লেনদেন শনাক্তকরণ ও লিপিবদ্ধকরণ

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - কম্পিউটারাইজড অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম-১ - NCTB BOOK
Please, contribute to add content into লেনদেন শনাক্তকরণ ও লিপিবদ্ধকরণ.
Content

লেনদেন শনাক্তকরণ ও লিপিবদ্ধকরণ Identification and Recording of Transaction

ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত অনেক বৈচিত্র্যময় ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা অর্থের অঙ্ক ও আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনের মাপকাঠিতে বিশ্লেষণ করে আর্থিক ঘটনা চিহ্নিত করা হয়। আর্থিক ঘটনা থেকে লেনদেন চিহ্নিত করে ব্যবসায়ের হিসাব বইতে লিপিবন্ধ করা হয়। লেনদেন লিপিবদ্ধ করতে বিভিন্ন ব্যাবসায়িক দলিল যেমন- চালান, ডেবিট নোট, ক্রেডিট নোট ইত্যাদি সাহায্য করে।

এ অধ্যায় শেষে আমরা যা জানতে পারবো-

ঘটনা বিশ্লেষণ করে আর্থিক ও অনার্থিক ঘটনা, লেনদেন চিহ্নিতকরণ ও ব্যাবসায়িক দলিলসমূহ ।

Content added By

১.১ ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ ও আর্থিক ঘটনা চিহ্নিতকরণ Analysis of Events and Identification of Monetary Events

১.১ ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ ও আর্থিক ঘটনা চিহ্নিতকরণ Analysis of Events and Identification of Monetary Events

একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন অনেক ঘটনা ঘটে থাকে। যেমন : পণ্য ক্রয়, বিক্রয়, কর্মচারী নিয়োগ, বেতন প্রদান, দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি, কর্মচারীর অসুস্থতা ইত্যাদি। ব্যবসায়ের মালিকের ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক ঘটনা ঘটে থাকে। যেমন— ছেলের স্কুলের বেতন প্রদান, আয়কর প্রদান, নিকট আত্মীয়ের অসুস্থতা, আনন্দভ্রমণ ইত্যাদি। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ঘটনাগুলো হতে পারে আর্থিক বা অনার্থিক। আর্থিক ঘটনা অর্থের সাথে সম্পর্কিত এবং ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়। অনার্থিক ঘটনার সাথে অর্থের কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন— দুর্ঘটনায় কর্মচারীর আত্মীয় আহত হলো। অনার্থিক ঘটনায় ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার কোনো পরিবর্তনও হয় না। আর্থিক ঘটনাগুলোকেই মূলত লেনদেন হিসেবে গণ্য করা হয়। এসব লেনদেন বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন— অভ্যন্তরীণ লেনদেন, বাহ্যিক লেনদেন, নগদ লেনদেন, অনগদ লেনদেন, দৃশ্যমান লেনদেন, অদৃশ্যমান লেনদেন ইত্যাদি। এসব লেনদেন থেকে হিসাববিজ্ঞান তথ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পক্ষকে সরবরাহ করা হয়।

 

১.১.১ আর্থিক ঘটনা (Monetary Events) জনাব রহমান সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় শুরু করবেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ৫০,০০০ টাকা মূলধন বিনিয়োগ করে ব্যবসায় শুরু করলেন। মি. রহমানের চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় করার সিদ্ধান্তটি তার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তবে এক্ষেত্রে তার আর্থিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু ৫০,০০০ টাকা মূলধন বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। পাশাপাশি ঘটনাটিকে অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপ করা যাচ্ছে। অর্থাৎ কোনো একটি ঘটনার সাথে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। তাই বলা যায়, ৫০,০০০ টাকা মূলধন বিনিয়োগ ঘটনাটি একটি আর্থিক ঘটনা। অন্যদিকে, চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় শুরুর সিদ্ধান্ত কোনো আর্থিক ঘটনা নয়। সর্বোপরি যে ঘটনা অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য এবং ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় তাকে আর্থিক ঘটনা বলে অভিহিত করা হয়। আর্থিক ঘটনার অপরিহার্য শর্ত হলো: (১) অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য এবং (২) আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন। তাই আর্থিক ঘটনাগুলো অর্থের মূল্যে অর্থাৎ টাকা, ডলার ইত্যাদিতে পরিমাপযোগ্য হতে হবে এবং সেগুলো দ্বারা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হতে হবে। যেমন: ব্যবসায়ের জন্য পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, শ্রমিকদের মজুরি প্রদান, বেতন প্রদান, ব্যাংকে টাকা জমা, ব্যাংক থেকে উত্তোলন ইত্যাদি ।

১.১.২ অনার্থিক ঘটনা (Non-Monetary Events)

আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত অনেক ধরনের ঘটনা ঘটে এবং সেগুলোর সবই যে আর্থিক ঘটনা- তা কিন্তু নয়। আমাদের জীবনে এমন অনেক ঘটনা থাকে যা অর্থের অঙ্কে পরিমাপ করা যায় না, যদিও তা আমাদের কাছে মহামূল্যবান। যেমন- বাবা মায়ের আশীর্বাদ ও ভালোবাসা। যেমন- আসিফের ব্যবসায় উদ্যোগের কথা শুনে আসিফের মা বাবা তাকে আশীর্বাদ করলেন। এগুলো আসিফের জন্য মহামূল্যবান ঘটনা। কিন্তু যেহেতু এগুলো অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য নয় এবং আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় না- তাই এগুলোকে বলা হয় অনার্থিক ঘটনা।

সুতরাং, যেসব ঘটনা অর্থের সাথে সম্পর্কিত নয় এবং ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় না তাকে অনার্থিক ঘটনা বলে। কোন ঘটনা তখনই অনার্থিক ঘটনা বলে গণ্য হবে যখন তার নিম্নলিখিত দুটি

বৈশিষ্ট্য থাকবে না। যথা-

১. অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য। ২. আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন।

যেমন, আসিফের বন্ধু আসিফকে এসএমএস করে শুভেচ্ছা জানিয়েছে, এটি আসিফের জন্য অনেক বড় ঘটনা হতে পারে। কিন্তু যেহেতু এটি অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য নয় এবং আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় না, সুতরাং এটি অনার্থিক ঘটনা। পণ্য ক্রয়ের ফরমায়েশ, কর্মচারী নিয়োগ, কারো মৃত্যু ইত্যাদি অনার্থিক ঘটনা।

 

১.১.৩ আর্থিক ও অনার্থিক ঘটনার পার্থক্য (Difference between Monetary

Events and Non-Monetary Events) উপরের আলোচনা থেকে এটা সহজেই বোঝা যায়।

যে, আর্থিক ও অনার্থিক ঘটনার মধ্যে পার্থক্য দুটি

প্রশ্নের মাধ্যমে বের করা সম্ভব। যথা-

১. ঘটনাটি অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য কি না ।

২. ঘটনাটি আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় কি 

না। এই দুটি প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে সেটি আর্থিক ঘটনা আর যদি না হয় তাহলে সেটি অনার্থিক ঘটনা। অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য না হলে কোনো ঘটনা আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। সুতরাং, অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্যতাই কোন ঘটনা আর্থিক না অনার্থিক, সেটা বিবেচনার প্রধান মাপকাঠি।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, স্কয়ার গ্রুপ পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমি ৩০,০০,০০০ টাকা দিয়ে কিনলো এটি আর্থিক ঘটনা। কারণ এটি অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য এবং এতে স্কয়ার গ্রুপের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু, স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী মারা গেলেন- এটি স্কয়ার গ্রুপের জন্য অনেক বড় ঘটনা, তবে তা অনার্থিক ঘটনা। কারণ এ ঘটনা আর্থিক মূল্যে পরিমাপ করা যায় না।

 

১.১.৪ লেনদেনের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Transaction )

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে দৈনন্দিন অসংখ্য ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার কিছু আর্থিক ঘটনা এবং কিছু অনার্থিক ঘটনা। আর্থিক ঘটনা তথা অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য ও আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় এমন ঘটনাই হলো লেনদেন। লেনদেনের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, সীমাবদ্ধতা ও ব্যবসায়ের সার্বিক অবস্থার ভিত্তিতে লেনদেনের শ্রেণিবিভাগ নিম্নরূপ :

উদ্দেশ্যভিত্তিক লেনদেন (Transactions based on oobjectivbjective): লেনদেনের উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি। করে লেনদেনসমূহ তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

১. ব্যবসায়িক লেনদেন (Business transactions) মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কিত ঘটনাকে ব্যবসায়িক লেনদেন বলে। যেমন : পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয়, বেতন প্রদান,ভাড়া প্রদান ইত্যাদি

২. অব্যবসায়ী লেনদেন (Non-business transactions) : মুনাফা অর্জনের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়, এমনলেনদেনকে অব্যবসায়ী লেনদেন বলে। যেমন: মসজিদে দান, গরিবকে ভিক্ষা প্রদান ইত্যাদি।

প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক লেনদেন (Transactions based on Organization) : প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক লেনদেনগুলোকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

১. অভ্যন্তরীণ লেনদেন (Internal transactions) : যেসব আর্থিক ঘটনা তৃতীয় পক্ষের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় বরং প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতি ও সিদ্ধান্তের কারণে সৃষ্ট, তাকে অভ্যন্তরীণ লেনদেন বলে। যেমন: স্থায়ী সম্পদের অবচয় / অবলোপন, ব্যবসায়ের বিভিন্ন তহবিলে স্থানান্তর, ক্রয়কৃত পণ্য মনিহারি হিসেবে ব্যবহার ইত্যাদি।

২. বাহ্যিক লেনদেন (External transactions) : প্রতিষ্ঠানের বাইরের বা তৃতীয় পক্ষের সাথে সংঘটিত লেনদেনকে বাহ্যিক লেনদেন বলে। যেমন : পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, ঋণ গ্রহণ, কর্মচারীর বেতন প্রদান ইত্যাদি।

গ. অর্থ আদান-প্রদান ভিত্তিক লেনদেন (Transactions based on monetary terms ) : অর্থ আদান- প্রদানের ভিত্তিতে লেনদেনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : 

 নগদ লেনদেন (Cash transactions ) : যেসব লেনদেন সংঘটিত হওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থের পরিবর্তন ঘটে, তাকে নগদ লেনদেন বলে। যেমন: নগদে আসবাবপত্র ক্রয়, নগদে মাল বিক্রয় ইত্যাদি। তবে হিসাববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে নগদ বলতে ব্যাংকে জমা, মুদ্রা ও কাগজি টাকাকে বোঝায়।

ধারে লেনদেন (Credit transactions) : পণ্যদ্রব্য, সেবা ও সম্পদ বাকিতে ক্রয়-বিক্রয় করাকে ধারে লেনদেন বলে। যেমন: ধারে পণ্য ক্রয়, ধারে পণ্য বিক্রয়, ধারে আসবাবপত্র ক্রয় ইত্যাদি।

 অনগদ লেনদেন (Non-cash transactions ) : যে লেনদেনের ফলে নগদ অর্থের আদান-প্রদান হয় না এবং ভবিষ্যতেও স্বাভাবিকভাবে কোন প্রকার নগদ প্রাপ্তি বা প্রদান হবে না তাকে অনগদ লেনদেন বলে। যেমন: স্থায়ী সম্পদের অবচয়, সুনাম/ ইজারা সম্পদের অবলোপন, সম্পদ বিক্রয়ের ক্ষতি ইত্যাদি।

ঘ. দৃশ্যমানতা ভিত্তিক লেনদেন (Transactions based on visibility): দৃশ্যমানতার ভিত্তিতে লেনদেনসমূহকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা

১. দৃশ্যমান লেনদেন (Visible transactions) : যেসব লেনদেন চোখে দেখা যায়, তাকে দৃশ্যমান লেনদেন বলে। যেমন : পণ্য ক্রয়, বেতন প্রদান, ভাড়া প্রদান ইত্যাদি। অদৃশ্যমান লেনদেন (Invisible transactions) যেসব লেনদেন চোখে দেখা যায় না, তাকে অদৃশ্যমান লেনদেন বলে। যেমন: স্থায়ী সম্পত্তির অবচয়, সুনাম ব্রুয়, ইজারা সম্পদের অবলোপন ইত্যাদি।

উপযোগিতা ভিত্তিক লেনদেন (Transactions based on utility) উপযোগিতার ভিত্তিতে লেনদেনকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা 

১. মূলধন জাতীয় লেনদেন (Capital transactions ) : যেসব লেনদেনের দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল বিদ্যমান সেসব লেনদেনকে মূলধন জাতীয় লেনদেন বলে। মূলধন জাতীয় লেনদেনের উপযোগিতা একাধিক বছর বিদ্যমান থাকে। যেমন: ভূমি ক্রয়, যন্ত্রপাতি ক্রয়, সুনাম ব্রুয়, যন্ত্রপাতির সংস্থাপন ব্যয় ইত্যাদি ।

২. মুনাফা জাতীয় লেনদেন (Revenue transactions) : যেসব লেনদেনের স্বল্পমেয়াদি ফলাফল বিদ্যমান সেসব লেনদেনকে মুনাফা জাতীয় লেনদেন বলে। মুনাফা জাতীয় লেনদেনের উপযোগিতা একটি আর্থিক বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। যেমন: ভাড়া প্রদান, বিনিয়োগের সুদ, পণ্য ক্রয়, বাটা প্রদান ইত্যাদি। তাই বলা যায়, লেনদেনসমূহকে তাদের ধরন ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।

 

১.১.৫ হিসাববিজ্ঞান তথ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা (Concept of Accounting Information Systems)

হিসাববিজ্ঞানকে তথ্য ব্যবস্থা (Information systems) হিসেবে অভিহিত করা হয়। ব্যবসায়ের হিসাব বিভাগ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যাবলি সংক্রান্ত যেসব বিবরণী প্রস্তুত করে এবং যথাযথভাবে প্রকাশ করে তাকে হিসাব তথ্য বলে। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যের সামগ্রিক চিত্র আর্থিক বিবরণীর মাধ্যমে ব্যবসায়ের সাথে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের কাছে তুলে ধরা হয়। পক্ষগুলো হিসাব তথ্য ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। হিসাব তথ্যের ব্যবহারকারী পক্ষসমূহকে নিচে ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো :

অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারী (Internal Users): যেসব ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের ভিতরে অবস্থান করে তাদেরকে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারী বলে। অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারীরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহনে হিসাব তথ্য ব্যবহার করে। যেমন— মালিক, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক ও হিসাব সংরক্ষণ বিভাগ ইত্যাদি।

১. মালিক পক্ষ (Proprietor): মুনাফা অর্জনই ব্যবসায়ের মুখ্য উদ্দেশ্য। মালিক পক্ষ তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর অর্জিত মুনাফার হার ও তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্যাদি জানতে আগ্রহী। হিসাব সংক্রান্ত তথ্যাদি থেকে তারা এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করতে পারে।

২. ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (Management Authority): ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের আর্থিক তথ্যের প্রয়োজন হয়। এসব তথ্য ব্যবস্থাপকগণকে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নে সাহায্য করে থাকে।

৩. অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক (Internal Auditor): অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে হিসাববিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করে থাকেন।

৪. হিসাব সংরক্ষণ বিভাগ (Accounts Department): হিসাব সংরক্ষণ বিভাগ হিসাব তথ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারকারী বিভাগ হিসেবে কাজ করে থাকে।

বাহ্যিক ব্যবহারকারী (External Users): হিসাব তথ্যের বাহ্যিক ব্যবহারকারীরা প্রতিষ্ঠানের বাইরে অবস্থান করে। এসব ব্যবহারকারীরা প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক কি না তা জানার জন্য হিসাব তথ্য ব্যবহার করে। যেমন— দেনাদার, পাওনাদার, বিনিয়োগকারী, ভোক্তা, সরকার, গবেষক, ঋণদানকারী, বাহ্যিক নিরীক্ষক, কর কর্তৃপক্ষ এবং স্টক এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি।

১. সরকার (Government): সরকার প্রতিষ্ঠানের আয়, বিক্রয় ইত্যাদির ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন প্রকার করারোপ করে থাকে। হিসাব তথ্য সরকারকে বিভিন্ন ধরনের করারোপে সাহায্য করে থাকে। ২. ঋণদানকারী (Lender): অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহের জন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ঋণদাতার ওপর নির্ভর করে। ঋণদাতা ঋণদানের পূর্বে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী পরীক্ষা করে ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা যাচাই করে দেখতে চান।

৩. বিনিয়োগকারী (Investors): বিনিয়োগকারীগণ কোনো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পূর্বে ওই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেন।

৪. ভোক্তা (Customers): ভোক্তা স্বার্থ সঠিকভাবে রক্ষিত হয়েছে কি না তা জানার জন্য ভোক্তাগণ হিসাব তথ্য ব্যবহার করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পণ্যটি মানসম্মত এবং ন্যায্যমূল্যের কি না তা জানার জন্য ভোক্তা হিসাব তথ্য ব্যবহার করে।

৫. গবেষক (Researchers): প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিচ্ছবি। তাই গবেষকগণ

হিসাব সংক্রান্ত তথ্য ব্যবহার করে গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের মান উন্নয়নে সাহায্য করে থাকে। 

৬. বণিক সমিতি (Chamber of Commerce): বণিক সমিতি হিসাব তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানতে পারে। সমিতির সদস্যদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য হিসাববিজ্ঞান তথ্য ব্যবহার করে। আবার হিসাব তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে বণিক সমিতির চাঁদা নির্ধারণ ও চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। 

৭. জনগণ (General Public): সমাজের জনগণ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানার জন্য হিসাব তথ্য

ব্যবহার করে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না এবং অদক্ষ পরিচালনার জন্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে কি না ইত্যাদি বিশ্লেষণের জন্য জনসাধারণ হিসাব তথ্য ব্যবহার করে। 

৮. পাওনাদার (Creditors): ধারে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে পাওনাদার সৃষ্টি হয়। পাওনাদার ধারে পণ্য বিক্রয় করবে কি না সে সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে প্রতিষ্ঠানের হিসাবপত্র পরীক্ষা করেন।

 

৯. বাহ্যিক নিরীক্ষক (External Auditor) : প্রতিষ্ঠানের হিসাবপত্র যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হিসাবে ভুল ও জালিয়াতি উদ্ঘাটন করা এবং ভবিষ্যতে ভুলত্রুটি নিবারণের পরামর্শ দেওয়া হলো বাহ্যিক নিরীক্ষকের দায়িত্ব। এসব কার্যসম্পাদনের জন্য বাহ্যিক নিরীক্ষকের প্রয়োজন হিসাব সংক্রান্ত তথ্য।

১০. স্টক এক্সচেঞ্জ (Stock Exchange): পুঁজিবাজারের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে স্টক এক্সচেঞ্জ পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এবং যেকোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানার জন্য হিসাব তথ্য ব্যবহার করতে পারে।

হিসাব তথ্যের উপর্যুক্ত ব্যবহারকারী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় ব্যবহারকারীর কাছে হিসাব তথ্যের ব্যবহার ও উপযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সব ব্যবহারকারীই তার অবস্থানে থেকে এবং তার প্রয়োজন মতো তথ্য ব্যবহার করে।

Content added || updated By

১.২ লেনদেন চিহ্নিতকরণ ও লিপিবদ্ধকরণ Identification and Recording of Transaction

লেনদেন চিহ্নিতকরণ ও লিপিবদ্ধকরণ

Identification and Recording of Transaction

নীলা চৌধুরী 'চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ' নামে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার ব্যবসায়ের নিয়মিত লেনদেনগুলো হলো পণ্য য়, বিক্রয়, নগদ প্রাপ্তি, নগদ প্রদান, বিভিন্ন খুচরা খরচ, বেতন প্রদান ইত্যাদি। এসব লেনদেন সম্পন্ন করতে নীলা চৌধুরী বিভিন্ন নথি (চালান, ডেবিট নোট, ক্রেডিট নোট, রেমিটেন্স অ্যাডভাইস) ব্যবহার করেন। এসব নথি লেনদেনের প্রামান্য দলিল হিসেবে কাজ করে এবং লেনদেন লিপিবদ্ধকরণে সাহায্য করে। হিসাব তথ্যের ব্যবহারকারীরা লেনদেনের প্রাসঙ্গিকতা ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রত্যাশা করে। এজন্য অ্যাকাউন্টিং ডেটাকে প্রাসঙ্গিক, বস্তুনিষ্ঠ, বিশ্বাসযোগ্য, বোধগম্য, তুলনাযোগ্য, যাচাইযোগ্য ও সময়মত প্রকাশ করতে হয়। অ্যাকাউন্টিং ডেটা স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় তার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করাও খুবই জরুরী।

 

১.২.১ ব্যবসায়ের লেনদেনের বিষয়গুলির বর্ণনা (Description of Business Transactions )

■ ক্রয় (Purchase) : বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রীত পণ্যসামগ্রীকে ক্রয় বলা হয়। একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন জিনিস, যেমন কাঁচামাল, স্টেশনারি দ্রব্য সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ক্রয় করে। ক্রয় দুভাবে হতে পারে। যথা- নগদে ক্রয় (Cash purchase): এক্ষেত্রে পণ্য ক্রয়ের সাথে সাথে মূল্য পরিশোধ করা হয়। বাকিতে ক্রয় (Credit purchase): এক্ষেত্রে পণ্য ক্রয়ের সাথে সাথে নয়, বরং কিছুদিন পর মূল্য পরিশোধ করা হয়।

বিক্রয় (Sale) একটি ব্যবসায়ের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে পণ্য বিক্রয় বা সেবা প্রদান, যেখান থেকে

ব্যবসায় অর্থ উপার্জন করে থাকে। উৎপাদিত পণ্য অথবা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে ক্রীত পণ্যসামগ্রী বিক্রি

করাই হলো বিক্রয়। যেমন- তামান্না ফার্মা কর্তৃক ঔষধ বিক্রয় ১০,০০০ টাকা। এ বিক্রয় দুভাবে হতে পারে। যথা- নগদে বিক্রয় এবং ধারে বা বাকিতে বিক্রয়। নগদে বিক্রয় (Cash sale): এক্ষেত্রে পণ্য বিক্রয়ের সাথে সাথে প্রাপ্য অর্থ পাওয়া যায়। বাকিতে বিক্রয় (Credit sale): এক্ষেত্রে পণ্য বা সেবা সরবরাহের একটি নির্দিষ্ট সময় পর অর্থ পাওয়া

সেবা আয় (Service income) সেবা বা পেশাগত পরামর্শের মাধ্যমে উপার্জিত আয়কে সেবা আয় বলে। যেমন: আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী এদেরকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্জিত আয় । পরিবহন কোম্পানির আয়, ট্যাক্সি চালক, রিকশা চালক, বিনোদন সংস্থা, নৃত্যশিল্পী, গায়ক, বাদক এদের আয় সেবা আয় অন্তর্ভুক্ত।

#ক্রয় ফেরত (Purchase return) ক্রীত পণ্য চাহিদা অনুযায়ী না হলে, আংশিক নষ্ট হলে, ত্রুটিপূর্ণ

হলে, নিম্নমানের হলে সরবরাহকারীকে ফেরত দেওয়া হয়। একে রুমা ফেরত বলে। বিক্রয় ফেরত (Sales return) কোনো পণ্য বিক্রয় করার পর ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী না হলে, সাধারণত নষ্ট হলে, ত্রুটিপূর্ণ হলে, নিম্নমানের হলে ক্রেতা সে পণ্য ফেরত দিতে পারেন। একে বিক্রমা ফেরত বলে।

প্রাপ্তি (Receipt) পণ্য নগদ বিক্রয় করে, মালিক মূলধন বিনিয়োগ করলে, দেনাদার থেকে আদায়

হলে, ঋণ গ্রহণ করলে, পুরাতন সম্পদ বিক্রয় ইত্যাদি মাধ্যম থেকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থের প্রাপ্তি ঘটে।

# প্রদান (Payment) পণ্য নগদে ক্রয়, পাওনাদারকে পরিশোধ, ভাড়া পরিশোধ, বেতন পরিশোধ, মনিহারি ব্রুয়, বিজ্ঞাপন খরচ প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে নগদ অর্থ প্রদান করতে হয়। বেতন (Salary) একটি ব্যবসায়ের কাজ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরণের শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর প্রয়োজন হয়। তাদেরকে মাসিক ভিত্তিতে যে অর্থ দেওয়া হয় সেটাই বেতন। একটি ব্যবসায়ের মাসিক খরচের একটা বড় অংশ শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন ও মজুরি দিতে চলে যায়।

খুচরা নগদ (Petty cash) : আসিফ অফিসের হিসাব থেকে ৫০ টাকা খরচ করে অফিসের কাজের জন্য কলম কিনলো। এই লেনদেন কি সরাসরি হিসাবের বইতে আলাদা হিসাব তৈরি করে তারপর লিখতে হবে? ব্যবসায়ে প্রতিনিয়ত এরকম ছোট ছোট খরচ হতে থাকে বিভিন্ন কাজে। এগুলোকে মূল হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করলে অযথাই হিসাবের বই এর কলেবর বৃদ্ধি পাবে। আর যদি একেবারেই হিসাবে না লেখা হয়, তাহলে আয় ব্যয়ের সঠিক অবস্থা বোঝা সম্ভব হবে না। সেজন্য এসব ছোট ছোট খরচকে খুচরা নগদ হিসাব নামে একটি হিসাবের অধানে লেখা হয়। খুচরা নগদ হিসাবে মাসের একটি নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট। পরিমাণ টাকা জমা করা হয় এবং মাস শেষে খরচের হিসাব নিয়ে খরচকৃত অর্থ আবার জমা করা হয়।

১.২.২ ব্যবসায়ের বিভিন্ন নথির উদ্দেশ্য এবং উপাদানের বিবরণ (Objective of Various Business Documents and Description of Elements) 

আসিফ তার পড়ালেখার কাজে ব্যবহারের জন্য পিসি হাউজ থেকে একটি ল্যাপটপ ক্রয় করে। পিসি হাউজ থেকে আসিফকে একটি কাগজ দেওয়া হয় যাতে তার নাম ঠিকানা মোবাইল নম্বরসহ ল্যাপটপ এর মডেল নম্বর, মূল্য এবং বিক্রয়ের তারিখ উল্লেখ আছে। আসিফ যখন জিজ্ঞেস করে এটা কি, সেলসম্যান তাকে বলেন যে এটির নাম চালান ।

প্রতিনিয়ত ব্যবসায়িক কাজে বিভিন্ন প্রকারের নথিপত্র এবং দলিল ব্যবহৃত হচ্ছে। চালান, ডেবিট নোট, ক্রেডিট নোট, রেমিটেন্স অ্যাডভাইসসহ আরও বিভিন্ন রকমের দলিল ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বেশিরভাগ দলিল কম্পিউটারে প্রস্তুত হবার কারনে সময় কম লাগে এবং ভুলের আশঙ্কা কম থাকে।

চালান (Invoice)

চালান হলো পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের প্রামাণ্য দলিল। এই দলিল কোনো কিছু বিক্রয় করলে বিক্রেতা ক্রেতাকে সরবরাহ করে এবং এক কপি নিজের কাছে সংরক্ষণ করে। এর উদ্দেশ্য বিক্রয়ের হিসাব সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা। এই দলিলে ক্রেতা-বিক্রেতার নাম ও ঠিকানা, ক্রমিক নম্বরসহ পণ্যের বিবরণ, পণ্যের পরিমাণ, মূল্য, মোট পরিমাণ, ভ্যাট, ধারে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মূল্য পরিশোধের শর্ত এবং বিক্রয়ের তারিখ উল্লেখ করা হয়। পণ্য/সেবা সরবরাহকারীর কাছে এটি বিক্রয় চালান এবং ক্রেতার কাছে এটি ব্রুয় চালান বলে গণ্য হয়। ভ্যাট নিবন্ধিত বিক্রেতা হলে তাকে অবশ্যই মূসক-৬.৩ ফরম্যাট অনুসরণ করে চালান প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করতে হয়।

ডেবিট নোট (Debit note) কোন পণ্য ক্রয় করার পর ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী না হলে, নিম্নমানের হলে, নষ্ট হলে, ত্রুটিপূর্ণ হলে ক্রেতা সে পণ্য ফেরত দিতে পারেন। এক্ষেত্রে ক্রেতা বিক্রেতাকে ডেবিট নোট প্রদান করার মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন। যে, তার হিসাবটি ফেরত পণ্যের জন্য ডেবিট করা হয়েছে। ডেবিট নোটে বিক্রেতার পূর্ণাঙ্গ তথ্য, ফেরত পণ্যের পরিমাণ, দর, মূল্য, শর্ত, পণ্য ফেরতের তারিখ ও কারণ অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

ক্রেডিট নোট (Credit note)

ক্রেতার নিকট থেকে ডেবিট নোট পাওয়ার পর বিক্রেতা সেটি নিজের হিসাব বইতে বিক্রয় ফেরত হিসেবে লিপিবদ্ধ করবেন এবং ক্রেতাকে মালের পূর্ণ বিবরণ যথা: মালের পরিমাণ, দর, মূল্য সংবলিত একটি ক্রেডিট নোট প্রদান করবেন। এর উদ্দেশ্য হলো ক্রেতাকে নিশ্চিত করা যে তার হিসাবটি বিক্রেতার বইতে উক্ত ফেরত পণ্যের মূল্য দ্বারা ক্রেডিট করা হয়েছে।রেমিটেন্স অ্যাডভাইস (Remittance advice) বর্তমান যুগে অনেক লেনদেন অটোমেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পাদিত হচ্ছে। কম্পিউটারাইজড হিসাবের একটি বড় দলিল হচ্ছে রেমিটেন্স অ্যাডভাইস। এই দলিলের মাধ্যমে ক্রেতা বিক্রেতাকে জানিয়ে দেয় যে, চালানের মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতার নাম ও ঠিকানা, পরিশোধের পদ্ধতি, টাকার পরিমাণ, পরিশোধের তারিখ, চালানের নাম্বার ও তারিখ উল্লেখ থাকে।

১.২.৩ লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ (Recording of Transaction)

আসিফের দোকান থেকে এক ব্যক্তি একটি সাইকেল ৫,০০০ টাকা দিয়ে ক্রয় করলো। আসিফ বিদ্যুৎ বিল দিল ১,০০০ টাকা। নিজের খরচের জন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে নিল ১,০০০ টাকা। সে বুঝতে পারছে না কিভাবে সে লেনদেনগুলো সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করবে। লেনদেন সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করতে হলে হিসাব সমীকরণ এবং ডেবিট ক্রেডিট সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা আবশ্যক।

একটি ব্যবসায়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রকারের লেনদেন হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু লেনদেন ব্যবসায়ের প্রকৃতির কারণে বার বার হয়। যেমন- পণ্য বা সেবা ক্রয়, পণ্য বা সেবা বিমা এগুলো ব্যবসায়ের প্রধান কাজ। এছাড়াও আছে ভাড়া পরিশোধ, বেতন পরিশোধ এবং খুচরা নগদ লেনদেনের ব্যাপার, যেমন- ষ্টেশনারি দ্রব্য ক্রয়, চা-নাশতার খরচ ইত্যাদি।কোনো লেনদেন ঘটার পর সেটি প্রাথমিক বইতে লিপিবদ্ধ Assets (H) করা হয়। সেখান থেকে জাবেদা বা জার্নাল এন্ট্রি দেওয়া Expenses () ডেবিট প্রেডিউ হয়, জানাল এন্ট্রি থেকে সংশ্লিষ্ট খতিয়ান বা লেজারে পোস্টিং দেওয়া হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে লেজারের জের বা ব্যালেন্সগুলো নিয়ে রেওয়ামিল বা ট্রায়াল ব্যালেন্স তৈরি করা হয় এবং এরপর ব্যবসায়ের আর্থিক বিবরণী বা ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট তৈরি করা হয়।

 

১.২.৪ অ্যাকাউন্টিং ডেটার বৈশিষ্ট্য এবং অ্যাকাউন্টিং ডেটা রেকর্ডের উৎসগুলো চিহ্নিতকরণ (Characteristics of Accounting Data and Identification of the Sources of Data) অ্যাকাউন্টিং ডেটার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of accounting data)

হিসাব রাখার কাজটি সঠিক ও নির্ভরযোগ্যভাবে সম্পাদন করতে হিসাবরক্ষণে ব্যবহৃত তথ্যকে সঠিক, সামঞ্জস্যপূর্ণ, স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ছাড়াও আরও বিবিধ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হতে হবে। হিসাব তথ্যের গুণাবলি বা

বৈশিষ্ট্য নিচে ছকে উল্লেখ করা হলো—ক. মৌলিক গুণাবলি (Fundamental qualities) :

১. প্রাসঙ্গিকতা (Relevance): প্রাসঙ্গিকতা হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করার সক্ষমতা। এক্ষেত্রে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বস্তুনিষ্ঠতা, পূর্বাভাস মূল্য ও নিশ্চিতকরণ মূল্য। পূর্বে ধারণকৃত তথ্যসমূহ অবশ্যই ভবিষ্যত বাস্তবতার সাথে মিল থাকতে হবে। তাছাড়া তথ্যগুলো যে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা নিশ্চিত করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। পাশাপাশি তথ্যসমূহের এমন প্রভাব থাকতে যেখানে এর অভাবে বা ত্রুটিপূর্ণতায় তথ্য ব্যবহারকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে এর কোনো প্রভাব না থাকে। প্রাসঙ্গিক তথ্যের উপাদান :

পূর্বাভাস মূল্য: আর্থিক তথ্যের পূর্বাভাস মূল্য থাকে যদি বিনিয়োগকারী তথ্য থেকে ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা পূর্বানুমান করতে পারে।

নিশ্চিতকরণ মূল্য : আর্থিক তথ্য যদি পূর্বের প্রত্যাশা নিশ্চিত করে বা সংশোধন করতে পারে তবে তথ্যের নিশ্চিতকরণ মূলা আছে বলা যায়।

বস্তুনিষ্ঠতা : আর্থিক তথ্য বস্তুনিষ্ঠ হবে যদি তথ্যের বাদ পড়া বা ভুল বিবৃতি সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করে।

২. বিশ্বাসযোগ্যতা (Faithful Representation) : সংখ্যা ও বর্ণনা অবশ্যই বাস্তবিকভাবে সংঘটিত তথ্যের অনুরূপ হবে। তাছাড়া তথ্যগুলো পূর্ণাঙ্গ, নিরপেক্ষ ও ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের উপাদান :

পূর্ণাঙ্গতা পূর্ণাঙ্গতা বলতে প্রয়োজনীয় সব তথ্য সরবরাহ করাকে বোঝায়।

নিরপেক্ষতা নিরপেক্ষতা অর্থ কোনো প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট কোনো পক্ষকে বিশেষ সুবিধা নিতে কোনো তথ্য নির্বাচন করতে পারবে না। ত্রুটিমুক্ত আর্থিক তথা বিশ্বাসযোগ্য হতে ভুলত্রুটি মুক্ত হতে হবে।

খ. আকর্ষণবর্ধক গুণাবলি (Eahrancing qualities)

১. তুলনাযোগ্যতা (Comparability) যেসব কোম্পানি আর্থিক হিসাব নীতি ও মান অনুসরণ করে তাদের আর্থিক বিবরণীর বিভিন্ন উপাদানসমূহ পরস্পর তুলনীয় হতে হবে। তাছাড়া একই কোম্পানির বিভিন্ন বছরের আর্থিক বিবরণীর মধ্যে তুলনাযোগ্যতা থাকতে হবে। তাছাড়া একই কোম্পানির বিভিন্ন বছরের আর্থিক বিবরণীর মধ্যে তুলনাযোগ্যতা থাকতে হবে। এর ফলে হিসাব তথ্য ব্যবহারকারীরা সহজেই তুলনা করে কোম্পানির সবল ও দুর্বল দিক নির্ণয় করতে পারবে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।

 ২. যাচাইযোগ্যতা (Verifiability) যখন কোনো নিরপেক্ষ নিরীক্ষক কোম্পানির আর্থিক বিবরণী পাবে তখন তা যাচাইযোগ্য হতে হবে।

৩. সময়ানুবর্তিতা (Timeliness) : হিসাব তথ্যসমূহ ব্যবহারকারীদের নিকট যথাসময়ে সরবরাহ করতে হবে। যেমন— কর পরিশোধের জন্য আর্থিক বছরের শেষদিকে হিসাব তথ্যসমূহ প্রস্তুত রাখতে হবে এবং সরকারকে সরবরাহ করতে হবে। এভাবেই প্রতিষ্ঠানের মালিক, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, হিসাব নিরীক্ষককে তাদের কাঙ্ক্ষিত সময়ে হিসাব তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। 

৪. বোধগম্যতা (Understandability): আর্থিক বিবরণীর হিসাব তথাসমূহকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে তথ্যগুলো তথ্যের ব্যবহারকারীদের নিকট সহজেই বোধগম্য হয়। তথ্যের ব্যবহারকারীদের জ্ঞানের সীমার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তথ্যকে উপস্থাপন করতে হবে।

অ্যাকাউন্টিং ডেটা রেকর্ডের উৎসগুলো চিহ্নিতকরণ (Identification of the sources of accounting data)

অক্ষর ফার্মা অডিট করতে এনবিআর থেকে একজন কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি অক্ষর ফার্মার মোট বিক্রয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে অক্ষর ফার্মা থেকে তাকে বিক্রয়ের অঙ্ক এবং চালানসমূহ দেওয়া হলো। তিনি দেখতে পেলেন যে, অনেক ক্ষেত্রে ভ্যাট পরিশোধিত হয়নি আবার ক্রেডিট নোট পরীক্ষা করে দেখা গেলো যে, বিক্রয় ফেরত ১,০০,০০০ এর জায়গায় ১,৫০,০০০ দেওয়া আছে।

অ্যাকাউন্টিং ডেটা রেকর্ডের উৎসগুলি সম্পর্কে নিচে বর্ণিত হলো- 

১. চালান (Invoice) প্রতিটি পণ্য বিক্রয়ের সময় বিক্রেতা চালান সরবরাহ করে ক্রেতাকে এবং তার কপি নিজের কাছে সংরক্ষণ করে। ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হলে মূসক ৬.৩ এর ফরম্যাট অনুযায়ী চালান সরবরাহ করতে হয়। চালান মোট বিক্রয়, বাটা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে।

২. ডেবিট নোট (Debit note): এটি ব্রুয় ফেরতের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ব্রুয় ফেরতের পরিমাণ, যাকে ফেরত দেওয়া হয়েছে সেই সরবরাহকারীর তথ্য এবং ফেরতের কারণ সম্পর্কে জানা যায়।

৩. ব্রুয় আদেশ (Purchase order): এটি থেকে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরণের রুয়ের সঠিকতা এবং সরবরাহকারী সম্পর্কে জানা যায়।

১.২.৫ ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয়তা মেটাতে ব্যবহারকারীরা কীভাবে অ্যাকাউন্টিং ডেটা রেকর্ডগুলি চিহ্নিত করে, প্রদর্শন করে এবং তা পরীক্ষা করে এবং ডেটা এন্ট্রি কীভাবে মোকাবিলা করা হয় তার বর্ণনা (Description of How Users Identify, Show and Examine Accounting Data to Meet up their Necessity and How to Deal Data Entry) 

আরিফ অরিয়ন ফার্মার মধ্যম পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা। সে বছর শেষে অরিয়ন ফার্মার অ্যাকাউন্টিং ডেটা দেখে বুঝতে পারে যে, কোম্পানি ভালই লাভ করছে। সে সিদ্ধান্ত নেয় যে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বৃদ্ধির দাবি তুলবে। অন্যদিকে, বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ অরিয়ন ফার্মার আর্থিক বিবরণী দেখে সন্তুষ্ট হয়ে টিকা তৈরি করতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। অ্যাকাউন্টিং ডেটা রেকর্ডের দুই ধরণের ব্যবহারকারী থাকে-

১. অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারী (Internal users): একটি কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ অ্যাকাউন্টিং ডেটা ব্যবহার করে বিভিন্ন ট্রেড সম্পর্কে জানতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

২. বাহ্যিক ব্যবহারকারী (External users) : এ ধরণের ব্যবহারকারীগণ কোম্পানির বাইরে অবস্থান করে এবং নিজের স্বার্থে কোম্পানির ডেটা ব্যবহার করে। যেমন- সরকারি কর এবং ভ্যাট ঠিক মতো দেওয়া হচ্ছে কি না, সেটা এনবিআর যাচাই করে। বিনিয়োগকারীগণ কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আর্থিক বিবরণী থেকেই ধারণা নেবার চেষ্টা করেন। অডিটরগণ প্রতিটি ডেটা পরীক্ষা করে রিপোর্ট প্রদান করেন।

চালান থেকে মোট ক্রয় এবং ভ্যাট পরিশোধের সঠিকতা, ক্রেডিট নোট থেকে বিক্রয় ফেরতের সঠিকতা এবং ফেরত প্রদানকারী ক্রেতা সম্পর্কে ধারণা লাভ, ডেবিট নোট থেকে ব্রুয় ফেরতের সত্যতা এবং কারণ, নগদান বই বা ক্যাশ বুক থেকে নগদ প্রাপ্তি ও প্রদানের হিসাব, রেমিটেন্স অ্যাডভাইস থেকে খরচ সম্পর্কে ধারনা এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে প্রতিষ্ঠানের মোট আয় এবং খাতভিত্তিক খরচ সম্পর্কে বাহ্যিক ব্যবহারকারীগণ ধারণা নিতে পারেন। এক্ষেত্রে কোম্পানির কাজ হচ্ছে সঠিকভাবে ডেটা ইনপুট দেওয়া এবং প্রতিটি ডেটা ইনপুট দেওয়ার সাথে সাথে তার সপক্ষে প্রমাণ সংরক্ষণ করা। তাহলে পরবর্তীতে ব্যবহারকারীগণ চাইলেই প্রয়োজনীয় ডেটা দেওয়া সম্ভব হবে এবং কোন সমস্যা হবে না।

১.২.৬ ডেটা নিরাপত্তা, ডেটা সুরক্ষা পদ্ধতি এবং ডেটা সংরক্ষণের ঝুঁকি বিশ্লেষণ (Risk Analysis of Data Security, Data Security Method and Data Storage) অনিক একটি সুপার শপ থেকে কিছু জিনিস কিনল। সেলসগার্ল বিল করার সময় মোবাইল নম্বর চাইলে অনিক নম্বর দিলো। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই তার মোবাইলে বিভিন্ন ভর্তি কোচিং, বইয়ের বিজ্ঞাপনের

মেসেজ আসতে থাকলো। অনিক আশঙ্কা করল যে ঐ সুপার শপের ডেটাবেজ হ্যাকিং হয়েছে কি না। কিছুদিন পর দেখা গেল তার আশঙ্কাই সত্যি। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি আমাদের অনেক কাজকে সহজ ও দ্রুত করেছে, কিন্তু একই সাথে অনেক নতুন সমস্যারও জন্ম দিয়েছে। যেমন- ডেটার নিরাপত্তা এবং সাইবার ক্রাইম এই সময়ে বড় ধরনের মাথাব্যাথা হয়ে দাড়িয়েছে। ভেটার নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ঝুঁকিসমূহ বিবেচনা করে কাজ করতে হবে।

১. হ্যাকিং (Hacking) : এটি এখন নিয়মিত শোনা যাচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে যে কোনো ভাবে ওয়েবসাইট এবং ডেটাবেজের নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে চলে যাওয়া।

২. ভাইরাস আক্রমণ (Virus attack) ডেটাবেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো না হলে এবং তা নিয়মিত আপডেট না করলে ভাইরাসের আক্রমণে ডেটাবেজ ধ্বংস হতে পারে অথবা ডেটা ফাঁস হয়ে যেতে পারে, যা কোম্পানির সুনামের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। 

৩. র‍্যানসমওয়্যার (Ransomware): এটি এক প্রকার ভাইরাস। হ্যাকাররা কোনভাবে এটি সিস্টেমে প্রবেশ করাতে পারলে সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং তা ফেরত দেবার জন্য মুক্তিপণ দাবি করে।

৪. ফিশিং (Phishing) এই ঘটনায় অবিকল একই রকম দেখতে কিন্তু নকল ওয়েবসাইট বানানো হয়। তারপর মানুষকে কৌশলে সেই ওয়েবসাইটে নিয়ে গিয়ে তাদের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে নেওয়া হয়।

৫. ম্যালওয়্যার (Malware): এটি এক ধরণের প্রোগ্রাম যা ভাইরাসের মতোই। কিন্তু নিজেই নিজের কপি তৈরি করে সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সিস্টেমের বিভিন্ন বিষয় পরিবর্তন করে দিতে পারে।

 ৬. ডেটা পাচার (Data laundering) এই কাজটি ভাইরাসের সাহায্য নিয়ে, হ্যাকিং করেও করা যায়। আবার দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের দিয়েও করা যায়। 

কারণ এখন একটি পেনড্রাইভেই অনেক মূল্যবান ডেটা নেওয়া সম্ভব এবং তা পাচার করাও সহজ, যদি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো না থাকে। 

ডেটা সুরক্ষার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে— 

১. লাইসেন্সকৃত এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। এতে সার্ভারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়। 

২. এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করতে হবে। এতে করে নতুন নতুন ভাইরাস, র‍্যানসমওয়্যার এবং ম্যালওয়্যারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।

৩. সার্ভার ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকলে লাইসেন্সকৃত ইন্টারনেট সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। 

৪. একাধিক স্থানে ডেটা ব্যাকআপ রাখা, যাতে একটি সার্ভার আক্রান্ত হলে সেটিকে দ্রুত নিষ্ক্রিয় করতে হলেও প্রতিষ্ঠানের কাজের এবং ডেটার ক্ষতি না হয়।

৫. সার্ভার রুমে সবার প্রবেশাধিকার না দেওয়া।

৬. সার্ভার রুমে পেনড্রাইভ বা পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে কাউকেই প্রবেশ করতে না দেওয়া।

৭. অফিসের কম্পিউটারে পেনড্রাইভ এবং অনিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং তা কঠোরভাবে প্রতিপালন করা।

৮. সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি সবসময় চালু রাখা।

এগুলো করার পাশাপাশি ডেটার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে দেশের আইনে প্রচলিত শান্তি সম্পর্কে কর্মীদের অবহিত করা গেলে ডেটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion