এই পাঠ ও অনুশীলন শেষে আমরা- নিরাপদ পরিবেশে পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে সহজ উপায়ে মুরগি পালন করতে পারব। |
তনু-তন্ময় দুই ভাইবোনের স্কুলে শীতকালীন ছুটি চলছে। বাবা মায়ের ব্যস্ততার জন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়নি। আজ তনুর বাবা অফিস থেকে এসে ভাই-বোন দুজনের সামনে ট্রেনের টিকেট ধরে বললেন আগামীকাল ভোরে আমরা সবাই তোমাদের দাদার বাড়ি বেড়াতে যাব। খুশিতে আত্মহারা দুই ভাই-বোন বাবার কাছে আবদার করল, দাদুকে চমকে দিবে, সুতরাং কোনো খবর দেওয়া যাবেনা। পরদিন তাদের বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় দুপুর হয়ে গেল। তাদের দেখে দাদুরতো খুশি আর ধরেনা। ছোট চাচিকে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্হা করতে বলে তনুদের নিয়ে বারান্দায় পাটি পেতে বসলেন। তনু দেখল ছোট চাচি উঠোনের একপাশে বেড়ার একটি ঘরে ঢুকে দুটো মুরগি নিয়ে বেরিয়ে পুকুরের দিকে গেল। গৃহকর্মী মরিয়ম খালা একটি খাঁচা থেকে কতগুলো ডিম বের করলেন। দাদুকে বেড়ার ঘরটি দেখিয়ে ওটা কী জিজ্ঞেস করলে দাদু বললেন, ওই ঘরে মুরগি পালন করা হয়। তারা দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখল ১৫-২০ টি মুরগি সেখানে ছুটোছুটি করছে। কোনোটি পাত্রে রাখা খাবার খাচ্ছে, কোনোটি মাচায় উঠে বসে আছে। তারা দারুণ মজা পেল। উঠোনে তারা আরও কিছু মুরগি এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করতে দেখল। রান্নাঘরের পাশে এককোনে ছোট একটি ঘর দেখে তন্ময় চাচির কাছে সেটি কী জানতে চাইলে তিনি বললেন, এটা মুরগির খোঁয়াড়।
তনু-তন্ময় একসাথে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চাচির পাশে বসা তাদের মায়ের দিকে তাকালে তিনি তাদের বুঝিয়ে বললেন, বাইরে যে মুরগিগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের রাতে থাকার জন্য এই ব্যবস্হা। ভাই-বোন দু'জন আবার দৌড়ে গিয়ে দাদুর পাশে বসল। এবার শুরু হলো মুরগি নিয়ে তাদের যত কৌতুহলী প্রশ্ন। মুরগি কী খায়? এগুলো কোথা থেকে আনা হয়েছে? কেন মুরগি পালন করছে? কয়টি ডিম পাড়ে? আরো কত কী! দাদু একে একে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বললেন, এবার বলতো দাদুভাই কেন আমরা মুরগি পালন করছি?
তন্ময় ঝটপট জবাব দিল, 'এই যে আমরা হঠাৎ চলে আসলাম, মুরগি কিনতে বাজারে যেতে হলোনা। শুধু তাই? এবার তনু বললো- ডিমওতো কিনতে হলোনা। ‘তাছাড়া, আমাদের প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদাও মিটে যাচ্ছে আবার বাড়তি যে ডিমগুলো থাকছে তা বিক্রি করে আমার কিছু আয়ও হচ্ছে; সময়ও কাটছে'- মিষ্টি হেসে দাদু ওদের কথার সাথে যোগ করলেন। তন্ময়ের চোখে মুখে উচ্ছ্বাস। দাদুকে জিজ্ঞেস করল, দাদু, মুরগি পালন কি কঠিন কাজ? ‘মোটেই না দাদুভাই, তোমরা নিজেরা ফ্ল্যাট বাসায় বা গ্রামের বাড়িতে ২-৪ টি মুরগি নিয়ে। খাঁচায় সহজেই ছোট পরিসরে পালন করতে পারবে'- দাদু বললেন। এরপর দুপুরের খাবার সেরে তাদের দুই ভাইবোনের সাথে দাদু মুরগি পালন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন। এবার আমরা সেই আলোচনা জানব।
প্রথমেই জেনে নিই মুরগি পালনের উদ্দেশ্য ও সুবিধাগুলো -
• কর্মসংস্থানের ব্যবস্হা করা যায়
• প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করা যায়
• পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা যায়
• মুরগির ডিম এবং মুরগি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি অর্থ দিয়ে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা সম্ভব হ
• খামার করে ঘরে বসে স্বল্প পুঁজি খাটিয়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়
আমাদের দেশে সাধারণত: কয়েকটি পদ্ধতিতে মুরগি পালন করা হয় । বাড়ির সামনে উঠান বা খোলা জায়গা থাকলে সহজেই মুরগি ছেড়ে দিয়ে পালন করা। খোলা জায়গায় মুরগি দুইভাবে পালন করা হয়।
ক. উন্মুক্ত বা মুক্ত পালন
খ. অর্ধমুক্ত পালন
উন্মুক্ত বা মুক্ত পালনের ক্ষেত্রে মুরগিকে খুব ভোরে ঘর থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। সারাদিন বাড়ির আশে পাশে ঘোরাফেরা করে সন্ধ্যায় সূর্য অস্তের সাথে সাথে নিজেদের খোঁয়াড়/ঘরে ঢুকে। অর্ধমুক্ত পালনের ক্ষেত্রে মুরগির জন্য নির্দিষ্ট ঘর থাকে এবং ঘরসংলগ্ন কিছু খোলা জায়গাও থাকে। ঘরের চারপাশে সাধারণত: ৫-৬ ফুট উঁচু করে বাঁশের চটা বা তার জাল দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়। মুরগি সারাদিন এ জায়গায় স্বাচ্ছন্দে চড়ে বেড়ায় ও রাতে ঘরের ভেতরে থাকে। আবার জায়গা কম থাকলে আবদ্ধ অবস্থায়ও পালন করা হয়, সেক্ষেত্রে খাঁচায় ছোট পরিসরে পালন করা হয়।
যে পদ্ধতিতেই মুরগি পালন করা হোক না কেন তা সফলভাবে সম্পন্ন করতে আমদের যে বিষয়গুলো জানতে হবে, সেগুলো হলো-
১. ঘর তৈরি
২. বাচ্চা সংগ্রহ
ক. উৎস
খ. জাত নির্বাচন
৩. মুরগির খাবার
৪. পরিচর্যা
৫. রোগ ব্যবস্হাপনা: প্রতিরোধ ও প্রতিকার
উন্মুক্ত বা মুক্ত পালন ও অর্ধমুক্ত পদ্ধতিতে মুরগি পালনের ঘর তৈরি করার জন্য বাঁশ, লোহার তার বা মোটা গুনা, তারকাটা, রঙ্গিন টিন এবং পুরাতন মোটা কাগজ উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে।
এবার উপকরণগুলো দিয়ে কীভাবে ঘর তৈরি করতে হবে দাদু তা বর্ণনা করলেন-
• বাড়ি বা ঘরের কোণে খোলামেলা জায়গা নির্ধারণ করতে হবে
• ৩ ফুট, ২ ফুট এবং ৩ ফুট মাপের বাঁশ চিকন ফালি করে কেটে নিতে হবে
• চার কর্ণারের জন্য ৪টি ৪ফুট মাপের মাঝারি বাশের খুঁটি কাটতে হবে
• মাটি হতে ১ ফুট উপরে ঘরের ফ্রেম করে বাশের ফালি গুলো মাপ মোতাবেক মেঝে ও চারপাশ তারকাটা দিয়ে লাগাতে হবে
• প্রস্থের মাঝে মেঝে বরাবর ১ বর্গ ফুট দরজা রাখতে হবে
• ঘরের উপর মাপ অনুযায়ী রঙ্গিন টিন বা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিতে হবে
• ঘরের সামনে পরিষ্কার পানি ও খাদ্য দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
তবে এই মাপঝোঁক কম বেশিও হতে পারে। রঙ্গিন টিন পাওয়া না গেলে সাধারণ যেকোনো টিন বা অন্য কিছু ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা ঘরে আবদ্ধ জায়গায় মুরগি পালন করতে চাইলেও একই উপকরণ দিয়ে ঘর বানিয়ে নিতে পারি। সেক্ষেত্রে জায়গার পরিমান বুঝে ঘরের মাপ ঠিক করতে হবে। শহরে স্বল্প পরিসরের বাসায় বারান্দার এক কোণে ছোট ঘর বানিয়ে ২/৩ টা মুরগি পালন করা যায়। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন মুরগির ঘর পরিষ্কার করতে হবে। ঘরে আলোবাতাস থাকতে হবে। উচ্ছিষ্ট খাবার সরিয়ে ফেলতে হবে, নয়তো ঠোকরা ঠুকরি করে খাবার সারা ঘরে ছিটাবে। মুরগির কারণে বাসায় যেন গন্ধ না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। নিয়মিত ঘর পরিষ্কার রাখলে গন্ধ হবে না।
বাচ্চা সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোথায় থেকে সংগ্রহ করা হবে এবং কোন জাতের মুরগি সংগ্রহ করা হবে তা আগে বিবেচনা করতে হবে। সেক্ষেত্রে দুটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে-
ক. উৎস
দুই মাস বয়সের মুরগি (যা পুলেট নামে পরিচিত) প্রাপ্তির জন্য উপযুক্ত উৎস হলো-
• সরকারি মুরগির খামার
• খামারি
• ডিলার বা মুরগি ব্যবসায়ী
খ. মুরগির জাত ও বৈশিষ্ট্য
বিভিন্ন জাতের মুরগি আছে। কোনো কোনো জাতের মুরগি শুধু ডিমের জন্য পালন করা হয়। আবার কোনো কোনো জাতের মুরগি মাংসের জন্য পালন করা হয়। বৈশিষ্ট্য দেখে মুরগির জাত চেনা যায়। চলো, আমরা কয়েকটি জাতের মুরগির সাথে পরিচিত হই-
জাত: ফাউমি (সাধারণ বৈশিষ্ট্য) • এরা আকারে প্রায় দেশি মুরগির মতো • কানের লতি সাদা, মাথার ঝুঁটি আকারে ছোট ও লাল • গলার দিকে ধূসর কিন্তু সারা শরীর সাদা কালো রংয়ের মিশ্রণ • দেশি মুরগির মত চঞ্চল • ডিম উৎপাদন বছরে ২০০-২২০টি |
জাত: সোনালী (সাধারণ বৈশিষ্ট্য) • দেশী মুরগির চেয়ে একটু বড় ও ডিম বেশি দেয় • পালক গাঢ় বাদামি বা সোনালি কিংবা সাদা-কালো ও হতে পারে • পা লম্বা ও হলুদ বর্ণের। • বছরে প্রতিটি মুরগি গড়ে ১৬০-১৮০ ডিম দেয়। |
জাত: দেশি (সাধারণ বৈশিষ্ট্য) • এদের পা লোমহীন ও পায়ের নলা সাদাটে। তবে কালো রংয়ের পায়ের নলাও দেখা যায়। • চামড়া হলদেটে । • একক ঝুঁটি বিশিষ্ট এবং ঝুঁটির রং লাল। তবে বাদামি বা ধুসর বর্ণের ঝুঁটিও দেখা যায়। • সাদা এবং লালের মিশ্রণযুক্ত কানের লতি বেশি দেখা যায়। • বৎসরে প্রতিটি মুরগি গড়ে ৬০-৯০ ডিম দেয়। |
বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। সচরাচর যে সকল মোরগ-মুরগি গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে দেখা যায়, তার প্রায় সবই এ জাতের অন্তর্ভুক্ত। বাজারে মূল্যও সবচেয়ে বেশি। এই জাতের মোরগ মুরগি নির্দিষ্ট কোনো রঙয়ের হয় না। তবে লালচে বাদামি বা লালচে কালো রং এর মুরগি বর্তমানে সংখ্যায় বেশি পাওয়া যায়।
মুরগি সুস্থ রাখার জন্য খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। পারিবারিকভাবে দেশি মুরগি পালনের ক্ষেত্রেও দৈনন্দিন খাবার লক্ষ্য রাখতে হয়। প্রত্যেক প্রাণির মত মুরগির খাদ্যে ৬টি মূল উপাদান (শর্করা, আমিষ চর্বি, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি) প্রয়োজন হয়।
পারিবারিকভাবে দেশি মুরগি সাধারণত ছেড়ে দিয়ে লালন পালন করা হয়। দৈনন্দিন প্রয়োজনের বেশিরভাগ খাবারই দেশি মুরগি চড়ে খাওয়া (scavenging) পদ্ধতিতে গ্রহণ করে থাকে। আমাদের প্রতিদিনের বাড়তি বা বাসি খাবার যেমন- ফেলে দেয়া এঁটো ভাত, তরকারি, আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গম, ধান, পোকামাকড়, শাকসবজির ফেলে দেয়া অংশ, ঘাস, লতা-পাতা, কাঁকর, পাথরকুচি ইত্যাদি দেশি মুরগি কুঁড়িয়ে খায়। এরপরেও প্রয়োজনীয় শারীরিক বৃদ্ধি ও ডিম উৎপাদনের জন্য বাড়তি কিছু খাবার দিতে হয়। যেহেতু প্রকৃতিতে মুরগি বেশি পোকামাকড় খেয়ে থাকে তাই আমিষের চাহিদা মুরগি প্রকৃতি থেকেই গ্রহণ করে থাকে। তবে মুরগির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এসব স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার সম্পুরক খাদ্য হিসেবে প্রদান করতে হবে। মুক্ত বা অর্ধ-মুক্ত সবধরনের মুরগি পালনেই সম্পূরক খাদ্য দেয়া প্রয়োজন। তবে আবদ্ধপালন যেমন- খাঁচায় পালনের ক্ষেত্রে মুরগিকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য বা সুষম খাদ্য দেওয়া হয়।
যেসব বাড়তি খাবার মুরগিকে দিতে হয় তা হলো-
• শর্করা চালের খুদ, ভুট্টা ভাঙা, ভাত।
• আমিষ ও চর্বি - সরিষা, কালাই ভাঙা, সরিষা/ তিলের খৈল, মাছের নাড়ি ভুড়ি শর্করা জাতীয় খাবারের সাথে মিশিয়ে সরবরাহ করতে হয়।
• ভিটামিন ও খনিজ লবণ: এ দুটি উপাদানের জন্য বিভিন্ন ফলের খোসা, তরমুজ, ডাব, কাঁঠাল, আম, পেয়ারা, কলার খোসা, সবুজ পাতা, শাক-সবজির পাতা, অন্যান্য উদ্ভিদ ও প্রাণিজ খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।
• পানি- সব সময় মুরগির জন্য তার বিচরণ ক্ষেত্রের আওতার মধ্যে একটি পাত্রে পরিষ্কার পানি রাখতে হবে যেন প্রয়োজনের সময় গ্রহণ করতে পারে।
ডিম বা মাংসের জন্য ফাউমি বা সোনালি জাতের যদি একসঙ্গে অনেক মুরগি পালন করা হয়, সেক্ষেত্রে মুরগির খাদ্য প্রস্তুত করতে মূলত গম/ ভুট্টা ভাঙ্গা, চালের কুড়া, সয়াবিন মিল, ফুল ফ্যাট সয়াবিন, ঝিনুক চূর্ণ, ফিস মিল, লবণ, ভিটামিন-খনিজ মিশ্রণ এর প্রয়োজন হয়। এই মিশ্রণ মুরগির রেশন নামে পরিচিত। বিশ্বস্ত উৎস হতে সংগ্রহ করে মুরগির রেশন তৈরি করতে হয়। রেশন প্রস্তুত করতে পুষ্টিমান হিসাবে খাদ্যে মোট ৬টি উপাদান, যেমন-আমিষ, শর্করা, খনিজ, চর্বি বা তেল, ভিটামিন ও পানি নির্ধারিত মাত্রায় থাকতে হবে। এখন আমরা সহজ উপায়ে নিজ খামারে কীভাবে রেশন তৈরি করা যায় তা শিখব।
রেশন তৈরির জন্য প্রথমে নিচের উপকরণগুলো সংগ্রহ করতে হবে-
• নিক্তি / ব্যালেন্স
• খাদ্য উপাদান (ভুট্টা ভাঙ্গা, চালের কুড়া, সয়াবিন মিল, ঝিনুক চূর্ণ, ফিস মিল, লবণ, ভিটামিন- খনিজ মিশ্রণ)
• বেলচা
• খালি ব্যাগ
প্রথমে ঘরের মধ্যে একটি পরিষ্কার স্থান নির্বাচন করতে হবে। প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ নির্ধারিত পরিমানে একে একে মেপে মেঝেতে ঢালতে হবে। এরপর সবগুলো উপাদান বেলচা দিয়ে উলটপালট করে ভালোভাবে মেশাতে হবে। মিশ্রণকৃত খাদ্য ব্যাগে ভরে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার ব্যাগ থেকে বের করে খামারের মুরগিকে দিতে হবে।
মুরগির খাদ্য তালিকা/রেশন তৈরি (১০ কেজি)
ছক ৯.১ : বাসা-বাড়িতে বিভিন্ন বয়সের মুরগির জন্য পরিমানমতো সুষম দানাদার খাদ্য তৈরির তালিকা
উপাদান | ০-৮ সপ্তাহ (কেজি) | ৯-১৮ সপ্তাহ (কেজি) | ১৯-৭২ সপ্তাহ (কেজি) |
---|---|---|---|
ভুট্টা/গম ভাঙ্গা | ৫.০ | ৫.০ | ৫.৪ |
গমের ভূষি | ১.০ | ০.৭ | ০.৫ |
চালের কুড়া | ১.০ | ১.৫ | ১.৫ |
তিলের খৈল% | ১.২ | ১.০ | ০.৭ |
শুটকি মাছের গুড়া | ১.৪ | ১.২ | ১.০ |
হাড়ের গুড়া | ০.১৫ | ০.৩ | ০.২৫ |
ঝিনুক চুল | ০.২ | ০.২৫ | ০.৬ |
লবণ | ০.০৫ | ০.০৫ | ০.০৫ |
সর্বমোট | ১০.০০ | ১০.০০ | ১০.০০ |
ছক ৯. ২ : ফাউমি ও সোনালি মুরগির দৈনিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ
মুরগির বয়স | প্রতি মুরগি দৈনিক গড় খাদ্য গ্রহণ করবে | মুরগির বয়স | প্রতি মুরগি দৈনিক গড় খাদ্য গ্রহণ করবে |
---|---|---|---|
৮ম সপ্তাহ | ৪৫ গ্রাম | ১৬তম সপ্তাহ | ৭৮ গ্রাম |
৯ম সপ্তাহ | ৫০ গ্রাম | ১৭তম সপ্তাহ | ৮০ গ্রাম |
১০ম সপ্তাহ | ৫২ গ্রাম | ১৮তম সপ্তাহ | ৮২ গ্রাম |
১১তম সপ্তাহ | ৫৮ গ্রাম | ১৯তম সপ্তাহ | ৮৪ গ্রাম |
১২তম সপ্তাহ | ৬৬ গ্রাম | ২০তম সপ্তাহ | ৮৭ গ্রাম |
১৩তম সপ্তাহ | ৬৯ গ্রাম | ২১তম সপ্তাহ | ৯০ গ্রাম |
১৪তম সপ্তাহ | ৭২ গ্রাম | ২২-২৩তম সপ্তাহ | ৯৫-৯৮ গ্রাম |
১৫তম সপ্তাহ | ৭৫ গ্রাম | ২৪-২৫তম সপ্তাহ | ১০২-১০৮ গ্রাম |
নিজেদের তৈরি মুরগির খাদ্য (রেশন) কোম্পানির মতো হয়না অর্থাৎ ট্যাবলেটের (পিলেট বা ক্রাম্বল) এর মতো দেখায় না। কিছুটা গুড়া প্রকৃতির হয়ে থাকে। তবে একটু বড় মুরগির জন্য খাদ্য উপাদানসমূহের চূর্ণ কিছুটা বড় রাখা ভাল। বড় মুরগিকে মিহি চূর্ণ (পাউডার) খাবার দিলে বেশি খাবার খাবে, ফলে খাবার খরচ বেড়ে যায়।
দুইমাস বা তার চেয়ে বেশি বয়সের মুরগির প্রতিদিনের পরিচর্যা
• সুস্থ মুরগি সংগ্রহ করতে হবে।
• মুরগি রাতে রাখার যে ঘর আছে, তার সম্মুখে নির্দিষ্ট পাত্রে পানি ও খাবার দিতে হবে। যাতে সকালে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এবং ঘরে ঢোকার সময় ঐ পানি ও খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়।
• মুরগির ঘর অবশ্যই শুকনা ও পরিষ্কার রাখতে হবে।
• দেশি মুরগি উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে অল্প পরিমাণে বাড়তি সুষম খাবার দিতে হবে।
• মাথা পিছু ৫০-৭০ গ্রাম হিসাবে হাতে তৈরি / রেডি ফিড অর্ধেক সকালে ও অর্ধেক বিকালে খেতে দিতে হবে।
• মুরগির খাবার সবসময় শুকনা ও পরিষ্কার রাখতে হবে। সেই সাথে খাবার পাত্রটিও রাখতে হবে পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত।
• রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মুরগির ঘর চুন বা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
• অসুস্থ মুরগিকে সুস্থ মুরগি থেকে আলাদাভাবে রেখে অসুস্থ মুরগির চিকিৎসা ও যত্ন নিতে হবে।
বাৎসরিক পরিচর্যা
• প্রতি ২ মাসে একবার করে কৃমিনাশক ওষুধ পানিতে গুলে খাওয়াতে হবে।
• রানিক্ষেত বা বসন্তের মতো কয়েকটি সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত টিকা প্রদান জরুরি। তবে টিকা দেওয়ার দশ দিন আগে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে।
• মুরগির উকুন ও আঠালি দূর করতে হবে।
• ক্ষতিকর জীবজন্তুর আক্রমন থেকে রক্ষার ব্যবস্হা অর্থাৎ জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিকার: মুরগির গুরুত্বপূর্ণ রোগ, লক্ষণ ও করণীয়
দেশি/ সোনালি মুরগি তুলনামূলকভাবে রোগ সহনশীল হলেও কিছু কিছু রোগ মুরগির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে পারে। কিছু রোগ রয়েছে যেগুলোর কারণে সব মুরগি এক সঙ্গে মারা যায় । এজন্য মুরগির কোনো অস্বাভাবিকতা/ লক্ষণ দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মুরগির যে অস্বাভাবিকতাগুলোকে রোগ হিসেবে গণ্য করা হয়, সেগুলো হলো:
মুরগির যদি-
• চুনা পায়খানা হয়
• মাথা বা ঘাড় বাকা হয়ে যায়, পা অবশ হয়ে যায়, পাখা ঝুলে যায়
• শ্বাসকষ্ট হয় ও খাওয়া বন্ধ করে দেয়
• জ্বর আসে
• মাথার ঝুঁটি/লতি/ঠোঁটের কোনায়, চোখের পাতায় আঁচিলের মত গুটি দেখা যায়
• পাখা ছেড়ে দিয়ে ঝিমাতে থাকে
• দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় ও খাওয়া বন্ধ করে
• চোখে মুখে রক্তশূন্যতার অভাব পরিলক্ষিত হয়
এগুলো ছাড়াও অসুস্থ মুরগি দেখলেই সাধারণত চেনা যায়। কারণ-
• আক্রান্ত মুরগি শুকিয়ে যেতে থাকবে
• মুরগির পালক উস্কোখুস্কো হয়ে যাবে
• ডিম পাড়া মুরগির ডিম দেয়া প্রায় বন্ধ করে দেবে
• মাঝে মধ্যে মুরগি পাতলা পায়খানা করবে
• পায়খানায় কৃমি দেখা যাবে
প্রতিকার
• প্রাথমিকভাবে অসুস্হ মুরগিকে সুস্হ মুরগি থেকে আলাদা করতে হবে।
• নিকটস্হ পশু হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
• পাশ্ববর্তী অভিজ্ঞ মুরগি খামারির নিকট থেকে পরামর্শ নিতে হবে।
মুরগির টিকা প্রদান
মুরগির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। মুরগির রোগ প্রতিরোধক হিসেবে টিকা ব্যবহার করা হয়। আমরা সকলেই জানি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হচ্ছে রোগ নিরাময়ের চেয়েও উত্তম। টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করে লাভজনক মুরগি পালন নিশ্চিত করা যায়। এক্ষেত্রে টিকাবীজ সরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা বিশ্বস্থ উৎস থেকে সংগ্রহ করে প্রস্তুতকারীর নির্দেশনা অনুসারে টিকাদান করা হয়। বিভিন্ন রোগের টিকা কীভাবে দিতে হয় চলো তা দেখি-
রোগের নাম | টিকা | দিন (মুরগির বয়স) | কতটুকু দিবেন |
---|---|---|---|
রানীক্ষেত | বি. সি. আর. ডি. বি. | ৩-৭ দিন | চোখে এক ফোঁটা |
গামবোরো | গামবোরো | ১০-১২ দিন | চোখে এক ফোঁটা |
গামবোরো | গামবোরো | ১৭-১৯ দিন | চোখে এক ফোঁটা |
রানীক্ষেত | বি. সি. আর. ডি. বি (২য় ডোজ) | ২১-২৩ দিন | চোখে এক ফোঁটা |
ফাউল পক্স | ফাউল পক্স | ২৮-৩০ দিন | পাখার নীচের পালক বিহীন জায়গায় সুচ দিয়ে খোঁচা দিয়ে |
রানীক্ষেত | আরডিভি | ৬০ দিন | রানের মাংসে ১সিসি |
ফাউল কলেরা | ফাউল কলেরা | ৬৫-৭০ দিন | চামড়ার নীচে ১ সিসি |
টিকা দেওয়ার প্রয়োজনীয় উপকরণ
• সিরিঞ্জ
• বিভিন্ন রোগের টিকা
• ড্রপার
এক্ষেত্রে যা যা করতে হবে-
• বিশ্বস্ত উৎস থেকে বিভিন্ন রোগের টিকা সংগ্রহ করতে হবে।
• টিকাসূচি অনুসরণ করে নির্দিষ্ট দিনে সুস্থ মুরগিকে টিকা দিতে হবে।
• দিনের ঠান্ডা সময়ে (সকাল বা সন্ধ্যা) টিকা দিতে হবে।
• টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ অনুযায়ী টিকা পাতিত পানির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে।
• প্রতি বাচ্চাকে ড্রপারের সাহায্যে চোখে ১ ফোঁটা করে টিকা দিতে হবে।
সতর্কতা
* নির্ধারিত মাত্রার কম বা বেশি টিকা প্রদান করা যাবে না।
* টিকা দেয়ার পদ্ধতি ভালোভাবে শিখে ও প্রশিক্ষণ নিয়ে তবেই টিকা দিতে হবে।
• স্বল্প জায়গায় মুরগি পালন করলে কী কী প্রস্তুতি থাকা চাই?
• খাদ্য উপাদানগুলোর ১টিও অনুপস্থিত থাকলে মুরগি যথাযথ পুষ্টি পাবে কী?
• বয়স অনুপাতে খাদ্যের পরিমান যথাযথ না হলে কী কী সমস্যা হতে পারে?
• কোথাও ২-১ দিনের জন্য বেড়াতে গেলে মুরগি পরিচর্যা কীভাবে করব?
• রোগে আক্রান্ত মুরগির চিকিৎসা ও পরামর্শের জন্য কোথায় যেতে পারি?
• মুরগি পালন লাভজনক করার জন্য রোগ প্রতিকার না প্রতিরোধ কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
তোমরা তোমাদের অভিভাবকের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী কোনো উৎস থেকে ২/৩টি বাচ্চা মুরগি সংগ্রহ করো। মুরগি রাখার ঘরের ব্যবস্থা করো এবং বাড়িতে মুরগিগুলোর নিয়মিত যত্ন নিয়ে বড় করে তোলো। নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখো। মুরগির কোনো সমস্যা হলে শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করো। মুরগি পালনের অভিজ্ঞতার আলোকে নিচের ঘরগুলো পূরণ করো।
১. আমার পালিত মুরগিটির জাত :………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
২. কোন কোন বৈশিষ্ট্য দেখে উক্ত জাতের মুরগি শনাক্ত করেছি :………………………………………………………………………………………..
৩. ঘর তৈরির জন্য উপকরণগুলো যেভাবে পরিমাপ করেছি :……………………………………………………………………………………………..
৪. কী কী খাবার দিচ্ছি রোজ :………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
খাদ্যের উপাদানগুলো যে অনুপাতে মিশিয়ে খাদ্য তৈরি করেছি :………………………………………………………………………………………..
৬. কোনও ডিম দিয়েছে কিনা, দিলে কয়টি দিয়েছে :………………………………………………………………………………………………………………
৭. কোনো রোগ হয়েছিল কিনা :……………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
৮. রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে, যেভাবে রোগ শনাক্ত করেছি:………………………………………………………………………………………………..
৯. যেভাবে ওষুধ প্রয়োগ করেছি :………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
১০. আমার মুরগি এখন যেমন আছে:……………………………………………………………………………………………………………………………………………
মুরগি পালনে আমার অনুভূতি-
|
মুরগি পালন নিয়ে আমার আগামীর ইচ্ছে বা স্বপ্ন-
|
আমার মুরগি পালন নিয়ে অভিভাবকের মতামত :
শিক্ষকের মন্তব্য :
আরও দেখুন...