লভ্যাংশ ও লভ্যাংশ নীতি

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং - শেয়ার, বন্ড ও ডিবেঞ্চার | NCTB BOOK

একটি কোম্পানির অর্জিত লাভ বা মুনাফা শেয়ার মালিকদের প্রাপ্য আয়। ফলে অর্জিত লাভ বা মুনাফা শেয়ার মালিকদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। সাধারণত কোম্পানি অর্জিত লাভ বা মুনাফার পুরো অংশ শেয়ার মালিকদের মধ্যে বণ্টন করে না। লাভ বা মুনাফার একটি অংশ ভবিষ্যতে ব্যবসার কাজে অর্থায়নের জন্য  সংরক্ষিত করে এবং বাকি অংশ শেয়ার মালিকদের মধ্যে বণ্টন করে। লাভ বা মুনাফার যে অংশ শেয়ার মালিকদের মধ্যে বণ্টন করা হয়, সে অংশকে লভ্যাংশ বলা হয়। কোম্পানি সাধারণত দুইভাবে লভ্যাংশ দিতে পারে।

ক) নগদ লভ্যাংশ

খ) স্টক লভ্যাংশ বা বোনাস শেয়ার

ক) নগদ লভ্যাংশ : যে লভ্যাংশ নগদ টাকায় পরিশোধ করা হয়, সে লভ্যাংশকে নগদ লভ্যাংশ বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ: মনে কর, একটি কোম্পানি ১০% নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। একজন শেয়ার মালিক ঐ কোম্পানির ১০ টাকা মুল্যের ৫০০ শেয়ার ধারণ করে। উক্ত ব্যক্তি নগদ লভ্যাংশ হিসেবে ১০%×৫,০০০ টাকা বা ৫০০ টাকা পাবে।

খ) স্টক লভ্যাংশ : কোম্পানি অনেক সময় নগদ লভ্যাংশের পরিবর্তে স্টক লভ্যাংশ বা নগদ লভ্যাংশের পাশাপাশি স্টক লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। কোম্পানি সাধারণত বর্তমানে ইস্যুকৃত শেয়ারের উপর আনুপাতিক হারে স্টক লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। ফলে কোম্পানির শেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। মনে কর, একটি কোম্পানির বর্তমানে ১০ টাকা মূল্যের ১ কোটি শেয়ার আছে। কোম্পানি ৫০ শতাংশ বা ২:১ অনুপাতে স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ফলে কোন বিনিয়োগকারীর বর্তমানে ৫০০টি শেয়ার থাকলে স্টক লভ্যাংশ পাবার পর শেয়ার সংখ্যা ৭৫০টি হবে। অনুরূপভাবে কোম্পানির মোট ইস্যুকৃত শেয়ার ১.৫ কোটি হবে।

লভ্যাংশ নীতি

কোম্পানিকে প্রতিবছর লভ্যাংশ সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেমন: অর্জিত লাভের কত অংশ লভ্যাংশ দেয়া হবে, নগদ লভ্যাংশ না স্টক লভ্যাংশ দেয়া হবে ইত্যাদি। এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রতিটি কোম্পানির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকে, যা কোম্পানিকে লভ্যাংশ প্রদানে দিকনির্দেশনা দিতে পারে। এসব নীতিমালাকে লভ্যাংশ নীতি বলে। সাধারণত তিন প্রকার লভ্যাংশ নীতি পরিলক্ষিত হয়। যথা-

ক) স্থিতিশীল টাকা লভ্যাংশ নীতি : এ নীতি অনুযায়ী প্রতিবছর অর্জিত লাভ থেকে সমপরিমাণ টাকা লভ্যাংশ দেয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ: একটি কোম্পানি প্রতিবছর শেয়ারপ্রতি ১০ টাকা লভ্যাংশ দিলে এটিকে স্থিতিশীল লভ্যাংশ নীতি বলা হবে। শেয়ারপ্রতি আয় যত বেশি হোক না কেন, কোম্পানি গত বছরগুলোতে প্রদত্ত লভ্যাংশের সমপরিমাণ লভ্যাংশ প্রদান করে। তবে এ পদ্ধতিতে সাধারণত লভ্যাংশের পরিমাণ কমে না।

খ) লভ্যাংশ প্রদান অনুপাত নীতি : এ নীতি অনুযায়ী কোম্পানি প্রতিবছর আয়ের কত অংশ লভ্যাংশ প্রদান করবে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানি প্রতিবছর আনুপাতিক হারে লভ্যাংশ প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, মনে কর, কোনো কোম্পানি ৫০% লভ্যাংশ প্রদানের আনুপাতিক হার হিসেবে নির্ধারণ করে। ফলে কোনো বছর যদি কোম্পানির অর্জিত আয় ২ কোটি টাকা হয়, তাহলে কোম্পানি লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ার মালিকদের ২ কোটি x ৫০% বা ১ কোটি টাকা প্রদান করবে।

গ) স্থির লভ্যাংশ সাথে অতিরিক্ত লভ্যাংশ নীতি : যেসব কোম্পানির আয় স্থিতিশীল বা নিয়মিত নয়, সেসব কোম্পানির জন্য এটি একটি আদর্শ লভ্যাংশ নীতি। এ নীতি অনুযায়ী কোম্পানি প্রতিবছর ন্যূনতম স্থিতিশীল লভ্যাংশের সাথে অতিরিক্ত লভ্যাংশ প্রদান করে। অন্যান্য লভ্যাংশ নীতির তুলনায় এটি অনেক নমনীয় বিধায় অনেক কোম্পানি এই লভ্যাংশ নীতি অনুসরণ করে।

Content updated By
Promotion