এই পাঠ ও অনুশীলন শেষে আমরা- পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে নিরাপদ ও সহজ উপায়ে (পরিবেশ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে) ডাল রান্না করতে পারব। |
ষষ্ঠ শ্রেণিতে তোমরা ভাত, আলু ভর্তা ও ডিম ভাজি রান্না শিখেছো। তোমরা নিশ্চয় মাঝে মাঝে পরিবারের ভাত, আলু ভর্তা ও ডিম ভাজি রান্নার দায়িত্ব পালন করো। পরিবারের সকলেই নিশ্চয় তোমার ওপর অনেক খুশি! সপ্তম শ্রেণিতে আমরা আরো নতুন কিছু রান্না শিখবো।
ডাল অতি পরিচিত একটি খাবার। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ডাল না থাকলে মনে হয় যেন খাবারটাই অসম্পূর্ণ থেকে গেল। আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রকারের ডাল পাওয়া যায়।। তার মধ্যে মসুর, মুগ, মাষকলাই, মটর, ছোলা, খেসারি অন্যতম। এসব ডালের মধ্যে মসুর ডাল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। ডালে বেশ ভালো মানের পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। । দামে কম হওয়ায় প্রোটিনের চাহিদা পূরণে ডালের ব্যবহার বেশি। তোমরা নিশ্চয়ই জানো দেহের গঠন ও বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন প্রোটিন-জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। তাই খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন ডাল থাকলে আমরা যেমন দ্রুত বেড়ে উঠব তেমনি সব সময় সুস্থও থাকব।
তুমি কি জানো, ডাল কীভাবে রান্না করা হয়? ভাতের সঙ্গে ডাল এবং এক টুকরা লেবু সত্যিই অসাধারণ। তোমরা প্রত্যেকেই কিন্তু ডাল রান্না করে মা বাবাকে চমকে দিতে পারো। চলো একটু চেষ্টা করে দেখি, কীভাবে আমাদের সবার পছন্দের মজাদার ডাল রান্না করতে পারি।
ডাল রান্নার আগে আমাদের যা যা শিখে নিতে হবে:
• সরঞ্জাম ও তৈজসপত্র পরিষ্কার করার কৌশল
• ধারালো সরঞ্জামের ব্যবহার
• পেঁয়াজ ও রসুন কুঁচি করে কাটা
• চুলা জ্বালানো
• গুঁড়ো মসলার ব্যবহার
তবে এলাকাভেদে ডাল রান্নার অনেক পদ্ধতি প্রচলিত থাকলেও প্রায় সকল প্রকারের ডাল একই পদ্ধতিতে রান্না করা যায়।
স্কুল থেকে ফিরে জেবুল হাতমুখ ধুয়ে রান্নাঘরে গেল। সে দেখল মা ডাল রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, বাবা রসুন কুঁচি করছেন। জেবুল জানতে চাইলো, 'তোমরা এখন কী রান্না করছ বাবা?” বাবা হেসে বললেন, ডাল রান্না করছি। তুমি কি শিখতে চাও নাকি?” বাবার কথা শুনে জেবুল উল্লাস চেপে রাখতে পারল না। লাফিয়ে উঠে বলল, 'হ্যাঁ, আমি সেটা শিখতেই তো এসেছি!' মা খানিকটা অবাক হয়ে বললেন, ‘ব্যাপারটা কী জেবুল ! হঠাৎ এত আগ্রহের কারণটা জানতে পারি?' সে পিছন থেকে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে নাক ঘষতে ঘষতে বলল, 'মা, আমরা পিকনিক করছি, সবাই একটা করে আইটেম রান্না করে নিয়ে বাদামতলায় খাব, আমার ভাগে পড়েছে ডাল রান্না, বুঝলে মা?” মা বললেন, 'তুমি আমার পাশে দাঁড়াও, আমি তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি। কীভাবে খুব সহজে মজাদার ঘন ডাল রান্না করা যায়'। জেবুল মায়ের পাশে থেকে মাকে সাহায্য করল এবং ডাল রান্নার উপায়ও শিখে নিল। বাবা তার মোবাইল ফোনে ডাল রান্নার দুটো ভিডিও তাকে দেখালেন। মা জেবুলকে বললেন, 'ডাল রান্নার সময় লক্ষ্য রাখবে ডাল যেন অবশ্যই ভালোভাবে সিদ্ধ হয়, কেননা, কম সিদ্ধ ডাল সুস্বাদু হয়না, অন্যদিকে কম সিদ্ধ ডাল খেলে হজমেও অসুবিধা দেখা দিতে পারে।
পিকনিকের দিন জেবুল মনে মনে ভাবছে, সে কি পারবে মজাদার ডাল রান্না করতে? নাকি বন্ধুদের সামনে তাকে লজ্জায় পড়তে হবে! তবে খুশির বিষয় হলো, জেবুল খুব সহজেই মজাদার ডাল রান্না করে বন্ধুদের খাওয়াল। সবাই তার রান্না করা ডাল খেয়ে তাকে বাহবা দিতে লাগল।
জেবুল কীভাবে ডাল রান্না করে বন্ধুদের মন জয় করল, এসো তা ধাপে ধাপে জেনে নিই।
ঘন ডাল রান্না করতে যা যা দরকার হবে-
১. মসুর ডাল আধা কাপ
২. পেঁয়াজ (মাঝারি)-১টি
৩. রসুন (কুচি করে কাটা)- ১ চা চামচ
৪. হলুদগুঁড়া- সামান্য
৫. লবণ-পরিমাণমতো
৬. কাঁচা মরিচ- ২টি
৭. তেল- ২ টেবিল চামচ
ধাপ-১ প্রথমেই জেবুল ডাল রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় হাঁড়ি, চামচ, বাটি ইত্যাদি পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিল। সতর্কতা * কাজের শুরুতেই মাথার চুল যেন পরিপাটি থাকে তা লক্ষ্য রাখতে হবে, তা না হলে বাতাসে চুল উড়ে গিয়ে এগুলোতে পড়তে পারে। সম্ভব হলে টুপি পরে নিতে হবে। |
ধাপ-২ বটি বা চাকু দিয়ে পেয়াজ ও রসুন কুচি কুচি করে কেটে নিল। সতর্কতা * বটি বা চাকু দিয়ে পেঁয়াজ, রসুন ও মরিচ কাটার সময় অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। |
ধাপ-৩ এরপর সে আধা কাপ ডাল একটি পাত্রে নিয়ে তা থেকে পাথর, কাঁকর, ধান, কাঠি ইত্যাদি (যদি থাকে) বেছে নিয়ে পরিষ্কার পানি দিয়ে ২/৩ বার ভালো করে কচলে ধুয়ে নিল। সতর্কতা * প্রতিবার ধুয়ে ডাল ছেঁকে পানি ফেলার সময় সতর্ক থাকতে হবে পানির সঙ্গে যেন ডাল পড়ে না যায় । * ধোয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে পরনের জামা-কাপড় যেন ভিজে না যায়। সম্ভব হলে অ্যাপ্রোন পরে নিতে হবে। |
ধাপ-৪ এরপর সে হাঁড়িতে ধোয়া ডালে ৪ কাপ পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিয়ে চুলা জ্বলিয়ে দিল এবং ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিল। সতর্কতা * একেক রকমের চুলা একেকভাবে জ্বালাতে হয়, তাই চুলা জ্বালানোর বিষয়টি আগেই বড়দের কাছ থেকে শিখে নিতে হবে। * যদি দেশলাই কাঠি দিয়ে চুলা জ্বালানো হয়, সেক্ষেত্রে চুলায় আগুন ধরানোর পরপরই হাতের দেশলাই কাঠিটি পানি দিয়ে ভালোভাবে নিভিয়ে ফেলতে হবে। |
ধাপ-৫ জেবুল এবার ঢাকনা দিয়ে হাঁড়ি ঢেকে দিল এবং চুলার আঁচ বাড়িয়ে দিয়ে কাছে দাঁড়িয়ে ৭/৮ মিনিট অপেক্ষা করল। পানি ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকনা সরিয়ে দিয়ে চুলার আঁচ মাঝারি করে দিল। চামচ বা খুন্তি দিয়ে ডাল নেড়ে দিল (ডাল ফুটে ওঠার সময় ডালের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে)। সতর্কতা * ফুটে ওঠার আগ পর্যন্ত চুলার কাছাকাছি। থাকতে হবে, তা না হলে ফেনাসহ পানি ফুলে উঠে চুলায় পড়ে চুলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। * খুন্তি দিয়ে নাড়ার সময় হাত নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। সম্ভব হলে হাতে কিচেন গ্লাভস পরে নেওয়া যেতে পারে। * খুন্তি দিয়ে উল্টানোর সময় হাঁড়ি তাপরোধী কিছু দিয়ে (মোটা কাপড়/ধরনি) ধরে নিতে হবে, তা না হলো হাঁড়িতে বেশি চাপ লেগে পড়ে যেতে পারে। |
ধাপ-৬ ৪/৫ মিনিট পর পানি একটু কমে গিয়ে ডাল ভালোভাবে ফুটে উঠলে, সে একটি ঘুটনি (চড়কির মত দেখতে) দিয়ে ঘুটে দিল। সতর্কতা * ঘুটনি দিয়ে খুঁটার সময় অবশ্যই চুলার আঁচ কমিয়ে রাখতে হবে, তা না হলে হাতে তাপ লাগতে পারে। * বেশি চাপ দেওয়া যাবে না, তাতে হাঁড়ি কাত হয়ে যেতে পারে। কাজটি নিজে না পারলে বাড়ির অন্য কার ও সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। |
ধাপ-৭ এরপর পরিমাণমত পানি, লবণ ও সামান্য একটু হলুদ এবং ২ টি আস্ত কাঁচামরিচ দিয়ে নেড়ে দিল। চুলার আঁচ কমিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিল । ২/৩ মিনিট ধরে ফুটানোর পর ডালটা ঘন হয়ে এলে জেবুল চামচে সামান্য একটু ডাল নিয়ে ফুঁ দিয়ে ঠাণ্ডা করে খেয়ে দেখল লবণের পরিমাণ ঠিক আছে কি না। এরপর দুহাতে ধরনি দিয়ে ধরে হাঁড়িটি চুলা থেকে নামিয়ে নিল। সতর্কতা * লবণ হয়েছে কি না, তা চেখে দেখার সময় অবশ্যই ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে তারপর মুখে দিতে হবে, নতুবা গরমে ঠোঁট পুড়ে যেতে পারে। * হাঁড়ি তাপরোধী কিছু দিয়ে (কাপড়/ধরনি) ধরে নামাতে হবে যাতে হাতে তাপ না লাগে। |
ধাপ ৮ এরপর ফোড়ন দেওয়ার পালা। জেবুল এবার কম আঁচে চুলায় একটি কড়াই চাপিয়ে তাতে একটু তেল দিয়ে দিল। এরপর তেলের মধ্যে আগে থেকে কুচিয়ে রাখা পেঁয়াজ ও রসুন ছেড়ে দিল। একটা খুন্তি দিয়ে নাড়তে লাগল। কুচিগুলো বাদামি হয়ে এলে পাশে রাখা ডালের হাঁড়িতে কড়াইয়ের তেলসহ কুচিগুলো ঢেলে দিল। ফোড়নের সুগন্ধে রান্নাঘর ভরে উঠল। ব্যস! এভাবেই প্রস্তুত হয়ে গেল জেবুলের রান্না করা মজাদার ডাল! সতর্কতা * তেলের ফোড়ন ডালের হাঁড়িতে ছাড়ার সময় ছিটে আসতে পারে, সে ক্ষেত্রে একটা ঢাকনা কাত করে ধরে রেখে ফোড়ন ঢালা যেতে পারে, তাতে ছিটে এসে গায়ে লাগবে না। * কড়াই তাপরোধী কিছু দিয়ে (মোটা কাপড় ধরনি) ধরে নামাতে হবে যাতে হাতে তাপ না লাগে। |
ধাপ-৯ জেবুল রান্না শেষে খুন্তি, চামচ, ঢাকনা, ছুরি, প্লেট ইত্যাদি ভালোভাবে ধুয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে দিল। রান্নাঘরে যা এলোমেলো হয়েছে, তা সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখল। |
• সব ধরনের ডাল কি এই পদ্ধতিতে রান্না করা যাবে?
• ডালে হলুদ না দিলে কি ডাল খাওয়া যাবে?
• ফোড়ন ছাড়াও কীভাবে ডাল রান্না করা যায়?
• ডাল রান্নার সময় কী কী দুর্ঘটনা ঘটতে পারে?
• ডাল রান্নার সময় কী কী সতর্কতা মেনে চলা প্রয়োজন?
• ডালের স্বাদ বাড়াতে এর সঙ্গে আর কী কী যোগ করা যেতে পারে?
• ডালের সঙ্গে কি কোনো ধরনের সবজি যোগ করে রান্না করা যায়?
• সুগন্ধ বাড়ানোর জন্য ডালের ফোড়নের সঙ্গে আর কী কী দেওয়া যায়?
• ডাল রান্নাকে দেখতে লোভনীয় করার জন্য কীভাবে সাজিয়ে পরিবেশন করা যায়?
• সকল উপকরণ ও সরঞ্জাম পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া।
• ছুরি, বঁটি ইত্যাদি ধারালো সরঞ্জাম সাবধানে ব্যবহার করা ও কাজ শেষে সঠিক স্থানে গুছিয়ে রাখা।
• নিরাপত্তা বজায় রেখে ডাল রান্না করার পদ্ধতি ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করা।
আমাদের বাড়িতে ডালের ভিন্ন ভিন্ন ধরন ও পরিমাণ অনুযায়ী রান্না করার প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী ডাল দিয়ে বাড়িতে বাবা-মা কিংবা বড় কারও সহায়তা নিয়ে ডাল রান্না অনুশীলন করো। আমাদের দেশের কোনো কোনো এলাকায় ডালের ফোড়নে আস্ত জিরা, পাঁচফোড়ন ও শুকনা মরিচ ব্যবহার করে, যা ডালের স্বাদে বৈচিত্র্য আনে এবং দেখতেও বেশ লোভনীয় লাগে। ডালকে আরও মুখরোচক করার জন্য টমেটো, কাঁচা আম, জলপাই, ধনে পাতা ইত্যাদি যোগ করেও ডাল রান্নার অনুশীলন করে দেখতে পারো। এতে ডালে খুবই ভালো একধরনের স্বাদ আসে। আগের দিনে ডালের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সবজি যেমন পেঁপে, লাউ, চালকুমড়া ইত্যাদি টুকরো করে দেওয়ার প্রচলন ছিল। সবজি ডালের স্বাদও বেশ দারুণ। তোমরা সেটাও চেষ্টা করে দেখতে পারো। কোনো কোনো অঞ্চলে গ্রীষ্মের শুরুতে কাঁচা কাঁঠালও (যা ইঁচড় নামে পরিচিত) ডালের সঙ্গে দিয়ে রান্না করা হয়। স্কুলে সহপাঠীরা মিলে নিজেদের ক্লাসে রান্না করে শিক্ষককে দেখাও। নতুন নতুন আইডিয়া যোগ করে রান্না করো। বাড়িতে প্রয়োজন অনুযায়ী অনুশীলন করো, বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে অন্যদের পরিবেশন করো এবং ছবি তুলে রাখ কিংবা এঁকে রাখো।
১। কারও কাছ থেকে অভিজ্ঞতা শুনে, ভালো করে বুঝে অথবা কোনো বই থেকে পড়ে ছকে দেওয়া তথ্যগুলো পূরণ করো
আম ডাল রান্না করতে হলে আম কখন, কীভাবে ডালে দিতে হবে? | |
---|---|
পেঁপে ডাল রান্না করতে হলে পেঁপে কখন, কীভাবে দিতে হবে? | |
ডালে শুকনা মরিচ কিংবা আস্ত জিরার ফোড়ন কখন, কীভাবে দিতে হয়? | |
আমাদের দেহের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে ডালের ভূমিকা কী? | |
শিক্ষকের মন্তব্য |
২। রুচির পরিবর্তন এবং ডালের স্বাদ আরও বাড়ানোর জন্য তুমি ডাল রান্নার সময় টমেটো বা কাঁচা আম, ধনেপাতা কুচি অথবা কোনো সবজি যোগ করে তোমার পরিবারের সদস্যদের ডাল রান্না করে খাওয়াও এবং তাদের মতামত সংগ্রহ করে শ্রেণি শিক্ষকের নিকট জমা দাও।
পরিবারের সদস্য | খুব ভালো | ভালো | চলনসই |
---|---|---|---|
মা | |||
বাবা | |||
ভাই | |||
বোন | |||
দাদা | |||
দাদি | |||
অন্য কোনো সদস্য |
৩. কাজটি করতে গিয়ে আমার অনুভূতি
(ভালো লাগা, মন্দ লাগা, কাজটি করতে গিয়ে আঘাত পাওয়া কিংবা কোনো বাধার সম্মুখীন হওয়া এবং নতুন কী শিখেছ তা এখানে লেখো)
|
৪। তোমরা ডাল রান্না করার সময় কয়েকটি অবস্থার ছবি তুলবে অথবা নিচের বক্সে এঁকে রাখবে। সেগুলো শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিভাবক মিটিংয়ের দিন তাদের মোবাইল ফোনে দেখাবে। যদি ছবি প্রিন্ট করার সুযোগ পাও, তাহলে একটি সাদা কাগজে প্রিন্ট দিয়ে কেটে কেটে এখানে লাগিয়ে দাও।
ডালের পরিমাপ নেওয়া |
ডাল ধোয়া |
পরিমাণমতো পানি দেওয়া |
রান্না করা ডাল |
অভিভাবকের মতামত |
রান্নার সঙ্গে একটি পরিবারের অনেক ঐতিহ্য জড়িয়ে থাকে। পারিবারিক বন্ধন, গৃহে ফিরে আসার তাড়না কিংবা পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসার নিখুঁত অনুভব জড়িয়ে থাকে রান্না করা খাবারের স্বাদ, রং আর সুবাসে। আমরা যখন পরিবার ছেড়ে কোথাও যাই, তখন সব পাওয়ার মাঝেও একটা না পাওয়া অপূর্ণতা অনুভব করি প্রিয়জনের হাতের রান্না করা খাবারের অনুপস্থিতিতে। তাই এখন থেকে আমরা পরিবারের বন্ধনকে অটুট রাখার জন্য নিজের এবং প্রিয় মানুষের জন্য মনের ভালোলাগা থেকে প্রিয় খাবার তৈরি করব।
এই পাঠ ও অনুশীলন শেষে আমরা- পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে, নিরাপদ ও সহজ উপায়ে (পরিবেশ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে) সবজি রান্না করতে পারব। |
"ধনে-ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা'। সত্যিই আমাদের দেশটা বিধাতার আশীর্বাদপুষ্ট এক অনন্য দেশ। এ দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি, এই মাটিতে সোনার ফসল ফলে। সব ঋতুতেই পাওয়া যায় নানাজাতের সবজি। একেক ঋতুর সবজির আবার একেক গুণ! আমাদের দেশে সাধারণত ঋতুভিত্তিক সবজির দাপট বেশি থাকে। শরীর ও মন ভালো রাখার উপাদানে ভরপুর মৌসুমি এতরকমের সবজি খুব কম দেশের মাটিতেই ফলে। আমরা সৌভাগ্যবান যে আমাদের দেশে এত বৈচিত্র্যপূর্ণ সবজি পাওয়া যায়। পুষ্টি চাহিদা মেটাতে এসব সবজি অতুলনীয়। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটা অংশ জুড়ে যুগ যুগ ধরে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে সবজি। কতভাবে কত নামে যে আমাদের খাবার তালিকায় সবজি জায়গা দখল করে আছে তার কোনো হিসাব নেই। সকাল, দুপুর, বিকেল ও রাত সব বেলাতেই চলে সবজি বিলাস। তোমরা নিশ্চয়ই জানো দেহের গঠন, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, পানির চাহিদা পূরণ ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে সবজির রয়েছে বিশাল ভূমিকা। সবজির বড় গুণ হলো এর আঁশের প্রভাব আমাদের পেট ভালো রাখে এবং আমাদের মনটাকে সব সময় প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। তাই সুস্থ শরীর ও সুস্থ মনের জন্য সবাইকে বেশি বেশি সবজি খেতে হবে। সুতরাং খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন সবজি থাকলে আমরা যেমন দ্রুত বেড়ে উঠব, তেমনি সবসময় সুস্থও থাকব।
এই সবজি রান্না তাই আমাদের আয়ত্ত করা জরুরি।
সবজি রান্নার আগে আমাদের যা যা শিখে নিতে হবে:
• সরঞ্জাম ও তৈজসপত্র পরিষ্কার করার কৌশল
• ধারালো সরঞ্জামের ব্যবহার
• পেঁয়াজ ও রসুন কুচি করে কাটা
• সবজি কাটা
• চুলা জ্বালানো
• গুঁড়ো মসলার ব্যবহার
তবে এলাকাভেদে সবজি রান্নার অনেক পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। আবার সব সবজি রান্নার কৌশলও এক নয়। আমাদের দেশে অনেকেই আছেন যারা প্রাণিজ আমিষ এড়িয়ে চলেন। দেশের বাইরে গেলে তারা ‘ভেজিটেরিয়ান' নামে পরিচিতি পান। রসনা তৃপ্তির জন্য সবজি রান্নার উপর তাই চলে অনেক পরীক্ষা- নিরীক্ষা; সৃজনশীলতা খাটিয়ে নতুনত্ব আনা হয়- প্রতিদিনের মেন্যুতে।
পাশের বাড়ি থেকে এনিটা একটা ভিন্নধর্মী আমন্ত্রণপত্র পেলেন। মেলার নাম-'সবজিবিলাস'! সাদের স্কুলে এই মেলার আয়োজনে গিয়ে এনিটার বিস্ময়ের শেষ নেই। এবারের মেলার থিম ছিল 'তিনবেলাতেই সবজি'। প্রতি স্টলে দৃষ্টিনন্দন সবজির বাহার দেখে তাঁর রীতিমতো খিদে পেয়ে যায়! এতভাবে যে সবজি রান্না করা যায়, এনিটা জীবনে এই প্রথম দেখলেন। প্রায় প্রতিটা স্টলে গিয়েই তিনি রান্না করা সবজির ছবি তুলছেন, আর একটা করে আইটেম কিনে খাচ্ছেন। একেকটার স্বাদ অসাধারণ! একটা স্টলে গিয়ে সাদের সঙ্গে দেখা। ওর স্টলের ছিল শীতের পাঁচমিশালি সবজি রান্না। রান্না করা সবজির এমন লোভনীয় রং আর সাজ দেখে তিনি সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তিনি সাদকে এই সপ্তাহে ছুটির দিনে তার বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে এলেন, আর এর বিনিময়ে সাদ তাঁকে পাঁচমিশালি সবজি রান্না শিখাবেন বলে কথা দিল। এরপর এলো সেই ছুটির দিন এবং শুরু হলো সাদের ক্লাস ।
সাদ এনিটাকে পাঁচমিশালি সবজি রান্না যেভাবে শেখাল তা আমরাও শিখে নিই-
শীতের পাঁচমিশালি সবজি রান্না করতে যা যা দরকার হবে-
ঘরে প্রাপ্যতা সাপেক্ষে বিভিন্ন ধরনের সবজি যেমন-মিষ্টি কুমড়া, গাজর, পেঁপে, পটোল, কচুরমুখী, গোল আলু ইত্যাদি (আধা কাপ করে)
সঙ্গে আরও যা লাগবে-
১. পেঁয়াজ (বড়)-২টি
২. রসুন (কুচি করে কাটা)- ২ চা চামচ
৩. হলুদ, মরিচ, ধনে ও জিরা গুঁড়া- সামান্য
8. লবণ-পরিমাণ মত
৫. কাঁচা মরিচ-২/৪টি
৬. তেল- ২ চামচ
৭. আস্ত জিরা ১/২ চা চামচ
ধাপ-১ সাদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথমেই এনিটা সবজি রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় হাঁড়ি, চামচ, বাটি ইত্যাদি পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিলেন। সতর্কতা * কাজের শুরুতেই মাথার চুল যেন পরিপাটি থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, তা না হলো বাতাসে চুল উড়ে গিয়ে এগুলোতে পড়তে পারে। সম্ভব হলে টুপি পরে নিতে হবে। |
ধাপ-২ এরপর তিনি আলু, পেঁপে, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পটোল ভালো করে ধুয়ে নিলেন, তারপর খোসা ছাড়িয়ে নিলেন। সাদ বলল, সব্জির খোসা ছাড়াতে চাকু, বটি বা পিলার ব্যবহার করা যেতে পারে। সতর্কতা * ধোয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে পরনের জামাকাপড় যেন ভিজে না যায়। সম্ভব হলো অ্যাপ্রোন পরে নিতে হবে। * সজির খোসা ছাড়াতে চাকু, বটি বা পিলার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। একদম অন্যদিকে তাকানো যাবে না। সম্ভব হলে, হাতে গ্লাভস পরে নিতে হবে। |
ধাপ-৩ এরপর তিনি সবজিগুলো চাক চাক (কিউব) করে কেটে নিলেন। প্রতিটি সবজিই তিনি আধা কাপ করে নিলেন। একই সংঙ্গে পেয়াজ ও রসুন কুচি কুচি করে কেটে নিলেন। সতর্কতা * কাটার সময় খুব সতর্কভাবে কাটতে হবে, একদম অন্যদিকে তাকানো যাবে। না, তাতে হাত কেটে যেতে পারে। সম্ভব হলে, হাতে গ্লাভস পরে নিতে হবে। |
ধাপ-8 এবার তিনি কম আঁচে চুলায় একটি কড়াই চাপিয়ে তাতে একটু তেল দিয়ে দিলেন। তেল গরম হওয়ার পর তার মধ্যে এক চিমটি আস্ত জিরা ছেড়ে দিলেন। একটু নাড়াচাড়ার পর আগে থেকে কুচিয়ে রাখা পেঁয়াজ ও রসুন ছেড়ে দিয়ে ৩০ সেকেন্ড ভেজে নিলেন। এরপর আধা চা চামচ হলুদগুঁড়া দিয়ে আরও ৩০ সেকেন্ড নেড়ে নিলেন। সতর্কতা * একেক রকমের চুলা একেকভাবে জ্বালাতে হয়, তাই চুলা জ্বালানোর বিষয়টি আগেই বড়দের কাছ থেকে শিখে নিতে হবে। * যদি দেশলাই কাঠি দিয়ে চুলা জ্বালানো হয়, সেক্ষেত্রে চুলায় আগুন ধরানোর পরপরই হাতের দেশলাই কাঠিটি পানি দিয়ে ভালোভাবে নিভিয়ে ফেলতে হবে। * তেলের মধ্যে পেঁয়াজ, রসুনকুচি ছাড়ার সময় ছিটে আসতে পারে, সে ক্ষেত্রে কড়াইয়ের ওপর একটা ঢাকনা কাত করে ধরে তারপর পেঁয়াজ, রসুনকুচি ঢালা যেতে পারে, তাতে তেলের ছিটে এসে গায়ে লাগবে না। |
ধাপ-৫ এবার কিউব করে কেটে রাখা আধা কাপ আলু ও আধা কাপ গাজর কড়াইয়ে ঢেলে দিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকলেন। আধা চা চামচ লবণ (পরিমাণমতো) এবং গুঁড়া মরিচ ছিটিয়ে দিয়ে আবারো একটু নেড়ে ঢাকনা দিয়ে রাখলেন মিনিটখানেক। চুলার আঁচ এসময় মাঝারি করে দিলেন, একটু পর পর ঢাকনা তুলে ভালোভাবে নেড়ে দিলেন যাতে কড়াইয়ে লেগে না যায়। এভাবে আলু ও গাজর কিছুক্ষণ কষানোর পর আধা কাপ পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া ও পটোল দিয়ে নাড়াচাড়া করে আবারো মিনিটখানেক ঢেকে রাখলেন। এবার ঢাকনা তুলে আবারও ভালোভাবে নেড়ে দিয়ে ২টি আস্ত কাঁচামরিচ ছেড়ে দিলেন। চুলার আঁচ কমিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিলেন । সতর্কতা * খুন্তি দিয়ে নাড়ার সময় হাত নিরাপদ দুরুত্বে রাখতে হবে। সম্ভব হলে হাতে কিচেন গ্লাভস পরে নেওয়া যেতে পারে। * খুন্তি দিয়ে উল্টানোর সময় হাঁড়ি তাপরোধী কিছু দিয়ে (কাপড়/ধরনি) ধরে নিতে হবে, তা না হলো কড়াই বেশি চাপ লেগে পড়ে যেতে পারে। * বেশি চাপ দেওয়া যাবে না, তাতে কড়াই কাত হয়ে যেতে পারে। কাজটি নিজে না পারলে বাড়ির অন্য কারও সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। |
ধাপ-৬ এরপর ঢাকনা তুলে, নেড়ে দিয়ে, এর মধ্যে এমন পরিমাণ পানি দিলেন, যাতে সব সবজি পানিতে ডুবে যায়। এবার মাঝারি আঁচে রেখে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিলেন। একটু পর পর ঢাকনা তুলে নেড়ে দিলেন। সতর্কতা * ঢাকনা উঠানো বা দেওয়ার সময় তাপরোধী কিছু দিয়ে (কাপড়/ধরনি) ধরে নিতে হবে, তা না হলো হাতে তাপ লাগতে পারে। * খুন্তি দিয়ে নাড়ার সময় হাত নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। সম্ভব হলে হাতে কিচেন গ্লাভস পরে নেওয়া যেতে পারে। |
ধাপ-৭ এরপর সবজিগুলো সিদ্ধ হয়ে ঝোলটা ঘন হয়ে এলে একটু নেড়ে লবণ চেখে নিলেন। (লবণ কম হওয়ায় সামান্য একটু দিয়ে নেড়ে দিলেন।) এবার ঢাকনা দিয়ে চুলা বন্ধ করে মিনিট পাঁচেক রেখে দিলেন চুলার ওপর। এভাবেই রান্না হয়ে গেল দারুণ স্বাদের পাঁচমিশালি সবজি। লোভনীয় এই সবজি দেখতেও অসাধারণ হয়েছে। রান্না শেষে চামচে করে একটু তুলে নিয়ে মুখে দিয়ে একটা তৃপ্তির হাসি হাসলেন এনিটা ; এরপর রান্নাঘরের সব কিছু ধোয়া-মোছা করে গুছিয়ে রাখলেন। সতর্কতা * লবণ হয়েছে কি না, তা চেখে দেখার সময় অবশ্যই ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে তারপর মুখে দিতে হবে, নতুবা গরমে ঠোঁট পুড়ে যেতে পারে। * কড়াই তাপরোধী কিছু দিয়ে (কাপড়/ধরনি) ধরে নামাতে হবে যাতে হাতে ভাগ না লাগে। |
• সব ধরনের সবজি কি এই পদ্ধতিতে রান্না করা যাবে?
• ধরন অনুযায়ী কোনো কোনো সবজি আগে দিতে হয় কেন?
• সবজি রান্নার সময় কী কী সতর্কতা মেনে চলা প্রয়োজন?
• সবজির সঙ্গে কি ছোলা বা মটর ডাল দিয়ে রান্না করা যায়? সেক্ষেত্রে কখন কীভাবে ডাল যোগ করা যেতে পারে?
• একই নিয়মে শীতকালীন সবজি যেমন ফুলকপি, শিম, টমেটো, মটরশুঁটি ইত্যাদি রান্না করা যায় কি? সে ক্ষেত্রে টমেটো ও মটরশুঁটি কখন দিলে ভালো হয়?
• কিউব বা চাক করে না কেটে অন্য আর কীভাবে সবজি কাটা যায়?
• সবজি রান্নার সময় এগুলোর রং ও গুণ অক্ষুন্ন রাখার উপায় কী?
• সবজিতে তেজপাতা, কালিজিরা ও ঘি ব্যবহারের সুবিধা কী? এগুলো কখন দিতে হয়?
• সকল উপকরণ ও সরঞ্জাম পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া।
• ছুরি, বঁটি ইত্যাদি ধারালো সরঞ্জাম সাবধানে ব্যবহার করা ও কাজ শেষে সঠিক স্থানে গুছিয়ে রাখা।
• কিউব করে সবজি কাটা।
• সবজি রান্না করার পদ্ধতি ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করা।
আমাদের বাড়িতে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের সবজি একটু-আধটু থেকে যায়। সেগুলো প্রায়ই নষ্ট হয়। অথচ আমরা একটু সচেতন হলেই এই অপচয় বন্ধ করতে পারি। যা যা অবশিষ্ট থাকে, সেগুলো একসঙ্গে করে আমরা পাঁচমিশালি সবজি রান্না করে খেতে পারি।
এতে সবজিও খাওয়া হলো, অপচয়ও রোধ হলো। আমরা জানি, সবজি খাওয়ার উপকারিতার শেষ নেই। বিভিন্ন মৌসুমের নানাজাতের সবজি ও শাক মিলিয়েও আমরা রান্না করতে পারি। এতে স্বাদেও বেশ নতুনত্ব আসে। অনেকেই সবজিতে মিষ্টি আলু দিতে পছন্দ করেন, এতে সবজিতে একটু মিষ্টি ভাব আসে। আবার কোনো কোনো এলাকায় সবজি চুলা থেকে নামানোর আগে এক চিমটি চিনি ছিটিয়ে দেওয়া হয় মিষ্টিভাব আনার জন্য। কোনো এলাকায় সবজি প্রথমে সিদ্ধ করে নিয়ে পরে ফোড়ন দেওয়া হয় সুগন্ধ ছড়ানোর জন্য। আবার ভোজন রসিকরা সবজিতে মাঝে মাঝে চিংড়ি, মুরগির মাংস (হাড় ছাড়া বুকের অংশ, ছোট ছোট টুকরা করে) কিংবা শুঁটকিও যোগ করে থাকে। প্রতিটিই স্বাদে ভিন্নতা আনে।
বাড়িতে বাবা-মা কিংবা বড় কারও সহায়তা নিয়ে রুচি ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে রান্না অনুশীলন করো। স্কুলে সহপাঠীরা মিলে নিজেদের ক্লাসে রান্না করে শিক্ষককে দেখাও। নতুন নতুন আইডিয়া যোগ করে রান্না করো । বাড়িতে প্রয়োজন অনুযায়ী অনুশীলন করো, বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে অন্যদের পরিবেশন করো এবং ছবি তুলে রাখো কিংবা এঁকে রাখো।
১। কারও কাছ থেকে অভিজ্ঞতা শুনে, ভালো করে বুঝে অথবা কোনো বই থেকে পড়ে ছকে দেওয়া তথ্যগুলো পূরণ করো
টমেটো ও ধনেপাতা সবজি রান্নার সময় কখন, কীভাবে দিতে হবে? | |
সবজি রান্নায় মটর ডাল যোগ করতে হলে কখন, কিভাবে দিতে হবে? | |
পাঁচমিশালি সবজিতে প্রাণিজ আমিষ (চিংড়ি, শুঁটকি, মাংস ইত্যাদি) যোগ করতে চাইলে কখন, কীভাবে দিতে হয়? | |
আমাদের দেহের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সবজির ভূমিকা কী? | |
শিক্ষকের মন্তব্য |
২। রুচির পরিবর্তন এবং স্বাদ আরও বাড়ানোর জন্য তুমি বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি দিয়ে মজাদার সবজি রান্না করে তোমার পরিবারের সদস্যদের খাওয়াও এবং তাদের মতামত সংগ্রহ করে শ্রেণিশিক্ষকের। নিকট জমা দাও।
পরিবারের সদস্য | খুব ভালো | ভালো | চলনসই |
---|---|---|---|
মা | |||
বাবা | |||
ভাই | |||
বোন | |||
দাদা | |||
দাদি | |||
অন্য কোনো সদস্য |
৩। তোমরা সবজি রান্না করার সময় কয়েকটি অবস্থার ছবি তুলবে অথবা নিচের বক্সে এঁকে রাখবে। সেগুলো শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী একদিন ক্লাসে এনে দেখাবে। (যদি ছবি প্রিন্ট করার সুযোগ পাও, তাহলে একটি সাদা কাগজে প্রিন্ট দিয়ে কেটে কেটে এখানে লাগিয়ে দাও।)
সবজি কাটা |
সবজি কষানো |
পরিমাণমতো পানি দেওয়া |
রান্না করা পাঁচমিশালি সবজি |
৪। কাজটি করতে গিয়ে আমার অনুভূতি
(ভালো লাগা, মন্দ লাগা, কাজটি করতে গিয়ে আঘাত পাওয়া কিংবা কোনো বাধার সম্মুখীন হওয়া এবং নতুন কী শিখেছ তা এখানে লেখো)
|
ছয়টি ঋতুর দেশ পৃথিবীতে খুবই বিরল। জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য নদী-নালার সযত্ন ছোঁয়ায় আমাদের দেশের মাটি সারা বছর থাকে সতেজ, উর্বর। ফলে প্রকৃতির অপার মহিমায় সবুজে সুশোভিত থাকে আমাদের চারপাশ। এমন সবুজ সুফলা দেশ পৃথিবীর কোলে একটিও নেই। এই আমাদের দেশ, প্রিয় জন্মভুমি! এখানকার উর্বর ভূমিতে পাখির বিষ্টা থেকেও ফলফলাদির গাছ জন্মে যায়। আর শাকসবজি, ফসলের তো হিসাবই নেই! বছরজুড়ে গোল আলু, মিষ্টি আলু, ছড়া আলু, শাক আলু, পটোল, পেঁপে, কাকরোল, বরবটি, ঝিঙ্গা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, উচ্ছে, করল্লা, ঢেঁড়স, লাউ, কুমড়া, চালকুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মটরশুঁটি, বেগুন, তাল বেগুন, শসা, খিরা, গাজর, ভুট্টা, মুলা, শালগম, কচুরলতি, কচুরমুখী, শাপলা, লালশাক, লাউশাক, পুঁইশাক, কচুশাক, পালংশাক, ডিমাশাক, কলমিশাক, সরিষা শাক, পাটশাক, নটেশাক, ঢেঁকিশাক, ডাটাশাক, শজনে ডাটা ইত্যাদি কত শত রকমের যে শাকসবজি ফলে আমাদের এই মাটিতে! এগুলোর পুষ্টিগুণও বলে শেষ করা যাবে না। তাই চলো, আমাদের প্রিয় দেশের প্রিয় শাকসবজিগুলো নানাভাবে রান্না করা শিখি আর সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নিজে সুস্থ থাকি।
এই পাঠ ও অনুশীলন শেষে আমরা- পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে, নিরাপদ ও সহজ উপায়ে (পরিবেশ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে) মাছ রান্না করতে পারব। |
“ভাত-মাছ খেয়ে বাঁচে বাঙ্গালী সকল
ধানে ভরা ভূমি তাই মাছ ভরা জল।ত”
বহুকাল আগে কবি ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছেন এই লাইন দুটো। মাছ নিয়ে বাংলা সাহিত্যে রয়েছে নানা ছড়া, কবিতা ও গল্প। মাছে ভাতেই যে বাঙালির যুগ যুগ ধরে পরিচয়! অষ্টম শতাব্দী থেকে বাংলাদেশের পাহাড়পুর ও ময়নামতিতে যেসব পোড়ামাটির ফলক মাটি খুঁড়ে বের করা হয়েছে, তার বেশ কয়েকটিতে মাছের ছবি দেখা যায়। কোনো কোনো মন্দির থেকে বঁটি দিয়ে মাছ কোটা বাঙালি রমণীর দৃশ্য সংবলিত পোড়ামাটির ফলক পাওয়া গেছে। মাছ যে বাঙালির একটা অতি প্রাচীন জনপ্রিয় খাবার, এ ফলকগুলো তারই পরিচায়ক। বাঙালির বিয়েবাড়িতে কিংবা গায়েহলুদে রুই মাছ সাজিয়ে পাঠানো হয় শুভাশিসের প্রতীক হিসেবে । আমাদের মাছপ্রীতির আরও পরিচয় পাওয়া যায় সংস্কৃতির নানা প্রকাশে-আলপনায়, শাড়ির পাড়ে, আঁচলে, কানের দুলে, গলায় হারের নকশায় ! বাঙালির সুস্বাস্থ্যের প্রতীক হলো মাছ। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত জাতের মাছ পাওয়া যায় না। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে আমাদের দেশ এখন সারা বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে আছে।
আমাদের দেহের ক্ষয় পূরণ ও বৃদ্ধিতে মাছের ভূমিকা অনন্য। মাছে রয়েছে প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন-সি, ভিটামিন বি-৩ এবং ভিটামিন-ডি, ভিটামিন বি২, ফ্যাটি অ্যাসিড, লাইসনিন ও মিথিওনিন যার প্রতিটিই আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করতে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধসহ শরীরের নানা সমস্যা প্রতিকারে মাছ অতুলনীয়। নদী-নালা, হাওর-বাঁওড়ের এই দেশে সেই প্রাচীনকাল থেকেই তাই বাঙালির রসনাবিলাসে মাছ রাজত্ব করে আসছে। এই মাছ রান্না তাই আমাদের আয়ত্ত্ব করা জরুরি।
মাছ রান্নার আগে আমাদের যা যা শিখে নিতে হবে:
• সরঞ্জাম ও তৈজসপত্র পরিষ্কার করার কৌশল
• ধারালো সরঞ্জামের ব্যবহার
• পেঁয়াজ ও রসুন কুঁচি করে কাটা
• সবজি কাটা
• চুলা জ্বালানো
• গুঁড়ামসলার ব্যবহার
তবে এলাকাভেদে মাছ রান্নার অনেক পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। আবার সব ধরনের মাছ রান্নার কৌশলও এক নয়। মাছ কখনও কড়কড়ে ভাজা, কখনও ঘন ঝোলে ভুনা, কখনও বা সবজি দিয়ে, কখনও শাক দিয়েও রান্না করা হয়। মাছের রকমারি রান্না দেখা যায় আমাদের রোজকার মেন্যুতে।
মাছ রান্না নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের রয়েছে দারুণ উপমা-
’খেদুবাবুর এঁধো পুকুর, মাছ উঠেছে ভেসে
পদ্মমণি চচ্চড়িতে লঙ্কা দিল ঠেসে।’
বেলাল হোসেন গত বছর সরকারি একটা প্রশিক্ষণে সুইডেন গিয়েছিলেন। একই প্রশিক্ষণে অন্য আরও ৮টি দেশের কর্মকতারা অংশ নেন। এক মাসের প্রশিক্ষণে তাদেরকে সেখানকার খুব নামকরা একটা হোটেলে রাখা হয়েছিল। ডিনারে তাদের প্রায় ৪০/৫০ পদের খাবার বুফে পরিবেশন করা হয়। প্রথম সপ্তাহ ভালোই খেয়ে কাটালেন তিনি। কিন্তু সপ্তাহখানেক পরেই তার প্রাণ মাছের জন্য ছটফট শুরু করল। একটা বুদ্ধি বের করলেন তিনি। হোটেলের ইনচার্জকে মেন্যুতে ৮ দেশের একটা করে আইটেম যোগ করতে রাজি করিয়ে ফেললেন (বাকি যে কয়েক দিন তারা এখানে আছেন, সেই দিনগুলোর জন্য)। কিন্তু শর্ত হলো, তাদের শেফকে সেই পদ/ রান্নাটা শিখিয়ে দিতে হবে। এক বাক্যে শর্ত কবুল করে নিলেন বেলাল সাহেব। তিনি প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে বেছে নিলেন, রুই মাছের তরকারি। প্রথম সপ্তাহেই বাজিমাত করে ফেললেন তিনি। প্রায় সব দেশের প্রতিনিধিরাই খেয়ে ব্যাপক প্রশংসা শুরু করলেন এবং রীতিমতো ডিস খালি হয়ে গেল। পরিস্থিতি দেখে হোটেলের ইনচার্জ তাদের হোটেলের নিয়মিত মেন্যুতেই রুই মাছ যুক্ত করলেন। বেলাল সাহেব ভিনদেশি শেফকে যেভাবে রুই মাছ রান্না শিখিয়েছিলেন, এসো আমরাও তা শিখে নিই।
রুই মাছের তরকারি রান্না করতে যা যা দরকার হবে-
১. পেঁয়াজ (বড়)-২টি
২. রসুন (বাটা)- ১ চা-চামচ
৩. হলুদ, মরিচ, জিরা গুঁড়া ও লবণ- ১ চা-চামচ করে
৪. কাঁচা মরিচ- ২/৪টি
৫. তেল- ২ টেবিল চামচ
৬. রুই মাছ - ৬ টুকরা
৭. আলু-২টা
৮. টমেটো- ২টা
ধাপ-১ বেলাল সাহেবের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথমেই সুইডিশ শেফ মাছ কেটে ভালোভাবে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিলেন। এরপর পেঁয়াজ ও রসুন কুচি কুচি করে কেটে নিলেন এবং ২টা আলু ও ২টা টমেটো লম্বা লম্বা করে কেটে নিলেন। ফ্রাইপ্যান, চামচ, বাটি ইত্যাদি পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিলেন। সতর্কতা * কাজের শুরুতেই মাথার চুল যেন পরিপাটি থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, তা না হলো বাতাসে চুল উড়ে গিয়ে এগুলোতে পড়তে পারে। সম্ভব হলে টুপি পরে নিতে হবে। * কাটার সময় খুব সতর্কভাবে কাটতে হবে, একদম অন্যদিকে তাকানো যাবে না, তাতে হাত কেটে যেতে পারে। সম্ভব হলে, হাতে গ্লাভস পরে নিতে হবে। * ধোয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে পরনের জামাকাপড় যেন ভিজে না যায়। সম্ভব হলো অ্যাপ্রোন পরে নিতে হবে। |
ধাপ-২ এরপর তিনি মাছের টুকরাগুলো একটু হলুদ, মরিচের গুড়া ও লবণ দিয়ে মাখিয়ে নিলেন। সতর্কতা * হলুদ ও লবণের পরিমাণ যেন ঠিক থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে; খুব বেশি বা কম যেন না হয়। |
ধাপ-৩ এবার তিনি কম আঁচে চুলায় একটি ফ্রাইপ্যান চাপিয়ে তাতে দুই টেবিল চামচ তেল দিয়ে দিলেন। তেল গরম হওয়ার পর এর মধ্যে মাখানো মাছের টুকরাগুলো ছেড়ে দিলেন এবং চুলার আঁচ মাঝারি করে দিলেন। সতর্কতা * একেক রকমের চুলা একেকভাবে জ্বালাতে হয়, তাই চুলা জ্বালানোর বিষয়টি আগেই বড়দের কাছ থেকে শিখে নিতে হবে। * যদি দেশলাই কাঠি দিয়ে চুলা জ্বালানো হয়, সে ক্ষেত্রে চুলায় আগুন ধরানোর পরপরই হাতের দেশলাইয়ের কাঠিটি পানি দিয়ে ভালোভাবে নিভিয়ে ফেলতে হবে । * তেলের মধ্যে মাছ ছাড়ার সময় তেল ছিটে আসতে পারে, সে ক্ষেত্রে একটা ঢাকনা কাত করে ধরে রেখে মাছ ছাড়া যেতে পারে, তাতে তেলের ছিটে এসে গায়ে লাগবে না |
ধাপ-৪ এবার তিনি মাছের এক পিঠ ভালোভাবে ভাজা হওয়ার পর সেগুলোকে উল্টে দিলেন। এভাবে উভয় পিঠ ভাজার পর একটি চামচ দিয়ে মাছের টুকরাগুলো ফ্রাইপ্যান থেকে তুলে নিলেন। বেলাল সাহেব তাকে কড়াভাবে মাছ ভাজতে নিষেধ করেছেন, তাই তিনি হালকা ভেজেছেন। সতর্কতা * তেলের মধ্যে মাছ উল্টে দেওয়ার সময় তেল ছিটে আসতে পারে, সে ক্ষেত্রে একটা ঢাকনা কাত করে ধরে রাখা যেতে পারে, তাতে তেল ছিটে এসে গায়ে লাগবে না। |
ধাপ-৫ এরপর তিনি নির্দেশনা অনুযায়ী অল্প আঁচে তেলের মধ্যে কুঁচি করে রাখা পেঁয়াজ ছেড়ে দিলেন। একটু নাড়াচাড়া করে পেঁয়াজ ভাজার পর ১ চা চামচ করে রসুনবাটা, হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া, জিরার গুঁড়া ও লবণ দিলেন । এগুলো দেওয়ার পর মাঝারি আঁচেই ৩০ সেকেন্ড নেড়ে মশলাগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে নিলেন। এরপর সামান্য একটু পানি দিয়ে ২ মিনিট ধরে কষিয়ে নিলেন। সতর্কতা * নাড়ার সময় হাত নিরাপদ দুরুত্বে রাখতে হবে। সম্ভব হলে হাতে কিচেন গ্লাভস পরে নেওয়া যেতে পারে। |
ধাপ-৬ এবার লম্বা করে কেটে রাখা আলুগুলো প্যানে ঢেলে দিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকলেন। এভাবে ৩/৪ মিনিট ধরে আলুগুলো মসলায় কষিয়ে নিয়ে এককাপ পানি দিলেন এবং নেড়ে ঢাকনা দিয়ে রাখলেন মিনিট পাঁচেক। এরপর ঢাকনা তুলে আবারও ভালোভাবে নেড়ে দিয়ে ফালি করে রাখা টমেটো ছেড়ে দিলেন এবং চুলার আঁচ কমিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিলেন । এরপর ঢাকনা তুলে নেড়ে দিয়ে এর মধ্যে এমন পরিমাণ পানি দিলেন যেন যাতে সব সবজি পানিতে ডুবে যায়। এবার মাঝারি আঁচে রেখে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিলেন। সতর্কতা * ঢাকনা উঠানো বা দেওয়ার সময় তাপরোধী কিছু দিয়ে (কাপড় ধরনি) ধরে নিতে হবে, তা না হলে হাতে তাপ লাগতে পারে। |
ধাপ - ৭ ৩/৪ মিনিট পর ঢাকনা তুলে ভেজে রাখা মাছগুলো উপরে সুন্দরভাবে বিছিয়ে দিয়ে আবারও ঢাকনা দিয়ে দিলেন। ২/৩ মিনিট পর ঢাকনা খুলে মাছের টুকরাগুলো আলতোভাবে উল্টে দিলেন এবং ২/৩ টি কাঁচামরিচ দিয়ে দিলেন। ঝোল ঘন হয়ে এলে একটু নেড়ে লবণ চেখে নিলেন। (লবণ কম হওয়ায় সামান্য একটু দিয়ে নেড়ে দিলেন।) এবার একটু ধনে পাতা কুঁচি ছিটিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে চুলা বন্ধ করে মিনিট পাঁচেক রেখে দিলেন চুলার উপর। এভাবেই রান্না হয়ে গেল দারুণ স্বাদের রুই মাছের তরকারি। রান্না শেষে শেফ চামচে করে একটু তুলে নিয়ে টেস্ট করে মিষ্টি হাসলেন আর বেলাল সাহেবকে বুড়ো আঙুল তুলে লাইক সাইন দেখালেন। সতর্কতা * লবণ হয়েছে কি না, তা চেখে দেখার সময় অবশ্যই ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে তারপর মুখে দিতে হবে, নতুবা গরমে ঠোঁট পুড়ে যেতে পারে। * কড়াই তাপরোধী কিছু দিয়ে (কাপড় ধরনি) ধরে নামাতে হবে যাতে হাতে তাপ না লাগে। |
• রুই ছাড়া আর কী কী মাছ এই পদ্ধতিতে রান্না করা যাবে?
• আলু ছাড়া আর কী কী সবজি দিয়ে এভাবে মাছ রান্না করা যাবে?
• মাছ সবজি ছাড়া ভুনা করলে কীভাবে করা যা? সে ক্ষেত্রে কখন, কীভাবে, কতটুকু পানি যোগ করতে হবে?
• মাছ শুধু ভেজে খেতে চাইলে কীভাবে করা যায়?
• কড়াই বা ফ্রাইপ্যান ভালোমতো গরম না হতেই মাছ ছেড়ে দিলে কী সমস্যা পারে?
• টমেটো, ধনে পাতা না থাকলে কি মাছের তরকারি রান্না হবে না?
• মাছের সঙ্গে আলু বা অন্য সবজি লম্বা করে না কেটে আর কীভাবে কাটা যায়?
• মাছের তরকারির জন্য মাছ কড়া করে ভেজে ফেললে কী সমস্যা হতে পারে?
• না ভেজে কি মাছ রান্না করা যায়?
• মাছ রান্নার সময় কী কী সতর্কতা মেনে চলা প্রয়োজন?
• সকল উপকরণ ও সরঞ্জাম পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া।
• ছুরি, বঁটি ইত্যাদি ধারালো সরঞ্জাম সাবধানে ব্যবহার করা ও কাজ শেষে সঠিক স্থানে গুছিয়ে রাখা।
• মাছ রান্না করার পদ্ধতি ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করা।
ষোড়শ শতকের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী বাঙালির অন্যতম ব্যঞ্জন বা তরকারি হিসেবে মাছ রাঁধার চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন –
“কৈ ভাজে গণ্ডাদশ মরিচ গুঁড়িয়া আদারসে।”
মাছ বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। কত জাতের মাছ যে পাওয়া যায় এদেশে। মিঠা পানির মাছ, লোনা পানির মাছ, পুকুরের মাছ, বিলের মাছ, চাষের মাছ। সব ছাড়িয়ে আছে মাছের রাজা ইলিশও! ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ শুধু নয়, বাংলাদেশ এর ভৌগোলিক পেটেন্টও পেয়েছে। একেক মাছের একেক স্বাদ, রান্নায়ও আছে নানা বৈচিত্র্য। বাড়িতে বাবা-মা, কিংবা বড় কারও সহায়তা নিয়ে রুচি ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্নভাবে মাছ রান্না অনুশীলন করো। স্কুলে সহপাঠীরা মিলে নিজেদের ক্লাসে রান্না করে শিক্ষককে দেখাও। নতুন নতুন আইডিয়া যোগ করে রান্না করো। বাড়িতে প্রয়োজন অনুযায়ী অনুশীলন করো, বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে অন্যদের পরিবেশন করো এবং ছবি তুলে রাখো কিংবা এঁকে রাখো।
১। কারও কাছ থেকে অভিজ্ঞতা শুনে ভালো করে বুঝে অথবা কোনো বই থেকে পড়ে ছকে দেওয়া তথ্যগুলো পূরণ কর
ফুলকপি, শিম, আলু টমেটো দিয়ে মাছ রান্না করা যায় কি? কখন, কোনোটি দিতে হবে? | |
ইলিশ মাছ ভুনায় সরিষা বাটা দিতে চাইলে কীভাবে কখন দিতে হবে? | |
পাঁচমিশালি ছোট মাছে কাঁচা আম বা জলপাই দিলে কেমন হবে? এগুলো যোগ করতে চাইলে কখন, কীভাবে দিতে হয়? | |
আমাদের দেহের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন ধরনের মাছের ভূমিকা কী? | |
শিক্ষকের মন্তব্য |
২। রুচির পরিবর্তন এবং স্বাদ আরও বাড়ানোর জন্য তুমি বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি দিয়ে মজাদার সবজি রান্না করে তোমার পরিবারের সদস্যদের খাওয়াও এবং তাদের মতামত সংগ্রহ করে শ্রেণি শিক্ষকের নিকট জমা দাও।
পরিবারের সদস্য | খুব ভালো | ভালো | চলনসই |
---|---|---|---|
মা | |||
বাবা | |||
ভাই | |||
বোন | |||
দাদা | |||
দাদি | |||
অন্য কোনো সদস্য |
৩। কাজটি করতে গিয়ে আমার অনুভূতি
(ভালো লাগা, মন্দ লাগা, কাজটি করতে গিয়ে আঘাত পাওয়া কিংবা কোনো বাধার সম্মুখীন হওয়া এবং নতুন কী শিখেছো তা এখানে লেখো)
|
৪। তোমরা সবজি রান্না করার সময় কয়েকটি অবস্থার ছবি তুলবে অথবা নিচের বক্সে এঁকে রাখবে। সেগুলো শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী একদিন ক্লাসে এনে দেখাবে। যদি ছবি প্রিন্ট করার সুযোগ পাও, তাহলে একটি সাদা কাগজে প্রিন্ট দিয়ে কেটে কেটে এখানে লাগিয়ে দাও।
মাছ, আলু ও টমেটো কাটা |
মাছ ভাজা |
মশলা কষানো |
আলু ও টমেটো সিদ্ধ করা |
মাছ বিছিয়ে দেওয়া |
মাছের তরকারি |
ছড়ায় কয়েকটি মাছের নাম শুনি-
কাতলা, চিতল, ইলিশ মাছ
এরাই যদি মাছের রাজ
শিং, মাগুর আর শোল-গজার
গাল ফুলিয়ে হয় বেজার ।
তেলাপিয়া, রুই, বোয়াল,
ভাংতে চাহে কার চোয়াল ।
পাবদা, টাকি, খলসে, কই,
গোল বাঁধাবে নিশ্চয়ই।
চান্দা, মৃগেল, চিংড়ি-ইচা,
করবে শুরু মরণ খিচা ।
হাসি খুশি টেংরা, পুঁটি,
রাজায় প্রজায় দ্বন্দ্ব দেখে
হেসেই কুটিকুটি। (সংগৃহীত)
বাঙালির প্রতিদিনের নানা কথায়ও মাছ জড়িয়ে আছে। মাছ নিয়ে আছে নানা কথা, চটুল মন্তব্য, প্রবাদ-প্রবচন ও বাগধারা। যেমন ধরো-‘রাঘববোয়াল', 'গভীর জলের মাছ', ‘মাছের মা', 'মাছের তেলে মাছ ভাজা', 'শাক দিয়ে মাছ ঢাকা', 'ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না” ও ‘মাছের মায়ের পুত্রশোক' ইত্যাদি কত কী! তাই মাছকে ভালো না বেসে থাকা যায়! মাছকে মজা করে রান্না করতে হবে এবং ভালোবেসে খেতে হবে! তাই চলো, আমাদের প্রিয় দেশের প্রিয় মাছগুলো নানাভাবে রান্না করা শিখি, আর সবাইকে নিয়ে নিজে সুস্থ থাকি ।
আরও দেখুন...