সূরা আল-লাহাব

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | | NCTB BOOK
11
11

সূরা আল-লাহাব আল-কুরআনের ১১১তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এর আয়াত সংখ্যা ৫টি। এ সূরায় কাফির আবু লাহাবের চরিত্র ও পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে বিধায় এর নামকরণ করা হয়েছে সূরা লাহাব। আবু লাহাবের আসল নাম ছিল আবদুল ওয্যা। সে ছিল আবদুল মোত্তালিবের অন্যতম সন্তান, রাসুল (সা.)-এর আপন চাচা। শরীরের উজ্জ্বল টকটকে রঙের কারণে তার ডাক নাম হয়ে যায় আবু লাহাব। সে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কট্টর শত্রু ও ইসলামের ঘোরবিরোধী। রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সে সব সময় কষ্ট দিত। রাসুল (সা.) যখন মানুষকে ইমানের দাওয়াত দিতেন, তখন সে পিছে পিছে গিয়ে আল্লাহর রাসুলকে মিথ্যাবাদী বলে প্রচার করত, মাঝে মাঝে তাঁকে পাথরও ছুঁড়ে মারত।

শানে নুযুল

সূরা আল-লাহাব মক্কায় অবতীর্ণ। রাসুল (সা.)-এর প্রতি আল্লাহর বাণী,

অর্থ: ‘আর আপনি আপনার নিকট আত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন। (সূরা আশ-শু‘আরা: ২১৪)

এ আয়াতটি অবতীর্ণ হলে মহানবি (সা.) সাফা পর্বতে আরোহণ করে কোরাইশ গোত্রের উদ্দেশ্যে হায়! সকাল বেলার বিপদ বলে অথবা আবদে মানাফ ও আবদুল মোত্তালিব ইত্যাদি নাম সহকারে ডাক দিলেন। এভাবে ডাক দেওয়া তখন আরবে বিপদাশঙ্কার লক্ষণরূপে বিবেচিত হতো। ডাক শুনে কোরাইশ গোত্র পর্বতের পাদদেশে একত্রিত হলো। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের বললেন: যদি আমি বলি যে, ‘একটি শত্রুদল ক্রমশই এগিয়ে আসছে এবং সকাল-বিকাল যে কোনো সময় তোমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে', তবে তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে? সবাই এক বাক্যে বলে উঠল: হ্যাঁ, অবশ্যই বিশ্বাস করব। অতঃপর তিনি বললেন: আমি শিরক ও কুফরের কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ভীষণ এক আযাব সম্পর্কে তোমাদেরকে সর্তক করছি। এ কথা শুনে আবু লাহাব বলল,

অর্থ: ‘ধ্বংস হও তুমি! এ জন্যই কি আমাদেরকে একত্রিত করছে?' অতঃপর সে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পাথর মারতে উদ্যত হলো। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সূরা লাহাব অবতীর্ণ হয়।' (বুখারি ও মুসলমি)

ব্যাখ্যা

আবু লাহাব ছিল ইসলাম ও নবি করিম (সা.)-এর চরম শত্রু। সে সর্বদাই ইসলামের শত্রুতায় লিপ্ত ছিল। এ সূরায় তার শোচনীয় পরিণতির কথা বলা হয়েছে। মক্কা নগরীতে সে প্রভূত সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী ছিল। সে প্রচুর ধন-সম্পদেরও মালিক ছিল। কিন্তু এত কিছুও তার কোনো কাজে আসেনি। বরং দুনিয়াতেও আবু লাহাবের ধ্বংস, আর আখিরাতেও সে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। তার স্ত্রী উম্মে জামিলও ছিল তারই মতো ইসলামের শত্রু। সে-ও রাসুল (সা.)-কে কষ্ট দিত। সে রাসুল (সা.)-এর চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত। ফলে তার প্রতিও আল্লাহ তা'আলার অভিশাপ রয়েছে এবং সে আখিরাতে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে।

উল্লেখ্য, এই সূরা নাজিল হওয়ার কয়েক বছর পর আবু লাহাবের পচন ধরা সংক্রামক প্লেগ রোগ দেখা দেয়। তখন সংক্রমণের ভয়ে পরিবারের লোকেরা তাকে নির্জন জায়গায় রেখে আসে। শেষ পর্যন্ত এই অসহায় অবস্থায়ই তার মৃত্যু ঘটে। তিন দিন পর্যন্ত তার মৃতদেহ কেউ স্পর্শ করেনি। পচন শুরু হলে চাকর-বাকরদের দ্বারা সেখানে মাটি খুঁড়ে কাঠ দিয়ে দূর থেকে ঐ গর্তে ফেলে দেয় এবং দূর থেকে পাথর নিক্ষেপ করে দাফন করা হয়। (বয়ানুল কুরআন)

শিক্ষা

১. শান্তির দূত রাসুলুল্লাহ (সা.) ও ইসলামের বিরোধিতা করা খুবই মারাত্মক অপরাধ। 

২. রাসুলুল্লাহ (সা.) ও মানবতার ধর্ম ইসলামের বিরোধিতা করলে আল্লাহ তা'আলা চরম অসন্তুষ্ট হন। 

৩. আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর মতো কাজ যারা করবে তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে ধ্বংস অনিবার্য। 

৪. দুনিয়ার মানসম্মান, ধন-সম্পদ ইসলামের এসব শত্রুকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারবে না।

দলগত কাজ : শিক্ষার্থীরা সূরা লাহাবের শিক্ষাগুলো লিখে একটি রঙিন পোস্টার তৈরি করবে।
Content added By
Promotion