কবিতা রচিত হয় কোনো একটি বিষয় বা ভাবকে কেন্দ্র করে। কবিতা তাল দিয়ে পড়া যায়। তাছাড়া কবিতায় মিলশব্দ থাকে। এখন তোমার জীবনের বা সমাজের কোনো ঘটনা বা প্রসঙ্গ কিংবা মনের কোনো ভাব বা অনুভূতি নিয়ে আলাদা কাগজে একটি কবিতা রচনা করো।
তোমার লেখা কবিতা থেকে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজে দেখো-
কবিতায় প্রতিফলিত হয় কবির আবেগ, অনুভূতি। কবিতার লাইনকে বলা হয় চরণ। কবিতার সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
কবিতার এসব বৈশিষ্ট্যের কথা তোমরা আগে জেনেছ। এর বাইরেও কবিতার আরো কিছু বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক।
ক. কবিতায় স্তবক থাকতে পারে। কবিতার অনুচ্ছেদকে বলে স্তবক। স্তবক তৈরি হয় সাধারণত একাধিক লাইন বা চরণের সমন্বয়ে।
খ. সব কবিতা সমান গতিতে পড়া হয় না। কোনো কোনো কবিতার গতি থাকে বেশি, কোনোটি মাঝারি গতির হয়, আবার কোনো কোনো কবিতার গতি হয় কম। এই গতির নাম লয়।
গ. কবিতায় উপমা থাকে। উপমা হলো এক ধরনের তুলনা। কোনো বিবরণকে আকর্ষণীয় করে তুলতে কবিতায় উপমার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন, 'নোলক' কবিতায় পড়েছিলে, 'এলিয়ে খোঁপা রাত্রি এলেন, ফের বাড়ালাম পা'। এখানে রাতের অন্ধকারকে খোঁপার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
কবিতার একটি ধরনের নাম ছড়া। ছড়ায় চরণের শেষে মিল থাকে, চরণগুলো প্রায় ক্ষেত্রে সমান দৈর্ঘ্যের হয়, অল্প ব্যবধানে তাল পড়ে এবং পড়ার গতি বা লয় দ্রুত হয়।
শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬) বাংলাদেশের একজন প্রধান কবি। নাগরিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, গণ-আন্দোলন ইত্যাদি তাঁর কবিতার বিষয়। 'প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে', 'রৌদ্র করোটিতে', 'বন্দি শিবির থেকে' ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত কবিতার বই। শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা কবিতার বইয়ের মধ্যে আছে 'এলাটিং রেলাটিং', 'ধান ভানলে কুঁড়ো দেবো' ইত্যাদি। নিচের 'পণ্ডশ্রম' কবিতাটি শামসুর রাহমানের 'ধান ভানলে কুঁড়ো দেবো' বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো। পড়ার সময়ে অর্থ বোঝার চেষ্টা করো। এরপর সরবে আবৃত্তি করো।
এই নিয়েছে ওই নিল যা
কান নিয়েছে চিলে।
চিলের পিছে ঘুরছি মরে
আমরা সবাই মিলে।
দিনদুপুরে জ্যান্ত আহা,
কানটা গেল উড়ে।
কান না পেলে চার দেয়ালে
মরব মাথা খুঁড়ে।
কান গেলে আর মুখের পাড়ায়
থাকল কী-হে বলো?
কানের শোকে আজকে সবাই
মিটিং করি চলো।
যাচ্ছে, গেল সবই গেল,
জাত মেরেছে চিলে।
পাজি চিলের ভূত ছাড়াব
লাথি, জুতো, কিলে।
সুধী সমাজ! শুনুন বলি,
এই রেখেছি বাজি,
যে জন সাধের কান নিয়েছে
জান নেব তার আজই।
মিটিং হলো ফিটিং হলো
কান মেলে না তবু।
ডানে-বাঁয়ে ছুটে বেড়াই
মেলান যদি প্রভু।
ছুটতে দেখে ছোট্টো ছেলে
বলল, 'কেন মিছে
কানের খোঁজে মরছ ঘুরে
সোনার চিলের পিছে?'
'নেইকো খালে, নেইকো বিলে
নেইকো মাঠে গাছে;
কান যেখানে ছিল আগে
সেখানটাতেই আছে।'
ঠিক বলেছে, চিল তবে কি
নয়কো কানের যম?
বৃথাই মাথার ঘাম ফেলেছি
পণ্ড হলো শ্রম।
জ্যান্ত: জীবন্ত।
মাথার ঘাম ফেলা: পরিশ্রম করা।
দিনদুপুরে: প্রকাশ্যে।
মিছে: মিথ্যা।
পণ্ডশ্রম: ব্যর্থ পরিশ্রম।
মিটিং: সভা।
ফিটিং: মিটিংয়ের সাথে মেলানো অনুকার শব্দ।
মুখের পাড়া: মুখমণ্ডল।
বৃথা: অকারণ।
যম: মৃত্যুর দূত।
সুধী সমাজ: জ্ঞানীজন।
মাথা খোঁড়া: মাথা ঠোকা।
'পণ্ডশ্রম' কবিতায় অন্ত্যমিল আছে কি না, তাল দিয়ে পড়া যায় কি না, শব্দরূপের পরিবর্তন ঘটেছে কি না, কোনো স্তবক আছে কি না, পড়ার গতি বা লয় কেমন, এবং উপমার প্রয়োগ হয়েছে কি না-এসব নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করো।
'পণ্ডশ্রম' কবিতার আলোকে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রস্তুত করো এবং পরে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নিজের উত্তর সংশোধন করো।
১। 'পণ্ডশ্রম' কবিতায় কীভাবে শ্রম পন্ড হলো?
২। তথ্য যাচাই না করে কাজ করলে তার ফলাফল কী ধরনের হতে পারে বলে তুমি মনে করো?
৩। কোনো তথ্য বা ঘটনার যথার্থতা কীভাবে যাচাই করতে হয়?
'পণ্ডশ্রম' একটি ছড়া-জাতীয় কবিতা। এখানে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায়:
১। 'পণ্ডশ্রম' কবিতায় একটি সামাজিক বিষয়কে ব্যঙ্গার্থকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই ছড়ার মূল বিষয়- কোনো কিছু ঠিকমতো না যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে নেই। চোখ দিয়ে দেখে, কান দিয়ে শুনে, বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করে তবেই কাজে নামতে হয়।
২। এই কবিতায় প্রতি স্তবকের দ্বিতীয় ও চতুর্থ চরণের শেষে মিল রয়েছে। যেমন: চিলে-মিলে, উড়ে-খুঁড়ে ইত্যাদি।
৩। কবিতাটি তালে তালে পড়া যায়। যেমন:
/এই নিয়েছে/ঐ নিল যা
/কান নিয়েছে/চিলে।
/চিলের পিছে ঘুরছি মরে
/আমরা সবাই মিলে।
৪। এই কবিতার তাল অল্প ব্যবধানের এবং এর গতি বা লয় দ্রুত।
৫। কবিতাটিতে শব্দরূপের কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। যেমন: নেই—নেইকো, সেখানেই—সেখানটাতেই, নয়- নয়কো ইত্যাদি।
কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বাংলাদেশের জাতীয় কবি। বিদ্রোহী কবি হিসেবেও তিনি পরিচিত। তাঁর কবিতায় অন্যায়, অবিচার, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে। কবিতা ছাড়াও তিনি গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও অসংখ্য গান রচনা করেছেন। তাঁর বিখ্যাত কয়েকটি বইয়ের নাম 'অগ্নি-বীণা', 'বিষের বাঁশি', 'মৃত্যুক্ষুধা', 'যুগবাণী' ইত্যাদি। নিচের 'সাম্যবাদী' কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের 'সাম্যবাদী' কবিতার বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো। পড়ার সময়ে অর্থ বোঝার চেষ্টা করো। এরপর সরবে আবৃত্তি করো।
গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান,
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রিশ্চান।
গাহি সাম্যের গান!
কে তুমি? পার্সি? জৈন? ইহুদি? সাঁওতাল, ভিল, গারো?
কনফুসিয়াস? চার্বাক-চেলা? বলে যাও, বলো আরো!
বন্ধু, যা খুশি হও,
পেটে-পিঠে, কাঁধে-মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও,
কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক-
জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থসাহেব পড়ে যাও যত শখ-
কিন্তু কেন এ পণ্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?
দোকানে কেন এ দর-কষাকষি?-পথে ফোটে তাজা ফুল!
তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,
সকল শাস্ত্র খুঁজে পাবে সখা খুলে দেখ নিজ প্রাণ!
তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার,
তোমার হৃদয় বিশ্ব-দেউল সকলের দেবতার।
কেন খুঁজে ফের দেবতা-ঠাকুর মৃত-পুঁথি-কঙ্কালে?
হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে।
বন্ধু, বলিনি ঝুট,
এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।
এই হৃদয়ই সে নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,
বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম এ, মদিনা, কাবা-ভবন,
মসজিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়,
এইখানে বসে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়।
এই রণ-ভূমে বাঁশির কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা,
এই মাঠে হলো মেঘের রাখাল নবিরা খোদার মিতা।
এই হৃদয়ের ধ্যান-গুহা মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি
ত্যজিল রাজ্য মানবের মহা-বেদনার ডাক শুনি।
এই কন্দরে আরব-দুলাল শুনিতেন আহ্বান,
এইখানে বসি গাহিলেন তিনি কোরানের সাম-গান!
মিথ্যা শুনিনি ভাই,
এই হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো মন্দির-কাবা নাই।
আরব-দুলাল: আরব দেশের সন্তান।
ইহুদি: ধর্মসম্প্রদায়ের নাম।
কনফুসিয়াস: চীনা দার্শনিক।
কন্দর: গুহা।
কাশী: হিন্দুদের তীর্থস্থান।
গারো: নৃগোষ্ঠীর নাম।
গ্রন্থসাহেব: শিখ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগ্রন্থ।
চার্বাক: প্রাচীন ভারতের একজন দার্শনিক।
জেন্দাবেস্তা: প্রাচীন ইরানের একটি ধর্মগ্রন্থ।
জৈন: ধর্মসম্প্রদায়ের নাম।
ঝুট: মিথ্যা।
ত্রিপিটক: বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থ।
দেউল: মন্দির।
নীলাচল: উড়িষ্যার পুরীতে অবস্থিত একটি তীর্থস্থান।
পার্সি: ইরানের অগ্নি-উপাসক একটি সম্প্রদায়।
পুরাণ: হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় কাহিনি সংবলিত গ্রন্থ, যেমন- রামায়ণ, মহাভারত।
বাইবেল: খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ।
বুদ্ধ-গয়া: ভারতের বিহার প্রদেশে অবস্থিত বৌদ্ধদের তীর্থস্থান।
বৃন্দাবন: হিন্দুদের তীর্থস্থান।
বেদ-বেদান্ত: হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ।
ভিল: নৃগোষ্ঠীর নাম।
মথুরা: হিন্দুদের তীর্থস্থান।
মদিনা: সৌদি আরবে অবস্থিত মুসলমানদের পুণ্যভূমি।
যুগাবতার: বিশেষ যুগে জন্মগ্রহণকারী মহাপুরুষ বা অবতার।
শাক্যমুনি: গৌতম বুদ্ধের একটি নাম।
শূল: তীক্ষ্ণমুখ বল্লম বিশেষ।
সাঁওতাল: নৃগোষ্ঠীর নাম।
সাম-গান: সুমধুর বাণী।
সাম্য: সমতা।
সাম্যবাদ: মানুষের সমান অধিকার বিষয়ক মতবাদ।
হানা: বিদ্ধ করা।
'সাম্যবাদী' কবিতায় অন্ত্যমিল আছে কি না, তাল দিয়ে পড়া যায় কি না, শব্দরূপের পরিবর্তন ঘটেছে কি না, কোনো স্তবক আছে কি না, পড়ার গতি বা লয় কেমন, এবং উপমার প্রয়োগ হয়েছে কি না-এসব নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করো।
'সাম্যবাদী' কবিতার আলোকে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রস্তুত করো এবং পরে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নিজের উত্তর সংশোধন করো।
১। কবিতাটিতে কবি যেসব জাতি, ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ, ধর্মপ্রচারক ও ধর্মীয় স্থানের কথা উল্লেখ করেছেন, তার তালিকা তৈরি করো।
জাতির নাম:
ধর্মের নাম:
ধর্মগ্রন্থের নাম:
ধর্মপ্রচারকের নাম:
ধর্মীয় স্থানের নাম:
২। 'সাম্যবাদী' কবিতায় কবি কী বলতে চেয়েছেন? কবির বক্তব্যের সঙ্গে তোমার মতের মিল-অমিল উল্লেখ করো।
৩। তোমার চারপাশের সমাজে মানুষে মানুষে কী কী ধরনের বিভেদ দেখা যায়? এসব বিভেদ কীভাবে দূর করা যায় বলে তুমি মনে করো?
১। 'সাম্যবাদী' কবিতার মূল বিষয়—মানবতা ও সাম্যবাদ। এখানে কবি ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব মানুষকে সমান চোখে দেখার কথা বলেছেন।
২। কবিতাটিতে প্রতি জোড়া চরণের শেষে মিল আছে। যেমন: গারো-আরো, হও-বও ইত্যাদি।
৩। কবিতাটি তালে তালে পড়া যায়। যেমন,
/গাহি /সাম্যের গান-
/যেখানে আসিয়া / এক হয়ে গেছে/সব বাধা-ব্যবধান
/যেখানে মিশেছে/হিন্দু-বৌদ্ধ-/মুসলিম-ক্রিশ্ / চান ।
/গাহি/ সাম্যের গান!
/কে তুমি?-পার্সি? / জৈন? ইহুদি? /সাঁওতাল, ভিল, /গারো?
/কনফুসিয়াস্? /চার্বাক-চেলা? বলে যাও, বলো /আরো!
৪। কবিতাটির লয় মাঝারি; অর্থাৎ দ্রুতও নয়, ধীরও নয়।
৫। কবিতাটিতে শব্দরূপের কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন: এসে-আসিয়া, বহন করো-বও, তোমার মধ্যে-তোমাতে, ত্যাগ করল—ত্যজিল, বসে-বসি ইত্যাদি।
৬। এই কবিতায় উপমার ব্যবহার আছে। যেমন: 'হৃদয়ের ধ্যান-গুহা'—এখানে হৃদয়কে গুহার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯) বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় কবি। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম 'সাঁঝের মায়া', 'মায়া কাজল', 'কেয়ার কাঁটা' ইত্যাদি। শিশুদের জন্য লেখা তাঁর একটি ছড়ার বই 'ইতল বিতল'। 'জাগো তবে অরণ্য কন্যারা' কবিতাটি সুফিয়া কামালের 'উদাত্ত পৃথিবী' কবিতার বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো। পড়ার সময়ে অর্থ বোঝার চেষ্টা করো। এরপর সরবে আবৃত্তি করো।
মৌসুমি ফুলের গান মোর কণ্ঠে জাগে নাকো আর
চারিদিকে শুনি হাহাকার।
ফুলের ফসল নেই, নেই কারো কণ্ঠে আর গান
ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি প্রাণহীন সব মুখ ম্লান।
মাটি অরণ্যের পানে চায়
সেখানে ক্ষরিছে স্নেহ পল্লবের নিবিড় ছায়ায়।
জাগো তবে অরণ্য কন্যারা। জাগো আজি,
মর্মরে মর্মরে ওঠে বাজি
বৃক্ষের বক্ষের বহ্নিজ্বালা
মেলি লেলিহান শিখা তোমরা জাগিয়া ওঠো বালা!
কঙ্কণে তুলিয়া ছন্দ তান
জাগাও মুমূর্ষু ধরা-প্রাণ
ফুলের ফসল আনো, খাদ্য আনো ক্ষুধার্তের লাগি
আত্মার আনন্দ আনো, আনো যারা রহিয়াছে জাগি
তিমির প্রহর ভরি অতন্দ্র নয়ন, তার তরে
ছড়াও প্রভাত আলো তোমাদের মুঠি ভরে ভরে।
(সংক্ষেপিত)
অতন্দ্র: ঘুমহীন।
বহ্নিজ্বালা: আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ার ইচ্ছা।
কঙ্কণ: চুড়ি।
ভয়ার্ত: ভয়াতুর।
ক্ষরিছে: করছে; চুয়ে চুয়ে পড়ছে।
মুমূর্ষু: মরে যাচ্ছে এমন।
ক্ষুধার্ত: ক্ষুধায় কাতর।
ম্লান: মলিন।
ধরা-প্রাণ: পৃথিবীর প্রাণী।
লেলিহান শিখা: ছড়িয়ে পড়তে চায় এমন আগুন।
পল্লব: গাছের কচি পাতা।
'জাগো তবে অরণ্য কন্যারা' কবিতায় অন্ত্যমিল আছে কি না, তাল দিয়ে পড়া যায় কি না, শব্দরূপের পরিবর্তন - ঘটেছে কি না, কোনো স্তবক আছে কি না, পড়ার গতি বা লয় কেমন, এবং উপমার প্রয়োগ হয়েছে কি না- এসব নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করো।
'জাগো তবে অরণ্য কন্যারা' কবিতার আলোকে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রস্তুত করো এবং পরে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নিজের উত্তর সংশোধন করো।
১। 'জাগো তবে অরণ্য কন্যারা' কবিতায় প্রকৃতির প্রতি কবির কী ধরনের অনুভূতি ও আবেগ প্রকাশ পেয়েছে?
২। 'ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি প্রাণহীন সব মুখ ম্লান।'-এ কথা দিয়ে কবি কী বুঝিয়েছেন?
৩। তোমার চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিবরণ দাও। এ পরিবেশ তোমার কেমন লাগে?
১। 'জাগো তবে অরণ্য কন্যারা' কবিতার মূল ভাব প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা। চারপাশে চলছে বৃক্ষ-নিধন; কবি তাতে ব্যথিত ও উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় কবি বৃক্ষদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি চান সবুজে সবুজে, ফুলে ও ফসলে পৃথিবী ভরে উঠুক।
২। কবিতাটিতে প্রতি দুই চরণের শেষে মিল আছে। যেমন: আজি-বাজি, জ্বালা-বালা ইত্যাদি।
৩। কবিতাটি তাল দিয়ে পড়া যায়; তবে এই তালের ব্যবধান দীর্ঘ। যেমন:
/মৌসুমি ফুলের গান/মোর কণ্ঠে জাগে নাকো আর
/চারিদিকে শুনি হাহাকার।
/ফুলের ফসল নেই, /নেই কারো কণ্ঠে আর গান
/ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি /প্রাণহীন সব মুখ ম্লান।
৪। কবিতার লয় বা গতি ধীর।
৫। কবিতাটিতে কিছু শব্দরূপের পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন: আমার মোর, না নাকো, দিকে-পানে, করছে-ক্ষরিছে, আজ-আজি, মেলে-মেলি, জন্য লাগি, রয়েছে- রহিয়াছে, ভরে ভরি, জন্য-তরে ইত্যাদি। প্রমিত ভাষার শব্দরূপ এমন নয়। -
৬। এই কবিতায় উপমার ব্যবহার আছে। যেমন: 'সেখানে ক্ষরিছে স্নেহ পল্লবের নিবিড় ছায়ায়।'—কবি এখানে কচি পাতার ছায়াকে স্নেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান কবি। তাঁর কবিতায় বাংলাদেশের প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় প্রকাশ ঘটেছে। জীবনানন্দের উল্লেখযোগ্য কবিতার বইয়ের নাম 'ধূসর পাণ্ডুলিপি', 'বনলতা সেন', 'মহাপৃথিবী', 'সাতটি তারার তিমির' ইত্যাদি। 'তোমরা যেখানে সাধ' কবিতাটি কবির 'রূপসী বাংলা' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো। পড়ার সময়ে অর্থ বোঝার চেষ্টা করো। এরপর সরবে আবৃত্তি করো।
তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও আমি এই বাংলার পারে
রয়ে যাব; দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে;
দেখিব খয়েরি ডানা শালিখের সন্ধ্যায় হিম হয়ে আসে
ধবল রোমের নিচে তাহার হলুদ ঠ্যাং ঘাসে অন্ধকারে
নেচে চলে একবার দুইবার তারপর হঠাৎ তাহারে
বনের হিজল গাছ ডাক দিয়ে নিয়ে যায় হৃদয়ের পাশে;
দেখিব মেয়েলি হাত সকরুণ -শাদা শাঁখা ধূসর বাতাসে
শঙ্খের মতো কাঁদে: সন্ধ্যায় দাঁড়াল সে পুকুরের ধারে,
খইরঙা হাঁসটিরে নিয়ে যাবে যেন কোন কাহিনির দেশে-
'পরন-কথা'র গন্ধ লেগে আছে যেন তার নরম শরীরে,
কলমিদামের থেকে জন্মেছে সে যেন এই পুকুরের নীড়ে-
নীরবে পা ধোয় জলে একবার - তারপর দূরে নিরুদ্দেশে
চলে যায় কুয়াশায়, - তবু জানি কোনোদিন পৃথিবীর ভিড়ে
হারাব না তারে আমি-সে যে আছে আমার এ বাংলার তীরে।
কলমিদাম: কলমিলতার গুচ্ছ।
পরন-কথা: রূপকথা।
খইরঙা: খইয়ের মতো রঙের।
শঙ্খ: সামুদ্রিক শামুক বিশেষ।
ধবল রোম: সাদা লোম।
শাঁখা: সাদা চুড়ি বিশেষ।
ধূসর: ছাই রঙা।
সকরুণ: বেদনাযুক্ত।
নিরুদ্দেশে: অজানার পথে।
হিম: ঠান্ডা।
নীড়: বাসা।
'তোমরা যেখানে সাধ' কবিতায় অন্ত্যমিল আছে কি না, তাল দিয়ে পড়া যায় কি না, শব্দরূপের পরিবর্তন ঘটেছে কি না, কোনো স্তবক আছে কি না, পড়ার গতি বা লয় কেমন, এবং উপমার প্রয়োগ হয়েছে কি না-এসব নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করো।
'তোমরা যেখানে সাধ' কবিতার আলোকে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রস্তুত করো এবং পরে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নিজের উত্তর সংশোধন করো
১। 'আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব'—কবি কেন এমন কথা বলেছেন?
২। দেশপ্রেম সম্পর্কে তোমার ধারণা কী? এই কবিতায় কীভাবে দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে?
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের কোন দিকগুলো তোমার ভালো লাগে বা খারাপ লাগে?
১। 'তোমরা যেখানে সাধ' একটি দেশপ্রেমের কবিতা। এই কবিতায় কবি বাংলাদেশের প্রকৃতির সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন। এই সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন বলে তিনি এখান থেকে আর কোথাও যেতে চান না।
২। এই কবিতার প্রতি চরণের শেষে মিল আছে, তবে তা বিশেষ নিয়মে। যেমন: ১ম চরণে 'পারে' শব্দের সাথে মিলিয়ে ৪র্থ চরণে 'অন্ধকারে', ৫ম চরণে 'তাহারে' এবং ৮ম চরণে 'ধারে' আছে। আবার, ২য় চরণের 'বাতাসে' শব্দের সাথে মিলিয়ে ৩য় চরণে 'আসে', ৬ষ্ঠ চরণে 'পাশে' এবং ৭ম চরণে 'বাতাসে' আছে।
৩। কবিতাটি তাল দিয়ে পড়া যায়; তবে এই তালের ব্যবধান বেশ দীর্ঘ। যেমন:
/তোমরা যেখানে সাধ /চলে যাও আমি এই /বাংলার পারে
/রয়ে যাব: দেখিব কাঁ/ঠালপাতা ঝরিতেছে/ভোরের বাতাসে;
/দেখিব খয়েরি ডানা /শালিখের সন্ধ্যায় /হিম হয়ে আসে
/ধবল রোমের নিচে /তাহার হলুদ ঠ্যাং /ঘাসে অন্ধকারে
৪। কবিতার লয় বা গতি ধীর।
৫। কবিতাটিতে কিছু শব্দরূপের পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন: থেকে রয়ে, ঝরছে ঝরিতেছে, পাঠ্যাং, তাকে তারে ইত্যাদি।
৬। এই কবিতায় উপমার ব্যবহার আছে। যেমন: 'শাদা শাঁখা ধূসর বাতাসে শঙ্খের মতো কাঁদে' এখানে চুড়ির শব্দকে শঙ্খের সুরের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
সিকান্দার আবু জাফর (১৯১৯-১৯৭৫) বাংলাদেশের একজন কবি ও নাট্যকার। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইয়ের নাম 'প্রসন্ন প্রহর', 'বৈরী বৃষ্টিতে', 'সিরাজউদ্দৌলা' ইত্যাদি। 'আশা' কবিতাটি তাঁর 'মালব কৌশিক' কবিতার বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো। পড়ার সময়ে অর্থ বোঝার চেষ্টা করো। এরপর সরবে আবৃত্তি করো।
আমি সেই জগতে হারিয়ে যেতে চাই,
যেথায় গভীর-নিশুত রাতে
জীর্ণ বেড়ার ঘরে
নির্ভাবনায় মানুষেরা ঘুমিয়ে থাকে ভাই।
যেথায় লোকে সোনা-রুপায়
পাহাড় জমায় না,
বিত্ত-সুখের দুর্ভাবনায়
আয়ু কমায় না
যেথায় লোকে তুচ্ছ নিয়ে
তুষ্ট থাকে ভাই।
সারাদিনের পরিশ্রমেও
পায় না যারা খুঁজে
একটি দিনের আহার্য-সঞ্চয়,
তবু যাদের মনের কোণে
নেই দুরাশা গ্লানি,
নেই দীনতা, নেই কোনো সংশয়।
যেথায় মানুষ মানুষেরে
বাসতে পারে ভালো
প্রতিবেশীর আঁধার ঘরে
জ্বালতে পারে আলো,
সেই জগতের কান্না-হাসির
অন্তরালে ভাই
আমি হারিয়ে যেতে চাই।।
অন্তরালে: আড়ালে।
আহার্য: খাবার।
গ্লানি: অনুতাপ।
জীর্ণ: পুরাতন।
দীনতা: গরিব অবস্থা।
দুর্ভাবনা: দুশ্চিন্তা।
দুরাশা: সহজে পাওয়া যায় না এমন কিছু লাভ করার আশা।
নির্ভাবনায়: ভাবনাহীনভাবে।
নিশুত রাতে: গভীর রাতে।
'আশা' কবিতায় অন্ত্যমিল আছে কি না, তাল দিয়ে পড়া যায় কি না, শব্দরূপের পরিবর্তন ঘটেছে কি না, কোনো স্তবক আছে কি না, পড়ার গতি বা লয় কেমন এবং উপমার প্রয়োগ হয়েছে কি না-এসব নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করো।
'আশা' কবিতার আলোকে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রস্তুত করো এবং পরে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নিজের উত্তর সংশোধন করো।
১। 'আশা' কবিতায় কবি কী বলতে চেয়েছেন?
২। কবি মনে করেন, বিত্তসুখের দুর্ভাবনায় আয়ু কমে। তোমার মতে, অর্থবিত্তের সঙ্গে মানুষের আয়ু কমার কোনো সম্পর্ক আছে কি না?
৩। তোমার চারপাশের মানুষের মধ্যে কী কী ধরনের দুঃখ-কষ্ট তুমি দেখতে পাও। এগুলো দূর করার জন্য কী কী করা যেতে পারে, তার একটি তালিকা তৈরি করো।
১। 'আশা' কবিতার মূল ভাব মানুষের মহৎ গুণকে তুলে ধরা। যেসব মানুষ দুশ্চিন্তা করে না, অতিরিক্ত সঞ্চয় করে না, পরিশ্রম করতে দ্বিধা করে না, এবং যারা স্বার্থপর নয়, কবি তাদের ভালোবাসেন।
২। কবিতাটির চরণগুলোর শেষে বিশেষ ধরনের মিল রয়েছে। যেমন: প্রথম স্তবকে ১ম ও ৪র্থ লাইনে মিল আছে; দ্বিতীয় স্তবকে ১ম ও ৩য় এবং ২য় ও ৪র্থ লাইনে মিল আছে; আবার তৃতীয় স্তবকে ৩য় ও ৬ষ্ঠ লাইনে মিল দেখা যায়।
৩। কবিতাটি তাল দিয়ে পড়া যায়। তালগুলোর ব্যবধান কম। যেমন:
/আমি/সেই জগতে /হারিয়ে যেতে চাই,
/যেথায় গভীর-/নিশুত রাতে
/জীর্ণ বেড়ার /ঘরে
/নির্ভাবনায় মানুষেরা /ঘুমিয়ে থাকে/ভাই।
/যেথায় লোকে/সোনা-রুপায়
/পাহাড় জমায়/না,
/বিত্ত-সুখের/দুর্ভাবনায়
/আয়ু কমায়/না;
/যেথায় লোকে / তুচ্ছ নিয়ে
/তুষ্ট থাকে/ভাই।
৪। এই কবিতার লয় বা গতি দ্রুত। এটি একটি ছড়া জাতীয় কবিতা।
৫। কবিতাটিতে কিছু শব্দরূপের পরিবর্তন আছে। যেমন: যেখানে যেথায়, নিশীথ-নিশুত, মানুষকে মানুষেরে, জ্বালাতে-জ্বালতে ইত্যাদি।
সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৯২৬-১৯৪৭) বাংলা ভাষার জনপ্রিয় কবি। মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর কবিতায় বঞ্চিত, শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের প্রতি গভীর মমতা প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর রচিত বইগুলোর মধ্যে 'ছাড়পত্র', 'ঘুম নেই', 'পূর্বাভাস', 'অভিযান' ও 'হরতাল' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। 'ছাড়পত্র' কবিতাটি সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'ছাড়পত্র' কবিতার বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো। পড়ার সময়ে অর্থ বোঝার চেষ্টা করো। এরপর সরবে আবৃত্তি করো।
যে শিশু ভূমিষ্ঠ হলো আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুম:
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে
খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।
সে ভাষা বোঝে না কেউ,
কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার।
আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা।
পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের-
পরিচয়পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর
অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে।
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব—তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস।।
অঙ্গীকার: প্রতিজ্ঞা।
খর্বদেহ: ছোটো শরীর।
ছাড়পত্র: অনুমতিপত্র।
জঞ্জাল: আবর্জনা।
তিরস্কার: ভর্ৎসনা।
দুর্বোধ্য: যা সহজে বোঝা যায় না।
প্রতিজ্ঞা: অঙ্গীকার।
ভূমিষ্ঠ হওয়া: জন্মগ্রহণ করা।
মৃদু: অনুচ্চ।
'ছাড়পত্র' কবিতায় অন্ত্যমিল আছে কি না, তাল দিয়ে পড়া যায় কি না, শব্দরূপের পরিবর্তন ঘটেছে কি না, কোনো স্তবক আছে কি না, পড়ার গতি বা লয় কেমন, এবং উপমার প্রয়োগ হয়েছে কি না-এসব নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করো।
'ছাড়পত্র' কবিতার আলোকে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রস্তুত করো এবং পরে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নিজের উত্তর সংশোধন করো।
১। 'ছাড়পত্র' কবিতায় কবি এই পৃথিবীকে নবজাতকের জন্য বাসযোগ্য মনে করেননি কেন?
২। 'প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল'-এই বাক্য দিয়ে কবি পুরানো ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চেয়েছেন। সব ধরনের পুরাতন ব্যবস্থা, চিন্তা ও বিশ্বাস কি পরিবর্তন করা প্রয়োজন মনে করো? তোমার মত সংক্ষেপে তুলে ধরো।
৩। তোমার পরিবার, বিদ্যালয় বা সমাজের কোন বিষয়গুলো পরিবর্তন করা হলে তা সবার জন্য মঙ্গলকর হবে বলে মনে করো?
১। 'ছাড়পত্র' কবিতার মূল ভাব-পৃথিবীকে নতুন প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করে তোলা।
২। কবিতাটির চরণের শেষে কোনো মিল নেই।
৩। এই কবিতায় এক ধরনের তাল আছে; তবে সেই তাল নির্দিষ্ট ব্যবধানের নয়। যেমন:
/যে শিশু ভূমিষ্ঠ হলো/আজ রাত্রে
lতার মুখে /খবর পেলুম:
/সে পেয়েছে/ছাড়পত্র এক,
/নতুন বিশ্বের দ্বারে/তাই ব্যক্ত করে অধিকার
/জন্মমাত্র /সুতীব্র চিৎকারে।
/খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার /মুষ্টিবদ্ধ হাত
/উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
/কী এক দুর্বোধ্য /প্রতিজ্ঞায়।
৪। এই কবিতার গতি বা লয় ধীর।
৫। কবিতাটিতে কিছু শব্দরূপের পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন: রাতে রাত্রে, পেলাম পেলুম, শেষ করে- সেরে ইত্যাদি।
৬। এই কবিতায় উপমার ব্যবহার আছে। যেমন: 'অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে'-এখানে চোখের অস্পষ্ট দৃষ্টিকে কুয়াশার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
এই পরিচ্ছেদে মোট ছয়টি কবিতা পড়েছ। কবিতাগুলোর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নিচের ছকটি পূরণ করো। প্রথমটির নমুনা উত্তর করে দেওয়া হলো। কাজটি প্রথমে নিজে করবে, এরপর শিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে নিজের উত্তর চূড়ান্ত করবে।
যে কোনো একটি বিষয় নির্ধারণ করে এটিকে ছড়া বা সমিল কবিতায় প্রকাশ করো অথবা প্রথমে যে কবিতাটি লিখেছিলে সেটি পরিমার্জন করো। লেখা হয়ে গেলে তোমার কবিতার বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজে বের করো। প্রয়োজনে শিক্ষক ও সহপাঠীর সহযোগিতা নাও।
আরও দেখুন...