রাসায়নিক বিক্রিয়াকে সংক্ষিপ্তরুপে রাসায়নিক সমীকরণের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়। যেহেতু রাসায়নিক বিক্রিয়াতে বিক্রিয়ক এবং উৎপাদ ভরের সংরক্ষণসূত্র মেনে চলে তাই বিক্রিয়ার সমীকরণে বিক্রিয়ক পদার্থের বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর সংখ্যা উৎপাদ পদার্থের বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর সংখ্যার সমান থাকে । রাসায়নিক সমীকরণের তীর চিহ্ন বা সমান চিহ্নের বাম পাশে কোনো মৌলের যে কয়টি পরমাণু থাকে তীর চিহ্ন বা সমান চিহ্নের ডান পাশে মৌলের সেই কয়টি পরমাণু থাকলে আমরা ঐ রাসায়নিক সমীকরণ সমতাকরণ হয়েছে বলে বুঝে থাকি।
নিচের উদাহরণটি লক্ষ করো:
Mg + HCl MgCl2 + H2
ম্যাগনেসিয়াম ও হাইড্রোক্লোরিক এসিডকে বিক্রিয়ক হিসেবে ব্যবহার করলে আমরা ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড ও হাইড্রোজেন পাই এটি সত্যি, কাজেই বিক্রিয়াটি সঠিক। কিন্তু দুইপাশে হাইড্রোজেন ও ক্লোরিন পরমাণুর সংখ্যা সমান নয়, তাই এই সমীকরণটির সমতাকরণ হয়নি।
বিক্রিয়া সমতাকরণের পদ্ধতি
বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর সংখ্যা সমান করার জন্য বিক্রিয়ক এবং উৎপাদের সংকেতের সামনে প্রয়োজনীয় সংখ্যা (1, 2, 3, 4 ...) দিয়ে গুণ করতে হয় এবং পরমাণুর সংখ্যা সমান করার জন্য চেষ্টা করে যেতে হয়। সমীকরণের সমতা করার জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই কিন্তু কিছু কৌশল অবলম্বন করা হয়। সেগুলো এ রকম:
1. প্রথমে বিক্রিয়ক এবং উৎপাদের সঠিক সংকেত লিখে বিক্রিয়ার সমীকরণ লেখা হয়।
2. সমীকরণে সমতা না থাকলে বিভিন্ন বিক্রিয়ক এবং উৎপাদকে বিভিন্ন সংখ্যা দিয়ে গুণ করে দুই পাশে মৌলের পরমাণুর সংখ্যা সমান করার চেষ্টা করা হয়।
3. প্রথমে যৌগিক অণুতে বিদ্যমান মৌলের পরমাণু সংখ্যার সমান করা হয় পরে মৌলিক অণুতে বিদ্যমান মৌলের পরমাণু সংখ্যার সমান করা হয়।
4. সমীকরণের তীর চিহ্ন এবং সমান চিহ্নের বাম পাশের সকল মৌলের পরমাণুর সংখ্যা এবং সমীকরণের তীর চিহ্ন এবং সমান চিহ্নের ডান পাশের সকল মৌলের পরমাণুর সংখ্যা সমান করতে হবে।
5. সমীকরণের উভয় পাশে প্রত্যেকটি মৌলের পরমাণু সংখ্যা সমান বা সমতা হলেই ঐ সমীকরণের সমতা হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।
আমরা কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে সমতাকরণের প্রক্রিয়াটি বোঝানোর চেষ্টা করি।
উদাহরণ 1:
Mg + HCl MgCl2 + H2
উপরের বিক্রিয়ায় যৌগিক অণু HCl এর মধ্যে Cl পরমাণু আছে 1টি কিন্তু ডান পাশে যৌগিক অণু MgCl2 এর মধ্যে Cl পরমাণু আছে ২টি। কাজেই উভয় পাশে Cl পরমাণুর সংখ্যা সমান হয় নাই। আবার উপরের বিক্রিয়ায় বাম পাশে H পরমাণু আছে 1টি কিন্তু ডান পাশে H পরমাণু আছে ২টি। কাজেই উভয় পাশে H পরমাণুর সংখ্যা সমান হয়নি। আবার উপরের বিক্রিয়ায় বাম পাশে Mg পরমাণু আছে 1টি কিন্তু ডান পাশে Mg পরমাণু আছে 1টি কাজেই উভয় পাশে Mg পরমাণুর সংখ্যা সমান হয়েছে।
প্রথমে সমীকরণের উভয় পাশে Cl পরমাণুর সংখ্যা সমান করার চেষ্টা করি এক্ষেত্রে বাম পাশের HCl কে 2 দিয়ে গুণ করি
Mg + 2HC1 MgCl2 + H2
উপরের বিক্রিয়ার বাম দিকের প্রতিটি পরমাণুর সংখ্যা এবং ডান দিকের প্রতিটি পরমাণুর সংখ্যা সমান হয়েছে। অতএব, রাসায়নিক বিক্রিয়ার বা রাসায়নিক সমীকরণের সমতা হয়েছে।
সমীকরণের সমতা হয়ে গেলে তাকে সমান চিহ্ন দ্বারাও লেখা যায়।
Mg + 2HCl = MgCl2 + H2
উদাহরণ 2:
Na2CO3 + HCl → NaCl + H2O + CO2
এই সমীকরণে সমতা নেই। কারণ বাম পাশে Na দুটি ডান পাশে Na একটি অতএব, ডান পাশে NaCl কে 2 দ্বারা গুণ করি
Na2CO3 + HCl 2NaCl + H2O + CO2
এখনো সমতা হয়নি। ডান পাশে Cl দুটি বাম পাশে Cl একটি। বাম পাশের HCl কে 2 দ্বারা গুণ করি Na2CO3 + 2HCl → 2NaCl + H2O + CO2
এখন উপরের বিক্রিয়ার বাম দিকের প্রতিটি পরমাণুর সংখ্যা এবং ডান দিকের প্রতিটি পরমাণুর সংখ্যা সমান হয়েছে। অতএব, রাসায়নিক বিক্রিয়ার বা রাসায়নিক সমীকরণের সমতা হয়েছে। সমীকরণের সমতা হয়ে গেলে তাকে সমান চিহ্ন দ্বারাও লেখা যায়।
Na2CO3 + 2HCl = 2NaCl + H2O + CO2
উদাহরণ 3:
অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড ও পানি উৎপন্ন হয়।
Al2O3 + HCl → AlCl3 + H2O
এই সমীকরণে সমতা নেই। Al কে সমান করার জন্য ডান পাশে AlCl3 কে 2 দিয়ে গুণ করো।
Al2O3 + HCl → 2AlCl3 + H2O
এখনো সমতা হয়নি। Cl এর সমতাকরণের জন্য বাম পাশে HCl কে 6 দিয়ে গুণ দাও ।
Al2O3 + 6HC1 → 2AlCl3 + H2O
এখনো সমতা হয়নি। বাম পাশে অক্সিজেন (O) আছে তিনটি। ডান পাশে অক্সিজেন (O) আছে 1টি। বাম পাশে H আছে ছয়টি। ডান পাশে H আছে দুটি। সমতাকরণের জন্য ডান পাশের H2O কে ও দিয়ে গুণ দাও ।
Al2O3 + 6HC1 → 2AlCl3 + 3H2O
এবারে সমতা হয়ে গেছে।
Al2O3 + 6HCl = 2AlCl3 + 3H2O
আরও দেখুন...