া মণ্ডলীর বিশেষ দায়িত্ব। মণ্ডলী তা পালন করে থাকে। বিবাহ প্রস্তুতি ও পরিবারের কল্যাণার্থে মণ্ডলী বিশেষভাবে সেবা দান করে থাকে।
শিশুমঙ্গল : শিশুরা দেশ ও মণ্ডলীর ভবিষ্যৎ। শিশুরা সুন্দরভাবে গড়ে উঠলে জাতি উন্নত হবে। শিশুদের জন্য মণ্ডলীর বিশেষ সেবাকাজ হলো শিশুমঙ্গল সমিতি। এর মাধ্যমে শিশুদের সুন্দর বিকাশের জন্য মণ্ডলী বিবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।
যুবগঠন: মণ্ডলীর যুবকরা হলো এদেশের সম্ভাবনাময় মানুষ। যুব গঠনে মণ্ডলীর ভূমিকা অতুলনীয়। যুবক-যুবতীদের জন্য নানারকম গঠন-প্রশিক্ষণ কোর্স ও সেমিনার আয়োজন ও পরিচালনার মাধ্যমে তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য মণ্ডলী সবসময় কাজ করে যাচ্ছে।
এ ছাড়াও যুগের প্রয়োজনে মণ্ডলী আরও নানা ধরনের সেবাকাজ করে থাকে। এসব কাজের মধ্য দিয়ে মণ্ডলীর সদস্যগণ সর্বদা মনে রাখেন যে যীশু নিজেই তাদের সঙ্গে সর্বদা রয়েছেন ও তাদেরকে ঐসব কাজে তাঁর হয়ে অংশগ্রহণ করতে বলছেন।
উপরে উল্লিখিত প্রেরণকাজগুলো মণ্ডলী তাঁর জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে করে যাচ্ছে। এগুলোর মাধ্যমেই মণ্ডলী জীবন্ত রয়েছে। এসব কাজে আমাদের প্রত্যেকের সাধ্যানুসারে অংশগ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক।
যীশু খ্রিষ্ট প্রেরিত হয়েছেন তাঁর পিতার দ্বারা। তিনি প্রেরণ করেছেন তাঁর শিষ্যদেরকে। বর্তমান যুগে তিনি আমাদেরকেও প্রেরণ করেছেন। মণ্ডলী এভাবে অনেক প্রেরণকাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সকলেরই এসব কাজে সাধ্যানুসারে অংশ- গ্রহণ করতে হবে।
মণ্ডলী বর্তমানকালে কী কী প্রেরণ কাজ করতে পারে তা দলে সহভাগিতা করবে।
ক) মণ্ডলী বাণীপ্রচার ও ___ এক করে দেখে।
খ) “মানবপুত্র তো ___ পাবার জন্য আসে নি, সে এসেছে সেবা করতে”।
গ) আমি তোমাদের এই আদেশ দিচ্ছি, তোমরা পরস্পরকে ___ ।
ঘ) মণ্ডলী সব সময় তার সন্তানদের অভাব ও ___.অনুসারে সাড়া দিয়ে থাকে।
ঙ) মণ্ডলী জীবন্ত থাকে ___ কাজের মধ্য দিয়ে ।
ক) জগতের অন্তিমকাল পর্যন্ত | ক) তোমরা সফল হও। |
খ) পিতার কাছে আমার নামে তোমরা যা কিছু চাইবে | খ) মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলা যায়। |
গ) আমি চেয়েছি, তোমরা কাজে এগিয়ে যাও, | গ) মানুষকে সুস্থ করে তোলে । |
ঘ) শিক্ষার মাধ্যমে | ঘ) আমি সর্বদাই তোমাদের সঙ্গে আছি। |
ঙ) আর্ত মানবতার সেবায় | ঙ) তিনি তাই তোমাদের দেবেন। |
চ) মাদার তেরেজার নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য |
ক) মণ্ডলীর প্রেরণকাজ কার প্রতিফলন?
খ) মণ্ডলীর কাছে সেবা কাজের গুরুত্ব এত বেশি কেন ?
গ) সেবাকাজ সম্পর্কে যীশুর মনোভাব কী ?
ঘ) যীশু শিষ্যদের কী আদেশ দিয়েছিলেন?
ক) প্রেরণ কাজের অর্থ ব্যাখ্যা কর ।
খ) যীশু শিষ্যদের কী নির্দেশ দিয়ে প্রেরণকাজে পাঠিয়েছিলে?
গ) মণ্ডলীর প্রধান প্রধান প্রেরণকাজের যেকোনো তিনটি সম্পর্কে লেখ।
আরও দেখুন...