'জাগো তবে অরণ্য কন্যারা' কবিতার আলোকে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রস্তুত করো এবং পরে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নিজের উত্তর সংশোধন করো।
১। 'জাগো তবে অরণ্য কন্যারা' কবিতায় প্রকৃতির প্রতি কবির কী ধরনের অনুভূতি ও আবেগ প্রকাশ পেয়েছে?
২। 'ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি প্রাণহীন সব মুখ ম্লান।'-এ কথা দিয়ে কবি কী বুঝিয়েছেন?
৩। তোমার চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিবরণ দাও। এ পরিবেশ তোমার কেমন লাগে?
১। 'জাগো তবে অরণ্য কন্যারা' কবিতার মূল ভাব প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা। চারপাশে চলছে বৃক্ষ-নিধন; কবি তাতে ব্যথিত ও উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় কবি বৃক্ষদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি চান সবুজে সবুজে, ফুলে ও ফসলে পৃথিবী ভরে উঠুক।
২। কবিতাটিতে প্রতি দুই চরণের শেষে মিল আছে। যেমন: আজি-বাজি, জ্বালা-বালা ইত্যাদি।
৩। কবিতাটি তাল দিয়ে পড়া যায়; তবে এই তালের ব্যবধান দীর্ঘ। যেমন:
/মৌসুমি ফুলের গান/মোর কণ্ঠে জাগে নাকো আর
/চারিদিকে শুনি হাহাকার।
/ফুলের ফসল নেই, /নেই কারো কণ্ঠে আর গান
/ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি /প্রাণহীন সব মুখ ম্লান।
৪। কবিতার লয় বা গতি ধীর।
৫। কবিতাটিতে কিছু শব্দরূপের পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন: আমার মোর, না নাকো, দিকে-পানে, করছে-ক্ষরিছে, আজ-আজি, মেলে-মেলি, জন্য লাগি, রয়েছে- রহিয়াছে, ভরে ভরি, জন্য-তরে ইত্যাদি। প্রমিত ভাষার শব্দরূপ এমন নয়। -
৬। এই কবিতায় উপমার ব্যবহার আছে। যেমন: 'সেখানে ক্ষরিছে স্নেহ পল্লবের নিবিড় ছায়ায়।'—কবি এখানে কচি পাতার ছায়াকে স্নেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান কবি। তাঁর কবিতায় বাংলাদেশের প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় প্রকাশ ঘটেছে। জীবনানন্দের উল্লেখযোগ্য কবিতার বইয়ের নাম 'ধূসর পাণ্ডুলিপি', 'বনলতা সেন', 'মহাপৃথিবী', 'সাতটি তারার তিমির' ইত্যাদি। 'তোমরা যেখানে সাধ' কবিতাটি কবির 'রূপসী বাংলা' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো। পড়ার সময়ে অর্থ বোঝার চেষ্টা করো। এরপর সরবে আবৃত্তি করো।
তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও আমি এই বাংলার পারে
রয়ে যাব; দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে;
দেখিব খয়েরি ডানা শালিখের সন্ধ্যায় হিম হয়ে আসে
ধবল রোমের নিচে তাহার হলুদ ঠ্যাং ঘাসে অন্ধকারে
নেচে চলে একবার দুইবার তারপর হঠাৎ তাহারে
বনের হিজল গাছ ডাক দিয়ে নিয়ে যায় হৃদয়ের পাশে;
দেখিব মেয়েলি হাত সকরুণ -শাদা শাঁখা ধূসর বাতাসে
শঙ্খের মতো কাঁদে: সন্ধ্যায় দাঁড়াল সে পুকুরের ধারে,
খইরঙা হাঁসটিরে নিয়ে যাবে যেন কোন কাহিনির দেশে-
'পরন-কথা'র গন্ধ লেগে আছে যেন তার নরম শরীরে,
কলমিদামের থেকে জন্মেছে সে যেন এই পুকুরের নীড়ে-
নীরবে পা ধোয় জলে একবার - তারপর দূরে নিরুদ্দেশে
চলে যায় কুয়াশায়, - তবু জানি কোনোদিন পৃথিবীর ভিড়ে
হারাব না তারে আমি-সে যে আছে আমার এ বাংলার তীরে।
কলমিদাম: কলমিলতার গুচ্ছ।
পরন-কথা: রূপকথা।
খইরঙা: খইয়ের মতো রঙের।
শঙ্খ: সামুদ্রিক শামুক বিশেষ।
ধবল রোম: সাদা লোম।
শাঁখা: সাদা চুড়ি বিশেষ।
ধূসর: ছাই রঙা।
সকরুণ: বেদনাযুক্ত।
নিরুদ্দেশে: অজানার পথে।
হিম: ঠান্ডা।
নীড়: বাসা।
আরও দেখুন...