জীববিজ্ঞানীগণ এ পর্যন্ত ২,৭০,০০০ ভাস্কুলার উদ্ভিদ এবং ১৫ লক্ষেরও বেশি প্রাণী-প্রজাতি শনাক্ত করেছেন । এসব প্রজাতির মধ্যে নানা কারণে ভিন্নতা দেখা যায়।
প্রাণীর বিভিন্নতা বা প্রাণিবৈচিত্র্য (Animal Diversity)
পৃথিবীর সমস্ত জলচর, স্থলচর ও খেচর প্রাণীর মধ্যে যে জিনগত, প্রজাতিগত ও বাস্তুসংস্থানগত বিভিন্নতা দেখা যায় প্রজনন, পরিযায়ী (migration) সহ আরও অনেক বিষয়ে প্রাণিদের বৈচিত্র্য সুস্পষ্ট। প্রত্যেক প্রাণী নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে মন্ডিত হয়ে অন্য প্রাণী থেকে ভিন্ন । পৃথিবীর বিচিত্র পরিবেশে দৃশ্য ও অদৃশ্যমান অসংখ্য প্রাণীর বিচরণ রয়েছে। প্রাণিবৈচিত্র্যের প্রকারভেদ প্রাণিবৈচিত্র্য নিচে বর্ণিত তিন প্রকার ।
ক. জিনগত বৈচিত্র্য (Genetic diversity): একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে জিনগত পার্থক্যের কারণে উক্ত প্রজাতির প্রাণিদের মধ্যে যে বৈচিত্র্যের উদ্ভব ঘটে তাকে জিনগত বৈচিত্র্য বলে। এ ধরনের বৈচিত্র্য যেহেতু একই প্রজাতির মধ্যে ঘটে তাই একে অন্তঃপ্রজাতিক (intraspecific) বৈচিত্র্যও বলা হয়। যেমন-একজন আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ এবং একজন অস্ট্রেলিয়ান শ্বেতাঙ্গ মানুষ উভয়েই একই প্রজাতি অর্থাৎ Homo sapiens -এর অন্তর্ভুক্ত হওয়াসত্ত্বেও এদের দেহের গঠন, গায়ের রং, চুলের রং ও আকৃতি ইত্যাদিতে অনেক পার্থক্য দেখা যায়। জিনগত পার্থক্যের কারণেই এদের মধ্যে বৈচিত্র্যতা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত জিনগত বৈচিত্র্যের বিষয়টি কেবল গৃহপালিত প্রজাতি বা চিড়িয়াখানায় কিংবা উদ্ভিদ উদ্যানের প্রজাতির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হতো, বর্তমানে বন্যপ্রজাতির ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হচ্ছে।
খ. প্রজাতিগত বৈচিত্র্য (Species diversity) : ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির জীবের মধ্যে বিদ্যমান বৈচিত্র্যকে প্ৰজাতিগত বৈচিত্র্য বলা হয় দুই প্রজাতির প্রাণী কখনোই এক রকম হয় না। একই গণভুক্ত প্রজাতিগুলোর মধ্যে ক্রোমোজোম সংখ্যা ও আঙ্গিক গঠনে যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। এ ধরনের বৈচিত্র্যকে আন্তঃপ্রজাতিক (interspecific) বৈচিত্র্যও বলা হয়। যেমন-রয়েল বেঙ্গল টাইগার (Panthera tigris) এবং সিংহ (Panthera leo) একই গণভুক্ত দুটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এদের মধ্যে গণপর্যায়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মিল থাকলেও প্রজাতি পর্যায়ে ক্রোমোজোম সংখ্যা ও জিনের বিন্যাস ভিন্ন হওয়ার ফলে এদের বৈশিষ্ট্যাবলির মধ্যে প্রজাতিগত বৈচিত্র্য বিরাজ করে।
গ. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য (Ecosystem diversity): পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ুর সাথে জীবজগতের মিথস্ক্রিয়ায় ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশীয় একক বা বায়োম (biom) সৃষ্টি হয়) যেমন-মরু বায়োম, বনভূমি বায়োম, তৃণভূমি বায়োম ইত্যাদি। প্রতিটি বায়োমে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যমন্ডিত বৈচিত্র্যময় জীব রয়েছে। বিভিন্ন বায়োমে বাসকারী জীবের বৈচিত্র্যকে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে। তুন্দ্রা বায়োমের শ্বেত ভল্লুক এবং বনভূমি বায়োমের ভাল্লুকের মধ্যে এ বৈচিত্র্য বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্রের একটি উদাহরণ।
প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসের ভিত্তি (Basis of Animal Classification):
১.দেহের আকার (Body shape):
ক. অণুবীক্ষণিক প্রাণী (Macro-animal) : এসব প্রাণী এত ক্ষুদ্র যে অণুবীক্ষণযন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না। যেমন- মাছের ফুলকার প্রোটিস্টার জীবাণু Trichodina anabasi ।
খ. বৃহত্তর প্রাণী (Macro-animal) : এসব প্রাণী আকারে বড় এবং খালি চোখে ভালোভাবে দেখা যায়। যেমন- Cavia porecellus (গিনিপিগ)।
২.সংগঠন ক্রমমাত্রা (Grades of organization):
ক. কোষীয় মাত্রার গঠন (Cellular grade of organization) : যে দেহগঠনে কিছু কোষ সম্মিলিত হয়ে নির্দিষ্ট কাজ করে সে ধরণের দেহগঠনকে কোষীয় মাত্রার গঠন বলে। এক্ষেত্রে এক ধরণের শ্রম বিভাজন দেখা যায়, যেমন কিছু কোষ জনন কাজে, অন্য কোষগুলো পুষ্টি সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত থাকে। Porifera পর্বভুক্ত প্রাণী এ ধরনের গঠন সম্বলিত সদস্য।
খ. কোষ টিস্যু মাত্রার গঠন (cell-tissue grade of organization) : সদৃশ কোষগুলো যখন একটি অভিন্ন কাজ সম্পন্নের জন্য সুনির্দিষ্ট প্যাটার্ন বা স্তরে গোষ্ঠীবদ্ধ বিন্যস্ত হয়ে টিস্যু নির্মাণ করে সে ধরণের গড়নকে কোষ-টিস্যু মাত্রার গঠন বলে।
গ. টিস্যু-অঙ্গ মাত্রার গঠন (Tissue-organ grade of organization) : স্বচ্ছন্দ জীবনযাপনের জন্য যখন একাধিক টিস্যু-নির্মিত বিভিন্ন অঙ্গের সমাহার ঘটে তখন সে গঠনকে টিস্যু-অঙ্গ মাত্রার গঠন বলে। Platyhelminthes পর্বভুক্ত প্রাণীদেহে এ গঠন মাত্রা সর্বপ্রথম আবির্ভূত হয়েছে। এক্ষেত্রে চক্ষুবিন্দু, প্রোবোসিস, জননাঙ্গ ইত্যাদি টিস্যু-অঙ্গ মাত্রার গঠনের উদাহরণ।
ঘ. অঙ্গ-তন্ত্র মাত্রার গঠন (Organ-sytem grade of organization) : উচ্চতর প্রাণীগোষ্ঠীতে এ ধরনের গঠন দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে অঙ্গগুলো একত্রে কিছু কাজ সম্পাদনের জন্য অঙ্গ-তন্ত্র (organ system) সৃষ্টির মাধ্যমে দেহকে সর্বোচ্চ মাত্রার গঠনে উন্নত করেছে। তন্ত্রগুলো (systems) দেহে শ্বসন, সংবহন, পরিপাক প্রভৃতি মৌলিক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে। অধিকাংশ পর্বে (Phyla) এ ধরনের গঠন দেখা যায়। এ মাত্রার গঠন সসর্বপ্রথম আবির্ভূত হয়েছে নিমারটিয়ান (Nemartean) নামক এক সামুদ্রিক প্রাণীগোষ্ঠীতে।
৩.জীবন পদ্ধতি (way of living):
ক. মুক্তজীবী (Free living) : এসব প্রাণী স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায় এবং এরা পারস্পরিক সহযোগিতা বা সাহচর্যে বাস করে না। যেমন- কবুতর (Columba livia)
খ. পরজীবি (Parasite) : এসব প্রাণী খাদ্যের জন্য অন্য প্রাণীর দেহে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং আশ্রয়দাতার দেহ থেকে খাদ্য শোষণ করে বেঁচে থাকে। যেমন- যকৃত কৃমি (Fasciola hepatica)।
৪.ক্লিভেজ ও ভ্রূণীয় বিকাশ (Cleavage and Development): যে প্রক্রিয়ায় যৌন জননকারী প্রাণীর এককোষী জাইগোট মাইটোসিস কোষ বিভক্তির মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে অসংখ্য বহুকোষী ভ্রূণ সৃষ্টি করে তাকে ক্লিভেজ বা সম্ভেদ বলে। ডিমে কুসুমের পরিমাণের ভিত্তিতে ক্লিভেজ সম্পূর্ণ বা হলোব্লাস্টিক (holoblastic) কিংবা আংশিক বা মেরোব্লাসটিক (meroblastic) হতে পারে।
বিভাজন তলের উপর ভিত্তি করে ক্লিভেজ নিচে বর্ণিত তিন ধরনের –
অরীয় ক্লিভেজ (Radial cleavage) : এ ধরনের ক্লিভেজে বিভাজন তলগুলো জাইগোটকে সবসময় সুষম ও অরীয়ভাবে ভাগ করে। এর ফলে উৎপন্ন ব্লাস্টোমিয়ারগুলো সুষম আকৃতির ও অরীয়ভাবে সাজানো হয়। উদাহরণ : Arthropoda পর্বের প্রাণীদের ক্লিভেজ।
দ্বিপার্শ্বীয় ক্লিভেজ (Bilateral cleavage) : এ ধরনের ক্লিভেজে দ্বিতীয় বিভাজন পর্যন্ত অরীয় ক্লিভেজ ঘটে কিন্তু তৃতীয় বিভাজন হতে মধ্য রেখা বরাবর অনুপ্রস্থভাবে ক্লিভেজ সম্পন্ন হয়। এর ফলে চারটি করে দুই সারি কোষ সৃষ্টি হওয়ায় দ্বি-পার্শ্বীয় প্রতিসাম্যতা দেখা দেয়। উদাহরণ : Chordata পর্বের প্রাণীদের ক্লিভেজ।
সর্পিল ক্লিভেজ (Spiral cleavage) : এ ধরনের ক্লিভেজও দ্বিতীয় বিভাজন পর্যন্ত অরীয় ক্লিভেজ ঘটে এবং তৃতীয় বিভাজন হতে চক্রাকার ঘুর্ণনের ফলে অ্যানিমেল মেরুর (animal pole) ব্লাস্টোমিয়ারগুলো, ভেজিটাল মেরু হয়। উদাহরণ : Annelida ও Mullusca পর্বের প্রাণীদের ক্লিভেজ।
৫.ভ্রূণস্তর (Germ layers):
ক. দ্বিস্তরী বা দ্বিভ্রূণস্তরী প্রাণী (Diploblastic animal) : যেসব প্রাণীর ভ্রূণের গ্যাস্ট্রুলা পর্যায়েকোষগুলো এক্টোডার্ম ও এন্ডোডার্ম নামক দুটি স্তরে বিন্যস্ত থাকে। স্তরদুটির মাঝে থাকে আঠালো জেলির মতো অকোষীয় মেসোগ্লিয়া (mesoglea)। Cnidaria পর্বের প্রাণীরা দ্বিস্তরী (যেমন- Hydra)
খ. ত্রিস্তরী বা ত্রিভ্রূণস্তরী প্রাণী (Triploblastic animal) : ভ্রূণে গ্যাস্ট্রুলা পর্যায়ে কোষগুলো তিনটি কোষীয় স্তরে বিন্যাস্ত থাকে। তিনটি স্তরের মধ্যে বাইরের স্তরটিকে এক্টোডার্ম (ectoderm), মাঝেরটিকে মেসোডার্ম (mesoderm) এবং ভিতরেরটিকে এন্ডোডার্ম (endoderm) বলে। Platyhelminthes (ফিতাকৃমি- Taenia solium) থেকে শুরু করে Chordata (মানুষ – Homo sapiens) পর্ব পর্যন্ত প্রাণী সকল প্রাণী ত্রিস্তরী।
৬.প্রতিসাম্য (Symmetry): প্রতিসাম্য বলতে প্রাণীদেহের মধ্যরেখীয় তলের দুপাশে সদৃশ বা সমান আকার-আকৃতিবিশিষ্ট অংশের অবস্থানকে বোঝায়।
ক. গোলীয় প্রতিসাম্য (Spherical symmetry) : একটি গোলককে যেভাবে কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত যে কোনো তল বরাবর সদৃশ বা সমান অংশে ভাগ করা যায়। যেমন-Vlovox globator. (ফটোসিন্থেটিক প্রোটিস্ট)।এছাড়া Radiolaria (উদাহরণ- Acrosphaera trepanata) এবং Heliozoa (উদাহরণ- Gymnosphaera albida) জাতীয় প্রোটিস্টান জীবে এ ধরনের প্রতিসাম্য দেখা যায়।
খ. অরীয় প্রতিসাম্য (Radial symmetry) : কোনো প্রাণীর দেহকে যদি কেন্দ্রীয় লম্ব অক্ষ বরাবর কেটে সদৃশ দুইয়ের বেশি সংখ্যক অর্ধাংশে ভাগ করা যায়। হাইড্রা (Hydra), জেলিফিশ (Aurelia), সী অ্যানিমন (Metridium)।
গ. দ্বিঅরীয় প্রতিসাম্য (Biradial symmetry) : কোনো প্রাণীদেহে যখন কোনো অঙ্গের সংখ্যা একটি কিংবা একজোড়া হওয়ায় অনুদৈর্ঘ্য অক্ষ বরাবর শুধু দুটি তল পরস্পরের সমকোণে অতিক্রম করতে পারে, ফলে ঐ প্রাণীদেহে ৪টি সদৃশ অংশে বিভক্ত হতে পারে। এ ধরণের প্রতিসাম্য হচ্ছে দ্বিঅরীয় প্রতিসাম্য। Ctenophora (টিনোফোরা) পর্বভুক্ত প্রাণীর দেহ, যেমন- ceoloplana)
ঘ. দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসাম্য (Bilateral symmetry) : যখন কোনো প্রাণীর দেহকে কেন্দ্রীয় অক্ষ বরাবর শুধু একবার ডান ও বামপাশে (অর্থাৎ স্যাজিটাল তল) দুটি সদৃশ অংশে ভাগ করা যায়, তখন তাকে দ্বিপার্শীয় প্রতিসাম্য বলে। যেমন- প্রজাপতি (Pieris brassicae), ব্যাঙ (Fejervarya asmati), মানুষ (Homo sapiens) প্রভৃতি।
ঙ. অপ্রতিসাম্য (Asymmetry) : যখন কোনো প্রাণীর দেহকে অক্ষ বা দেহতল বরাবর ছেদ করলে একবারও দুটি সদৃশ অংশে ভাগ করা যায় না তখন তাকে অপ্রতিসাম্য বলে । উদাহরণ -স্পঞ্জ (Cliona celata), আপেল শামুক (Pila globosa) ইত্যাদি।
৭.খন্ডকায়ন (Metamerism or Segmentation) :
কোনো প্রানীর দেহ যদি লম্বালম্বি অক্ষ বরাবর একই রকম খন্ডাংশের পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে গঠিত হয়, তখন এ অবস্থাকে খন্ডকায়ন বা মেটারিজম (metamerism) বলে। প্রতিটি খন্ডকে বলা হয় মেটামিয়ার (metamere) বা সোমাইট (somite)।
ক. সমখন্ডকায়নবিশিষ্ট (Homonomous metamere) : যে সব প্রাণীর দেহখন্ডকগুলো সদৃশ বা একই ধরনের হয়, সেসব প্রানীকে সমখন্ডকায়নবিশিষ্ট বলে। উদাহরণ- কেঁচোর খন্ডকায়ন।
খ. অসমখন্ডকায়নবিশিষ্ট (Heteronomous metamere) : যেসব প্রাণীদেহ খন্ডগুলো অসম বা ভিন্ন ধরনের হয়, সেসব প্রানীকে অসম খন্ডকায়নবিশিষ্ট বলে। উদাহরণ- পতঙ্গের খন্ডকায়ন।
৮.অঞ্চলায়ন বা ট্যাগমাটাইজেশন (Tagmatization): Arthropoda পর্বের প্রাণীদেহ বাহ্যিকভাবে খন্ডায়িত, কিছু খন্ডক একত্রে মিলিত হয়ে দেহে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চল সৃষ্টি করে। প্রতিটি অঞ্চল কে ট্যাগমাটা (tagmata) বলে। এমন অঞ্চলীকরন বলে অঞ্চালয়ন।
৯.প্রান্তিকতা (Polarity): যে প্রান্তে মুখ থাকে তাকে মাথা ও তার বিপরীত প্রান্তকে পায়ু বা লেজপ্রান্ত বলা হয়। এরকমভাবে যেকোনো প্রাণীর দেহের দুই প্রান্তের গঠনের ভিন্নতাই প্রান্তিকতা নামে পরিচিত। সাধারণত প্রাণীদেহের প্রান্তিকতা পাঁচ ধরনের।
ক. সম্মুখ প্রান্ত (Anterior end) : দেহের যে প্রান্তে মাথা থাকে।
খ. পশ্চাৎ প্রান্ত (Posterior end) : মাথার বিপরীত প্রান্ত।
গ. পৃষ্ঠীয় প্রান্ত (Dorsal end) : দেহের উপরের দিকের তল।
ঘ. অঙ্কীয় প্রান্ত (Ventral end) : দেহের নিচের দিকের তল।
ঙ. পার্শ্বীয় প্রান্ত (Lateral end) দেহের দুই পাশে অতল।
১০.তল (Planes): যে অঞ্চল বরাবর প্রাণীদেহকে ডান ও বাম বা অনুদৈর্ঘ্য ও অনুপ্রস্থ বা সম্মুখ ও পশ্চাত অঞ্চল বরাবর দু ভাগে ভাগ করা যায়, তাকে তল বলে।
ক. মধ্যরেখীয় তল (Median or Sagittal plane): কেন্দ্রীয়, পৃষ্ঠীয় ও অঙ্কীয় অক্ষ বরাবর দেহকে পাড়শি ওভাবে সদৃশ ডান ও বাম অর্ধাংশে ভাগ করা যায়
খ. সম্মুখ তল (Frontal plane): লম্বালম্বি অক্ষ বরাবর দেহকে পৃষ্ঠীয় ও অঙ্কীয় এ দুটি অংশে ভাগ করা যায়
গ. অনুপ্রস্থ তল (Transverse plane) : দেহের মধ্যে কোন বরাবর দেহকে সম্মুখ ও পশ্চাৎ অর্ধাংশে ভাগ করা যায়।
শ্রেণিবিন্যাস একটি সুসংবদ্ধ বিজ্ঞান। খুঁটিনাটি অনেক নীতি মেনে শ্রেণিবিন্যাস সম্পন্ন করতে হয়। নিচে প্রধান নীতিগুলোর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেয়া হলো।
১. শ্রেণিবদ্ধগত বৈশিষ্ট্য (Taxonomic character) নির্ধারণ : একটি ট্যাক্সন-সদস্যের যে বৈশিষ্ট্য অন্য ট্যাক্স বন্ধগত একই) থেকে তাকে পৃথক করতে পারে বা পৃথক করার সম্ভাবনা দেখাতে পারে সেটি ঐ ট্যাক্সনের শ্রেণিবন্ধগত বৈশিষ্ট্য। শ্রেণিবিন্যাসের সময় প্রত্যেক ধাপে অন্তর্ভুক্ত ট্যাক্সনের শনাক্তকারী শ্রেণিবদ্ধগত বৈশিষ্ট্যাবলির উল্লেখ করতে হয়।
২. শনাক্তকরণ (Identification) : শ্রেণিবন্ধগত বৈশিষ্ট্যের আলোকে পর্যবেক্ষণে থাকা কোনো ট্যাক্সন-সদস্য পরিচিত বা আগে বর্ণিত হয়েছে এমন হতে পারে, কিংবা অপরিচিতও হতে পারে। তার অর্থ এই নয় যে, এটি একটি নতুন ট্যাক্সন। তাই সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য প্রাণীর সাথে তুলনামূলক বর্ণনার আলোকে নমুনা প্রাণিসমূহকে শনাক্ত করতে হবে।
৩. ক্যাটাগরিকরণ বা ব্যাংকভুক্তি (Categorization or Ranking) : যে সব প্রাণী বা প্রাণিগোষ্ঠীকে
শ্রেণিবিন্যাসের উদ্দেশে বিভিন্ন বাপ অর্থাৎ ক্যাটাগরি বা র্যাংক-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয় সে সব প্রাণিগোষ্ঠীকে ট্যাক্সন (taxon: বহুবচনে taxa) বলে। ট্যাক্সন হচ্ছে শ্রেণিবদ্ধগত একক (taxonomic unit)। অর্থাৎ শ্রেণিবিন্যাসে ব্যবহৃত প্রতিটি ক্যাটাগরিভুক্ত (র্যাংকভুক্ত) প্রাণীর জনগোষ্ঠী বা জনগোষ্ঠীবর্গকে একেকটি ট্যাক্সন বলে। যেমন-Animalia, Chordata, Mammalia, Primates, Hominidae, Homo, Homo sapiens একেকটি ট্যাক্সন। বিবর্তনিকভাবে সম্পর্কিত এবং অভিন্ন বৈশিষ্ট্যাবলি বহনকারী প্রাণিগুলো (ট্যাক্সন)-কে একেকটি শ্রেণিবদ্ধগত ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শ্রেণিবিন্যাসের আবশ্যিক (mandatory) ধাপ (র্যাংক বা ক্যাটাগরি) হচ্ছে ৭টি, যথা:- Kingdom, Phylum, Class, Order, Family. Genus ও Species |
৪. নামকরণ (Nomenclature): কোনো বিশেষ প্রাণী বা প্রাণিগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট নামে শনাক্তকরণের পদ্ধতিকে বলা হয় নামকরণ। ব্যাপক তথ্যানুসন্ধানের পর কোন প্রাণী নতুন প্রমাণিত হলে উক্ত প্রাণীকে ICZN এর নিয়মানুযায়ী নামকরণ করতে হবে। সুইডিশ বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস (Carolus Linnaeus) সর্বপ্রথম নামকরণের একটি পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। এটি দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি (Binomial Nomenclature System) নামে পরিচিত। এ নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক জীবের বৈজ্ঞানিক নামের দুটি অংশ থাকে যার প্রথমটি গণ (genus) নাম এবং দ্বিতীয়টি প্রজাতি (species) নাম। গণ নামের প্রথম অক্ষর ইংরেজী বর্ণমালার বড় অক্ষরে এবং প্রজাতি নামের আদ্যক্ষর ছোট অক্ষরে লিখতে হয়। এভাবে দুটি ল্যাটিন বা রূপান্তরিত ল্যাটিন শব্দ দিয়ে প্রাণীর নামকরণের পদ্ধতিকে দ্বিপদ নামকরণ (binomial nomenclature) বলে। অনেক সময় একটি প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্যঅঙ্গসংস্থানিক পার্থক্য দেখা যায়। (সে সব সদস্যকে ঐ নির্দিষ্ট প্রজাতির উপপ্রজাতি (subspecies) হিসেবে গণ্য করা হয়। তখন গণ ও প্রজাতি সমন্বিত দ্বিপদ নামটি উপপ্রজাতিসহ ত্রিপদ (Irinomial) নামে পরিচিত হয়। এভাবে, উপপ্রজাতিসহ কোনো প্রাণীর নামকরণকে ত্রিপদ নামকরণ (trinominal nomenclature) বলে। যেমন: ইউরোপীয়ান চড়ুই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Passer domesticus; কিন্তু নীলনদ এলাকার চড়ুই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Passer domesticus niloticus পাখি বিজ্ঞানী Schlegel (1844 ) সর্বপ্রথম ত্রিপদ নামকরণ পদ্ধতির প্রচলন করেন এবং এটি ICZN কর্তৃক স্বীকৃত পদ্ধতি।
কোনো জীবের নামকরণ পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল এবং তা কতকগুলো নিয়ম অনুসারে সমাধান করা হয়। প্রাণীর নামকরণের নিয়মগুলো প্রাণী নামকরণের আন্তর্জাতিক সংস্থা International Commission on Zoological Nomenclature (সংক্ষেপে ICZN) প্রণয়ন করে থাকে এবং নিয়মগুলো International Code on Zoological Nomenclature-এ লিপিবদ্ধ করা হয়। নিামকরণ সংক্রান্ত নিয়মাবলি নবম-দশম শ্রেণিতে পড়ানো হয়েছে]
৫. সংরক্ষণ (Preservation) : শ্রেণিবিন্যাসকৃত নমুনাকে বিস্তারিত তথ্যসহ (সংগ্রহকারীর নাম, সংগ্রহের স্থান, সময়, তারিখ ইত্যাদি) সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে অন্যান্য নমুনা শনাক্তকরণ সহায়ক হয় । এ কারণে বিভিন্ন দেশে প্রাপ্ত প্রাণীর নমুনা প্রাকৃতিক জাদুঘর, বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের বিভাগীয় সংরক্ষণশালায় সরকারী অনুমোদন সাপেক্ষে সংরক্ষিত থাকে । নমুনাটি হতে পারে স্টাফ করা (stuffed) প্রাণী, চামড়া, কিংবা বিভিন্ন অংশ (শিং, লোম, মল ইত্যাদি) বা কংকাল। প্রাণিদেহ শুকনো বা তরলেও সংরক্ষণ করা যায় । ফরমালিন ও অ্যালকোহল হচ্ছে সংরক্ষণের ভালো তরল
মাধ্যম। বিভিন্ন প্রাণিগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন মাত্রার ফরমালিন ও অ্যালকোহল, কিংবা অন্যান্য বিশেষ সংরক্ষণ মাধ্যম নির্দিষ্ট রয়েছে। অতএব, শ্রেণিবিন্যাসে নমুনা সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল অধ্যায়
প্রাণিজগতের পর্বগুলোকে সাধারণভাবে প্রধান পর্ব (Major Phyla) এবং গৌণ পর্ব (Minor Phyla)-এ রকম দুটি দলে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। কোন বিবর্তনিক সম্পর্ক বা বৈশিষ্ট্যগত ভিত্তিতে দলবিভক্তি করা হয় না। তবে, প্রজাতির সংখ্যা, বাস্ততন্ত্রে তাদের গুরুত্ব এবং পর্ব হিসেবে সুস্পষ্টতা অনুযায়ী এরূপ শ্রেণিবিন্যাস প্রচলিত আছে।
১. প্রধান পর্ব (Major Phyla) : যে সব পর্বের প্রজাতিসংখ্যা অনেক বেশি (পাঁচ হাজারের অধিক), প্রজাতির সদস্যরা বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং সুস্পষ্টভাবে পর্ব হিসেবে পৃথক সত্ত্বার অধিকারী সে সব পর্বকেই প্রধান (মুখ্য) পর্ব অর্থাৎ Major Phyla হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে ।
২. গৌণ পর্ব (Minor Phyla) : যে সব পর্বের প্রজাতিসংখ্যা নগণ্য, প্রজাতির বাস্তুতান্ত্রিক গুরুত্ব নেই বললেই চলে এবং শ্রেণিবিন্যাসগত অবস্থান অস্পষ্ট অথবা বিতর্কিত সে সব পর্বই গৌণ পর্ব অর্থাৎ Minor Phyla হিসেবে স্বীকৃত।
শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী প্রাণিজগতে সর্বমোট ৩৩টি পর্ব রয়েছে।
প্রাণীজগতের প্রধান পর্ব সমূহঃ
উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে প্রাণিজগতকে দুটি গ্রুপ (group)-এ ভাগ করা হয়েছে, যেমন-ননকর্ডাটা (nonchordata) এবং কর্ডাটা (Chordata)। (যেসব প্রাণিদের জীবনে কখনও নটোকর্ড উপস্থিত থাকে না, তাদের ননকর্ডাটা বলে । এদের স্নায়ুরজ্জু (nerve cord) অঙ্কীয়, নিরেট ও গ্রন্থিযুক্ত; গলবিলীয় ফুলকারন্ধ্র ও পায়ুপশ্চাৎ লেজ অনুপস্থিত। অপরদিকে যেসব প্রাণিদের দেহে নটোকর্ড থাকে, স্নায়ুরজ্জু পৃষ্ঠীয় ও ফাঁপা, গলবিলীয় ফুলকারন্ধ্র ও পায়ুপশ্চাৎ লেজ বিদ্যমান তাদের কর্ডাটা বলে ।
৮ টি ননকর্ডাটা আর ১ টি কর্ডাটা পর্ব। নিচে এদের নাম দেওয়া হলোঃ
পর্ব ১: Porifera (পরিফেরা)
পর্ব ২: Cnidaria (নিডেরিয়া)
পর্ব ৩: Platyhelminthes(প্লাটিহেলমিনথেস)
পর্ব ৪ : Nematoda (নেমাটোডা)
পর্ব ৫ : Annelida (অ্যানিলিডা)
পর্ব ৬ : Arthropda (আর্থোপোডা)
পর্ব ৭ : Mollusca (মলাস্কা)
পর্ব ৮:Echinodermata(একাইনোডার্মাটা)
পর্ব ৯:Chordata(কর্ডাটা)
পর্ব ১: Porifera (পরিফেরা)
পরিফেরা পর্বের প্রাণিরা প্রাচীন ও সরল প্রক্রিতির শব্দটি ল্যাটিন শব্দ পোরাস(Porus) যার অর্থ ছিদ্র এবং ফেররে(ferre) যার অর্থ বহন করা থেকে এসেছে। ১৮৩৬ সালে Grant সর্বপ্রথম পর্বটির নামকরণ করেন। এরা দেখতে স্পঞ্জের মত। সাধারণত সামুদ্রে বাস করে তবে Spongilidae গোত্রের প্রাণীরা মিঠাপানিতে বাস করে। এ পর্বে শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা আট হাজার ছয়শ ঊনপঞ্চাশটি।
পরিফেরা পর্বের প্রাণিদের বৈশিষ্ট্য:
* দেহপ্রাচীর অস্টিয়া (Ostia) নামক অসংখ্য ক্ষুদ্র ছিদ্রযুক্ত ।
* এরা বহুকোষী হলেও কোষগুলো সুবিন্যস্ত নয়, তাই সুনির্দিষ্ট কলাতন্ত্রও নেই।
* দেহে বিশেষ নালিকাতন্ত্র (Canal system) আছে।
* দেহে কোয়ানোসাইট (Coanocyte) নামে এক বিশেষ ফ্লাজেলাযুক্ত কোষ দিয়ে পরিবেষ্টিত এক বা একাধিক প্রকোষ্ঠ (Chamber) রয়েছে।
* দেহের ভেতরে স্পঞ্জোসিল (Spongocoel) নামে একটি প্রসস্ত গহ্বর আছে যা দেহের বাইরে অসকুলাম (Osculum) নামে একটি বড় প্রান্তিক ছিদ্রপথে উন্মুক্ত।
উদাহরণঃ
Sycon gelatinosum(স্পঞ্জ)Leucosolenia complicata,Euplectella aspergillus
পর্ব ২: Cnidaria (নিডেরিয়া)
নিডারিয়া পর্বে রয়েছে জেলিফিশ, সমুদ্রের কলম, ফাইসেলিয়া, সাগর কুসুম, পরপিটা, অ্যাডামশিয়া। নিডারিয়া শব্দটি এসেছে গ্রিক নাইড(Knide) যার অর্থ রোমকাঁটা, এবং ল্যাটিন আরিয়া (Aria) যার অর্থ সংযুক্ত । ১৮৮৮ সালে Hatschek পর্বটির নামকরণ করেন। এ পর্বের শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা দশ হাজার দুইশ তিনটি।
নিডেরিয়া পর্বের প্রাণিদের বৈশিষ্ট্য:
* ভ্রূণ অবস্থায় দুটি কোষস্তর থাকে, বাইরে এক্টোডার্ম (বহিঃত্বক) এবং ভেতরে এন্ডোডার্ম (অন্তঃত্বক); তাই এদের ডিপ্লোব্লাস্টিক বা দ্বিস্তরবিশিষ্ট বা দ্বিত্বকযুক্ত প্রাণী বলে।
* এরা নিম্নশ্রেণির বহুকোষী অরীয় প্রতিসম প্রাণী । এরা বহুকোষী হলেও এদের দেহে কলাতন্ত্র সুগঠিত নয়।
* দেহের ভেতরে সিলেন্টেরন নামে একটি প্রশস্ত গহ্বর থাকে যা একমাত্র মুখছিদ্র পথে বাইরে মুক্ত; কোনো পায়ুপথ নেই। সিলেন্টেরনে খাদ্য পরিপাক ও পরিবহন ঘটে তাই একে গ্যাস্ট্রোভাসকুলার গহ্বর বলে।
* দেহত্বকে বিপুল সংখ্যক নিডোব্লাস্ট (Cnidoblast) নামক দংশক কোষ থাকে। নিডোব্লাস্ট কোষে হিপনোটক্সিন নামক বিষ থাকে।
* এদের খাদ্যবস্তু বহিঃকোষীয় ও অন্তঃকোষীয় উভয়ভাবেই পরিপাক হয়।
উদাহরণ:
Hydra virdis (হাইড্রা),Obelia geniculata (প্রবাল),Aurelia aurita (জেলিফিশ)
পর্ব ৩: Platyhelminthes(প্লাটিহেলমিনথেস)
প্লাটিহেলমিন্থেসকে চ্যাপ্টাকৃমিও বলা হয়। প্লাটিহেলমিন্থেস নামটি এসেছে গ্রিক প্লাটি(Platys) যার অর্থ চ্যাপ্টা এবং হেলমিন্থেস (Helminth) যার অর্থ কৃমি থেকে । ১৮৫৯ সালে Gogenbour এ পর্বের নামকরণ করেন। প্লাটিহেলমিন্থেস পর্বের শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা ঊনত্রিশ হাজার চারশো সাতাশিটি। এদের অধিকাংশই মানুষ ও অন্যান্য প্রাণিদেহে অন্তঃপরজীবী হিসেবে বাস করে। এরা সরলতম প্রথম ত্রিস্তরি প্রাণী। এদের দেহে সর্বপ্রথম টিস্যু-অঙ্গ মাত্রার গঠন দেখা যায়।
প্লাটিহেলমিনথেস পর্বের প্রাণিদের বৈশিষ্ট্য:
* দেহ নরম, দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম ও পৃষ্ঠ-অঙ্কীয়ভাবে চাপা।
* দেহত্বক সিলিয়াযুক্ত এপিডার্মিস অথবা কিউটিকল-এ আবৃত।
* ত্রিস্তরী প্রাণী হলেও এরা অ্যাসিলোমেট (সিলোমবিহীন)।
* একমাত্র পরিপাক নালি ছাড়া অন্তঃস্থ আর কোন গহ্বর নেই।
* বিভিন্ন অঙ্গের ফাঁকে ফাঁকে প্যারেনকাইমা (parenchyma) নামক যোজক টিস্যু বা মেসেনকাইমে পূর্ণ থাকে।
* অনেক ক্ষেত্রে বাহ্যিক চোষক অথবা হুক অথবা উভয়ই উপস্থিত।
* রক্ত সংবহন ও শ্বসনতন্ত্র অনুপস্থিত; রেচনতন্ত্র শিখা কোষ (flame cell) নিয়ে গঠিত।
* অধিকাংশ পরজীবী। অনেক সদস্য সরাসরি দেহতলের সাহায্যে পুষ্টি গ্রহণ করে। কিছুসংখ্যক মুক্তজীবী।
* এ পর্বের প্রাণীরা উভলিঙ্গ; নিষেক অভ্যন্তরীণ এবং পরিস্ফুটন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধরনের।
* চ্যাপ্টা কৃমির জীবনচক্রে অনেক ধরনের লার্ভা (larva) দশা থাকে।
উদাহরণঃ
Fasciola hepatica (যকৃত কৃমি),Taenia solium(ফিতাকৃমি)
পর্ব ৪ : Nematoda (নেমাটোডা)
নেমাটোডা শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ নেমা (nema) থেকে, যার অর্থ সুতা । আর এডোস (eides) এর অর্থ আকৃতি এবং হেলমিন্থ এর অর্থ কৃমি। এই পর্বের প্রাণিরা অঙ্গ-তন্ত্র গঠন মাত্রার প্রাণী। অপ্রকৃত সিলোমেট প্রাণীর মধ্যে নেমাটোডের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। নেমাটোডা পর্বের শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা পঁচিশ হাজার তেত্রিশ টি। ১৮৫১ সালে সর্বপ্রথম Gegenbaur নেমাটোডা পর্বটির নামকরণ করেন। নেমাটোডা পর্বের প্রাণীগুলো সুতা কৃমি বা গোল কৃমি নামে পরিচিত। এরা স্থলচর বা জলচর এবং মুক্তজীবী বা পরজীবী প্রাণী।
নেমাটোডা পর্বের প্রাণীর বৈশিষ্ট:
* দেহ নলাকার, দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম ও দু’দিক সুঁচালো।
* এরা আণুবীক্ষণিক থেকে এক মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
* পৌষ্টিকনালী সোজা ও শাখাহীন এবং মুখ থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত।
* মুখচ্ছিদ্র সাধারণত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ওষ্ঠ দিয়ে পরিবেষ্টিত।
* দেহ নমনীয়, ইলাস্টিন-নির্মিত অকোষীয় পুরু কিউটিকলে আবৃত। পোষকের পরিপাকনালীর পাচক রস হতে রক্ষা করে কিউটিকল।
* অপ্রকৃত সিলোম উপস্থিত। এরা সিউডোসিলোমেট নামে পরিচিত।
* এই পর্বের প্রাণীরা অখণ্ডকায়িত।
* স্নায়ুতন্ত্র একটি বৃত্তাকার নার্ভ রিং এবং কয়েকটি স্নায়ু ও লম্বালম্বি স্নায়ুরজ্জু নিয়ে গঠিত।
* অধিকাংশ প্রাণী একলিঙ্গ এবং এসব প্রাণীর যৌন দ্বিরূপতা বা sexual dimorphism দেখা যায়।
উদাহরণ:
Trichuris trichiura (চাবুক কৃ্মি),Ascaris lumbricoides (গোল কৃমি),Loa loa (চোখকৃমি)
পর্ব ৫ : Annelida (অ্যানিলিডা)
অ্যানিলিডা শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ এ্যানিউলাস (annulus) থেকে যার অর্থ ছোট আংটি এবং আইড (ida) যার অর্থ রূপ থেকে। ১৮০৯ সালে Lamarck পর্বটির নামকরণ করেন। এ পর্বের শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা ১৭,৩৮৮টি। অ্যানিলিডা প্রাণী দৈহিক গড়নের দিক থেকে একদম ভিন্ন এবং এরা অঙ্গ-তন্ত্র মাত্রার গঠন সম্পন্ন প্রাণী। এদের অধিকাংশই সামুদ্রিক, সমুদ্রের তলদেশে বা পৃষ্ঠে বিচরন করে। কেঁচো ও জোঁক জাতীয় অ্যানিলিডা পর্বের প্রাণীরা স্বাদুপানিতে বা স্থলে বাস করে। অনেকে স্বাধীনজীবী হলেও কিছু সংখ্যক পরজীবীও বটে।
অ্যানিলিডা পর্বের প্রাণীর বৈশিষ্ট্য:
* দেহ লম্বাটে ও নলাকার।
* দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম
* দেহ এপিথেলিয়াম নিঃসৃত পাতলা কিউটিকল-এ আবৃত।
* প্রকৃত খন্ডায়ন উপস্থিত (অথাৎ দেহ অনেকগুলো আংটির মতো খন্ডকে বিভক্ত যা দেহের ভেতরে ও বাইরে সুচিহ্নিত)। প্রতিটি খন্ডকে বলে সোমাইট বা খণ্ডক।
* প্রকৃত সিলোম উপস্থিত (অর্থাৎ দেহগহ্বর পেরিটোনিয়ামে পরিবেষ্টিত)।
* চলন অঙ্গ কাইটিনজাত সিটি (setae) বা জোড় পার্শ্বীয় প্যারাপোডিয়া (Parapodia)।
* নেফ্রিডিয়া (Nephridia) প্রধান রেচন অঙ্গ যা প্রায় প্রতিটি খন্ডকেই অবস্থিত।
* রক্ত সংবহনতন্ত্র বদ্ধ প্রকৃতির এবং রক্তের বর্ণ হয় লাল। এদের রক্তরসে হিমোগ্লোবিন, হিমোএরিথ্রিন অথবা ক্লোরোক্রুয়োরিন দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে।
* পৌষ্টিক নালি নলাকার ও সম্পূর্ণ এবং সেইসাথে এসব প্রাণীর মুখ ও পায়ুছিদ্র রয়েছে ।
উদাহরণ:
Metaphire posthuma (কেঁচো), Arenicola sp. (লাং ওয়ার্ম),Amphitrite sp. (দর্শনীয় কীট), Pontopdella muricata (সামুদ্রিকচোষক),Hirudinaria manillensis (জোঁক)
পর্ব ৬ : Arthropda (আর্থোপোডা)
প্রাণী জগতের সবচেয়ে বড় পর্ব আর্থ্রোপোডা এবং পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ প্রাণী আর্থ্রোপোডা পর্বের অন্তর্গত। আর্থ্রোপোডা শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ আর্থ্রোস (arthro) থেকে যার অর্থ সন্ধি এবং পডোস (poddos) যার অর্থ পা । ১৮৪৫ সালে Siebold এ পর্বের নামকরণ করেন। আর্থ্রোপোডা পর্বে শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা ১,২৫৭,০৪০টি । এদের দেহ গঠনে বিভিন্ন রঙের সমাহার রয়েছে। এ পর্বের প্রাণীদের নদী-নালা খাল-বিল, পাহাড়- পর্বত, সমুদ্র- মোহনা, বরফ- মরুজ অর্থাৎ পৃথিবীর সব জায়গাতেই দেখতে পাওয়া যায়। আর্থ্রোপোডার সামাজিক জীবন প্রাণিজগতে অনন্য ও বিস্ময়কর নজির স্থাপন করেছে। সেইসাথে এদের পঞ্চইন্দ্রিয় অত্যন্ত কার্যক্ষম বলে আর্থ্রোপোডা সদস্যরা পরিবেশকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছে। এরা স্ত্রী -পুরুষ পৃথক হয়। সাধারণত এদের অন্তঃনিষেক সম্পন্ন হয় এবং প্রায় ক্ষেত্রেই রূপান্তর ঘটে।আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণীরা স্থলচর এবং জলচর উভয়ই হয়ে থাকে। এ পর্বের কিছু প্রাণী স্বাধীন বা মুক্তজীবী হয় আবার কিছু প্রাণী অন্যের উপর নির্ভর করে অর্থাৎ পরজীবী হিসেবে বাস করে এবং সেইসাথে এরা নিশ্চল ও সহবাসী হতে পারে।
আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণীর বৈশিষ্ট্য:
* দেহ কাইটিন নির্মিত বহিঃকঙ্কাল দিয়ে আবৃত, নির্দিষ্ট সময় পর পর এ কঙ্কাল পরিত্যক্ত হয় ।
* দেহ খণ্ডায়িত,টাগমাটাইজেসন দেখা যায়। দেহখন্ডক পার্শ্বীয় সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ (Jointed appendages) বিশিষ্ট।
* এদের দেহকে দুটি সমান অংশে ভাগ করা যায় তাই এরা দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম হয়।
* পর্বের প্রাণীদের পৌষ্টিকতন্ত্র সম্পূর্ণ এবং এদের উপাঙ্গ পরিবর্তিত হয়ে মুখোপাঙ্গ গঠিত হয়।
* দেহের প্রাণীর সিলোম সংক্ষিপ্ত, অধিকাংশ দেহগহ্বরে রক্তে পূর্ণ যা হিমোসিল (Haemocoel) নামে পরিচিত।
* মাথার দু’পাশে দুটি পুঞ্জাক্ষি (Compound eye) দেখা যায় ।
* মালপিজিয়ান নালিকা প্রধান রেচন অঙ্গ। এছাড়া সবুজগ্রন্থি,কক্সাল গ্রন্থি, খোলস,ফুলকা রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।
* প্রধান শ্বসন অঙ্গ মালপিজিয়ান নালিকা ও ফুলকা। কিছু সদস্য পুস্তক ফুসফুস দিয়েও শ্বসন সম্পন্ন করতে পারে।
* রক্ত সংবহনতন্ত্র উন্মুক্ত। সেইসাথে এটি পৃষ্ঠীয় সংকোচনশীল হৃৎযন্ত্র, ধমনি এবং হিমোসিল নিয়ে গঠিত হয়।
Arthropoda পর্বে এত বৈচিত্র্যময় প্রাণিগোষ্ঠীর সমাবেশ ঘটেছে যে, এ পর্বের সর্বসম্মত শ্রেণীবিন্যাস এখনও পর্যন্ত মতানৈক্য সৃষ্টি করে আসছে
উদাহরণ:
Limulus polyphenus (রাজ কাঁকড়া),Scolopendra gigantea(বাগান শতপদী),Apis indica (মৌমাছি),Periplaneta americana (তেলাপোকা)
পর্ব ৭ : Mollusca (মলাস্কা)
মলাস্কা শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ মোলাস্কাস (molluscus) থেকে যার অর্থ নরম। Aristotle এ পর্বের নামকরণ করেন। এ পর্বে শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা ৮৪,৯৭৭টি। প্রাণীদের বর্তমান সংখ্যাগত দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্ব হলো মলাস্কা। এদের খোলক রয়েছে এবং এরা ননকর্ডেট প্রাণী। এ পর্বের অধিকাংশ প্রাণী সমুদ্রের লবণাক্ত পানিতে বাস করে। তবে এদের কিছু সদস্য আবার স্বাদু পানিতে,স্থলে এবং গর্তের ভেতরে বাস করে।
মলাস্কা পর্বের প্রাণীর বৈশিষ্ট্য:
* দেহ খণ্ডায়নবিহীন, কোমল ও মাংসল।
* গ্যাস্ট্রোপোডা ব্যতীত অধিকাংশ দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম।
* ম্যান্টল (Mantle) নামক পেশীময় পাতলা আবরণে দেহ আবৃত। এ আবরণ থেকে নিঃসৃত ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ক্ষরণের মাধ্যমে খোলক (Shell) তৈরি করে।
* দেহের অঙ্কীয়দেশে মাংসল পা থাকে (পা সাঁতার কাটতে ও গর্ত খননে ব্যবহৃত হয়)।
* দেহগহ্বর খুব সংক্ষিপ্ত ও হিমোসিল এ পরিণত হয়েছে
* দেহে সুস্পষ্ট মস্তক, কর্ষিকা ও সংবেদী অঙ্গ রয়েছে।
* পৌষ্টিক নালী প্যাচানো অথবা “U” আকৃতির; অধিকাংশ প্রাণীর মুখ গহ্বর র্যাডুলা (Radula) নামক একটি কাঁটাযুক্ত অংশ সমন্বিত।
* রক্তে হিমোসায়ানিন ও অ্যামিবোসাইট কণিকা থাকে।
* ফুলকা বা ফুসফুস অথবা উভয় অংশ কিংবা ম্যান্টল দিয়ে এরা শ্বসন সম্পন্ন করে।
* পৃষ্ঠদেশে অবস্থিত হৃৎযন্ত্র, রক্তনালি ও হিমোসিল উভয়ই উপস্থিত অর্থাৎ এদের অর্ধমুক্ত সংবহনতন্ত্র দেখা যায়।
* ভিন্ন লিঙ্গবিশিষ্ট হয় এবং এসব প্রাণী ডিম পাড়ে।
উদাহরণ:
Lamellidens marginalis (স্বাদু পানির ঝিনুক),Pinctada vulgaris (মুক্তা ঝিনুক), Pila globosa (আপেল শামুক),Octopus macropus (অক্টোপাস), Uroteuthis duvaucelli (সমুদ্রের তীর)
পর্ব ৮:Echinodermata(একাইনোডার্মাটা)
একাইনোডার্মাটা শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ একাইনো (Echinos) থেকে, যার অর্থ কাঁটা এবং র্ডামা (derma) যার অর্থ ত্বক। ১৭৩৪ সালে Jackar Kline একাইনোডার্মাটা পর্বটির নামকরণ করেন। এ পর্বে শনাক্তকৃত জীবন্ত প্রজাতির সংখ্যা ৭,৫৫০টি। একাইনোডার্মাটা পর্বের প্রাণীরা ত্রিস্তরী, প্রকৃত-সিলোমেট ও অঙ্গ-তন্ত্র মাত্রার গঠন সম্বলিত প্রজাতি। সকল একাইনোডার্ম সদস্য কাঁটাময় ত্বকবিশিষ্ট হয়। এদের ত্বকের নিচে শায়িত চুনময় অন্তঃকঙ্কালিক প্লেট থেকে এসব কাঁটার সৃষ্টি হয়। মূলত এই কাঁটাগুলো হলো বহিঃকঙ্কাল এবং প্লেটগুলো হলো অন্তঃকঙ্কাল।
একাইনোডার্মাটা পর্বের প্রাণীর বৈশিষ্ট্য:
* দেহ অখন্ডকায়িত; পূর্ণাঙ্গ প্রাণী পঞ্চঅরীয় প্রতিসম ও এদের দেহ অখণ্ডকায়িত,তারকাকার গোলাকার, চাকতির মতো।
* প্রাণীরা অনেক সময় লম্বাকৃতির হয়। কিন্তু লার্ভা দশায় এ পর্বের প্রাণী দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম হয়ে থাকে।
* এদের দেহ কাঁটাযুক্ত এবং স্পাইন (Spine) ও পেডিসিলারি (Pedicellariae) নামক বহিঃকঙ্কালযুক্ত।
* দেহ মৌখিক এবং মুখ থেকে দূরবর্তী প্রান্ত অর্থাৎ বিমৌখিক তলে বিন্যস্ত।
* এদের দেহের বহির্ভাগের মৌখিক তলে পাঁচটি নিচু খাঁজের মতো অ্যাম্বুল্যাকরাল খাদ বা Ambulacral groove থাকে।
* দেহের ভেতরে সিলোম নামে বিশেষ গহ্বর থেকে সৃষ্ট পানি সংবহনতন্ত্র (Water Vascular System)রয়েছে। এর সংশ্লিষ্ট নালিকা পদ (Tube feet) এদের চলন অঙ্গ।
* চলন অঙ্গটি চলন ছাড়াও শ্বসন এবং খাদ্য আহরণেও সাহায্য করে।
* এদের রক্ত সংবহনতন্ত্র অনুপস্থিত তবে হিমাল ও পেরিহিমালতন্ত্র, সংবহনতন্ত্রের কাজ করে।
* এদের রেচনতন্ত্র নেই কিন্তু ত্বর্কীয় ফুলকা, নালিকা পা বা শ্বসনবৃক্ষ ইত্যাদি দিয়ে এরা শ্বসন সম্পন্ন করে।
* এরা একলিঙ্গ প্রাণী।
* এদের নিষেক বাহ্যিক এবং জীবনচক্রে মুক্ত সাঁতারু লার্ভা আছে। অর্থাৎ প্রাণীগুলি শুক্রাণু বা ডিমগুলিকে জলে ছেড়ে দেয় যা কার্যকরী হয়ে মুক্ত সাঁতারের লার্ভা হয়ে যায়।
* এ পর্বের সকল সদস্যই সামুদ্রিক
উদাহরণ:
Antedon bifida (পালক স্টার),Cucumaria planci (সমুদ্র শশা ),Ophiothrix fragilis (কাঁটাযুক্ত ব্রিটল স্টার),Echinus esculentus (সমুদ্র আর্চিন),Astropecten euryacanthus (সাধারণ স্টার ফিশ)
যেসব প্রাণীর দেহে নটোকর্ড থাকে তাদের কর্ডাটা বলা হয়।
Chordata পর্বের শ্রেণিবিন্যাস (classification of Chordata):
Subphylum-1 : Urochordata
(oura = লেজ + chorda = রজ্জু)
বৈশিষ্ট্য
১. পরিণত প্রাণীতে নটোকর্ড থাকে না। লার্ভা দশায় কেবল লেজে নটোকর্ড থাকে।
২. পরিণত প্রাণী নিশ্চল এবং স্থায়ীভাবে নিমজ্জিত কোন বস্তুর সঙ্গে আটকানো থাকে, কিন্তু লার্ভা মুক্ত সাঁতারু।
৩. দেহ সেলুলোজ নির্মিত টিউনিক বা টেস্ট নামক আচ্ছাদনে আবৃত।
৪. সকলেই সামুদ্রিক এবং সমুদ্রের তলদেশে একক বা কলোনি গঠন করে বাস করে।
Subphylum Urochordata নিচে বর্ণিত তিনটি Class বা শ্রেণীতে বিভক্ত
Class-1: Ascidiacea (অ্যাসিডিসিয়া) :
এ শ্রেণীভূক্ত প্রাণীর দেহ স্ফীতকার বা নলাকার দেহের আবরণ স্থায়ী, পুরু ও অর্ধস্বচ্ছ। পরিণত প্রাণীতে লেজ থাকে না। যেমন- Ascidia mentula, Hardmania momus প্রভৃতি।
Class-2: Thaliacea (থ্যালিয়েসিয়া) :
এ শ্রেণীভূক্ত সদস্যরা দেখতে লেবু বা পিপে আকৃতির। দেহের আবরণ পাতলা ও স্বচ্ছ। পরিণত প্রাণী লেজবিহীন। যেমন- Salpa maxima, Pyrosoma atlanticum প্রভৃতি।
Class-3: Larvacea (লার্ভেসিয়া) :
এ শ্রেণীর প্রজাতিরা বাঁকা ব্যাঙাচি আকৃতির। আবরণ সামরিক জিলেটিন এর মত ও স্বচ্ছ। পরিণত প্রাণী থাকে না। যেমন- Oikopleura dioca, Appendicularia প্রভৃতি।
Subphylum -2: Cephalochordata
( kephale = মাথা + chorda = রজ্জু)
বৈশিষ্ট্য
১. দেহ লম্বা, পার্শ্বীয়ভাবে চাপা ও স্বচ্ছ এবং উভয় প্রান্ত সরু।
২. দেহের সামনে অঙ্কীয়ভাবে ওরাল হুড (oral hood) এবং ওরাল সিরি (oral cirri) থাকে।
৩. আজীবন স্থায়ী নটোকর্ড ও নার্ভকর্ড (স্নায়ুরজ্জু) দেহের সম্মুখ থেকে পশ্চাতপ্রান্ত পর্যন্ত প্রসারিত।
৪. গলবিলে অসংখ্য ফুলকা রন্ধ্র উপস্থিত, ফুলকাগুলো অ্যাট্রিয়াম (atrium) – এ উন্মুক্ত।
৫. দেহের দুপাশে “>” আকারের মায়াটোম পেশি পরপর সজ্জিত।
Subphylum -3 Vertebrata (ভার্টিব্রাটা; মেরুদণ্ডবিশিষ্ট)
বৈশিষ্ট্য
১. নটোকর্ড অস্থিময় বা তরুণাস্থিময় কশেরুকা বিশিষ্ট মেরুদণ্ড দিয়ে প্রতিস্থাপিত।
২. পৃষ্ঠীয় ফাঁপা স্নায়ুরজ্জু মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকান্ড গঠন করে।
৩. অস্থিময় বা তরুণাস্থিময় কশেরুকা সুষুম্নাকাণ্ডকে ঘিরে রাখে এবং কঙ্কাল সম্মুখ প্রান্তে পরিবর্তিত হয়ে করোটি (skull) গঠনের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখে।
৪. গলবিলীয় উভয় পাশে ৫-১৫ জোড়া ফুলকা রন্ধ্র থাকে। উন্নত মেরুদণ্ডীতে গলবিলীয় ফুলকারন্ধ্র কেবল ভ্রূণদশায় উপস্থিত থাকে।
৫. পার্শ্বীয় জোর উপাঙ্গ (পাখনা বা পদ) চলন অঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
Vertebrata দুটি বা Superclass অধিকশ্রেণীতে বিভক্ত :
1) Cyclostomata
2) Gnathostomata
Superclass-1 : Cyclostomata
(cyclos = round, গোল + stoma = mouth, মুখ)
Class-1 : Myxini (মিক্সিনি; myxa = slime, পিচ্ছিল আবরণ)
এ শ্রেণীভূক্ত মাছগুলো হ্যাগফিশ (hagfish) নামে পরিচিত ।
বৈশিষ্ট্য
১. দেহ আঁশবিহীন, পিচ্ছিল গ্রন্থিযুক্ত ত্বকে আবৃত, পৃষ্ঠীয় পাখনাবিহীন।
২. মুখ প্রান্তে অবস্থিত এবং চার জোড়া কর্ষিকায় পরিবৃত।
৩. গলবিল এর দু’পাশে মোট 5 থেকে 15 জোড়া ফুলকারন্ধ্র অবস্থিত।
৪. হ্যাগফিশ এর নাসিকা-থলি মুখবিবরে উন্মুক্ত।
৫. কোনো লার্ভা দশা নেই।
Class-2 : Petromyzontida (পেট্রোমাইজনটিডা; petros = stone, পাথর + myzon = sucking, চোষণ)
বৈশিষ্ট্য
১. পরিণত ল্যামপ্রের দেহ সরু, দেখতে বাইন মাছের মতো, আঁশবিহীন, একটি বা দুটি পৃষ্ঠীয় পাখনা যুক্ত।
২. মৌখিক চাকতিটি (oral disc) চোষকের ভূমিকা পালন করে। এর চারদিকে কেরাটিনময় দাঁত অবস্থান করে।
৩. পৃথক ফুলকা রন্ধ্রসহ সাত জোড়া ফুলকা রয়েছে।
৪. ল্যামপ্রেরের নাসিকা-থলি মুখ বিবরে উন্মুক্ত নয়।
৫. লার্ভা দশা আছে।
Superclass – 2 : Gnathostomata
(gnathos = jaw, চোয়াল + stoma = mouth মুখ)
এসব প্রাণীকে ৭টি Class বা শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
Class-1 : Chondrichthyes (chondros = cartilage, তরুণাস্থি + ichthys = fish মাছ)
বৈশিষ্ট্য
১. দেহ অসংখ্য ক্ষুদ্র প্ল্যাকয়েড (placoid); নামক সূক্ষ কাঁটার মতো আঁশে আবৃত।
২. অন্তঃকঙ্কাল সম্পূর্ণ তরুণাস্থিময়।
৩. মাথার দুপাশে ৫-৭ জোড়া ফুলকা রন্ধ্র পৃথকভাবে দেহের বাইরে উন্মুক্ত।
৪. পুচ্ছ-পাকনা হেটারোসার্কাল (heterocercal) ধরনের; অর্থাৎ পুচ্ছ-পাখনার অংশ দুটি অসমান।
৫. মুখছিদ্র ও নাসারন্ধ্র মস্তকের অঙ্কীয়দেশে অবস্থিত। চোয়ালে অসংখ্য সারিবদ্ধ দাঁত থাকে।
Class-2: Actinopterygii
বৈশিষ্ট্য
১. ত্বক গ্রন্থিময় এবং সাধারণত সাইক্লয়েড (cycloid; গোলাকার) বা টিনয়েড (ptenoid; কাঁটাযুক্ত) ধরনের আইছে আবৃত। কিছু ক্ষেত্রে আঁশ নেই।
২. অন্তঃকঙ্কাল অস্থিময়।
৩. মাথার দুপাশে একটি করে ফুলকারন্ধ্র অবস্থিত কানকো (operculum) দিয়ে আবৃত।
৪. পৌচ্ছিক-পাখনা হেমোসার্কাল (homocercal) ধরনের অর্থাৎ পুচ্ছ পাখনা অংশ দুটি সমান এবং রশ্মিযুক্ত।
৫. বায়ুথলি বা পটকা (swim bladder) দেহকে পানিতে ভেসে থাকতে সাহায্য করে।
Class-3 : Sarcopterygii (সার্কোপটেরিজি)
(sarkos = flesh, মাংসল + ptryx = fin, পাখনা)
পিশুকার-পাখনা বিশিষ্ট মাছ (lobe-finned fishes) বলে। বর্তমানে মাত্র 8 প্রজাতির মাছ জীবিত আছে। লাংফিশ (lungfish), সিলাকান্থ (Ceolacanth)।
বৈশিষ্ট্য
১. দেহ গ্যানয়েড (ganoid; বহিঃস্তর গ্যানয়েনে গঠিত) ধরনের আঁইশে আবৃত।
২. অন্তঃকঙ্কাল অস্থিময়।
৩. মাথার দুপাশে একটি করে ফুলকা রন্ধ্র থাকে যা কানকো দিয়ে আবৃত।
৪. এদের পটকা (swim bladder) রক্ত-জালিকা সমৃদ্ধ এবং শ্বসন ও ভেসে থাকতে সাহায্য করে।
৫. লেজ ডাইফাসার্কাল (diphycercal) ধরনের অর্থাৎ পুচ্ছপাখনার অংশ দুটি একীভূত হয়ে অভিন্ন ও নমনীয় পাখনা হিসেবে লেজ ঘিরে অবস্থিত।
Class-4 : Amphibia (অ্যাম্ফিবিয়া)
(amphi = both উভয় + bios = life ,জীবন)
বৈশিষ্ট্য
১. গ্রন্থিময় ত্বক বিশিষ্ট এক্টোথার্মিক (ectothermic; দেহের তাপমাত্রা পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে উঠানামা করে) চতুষ্পদী মেরুদন্ডী প্রাণী। লার্ভা অবস্থায় জলচর কিন্তু পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় জলচর বা স্থলচর।
২. ত্বক মসৃণ, আর্দ্র, গ্রন্থিময়; সাহায্য করে।
৩. অগ্রপদে চারটি ও পশ্চাৎপদ পাঁচটি করে নখরবিহীন আঙ্গুল থাকে।
৪. লার্ভা দশায় ফুলকা ও পরিণত অবস্থায় ফুসফুস ত্বক ও মুখ বিবর্ণ মিউকাস ঝিল্লির মাধ্যমে শ্বসন ঘটে।
৫. হৃদপিণ্ড তিন প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট- দুটি অ্যাট্রিয়া (অলিন্দ) এবং একটি ভেন্ট্রিকল (নিলয়)।
Class-5 : Reptilia (রেপটিলিয়া বা সরীসৃপ)
repto = creep, হামাগুড়ি দিয়ে চলন
বৈশিষ্ট্য
১. আলাদা সরীসৃপের দেহ শুষ্ক ও এপিডার্মিস অদ্ভুত আঁইশ (scale) বা শক্ত প্লেট (plate)-এ আবৃত।
২. পায়ে পাঁচটি করে নখর যুক্ত আঙ্গুল থাকে।
৩. হৃদপিন্ডের ভেন্ট্রিকল (নিলয়) অসম্পূর্ণভাবে বিভক্ত থাকার অসম্পূর্ণভাবে চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট (ব্যতিক্রম-কুমিরে সম্পূর্ণভাবে চার-প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট)। ফুসফুসই এদের একমাত্র শ্বসন অঙ্গ।
৪. সরীসৃপের ডিম চামড়ার মত বা চুনময় খোলসে আবৃত থাকে।
৫. ভ্রূণের পরিস্ফুটন এর সময় বহিঃভ্রুণীয় ঝিল্লি সৃষ্টি হয়, এ কারণে কোনো লার্ভা দশা নেই।
Class-6 : Aves (অ্যাভিস)
avis = bird, পাখি
বৈশিষ্ট্য
১. দেহ পালক (feather)-এ আবৃত; গ্রীবা প্রলম্বিত এবং “S” আকৃতির।
২. উড্ডয়ন অঙ্গ হিসেবে অগ্রপদ দুটি ডানা (wing)-য় রূপান্তরিত হয়েছে।
৩. চোয়াল দাঁত হেন চঞ্চু (beak)-তে পরিণত হয়।
৪. অস্থিগুলো বায়ুরগহ্বরপূর্ণ (pneumatic) ও হালকা, অনেক হাড় একীভূত হয়েছে।
৫. ফুসফুসের সঙ্গে পাতলা বায়ুথলি (air sac) যুক্ত হয়েছে, এমনকি হাড়ের ভিতরেও বায়ুথলি প্রতিষ্ঠিত হয়।
৬. শক্তিদায়ক খাদ্যের দ্রুত বিপাকের জন্য রয়েছে কার্যকর পরিপাকতন্ত্র।
৭. হৃদপিণ্ড ৪ প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট – দুটি (অলিন্দ) ও দুটি ভেন্ট্রিকল (নিলয়)।
৮. পাখির শরীরেই প্রথম সমঞ্চোশোণিত (warm blooded) এন্ডোথার্মিক (endothermic) অবস্থা দেখা দিয়েছে।
Class-7 : Mammalia (ম্যামালিয়া বা স্তন্যপায়ী)
(ল্যাটিন mamma = breast, স্তন)
বৈশিষ্ট্য
১. দেহত্বক বিভিন্ন গ্রন্থিযুক্ত (ঘর্মগ্রন্থি সেলসিয়াস ইত্যাদি) এবং লোম (hair)- এ আবৃত (তিমি ব্যতীত)।
২. পরিণত স্ত্রী প্রাণীর কার্যকরী স্তনগ্রন্থি (mammary gland) থেকে ক্ষরিত মাতৃদুগ্ধে নবজাতক লালিত হয়।
৩. বহিঃকর্ণে পিনা (pinna) ও মধ্যকর্ণে তিনটি ক্ষুদ্রাস্থি থাকে। চোয়াল বিভিন্ন ধরনের দাঁত যুক্ত।
৪. মাংসল ডায়াফ্রাম (diaphragm) মধ্যচ্ছদা দিয়ে বক্ষ ও উদর গহ্বর পৃথক থাকে।
৫. পরিণত লোহিত রক্ত কণিকা নিউক্লিয়াস বিহীন।
৬. হৃদপিন্ড সম্পূর্ণ চার প্রকোষ্ঠী।
৭. স্তন্যপায়ীরা আজ সব ধরনের পরিবেশ ছাড়াও স্থলচর ও জলচর বাসস্থানে ব্যাপক বিস্তৃত। একটি উপগোষ্ঠী আবার উড্ডয়নে সক্ষম (বাদুড়)।
৮. এন্ডোথার্মিক (দেহের তাপমাত্রা পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে ওঠা-নামা করে না) প্রাণী।