লেনদেন বলতে বোঝায় কোনো কিছুর আদান-প্রদান করা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন এবং অর্থের মূল্যে পরিমাপ করা যায় এমন কোনো দ্রব্য বা সেবার আদান-প্রদানকেই লেনদেন বলে । মি. করিম একজন পোল্ট্রি খামারি। তিনি মুরগীর বাচ্চা উৎপাদনের জন্য একটি মেশিন ক্রয় করে চেকের মাধ্যমে এক লক্ষ টাকা প্রদান করেন। পণ্য বিক্রেতা উক্ত চেকটি ব্যাংকে জমার মাধ্যমে তার টাকা তুলে নেন। এতে তার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। ফলে এটি একটি লেনদেন। সুতরাং, যখন কোনো ঘটনাকে অর্থ দ্বারা পরিমাপ করা যায় তখন তাকে লেনদেন বলে ।
ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকার হিসাবে টাকা জমা দেয়ার জন্য পৃথক পৃথক ছাপানো জমা রসিদ থাকে। আমানতকরীরা উক্ত জমা রসিদের মাধ্যমে ব্যাংকে নগদ টাকা, চেক, পে-অর্ডার, বিল ইত্যাদি জমা করে থাকে। এগুলো জমা দেয়ার জন্য নিম্নলিখিত তিনটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়—
প্রথম ধাপ (First step) : এই পর্যায়ে আমানতকারী যে ব্যাংকে টাকা জমা দিবে সেই ব্যাংকের যেকোনো শাখা হতে ব্যাংক কর্তৃক সরবরাহকৃত হিসাবের জমা রসিদ সংগ্রহ করতে হয়। আমানতকারী সংগৃহীত রসিদের মাধ্যমে নগদ টাকা, চেক, বিনিময় বিল, পে-অর্ডার, প্রতিজ্ঞাপত্র ইত্যাদি জমা দিয়ে থাকে। সাধারণত জমা রসিদের পাতা দুই ভাগে বিভক্ত থাকে। প্রতিটি অংশে একই বিষয় ও তথ্যাদি লেখা থাকে। নির্ধারিত স্থানসমূহে জমাকারীকে লিখতে হয় : ব্যাংকের শাখার নাম, জমাকারীর নাম, হিসাব নম্বর, তারিখ, টাকার পরিমাণ (অংকে ও কথায়) ইত্যাদি। নগদ টাকা জমার ক্ষেত্রে জমাকৃত টাকার নোটের মূল্যমান অনুযায়ী সংখ্যা উল্লেখ করতে হয়। চেক জমার ক্ষেত্রে জমা রসিদে উভয় অংশের বিবরণ ঘরে জমাকৃত চেকের চেক নম্বর, শাখার নাম, চেকের তারিখ ও টাকার পরিমাণ উল্লেখ করতে হয়। অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তীত থাকে।
দ্বিতীয় ধাপ (Second step) : এই পর্যায়ে আমানতকারী পূরণকৃত জমা রসিদ ও নগদ অর্থ বা দাগকাটা চেকটি জমা দিবে। নগদ টাকা জমার ক্ষেত্রে ব্যাংকের নগদ কাউন্টারে জমা দিবে। চেকের ক্ষেত্রে ব্যাংকের নিকাশ শাখায় জমা রসিদসহ চেকটি জমা দিবে।
তৃতীয় ধাপ (Third step) : ব্যাংকে রসিদটি জমা দিলে শেষ বা তৃতীয় পর্যায়ের কাজ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সম্পন্ন করবে। নগদ কাউন্টারে জমা রসিদ ও টাকা জমা দিলে ব্যাংকের কর্মকর্তা তা গ্রহণ করে কম্পিউটার সফটওয়্যারে আমানতকারীর হিসাবে এন্ট্রি দিবেন। এন্ট্রি দেওয়া শেষে জমা রসিদে তার স্বাক্ষর ও সিল দিয়ে ব্যাংক কপি নিজে সংরক্ষণ করবেন এবং কাস্টমার কপি আমানতকারীকে ফেরত প্রদান করবেন। এরপর ব্যাংকে আমানতকারীর তালিকাভুক্ত মোবাইল নম্বরে টাকা জমার ম্যাসেজ যাবে। এটি দেখে আমানতকারী নিশ্চিত হবেন তার হিসাব টাকা জমা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, চেক বা বিল জমা দিতে হলেও উপরোক্ত নিয়মে জমা দিতে হয়। চেকের ক্ষেত্রে বিবরণের ঘরে চেক নম্বর, ব্যাংকের নাম, শাখার নাম, তারিখ ও টাকার পরিমাণ (কথায় ও অংকে) লিখে ক্লিয়ারিং শাখায় জমা দিতে হয়। ব্যাংকিং সময় দুপুর ১২.০০ টার পূর্বে জমা দিলে চেকটি নিকাশ পদ্ধতি অনুসারে উল্লেখিত নিকাশকৃত অর্থ আমানতকারীর হিসাবে ঐ দিনে ক্রেডিট করে। অবশ্য এরূপ ক্ষেত্রে নিকাশ খরচ হিসেবে ব্যাংক কিছু অর্থ কেটে রাখে। অর্থ আমানতকারীর হিসাবে টাকা জমা হলে ম্যাসেজের মাধ্যমে তা জানা যায় ।
আরও দেখুন...