পরিচয়
সূরা কাফিরুন কুরআন মাজিদের ১০৯তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এটিতে মোট ৬টি আয়াত আছে। এ সূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত আল-কাফিরুন শব্দ থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে।
এ সূরায় শিরক ও কুফরের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ ও কাফিরদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে মুসলিমদের ইমানের উপর অটল ও অবিচল থাকার তাগিদ রয়েছে। কাফিরদের এ কথা জানিয়ে দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে যে, দীনের ব্যাপারে কাফিরদের সাথে মুসলিমদের সমঝোতার কোনো পথ খোলা নেই। তবে যে যার ধর্ম পালন করবে, এতে কোন জবরদস্তির স্থান নেই।
শানে নুযুল
ওলীদ ইবন মুগীরা, আস ইবন ওয়ায়েল, আসওয়াদ ইবন আব্দুল মোত্তালিব ও উমাইয়া ইবন খালফ প্রমুখ মক্কার বিশিষ্ট ব্যক্তি একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল: আসুন, আমরা পরস্পরের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি করি যে, এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যদের ইবাদাত করবেন এবং এক বছর আমরা আপনার উপাস্যের ইবাদাত করব। কাফিরদের এহেন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সূরা কাফিরুন অবতীর্ণ হয়।
ব্যাখ্যা
মহান আল্লাহ প্রিয়নবি মুহাম্মাদ (সা.) কে নির্দেশ দিচ্ছেন, তিনি যেন সুষ্পষ্ট ও প্রকাশ্যভাবে কাফেরদের সামনে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে প্রকাশ্যে বা গোপনে তারা যাদের ইবাদাত করে থাকে তা থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। আল্লাহর ইবাদাতে একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতা না থাকার কারণে তারা আল্লাহর ইবাদাতই করে না। শিরকের সাথে মিশ্রিত তাদের ইবাদাতকে কোন ইবাদাতই বলা চলে না।
এখানে কেবল ঐ সমস্ত কাফেরদের বিশেষভাবে বুঝানো হয়েছে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ জানেন যে, তাদের মৃত্যু কুফর ও শিরকের অবস্থাতেই ঘটবে। কেননা-এ সূরাটি অবতীর্ণ হওয়ার পর কিছুসংখ্যক মুশরিক ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং তারা আল্লাহর ইবাদাত করেছিল। কাফিররা মহানবি (সা.) এর কাছে যখন প্রস্তাব রাখল যে, এক বছর আমরা আপনার উপাস্যের ইবাদাত করব এবং এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যের ইবাদাত করবেন। প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, এটা কখনই সম্ভব নয় যে, আমি তাওহীদের পথ পরিত্যাগ করে শিরকের পথ অবলম্বন করে নেব; যেমন তোমরা চাচ্ছ। আর যদি আল্লাহ তোমাদের ভাগ্যে হিদায়াত না লিখে থাকেন, তাহলে তোমরাও তাওহীদ ও আল্লাহর ইবাদাত থেকে বঞ্চিতই থাকবে। যদি তোমরা তোমাদের দ্বীন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো এবং তা ত্যাগ করতে রাজি না হও, তাহলে তার পরিণাম তোমরাই ভোগ করবে। আমার ধর্ম আমার জন্য এবং তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য।
শিক্ষা :
১. একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে।
২. কোন পরিস্থিতিতেই মুসলিমদের জন্য শত্রুর সাথে ধর্মের ব্যপারে এমন আপস করা যাবে না যা ইসলাম সমর্থন করে না।
৩. এই সূরায় মহান আল্লাহ হক ও বাতিলের মাঝে সুষ্পষ্ট পার্থক্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
দলগত কাজ: শিক্ষার্থীরা সূরা কাফিরুন শুদ্ধরূপে তিলাওয়াত করবে এবং পরস্পরের মধ্যে এ সূরার শিক্ষা আলোচনা করবে। |
আরও দেখুন...