যদি কোনো কর্মস্থলে ঝুঁকি কী এবং কোথায় অবস্থিত বা কীভাবে আসতে পারে ইত্যাদি জানা থাকে এবং ঐ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার বাস্তবভিত্তিক প্রতিকার জানা থাকে এবং যদি তা যথাসময়ে প্রয়োগ করা হয়, তবে দুর্ঘটনা সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব। আইসিটি যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য নানা ধরণের প্রভাব ও কারণ কাজ করে। এ প্রভাবগুলোর কিছু প্রাকৃতিক, কিছু কৃত্রিম এবং কিছু ব্যবহারকারীর অদক্ষতা, অসাবধানতাজনিত। আইসিটি যন্ত্রপাতির ক্ষতিকারক নিয়ামকগুলো বৃহত্তর চারটি পরিসরে বিভক্ত করা যায়। যথা—
১. ভৌত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ।
২. বৈদ্যুতিক সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ।
৩. সফটওয়্যার সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ ।
৪. ব্যবহারকারীর ভুল পরিচালনা।
১. ভৌত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ
যে সমস্ত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ বাহ্যিক অবস্থা ও পরিবেশগত কারণে আইসিটি যন্ত্রপাতির ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেয়, তাদেরকে ভৌত ক্ষতিকারক নিয়ামক বলে । এগুলোর মধ্যে রয়েছে—
• ধুলাবালি ও ময়লা : বায়ুতে প্রচুর ধূলিকণা থাকে। যে কোন জিনিস এসব ধূলিকণা দ্বারা আক্রান্ত হয়। দুইটি বিশেষ কারণে কম্পিউটার ধূলাবালি দ্বারা আক্রান্ত হয়— তাপ এবং চুম্বক।
▪️ধূলিকণার তাপের প্রতি সহজাত আকর্ষণ রয়েছে। সচল অবস্থায় কম্পিউটার কিছুটা গরম থাকে বলে এতে প্রচুর ধূলা জমে।
▪️অত্যধিক তাপমাত্রা : স্বাভাবিক এবং সহনীয় তাপমাত্রা কম্পিউটারের জন্য ক্ষতিকর নয়। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চাহিদার কারণে পাওয়ার সাপ্লাই গরম হয়। এ অবস্থায় ইলেক্ট্রনিক সার্কিট নষ্ট হতে পারে বা সার্কিট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে কম্পিউটার বিকল হয়ে যেতে পারে।
▪️তরল পদার্থ ও আর্দ্রতা : আর্দ্রতা কম্পিউটারের কার্যক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। আর্দ্রতা খুব বেশি হলে কম্পিউটারের ভিতরে ব্যবহৃত চিপের পিনগুলোতে ময়লা ও ধূলাবালি জমে শর্ট সার্কিট হতে পারে।
• বিভিন্ন ধরনের নয়েজ : অনাকাঙ্ক্ষিত ভোল্টেজ, কারেন্ট, ডেটা এবং শব্দকে নয়েজ বলা হয়। নয়েজ প্রধানত তিন ধরনের- যথা : i) শাব্দিক নয়েজ, ii) কম্পিউটার ব্যবস্থার ক্ষতিকারক নয়েজ এবং iii) ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশের নয়েজ।
২. বৈদ্যুতিক সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ
যে সকল ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ বিদ্যুতের অনাকাঙ্ক্ষিত তাৎক্ষণিক অবস্থার কারণে সৃষ্টি হয়, তাদেরকে বৈদ্যুতিক সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামক বলে। বৈদ্যুতিক সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামকগুলো হলো-
• স্পাইক ও সার্জ : হঠাৎ করে অত্যন্ত ক্ষুদ্র সময়ের জন্য বৈদ্যুতিক শক্তি বেড়ে যাওয়াকে স্পাইক (Spike) বলা হয়। বৈদ্যুতিক বিভবের (Voltage) ক্ষণস্থায়ী বেড়ে যাওয়াকে সার্জ বলা হয়। বর্তমানে এই স্পাইক ও সার্জ থেকে কম্পিউটারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করার জন্য সার্জ প্রটেক্টর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
• ব্রাউনআউট : পরিকল্পিত বা অপরিকল্পিত কোন কারণে সরবরাহ ভোল্টেজ কমে যাওয়াকে, ব্রাউন আউট বলা হয়। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চাহিদা মিটানোর অক্ষমতার কারণে এ ঘটনা ঘটে।
▪️ব্ল্যাকআউট : হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়াকে ব্ল্যাকআউট বলা হয়। ঝড়, সুইচিং সমস্যা ইত্যাদির কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। ব্ল্যাকআউটের সময় র্যাম হতে তথ্য মুছে যায়। ব্লাকআউটের পর বিদ্যুৎ পুনরায় চালু হলেও সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে কম্পিউটার সচল করা উচিত।
▪️ট্রানসিয়েন্ট : বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন সৃষ্ট ভোল্টেজ বা কারেন্টের অপেক্ষাকৃত বড় ধরণের স্পাইককে ট্রানসিয়েন্ট বলা হয়। অনেক ট্রানসিয়েন্ট পাওয়ার সাপ্লাই দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে নিঃশেষ হয়। কিন্তু অনেক ট্রানসিয়েন্ট এ বাঁধা অতিক্রম করে কম্পিউটারের বর্তনীতে পৌঁছে। ফলে তথ্য মুছে যায় বা পরিবর্তিত হয়। আবার কখনও কখনও বর্তনী সম্পূর্ণ ভাবে বিকল হয়ে যায়।
▪️ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন বা ইএমআর (EMR): ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের ফলে অবাঞ্চিত দূষণ বা বিকিরিত রশ্মি কম্পিউটার এবং সংশ্লিষ্ট পণ্যের ক্ষতি সাধন করে। ইএমআর'কে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— ক) নিম্ন কম্পাংকের ইএমআর এবং খ) উচ্চ কম্পাংকের ইএমআর ইএমআর নয়েজের কম্পাংক যদি ১ হার্টজ থেকে ১০ কিলোহার্টজের মধ্যে হয় বলে তাকে নিম্ন কম্পাংকের ইএমআর বা আরএফআই (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ইন্টারফারেন্স) বলা হয়। আর ইএমআর নয়েজের কম্পাঙ্ক ১০ কিলোহার্টজের বেশি হলে তা উচ্চ কম্পাঙ্কের ইএমআর হিসেবে বিবেচিত।
জেনে রাখো: ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন হলো মহাবিশ্বের অনেকগুলি শক্তির মধ্যে একটা। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন একটি ত্বরিত বৈদ্যুতিক চার্জ সংশ্লিষ্ট বৈদ্যুতিক এবং চৌম্বক ক্ষেত্র থেকে উৎপন্ন। এটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ ধারণ করে, যা ইলেকট্রিক এবং চুম্বকীয় ক্ষেত্রের মাধ্যমে আলোর গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এটি রেডিও তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ, ইনফ্রারেড, দৃশ্যমান। আলো, অতিবেগুনী, এক্স-রে, এবং গামা রশ্মি অন্তর্ভুক্ত। |
---|
▪️ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফারেন্স বা ইএমআই
(EMI) : ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফারেন্স বা ইএমআই কম্পিউটারের ক্ষতি করতে পারে। বিভিন্ন উৎস থেকে ইএমআই নয়েজ সৃষ্টি হতে পারে। যেমন— ক. কলকারখানায় ব্যবহৃত যন্ত্র, খ. চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, গ. গবেষণা যন্ত্র, ঘ. ইলেকট্রিক মোটর, ঙ. ড্রিল মেশিন এবং চ. করাত কল ইত্যাদি।
🚻 শ্রেণির কাজ : নিচের ছকে কর্মক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহের একটি তালিকা আছে। এসব নিয়ামক দ্বারা সৃষ্ট সমস্যাগুলো লিখো ।
নিয়ামকসমূহ | সৃষ্ট সমস্যা |
---|---|
স্পাইক ও সার্জ | |
ব্ল্যাক আউট | |
ব্রাটন আউট | |
ইএমআর |
এছাড়া কম্পিউটার বর্তনীর খারাপ সোলডারিং, ঢিলা সংযোগ ইত্যাদির কারণেও ইএমআই উৎপন্ন হতে পারে। ইএমআই মূলত তিন প্রকার। যথা— ক. ট্রানসিয়েন্ট ইএমআই, খ. ইন্টারন্যাল ইএমআই এবং গ. ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ডিসচার্জ ।
▪️ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ডিসচার্জ বা ইএসডি (ESD): স্বল্প সময় স্থায়ী ইলেক্ট্রিক্যাল ডিস্টারবেন্সকে গ্লিচ বলা হয়। গ্লিচের স্থায়িত্ব কোন কোন ডিজিটাল সার্কিটের ক্ষতি সাধনের জন্য যথেষ্ট। মূলত ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ডিসচার্জ বা ইএসডি (ESD) এর ফলে গ্লিচ সৃষ্টি হয়। ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ডিসচার্জ গ্লিচের কয়েকটি উৎস হলো— ক. অতি উত্তপ্ত যন্ত্রাংশ, খ. যথাযথ গ্রাইন্ডিং না থাকা, গ. কেবলের খারাপ শিল্ডিং, ঘ. খারাপ কালাই সংযোগ এবং ঙ. কম আর্দ্রতা ইত্যাদি।
৩. সফটওয়্যার সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামকসমূহ : ব্যবহৃত সফটওয়্যার এর কারণে কম্পিউটারে যে ক্ষতিসমূহ পরিলক্ষিত হয়, তাদের সফটওয়্যার সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামক বলে। সফটওয়্যার সমস্যাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামক হলো—
ক. অপারেটিং পদ্ধতি নষ্ট হয়ে যাওয়া, খ. ভাইরাসে আক্রমণ, গ. সফটওয়্যার বা তথ্য ভান্ডারে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহারকারীর অনুপ্রবেশ বা হ্যাকিং এবং তথ্য চুরি ।
৪. ব্যবহারকারীর ভুল পরিচালনা : যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে কম্পিউটার সংস্থাপন, চালনা, রক্ষণাবেক্ষণ বা যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনের কারণে যে ক্ষতি হয় তাকে, ভুল পরিচালনাজনিত নিয়ামক বলে। ভুল পরিচালনাজনিত ক্ষতিকারক নিয়ামকগুলো হলো— ক. হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সঠিক না হওয়া, খ. যন্ত্রাংশের প্রতিস্থাপন সঠিক না হওয়া, গ. যথাযথ নিয়মে না চালানো এবং ঘ. যথাযথ রক্ষণাবেক্ষনের অভাব।
আরও দেখুন...