ব্যাকটেরিয়ার কোষীয় আকার, ফ্লাজেলার বিন্যাস, রঞ্জক গ্রহণ ক্ষমতা, পুষ্টি গ্রহণ, শ্বসন প্রক্রিয়া প্রভৃতির ভিত্তিতে অণুজীববিজ্ঞানীরা ব্যাকটেরিয়াকে নিম্নলিখিতভাবে শ্রেণিবিন্যাস করেছেন।
ক. আকৃতি অনুসারেঃ
ব্যাকটেরিয়ার কোষের আকৃতি বিভিন্ন ধরনের, যথা- গোলাকার, দন্ডাকার, প্যাচানো, কমা চিহ্ণের মতো, অণুসূত্রাকার, বহুরূপী ইত্যাদি। নিচে এদের বর্ণনা দেয়া হলো ।
১. গোলাকার (Spherical) বা কক্কাস (Coccus বহুবচনে -Cocci) : এককোষী গোল বা ডিম্বাকার, একক ব্যাকটেরিয়াকে কক্কাস বলে। সহাবস্থান অনুযায়ী এসব ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন ধরনের হয়, যেমন-
মাইক্রোকক্কাস (Micrococcus) : 'কক্কাস ব্যাকটেরিয়া যখন এককভাবে থাকে তখন তাকে মাইক্রোকক্কাস বা মনোকক্কাস বলে । উদাহরণ- Micrococcus flavus.
ডিপ্লোকক্কাস (Diplococcus) : এক্ষেত্রে গোলাকার ব্যাকটেরিয়ারসমূহ কক্কাস – জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে । উদাহরণ-Diplococcus pneumoniae.
স্ট্রেপটোকক্কাস (Streptococcus) : এরা দেখতে গোলাকার এবং একটি সারিতে শ খলাকারে থাকে উদাহরণ-Streptococcus lactis
টেট্রাকক্কাস (Tetracoccus) : যখন কক্কাই (গোলাকার ব্যাকটেরিয়া) দুটি ভিন্নতলে বিভাজিত হয় এবং ৪টি কোষের একেকটি গুচ্ছ গঠন করে। তখন সে অবস্থাকে টেট্রাকক্কাস বলে। উদাহরণ- Gaffkya tetragena.
সারসিনা (Sarcina) : যখন কক্কাই তিনটি ভিন্ন তলে বিভাজিত হয় এবং ৪টি করে এক একটি কোষগুচ্ছ গঠন করে। উদাহরণ-Sarcina lutea.
স্ট্যাফাইলোকক্কাস (Staphylococcus) : এক্ষেত্রে কক্কাই তিনটি ভিন্ন তলে অনিয়মিতভাবে বিভাজিত হয় এবং আঙ্গুরের থোকার মতো একেকটি গুচ্ছ গঠন করে। উদাহরণ- Staphylococcus aureus.
২. দণ্ডাকার বা ব্যাসিলাস (Rod-shaped or Bacillus) : এগুলো দেখতে বেলনাকার বা দণ্ডাকার। একক কোষকে ব্যাসিলাস (Bacillus) এবং একত্রে ব্যাসিলি (Bacilli) বলে। এধরনের ব্যাকটেরিয়ার সহাবস্থান অনুযায়ী এগুলো নিন্মোক্ত ধরনেরঃ
মনোব্যাসিলাস (Monobacillus ) : যখন ব্যাসিলাস এককভাবে অবস্থান করে। উদাহরণ-Bacillus
ডিপ্লোব্যাসিলাস (Diplobacillus ) : যখন দণ্ডাকার ব্যাকটেরিয়া বিভাজিত হয়ে দুটি পাশাপাশি সংলগ্ন থাকে। উদাহরণ-Moraxella lacunata.
স্ট্রেপটোব্যাসিলাস (Streptobacillus ) : ব্যাকটেরিয়া বিভাজিত হয়ে পাশাপাশি শৃঙ্খলাকারে অবস্থান করে । উদাহরণ- Bacillus tuberculosis.
কক্টোব্যাসিলাস (Coccobacillus ) : ব্যাকটেরিয়া
সামান্য লম্বা বা ডিম্বাকার হয়। Salmonella,
৩. সর্পিলাকার বা স্পাইরিলাম (Spirillum) : এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া-দেহ সর্পিলাকার বা স্ক্রুর মতো প্যাচানো হয় । উদাহরণ-Spirillum minus.
৪. ভিব্রিও (Vibrio) : এগুলো দেখতে কমা আকৃতির, অর্থাৎ দেহ খানিকটা পাক খাওয়া হয়। উদাহরণ- Vibrio
৫. হাইফা বা অণূসূত্রাকার (Hyphac-like) : এগুলো পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট দীর্ঘ অণূসূত্র আকৃতির হয়।
পরিবেশগত অবস্থার কারণে কিছু ব্যাকটেরিয়া তাদের আকৃতির পরিবর্তন ঘটায়, উদাহরণ- Streptomyces sp.
৬. বহুরূপী (Plcomorphic) : এদেরকে বহুরূপী ব্যাকটেরিয়া বলে।
খ. ফ্ল্যাজেলার সংখ্যা ও অবস্থান অনুসারে:
ফ্ল্যাজেলার সংখ্যা ও অবস্থান অনুসারে ব্যাকটেরিয়া প্রধানত ছয় প্রকার; যথা-
১. অ্যাটিকাস (Atrichous) : এসব ব্যাকটেরিয়াতে কোন ফ্ল্যাজেলা থাকে না; উদাহরণ-Diptheria bacilli
২. মনোট্রিকাস (Monotrichous) : এরূপ ব্যাকটেরিয়ার এক প্রান্তে বা এক পার্শ্বে মাত্র একটি ফ্লাজেলাম থাকে। উদাহরণ-Vibrio cholerae
৩. অ্যামফিট্রিকাস (Amphitrichous) : এধরনের ব্যাকটেরিয়ার কোষের দুই প্রান্তে দুটি ফ্ল্যাজেলা থাকে; উদাহরণ-Spirilla serpentans |
৪. সেফালোট্রিকাস (Cephalotrichous) : এসব ব্যাকটেরিয়ার কোষের এক প্রান্তে একগুচ্ছ ফ্ল্যাজেলা থাকে উদাহরণ-Pseudomonas fluorescens.
৫. লফোট্রিকাস ( Lophotrichous) : এধরনের
ব্যাকটেরিয়ার কোষের দুই প্রান্তে দুইগুচ্ছ ফ্ল্যাজেলা থাকে (থাইম্যান, 1950); উদাহরণ-Spirillum volutans
৬. পেরিট্রিকাস ( Peritrichous) : এরূপ ব্যাকটেরিয়া কোষের চারপাশে বহু ফ্ল্যাজেলা থাকে; উদাহরণ- Bacillus tuposus.
গ. রঞ্জক ধারণের ক্ষমতা অনুসারে:
ড্যানিশ চিকিৎসক হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান গ্রাম (Hans Christion Gram) ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে ব্যাকটেরিয়া কোষে রঞ্জিতকরণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন । তাঁর নাম অনুসারে এই রঞ্জিতকরণ পদ্ধতিকে গ্রাম রঞ্জণ (Gram stain) পদ্ধতি বলা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রধান রঞ্জক হলো কিস্ট্যান্স ভায়োলেট। এ রঞ্জকের উপর ভিত্তি করে ব্যাকটেরিয়া দুই ধরনের।
১. গ্রাম পরিজটিভ (Gram positive) : এরূপ ব্যাকটেরিয়া ক্রিস্ট্যাল ভায়োলেট রং ধারণ করে এবং স্পিরিট দিয়ে ধুয়ে ফেললে রং চলে যায় না; উদাহরণ- Bacillus subjilis।
২. গ্রাম নেগেটিভ (Gram Negative) : এরূপ ব্যাকটেরিয়া ক্রিস্ট্যাল ভায়োলেট রং ধারণ করে কিন্তু স্পিরিট দিয়ে ধুয়ে ফেললে রং চলে যায়; উদাহরণ—Salmonella typhi
ঘ. অক্সিজেনের নির্ভরশীলতা অনুসারে:
অক্সিজেনের নির্ভরশীলতা অনুসারে ব্যাকটেরিয়া প্রধানত দুই প্রকার; যথা-
১.অ্যারোবিক (Aerobic) : এরা বাতাসের মুক্ত অক্সিজেন ছাড়া বাঁচে না। উদাহরণ- Azotobacter beijerinckia |
২. অ্যানঅ্যারোবিক (Anaerobic) : এরা বাতাসের মুক্ত আক্সজেন ছাড়াই বাঁচে। উদাহরণ-Clostridium