অনবায়নযোগ্য জ্বালানি (Unrenewable Energy)
যে শক্তি বারবার ব্যবহার করা যায় না এবং ব্যবহারে এক সময় শেষ হয়ে যায় তাকে অনবায়নযোগ্য সম্পদ বলে। যেমন: গ্যাস, তেল, কয়লা ইত্যাদি। জীবাশ্ম (Fossil) বলতে প্রাণী বা উদ্ভিদ পাথরে পরিণত হয়েছে এমন ধরণের বস্তুকে বোঝায়। যে বিজ্ঞান জীবাশ্ম সম্বন্ধে আলোচনা করে তাকে জীবাশ্মবিদ্যা (Paleontology) বলে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের উদ্ভিদ ও প্রাণীর ধ্বংসাবশেষ তথা মৃতদেহের চিহ্ন পাওয়া যায় ভূগর্ভ বা ভূ-পৃষ্ঠের কঠিনস্তরে সংরক্ষিত পাললিক শিলা বা যৌগিক পদার্থে মিশ্রিত ও রূপান্তরিত অবস্থায়। জীবদেহ (প্রাণী ও উদ্ভিদ উভয়ই) মাটির নীচে চাপা পড়ে লক্ষ লক্ষ বছর পর তা রূপান্তরিত হয় কয়লা, তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাসে। এজন্য কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসকে জীবাশ্ম জ্বালানি (Fossil fuel) বলা হয়।
যে সমস্ত জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই এখনও পৃথিবীতে টিকে আছে অথচ তাদের সমসাময়িক জীবদের অবলুপ্তি ঘটেছে, সেই সকল জীবদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলে। সিলাকান্থ নামক মাছ, রাজকাঁকড়া নামক সন্ধিপদ প্রাণী, প্লাটিপাস নামক স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ইকুউজিটাম, নিটাম এবং গিঙ্কগো বাইলোবা নামের উদ্ভিদ জীবন্ত জীবাশ্মের উদাহরণ।
কয়লা (Coal): কার্বন মৌলের অবিশুদ্ধ রূপ হলো কয়লা। ভূ-গর্ভে খনিতে পাওয়া যায় পাথরের মতো এক ধরণের শিলা-এর নাম খনিজ কয়লা। অস্থিজ কয়লাকে আইভরি ব্ল্যাক বলে। অপর্যাপ্ত বাতাসে কাঠ পোড়ালে কয়লা হয়। এর নাম কাঠকয়লা।
প্রাচীনকালের বৃক্ষ দীর্ঘদিন মাটির তলায় চাপা পড়ে ধীরে ধীরে কয়লায় পরিণত হয়। সময়ের সাথে সাথে কয়লায় কার্বনের অনুপাত বাড়তে থাকে এবং কয়লার মানও বৃদ্ধি পায়। সালফারের উপস্থিতি কয়লার মান নষ্ট করে। তাপ উৎপাদন ক্ষমতা ও কার্বনের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে খনিজ কয়লা চার প্রকার। যথা-
(১) পীট কয়লা: উদ্ভিদজাত জৈবিক পদার্থ থেকে কয়লা সৃষ্টি হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে যে কয়লা পাওয়া যায়, তাকেই মূলত পীট কয়লা বলে। পীট কয়লা ভিজা ও নরম।
(২) লিগনাইট: পীট থেকে কয়লা তৈরি হওয়ার মধ্যবর্তী ধাপ হচ্ছে লিগনাইট। এটি অতি প্রাচীন কালের (১০ থেকে ১৫ কোটি বছর) গাছপালা ও উদ্ভিদজাত দ্রব্যের পরিবর্তিত রূপ। এটি পীটের চেয়ে শক্ত ও ভারী। একে খয়েরি কয়লাও বলা হয়। এতে কার্বনের পরিমাণ ৬৭-৬৮%। রান্না-বান্না, ইট পোড়ানো, বাষ্পীয় ইঞ্জিন ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়।
(৩) বিটুমিনাস: এটি লিগনাইট কয়লার পরিবর্তিত রূপ। মৃত গাছপালা ও উদ্ভিদজাত দ্রব্য হতে বিটুমিনাস কয়লা সৃষ্টি হতে ১৫ থেকে ২০ কোটি বছর সময় লাগে। এটি কালো রংয়ের কয়লা। এতে ৬০-৮০% কার্বন থাকে। পোড়া কয়লা বা কোক, গ্যাস কার্বন ও কোল গ্যাস উৎপাদনে বিটুমিনাস কয়লা ব্যবহৃত হয়।
(৪) অ্যানথ্রাসাইট: সর্বপেক্ষা কঠিন ও শক্ত এবং উজ্জ্বল কালো রংয়ের হয়। এত কার্বনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি (৯২-৯৮%)।
প্রাকৃতিক গ্যাস (Natural Gas): প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় ভূগর্ভ থেকে। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন (৮০-৯০%) তাছাড়া অন্যান্য উপাদান উথেন (প্রায় ১৩%), প্রোপেন (প্রায় ৩%), বিউটেন, ইথিলিন, নাইট্রোজেন এবং নিম্ন স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট হাইড্রোকার্বন বাষ্প। আমাদের দেশে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাসে মিথেনের পরিমাণ ৯৫-৯৯%।
CNG (Compressed Natural Gas) হল সাধারণ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি রূপ। প্রাকৃতিক গ্যাসকে চাপের মাধ্যমে তরলে পরিণত করে তা গ্যাস-ট্যাংকে জমা করা হয়। এটি সীসা ও বেনজিন মুক্ত।
Liquefied Petroleam Gas বা Liquid Petroleum Gas (LPG বা LP গ্যাস) অর্থাৎ চাপে শীতলকৃত জ্বালানি গ্যাস, এ সমস্ত নামে প্রোপেন বা বিউটেনকে বা এদের মিশ্রণকেও নির্দেশ করা হয়। জ্বালানি হিসেবে রন্ধন কার্যে, গাড়িতে ও ভবনের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে (HVAC) এটি ব্যবহৃত হয়। এটির ব্যবহার প্রপ্যাল্যান্ট গ্যাস হিসেবে এবং শীতলকারকযন্ত্রের রেফ্রিজারেন্ট হিসেবে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি বিভিন্ন কার্যে সিএফসির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি জ্বলে শেষ হলে কোন অবশেষ থাকে না এবং সালফার নির্গত হয় না।
খনিজ তেল (Petrolium): অপরিশোধিত তেল (Crude Oil) বা পেট্রোলিয়াম (তরল সোনা) মূলত হাইড্রোকার্বন ও অন্যান্য কিছু জৈব যৌগের মিশ্রণ। অপরিশোধিত তেলকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য এর বিভিন্ন অংশকে আংশিক পাতন পদ্ধতিতে পৃথক করা হয়। পেট্রোলিয়ামে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদানের স্ফুটনাঙ্ক বিভিন্ন হয়। স্ফিুটনাংকের উপর ভিত্তি করে তেল পরিশোধনাগারে পৃথকীকৃত বিভিন্ন অংশে মধ্যে পেট্রোল (গ্যাসোলিন), প্যারাফিন, ন্যাপথা, কেরোসিন, ডিজেল তেল, লুব্রিকেটিং তেল, বিটুমিন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। পেট্রোলকে বলা হয় সবুজ জ্বালানি (green fuel)। পেট্রোল পানির চেয়ে হালকা। তাই এদের আগুন পানি দ্বারা নেভানো যায় না। রাস্তা বা ছাদের আবরণ হিসাবে যে পিচ ব্যবহৃত হয় তা পেট্রোলিয়ামের অবশেষ।