আবহমানকাল থেকে মন্ত্র, শ্লোক, প্রার্থনামূলক কবিতা প্রভৃতির মাধ্যমে স্বয়ং ভগবানের স্তব-স্তুতি বা গুণগান করা হয়েছে। কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো।
সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ-
স ভূমিং বিশ্বতো বৃত্বা অত্যতিষ্ঠদ্দশাঙ্গুলম্ ।। (ঋগ্বেদ ১০/৯০/১)
শব্দার্থ : সহস্রশীর্ষা - হাজার মস্তক, পুরুষঃ - পরম পুরুষ বা ঈশ্বর, সহস্রাক্ষঃ (সহস্র+অক্ষঃ) - হাজার চক্ষু, সহস্রপাৎ হাজার পা বা চরণ, সঃ - তিনি, ভূমিং - ভূমি, বিশ্বতো - জগৎ বা পৃথিবী, বৃত্বা - ব্যাপ্ত করে বা অতিক্রম করে, অত্যতিষ্ঠদ্ দশাঙ্গুলম্ (অতি+অতিষ্ঠৎ+দশ+অঙ্গুলম্) - দশ অঙ্গুলি অতিরিক্ত হয়ে অবস্থান করেন।
সরলার্থ : পরম পুরুষ বা ঈশ্বরের সহস্র মস্তক, সহস্র চক্ষু ও সহস্র চরণ। তিনি জগৎকে সর্বত্র অতিক্রম করে দশ অঙ্গুলি পরিমাণ অতিরিক্ত হয়ে অবস্থান করেন।
ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ ধনম্ ।। (ঈশোপনিষদ)
শব্দার্থ : ঈশা - ঈশ্বরের দ্বারা; বাস্যম্ - আচ্ছাদিত বা বাসের নিমিত্ত; ইদম্ - এই; সর্বম্ - সমস্ত; যৎ কিঞ্চ জগত্যাম্ - যা কিছু জগতে; জগৎ-চলমান; তেন - তার দ্বারা; ত্যক্তেন - ত্যাগের সঙ্গে; ভুঞ্জীথাঃ - ভোগ করবে; মা - না; গৃধঃ - লোভ; কস্যস্বিদ ধনম্ - কারও ধনে।
সরলার্থ : এই গতিশীল বিশ্বে যা কিছু চলমান বস্তু আছে, তা ঈশ্বরের দ্বারা আচ্ছাদিত মনে করবে। ত্যাগের সঙ্গে ভোগ করবে, কারও ধনে লোভ করো না।
শ্রদ্ধাবান্ লভতে জ্ঞানং তৎপরঃ সংযতেন্দ্রিয়ঃ।
জ্ঞানং লব্ধা পরাং পরাং শান্তিমচিরেণাধিগচ্ছতি ।। (৪/৩৯)
শব্দার্থ : শ্রদ্ধাবান্ - শ্রদ্ধাশীল; লভতে - লাভ করেন; জ্ঞানম্ - জ্ঞান; তৎপরঃ - নিপুণ; সংযতেন্দ্ৰিয়ঃ (সংযত ইন্দ্রিয়ঃ) - জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তি; জ্ঞানং লব্ধা - জ্ঞানলাভ করে; পরাম্ - পরম; শান্তিম্ - শান্তি; অচিরেণ - শীঘ্র; - অধিগচ্ছতি - পেয়ে থাকেন।
সরলার্থ : শ্রদ্ধাবান, একনিষ্ঠ এবং জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তি জ্ঞান লাভ করে থাকেন। জ্ঞান লাভ করার পর শীঘ্র তিনি পরম শান্তি পেয়ে থাকেন।
সর্বভূতা যদা দেবী স্বর্গমুক্তিপ্রদায়িনী।
ত্বং স্তুতা স্তুতয়ে কা বা ভবন্তু পরমোক্তয়ঃ ।। ( ১১/৭)
শব্দার্থ : সর্বভূতা—সর্বস্বরূপা; যদা—যখন; দেবী- দেবী; স্বর্গমুক্তিপ্রদায়িনী- স্বর্গ এবং মুক্তিদানকারিণী; ত্বং- তুমি; স্তুতা- তোমার স্তব করলে; স্তুতয়ে- স্তবের জন্য; কা বা- কিছুই বা; ভবন্তু- হবে বা হতে পারে; পরমোক্তয়ঃ - শ্রেষ্ঠ বা পরম বাক্য।
সরলার্থ : তুমি সর্বস্বরূপা দেবী, তুমি স্বর্গ এবং মুক্তি দান করে থাক। কাজেই তোমাকে স্তব করতে হলে কোন শ্রেষ্ঠ বা পরম বাক্য তোমার স্তবের জন্য যোগ্য হবে।
তুমি, নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে
তব পুণ্য-কিরণ দিয়ে যাক্, মোর মোহ-কালিমা ঘুচায়ে।
লক্ষ্য-শূন্য লক্ষ বাসনা ছুটিছে গভীর আঁধারে,
জানি না কখন ডুবে যাবে কোন্ অকুল-গরল-পাথারে!
প্রভু, বিশ্ব-বিপদহন্তা, তুমি দাঁড়াও, রুধিয়া পন্থা;
তব, শ্রীচরণ তলে নিয়ে এস, মোর মত্ত-বাসনা ঘুচায়ে!
আছ অনল-অনিলে, চির নভোনীলে, ভূধরসলিলে, গহনে;
আছ বিটপীলতায়, জলদের গায়, শশীতারকায়, তপনে।
আমি, নয়নে বসন বাঁধিয়া, বসে আঁধারে মরিব কাঁদিয়া;
আমি, দেখি নাই কিছু, বুঝি নাই কিছু, দাও হে দেখায়ে বুঝায়ে।
- রজনীকান্ত সেন
আরও দেখুন...