ব্যাংক হিসাব খোলা ও পরিচালনা করা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গৃহিণী ও ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সকল পেশাজীবী মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি বিষয়। ব্যাংকে হিসাব খুললে প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ জমা ও কার্ড বা চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করা যায়। জমাকৃত অর্থের ওপর নির্দিষ্ট হারে সুদও পাওয়া যায়। ব্যাংক হলো এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা গ্রাহকের সঞ্চিত অর্থ সুরক্ষিত রাখাসহ প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সেবা দিয়ে মুনাফা অর্জন করে। ব্যাংক হিসাব থাকলে প্রয়োজনমতো নগদ লেনদেন ছাড়াও বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল ঘরে বসেই পরিশোধ করা যায়। প্রয়োজনসাপেক্ষে ঋণ গ্রহণ, অর্থ স্থানান্তর ও প্রত্যয়নপত্রের সুবিধাও পাওয়া যায়।
আয়শা বেগম ৭০ বছর বয়সী একজন গৃহিনী। তিনি দুই ছেলে, পাঁচ মেয়ে এবং নাতি-নাতনি নিয়ে খুব ভালোভাবে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার চালচলনে আভিজাত্যের ছোঁয়া। নাতি-নাতনিদের সাথে গল্প আড্ডায় তার সময় পার হয়। নাতি-নাতনিরা তার আভিজাত্যপূর্ণ চালচলনের ইতিহাস জানতে চান। তিনি তাদের জানান সঞ্চয় প্রবণতাই তাকে ভালোভাবে চলার সুযোগ দিয়েছে। তিনি সংসার জীবনের প্রথম থেকে মাটির ব্যাংকে সামান্য টাকা প্রতি সপ্তাহে জমা করতেন। এই ধারণাটি তিনি তার মা ও দাদীর নিকট থেকে পেয়েছেন। প্রাচীনকালে মানুষ চোর ডাকাতের ভয়ে নিজেদের সঞ্চিত অর্থ পিতলের কলসিতে ভরে মাটির নিচে পুঁতে রাখত। আবার প্রাচীন ইহুদি ব্যবসায়ীগণ লম্বা টুল বা বেঞ্চে বসে অর্থের ব্যবসায় করতো। যেখানে মানুষের প্রয়োজনে অর্থ ধার দেওয়া হতো ও মানুষের সঞ্চিত অর্থ গ্রহণ করা হতো। এই টাকা পুনরায় সুদ সহ ফেরত নেওয়ার ও ফেরত দেওয়ার জন্য তারা লোক নিয়োগ করতো। মূলত এখান থেকে ব্যাংকের উৎপত্তি হয়। বর্তমানে ব্যাংকসমূহ জনগণের সঞ্চিত আমানত বিভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে মানুষকে সঞ্চয়ে আগ্রহী করে।
এ উপ-অধ্যায়ে আমরা ব্যাংকের ধারণা, ব্যাংকের শ্রেণিবিভাগ, ব্যাংকের কার্যাবলি ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারব।
আমরা যা আয় করি তা থেকে প্রতি মাসে সংসার খরচের পর কিছু অর্থ উদ্বৃত্ত থাকে। এ উদ্বৃত্ত অর্থ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সঞ্চিত রাখা যায়। আবার প্রয়োজনে তা থেকে খরচও করা যায়। অন্যদিকে, একজন ব্যবসায়ীর ব্যবসায় কাজ পরিচালনার জন্য বড় অঙ্কের টাকা প্রয়োজন হলে তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হন । প্রতিষ্ঠানটি তাকে কিছু শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ দেয়। এভাবে যে ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব অর্থের নিরাপত্তাসহ সুবিধাজনক লেনদেন করা যায় এবং ঋণ সহযোগিতা পাওয়া যায়, সেটি হলো ব্যাংক।
মানুষ বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ উপার্জন করে। উপার্জিত অর্থের কিছু অংশ উদ্বৃত্ত থাকতে পারে। আর এ উদ্বৃত্ত অর্থের নিরাপদ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যেই ব্যাংক ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছে। এর প্রধান কাজ হলো জনগণের উদ্বৃত্ত অর্থ সংগ্রহ করে তহবিল গঠন করা। উক্ত তহবিল থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে ঋণ দেওয়া। অর্থাৎ ব্যাংক হলো ধার করা অর্থের ধারক। ঋণ গ্রহণকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত সুদের একটি অংশ অর্থ জমাদানকারীদেরকে দেওয়া হয়। এ দুই সুদের পার্থক্যই হলো ব্যাংকের মুনাফা। যে প্রতিষ্ঠান অর্থ ও ঋণের ব্যবসায়ে জড়িত তাকে ব্যাংক বলে। বর্তমানে ব্যাংক মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রার উপযোগিতাও সৃষ্টি করে। ব্যাংকের উল্লিখিত সংজ্ঞা থেকে আমরা ব্যাংকের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে জানতে পারি—
• ব্যাংক হলো অর্থ জমা ও ঋণের সাথে যুক্ত একটি আর্থিক মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান;
• জনগণের অর্থ আমানত হিসেবে জমা রাখে;
• জনগণকে সুদের বিনিময়ে বিভিন্ন (স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ) মেয়াদি ঋণ দেয়;
• চাহিবামাত্র গ্রাহকের জমাকৃত অর্থ পরিশোধে বাধ্য থাকে; গ্রাহক সেবার লক্ষ্যে এটি কাজ করে;
• প্রতিষ্ঠানটি সততা ও বিশ্বস্ততার প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়;
• প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়ের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন ।
জেনে রাখো বিশেষজ্ঞদের লেখা কয়েকটি সংজ্ঞা নিচে দেওয়া হলো- অধ্যাপক কেয়ারক্রস (Prof. Cairncross) বলেছেন, 'A bank is a financial intermediary, a dealer in loans and debts', অর্থাৎ ‘ব্যাংক হলো একটি আর্থিক মধ্যস্থ কারবারি; ধার ও ঋণের ব্যবসায়ী।’ অধ্যাপক সেয়ার্স (Prof. Sayers) বলেছেন, 'Banks are the institutions whose debts are commonly accepted in settlement of the other peoples debt. অর্থাৎ 'ব্যাংক হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার ঋণ অন্য সকলের পারস্পরিক ঋণ নিষ্পত্তির জন্য ব্যবহৃত হয়। অধ্যাপক আর. পি. ক্যান্ট (Prof. R. P. Kent) বলেছেন, 'A bank is an institution whose principal function is to collect the unutilized money from the people and to lend it to others.' অর্থাৎ 'ব্যাংক হচ্ছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে অব্যবহৃত উদ্বৃত্ত অর্থ সংগ্রহ করা এবং অপরকে তা ঋণ হিসেবে প্রদান করা। |
---|
তাই বলা যায়, ব্যাংক এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের (Bank Account) মাধ্যমে কম সুদে আমানত সংগ্ৰহ করে। তারপর ঐ অর্থ বেশি সুদে অন্যপক্ষকে ঋণ দিয়ে মুনাফা অর্জন করে।
▪️জেনে রাখো ব্যাংকিং: সাধারণভাবে, ব্যাংকের অর্থসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলিকে ব্যাংকিং বলে। প্রশ্ন হলো, ব্যাংকের কাজ কী? চলতি, সঞ্চয়ী ও মেয়াদি হিসাবে অর্থ গ্রহণ করা, গ্রাহকদের চেক গ্রহণ করা, দাবি পরিশোধ করা, ঋণ দেওয়া, বিলবাট্টা করা, গ্রাহকদের অর্থ একস্থান থেকে অন্যস্থানে পাঠাতে সাহায্য করা ইত্যাদি ব্যাংকের কাজ। এসব কাজই সমষ্টিগতভাবে ব্যাংকিং নামে পরিচিত। এ বিষয়ে ব্যাংকিং আইনের সংজ্ঞাটি জেনে নিই। ১৯৪৯ সালের ভারতীয় ব্যাংকিং আইনের ৫(১) ধারা অনুযায়ী, ঋণ মঞ্জুর বা অর্থ বিনিয়োগ করা, জনগণের অর্থ আমানত হিসেবে সংগ্রহ করা এবং চাহিবামাত্র বা অন্য কোনো অবস্থায় তা উত্তোলনের সুযোগ প্রদান করাই হলো ব্যাংকিং (Banking means the accepting for the purpose of lending or investment of deposits or money from the public, re-payable on demand or otherwise, and withdrawable by cheque, draft, order or otherwise) | সুতরাং, আমানত গ্রহণ, ঋণ দেওয়া, চেক পরিশোধ করা, বিল বাট্টা করা, অর্থ স্থানান্তর করা, ঋণ ও বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করা, মক্কেলের মূল্যবান দ্রব্য ও দলিল সংরক্ষণ করা, মক্কেলের বিলের স্বীকৃতি দেওয়া, আমানত হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ বিনিয়োগ করাসহ ব্যাংকের যাবতীয় কাজকে একসাথে ব্যাংকিং বলা হয় । |
---|
নিচে ছকের সাহায্যে ব্যাংক এবং ব্যাংকিং-এর সম্পর্ক বোঝানো হলো-
সুতরাং, ব্যাংক হলো একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং এ প্রতিষ্ঠানের কাজগুলোই হলো ব্যাংকিং। ব্যাংক যখন অন্য কোনো ব্যক্তির কাজ করে, তখন ব্যাংক সে ব্যক্তির ব্যাংকার হিসেবে অভিহিত হয়। ধরো, তুমি সোনালী ব্যাংক-এর মাধ্যমে যাবতীয় লেনদেন করো। তাহলে সোনালী ব্যাংক হলো তোমার ব্যাংকার। বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু সরকারের কাজ করে, এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক হলো সরকারের ব্যাংকার ।
ব্যাংক | ব্যাংকিং |
---|---|
ব্যাংকের আভিধানিক অর্থ ব্যাংকিং (Banking) হলো অধিকোষ বা ধনভান্ডার । | ব্যাংকিং-এর আভিধানিক অর্থ হলো ব্যাংকের কার্যাবলি। |
জনগণের কাছ থেকে অর্থ আমানত।হিসেবে গ্রহণ করা, ঋণ দেওয়া, ঋণ আমানত সৃষ্টি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংক বলে। | ব্যাংক তার উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যেসব কাজ সম্পাদন করে তাকে ব্যাংকিং বলে। |
আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংকের | একটি নিজস্ব আইনগত সত্তা আছে। | ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের কার্যাবলির সমষ্টি তাই এর কোনো আইনগত সত্তা নেই। |
আর্থিক সফলতাই ব্যাংকের উদ্দেশ্য। | সুষ্ঠুভাবে অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদন | করাই ব্যাংকিং-এর মূল উদ্দেশ্য। |
ব্যাংক অর্থ নিয়ে ব্যবসায় করে। | ব্যাংকিং অর্থসংক্রান্ত কাজ সম্পাদন করে। |
ব্যাংকের কাজের জন্য ব্যাংকাররা দায়ী হয়। | ব্যাংকিং-এর যাবতীয় দায় ব্যাংকের। |
ব্যাংকের সাফল্য নির্ভর করে দক্ষ ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর। | ব্যাংকিং-এর সাফল্য নির্ভর করে ব্যাংকের দক্ষ প্রশাসনের ওপর। |
ব্যাংকারদের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার ফসল হচ্ছে ব্যাংক। অর্থাৎ, ব্যাংকার হলো ব্যাংকের জন্মদাতা। | ব্যাংক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যে কার্যাবলি সম্পন্ন করেন, তাই ব্যাংকিং । |
▪️জেনে রাখো |
---|
সভ্যতার বিবর্তনে ব্যাংক ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছে। বর্তমানে ব্যাংক ব্যবসায় একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। সে কারণে এর মালিকানা, প্রকৃতি ইত্যাদির মধ্যে নানা পরিবর্তন এসেছে। সময়ের পরিবর্তনে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আত্মপ্রকাশ লক্ষণীয়। ব্যাংকগুলোর মালিকানা, কাজের ধরন, সাংগঠনিক কাঠামো ও তালিকাভুক্তি আলাদা । নিচে চিত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাংকের শ্রেণিবিভাগ দেখানো হলো-
ক. মালিকানার ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ (Classification on the basis of ownership)
অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে মিল রেখে প্রতিটি দেশে বিভিন্ন মালিকানায় ব্যাংক গঠিত হতে দেখা যায়। নিচে মালিকানার ভিত্তিতে ব্যাংকের শ্রেণিবিভাগ দেখানো হলো—
১. সরকারি ব্যাংক (State owned bank) : যে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক, সংগঠক, পরিচালক ও মালিক সরকার তাকে সরকারি ব্যাংক বলে। এ ধরনের ব্যাংক সরকারি উদ্যোগে গঠিত হতে পারে। আবার পরবর্তী সময়ে জাতীয়করণের মাধ্যমেও সরকারি মালিকানায় আনা হতে পারে। যেমন: অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ইত্যাদি ।
২. বেসরকারি ব্যাংক (Private ownership bank) : ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যাংককে বেসরকারি ব্যাংক বলে। সব বেসরকারি ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক-এর তালিকাভুক্তির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সরকারের UCB নিয়ন্ত্রণে থাকতে হয়। যেমন: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি., ঢাকা ব্যাংক লি., প্রাইম ব্যাংক লি. ইত্যাদি।
৩. সরকারি ও বেসরকারি যৌথ মালিকানাধীন ব্যাংক (Government and private join ownership bank) : যে ব্যাংক সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ মালিকানাধীন ব্যাংক বলে। যেমন : বাংলাদেশের আইএফআইসি (IFIC) ব্যাংক।
৪. স্বায়ত্তশাসিত ব্যাংক ( Autonomus bank) : যে ব্যাংক সরকারের কোনো বিশেষ আইনবলে বা সংবিধানের বিশেষ অধ্যাদেশের মাধ্যমে গঠিত হয় এবং যা স্বনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় স্বাধীনভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে স্বায়ত্তশাসিত ব্যাংক বলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশ উন্নয়ন ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ইত্যাদি।
খ. কার্যভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ (Classification on the basis of function)
১. কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Central bank) : যে ব্যাংক সরকারি মালিকানায় ও নিয়ন্ত্রণে থেকে সরকার ও অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার, দেশের মুদ্রাবাজারের পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক এবং সর্বোপরি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দেশের আর্থিক নীতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করে তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে। প্রতিটি স্বাধীন দেশে একটি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থাকে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে 'বাংলাদেশ ব্যাংক'।
২. বাণিজ্যিক ব্যাংক (Commercial bank) : মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে যে ব্যাংক স্বল্প সুদে জনগণের অর্থ আমানত হিসেবে জমা রাখে, অধিক সুদে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়, গ্রাহকদের পক্ষে অর্থ আদায়, পরিশোধ, স্থানান্তরসহ বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবা সুবিধা প্রদান করে তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে। যেমন : সোনালী ব্যাংক লি., মার্কেন্টাইল ব্যাংক লি., এবি ব্যাংক লি. ইত্যাদি।
৩. বিশেষায়িত ব্যাংক (Specialized bank) : নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যে ব্যাংকসমূহকে একটি সুপরিকল্পিত নির্দিষ্ট পথে পরিচালিত করা হয়, সেই ব্যাংকসমূহকে বিশেষায়িত ব্যাংক বলে। সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট খাতে উন্নয়নের জন্য এরূপ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। যেমন :
i. কৃষি ব্যাংক (Agricultural bank) : দেশের কৃষিখাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষকদের অর্থসংস্থানের জন্য যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে কৃষি ব্যাংক বলে। এটি একটি বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর কাজ হলো কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি, সার, বীজ ইত্যাদি ক্রয়ে প্রয়োজনীয় মূলধনের সংস্থান করা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এ লক্ষ্যে গঠিত ও পরিচালিত হয়।
ii. রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক : দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল তথা রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কৃষি উন্নয়নের জন্য ১৯৮৭ সালে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূল কাজ হচ্ছে উক্ত অঞ্চলের কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি, সার, বীজ ইত্যাদি ক্রয়ে কৃষিঋণ সরবরাহ করে প্রয়োজনীয় মূলধনের সংস্থান করা।
iii. কর্মসংস্থান ব্যাংক (Employement bank) : বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে ঋণ সহায়তা প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠিত বিশেষায়িত ব্যাংককে কর্মসংস্থান ব্যাংক বলে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও বেকার সমস্যা দূর করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা এরূপ ব্যাংকের উদ্দেশ্য। 'কর্মসংস্থান ব্যাংক' বাংলাদেশে এ ধরনের একটি বিশেষায়িত ব্যাংক।
গ. সাংগঠনিক কাঠামোভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ (Classification on the basis of organizational structure)
১. একক ব্যাংকিং (Unit banking) : যে ব্যাংক কেবল একটি অফিসের মাধ্যমে তার সব ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে তাকে একক ব্যাংকিং বলে। এ ধরনের ব্যাংকের কোনো শাখা থাকে না। বাংলাদেশে এ ধরনের ব্যাংকের কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্র সহ পৃথিবীর অনেক দেশে এ ধরনের ব্যাংক দেখা যায়।
২. শাখা ব্যাংকিং (Branch banking) : যে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় একটি প্রধান অফিসের অধীনে দেশ- বিদেশের বিভিন্ন স্থানে একই নামে অনেকগুলো শাখা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে তাকে শাখা ব্যাংকিং বলে। বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা সামগ্রিকভাবে শাখা ব্যাংক ব্যবস্থার আওতাধীন।
৩. চেইন ব্যাংকিং (Chain banking) : যে ব্যাংক ব্যবস্থায় একই শ্রেণিভুক্ত কতিপয় ব্যাংক তাদের নিজস্ব মূলধন, কর্মচারি ও স্বাধীনসত্ত্বা বজায় রেখে সমঝোতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে তাকে চেইন ব্যাংকিং বলে। বাংলাদেশে এ ধরনের ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
৪. গ্রুপ ব্যাংকিং (Group banking) : যে ব্যাংক ব্যবস্থায় কোনো একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান একই ধরনের কতগুলো ছোট ব্যাংক গঠন করে বা একাধিক ব্যাংকের অধিকাংশ শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করে তাকে গ্রুপ ব্যাংকিং বলে। এ ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানকে হোল্ডিং কোম্পানি এবং যাদের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করা হয় তাদের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বলা হয়। হোল্ডিং কোম্পানি ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানির সমন্বয়ে গ্রুপ ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
ঘ. তালিকাভুক্তির ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ (Classification on the basis of scheduling)
১. তালিকাভুক্ত ব্যাংক (Scheduled bank) : দেশের অভ্যন্তরে কর্মরত যেসব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংরক্ষিত তালিকার অন্তর্ভুক্ত থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে তাকে তালিকাভুক্ত ব্যাংক বলে। এরূপ তালিকাভুক্তির জন্য সদস্য ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশিত শর্তাবলি পূরণ ও তা অনুসরণ করতে হয়। সোনালী ব্যাংক লি., অগ্রণী ব্যাংক লি. ইত্যাদি তালিকাভুক্ত ব্যাংকের উদাহরণ।
২. অতালিকাভুক্ত ব্যাংক (Non scheduled bank) : যে ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী গঠিত হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত না হয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে তাকে অতালিকাভুক্ত ব্যাংক বলে। এ ধরনের ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রদত্ত কোনো সুবিধা পায় না। বাংলাদেশ কো- অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড এ ধরনের ব্যাংকের উদাহরণ।
নিজে করো : ঢাকার মতিঝিলে 'ইছামতি ব্যাংক লিমিটেড'-এর সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ অফিসটি অবস্থিত। এ অফিস থেকে সারা দেশে তাদের ১০০টি শাখার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মতিঝিলের এই অফিসটির মাধ্যমেই অন্যান্য স্থানের শাখায় পরামর্শ দেওয়া হয়। ব্যাংকটি নানা ক্ষেত্রে গ্রাহকদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ দেয়। ব্যাংকটির মতিঝিল অফিসের পাশেই 'সাথী ব্যাংক লিমিটেড'-এর আরো একটি ব্যাংকের প্রধান অফিস অবস্থিত। পাশাপাশি অবস্থান থাকলেও এই ব্যাংকটি শুধু কৃষি ও কৃষিজ শিল্পের উন্নয়নের জন্য কৃষকদের পরামর্শ ও ঋণ দেয়। এ ব্যাংকটিরও বিভিন্ন স্থানে শাখা আছে। তবে ইছামতি ব্যাংকের মতো ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের ভিন্নতা নেই। উল্লিখিত ঘটনাটির মধ্য দিয়ে ব্যাংকের ধরন চিহ্নিত করো। |
---|
ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা অর্থ জমা-গ্রহণ, সংরক্ষণ, স্থানান্তর ও ঋণদানের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে। প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন ছাড়াও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাংক অনেক কাজ করে। আধুনিক ব্যাংকগুলো বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে যেসব কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে নিচে তা উল্লেখ করা হলো-
১. আমানত গ্রহণ (Collection of deposit) : ব্যাংক সঞ্চয়ী, চলতি ও মেয়াদি হিসাবের মাধ্যমে জনগণের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অতিরিক্ত অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে জনগণকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
২. অর্থ বা দাবি পরিশোধ ( Payment of money): আমানতকারীগণ যে অর্থ ব্যাংকে জমা রাখে তা থেকে ব্যাংক তাদের দাবি অনুযায়ী জমাকৃত অর্থ চাহিবামাত্র পরিশোধ করে থাকে।
৩. ঋণদান (Payment of loan): ব্যাংক হলো ধার ও ঋণের ব্যবসায়ী। তাই আমানত হিসেবে বা অন্য কোনো উৎস হতে সংগৃহীত অর্থ ব্যাংক ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও অন্যদেরকে ঋণ হিসেবে প্রদান করে। উপযুক্ত খাতে ঋণদান ও তা যথাসময়ে সংগ্রহ করা সব ধরনের ব্যাংকেরই গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত।
৪ . বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি (Creation of medium of exchange) : চেক, প্রত্যয়পত্র, ড্রাফট, পে-অর্ডার, ভ্রমণকারীর চেক, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে আধুনিক ব্যাংকসমূহ দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি ও আর্থিক লেনদেনে সহায়তা করে।
৫. অর্থ স্থানান্তর (Transferring money) : দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে অর্থ প্রেরণ একান্ত প্রয়োজন। ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে চেক, ব্যাংক ড্রাফট, বিনিময় বিল ইত্যাদির মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্বল্প সময় ও খরচে অর্থ স্থানান্তর করা।
৬. ব্যবসা-বাণিজ্যে সহায়তা (Assistance in business): ঋণদান, মক্কেলদের পক্ষে দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি, অর্থ স্থানান্তর ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাজ সম্পাদন করে ব্যাংকসমূহ একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে সহায়তা করে, তেমনি প্রত্যয়পত্র, পর্যটকের চেক, ব্যাংক ড্রাফট ইত্যাদি ইস্যু করে বৈদেশিক বাণিজ্যকেও সচল রাখে।
৭. কৃষি ও শিল্পের উন্নয়ন (Developing agriculture and industry) : একটি দেশের কৃষি ও শিল্প উন্নয়নের জন্য যে আর্থিক সহযোগিতা দরকার ব্যাংক তা প্রদান করে থাকে। কৃষিতে যেমন উন্নত যন্ত্রপাতি, সেচ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন আধুনিক উপকরণ সংগ্রহের জন্য ব্যাংক ঋণের সহায়তা দরকার, তেমনি শিল্পক্ষেত্রে শিল্পের ভারী যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রয়োজন হয়।
৮. মূলধন গঠন (Formation of capital) : জনগণের কাছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অর্থ সংগ্রহ করে তা মূলধন গঠনে ব্যবহার করা ব্যাংকের একটি অন্যতম কাজ। দেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য যে বিপুল পরিমাণ মূলধনের প্রয়োজন হয়, অর্থ বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে ব্যাংক তা ব্যবস্থা করে।
৯. ঋণ আমানত সৃষ্টি (Creation of loan deposits): ঋণ আমানত সৃষ্টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ। দুইভাবে এ আমানত সৃষ্টি করা যায়। প্রথমত, মক্কেল ব্যাংককে নগদ টাকা জমা দিয়ে আমানত সৃষ্টি করতে পারে। দ্বিতীয়ত, ব্যাংক মক্কেলকে ঋণ মঞ্জুর করে আমানত সৃষ্টি করতে পারে । ব্যাংক ঋণের টাকা নগদে না দিয়ে মক্কেলের হিসাবে জমা করে। মক্কেল তার সুবিধামত উক্ত ঋণের টাকা চেক কেটে উত্তোলন করে। আবার, মক্কেল দেনা পরিশোধের উদ্দেশ্যে চেক লিখে তার পাওনাদারকে প্রদান করে। এভাবে ব্যাংক ঋণ আমানত সৃষ্টি করে ।
১০. বিনিময় বিল বাট্টাকরণ (Discounting bill of exchange) : ব্যবসায়ীদের জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংক তাদের বিনিময় বিল মেয়াদপূর্তির আগেই ভাঙ্গিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেয়। এজন্য ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে বাট্টা গ্রহণ করে এবং মেয়াদপূর্তিতে আদিষ্টের কাছ থেকে বিলের সম্পূর্ণ টাকা আদায় করে নেয়। উপরিউক্ত কার্যাবলিসমূহ ছাড়াও আরো অনেক কাজ ব্যাংক সম্পাদন করে।
বাংলাদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে এমন সব ব্যাংককে বাংলাদেশের অনুমোদিত ব্যাংক বলা হয়। এ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম হলো 'বাংলাদেশ ব্যাংক'। বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহকে মূলত দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যথা- তালিকাভূক্ত ব্যাংক ও অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক। ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৪৩টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংক ও ৯টি বিদেশি ব্যাংকসহ বাংলাদেশে মোট তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। আর অনুমোদিত অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৫টি। গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থা এবং সামাজিক উন্নয়ন ব্যাংক। এটি একটি বিশেষায়িত অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক, যা ক্ষুদ্রঋণ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ২০০৬ সালে দারিদ্র বিমোচনে অবদান রাখায় গ্রামীণ ব্যাংক এবং ড. মুহাম্মদ ইউনুস যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। নিচে অনুমোদিত তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংকের নামসমূহ দেওয়া হলো—
অনুমোদিত তালিকাভুক্ত ব্যাংক (Authorized listed banks) :
ক. রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক (State owned commercial bank)
বাংলাদেশে ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে যেগুলোর শতভাগ মালিকানা বাংলাদেশ সরকারের।
ব্যাংকের নাম | প্রতিষ্ঠাকাল |
---|---|
১. সোনালী ব্যাংক লিমিটেড | ১৯৭২ |
২. জনতা ব্যাংক লিমিটেড | ১৯৭২ |
৩. অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড | ১৯৭২ |
৪. রূপালী ব্যাংক লিমিটেড | ১৯৭২ |
৫. বেসিক ব্যাংক লিমিটেড | ১৯৮৮ |
৬. বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লি. | ২০০৯ |
বাংলাদেশে ৪৩টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে যেগুলোর বেশিরভাগ বা সব শেয়ার বা মালিকানা রয়েছে ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে।সাধারণত বাংলাদেশে পরিচালিত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ৩৩টি ব্যাংক প্রথাগত বা সাধারণ ব্যাংকিং কার্যক্রম করে থাকে। এদের মধ্যে রয়েছে – পূবালী ব্যাংক লি.,উত্তরা ব্যাংক লি.,আরব-বাংলাদেশ (এবি) ব্যাংক লি.,আইএফআইসি ব্যাংক লি.,ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লি.,সিটি ব্যাংক লি.,এন.সি.সি. ব্যাংক লি.,ইস্টার্ন ব্যাংক লিডাচ-বাংলা ব্যাংক লি.,ঢাকা ব্যাংক লি.প্রাইম ব্যাংক লি.,মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লি.,সাউথইস্ট ব্যাংক লি.,বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লি.,ওয়ান ব্যাংক লি.,ন্যাশনাল ব্যাংক লি.,প্রিমিয়ার ব্যাংক লি.,ব্র্যাক ব্যাংক লি.ইত্যাদি।
বাংলাদেশে পরিচালিত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ১০টি ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম করে।
ব্যাংকের নাম |
---|
১. ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লি. ২.আইসিবি ইসলামি ব্যাংক লি. ৩. আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক লি. ৪. সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক লি. ৫.এক্সিম ব্যাংক বাংলাদেশ লি. ৬. ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক লি. ৭. স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লি. ৮. শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক লি. ৯. ইউনিয়ন ব্যাংক লি. ১০. গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক লি. |
বাংলাদেশে ৯টি বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। এই ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশে আঞ্চলিক কার্যালয় ও শাখা কার্যালয় খুলে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ব্যাংকের নাম |
---|
১. সিটি ব্যাংক এন.এ. ২.এইচএসবিসি ৩. উরি ব্যাংক ৪. কর্মার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ৫. হাবিব ব্যাংক লি. ৬.স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড বাংলাদেশ ৭. ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ৮. স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (বাংলাদেশ) ৯.ব্যাংক আল ফালাহ্ |
বাংলাদেশে ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংক রয়েছে যেগুলোর মালিকানা বাংলাদেশ সরকারের হাতে। ব্যাংকগুলো আলাদা আলাদা বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণে গঠন করা হয়েছে।
ব্যাংকের নাম |
---|
১.বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ২.রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৩.প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক |
বাংলাদেশে ৫ টি অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক রয়েছে।
ব্যাংকের নাম |
---|
১. জুবিলী ব্যাংক ২. গ্রামীণ ব্যাংক ৩. আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক ৪. কর্মসংস্থান ব্যাংক ৫. পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক |
ব্যাংক হিসাব খুলতে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। হিসাব খুলতে আগ্রহী ব্যক্তিকে প্রথমেই স্থির করতে হবে তিনি কোন ধরনের ব্যাংক হিসাব খুলতে আগ্রহী। কারণ ব্যাংক মূলত তিন প্রকার হিসাব খোলার ব্যবস্থা করে থাকে। যথা :
ক) চলতি হিসাব (Current Account);
খ) সঞ্চয়ী হিসাব (Savings Account) এবং
গ) স্থায়ী হিসাব (Fixed Account)।
ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য প্রতিটি ব্যাংকে তিন রঙের আবেদনপত্র বা ফর্ম রয়েছে। এসব হিসাব খোলার সময় ব্যাংক আবেদনকারীর কাছ থেকে কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে। আবেদনকারী তার নির্ধারিত আবেদন ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসসহ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার নিকট জমা দেন। ব্যাংক কর্মকর্তা উক্ত ফর্মের সাথে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। প্র
থমে তিনি আবেদনকারীর প্রদানকৃত NID কার্ডটি যাচাই করবেন। কার্ডের তথ্য সঠিক হলে তিনি দেখবেন আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানার কোনো বিদ্যুৎ বিল বা গ্যাস বিলের ফটোকপি আছে কি না, যদি না থাকে তাহলে তা সংগ্রহ করবেন। এরপর আবেদনকারীর সত্যায়িত সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের তিনটি ছবি জমা দেওয়া আছে কি না তা দেখবেন। আবেদনকারীর রঙ্গিন ছবি পাওয়া গেলে তিনি নমিনীর ছবি দেখবেন। ছবিতে আবেদনকারী কর্তৃক সত্যায়িত আছে কি না তা দেখবেন এবং নমিনীর NID কার্ডটিও যাচাই করবেন। নমিনী যদি নাবালক হয় তাহলে তার জন্ম নিবন্ধন কার্ডটি যাচাই করবেন। আবেদনকারী যদি TIN অথবা ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি জমা দেন তাহলে ব্যাংক কর্মকর্তা তা যাচাই করবেন। তাছাড়া কোম্পানি হলে স্মারকলিপি, নিবন্ধনপত্র, কার্যারাম্ভের অনুমতিপত্র, বিবরণপত্রের কপি, অংশীদারি ব্যবসায় হলে চুক্তিনামার কপি, সমবায় সমিতির ক্ষেত্রে উপবিধি এবং সামাজিক সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের কপি ও এতদসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের সত্যায়িত কপিসমূহ আবেদনপত্রের সাথে জমা আছে কি না তা দেখবেন। যদি আবেদনকারীর হিসাবের ধরন অনুযায়ী যাবতীয় ডকুমেন্টসমূহ পাওয়া যায় তাহলে ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা প্রাপ্ত ডকুমেন্টসমূহ সঠিক হিসেবে স্বাক্ষর করবেন এবং অন্য একজন কর্মকর্তা অথরাইজ করে উক্ত আবেদন ফর্মটি হিসাব খোলার পরবর্তী ধাপের জন্য জমা নিবেন। কিন্তু যদি ডকুমেন্টসের ঘাটতি থাকে তাহলে তা সংগ্রহ করে জমা দিতে বলবেন।
এভাবে ব্যাংক তার গ্রাহকের হিসাব খোলার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।
ব্যাংক হিসাব হলো আমানতকারী ও ব্যাংকের মধ্যে যোগাযোগ এবং লেনদেনের মাধ্যম। চলতি হিসাব, সঞ্চয়ী হিসাব এবং স্থায়ী হিসাব খোলার জন্য তিন রঙের আবেদনপত্র বা ফর্ম রয়েছে। হিসাব খুলতে আগ্রহী গ্রাহকগণ ব্যাংক থেকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী আবেদন ফরমটি সংগ্রহ করেন। এরপর আবেদন ফরমের নির্দিষ্ট স্থানে আবেদনকারীর নাম, মাতার নাম, পিতা বা স্বামীর নাম, জাতীয়তা, পেশা, বয়স, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা পূরণ করবেন। গ্রাহক আনুষঙ্গিক কাগজপত্রের সাথে NID কার্ডের ফটোকপি সংযুক্ত করে ব্যাংক কর্মকর্তার নিকট জমা দিবেন। ব্যাংক কর্মকর্তা উক্ত NID কার্ডটি যাচাই করবেন। NID কার্ডে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ID নম্বর ও জন্ম তারিখ দেওয়া থাকে। NID কার্ড সংযুক্তকারী, ব্যাংক হিসাবের প্রকৃত আবেদনকারী কিনা তা যাচাইয়ের জন্য ব্যাংক তাদের NID ভেরিফিকেশন সফটওয়্যার-এ যান। এই সফটওয়্যারটি নির্বাচন কমিশনের NID সফটওয়্যারের সাথে লিংকযুক্ত। সেখানে আবেদনকারীর NID নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে সার্চ বাটনে প্রেস করলে NID কার্ডের ফটোকপি প্রদানকারী ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য চলে আসবে। তিনি প্রকৃত আবেদনকারী হলে ব্যাংক কর্মকর্তা উক্ত ব্যক্তির হিসাব খোলার ব্যাপারে ইতিবাচক মতামত দেন। উপরিউক্ত নিয়মে ব্যাংক আবেদনকারীর NID ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে।
আমরা আগেই জেনেছি ব্যাংক তিন ধরনের হিসাব খোলার ব্যবস্থা করে থাকে। চলতি হিসাব, সঞ্চয়ী হিসাব ও স্থায়ী হিসাব। আবেদনকারী ব্যাংক থেকে আবেদন ফরমটি সংগ্রহ করে তা সঠিক ও নির্ভুলভাবে পূরণ করবেন। যদি কোনো তথ্য বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে ব্যাংক কর্মকর্তাগণ ফরমটি পূরণে সহযোগিতা করেন। ফরমটি সম্পূর্ণ পূরণ হলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ তা একজন ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে দিবেন। উক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ফরমটি তার নিকট রক্ষিত কম্পিউটারে আবেদনকারীর যাবতীয় তথ্যসমূহ এন্টি দেওয়া জন্য কম্পিউটারে Customer বাটনে ক্লিক করবেন। ফলে কম্পিউটারের Software-এ একটি হিসাব ফরম Open হবে। ব্যাংক কর্মকর্তা কাস্টমার কর্তৃক পূরণকৃত ফরমটির যাবতীয় তথ্য কম্পিউটারে এন্ট্রি দিবেন। এছাড়া কাস্টমার যেসব ডকুমেন্টস সংযোগ করবেন তাও স্ক্যান করে কম্পিউটারে কাস্টমারের সংশ্লিষ্ট ফাইলে সংরক্ষণ করবেন। ডাটা এন্ট্রির কার্যক্রম শেষ হলে অন্য একজন কর্মকর্তা তা দেখে অথরাইজ করে সেইভ বাটন প্রেস করলে কাস্টমারের জন্য একটি Unique Customer ID Code আসবে। যেটি মূলত কম্পিউটার সফটওয়্যার থেকে পাওয়া যাবে। এই Unique Customer ID Code অনুযায়ী আবেদনকারীর যাবতীয় তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষিত হবে। ব্যাংক কর্মকর্তা তার কম্পিউটারে Account Opening অপশনে যাবে। সেখানে হিসাবের ধরন সিলেক্ট করে আবেদনকারীর Unique Customer IDটি লিংক করে দিবেন। ফলে আবেদনকারীর যাবতীয় তথ্য হিসাবের ধরন অনুযায়ী Unique Customer ID Code এ Save হবে। এরপর ব্যাংক কর্মকর্তা আবেদনকারীর নমিনীর যাবতীয় তথ্য সংযোজন করবেন। সব তথ্য সংযোজনের পর ব্যাংকের অন্য একজন কর্মকর্তা তা অথরাইজ করে সেইভ করলে কম্পিউটারে অটো একটি হিসাব নম্বর পড়বে। এই হিসাব নম্বরের বিপরীতে আবেদনকারী জমা স্লিপের মাধ্যমে প্রাথমিক জমা নিশ্চিত করে ব্যাংক হিসাব খোলার কাজটি সম্পন্ন করবেন। উপরিউক্ত নিয়মে ব্যাংক আবেদনকারীর প্রাথমিক আবেদনের ডাটা এন্টি করে হিসাব নম্বর প্রদানের কাজটি সম্পন্ন করেন।
মানুষ দৈনন্দিন বিভিন্ন সেবা পাওয়ার জন্য চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাব খুলে থাকে। এ হিসাব খোলার পর গ্রাহক তার হিসাবে কিছু সেবা চালুর জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলেন। সেবাগুলো হলো— SMS সার্ভিস, Mobile অ্যাপস, Internet banking, Debit কার্ড, চেক বই কার্যকর করা ইত্যাদি। ব্যাংক কর্তৃক এসব সেবা কীভাবে কার্যকর করা হয় তা নিচে আলোচনা করা হলো—
ক. SMS সার্ভিস কার্যকর করার প্রক্রিয়া (Process of executing SMS service)
SMS সার্ভিসটি হচ্ছে ব্যাংকে গ্রাহকের হিসাবে কত টাকা জমা হলো বা কত টাকা উত্তোলন করা হলো তার বিবরণ SMS-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া। গ্রাহকের হিসাবে যদি কোনো চেক জমা করা হয় তাহলেও এ সার্ভিস সাথে সাথে জানিয়ে দেয়। যেকোনো সময়ে এ সার্ভিসের মাধ্যমে ব্যাংক ব্যালেন্স জানা যায়। এজন্য হিসাবধারীকে বার্ষিক একটি ফি দিতে হয়। একজন গ্রাহকের হিসাবে কীভাবে এ সার্ভিস চালু হবে এর ধাপসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো—
প্রথম ধাপ (First step): হিসাবধারীকে ব্যাংকের নির্ধারিত ফরম পূরণের মাধ্যমে আবেদন করতে হয় ।
দ্বিতীয় ধাপ (Second step) : স্বাক্ষরকৃত আবেদন ফরমটি ব্যাংক তাদের SMS Banking Division / Alternative Delivery Channel-এ প্রেরণ করে।
তৃতীয় ধাপ (Third step ) : Alternative Delivery Channel / SMS Banking Division হিসাবধারী কর্তৃক প্রদত্ত রেজিষ্টার্ড মোবাইল নম্বরটি তাদের সফটওয়্যারে Input দেয়। এর মাধ্যমে গ্রাহক সবসময় সংশ্লিষ্ট মোবাইল নম্বরে হিসাবের লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাবলি SMS-এর মাধ্যমে জানতে পারবে।
খ. Mobile অ্যাপস কার্যকর করার প্রক্রিয়া (Process of executing mobile apps )
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে মানুষ সব ক্ষেত্রে আধুনিকতার সংস্পর্শে এসেছে। ব্যাংকিং জগৎও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই মানুষ আজ ঘরে বসেই তার যাবতীয় ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে। ঘরে বসে ব্যাংকিং কার্যক্রম যেমন: দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করা, তহবিল স্থানান্তর, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের বিল প্রদান, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল সহ যাবতীয় ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা, হিসাবের ব্যালেন্স দেখা, হিসাবের টোটাল স্টেটমেন্ট প্রদর্শনসহ যাবতীয় ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করার জন্য হিসাবধারীকে একটি Mobile অ্যাপস চালু করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে থাকে। এজন্য হিসাবধারীকে বার্ষিক একটি ফি দিতে হয়। এই Mobile অ্যাপসটি চালু করতে ব্যাংককে নিচের ধাপসমূহ অনুসরণ করতে হয়—
প্রথম ধাপ (First step) : হিসাবধারীকে ব্যাংকের নির্ধারিত ফর্ম পূরণের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
দ্বিতীয় ধাপ (Second step) : আবেদনকারীকে ফর্মটি স্বাক্ষর করে ব্যাংকে জমা দিতে হয়।
তৃতীয় ধাপ (Third step) : স্বাক্ষরকৃত আবেদন ফর্মটি ব্যাংক তাদের Mobile Banking Division/Alternative Delivery Channel এ প্রেরণ করে ।
চতুর্থ ধাপ (Fourth step) : Alternative Delivery Channel / Mobile Banking Division হিসাবধারী কর্তৃক প্রদত্ত রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরটি তাদের সফটওয়্যারে Input দেয় ।
পঞ্চম ধাপ (Fifth step) : এ পর্যায়ে কাস্টমারের মোবাইলে কাঙ্ক্ষিত অ্যাপসটি (যেমন: বিকাশ, নগদ, এমক্যাশ, রকেট, ইউক্যাশ ইত্যাদি) চালুর জন্য ব্যাংক হিসাবধারীর রেজিস্টার্ড মোবাইলে একটি লিংক দিবেন। কাস্টমার তার মোবাইলে উক্ত অ্যাপসটি চালু করে নিবেন।
গ. Internet ব্যাংকিং কার্যকর করার প্রক্রিয়া (Process of executing internet banking)
বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ সর্বক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া পাচ্ছে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও উন্নতির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। আজ আমরা সর্বক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবা পাচ্ছি। তাই ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্রেও আমরা এই ডিজিটাল সেবাসমূহ পাচ্ছি। ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে Internet ব্যাংকিং। ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদন করাকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং বলে। এর ফলে আমরা পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে নিজ ব্যাংকের সাথে আন্তঃলেনদেন সম্পন্ন করতে পারি। অর্থাৎ Fund ট্রান্সফার, হিসাব নিরীক্ষা, মানুষের পাওনা পরিশোধ, সরকারি বিভিন্ন উপযোগ সেবা গ্রহণের বিল পরিশোধ, শেয়ার ও বিনিয়োগ মিশ্রণ পরীক্ষাকরণ, ব্যালেন্স অনুসন্ধান ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার লেনদেন করতে পারি। কিন্তু ব্যাংকের এসব আধুনিক সেবা নিতে হলে আমাদেরকে কিছু কাজ সম্পন্ন করতে হবে। নিচে তা আলোচনা করা হলো-
Internet Banking সেবাটি পেতে হলে সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপস চালু করতে হবে। এই সেবাটি চালুর ক্ষেত্রে Mobile অ্যাপস সার্ভিসটি চালুর প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। তবে এর মাধ্যমে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে কাস্টমারকে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে—
• কাস্টমারের রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরটি যে মোবাইলে বা যে ট্যাবে থাকবে সেটিতে অবশ্যই এন্টিভাইরাসের লেটেস্ট ভার্সন থাকতে হবে।
• কাস্টমারের মোবাইল বা ট্যাবে কাঙ্ক্ষিত মোবাইল অ্যাপসটি চালু করতে হবে।
• কাস্টমারের নির্ধারিত User ID ও Password দিয়ে Sign in করতে হবে।
• Sign in শেষে একটি OTP (One Time Password) নম্বর আসবে। এই OTP নম্বরটি ভার্চুয়াল কিবোর্ড ব্যবহার করে প্রদান করতে হবে।
• OTP নম্বরটি সঠিকভাবে Input দেওয়া হলে কাস্টমারের হিসাবটি চালু হবে ।
• এখন কাস্টমার তার যাবতীয় কাজ সম্পাদন করতে পারবে।
• কাজ শেষে Sign out-এর মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপস থেকে বের হতে হবে।
এভাবে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে Internet Banking সেবাটি কার্যকর করা হয়।
ঘ. Debit কার্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া (Process of exceuting debit card)
ডেবিট কার্ড হলো ব্যাংক কর্তৃক আমানতকারীকে প্রদত্ত চুম্বকভিত্তিক সাংকেতিক নম্বরযুক্ত বিশেষ এক ধরনের প্লাস্টিকের এটিএম কার্ড। এ কার্ডটি গ্রাহকের চলতি বা সঞ্চয়ী হিসাবের সাথে সংযুক্ত থাকে। পরবর্তী সময়ে গ্রাহক এ কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করলে গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। এ কার্ডের অপর নাম নগদ কার্ড বা সম্পদ কার্ড।
ডেবিট কার্ড সেবার উদ্দেশ্য হচ্ছে আয় বাড়ানো, ব্যয় কমানো ও গ্রাহক সেবার মান নিশ্চিতকরণ। বর্তমানে হিসাব খোলার সাথে সাথে অধিকাংশ ব্যাংক তাদের গ্রাহককে ডেবিট কার্ড প্রদান করে। এক্ষেত্রে ব্যাংক হিসাব খোলার সময় গ্রাহক যেসব ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধাসমূহ গ্রহণ করতে চাচ্ছেন সেজন্য হিসাব খোলার ফরমে টিক দিতে হয়। হিসাবধারী ডেবিট কার্ডটি গ্রহণ করতে চাইলে ডেবিট কার্ড অপশনে টিক দিবে। ব্যাংক হিসাব খোলার সাথে সাথে ডেবিট কার্ড প্রদান করা হয় না। অল্প কিছুদিন যেমন: ১০ বা ১৫ দিন সময় নিবে। কিন্তু কিছু ব্যাংক হিসাব খোলার সময় উক্ত সেবাটি চালুর অপশন রাখে না। ফলে ঐসব ব্যাংকের ক্ষেত্রে হিসাবধারীকে ব্যাংকে নির্দিষ্ট ফরমের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। উক্ত আবেদন ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে ব্যাংক হিসাবধারীর জন্য একটি ডেবিট কার্ড ইস্যু করে। এক্ষেত্রে ব্যাংক একটি গোপন পিন নম্বর প্রদান করে। হিসাবধারী নিজে নতুন Password সেট করবেন। ডেবিট কার্ড ব্যবহারকারীকে এ সেবা পেতে বার্ষিক চার্জ প্রদান করতে হয়। ব্যাংক বিশেষে এ খরচ কম-বেশি হয়। এভাবেই ব্যাংক ডেবিট কার্ড কার্যকর করে।
ঙ. চেক বই কার্যকর করার প্রক্রিয়া (Process of executing cheque book)
চেক বই হচ্ছে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের জন্য ব্যাংকের প্রতি আমানতকারীর লিখিত নির্দেশনামা। অর্থ উত্তোলন সহজ ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে চেকের প্রচলন হয়েছে। আইন অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলে ব্যাংক গ্রাহকের অর্থ তাকে চাহিবামাত্র প্রদানে বাধ্য থাকে। ব্যাংকে হিসাব খোলার সাথে সাথে গ্রাহককে লেনদেনের জন্য চেক বই প্রদান ও তা কার্যকর করে দিতে হয়। এক্ষেত্রে গ্রাহককে কিছু কাজ করতে হয়। নিচে তা আলোচনা করা হলো-
• হিসাবধারীকে চেকের জন্য রিকুইজিশন দিতে হয়। চেক রিকুইজিশন হলো চেক প্রাপ্তির জন্য ব্যাংকের নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করা।
• আবেদন ফরমের সাথে কাস্টমারকে ব্যাংক হিসাব খোলার পর হিসাবধারীর বর্তমান ঠিকানায় হিসাবের
• নম্বরসহ যে ধন্যবাদ জ্ঞাপনপত্র পাঠায় তা সংযুক্ত করতে হয়। ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা উক্ত আবেদন ফরম ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস বুঝে নেয়।
• ব্যাংক আবেদনকারীর স্বাক্ষর ও হিসাব নম্বর চেক করে অথরাইজ করবে এবং আবেদন ফরমটি হেড অফিসে পাঠাবে।
• হেড অফিস ৩য় পক্ষের মাধ্যমে চেক বই প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট ব্রাঞ্চে পাঠাবে 1
• ব্রাঞ্চ উক্ত চেক বইয়ের পাতার সিরিয়ালটি সফটওয়্যারে হিসাবধারীর হিসাবে প্রবেশ করাবে।
• ব্যাংকে রক্ষিত রেজিষ্টার বইয়ে হিসাবের নাম, হিসাব নম্বর, চেকের ক্রমিক নম্বর, চেকের পাতার সংখ্যা ইত্যাদি লিখে ব্যাংক কর্মকর্তা হিসাবধারীর স্বাক্ষর গ্রহণ করে চেক বইটি হিসাবধারীকে প্রদান করবে।
• চেকের সিরিয়ালটি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা Input দিবে এবং অন্যজন তা অথরাইজ করবে। এভাবে চেক বইটি কার্যকর হবে।
আরও দেখুন...