শিক্ষা ও সংস্কৃতি

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা - মধ্যযুগের বাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস | | NCTB BOOK

বাংলার মুসলমান শাসকগণ কেবল রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেই নয়, শিক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন । বাংলায় মুসলমান শাসনকালে শিক্ষার দ্বার হিন্দু-মুসলমান সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল । শেখদের খানকাহ্ ও উলেমাদের গৃহ শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল । মুসলমান শাসনের সময় বাংলার সর্বত্র অসংখ্য মসজিদ নির্মিত হয়েছিল । এ সকল মসজিদের সঙ্গেই মক্তব ও মাদ্রাসা ছিল । মক্তব ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করত । বালক-বালিকারা একত্রে মক্তব ও পাঠশালায় লেখাপড়া করত । প্রাথমিক শিক্ষা সকল মুসলমান বালক-বালিকার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। স্ত্রী শিক্ষার বিশেষ প্রচলন ছিল না। মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল না। ফলে সাধারণ মুসলমান মেয়েরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত ছিল । শাসকবর্গের ভাষা ছিল ফার্সি । তাই এ ভাষা প্রায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করেছিল । সরকারি চাকরি লাভের আশায় অনেক হিন্দু ফার্সি ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতেন । এ যুগে বাংলা ভাষা বিশেষ সমৃদ্ধি লাভ করেছিল । আরবি ও ফার্সি ভাষায় অজ্ঞ সাধারণ মুসলমান যেন ইসলামের ধ্যান-ধারণা বুঝতে পারে সেজন্য অনেকেই বাংলা ভাষায় পুস্তকাদি রচনা করেন। তাঁদের রচনাবলি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে।

মুসলমান শাসনের পূর্বে বাংলার হিন্দু সমাজে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণদের একচেটিয়া অধিকার ছিল । মুসলমানদের শাসন-ব্যবস্থায় হিন্দু সমাজের সকল শ্রেণির জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়। পাঠশালায় হিন্দু বালক-বালিকারা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করত । গুরুর আবাসস্থল কিংবা বিত্তবানদের গৃহে পাঠশালা বসত । কখনও কখনও একই ঘরের চালার নিচে মক্তব ও পাঠশালা বসত। সকালে মুনশি মক্তবের শিক্ষার্থীদের এবং বিকালে গুরু তার ছাত্রদের পাঠশালায় শিক্ষা দান করতেন । বিত্তবান লোকেরা পাঠশালার ব্যয়ভার বাহন করতেন । হিন্দু বালক-বালিকারা একত্রে পাঠশালায় শিক্ষা গ্রহণ করত ।

ছয় বছর বয়স পর্যন্ত পাঠশালায় শিক্ষা গ্রহণ করতে হতো। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য 'টোল' ছিল । সংস্কৃত ভাষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে হতো । সংস্কৃত সাহিত্য চর্চার জন্য নবদ্বীপ, বর্ধমান প্রভৃতি স্থানের নাম উল্লেখ্যযোগ্য ছিল । অনেক নারী এ যুগে শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে নিজেদের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন । ব্রাহ্মণদের মধ্যে একটি বিশেষ শ্রেণি সর্বদা নিজেদের জ্যোতিষশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় নিয়োজিত থাকতো । বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও এ যুগে সমাজে জনগণের মধ্যে জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তি বিকাশের জন্য কতকগুলো সাধারণ পদ্ধতি প্রচলিত ছিল; যেমন- ধর্মীয় সঙ্গীত, জনপ্রিয় লোক-কাহিনি ও নাটক-গাথা ইত্যাদি ।

Content added || updated By
Promotion