ব্যাংকিং ঋণ পরিচালনা

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - ফিন্যান্সিয়াল কাস্টমার সার্ভিসেস-২ - NCTB BOOK

শাকিরের বড় ভাই মাশরিফ তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে একটি ফাস্টফুডের দোকান দিবেন বলে ঠিক করলেন। কিন্তু সকলে মিলে যে মূলধন জোগাড় হলো দোকান দিতে হলে তার চাইতে আরো ১০ লক্ষ টাকা বেশি প্রয়োজন। জনাব মাশরিফ তাই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। শাকির তার ভাইকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করলে মাশরিফ মূলধনের স্বল্পতার বিষয়টি বললেন। তখন শাকির তার ভাইকে বলল যে, তাদের একাদশ শ্রেণির ফিন্যান্সিয়াল কাস্টমার সার্ভিসেস বিষয়ের একটি ক্লাসে শিক্ষক জনাব ইনতেসার মাহমুদ শিক্ষার্থীদের এ ধরনের একটি গল্প বলেছিলেন এবং কীভাবে মূলধন যোগাড় হয়েছিল সেটিও বলেছিলেন। শাকির তার ভাইকে সেটি বলল এবং আরো বলল যে, ব্যাংক এসব কাজে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার জন্য সবসময় এগিয়ে আসে। ছোট ভাই থেকে এসব শুনে মাশরিফ তার বন্ধুদের সমস্যা সমাধানের পথ হিসেবে ব্যাংকের সহায়তার বিষয়টি বললেন। অতঃপর মাশরিফ তার বন্ধুদের নিয়ে ব্যাংকে গেলেন এবং ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন। ব্যাংক তাদের কিছু কাগজপত্র (ব্যবসায়ের ধরন, জামানত ইত্যাদি) যাচাই-বাছাই করল। অতঃপর সেই কাগজপত্র জমা রেখে তাদের হিসাবের বিপরীতে ১০ লক্ষ টাকার একটি ঋণ মঞ্জুর করল। মাশরিফ ও তার বন্ধুরা সেই ঋণের টাকা নিয়ে তাদের স্বপ্নের ফাস্টফুডের দোকানটি চমৎকারভাবে পরিচালনা করল। এই ঘটনা থেকে ব্যাংক ঋণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এ উপ-অধ্যায়ে আমরা ব্যাংক ঋণের ধারণা, ঋণ বিশ্লেষণ, ব্যাংক ঋণের প্রকারভেদ এবং ব্যাংকের ঋণদান পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারব।

Content added By

ব্যাংক ঋণ-এর ধারণা

ব্যাংক হলো এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যার প্রধান কাজ জনগণের কাছ থেকে সংগৃহীত আমানতের অর্থ সুদের বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের প্রদান করা। সুদের বিনিময়ে ব্যাংক প্রদত্ত এই ধারই হলো ব্যাংক ঋণ বা আগাম।

আমরা জানি, আমানতকারীদের আমানতের বিপরীতে ব্যাংক স্বল্প পরিমাণে সুদ প্রদান করে। তাছাড়া ব্যাংক পরিচালনা করার জন্য কর্মচারীদের বেতন প্রদানসহ কিছু খরচ আছে। এই সুদ ও খরচ মেটানোর জন্য ব্যাংকের কিছু উপার্জন করতে হয়। তাই ব্যাংক আমানতের সব অর্থ নগদ বা তারল্য হিসেবে জমা না রেখে এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চড়া সুদে ব্যবসায়ীদের ঋণ হিসেবে প্রদান করে। প্রদত্ত এই ঋণের বিপরীতে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের নিশ্চয়তা হিসেবে ব্যাংক অনেক সময় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জামানত হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। তবে এই জামানত নেওয়া বা না নেওয়া সম্পূর্ণই নির্ভর করে ব্যাংক ও ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক ও বিশ্বস্ততার ওপর। ব্যাংক শুধু নগদ অর্থই ধার দেয় না বরং গ্রাহকের প্রয়োজনে ব্যাংকের সুনাম, বিশ্বাসসহ বিভিন্ন প্রকার দলিলপত্র ঋণ হিসেবে প্রদান করে। এসব ঋণ দেশ-বিদেশে ব্যবসায় করতে গেলে ব্যবসায়ীদের নগদ অর্থের মতোই কাজ করে ।

অতএব, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যাংক তার নগদ অর্থ এবং দলিলের মাধ্যমে সুনাম, বিশ্বাস নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উপযুক্ত জামানত নিয়ে বা না নিয়ে গ্রাহককে যে সহযোগিতা করে তাকে ব্যাংক ঋণ বলে । 

 অতএব, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যাংক তার নগদ অর্থ এবং দলিলের মাধ্যমে সুনাম, বিশ্বাস ও সেবা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উপযুক্ত জামানত নিয়ে বা না নিয়ে গ্রাহককে যে সহযোগিতা করে তাকে ব্যাংক ঋণ বলে ।

Content added By

ঋণ বিশ্লেষণ-এর ধারণা

ব্যাংক অর্থের ব্যবসায়ী। জনসাধারণের আমানতের অর্থ ব্যাংক বিভিন্ন খাতে ঋণ দিয়ে মুনাফা অর্জন করে থাকে। ব্যাংকের মুনাফা ও অস্তিত্ব রক্ষা উভয়ই নির্ভর করে সঠিক ঋণ ব্যবস্থাপনার ওপর। ঋণ ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ঋণ বিশ্লেষণ। ঋণের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাভের একটি বড় অংশ আসলেও ঋণদান বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কারণ, ঋণগ্রহীতা দেউলিয়া হয়ে গেলে অথবা কোনো ঋণ খেলাপি বা দেউলিয়া হয়ে গেলে বাণিজ্যিক ব্যাংককে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই ঋণের অর্থ যাতে নির্ধারিত সময়ে সুদসহ ব্যাংকে ফেরত আসে সেজন্য ঋণদানের পূর্বে ঋণের প্রকৃতি বিশ্লেষণ অর্থাৎ, ঋণগ্রহীতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আর্থিক সামর্থ্য, লেনদেনের পূর্ব-ইতিহাস, ঋণ গ্রহণের উদ্দেশ্য প্রভৃতি বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করার প্রক্রিয়াকে ঋণ বিশ্লেষণ বলে।

ঋণের সাথে যেহেতু ঝুঁকি বিদ্যমান, সেহেতু ঋণ মঞ্জুরের সময় অত্যন্ত সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই বলা যায়, ঋণদানের সতর্ক পদক্ষেপই ঋণ বিশ্লেষণ। ঋণ বিশ্লেষণের কাজ নিম্নলিখিত পদক্ষেপ অনুসরণে সম্পাদন করা হয়-

১.তথ্য সংগ্ৰহ পর্যায় (Data collection stage) : ঋণ প্রত্যাশী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণের জন্য আবেদন করলে ঋণগ্রহীতা সম্পর্কে ব্যাংক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। যেমন— ঋণগ্রহীতার চরিত্র, ঋণ গ্রহণের উদ্দেশ্য, ব্যবসায় প্রকল্পের সম্ভাবনা, ঋণের ফেরতযোগ্যতা, ঋণগ্রহীতার আর্থিক সচ্ছলতা, ব্যবসায়িক লেনদেনের অভ্যাস, জামানতের প্রকৃতি ইত্যাদি।

২.তথ্য বিশ্লেষণ পর্যায় (Data analysis stage) : ব্যাংক পর্যায়ে ঋণ আবেদন বা ঋণ প্রত্যাশী সম্পর্কে ইতোমধ্যে সংগৃহীত তথ্যাদি বিচার- বিশ্লেষণ করে দেখে ঋণ মঞ্জুর করা যায় কি না। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো যাচাই- বাছাই করে দেখা হয়, সেগুলো হলো—

• আবেদনের যথার্থতা

• আবেদনকারীর সামর্থ্য

• ঋণ ব্যবহারের যোগ্যতা

• ঋণ ফেরতের নিশ্চয়তা

• জামানতের মূল্য ও বিক্রয়যোগ্যতা

৩. চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায় (Final decision making stage) : ঋণ আবেদনের প্রেক্ষিতে সংগৃহীত তথ্যাদি বিচার-বিশ্লেষণ শেষে ব্যাংক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় যে, আবেদনটি গ্রহণ করবে নাকি নাকচ করে দিবে। আবেদনপত্রটি গ্রহণ করা হলে ব্যাংক নিজস্ব ঋণ নীতির অধীনে ঋণ পরিশোধে প্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত শর্তসমূহ আরোপ করে। ব্যাংকের দেওয়া শর্তে ঋণগ্রহীতা রাজি থাকলে ব্যাংক তাকে ঋণ সরবরাহ করে থাকে।

অতএব, ঋণের ঝুঁকি ও আয়ের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়াদি চিহ্নিতকরণ, সেগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, সংগৃহীত তথ্য সহজভাবে উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ এবং সর্বোপরি ঋণ প্রদানের সম্ভাব্যতা সম্পর্কিত সুপারিশমালা প্রণয়নকেই ঋণ বিশ্লেষণ বলা হয়।

▪️জেনে রাখো

ঋণ বিশ্লেষণের পদ্ধতিসমূহ

বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণসংক্রান্ত কাজ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ব্যাংক প্রদত্ত ঋণ ফেরত আসা নিশ্চিত করার জন্য ঋণ ও ঋণগ্রহীতা সম্পর্কিত তথ্যের বিচার বিশ্লেষণ করে।

ঋণ বিশ্লেষণের গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিগুলো SCs, SRs, CAMPARI, PARSAR ইত্যাদি সংক্ষিপ্তরূপে প্রকাশ করা যায়। নিচের চিত্রে ঋণ বিশ্লেষণের দৃষ্টিভঙ্গিগুলো দেখানো হলো :

চিত্র : ঋণ বিশ্লেষণের উপাদানসমূহ

সাধারণত নিচের পদ্ধতিসমূহের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ বিশ্লেষণ করে—

★ ঋণ নীতি নির্দেশক (Credit Policy Guidelines বা CPG) 

★ ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতি (Credit Risk Management Principles বা CRM)

★ ঋণ ঝুঁকি গ্রেড (Credit Risk Grading বা CRG) 

★ পূর্ব সতর্কীকরণ সংকেত (Early Warning Signals বা EWS )

নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো-

ঋণ নীতি নির্দেশক (Credit policy guidelines) : এ পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিজস্ব ঋণদান নির্দেশনা থাকে। এতে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন থাকে। যেমন : বিভিন্ন ঋণের সুবিধা বিশ্লেষণ (ঋণের সর্বোচ্চ আকার, ঋণের সহজলভ্যতা ও জামানতের পরিমাণ ইত্যাদি)। ঋণ নীতি নির্দেশনাসমূহের যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে ঋণের প্রকৃতি ও এর গ্রহণযোগ্যতা বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়।

ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতি (Credit risk management Principles) : ঋণের অর্থ আদায় না হওয়ার আশঙ্কাকে ঋণ ঝুঁকি বলে। ঋণ দেওয়ার আগে ঋণ পর্যালোচনা করতে হয়। পরবর্তী সময়ে সেই পর্যালোচনার আলোকে ঝুঁকি গ্রেডিং করতে হবে। ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতি অনুসরণের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো বা ক্ষেত্রবিশেষে ঝুঁকি রোধ করা সম্ভব হয়। CRM বা ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ধাপগুলো হলো— 

১. ঝুঁকি নির্ধারণ (Risk Identification); 

২. ঝুঁকি মূল্যায়ন (Risk Evaluation) 

৩. ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ (Risk Monitoring) | 

১. উক্ত পদ্ধতি অনুযায়ী ঋণের ঝুঁকি নির্ধারণের জন্য নিম্নোক্ত কাঠামোটি অনুসরণ করা হয়— 

২. ঋণের ঝুঁকির ভার পরিমাপের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকির মাত্রা মূল্যায়ন করা হয়। ঋণের মোট ভার সন্তোষজনক হলে উক্ত ঋণ মঞ্জুর করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আবার ঋণের মোট ভার কম হলে এর সুনির্দিষ্ট কারণও চিহ্নিত করা সম্ভব হয় ।

৩. ঋণের ঝুঁকি পুনঃবিশ্লেষণের মাধ্যমে ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে ঝুঁকি পুনঃবিশ্লেষণের জন্য ঋণ প্রস্তাব রিলেশনশিপ অফিসারের (RM) কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে Zonal Credit Officer Head of Credit (HOC) & Head of Corporate Banking (HOCB), Managing Director ও Executive Committee / Board এর কাছে পাঠানো হয়। সবার সম্মতিতে ঋণ প্রস্তাব গৃহীত হলে তা আবার প্রতিটি ধাপ হয়ে ঋণ রিলেশনশিপ অফিসারের কাছে ফিরে আসে। উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গকে ঋণ অনুমোদনের কর্তৃপক্ষ বলা হয়।

→ ঋণ ঝুঁকি গ্রেডিং (Credit risk grading) : ঝুঁকি পর্যালোচনার পরপরই ঝুঁকির গ্রেডিং করা হয়। এটি ঋণ বিশ্লেষণে কার্যকরী হাতিয়ার। CRG পদ্ধতি অনুযায়ী ঋণ ঝুঁকি বিশ্লেষণের জন্য ঋণকে সর্বমোট আটটি ঝুঁকি গ্রেডে বিভক্ত করা যায়।

→ ঋণ অনুমোদন (Loan approval) : ঋণ অনুমোদনের জন্য একটি ঋণ ক্রেডিট কমিটি (Credit Committee) থাকে। এই কমিটি যদি আবেদনকারীর ঝুঁকি গ্রেডিং-এ সন্তুষ্ট হয়, তবে ঋণ অনুমোদন দিয়ে থাকে।

→ অভ্যন্তরীণ অডিট (Internal audit) : ব্যাংকের একটি অভ্যন্তরীণ অডিট বিভাগ থাকে, যাদের কাজ হচ্ছে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যেসব নীতিমালা হয়েছে তার যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে কি না তা যাচাই করা। এভাবে ঋণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণের অর্থ আদায়ের সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা পায়। তাই অবশ্যই ঋণ অনুমোদনের আগে ঋণ বিশ্লেষণ করতে হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয় কাঠামো তৈরি করে।

Content added By

ব্যাংক ঋণের প্রকারভেদ

জনাব কামাল এবং জনাব রসিদ দু'জনই ব্যবসায়ী। জনাব রসিদ মোট মূলধনের ৮০% ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু জনাব কামালের ব্যবসায় সম্প্রসারণে মূলধন সরবরাহ করতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। জনাব রসিদ জনাব কামালকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে বলেন। তিনি নিজের উদাহরণ টেনে বলেন, কারখানা স্থাপন, মেশিন বসাতে এক ধরনের ঋণ নিয়েছেন যা অনেকদিন ব্যবহার করতে পারবেন। চলতি মূলধনের জন্যও ঋণ নিয়েছেন, যার জন্য পৃথক ঋণ হিসাব খুলতে হয়েছে। পণ্য জামানত রেখে এ হিসাব থেকে তিনি ঋণ নেন। সময়-সুযোগমতো ঋণ পরিশোধ করেন। আবার, পণ্য রপ্তানিতে ব্যাংক থেকে দলিলের মাধ্যমেও অর্থ সংস্থান করতে পারেন। জনাব কামাল ভাবেন, এতো রকমের ঋণ ব্যাংক দেয়। ব্যাংক একজন গ্রাহককে শর্তসাপেক্ষে যে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে তাকে ব্যাংক ঋণ বলে। এখানে শর্তের বিষয়টি গ্রাহক ও ব্যাংকের সুবিধার কথা বিবেচনা করে নির্ধারিত হয়। ব্যাংক নানা ধরনের ঋণ ব্যবস্থার প্রচলন করে থাকে। সরকারি নীতির সমর্থন, দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ, শিল্পায়ন ও ব্যবসায়িক প্রয়োজন পূরণে ব্যাংক স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সুবিধা প্রদান করে। নিচে একটি ছকের সাহায্যে ব্যাংক ঋণের প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো-

১. প্রকৃতি অনুযায়ী ব্যাংক ঋণ (Bank credit on the basis of nature) :  ব্যাংক তার গ্রাহককে চাহিদা ও ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে যে ঋণ প্রদান করে তাকে প্রকৃতিভিত্তিক ঋণ বলে। এর প্রকারভেদ নিম্নরূপ :

ক. তহবিল থেকে প্রদত্ত ঋণ ( Loans provided from the fund) : আমানতকারীর চেকের মর্যাদা করার লক্ষ্যে ব্যাংক যথাযথ নগদ বা তারল্য সংরক্ষণ করে থাকে। পরবর্তীতে ঋণগ্রহীতার আবেদনের ফলে ব্যাংক তার তহবিল থেকে যে অর্থ সহায়তা করে তাকে তহবিল থেকে প্রদত্ত ঋণ বলে। এ ঋণ গ্রাহককে চলতি হিসাবের বা ঋণ হিসাবের মাধ্যমে দেওয়া হয়। তিনভাবে এই ঋণ দেওয়া হয়—

• ধার ( Borrow) : ব্যাংক নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্দিষ্ট সুদের হারে গ্রাহককে অগ্রিম প্রদান করলে তাকে ধার বলে। স্বল্প, মধ্যম বা দীর্ঘ যেকোনো মেয়াদেই এই ঋণ দেওয়া হয়। ঋণের অর্থ নগদে না দিয়ে গ্রাহকের চলতি হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। গ্রাহক প্রয়োজনে চেক কেটে ঋণের অর্থ ব্যবহার করে। চলতি হিসাব না থাকলে গ্রাহককে পৃথক ঋণ হিসাব খুলতে হয়। এই ঋণ গ্রহণের জন্য গ্রাহক যতখানি ঋণ নেয় তার সম্পূর্ণটার ওপরই সুদ দিতে হয়। ঋণের অর্থ সুদসহ একসঙ্গে ফেরত দিতে হয় অথবা কিস্তিতে পরিশোধ করা যায়। জামানতের বিপরীতে এই ঋণ দেওয়া হয়। 

• নগদ ঋণ (Cash loan) : ব্যাংক মূল্যবান জামানত, যেমন: বন্ড বা সিকিউরিটি অথবা ব্যক্তিগত জামানত রেখে যে ঋণ দেয় তাকে নগদ ঋণ বলে। সে সম্পত্তি জামানত হিসেবে ব্যাংকে বন্ধক থাকে। তবে সম্পত্তির ভোগ দখল ঋণগ্রহীতা করে থাকে। কেবল উত্তোলিত অর্থের ওপর গ্রাহক ব্যাংককে সুদ দেয়। ঋণের অর্থ সুদসহ কিস্তিতে পরিশোধ করা যায়।

• জমাতিরিক্ত ঋণ ( Overdraft) : চলতি হিসাবে জমাকৃত অর্থের অতিরিক্ত যে পরিমাণ অর্থ ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা যায় তাকে জমাতিরিক্ত ঋণ বলে। চলতি হিসাবের গ্রাহকগণ স্বল্প সময়ের জন্য অর্থের প্রয়োজন হলে আমানতি অর্থের চেয়েও অতিরিক্ত অর্থ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করার সুযোগ পায়, যা জমাতিরিক্ত ঋণ হিসেবে পরিচিত। ব্যাংক সাধারণত দীর্ঘদিনের পরিচয়, বিশ্বস্ততা ও সুনামের ভিত্তিতে গ্রাহককে এই ঋণ দিয়ে থাকে। ব্যক্তিগত ও অব্যক্তিগত উভয় প্রকার জামানতের বিপরীতে ব্যাংক এই ঋণ মঞ্জুর করে। খুব অল্প সময়ের জন্য গ্রাহকগণ এই ঋণের সুবিধা পেয়ে থাকে। এই ঋণে কেবল উত্তোলিত অর্থের ওপর সুদ দিতে হয়।

২. সময় অনুযায়ী ব্যাংক ঋণ (Bank credit on the basis of time ) : ঋণগ্রহীতা কত সময়ের মধ্যে ঋণকৃত অর্থ সুদসহ ব্যাংককে ফেরত দিবে তাকে ব্যাংক ঋণের মেয়াদ বা সময় বলে। সময়ের ওপর ভিত্তি করে তিন ধরনের ঋণ প্রদান করা হয়, যথা :

ক. স্বল্পমেয়াদি ঋণ (Short-term loan) : এক বছর বা তার কম সময়ের জন্য এই ঋণ দেওয়া হয়। এই ঋণের অর্থ সুদসহ কিস্তিতে বা একসাথে ফেরত দিতে হয়। এটি দুইভাবে প্রদান করা হয়। যেমন—

• চাহিবামাত্র পরিশোধিত ঋণ (Debt repayment on demand) : সাধারণত কয়েক ঘণ্টা থেকে এক সপ্তাহের জন্য এই ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ব্যাংক অর্থ ফেরত চাইলে গ্রাহক তা দিতে বাধ্য থাকে।

• স্বল্পমেয়াদি নোটিশে দেয় ঋণ ( Loans on short notice) : গ্রাহকদের ৭ দিন থেকে ১৫ দিন মেয়াদে এই ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে ব্যাংক নোটিশ দিয়ে যেকোনো সময় অর্থ আদায় করতে পারে।

খ. মধ্যমমেয়াদি ঋণ (Mid-term loan) : এক বছর থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে পরিশোধের শর্তে এই ঋণ দেওয়া হয়। সাধারণত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জামানতের বিপরীতে ব্যাংক এই ধরনের ঋণ মঞ্জুর করে।

গ. দীর্ঘমেয়াদি ঋণ (Long-term loan) : পাঁচ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ে পরিশোধের শর্তে ব্যাংক এই ঋণ মঞ্জুর করে। এই ঋণের সুদের হার বেশি। সুদ ছাড়া ব্যাংককে সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। কারখানা স্থাপন, গৃহ নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে এ ঋণ ব্যবহৃত হয়। জামানত ছাড়া এ ঋণ পাওয়া যায় না।

৩.জামানতের ভিত্তিতে ঋণ (Bank credit on the basis of mortgage ) : ব্যাংক ঋণের অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তার জন্য ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রাখে। এই জামানত রাখা বা না রাখার ওপর ভিত্তি করে ব্যাংক ঋণ দুই ধরনের হয়। যথা :

ক. জামানতযুক্ত ঋণ (Collateral loan) : বিভিন্ন প্রকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক বা তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে জামানত রেখে যে ঋণ দেওয়া হয় তাকে জামানতযুক্ত ঋণ বলে । 

খ. জামানতমুক্ত ঋণ (Collateral free loan) : ব্যাংক তার দীর্ঘদিনের পরিচিত, সৎ, সচ্ছল, সুনামের অধিকারী, গ্রাহককে জামানত ছাড়াই ঋণ প্রদান করে। এ ঋণে ঝুঁকি বেশি। কোনো কারণে অর্থ আদায় না হলে ব্যাংককে এই ঋণ আদায়ের জন্য আদালতের আশ্রয় নিতে হয়।

৪. উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণ (Bank credit on the basis of objectives) : ঋণগ্রহীতা কী উদ্দেশ্যে ঋণ নিচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে ব্যাংক দুই ধরনের ঋণ দিয়ে থাকে। যথা-

ক. বাণিজ্যিক ঋণ (Commercial loan) : ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যে ঋণ প্রদান করা হয় তাকে বাণিজ্যিক ঋণ বলে। 

খ. অবাণিজ্যিক ঋণ (Non-commercial loan) : ব্যবসায় উদ্দেশ্য বহির্ভূত অর্থাৎ নিজস্ব প্রয়োজনে যে ঋণ প্রদান করা হয় তাকে অবাণিজ্যিক ঋণ বলে। 

গ. বাণিজ্যিক দলিলি ঋণ (Commercial document loan) : যে ঋণের দলিল ব্যাংক ব্যবসা- বাণিজ্যে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে ইস্যু করে তাকে বাণিজ্যিক দলিলি ঋণ বলে। এসব দলিল ব্যাপকভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত হয়। এ দলিলগুলো হচ্ছে—

★ প্রত্যয়পত্র (Letter of credit) : আমদানিকারকের পক্ষে রপ্তানিকারকের অনুকূলে ব্যাংক ইস্যুকৃত অর্থ পরিশোধের নিশ্চয়তাপত্রকেই প্রত্যয়পত্র বলে। এটি ছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্য অসম্ভব।

★ আজ্ঞাপত্ৰ (Demand draft) : যে ঋণের দলিলের মাধ্যমে কোনো ব্যাংক তার অন্য কোনো শাখা বা অন্য কোনো ব্যাংককে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ চাহিবামাত্র পরিশোধের নির্দেশ প্রদান করে তাকে আজ্ঞাপত্র বলে। এ দলিল Buyer Buyer's Bank Issuing Bank অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

★ পে-অর্ডার (Pay-order) : যে ঋণের দলিলের মাধ্যমে ব্যাংকের এক শাখা থেকে অন্য শাখাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধের নির্দেশ প্রদান করে তাকে পে-অর্ডার বলে। স্থানাস্তরের মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদানের কাজে এটি ব্যবহৃত হয়। এটি হস্তান্তর অযোগ্য। এটি সাধারণত একই জেলা বা নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে ব্যবহৃত হয়।

★ ব্যাংকের প্রতিশ্রুতিপত্র ( Banker's letter of commitment) : এটি ব্যাংক প্রদত্ত এমন একটি ঋণের দলিল যার মাধ্যমে ব্যাংক গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা দেয়। ঋণ পরিশোধের পরেই নিশ্চয়তাপত্র বাতিল হয়ে যায়। এ দলিল ঋণের জামানত হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ঘ. অবাণিজ্যিক দলিলি ঋণ (Non-commercial document loan) : যে দলিলি ঋণ অব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ঋণগ্রহীতার ব্যক্তিগত কাজের স্বার্থে প্রদান করা হয় তাকে অবাণিজ্যিক দলিলি ঋণ বলে। এ দলিলগুলো হলো-

• ভ্রমণকারীর প্রত্যয়পত্র (Traveler's certificate ) : যে প্রত্যয়পত্র ইস্যুর মাধ্যমে ব্যাংক তার বিদেশস্থ শাখা বা প্রতিনিধিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চাহিবামাত্র ভ্রমণকারীকে পরিশোধের নির্দেশ দেয় তাকে ভ্রমণকারীর প্রত্যয়পত্র বলে।

• ভ্রমণকারীর চেক (Traveler's cheque): যে চেক ব্যাংক ভ্রমণকারীকে ভ্রমণে অর্থ সংকট নিরসনের জন্য ইস্যু করে এবং বিদেশস্থ শাখা বা প্রতিনিধিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ উক্ত চেকের বিপরীতে প্রদানের আদেশ দেয় তাকে ভ্রমণকারীর চেক বলে। এই চেক পাওয়ার জন্য ব্যাংকে হিসাব থাকার দরকার হয় না। কেবল অর্থ জমা দিয়েই এই চেক গ্রাহক পেতে পারে।

• ভ্রাম্যমাণ নোট (Traveling notes) : এটি এমন একটি ঋণের দলিল যার অর্থ চাহিবামাত্র ব্যাংক তার বিদেশস্থ শাখা বা প্রতিনিধির মাধ্যমে গ্রাহককে অর্থ প্রদানের শর্তহীন নির্দেশ দেয়। এই নোটের সাথে একটি নির্দেশপত্র যুক্ত থাকে। যেখানে প্রাপকের নাম, নমুনা স্বাক্ষর, ক্রমিক নং, নোটের সংখ্যা, অর্থ পরিশোধকারী শাখা বা প্রতিনিধির নাম ও ঠিকানা উল্লেখ থাকে।

• সার্কুলার চেক (Circular cheque): যে প্রত্যয়পত্রের মাধ্যমে ভ্রমণকারী বা পর্যটক বিদেশস্থ প্রচারকারী ব্যাংকের একাধিক শাখা বা প্রতিনিধির নিকট হতে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে তাকে সার্কুলার চেক বলে। এ চেকের সাথেও নির্দেশপত্র যুক্ত থাকে, যাতে প্রাপকের নমুনা স্বাক্ষর ও পরিচিতি দেওয়া থাকে। টাকা গ্রহণের সময় স্বাক্ষর ও পরিচিতি মিলিয়ে দেখা হয়।

▪️অন্যান্য খাতে প্রদত্ত ঋণ (Credit given at other sectors ) :

ক. লিম (LIM): লিম (Loan against Imported Merchandise) ঋণ সুবিধা সাধারণত আমদানি করা পণ্য জামানতের বিপরীতে দেওয়া হয়। এ ঋণে আমদানি করা মালামাল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকে। ঋণগ্রহীতা নগদ টাকা পরিশোধ করে এর ডেলিভারি নেয়। সাধারণত ৪৫ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে এ ঋণ সমন্বয় করতে হয়।

খ. এল.টি.আর (L.T. R.) এ ঋণ ( Loan against Trust Receipt) হলো লিমের মত আমদানি করা মালের ওপর এক ধরনের ঋণ সুবিধা। এক্ষেত্রে ট্রাস্ট রসিদ দিয়ে ব্যাংক থেকে পণ্য ডেলিভারি নেয়। এই পণ্য বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে (Colleteral) জামানত নেওয়া হয়।

গ. রপ্তানি-পূর্ব ঋণ (Packing or pre-shipment credit) : সাধারণত রপ্তানিকারককে পণ্য রপ্তানির জন্য এ ধরনের ঋণ দেওয়া হয়। রপ্তানি পণ্যের জন্য কাঁচামাল কেনা, উৎপাদন, প্যাকিং এবং তা জাহাজে তোলার উদ্দেশ্যে এ ঋণ দেওয়া হয়। এছাড়া রপ্তানি আদেশ, স্থির প্রত্যয়পত্র এবং রপ্তানি পণ্যের দখলহীন বন্ধকের বিপরীতে চলতি মূলধন হিসেবে এ ঋণ দেওয়া হয় ।

ঘ. রপ্তানি-উত্তর ঋণ (Post shipment credit): রপ্তানি-উত্তর ঋণ রপ্তানিকারকের পক্ষে একটি ঋণ সুবিধা। সাধারণত রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের পর এবং তার মূল্য পাওয়ার আগে রপ্তানিকারককে সাহায্য করার জন্য এ ঋণ দেওয়া হয়। জাহাজী চালান বা সমজাতীয় দলিলের বিপরীতে ব্যাংক এ ঋণ দেয়।

ঙ. বিল ক্রয় ও বাট্টাকরণ (Purchase and discount of bills): এটি একটি নিরাপদ ও সুবিধাজনক ঋণ। সাধারণত মেয়াদপূর্তির আগে গ্রাহকের কাছ থেকে কমমূল্যে এ ধরনের বিল কিনে বা বাট্টা করে ব্যাংক গ্রাহককে ঋণ সুবিধা দেয়। এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে বিলের সাথে বিভিন্ন দলিলাদি যেমন : রেলওয়ে রসিদ, জাহাজী চালান, পার্সেল ওয়ে বিল ও বিনিময় বিল সংযুক্ত থাকে। তাই এ বিল বেশি নিরাপদ।

চ. পি.এ.ডি. (PA.D. Payment Against Document): এক্ষেত্রে আমদানি বিল পরিশোধের - মাধ্যমে ব্যাংক গ্রাহককে যে ঋণ দেয় তাকে বোঝায়। সাধারণত খ্যাতনামা ও প্রতিষ্ঠিত গ্রাহকদের ব্যাংক এ ঋণ দেয়।

Content added || updated By

ব্যাংকের ঋণদান পদ্ধতি

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রকার ঋণ প্রদান করে থাকে। গ্রাহক যেমন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, তেমনি ঋণের পরিমাণও বিভিন্ন হয়। আবার, ঋণ পরিশোধের সময় বা মেয়াদও বিভিন্ন হতে পারে। তাই গ্রাহকভেদে ঋণের পরিমাণ (স্বল্প, মধ্য বা দীর্ঘ ঋণ) বিবেচনা করে বিভিন্ন মেয়াদি ঋণ প্রদান করা হয়। নিচে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণদান পদ্ধতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

১. ঋণের আবেদনপত্র ( Loan application) : ঋণের আবেদনকারীকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের নাম ও লোগো সম্বলিত আবেদনপত্রে আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্রে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে সেগুলো পূরণ করতে হয়। আবেদনপত্রের সাথে ব্যাংক কর্তৃক উল্লেখিত সব ডকুমেন্টস সংযুক্ত করতে হয় 1 যেমন— জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট আকারের ছবি, ট্রেড লাইসেন্স/বেতন বিবরণী, টিআইএন সার্টিফিকেট, কোম্পানি হলে কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন সনদ, গ্যারান্টরের প্রয়োজনীয় সব তথ্যসহ সম্মতিপত্র দাখিল করতে হয়।

২. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যাচাই-বাছাইকরণ (Verification and sorting required documents) : বাণিজ্যিক ব্যাংকের যে শাখায় আবেদন করা হয়, সেই শাখা আবেদনকারী কর্তৃক প্রদত্ত সব ডকুমেন্টসের তথ্যাবলি যাচাই-বাছাই করে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করে। অতঃপর ঋণ অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করে।

৩. ঋণসীমা নির্ধারণ (Determining loan limit) : প্রত্যেকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ অনুমোদনের জন্য একটি ঋণসীমা (Limit) ভিত্তিক অনুমোদনকারী ব্যক্তির তালিকা পূর্বেই নির্ধারণ করা থাকে। অর্থাৎ শাখা ম্যানেজার কত টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারবে, আবার আঞ্চলিক/জোন প্রধান কত টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারবে তা পূর্বেই নির্ধারণ করা থাকে। তদ্রূপ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আঞ্চলিক কার্যালয়ের চাইতে বেশি পরিমাণ ঋণ অনুমোদন করতে পারে। তবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুমোদন সীমার অতিরিক্ত ঋণ অনুমোদনের জন্য ঋণের এই আবেদন বোর্ডের পরিচালনা সভায় পেশ করতে হয়। পরিচালনা বোর্ড অনুমোদন দিলে এই ঋণ মঞ্জুর হয়।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ঋণ আবেদনকারীর জামানতের বিপরীতেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহককে ঋণ প্রদান করে থাকে। অনেক সময় গ্রাহকের স্থায়ী আমানতের (এফডিআর /FDR) বিপরীতে গ্রাহকগণ ঋণ নিয়ে থাকে। তখন ব্যাংকভেদে FDR এর পরিমাণের ৮০% থেকে ১০০% পর্যন্ত গ্রাহককে ঋণ দেওয়া হয় এবং যেটি প্রায় সময় শাখা ম্যানেজার অনুমোদন দিয়ে থাকে। কারণ এটিতে ঋণখেলাপী হওয়ার আশঙ্কা থাকে না ।

৪. ঋণ বণ্টন ( Loan disbursement ) : ঋণ অনুমোদনের পর সেটির অনুমোদিত কপি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে শাখায় পাঠানো হয়। ব্যাংকের শাখা ঋণগ্রহীতার হিসাবের অনুকূলে অনুমোদিত ঋণের অর্থ জমা করে। অতঃপর ঋণগ্রহীতা তার প্রয়োজনমতো টাকা উত্তোলন করে থাকে।

  ওপরের ধাপগুলো মেনেই সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণদান করে থাকে। ঋণদানের এই প্রক্রিয়ার বাইরেও কিছু কিছু কাজ রয়েছে যা ব্যাংকগুলো তার প্রয়োজনভেদে করে। তবে ওপরের বর্ণিত ধাপগুলো ঋণদান পদ্ধতির জন্য অত্যাবশ্যকীয় ধারা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তার বিভিন্ন মেয়াদি ঋণের বিপরীতে ঋণের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে সুদের হার নির্ধারণ করে এবং ঋণ প্রদানের পর ঐ হারে সুদও গ্রহণ করে থাকে।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion