সব মানুষের স্মৃতি শক্তি আছে। স্মৃতি শক্তির জন্যই মানুষ পুরনো দিনের অনেক কিছুই মনে রাখতে পারে। মানুষের স্মৃতিতে কোনো কোনো ঘটনা থাকে ক্ষণিকের জন্য আবার কোনো কোনো ঘটনা থাকে স্থায়ীভাবে অর্থাৎ মরণের আগে পর্যন্ত। তেমনি কম্পিউটারে ডেটা, তথ্য ও প্রোগ্রাম ইত্যাদি স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসকে কম্পিউটার মেমোরি বা স্মৃতি বলে। মেমোরি কম্পিউটারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি ডেটা ও তথ্যকে প্রক্রিয়াকরণের পূর্বে ও পরে সংরক্ষণ করে। কম্পিউটারের মেমোরি অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেল নিয়ে গঠিত। সেলগুলোকে শনাক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হলো মেমোরি অ্যাড্রেস। প্রক্রিয়াকরণের কাজ দ্রুত করার জন্য ইন্টারনাল মেমোরি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু তথ্যসমূহ অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য প্রাইমারি মেমোরি এবং স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য সহায়ক মেমোরি ব্যবহৃত হয়।
ডেটা (Data) :
সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার বা আইসিটি ডিভাইসে ব্যবহৃত মাধ্যম বা ধারককে মেমোরি বা স্মৃতি বলে। প্রক্রিয়াকরণের সুবিধার জন্য মেমোরিতে ডেটা জমা রাখা যায় এবং প্রয়োজনে তা সহজে কাজে লাগানো যায়। কম্পিউটার মেমোরি নিয়ে আলোচনা করতে হলে প্রথমে কয়েকটি বিষয় জানতে হবে। সেগুলো নিম্নরূপ—
• মেমোরি সেল (Memory cell) : মেমোরির প্রতিটি সুনির্দিষ্ট স্থানকে মেমোরি সেল বলে। মেমোরি সেলে একটি করে বিট (0 বা 1) সংরক্ষণ করা যায় ।
• মেমোরি অ্যাড্রেস (Memory address) : ডেটা রাখা জন্য মেমোরিতে অনেকগুলো সুনির্দিষ্ট স্থান থাকে। স্থানগুলো শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও থাকে, এই ব্যবস্থাকে মেমোরি অ্যাড্রেস বলে।
• উদ্বায়ী বা অস্থায়ী (Volatile) মেমোরি : তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ হলে যে মেমোরি থেকে ডেটা মুছে যায় তাকে বলে উদ্বায়ী বা Volatile মেমোরি। সাময়িকভাবে উদ্বায়ী মেমোরিতে সেই সব ডেটা বা নির্দেশ রাখা হয়। যেমন— ফ্লিপ ফ্লপের মেমোরি উদ্বায়ী মেমোরি।
• অনুদ্বায়ী বা স্থায়ী (Non-Volatile) মেমোরি : বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলেও যে মেমোরি থেকে ডেটা মুছে যায় না তাকে অনুদ্বায়ী বা স্থায়ী (Permanent) মেমোরি বলে। চৌম্বক টাইপের মেমোরি স্থায়ী মেমোরি।
• পরিবর্তনযোগ্য (Erasable) মেমোরি : যে মেমোরিকে পরিবর্তন করা যায় অর্থাৎ পূর্বের ডেটা মুছে সেখানে নতুন কিছু লেখা যায় তাকে পরিবর্তনযোগ্য মেমোরি বলে। যেমন— বিভিন্ন হার্ডডিস্ক (Hard Disk), ফ্লপি ডিস্ক (Floppy disk) ইত্যাদি ।
• অপরিবর্তনীয় (Non-erasable) মেমোরি : যে মেমোরি অপরিবর্তনীয় অর্থাৎ যে মেমোরি থেকে ডেটা মুছে সেখানে নতুন কিছু লেখা যায় না তাকে অপরিবর্তনীয় মেমোরি বলে। যেমন- পাঞ্চ কার্ড ও পাঞ্চ টেইপ ।
• ধ্বংসাত্মক (Destructive) মেমোরি : যে মেমোরি পাঠ করার সঙ্গে সঙ্গে মুছে যায় (কারণ পাঠ করার পর প্রতি বিটেই থাকে () তাকে ধ্বংসাত্মক মেমোরি বলে। যেমন- চৌম্বক কোরো মেমোরি। এক্ষেত্রে যা পাঠ করা হয় তাকে আগে একটি বিশেষ রেজিস্টারে রাখা হয়, পাঠ শেষ হওয়ার পরে তাকে আবার পূর্বের অবস্থানে রাখা যায়।
• অধ্বংসাত্মক (Non-Destructive ) মেমোরি : পাঠ করলেও যে মেমোরি মুছে যায় না তাকে অধ্বংসাত্মক মেমোরি বলে। যেমন- চৌম্বক টেইপ বা পাঞ্চ টেইপ।
• অ্যাকসেস (Access): অ্যাকসেস বলতে বোঝায় ALU (Arithmatic Logic Unit) বা কন্ট্রোল এককের পক্ষে কোনো ডেটা পাঠ বা লেখার জন্য মেমোরির সঙ্গে অ্যাকসেস করা। অ্যাকসেস প্রধানত চার ধরনের। যথা-
১. র্যানডম (Random) অ্যাকসেস : যদি কোনো মেমোরির বিট বা শব্দকে একবারই অ্যাকসেস করা যায় তবে তাকে র্যানডম অ্যাকসেস বলে। এক্ষেত্রে কোনো অবস্থানের বিটকে অ্যাকসেস করতে হলে তার আগের অবস্থানের বিট অ্যাকসেস করা দরকার হয় না। সুতরাং সব বিটেরই অ্যাকসেস সময় সমান । উদাহরণস্বরূপ : সেমিকন্ডাক্টর মেমোরির অ্যাকসেস র্যানডম অ্যাকসেস।
২. সিরিয়াল সিকোয়েন্সিয়াল (Sequential) অ্যাকসেস : যদি প্রথম অবস্থান থেকে শুরু করে বিটগুলোকে পরপর অ্যাকসেস করতে হয় তাহলে তাকে সিরিয়াল বা সিকোয়েন্সিয়াল অ্যাকসেস বলে। এক্ষেত্রে যে বিটের অবস্থান যত পরে তার অ্যাকসেস সময় তত বেশি। এটা একটি ধীরগতি ব্যবস্থা। যেমন— চৌম্বক টেইপ।
৩. প্রত্যক্ষ (Direct) অ্যাকসেস : এখানে অনেকটা র্যানডম অ্যাকসেসের মতো যেকোনো অবস্থানের শব্দ পড়া যায়, তবে তার আগে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়। যেমন- হার্ডডিস্ক বা ফ্লপিতে বিভিন্ন বৃত্তীয় ট্র্যাকে ডেটা সঞ্চিত থাকে। কোন ট্র্যাকের ডেটা পড়তে বা লিখতে হলে তার আগের ট্র্যাকের ডেটা পড়তে হয় না, তবে Read- Write হেডকে সঠিক ট্র্যাকে নিয়ে যেতে হয়। তারপর এই ট্র্যাকের প্রথম অবস্থান থেকে ডেটা পড়া শুরু করে সঠিক অবস্থানে যেতে হয়। একে বলে প্রত্যক্ষ অ্যাকসেস, এক্ষেত্রে র্যানডম অ্যাকসেসের চেয়ে বেশি কিন্তু সিরিয়াল অ্যাকসেসের চেয়ে কম সময় লাগে।
৪. বৃত্তীয় (Cyclic) অ্যাকসেস : এক্ষেত্রে বিটগুলো বৃত্তাকার সাজানো ও ঘূর্ণায়মান থাকে। যখন কোনো বিট একটি রিড/রাইট হেডের নিচ দিয়ে যায় তখন সেই বিট পড়া বা লেখা যায়। সুতরাং কোনো বিটের অ্যাকসেস সময় সেই মুহূর্তে বিটটি রিড/রাইট হেডের কত দূরে আছে তার উপর নির্ভর করে। যেমন চৌম্বক ড্রাম (Magnetic Drum)। এটি একটি ধীরগতি ব্যবস্থা, যদিও সিরিয়াল সিকোয়েন্সিয়াল অ্যাকসেসের চেয়ে দ্রুত গতিসম্পন্ন।
• চক্র সময় (Cycle time) : প্রধান মেমোরিতে পরপর দুই বার Read/Write নির্দেশ দেওয়ার মধ্যে যে সর্বনিম্ন সময়ের ব্যবধান থাকা প্রয়োজন তাকে চক্র সময় বলে। অধ্বংসাত্মক মেমোরির ক্ষেত্রে অ্যাকসেস সময় ও চক্র সময় একই কিন্তু ধ্বংসাত্মক মেমোরির ক্ষেত্রে ডেটা পুনরায় লিখতে কিছু সময় লাগে যাকে রেস্টোরেশন (Restoration) সময় বলে। সুতরাং এক্ষেত্রে অ্যাকসেস সময় ও রেস্টোরেশন সময়ের যোগফলই হলো চক্র সময়।
• সিক টাইম (Seek time): চৌম্বক ডিস্কের ক্ষেত্রে রিড-রাইট (Read- Write) হেডকে সঠিক ট্র্যাকে নিয়ে যেতে যে সময় লাগে তাকে সিক টাইম বলে। এর গড় মান ৩০ মিলিসেকেন্ডের কম ।
• ল্যাটেন্সি টাইম (Latency time ) : রিড-রাইট (Read/Write) হেডকে সঠিক ট্র্যাকে নিয়ে যাওয়ার পরে উপযুক্ত শব্দ তার নিচে আসতে যে সময় লাগে তাকে ল্যাটেন্সি সময় বলে। সুতরাং সিক ও ল্যাটেন্সি সময় যোগ করলে অ্যাকসেস সময় পাওয়া যায়। চৌম্বক ডিস্কের একবার পূর্ণ আবর্তনে যে সময় লাগে তার অর্ধেক সময় হলো গড় ল্যাটেন্সি সময় ।
• ডেটা ট্রান্সফার হার (Data transfer rate): প্রতি সেকেন্ডে যতগুলো বিট বা বাইট এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে স্থানান্তর করা যায় তাকে ডেটা ট্রান্সফার হার বলে। যেমন 4MB/sec ডেটা ট্রান্সফার হার মানে হলো প্রতি সেকেন্ডে 4 মেগাবাইট ডেটা স্থানান্তর করা।
মেমোরির শ্রেণিবিভাগ ছকের সাহায্যে নিচে দেওয়া হলো-
প্রধান মেমোরি (Main Memory )
যে মেমোরির সঙ্গে প্রসেসরের অন্তর্গত অ্যারিথম্যাটিক লজিক ইউনিট (ALU) এর প্রত্যক্ষ অ্যাকসেস থাকে তাকে প্রধান মেমোরি বলে। বর্তমানে কম্পিউটারের মেমোরি বলতে এই প্রধান মেমোরিকেই বোঝানো হয়। দ্রুতগতিতে হিসাব করতে সক্ষম ALU এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ অ্যাকসেস থাকায় প্রধান মেমোরিকেও দ্রুত গতিসম্পন্ন হতে হয়। ফলে প্রধান মেমোরির বিট খরচ বেশি হয়। তথ্য প্রক্রিয়াকরণের সময় যে সেব ডেটা ও নির্দেশ সবসময় প্রয়োজন তাদের এই মেমোরিতে সাময়িকভাবে রাখা হয়। এছাড়া ALU যখন হিসাব করে তার জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা ও নির্দেশ, সেকেন্ডারী স্টোরেজ থেকে এনে সাময়িকভাবে এই মেমোরিতে রাখা হয়। হিসাব শেষ হওয়ার পর তাদের আবার সেকেন্ডারী স্টোরেজে সংরক্ষণ করা হয়। প্রধান মেমোরির অ্যাকসেস সময় সাধারণত ন্যানোসেকেন্ড (Nanosecond) বা তার চেয়েও কম সময়।
প্রধান মেমোরির প্রকারভেদ
কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রধান বা প্রাথমিক মেমোরির তৈরি হয়েছে। নিম্নে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কয়েকটি প্রধান মেমোরির নাম দেয়া হলো-
1. চৌম্বক কোর (Magnetic Core) মেমোরি
2. পাতলা পর্দা (Thin Film) মেমোরি
3. অর্থ পরিবাহী (Semiconductor) মেমোরি
4. চৌম্বক বাবল (Magnetic Bubble) মেমোরি
5. চার্জ কাপলড (Charge Coupled) মেমোরি
এছাড়াও কয়েকটি নতুন প্রাথমিক মেমোরির উদাহরণ ক্রাইওজেনিক (Cryogenic) মেমোরি, আলোর মেমোরি, সারফেস এ্যাকোস্টিক (Surface Acoustic) মেমোরি।
সহায়ক মেমোরি (Auxiliary Memory)
যে মেমোরিতে বিভিন্ন তথ্য, নির্দেশাবলি, অডিও/ভিডিও, ইমেজ স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা যায় তাকে সহায়ক মেমোরি বলে। এ ধরনের মেমোরির কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের (CPU) সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকে না বিধায় ধীরগতি সম্পন্ন হয়। এতে বিপুল পরিমাণ তথ্য বা প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করা যায়। বিদ্যুৎ চলে গেলে বা কম্পিউটার বন্ধ করলেও তথ্য বা প্রোগ্রাম হারিয়ে বা মুছে যায় না।
ক্যাশ মেমোরি (Cache Memory )
কম্পিউটারে কাজের গতি বৃদ্ধি করার জন্য প্রসেসর ও প্রধান মেমোরির মধ্যবর্তী স্থানে স্থাপিত বিশেষ ধরনের মেমোরিকে ক্যাশ মেমোরি (Cache Memory) বলে। এর সংযোগ সময় খুব কম এবং এক ধরনের ধরনের Static মেমোরি। কোনো প্রোগ্রাম নির্বাহের সময় যে সমস্ত উপাত্ত খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে বারবার প্রয়োজন হয় সেসব উপাত্ত ক্যাশ মেমোরিতে রক্ষিত হয়। এই মেমোরি নিয়ন্ত্রণের জন্য অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক বর্তনী প্রয়োজন হয়। কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে ক্যাশ মেমোরিকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. অভ্যন্তরীণ বা ইন্টারনাল ক্যাশ মেমোরি (Internal Cache Memory )
২. বহিঃস্থ বা এক্সটার্নাল ক্যাশ মেমোরি (External Cache Memory )
অভ্যন্তরীণ ক্যাশ মেমোরি (Internal Cache Memory ) : মাইক্রোপ্রসেসরের অভ্যন্তরে অবস্থান করে যে ক্যাশ মেমোরি কাজ করে সেটিকে অভ্যন্তরীণ ক্যাশ মেমোরি বলে।
বহিঃস্থ ক্যাশ মেমোরি (External Cache Memory) : যে মেমোরি কম্পিউটারের মাদারবোর্ডের উপর একীভূত বর্তনী (IC-Integrated Circuit) হিসেবে কাজ করে সেগুলোকে বহিঃস্থ ক্যাশ মেমোরি বলে। এছাড়া আরো কিছু ক্যাশ মেমোরি আছে। যেমন-
১. ক্লায়েন্ট/সার্ভার ক্যাশ (Client/Server Cache
২. ডিস্ক ক্যাশ (Disk Cache )
৩. রিমোট ক্যাশ (Remote Cache)
৪. ইন্টারমিডিয়েট ক্যাশ (Intermediate Cache)
৫. ওয়েভ সার্ভার/প্রস্কি সার্ভার ক্যাশ (Web Server/Proxy Server Cache)
৬. ডিস্ট্রিবিউটেড ডাইরেক্টরি ক্যাশিং (Distributed Directory Caching) ইত্যাদি।
ক্যাশ মেমোরির সুবিধাসমূহ
• ক্যাশ মেমোরির অ্যাকসেস টাইম প্রধান মেমোরির অ্যাকসেস টাইমের এক সপ্তমাংশ ।
• ক্যাশ মেমোরির অ্যাকসেস টাইম কম।
• ক্যাশ মেমোরি দ্রুতগতি সম্পন্ন ।
• ক্যাশ মেমোরি কম্পিউটারকে দ্রুতগতি সম্পন্ন করে তোলে।
আধুনিক কম্পিউটারের প্রাণ হলো সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট। সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিটের হৃৎপিন্ড হলো প্রসেসর। প্রসেসরকে খুব দ্রুত কাজ করতে সাহায্য করে ক্যাশ মেমোরি। ক্যাশ মেমোরিও প্রসেসরের খুব কাছে অবস্থান করে, তারপর র্যাম। কম্পিউটারের কেন্দ্রিয় প্রক্রিয়াকরণ অংশকে কাজ করার জন্য অনেকগুলো প্রসেস সম্পূর্ণ করতে হয়। বিশেষ করে কাজ করার সময় প্রসেসর প্রোগ্রামের অনেক ডেটা বারবার Read/Write করতে থাকে । তখন এই অবস্থায় প্রোগ্রামে বারবার ব্যবহার হওয়া ডেটাগুলো ক্যাশ মেমোরি সংরক্ষণ করে রাখে। যখনই প্রসেসরে কোনো নির্দেশ (command) দেওয়া হয়, তখনই প্রসেসর প্রথমে র্যাম (RAM) থেকে ডেটা না নিয়ে ক্যাশ মেমোরির কাছে সেই ডেটা বা কমান্ড খোঁজার চেষ্টা করে। ক্যাশ মেমোরির কাছে যদি সে কাঙ্ক্ষিত ডেটাগুলো পেয়ে যায়, তবে প্রসেসরের কাজ করার প্রসেস অনেক বেশি গতিশীল হয়ে যায়। এ কারণে প্রসেসরে কাজের গতি বৃদ্ধির জন্য ক্যাশ মেমোরি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
কম্পিউটার মেমোরিতে ডেটা সংরক্ষণের পরিমাণকে মেমোরির ধারণক্ষমতা বলে। মেমোরির ধারণক্ষমতার ক্ষুদ্রতম একক হলো বিট (Bit)।
বিট (Bit): বাইনারি নাম্বার পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অঙ্ক 0 (শূন্য) এবং 1 (এক) কে বিট বলে। ইংরেজি Binary শব্দের Bi ও Digit শব্দের নিয়ে Bit শব্দটি গঠিত। কম্পিউটার স্মৃতিতে রক্ষিত 0 ও 1 এর কোড দিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এ কারণে কম্পিউটার স্মৃতির ধারণক্ষমতার পরিমাপের ক্ষুদ্র একক হিসেবে বিট শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
বাইট (Bite): ৮ বিটে এক বাইট হয়। এরূপ ৮ বিটের কোড দিয়ে যে কোনো বর্ণ, অঙ্ক বা বিশেষ চিহ্নকে প্রকাশ করা যায়। কয়েকটি বিটের সমষ্টিকে এক সাথে বাইনারি বা কম্পিউটার শব্দ বলে। এরূপ ৮ বিট বিশিষ্ট শব্দকে বাইট বলা হয় ।
কম্পিউটার মেমোরিতে বাইটের সংখ্যাকে তার ধারণ ক্ষমতা বলে। একে প্রকাশ করা হয় বাইট, কিলোবাইট, মেগাবাইট, গিগাবাইট ইত্যাদি দ্বারা ।
8 বিট (Bit) = 1 বাইট (Byte)
210 বাইট বা 1024 বাইট = 1 কিলোবাইট (KB)।
220 বাইট বা 1024 কিলোবাইট = 1 মেগাবাইট (MB)।
230 বাইট বা 1024 মেগাবাইট = 1 গিগাবাইট (GB)।
240 বাইট বা 1024 গিগাবাইট = 1 টেরাবাইট (TB)।
250 বাইট বা 1024 টেরাবাইট = 1 পিটাবাইট (PB)।
সমস্যা-১: দুটি মেমোরি চিপ হলো 5Mx8 মেমোরি ও 16 বিট শব্দ দৈর্ঘ্যের IM বাইট মেমোরি। এদের মধ্যে কোন মেমোরি চিপে বেশি বিট ধারণ করবে?
সমাধান :
5M×8 মেমোরির ধারণক্ষমতা = 5M x 8 = 5x 220 x 8 = 41,943,040 বিট।
16 বিট শব্দ দৈর্ঘ্যের IM বাইট মেমোরির ধারণক্ষমতা = 220x16=16,777,216 বিট।
সুতরাং 5M x 8 মেমোরিতে বেশি বিট ধারণ করবে।
সমস্যা-২: একটি 2k ×8 স্মৃতির জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নির্ণয় করো ।
ক) তথ্য ইনপুট ও তথ্য আউটপুট সংখ্যা।
খ) ঠিকানা রেখার সংখ্যা,
গ) বাইট ও বিট সংখ্যায় ধারণক্ষমতা।
সমাধান :
ক) 8 বিট শব্দের জন্য 8টি ইনপুট এবং 8টি আউটপুট থাকে।
খ) 2k=2×1024=2048, প্রতিটি শব্দের জন্য একটি মেমোরি অ্যাড্রেস দরকার।
সুতরাং, 2048 (=211) টি স্মৃতিস্থান নির্দিষ্ট করার জন্য 11টি ঠিকানা রেখা দরকার।
গ) 1 বাইট =8 বিট। সুতরা স্মৃতির ধারণক্ষমতা = 2 × 1024 = 2048 বাইট অথবা 2048 × 8 বা 16,384 বিট ।
আমরা জানি যে, শব্দ হলো কতকগুলো বর্ণের সমাহার, যার একটি নির্দিষ্ট অর্থ আছে। কিন্তু কম্পিউটার শব্দ বলতে বিটকে বোঝায়। বিট বা শব্দ বলতে বাইনারি ডিজিট বোঝায় যার মান 0 বা 1। প্রতিটি কম্পিউটার শব্দ বা বাইটকে মেমোরিতে রাখার জন্য একটি করে মেমোরি অ্যাড্রেস (Memory Address) ব্যবহার করা হয়। মেমোরি অ্যাড্রেসগুলোকে নির্দিষ্ট করার জন্য পৃথক পৃথক ঠিকানা নির্ণায়ক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। এই সংখ্যাকে মেমোরি অ্যাড্রেসের ঠিকানা বলা হয় ।
কম্পিউটার শব্দকে দুইভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১. ডেটা শব্দ (Data Word ) এবং
২. নির্দেশক শব্দ (Instruction Word )
যে শব্দে ডেটা সঞ্চিত থাকে তাকে ডেটা শব্দ (Data word) বলে আর যেখানে নির্দেশ সঞ্চিত থাকে তাকে নির্দেশ শব্দ (Instruction Word) বলে। কম্পিউটারে সব শব্দেই থাকে 0 বা 1 বিট হিসাবে। ৮ বিট বিশিষ্ট শব্দকে বাইট বলা হয়। কোনো শব্দে যতগুলো বিট থাকে সেই সংখ্যাকে বলে শব্দ দৈর্ঘ্য (Word Length)। সাধারণত কোন শব্দ দৈর্ঘ্য ৮ এর গুণিতক হয়ে থাকে। যেমন ৮ থেকে ৬৪ বিটের শব্দ ।
১. প্রধান মেমোরির প্রসেসরের খুব কাছে থাকায় ডেটা সংরক্ষণ ও পঠনের গতি দ্রুত হয়।
২. প্রধান মেমোরি চলমান প্রোগ্রামের, ডেটা বা উপাত্ত অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করে।
৩. ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মেমোরি স্থান (Memory Cell) নিয়ে প্রধান মেমোরি গঠিত।
৪. বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথে প্রধান মেমোরির (র্যামে) সংরক্ষিত ডেটা বা উপাত্ত মুছে যায়।
১. সেকেন্ডারি বা সহায়ক মেমোরির সাথে কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের (সিপিইউ) সরাসরি অ্যাকসেস
থাকে না।
২. স্থায়ীভাবে ফাইল সংরক্ষণের জন্য সেকেন্ডারি মেমোরি ব্যবহৃত হয়।
৩. সাধারণত সহায়ক মেমোরির ধারণ ক্ষমতা প্রধান মেমোরির তুলনায় অনেক বেশি
৪. সহায়ক মেমোরির অ্যাকসেস সময় প্রধান মেমোরির তুলনায় বেশি।
৫. বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলেও সহায়ক মেমোরির সংরক্ষিত ডেটা মুছে যায় না ।
প্রাইমারি স্টোরেজ মিডিয়া | সেকেন্ডারি স্টোরেজ মিডিয়া |
---|---|
১. প্রধান মেমোরির সাথে কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ বা সিপিইউ-এর সরাসরি অ্যাকসেস থাকে । | ১. সহায়ক মেমোরির সাথে কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের সরাসরি অ্যাকসেস থাকে না। |
২. তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রোগ্রাম ও ডেটা এবং কম্পিউটারের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত কিছু প্রোগ্রাম প্রধান মেমোরি ধারণ করে। | ২. স্থায়ীভাবে ফাইল সংরক্ষণের জন্য সহায়ক মেমোরি ব্যবহৃত হয় । |
৩. সাধারণত প্রধান মেমোরির ধারণক্ষমতা সহায়ক মেমোরির তুলনায় কম হয় । | ৩. সাধারণত সহায়ক মেমোরির ধারণক্ষমতা প্রধান মেমোরির তুলনায় বেশি হয়। |
৪. প্রধান মেমোরির সাথে কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের অ্যাকসেস সময় সহায়ক মেমোরির তুলনায় কম | ৪. কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের সাথে সহায়ক মেমোরির অ্যাকসেস সময় প্রধান মেমোরির তুলনায় বেশি। |
৫. প্রধান মেমোরির রম (ROM) অংশে ডেটা বা প্রোগ্রাম স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত থাকে কিন্তু সরবরাহ বন্ধ হলে র্যাম (RAM) অংশের ডেটা মুছে যায়। | ৫. বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হলেও সহায়ক মেমোরিতে বিদ্যুৎ সংরক্ষিত ডেটা মুছে যায় না । |
৬. প্রধান মেমোরি তুলনামূলকভাবে দামী। | ৬. সহায়ক মেমোরি তুলনামূলকভাবে সস্তা। |
অর্ধপরিবাহী পদার্থ বা সেমিকন্ডাক্টর দিয়ে এই মেমোরি তৈরি হয়। চৌম্বক কোরের তুলনায় অর্ধপরিবাহী মেমোরি অনেক ছোট ও সস্তা। যে কোনো মেমোরি সেলের ডেটা Read/Write এর সময় সমান তাই এই মেমোরিকে র্যানডম অ্যাকসেস মেমোরি বা র্যাম (Randome Access Memory - RAM) বলে। এই মেমোরির অভ্যন্তরে অসংখ্য মেমোরি সেল থাকে।
র্যানডম অ্যাকসেস মেমোরি বা র্যামকে প্রধানতঃ দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক. রিড-রাইট মেমোরি (Read- Write Memory ) ও
খ. রিড অনলি মেমোরি বা রম (Read Only Memory - ROM)
ক. রিড রাইট (Read-Write) মেমোরি
কম্পিউটার ব্যবহারকারী রিড রাইট মেমোরিতে ডেটা সংরক্ষণ করতে পারে। এবং রক্ষিত ডেটা মুছে পুনরায় নতুন ডেটা রাখতে পারেন। এই মেমোরিকে ইংরেজিতে সাধারণত র্যাম (RAM) বা র্যানডম অ্যাকসেস মেমোরি (Random Access Memory) বলে। র্যাম (RAM) কথাটি আসলে সঠিক নয় কারণ রমের (ROM) অ্যাকসেসও র্যানডম। রিড রাইট মেমোরি একটি উদ্বায়ী মেমোরি অর্থাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলে মেমোরিতে রক্ষিত ডেটা মুছে যায়। বৈশিষ্ট্যের প্রকারভেদে কয়েক ধরনের র্যাম (RAM) মেমোরি বর্তমানে প্রচলিত আছে। অপারেটিং মোড অনুসারে র্যামকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. ডাইনামিক র্যাম (Dynamic RAM) বা ডির্যাম (DRAM)
২. স্ট্যাটিক র্যাম (Static RAM) বা এসর্যাম (SRAM)
চৌম্বক কোর মেমোরির সাথে র্যাম মেমোরির প্রধান পার্থক্য হচ্ছে বিদ্যুৎ চলে গেলেও চৌম্বক কোর মেমোরি থেকে ডেটা মুছে যায় না। কিন্তু র্যাম মেমোরি থেকে ডেটা বা উপাত্ত মুছে যায় ।
১. ডাইনামিক র্যাম (Dynamic RAM DRAM) বা ডির্যাম
ডাইনামিক র্যাম (Dynamic RAM)-এ বাইনারি বিট (0, 1 ) বৈদ্যুতিক চার্জ আকারে ক্যাপাসিটরে (Capacitor) জমা থাকে। ডাইনামিক র্যাম চিপের মধ্যে মস ট্রানজিস্টর (MOS Transistor) দ্বারা ক্যাপাসিটর (Capacitor) তৈরি করা হয়। ক্যাপাসিটরে ধারণকৃত চার্জগুলো সময় বাড়ার সাথে সাথে ডিসচার্জ (Discharge) হওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই নির্ধারিত সময় পর পর ডায়নামিক মেমোরি রিফ্রেশিং এর মাধ্যমে রিচার্জ (Recharge) করতে হয়। ডায়নামিক র্যামে শক্তির অপচয় কম হয় ।
• সিনক্রোনাস ডির্যাম
• অ্যাসিনক্রোনাস ডির্যাম
সিনক্রোনাস ডির্যাম বা এসডির্যাম (Synchronous Dynamic RAM or SDRAM)
সিনক্রোনাস ডির্যাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাড্রেস নির্ণয় করে। এবং ডেটা রিড/রাইট সংশ্লিষ্ট নানাবিধ প্রক্রিয়ার মাঝে অভ্যন্তরীণভাবে সমন্বয় করতে সক্ষম। সিনক্রোনাস ডির্যাম নিজেকে কম্পিউটারে ব্যবহৃত সিস্টেম ক্লকের সঙ্গে সিনক্রোনাইজ (সমকালবর্তী) করে এবং ক্লক পালসের ধারা অনুযায়ী কাজ করে। এ ধরনের ডির্যাম মেমোরি থেকে প্রথম বিট রিড (Read) পর বহিঃস্থ সার্কিটের মাধ্যমে নতুন করে অ্যাড্রেস নিরূপণের প্রয়োজন পড়ে না। ডেটা রিড/রাইট (Read/Write) করার সময় মেমোরি সেলের অ্যাড্রেস নিরূপণের আনুষঙ্গিক খরচ কম এছাড়াও সিনক্রোনাস ডির্যামের গতি অ্যাসিনক্রোনাস ডির্যাম থেকে বেশি হয়ে থাকে। এ কারণে সব ধরনের ডির্যামের মাঝে সিনক্রোনাস ডির্যাম হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুতগতির।
অ্যাসিনক্রোনাস ডির্যাম
কম্পিউটারে যখন ইনপুটে সিগন্যাল প্রদান করা হয়, তখন অ্যাসিনক্রোনাস ডির্যাম ক্রিয়াশীল হয়। অ্যাসিনক্রোনাস ডির্যাম প্রধানত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
1. ফাস্ট পেইজ (Fast Page )
2. ইডিও (EDO: Extended Data Output)
3. বিইডিও ( BEDO. Burst Extended Data Output)
২. স্ট্যাটিক র্যাম (Static RAM or SRAM) বা এসর্যাম
স্ট্যাটিক র্যাম (Static RAM) ফ্লিপ ফ্লপ দ্বারা গঠিত। এটি বাইনারি বিট (0, 1 ) ধারণ করে। এই ধারণকৃত ডেটা ততক্ষণ পর্যন্ত মেমোরিতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলে মেমোরিতে রক্ষিত ডেটা মুছে যায়। এজন্যেই এ ধরনের র্যামকে স্ট্যাটিক র্যাম বা SRAM বলে থাকে। SRAM এর গতি ডির্যাম থেকে বেশি। সার্কিটে জটিলতার কারণে উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় SRAM-এর ব্যবহার সীমিত। সাধারণত SRAM কে ক্যাশ মেমোরি হিসেবে ব্যবহার হয়।
ডাইনামিক র্যামের মতো স্ট্যাটিক র্যামকেও দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- সিনক্রোনাস ও অ্যাসিনক্রোসান SRAM । SRAM-এর অ্যাক্সেস সময় সাধারণত ৪ থেকে ১০ ন্যানোসেকেন্ড হয়ে থাকে।
স্ট্যাটিক ও ডাইনামিক র্যামের সুবিধা ও অসুবিধা কী?
সুবিধা | অসুবিধা |
---|---|
ক) সমান পরিসরের ডাইনামিক র্যামে স্ট্যাটিক র্যামের তুলনায় বেশি ডেটা সংরক্ষণ করা যায়। | ক) বারবার প্রোগ্রামিং এর জন্য ডাইনামিক র্যামে অতিরিক্ত বর্তনীর প্রয়োজন হয়। |
খ) স্ট্যাটিক র্যামের তুলনায় ডাইনামিক র্যামে শক্তির অপচয় কম হয়। | খ) সাধারণত স্ট্যাটিক র্যাম অপেক্ষা ডাইনামিক র্যাম থেকে তথ্য রিকভার ও সংরক্ষণে সময় বেশি লাগে । |
গ) ডাইনামিক র্যামে বিট সংরক্ষণের খরচ স্ট্যাটিক র্যামের তুলনায় কম । | গ) স্ট্যাটিক র্যামের তুলনায় ডাইনামিক র্যামের গতি কম। |
ভিডিও র্যাম (Video RAM or VRAM) বা ভির্যাম
ভিডিও র্যাম বা VRAM হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের DRAM যা ভিডিও কার্ডে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ধরনের DRAM-এর অন্যান্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ডেটা আদান-প্রদানের জন্য দ্বৈত পোর্ট (Dual port) বা ইনপুট/আউটপুট মুখ আছে। DRAM থেকে ডিসপ্লে সিস্টেমে ধারাবহিকভাবে ডেটা পাঠানোর জন্য একটি পোর্ট ব্যবহৃত হয়। মনিটরের পর্দার প্রদর্শিত চিত্রকে এই পোর্টের মাধ্যমে অবিশ্রান্তভাবে হালনাগাদ (Refresh) করা হয়। আর দ্বিতীয় পোর্টটি সিপিইউ ও মেমোরির মাঝে ডেটা বিনিময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই দুটো পোর্টের মাঝে কোনো পারস্পরিক নির্ভরশীলতা নেই। অর্থাৎ সিপিইউ ও মেমোরির মাঝে ডেটা আদান-প্রদানের প্রক্রিয়া মেমোরি থেকে ডিসপ্লে সিস্টেমে ডেটা স্থানান্তরের কাজে কোন বিঘ্ন সৃষ্টি করে না। সাধারণ DRAM-এর পক্ষে এটি সম্ভব নয়। কারণ এক্ষেত্রে একই সঙ্গে ডেটা রিড ও রাইট সম্ভব নয়। এ কারণে ভিডিও কার্ডে সাধারণ DRAM-এর পরিবর্তে VRAM ব্যবহার করা হয়। VRAM অবশ্য অধিকতর ব্যয়বহুল হয়ে থাকে।
সিনক্রোসান গ্রাফিক্স র্যাম (Synchronous Graphics RAM or SGRAM) বা এসজির্যাম
সিনক্রোনাস গ্রাফিক্স র্যাম বা SGRAM নামে আর এক ধরনের র্যাম আছে। VRAM-এর সঙ্গে এর প্রযুক্তিগত পার্থক্য হচ্ছে যে, এটি সিনক্রোনাস ডির্যামের (DRAM) উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স, মাল্টিমিডিয়া, লেজার প্রিন্টার ইত্যাদি কাজে এই প্রকার র্যাম ব্যবহার করা হয়। এটি ভির্যামের তুলনায় অধিক ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও উন্নত পারফরমেন্সের জন্য এর ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
খ. রিড অনলি মেমোরি- রম (Read Only Memory-ROM)
স্থায়ীভাবে ডেটা ও নির্দেশ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত অ-উদ্বায়ী অর্ধপরিবাহী মেমোরিকে রম বলে। তবে বর্তমানে এমন অনেক ধরনের রম তৈরি হয়েছে, যেখানে বিশেষ ব্যবস্থায় সংরক্ষিত ডেটা মুছে আবার নতুন ডেটা সংরক্ষণ করা যায়। সাধারণত অপরিবর্তনশীল ডেটা যেমন— বিভিন্ন কোণের জন্য সাইন, কোসাইন, ইত্যাদির মান এবং অপরিবর্তনশীল ডেটা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য ROM ব্যবহার করা হয়।
রম (ROM) এর বৈশিষ্ট্য
১. সাধারণত রমে নতুন ডেটা লেখা হয় না; কিন্তু যখনই প্রয়োজন তখনই রম থেকে ডেটা পড়ে নেয়া যায়।
২. রম উদ্বায়ী বা অস্থায়ী নয়। বিদ্যুৎ প্রবাহ চলে গেলে রমে সংরক্ষিত ডেটা মুছে যায় না।
৩. সচরাচর পরিবর্তনযোগ্য ডেটা রমে সংরক্ষণ করা হয় না।
৪. সাধারণত রমে (ROM) একবার প্রোগ্রাম করা হলে তাতে আর কোন ধরনের পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে ডেটা মুছে পুনঃপুন প্রোগ্রাম করা যায় এমন রমও রয়েছে।
৫. রমকে সাধারণত ফ্যাক্টরিতেই প্রোগ্রাম করা হয়ে থাকে।
রম বিভিন্ন ধরনের হয়, সেগুলো হচ্ছে—
ক. এমরম (MROM Mask Programmable ROM)
খ. পিরম (PROM Programmable ROM)
গ. ইপিরম (EPROM- Erasable Programmable ROM)
ঘ. ইইপিরম (EEPROM Electrically Erasable Programmable ROM)
ক. এমরম (MROM- Mask Programmable Read Only Memory )
MROM-এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো-
১. ফটোগ্রাফিক মাস্ক ব্যবহার করে প্রোগ্রামের মাধ্যমে ডেটা সংরক্ষণ করা হয়। সাধারণত ব্যবহাকারীর চাহিদা অনুযায়ী ফ্যাক্টরিতেই MROM প্রোগ্রাম করা হয়ে থাকে।
২. MROM বেশ ব্যয় বহুল। তবে একই ধরনের প্রোগ্রাম সম্বলিত অনেক MROM-এর ব্যবহার অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।
৩. একবার প্রোগ্রাম করা হলে MROM কে পুনঃপুন প্রোগ্রাম করা যায় না।
খ. পিরম (PROM- Programmable Read Only Memory )
PROM-এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো-
১. প্রোগ্রামের মাধ্যমে ব্যবহারকারী নিজেই PROM-এ ডেটা সংরক্ষণ করতে পারেন।
২. PROM-কে একবার প্রোগ্রাম করা হলে পুনঃপুন প্রোগ্রামের কোন সুযোগ থাকে না
গ. ইপিরম (EPROM - Erasable Programmable Read Only Memory )
EPROM-এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো—
১. প্রোগ্রামের মাধ্যমে ব্যবহারকারী নিজেই EPROM-এ ডেটা সংরক্ষণ করতে পারেন। সংরক্ষিত ডেটা মুছে EPROM-কে পুনঃপুন প্রোগ্রাম করা সম্ভব।
২. EPROM উদ্বায়ী নয় অর্থাৎ প্রোগ্রামকৃত ডেটা কোনো অবস্থায় মুছে যায় না।
৩. EPROM তৈরিতে সাধারণত ফিল্ড এফেক্ট ট্রানজিস্টর (FET-Field Effect Transistor) ব্যবহার করা হয়।
8. EPROM প্রোগ্রামের জন্য সাধারণত বিশেষ ধরনের বর্তনী প্রয়োজন হয়।
৫. সাধারণত অতি বেগুনী রশ্মি ব্যবহারের মাধ্যমে EPROM-এ সংরক্ষিত ডেটা মুছে দেয়া হয়
ঘ. ইইপিরম (EEPROM - Electrically Erasable Programmable Read Only Memory )
EEPROM-এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো-
১. ব্যবহারকারী প্রোগ্রামের মাধ্যমে EEPROM-এ ডেটা সংরক্ষণ করতে পারেন। এতে সংরক্ষিত ডেটা ইলেকট্রিক্যাল পদ্ধতিতে মুছে পুনঃপুন প্রোগ্রাম করা যায়।
২. প্রোগ্রাম করার সময় EEPROM-কে সার্কিট বোর্ড বা সকেট থেকে খুলতে হয় না।
৩. EEPROM-এ ডেটা সংরক্ষণ করতে এবং ডেটা মুছতে EPROM-এর তুলনায় অনেক কম সময় লাগে।
ইপিরম | ইইপিরম |
---|---|
১. ইপিরম (EPROM) এর পূর্ণরূপ ইরেজেবল প্রোগ্রামেবল রিড অনলি মেমোরি (Erasable programmable read-only memory) | | ১. ইইপিরম (EEPROM) এর পূর্ণরূপ ইলেকট্রিক্যালি ইরেজেবল প্রোগ্রামেবল রিড অনলি মেমোরি (Electrically erasable programmable read-only memory) | |
২. আলোক রশ্মি (অতি বেগুনি রশ্মি) ব্যবহার করে ইপিরমে সংরক্ষিত ডেটা মুছে দেয়া হয় । | ২. ইলেকট্রিক্যাল পদ্ধতিতে ইইপিরমে সংরক্ষিত ডেটা মুছে দেয়া হয়। |
৩. ইপিরমের ডেটা মুছতে গেলে সংরক্ষিত সমস্ত ডেটাই মুছে যায় । | ৩. ইইপিরমের কোন বিশেষ অংশ বা মেমোরি সেলের ডেটা মুছে দেয়া যায়; এতে অন্য ডেটার কোনো ক্ষতি হয় না। |
র্যাম (RAM) | রম (ROM) |
---|---|
১. রাম (RAM) এর পূর্ণনাম র্যানডম অ্যাকসেস মেমোরি (Random Access Memory)। | ১.রম (ROM) এর পূর্ণনাম রিড অনলি মেমোরি (Read Only Memory ) |
২. র্যামে ডেটা সংরক্ষণ এবং র্যাম থেকে ডেটা রিড (Read) সম্ভব। | ২. সাধারণত রমে একবারই স্থায়ীভাবে ডেটা সংরক্ষণ করা হয়। প্রয়োজনে যে কোনো সময় সংরক্ষিত ডেটা Read সম্ভব। তবে, পুনঃপুন ডেটা সংরক্ষণের সুবিধা সম্বলিত রমও রয়েছে। |
৩. র্যাম উদ্বায়ী বা অস্থায়ী মেমোরি। অর্থাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলে র্যামে সংরক্ষিত ডেটা মুছে যায়। | ৩. রম উদ্বায়ী নয়। অর্থাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলেও রমে সংরক্ষিত ডেটা মুছে যায় না। |
৪. চলমান (Active) প্রোগ্রাম এবং পুনঃপুন পরিবর্তনশীল ডেটা র্যামে সংরক্ষণ করা হয়। | ৪. সহজে পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় না এমন ডেটা ও প্রোগ্রাম রমে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। |
■ হার্ডডিস্ক (Hard Disk-HD)
১৯৮০ সালের দিকে হার্ডডিস্ক প্রচলন শুরু হয়। হার্ডডিস্ক হলো পাতলা গোলাকার ধাতব পাতের সমন্বয়ে গঠিত সহায়ক স্মৃতি (Decondary Memory)। কম্পিউটারের তথ্যাবলী সংরক্ষণের জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য ষ্টোরেজ ডিভাইস। এতে সংরক্ষিত তথ্যসমূহ সহজে নষ্ট হয় না বলে প্রয়োজনীয় সকল অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হার্ডডিস্কে সংরক্ষণ করা হয়।
হার্ডডিস্কের সংগঠন : হার্ডডিস্কে পাতলা গোলাকার ধাতব পাত থাকে, যার উভয়পৃষ্টে চৌম্বকীয় পদার্থ ফেরিক অক্সাইডের প্রলেপ থাকে। এজন্য একে ম্যাগনেটিক ডিস্কও বলা হয়। ডিস্কের গোলাকার পাতগুলো দেখতে গ্রামোফোন রেকর্ডের মতো। এসব পাতগুলো একটির উপর আরেকটি স্তুপাকারে বসানো থাকে, যাদের মাঝে আধা ইঞ্চির মতো ফাঁকা জায়গা থাকে। পাতগুলোর মাঝে একটি দন্ড থাকে। এ দন্ডের সাহায্যেই পাতগুলো একটির উপরে আরেকটি বসানো থাকে। এই দন্ডের সাহায্যেই কাজের সময় পাতগুলো প্রতি মিনিটে ৭২০০ বারের বেশি আবর্তিত হয়।
হার্ডডিস্কের ধারণ ক্ষমতা: বর্তমানে গিগাবাইট থেকে কয়েক টেরাবাইট ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হার্ডডিস্ক বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সময়ের ব্যবধানে এই ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি ধাতব পাতের উভয় পৃষ্ঠে তথ্য সংরক্ষিত থাকতে পারে। একটির পর একটি করে লম্বালম্বিভাবে স্থাপিত একটি দন্ডকে কেন্দ্র করে এরূপ অনেকগুলো ডিস্কের সমষ্টিকে বলা হয় ডিস্ক পেক। তবে সবচেয়ে উপরের ডিস্কের উপরের পৃষ্ঠে এবং সবচেয়ে নিচের ডিস্কের নিচের পৃষ্ঠে কোনো তথ্য সংরক্ষিত থাকে না। এভাবে ২০টি ডিস্কের সাহায্যে গঠিত ডিস্ক পেক— এ ৩৮টি পৃষ্ঠে তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। প্রতিটি পৃষ্ঠের জন্যই থাকে একটি করে
Read/Write হেডার।
সুতরাং একটি ডিস্কের মোট ধারণ ক্ষমতা = PxTxSxB বাইট।
এখানে,
P= ব্যবহৃত মোট পৃষ্ঠের সংখ্যা
T = প্রতি পৃষ্ঠে ট্র্যাকের সংখ্যা
S = প্রতি ট্র্যাকে সেক্টরের সংখ্যা
B = প্রতি সেক্টরে বাইটের সংখ্যা
হার্ডডিস্কের সুবিধাসমূহ
১. এর ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি।
২. এটি মজবুত বা টেকসই।
৩. এটি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারে সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে তাই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম।
৪. এটি একটি দ্রুতগতি সম্পন্ন তথ্য সংরক্ষণ মাধ্যম।
হার্ডডিস্কের অসুবিধাসমূহ
১. এটি অত্যন্ত দামী ।
২. এটি একবার নষ্ট হলে মেরামত করা যায় না।
৩. এটি ফ্লপিডিস্কের মতো যখন তখন ড্রাইভ হতে খোলা যায় না।
৪. নতুন প্রশিক্ষণার্থী না বুঝে Format এবং Delete কমান্ড দিয়ে হার্ডডিস্কের ফাইল সহজে মুছে দিতে পারে।
এসএসডি (SSD- Solid State Drive)
এসএসডি পূর্ণরূপ হচ্ছে সলিড স্টেট ড্রাইভ। সাধারণত পেনড্রাইভ বা মেমোরি কার্ডে যে মেকানিজম ব্যবহার করা হয় SSD এর ক্ষেত্রেও সেই একই মেকানিজম ব্যবহার করা হয়। এটিতে কিছু ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ব্যবহার করে ডেটা সংরক্ষণ করা হয়। SSD তে কোনো মুভিং (চক্রাকার) অংশ না থাকায় এটি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এমনকি শব্দ করে না এবং গরম হয় না। এসএসডি যুক্ত একটি কম্পিউটার বুট হতে সময় লাগে ১০ – ১৩ সেকেন্ড। কপি বা রাইট স্পীড ২০০ – ৫০০ এমবিপিএস পর্যন্ত হয়। হার্ডডিস্ক এর তুলনায় ৩০% দ্রুত ফাইল অপেন হয়।
ফ্ল্যাশ মেমোরি (Flash Memory )
ফ্ল্যাশ মেমোরির কার্যপদ্ধতি অনেকটা EPROM এর মতো। কম্পিউটারের অভ্যন্তরে থাকা অবস্থাতেই পুনরায় প্রোগ্রাম করা সম্ভব। ফ্লপি ডিস্ক বা হার্ডডিস্কের বিকল্প হিসেবে এই ধরনের মেমোরি ব্যবহার করা হয়। যে সমস্ত পরিস্থিতিতে ফ্লপি ডিস্ক বা হার্ডডিস্কের কার্যপ্রণালীর নির্ভরযোগ্যতা হারানোর সম্ভাবনা আছে কিংবা বিদ্যুতের বিফলতা বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে সে সব কাজের জন্য এই ফ্ল্যাশ মেমোরি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইদানীংকালের অনেক পোর্টেবল কম্পিউটারে ফ্ল্যাশ মেমোরি কার্ড থাকে ।
অপটিক্যাল মেমোরি (Optical Memory)
যে সমস্ত ডিস্কে অপটিক্যাল স্টোরেজ প্রযুক্তির মাধ্যমে ডেটা সংরক্ষণ করা হয় তাকে অপটিক্যাল মেমোরি বলে। যেমন— CD-ROM Disk বা CD Disk, DVD ইত্যাদি।
সিডি-রম (CD-ROM-Compact Disk Read Only Memory) : বর্তমান সময়ে কম্পিউটারে ডেটা সংরক্ষণের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত মেমোরি হচ্ছে সিডি-রম (CD-ROM)। সাধারণত সিডির ধারণক্ষমতা ৬৫০ – ৭৫০ মেগাবাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এতে সাধারণত এক সাইডে তথ্য সংরক্ষিত থাকে। দামে সস্তা হওয়ার কারণে সিডিতে অডিও/ভিডিও, সফটওয়্যার, বড় ধরনের ডেটা ইত্যাদি সংরক্ষণে খুবই জনপ্রিয়। সিডিতে সংরক্ষিত তথ্য বহুদিন পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকে।
সিডি পলিকার্বনেট প্লাস্টিকের তৈরি অ্যালুমিনিয়ামের প্রলেপযুক্ত। অপটিক্যাল ডিস্কে বা সিডিতে লেজার রশ্মির সাহায্যে লিখন ও পঠনের কার্য সম্পন্ন করা হয়। ঘূর্ণায়মান অপটিক্যাল ডিস্কে লেজার রশ্মির সাহায্যে লেখার সময় অ্যালুমিনিয়ামের পাতের অতি সূক্ষ্ণ গর্ত (Pit) সৃষ্টি করা হয়। এ ধরনের গর্তের গভীরতা ০.১২ মাইক্রোমিটার এবং প্রস্থ ০.৬ মাইক্রোমিটার। পিট ও ল্যান্ড বাইনারি ডিজিট '০' এবং '১' এর প্রতিনিধিত্ব করে। গর্তের সারি দিয়ে তৈরি হয় স্পাইরাল ট্র্যাক। প্রতিটি স্পাইরাল ট্র্যাকের মধ্যবর্তী দূরত্ব হলো ১.৬ মাইক্রোমিটার। প্রতি ইঞ্চিতে ট্র্যাকের সংখ্যা প্রায় ১৬,০০০।
A) পলিকার্বনিক ডিস্ক
B) প্রতিফলিত লেয়ার
C) লেকুয়ার লেয়ার (Lecquer)
D) লেবেল প্রিন্ট
E) লেজার বিম
প্রথম তৈরিকৃত সিডি ড্রাইভের ডেটা পড়ার হার ছিল ১৫০ কিলোবাইট/সেকেন্ড। এ ধরনের ড্রাইভের গতি IX নামে পরিচিত। বর্তমানে 52X গতির সিডি ড্রাইভ বেশি ব্যবহৃত হয়, যার ডেটা পড়ার হার ৭৮০০ কিলোবাইট/সেকেন্ড ।
ডিভিডি (DVD): DVD এর পূর্ণরূপ Digital Versatile Disk বা Digital Video Disk | সাম্প্রতিককালে সিডি-রম প্রযুক্তিকে স্থলাভিষিক্ত জন্য ডিভিডি নামক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। ডিভিডি সিডি রমের চাইতে বহুগুণ বেশি তথ্য ধারণ করতে পারে। এটি সিডি রমের মতোই অডিও-ভিডিও ধারণ করতেও সক্ষম। ডিভিডি ড্রাইভ প্রচলিত সিডি রমও পাঠ করতে পারে। সিডির ন্যায় ডিভিডি রমেরও ব্যাস ১২০ মি. মি. এবং পুরুত্ব ১.২ মি.মি.। তবে সিডিতে এক পার্শ্বে ডেটা রাখা যায় কিন্তু ডিভিডিতে দুপার্শ্বেই ডেটা রাখা যায়। সবচেয়ে বড় বৈসাদৃশ্য হলো তথ্য ধারণ ক্ষমতায়। সাধারণ সিডির তথ্য ধারণ ক্ষমতা ৬৫০ মেগাবাইট অথচ প্রথম দিককার ডিভিডির ধারণ ক্ষমতা ছিল ৪.৭ গিগাবাইট। সিডি রমের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় অদৃশ্য ইনফ্রারেড রশ্মি যার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৭৮০ ন্যানোমিটার। কিন্তু ডিভিডি-র ক্ষেত্রে লাল রঙের লেজার রশ্মি ব্যবহার করা হয় যার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৬৩৫ ন্যানোমিটার। ডিভিডিতে দুটি স্তরে ডেটা সংরক্ষণ করার জন্য বাইরের দিকে থাকে অর্ধস্বচ্ছ সোনালী স্তর আর ভিতরের স্তরটি হয় সিলভার স্তর। এই স্তরটি পড়ার জন্য অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন লেজার ব্যবহৃত হয়। ডিভিডিতে ০.৬ মি.মি. পুরুত্বের দুটি প্লেটার পাশাপাশি গ্লু দিয়ে লাগানো থাকে।
ক্লাউড স্টোরেজ হলো অনলাইন স্টোরেজ। এটি এমন একটি অনলাইন সার্ভিস যার মাধ্যমে অনলাইনের অসংখ্য ব্যবহারকারী তাদের সুবিশাল তথ্যভান্ডার দীর্ঘদিন ব্যবহার ও সংরক্ষণ করতে পারে । ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিসে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেই স্টোরেজের মধ্যে ফাইল সংরক্ষণ করা যায়। ইন্টারনেট বা ওয়েবে সংযুক্ত হয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটারের সার্ভারে নিরাপদভাবে তথ্য সংরক্ষণ করার পদ্ধতিই হলো ক্লাইড স্টোরেজ (Cloud Storage)। এটি এমন একটি শক্তিশালী সার্ভার কম্পিউটার যেখানে ব্যবহারকারী নিরাপদে তথ্য সংরক্ষণ এবং নিজের প্রয়োজন মতো তথ্য ডাউনলোড করতে পারে।
যেসব কোম্পানি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস সুবিধা দিয়ে থাকে তাদের সার্ভিস প্রোভাইডার বা ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস প্রোভাইডারও বলে। ক্লাউড স্টোরেজ সেবাদানকারী অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার মধ্যে আমরা একটি বা দুটি ব্যবহার করেছি কিন্তু জানি না যে, এটি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস। যেমন— আমরা অনেকেই গুগল ড্রাইভ ব্যবহার করেছি। গুগল ড্রাইভ হলো একটি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস। কয়েকটি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস কোম্পানির নাম- Google Drive, Mediafire, Mega, Dropbox, i cloud, Amazon cloud ইত্যাদি।
ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহারের সুবিধা
• ক্লাউড স্টোরেজ একটি অনলাইন ভিত্তিক সার্ভিস হওয়ায় যেকোনো জায়গা থেকে সেবা গ্রহণ করা যায়।
• কোনো স্টোরেজ ডিভাইস ব্যবহারের প্রয়োজন হচ্ছে না শুধু ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই হবে। প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো ব্যাকআপ (Backup) হিসাবে সংরক্ষণ করতে ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস ব্যবহার করা যায়।
• ক্লাউড স্টোরেজ কোম্পানিগুলো ডেটার আরেকটি কপি ব্যাকআপ হিসাবে রেখে দেয়। কোনো কারণে হার্ডডিস্ক নষ্ট হলে পুনরায় ফেরত দিতে পারে।
• ফাইলগুলো শেয়ার করা যায়। যদি কোনো গোপনীয় ফাইল থাকে তাহলে সেইগুলো সুরক্ষিত ভাবে রাখা যায়।
• ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করলে, নতুন করে মেমোরি কার্ড কেনার দরকার হয় না ।
• নির্দিষ্ট ফোল্ডারের ভেতর নির্দিষ্ট ডকুমেন্টস ও ফাইলগুলো সংরক্ষণ করা যায়।
• ব্যবহার করা খুবই সহজ।
• অ্যাকাউন্ট লগইন (Login) করে যেকোনো ডিভাইস থেকে ব্যবহার করা যায়
• খরচ খুবই কম ও বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায় । ফাইল এর সিকিউরিটি বেশি থাকে।
• ডিলিট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
কয়েকটি ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হলো—
▪️গুগল ড্রাইভ (Google Drive)
গুগল ড্রাইভের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। গুগল ড্রাইভে ফ্রিতে সর্বোচ্চ ১৫ জিবি পর্যন্ত ডেটা সংরক্ষণ করা যায়। একটি জিমেইল থাকলে গুগল ড্রাইভসহ গুগলের অন্যান্য সেবাসমূহ ব্যবহার করা যায়।
ফিচারসমূহ-
• বিনামূল্যে ১৫ জিবি (GB) পর্যন্ত ফাইল স্টোরেজ করা যায়।
• গুগল ডক্স, গুগল শিট, স্লাইড, গুগল ফটোস, Google synchronization, গুগল ফর্ম (Google form) ইত্যাদি ।
• রিয়েল টাইম synchronization
• ১.০২ মিলিয়ন ক্যারেক্টার ডকুমেন্ট, ৫ মিলিয়ন সেলের স্প্রেডশিট, ১০০ মেগাবাইট পর্যন্ত প্রেজেন্টেশন, প্রতি পেইজ ২০০০,০০০ ক্যারেক্টার পর্যন্ত গুগল সাইট।
• লিংক শেয়ার, কন্ট্রিবিউট ও ডাউনলোড । বিল্টইন অডিও, ভিডিও প্লেয়ার।
• বিল্টইন ভাইরাস ফাইল ম্যালওয়্যার স্ক্যানার।
• বিজ্ঞাপন মুক্ত।
▪️ওয়ান ড্রাইভ (One Drive)
ওয়ান ড্রাইভ মাইক্রোসফট এর একটি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস। যেখানে বিনামূল্যে ৫ জিবি পর্যন্ত ফাইল রাখা যায়। উইন্ডোজ ও মাইক্রোসফট এর উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ফোনে আগের থেকে ওয়ান ড্রাইভের সফটওয়্যার ইনস্টল করা থাকে যাতে তাদের গ্রাহক সহজেই সেবা গ্রহণ করতে পারে।
ফিচারসমূহ
• ৫ জিবি পর্যন্ত ফ্রি স্টোরেজ সুবিধা প্রদান ।
• বিজনেস কার্ড, রিসিট, হোয়াইটবোর্ড নোট, পেপার ডকুমেন্ট স্ক্যান ও অটোমেটিক synchronization প্ৰদান ।
• লিংক শেয়ার ও ডাউনলোড সুবিধা ।
• ডাউনলোড লিংকের টাইম সেট করা।
• বিজ্ঞাপন মুক্ত।
▪️ড্রপবক্স (Dropbox )
মূলত অনলাইনে কার্যক্রম শেয়ার করে কাজ করতে Dropbox অত্যন্ত কার্যকরী। মূলত: একসঙ্গে কাজ করতেই এই পার্সোনাল ক্লাউডটি তৈরি করা হয়েছে। Dropbox ওয়েবসাইট: https://www.dropbox.com/
ফিচারসমূহ
• ৫০ জিবি (GB) পর্যন্ত ডেটা ট্রান্সফার;
• ম্যাক, লিনাক্স, উইন্ডোজ ও মোবাইলে সব ভার্সন বিদ্যমান;
• সকল ডিভাইসে synchronization;
• ফাইল শেয়ারিং ও ডাউনলোড;
• বিজ্ঞাপন মুক্ত।
▪️মেগা (Mega)
এটি একটি ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস। অন্যান্য স্টোরেজের তুলনায় এটি সর্বোচ্চ ফ্রি স্পেস দেয়। Mega- তে নতুন অ্যাকাউন্ট করলে বিনামূল্যে ৫০ জিবি স্টোরেজ পাওয়া যাবে। এখানে সহজেই পার্সোনাল ফাইল, যেমন— ছবি, ভিডিও ইত্যাদি সংরক্ষণ করা যায়। শুধুমাত্র ৫০ জিবি স্টোরেজ দিচ্ছে তাই নয় সেইসাথে File Protection System চালু রয়েছে। মনেকরুন, আপনার একটি ফাইল মেগাতে আপলোড করা আছে। এখন ঐ ফাইলটি যে ডাউনলোড লিংক বা শেয়ার লিংক এ আছে সেখানে সবাই ঢুকতে পারবে কি পারবে না সেটি কন্ট্রোল করার সুবিধা রয়েছে।
ফিচারসমূহ
• Mega তে ৫০ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ:
• ফাইল এনক্রিপশন (Encryption) ও চ্যাট সিস্টেম;
• লিংক শেয়ার ও ডাউনলোড সিস্টেম;
• ফাইল ও ফোল্ডার সিঙ্ক;
• প্রতি ৬ ঘন্টায় ১ জিবি পর্যন্ত ডেটা Transfer (আপলোড / ডাউনলোড);
▪️পিক্লাউড (pCloud)
অত্যন্ত সিকিউরড ও সিম্পল ইন্টারফেসের একটি ক্লাউড স্টোরেজ প্রোভাইডার হলো পিক্লাউড (pCloud)। এটিতে ফাইল শেয়ার ও কন্ট্রিবিউট (Contribute) করার অপশন আছে। এটিতে ওয়েব ও এন্ড্রয়েড অ্যাপ রয়েছে। pCloud ওয়েবসাইট : https://www.pcloud.com/
ফিচারসমূহ
• স্টোরেজের পরিমাণ ১০ জিবি;
• ফাইল ফরমেট অনুযায়ী আলাদা করা;
• বিল্ট ইন অডিও/ভিডিও প্লেয়ার;
• দুই লেয়ার ডেটা এনক্রিপশন সিস্টেম বিদ্যমান;
• অটোমেটিক আপলোড;
• লিংক শেয়ার ও ডাউনলোড অপশন;
• ডাউনলোড পাসওয়ার্ড সেট ও এক্সপায়ার্ড টাইম দেওয়া;
• কতবার লিংক দেখা ও ডাউনলোড হলো সেটির হিসাব;
• বিজ্ঞাপন মুক্ত।
▪️মিডিয়াফায়ার ডট কম (Mediafire.com )
মিডিয়াফায়ার ডট কম একটি জনপ্রিয় ফাইল স্টোরেজ সাইট। মিডিয়াফায়ারের ইন্টারফেস সুন্দর ও সহজ, ফলে তাদের দেওয়া অপশন গুলো যেকেউ বুঝতে পারে। মিডিয়াফায়ার বিনামূল্যে ১০ জিবি পর্যন্ত স্পেস দিয়ে থাকে। কিন্তু একাধিক অ্যাকাউন্ট করার মাধ্যমে স্পেস বাড়ানো যেতে পারে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশে বন্ধ রয়েছে।
▪️ইয়ানডেক্স ডিস্ক (Yandex Disk )
Yandex একটি ক্লাউড স্টোরেজ হওয়ার পাশাপাশি একটি সার্চ ইঞ্জিন। এটি মেইল সার্ভিস প্রদান করে থাকে। বিনামূল্যে ১০ জিবি পর্যন্ত ফ্রি স্পেস পাওয়া যায়।
আরও দেখুন...