ব্যাংক যে ঋণ দেয় সুদসহ তার কিস্তি যথাসময়ে ফেরত আসবে, সেটাই সে প্রত্যাশা করে। যদি তা যথাসময়ে ফেরত পাওয়া না যায়, তাহলে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তাকে ঋণ ঝুঁকি বলে। শুধু ঋণ ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, ব্যাংক বিভিন্ন কোম্পানির সিকিউরিটিজ বিক্রয়ের দায় গ্রহণ করলে সেখান থেকেও ঋণ ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে। যেমন: ব্যাংক কোনো কোম্পানির ১ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রয়ের দায় গ্রহণ করল। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোম্পানির মোট টাকা ব্যাংককে প্রদান করতে হবে। এতেও ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে। এখন যদি উক্ত শেয়ারের মূল্য বিভিন্ন কিস্তিতে আদায় করতে হয় তবে সেক্ষেত্রে অনেক শেয়ারহোল্ডার তাদের কিস্তির অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ নাও করতে পারে। সেক্ষেত্রেও ঋণ ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। এরূপ ঝুঁকি দু'ধরনের হতে পারে
১.প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ঋণ ঝুঁকি (Firm's specific credit risk) :
একই ধরনের প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেওয়ার ফলে বা একই ধরনের সিকিউরিটিজের বিপক্ষে ঋণ দেওয়ায় যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তাকে প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ঋণ ঝুঁকি বলে। যদি কোনো ব্যাংক দেশের গার্মেন্টস শিল্প খাতে অধিক ঋণ দেয় তবে কোনো কারণে গার্মেন্টস শিল্প সংকটে পড়লে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকের ঝুঁকি অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। একই ধরনের কোম্পানির সিকিউরিটিজের বিপক্ষে ঋণ দিলেও এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
২. প্রকৃতিগত ঋণ ঝুঁকি (Systematic credit risk) : ধনী-গরিব যেকোনো দেশেই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এক ধরনের থাকে না। এরূপ ভালো-মন্দ ব্যাংকের জন্য ঝুঁকির সৃষ্টি করে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় বা সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিরূপ অবস্থা সৃষ্টির ফলে ব্যাংক ঋণের অর্থ যথাসময়ে ফেরত পেতে যথেষ্ট সমস্যা হয়। এ ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে সৃষ্ট ঝুঁকিকে প্রকৃতিগত ঋণ ঝুঁকি বলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২৯ সাল থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মহামন্দার কারণে সেখানকার হাজার হাজার ব্যাংক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, যা প্রকৃতিগত ঋণ ঝুঁকির উদাহরণ। বর্তমানে শ্রীলংকার যে অর্থনৈতিক মহামন্দা চলছে তাতে ব্যাংক ঋণের অর্থ যথাসময়ে ফেরত পেতে যথেষ্ট সমস্যা হচ্ছে। এটিই মূলত প্রকৃতিগত ঋণ ঝুঁকি ।
আরও দেখুন...