খ বিভাগ—পদ্য
বাঙালি নারীর আত্ম জাগরণে যে নারীর অবদান বেশি, তিনি হলেন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। বিবাহের পর উদার মানসিকতার অধিকারী স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের পরম মমতায় ও সহযোগিতায় এবং নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তিনি স্বশিক্ষিত হয়ে ওঠেন। আত্মশুদ্ধি ও নিজের জানার জগৎকে পরিশুদ্ধ করার মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্যচর্চায় আহানিয়োগ করেন। তার সাহিত্য সাধনায় বাঙালি মুসলিম নারী সমাজই মুখ্য হয়ে ওঠেন। সাহিত্য সাধনায় যখন তিনি নিয়োজিত তখন হঠাৎ করে তাঁর প্রাণপ্রিয় স্বামী পরপারে যাত্রা করেন। এতে তিনি মর্মাহত হন। বিষাদপূর্ণ অন্তরে আপন কর্ম সম্পাদনের জন্য কলকাতায় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গালর্স স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে আজ বাঙালি নারী সমাজ মুক্ত-স্বাধীনভাবে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করছেন।
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় ঘটে যাওয়া রক্তাক্ত বিভীষিকা আজও আমার স্তম্ভিত করে দেয়। বিপন্ন মানবতার আর্তচিৎকারে ভারি হয়ে উঠে আকাশ-বাতাস। ফারাজ আইয়াজ হোসেন, এক প্রাণবন্ত যুবক। বিপদের মুখে বন্ধুদের ছেড়ে আসতে রাজি না হওয়ায় দুষ্কৃতিকারীদের হাতে প্রাণ হারায়। সে প্রকৃত বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, বন্ধুত্বের জন্য জীবন উৎসর্গ করে। দৃঢ়তার সাথে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ভালোবাসা ও সহানুভূতির মাধমে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী, ধর্ম ও জাতীয়তার মানুষের মানবিকতাকে একসূত্রে গ্রথিত করেছে। ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে তার এই অসাধারণ চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রদর্শন বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজরা এদেশের চাষীদের দিয়ে জোর করে নীলচাষ করাতো। চাষীদেরকে নামেমাত্র দাদন দিয়ে নীলচাষ করানো হতো। নীলচাষে বাধ্য হওয়ায় চাষীরা তাদের প্রয়োজনীয় শস্য যেমন- ধান, পাট, সরিষা ইত্যাদি উৎপাদন করতে পারতো না। নীলচাষ করতে অপারগ হলে চাষীদের ওপর নেমে আসতো নির্মম অত্যাচার। এ কারণে গড়ে ওঠে নীল বিদ্রোহ। নদীয়ার বিষ্ণুচরণ ও পাবনার কাদের মোল্লার মতো অসংখ্য মানুষ কৃষক- আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ধীরে ধীরে এ আন্দোলন সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে।