ট্রেডিশনাল চ্যানেল তথা বিলবোর্ড, প্রিন্টেড মিডিয়া, রেডিও ইতাদি ব্যবহারের মাধ্যমে যে মার্কেটিং কার্যক্রম সম্পন্ন করা হত তাকে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং বলে। নিচে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর ধরনসমূহ উল্লেখ করে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. ডাইরেক্ট মেইল ( Direct mail): বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপক কর্তৃক অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ক্রেতার কাছে কোনো পণ্যের আহ্বান, ঘোষণা, স্মরণ করিয়ে দেওয়া, প্রমোশনমূলক কোনো বার্তা ক্রেতার ঠিকানায় চিঠি দিয়ে প্রেরণ করা হলে, তাকে সরাসরি চিঠি বাজারজাতকরণ (Direct Mail Marketing) বলে। উপযুক্ত নির্বাচিত ক্রেতাদের কাছে চিঠি, ক্যাটালগ, বিজ্ঞাপন, নমুনা, বিবরণীপত্র প্রভৃতি চিঠির মাধ্যমে ক্রেতার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ডাইরেক্ট মেইল অ্যাসোসিয়েশনের (Direct Mail Association) এর মতে, ডাইরেক্ট মেইল বাবদ ১ ডলার ব্যয় হলে সেখান থেকে আয় হয় ১২.৫৭ ডলার। একজনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ডাইরেক্ট মেইল খুবই উপযোগী একটি মাধ্যম। অত্যন্ত লক্ষ্যস্থিত ও নির্বাচিত ব্যক্তিমুখী, নমনীয় এবং সহজে পরিমাপযোগ্য পদ্ধতিটি হলো ডাইরেক্ট মেইল মার্কেটিং (Direct Mail Marketing)।
২. টেলিমার্কেটিং (Telemarketing) : টেলিফোন নম্বর ব্যবহার করে পণ্য বা পণ্যের দাম বা প্রমোশনমূলক কোনো বার্তা ব্যক্তিগত ক্রেতা বা ব্যবসায়িক ক্রেতার কাছে উপস্থাপন করাকে টেলিমার্কেটিং বলে। একজন ব্যবসায়িক ক্রেতা অর্থাৎ, এক ব্যবসায়ী আরেকজন ব্যবসায়ীকে পণ্য সম্পর্কে জানাতে টেলিমার্কেটিং করে। এটাকে ব্যবসায় থেকে ব্যবসায় (Business to Business ) টেলিমার্কেটিং বলে। টেলিমার্কেটিং দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :
ক. অন্তর্মুখী টেলিমার্কেটিং (Inbound telemarketing): ক্রেতাসাধারণ আগ্রহী এবং উদ্যোগী হয়ে যখন পণ্য বা সেবা কেনার জন্য টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে, তখন তাকে অন্তর্মুখী টেলিমার্কেটিং বলে।
খ. বহির্মুখী টেলিমার্কেটিং (Outbound telemarketing): বিপণনকারী যখন নিজে আগ্রহী এবং উদ্যোগী হয়ে পণ্য বা সেবার বিক্রি বাড়ানোর জন্য টেলিফোনের মাধ্যমে ক্রেতার সাথে যোগাযোগ করে, তখন তাকে বহির্মুখী টেলিমার্কেটিং বলা হয়।
৩. বিলবোর্ড (Billboard): বিলবোর্ড হলো বড় ধরনের আউটডোর বিজ্ঞাপন কাঠামো, যা মূলত বিভিন্ন শহরের ব্যস্ত রাস্তার পাশে চোখে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হলো বিলবোর্ড। বিলবোর্ড মার্কেটিং বড় আকারের বিজ্ঞাপন বোর্ড ব্যবহার করে গ্রাহকদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়। প্রিন্টেড অথবা হাতে আঁকা ছবি ব্যবহার করে এখনো এ ধরনের মার্কেটিং কার্যক্রম জনপ্রিয়।
৪. প্রিন্ট মিডিয়া মার্কেটিং (Print media marketing) : বিভিন্ন ধরনের সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, জার্নাল, মিডিয়া পাবলিকেশন্স প্রভৃতি প্রিন্ট মিডিয়া মার্কেটিং-এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, প্রিন্টেড কোনো কিছুর মাধ্যমে যখন ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়, তখন তাকে প্রিন্ট মিডিয়া মার্কেটিং বলে। এরূপ প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে খুব সহজে সম্ভাব্য গ্রাহকদের নিকট পৌঁছানো যায়।
৫. ব্রডকাস্টিং (Broadcasting) : ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধরন হলো ব্রডকাস্টিং। জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আরেকটি উপায় হলো রেডিও ও টেলিভিশনের মতো সম্প্রচারিত চ্যানেলের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করা। টেলিভিশন ও রেডিও এখন জনসাধারণের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় মাধ্যম।
৬. ক্যাটালগ মার্কেটিং (Catalog marketing) : ক্যাটালগ মার্কেটিং হলো পণ্যের মুদ্রিত ছবি, ভিডিও বা ডিজিটাল ক্যাটালগ, যা কোনো ক্রেতার কাছে দোকানে বা অনলাইনে প্রেরণ করা হয়। আরও সহজভাবে বলা যায়, যে পণ্যটি বিক্রেতা ক্রেতার কাছে বিক্রয় করবে তার ছবি, ভিডিও বা ডিজিটাল ছবি প্রেরণ করাকে ক্যাটালগ মার্কেটিং বলে। ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বদৌলতে ক্যাটালগগুলো দিনের পর দিন ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। অনেকগুলো অনলাইন আছে যেগুলো শুধু ক্যাটালগ মার্কেটিংয়ের জন্যেই ব্যবহার করা হয়। মুদ্রিত ক্যাটালগ এখন ওয়েবভিত্তিক ক্যাটালগ সৃষ্টি করছে।
ডিজিটাল ক্যাটালগের সুবিধা হলো এর খরচ কম। একই পণ্যের বিভিন্ন ধরনের ক্যাটালগ প্রেরণ করা যায়। অনলাইন ক্যাটালগে সময়ের উপযোগী দ্রব্যের দাম ও ছবির পরিবর্তন করা যায়। দ্রব্যের বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল রেখে ছবির পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন করা যায়। ডিজিটাল ক্যাটালগের এত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কাগজ কালির মুদ্রিত ক্যাটালগ ক্রেতার মনের মধ্যে গেঁথে যায় এবং এমনভাবে ক্রেতাকে আকর্ষণ করে, যা সাধারণত অনলাইন ক্যাটালগ সৃষ্টি করে না।
৭. ফ্লায়ার্স ও ব্রোশরস (Flyers and brochures): ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর ধরনের মধ্যে এটি এক ধরনের বিশেষ পন্থা। এ পন্থায় সরাসরি গ্রাহকদের সাথে সাক্ষাৎ করা হয়। ব্রোশার ক্রেতাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করা হয় যাতে তারা পণ্য ক্রয় করে।
৮. মুখোমুখি বিক্রয় ( Face-to-face selling):
যে প্রক্রিয়ায় ক্রেতাসাধারণের নিকট সরাসরি তথা মুখোমুখি উপস্থিত হয়ে পণ্য এবং কোম্পানি বিষয়ক তথ্য উপস্থাপন করে বিক্রয়ের প্রচেষ্টা চালানো হয় তাকে মুখোমুখি বিক্রয় বলে। মুখোমুখি বিক্রয় পন্থায় মূলত নিম্নোক্ত দু'টি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যথা :
i. সরাসরি বিক্রয় (Direct selling);
ii. দ্বারে দ্বারে বিক্রয় (Door-to- Door selling).
অর্থাৎ, সরাসরি বিক্রয় এবং দ্বারে দ্বারে বিক্রয় পদ্ধতিই হলো মুখোমুখি বিক্রয় পন্থা। এ প্রসঙ্গে Pride and Ferrell তাদের "Marketing" বই-এ বলেন, "Direct selling is the marketing of products to ultimate consumers through face-to-face sales representation at home or in the workplace." অর্থাৎ, বাড়িতে অথবা কার্যক্ষেত্রে চূড়ান্ত ভোক্তাদের মুখোমুখি হয়ে বিক্রয়সংক্রান্ত বক্তব্য উপস্থাপন করে পণ্যের বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়াকে প্রত্যক্ষ বিক্রয় বলে ।
আমাদের দেশে বর্তমানে উল্লেখযোগ্য বিক্রয় পদ্ধতি হলো ক্রেতাদের নিকট সরাসরি উপস্থিত হয়ে পণ্য বিক্রয়ের প্রচেষ্টা করা। এক্ষেত্রে বিক্রয়কর্মীরা ক্রেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পণ্য বিক্রয়ের প্রচেষ্টা চালায়। যেমন : ফেরিওয়ালা, স্বাস্থ্যকর্মী, বিমা প্রতিনিধি প্রভৃতি।
৯. ইভেন্ট মার্কেটিং (Event marketing):
ইভেন্ট মার্কেটিং বর্তমান সময়েও অত্যন্ত জনপ্রিয় মার্কেটিং পদ্ধতি বা কৌশল। ইভেন্ট মার্কেটিং-এর অন্তর্গত বিষয়গুলো হলো— মেলা, প্রদর্শনী, কনসার্ট, রোড-শো, ক্রীড়া ইভেন্ট ইত্যাদি। কারো সাহায্যের জন্য বা কারো জীবন বাঁচাতে অনেক শিল্পীরা এরূপ ইভেন্ট মার্কেটিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে। এক্ষেত্রে face to face ইন্টারেকশন হয়ে থাকে। ওপরে উল্লিখিত ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর বিভিন্ন ধরন ছাড়াও আরও কিছু ধরন রয়েছে। যেমন- রেফারেল, উইন্ডো ডিসপ্লে, কোল্ড কলিং ইত্যাদি।
আরও দেখুন...