রিক্যালসিট্রান্ট বীজবাহী উদ্ভিদ সংরক্ষণের উপযোগী পদ্ধতি কোনটি ?

Created: 2 years ago | Updated: 5 months ago
Updated: 5 months ago

এক্স-সিটু সংরক্ষণ বা অন্যস্থানে সংরক্ষণঃ

Convention on Biological Diversity (CBD 2005)-র ব্য অনুযায়ী, এক্স-সিট সংরক্ষণের অর্থ হচ্ছে জীববৈচিত্র্যকে তাদের প্রাকৃতিক বসতির বাইরে রেখে সংরক্ষণ। সাধারণত কোনো জীবের আবাসস্থল বিপন্ন হলে অন্যস্থানে সরিয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা বহুকাল ধরে চলে আসছে। অন্যস্থানে সংরক্ষণে কতগুলো সনাতন এবং বহুল পরিচিত পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। যেমন- উদ্ভিদ উদ্যান, চিড়িয়াখানা, জিন ব্যাংক, ইন ভিট্রো টিস্যু কালচার ইত্যাদি। এছাড়া যুগ যুগ ধরে মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে কিছু উদ্ভিদ অন্য স্থানে সংরক্ষিত হচ্ছে। উদাহরণ ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশ্বের কুঞ্জবন, তুলসি গাছ ইত্যাদি।

অন্যস্থানে সংরক্ষণে দুধরনের ব্যবস্থা অবলম্বন করে করা হয়। যথা-প্রচলিত (conventional) পদ্ধতি এবং জীবপ্রযুক্তির আন্দোলে (biotechnological aspects) । নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো ।

জিন ব্যাংক : উদ্ভিদের জিনতত্ত্বের সম্পদ (genetic resources) গুলোকে সংরক্ষণের এবং পৃথিবীর বিশাল ভারাইটি এবং তাদের বন্য প্রজাতিগুলো সংরক্ষণের ও উৎপাদনে জিন ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সংরক্ষিত উদি নমুনাগুলোকে সময়ে সময়ে অন্যানো হয় এবং এ থেকে নতুন বীজ উৎপন্ন করে সংরক্ষণ করা হয়।

বীজ ব্যাংক : বিশেষ ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন উদ্ভিদের জিন সম্পদকে অন্য স্থানে সংরক্ষণের জন্য বীজ ব্যাংক বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ পদ্ধতিতে বিরাট উদ্ভিদ জনগোষ্ঠির বীজকে নির্দিষ্ট অবস্থায় সংরক্ষণ করে প্রকৃতি থেকে তাদের হারিয়ে যাওয়া রোধ করে। কিউ-এর রয়াল বোটানিক্যাল গার্ডেনে বীজ ব্যাংকের মাধ্যমে পৃথিবীর অনেক উদ্ভিদ প্রজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে যারা ধন্য অবস্থায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের দেশে ধানের অনেক ভ্যারাইটি যেমন- রাধুনী পাগল, রঘুসাপ, কিমা সাল ইত্যাদি কৃষকরা সংরক্ষণ করে আসছেন। এ ধরনের সংরক্ষণকে সম্প্রদায়গত বীজ ব্যাংক (community seed bank) বলা যেতে পারে।ব্যাংক পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি কিছু বিশ (recalcitrant) সংরক্ষণের জন্য যে সমস্ত তকে টিস্যু। সাহায্যে সংরক্ষণ করা যায় না। পদ্ধতি ত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। -(In-vitro conservation In vitro সংরক্ষণ বলতে কাঁচের বোতলে কে বোঝায়। প্রকৃত অর্থে এটি টিস্যু কালচার যে সব প্রজাতির বংশবৃদ্ধির একমাত্র উপায় অঙ্গজ জনন। বন সংরক্ষণে এটিই একমাত্র উপায়।

In-vitro সংরক্ষণের আর একটি পদ্ধতি হচ্ছে হিম সংরক্ষণ বা ক্রায়োপ্রিজারভেশন (cryopreservation) ক্রিয়ায় প্রিজারভেশন প্রক্রিয়ায় জীবিত বস্তু যেমন, উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ভাজক টিস্যু, কোষের প্রোটোপ্লাস্ট, জ্য অথবা একটি হার কোষ এবং প্রাণীর ক্ষেত্রে শুক্রাণু, ডিম্বাণু, জগ ইত্যাদিকে দীর্ঘদিন অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ ও মজুদ রাখা হয়। সাধারণত তরল নাইট্রোজেনে খুব শীতল অবস্থায় (১৯৬° সেঃ) রেখে সংরক্ষিত জীবজ বস্তুর সকল জৈবনিক মুত্তিয়াও বিপাকীয় (metabolic) কর্মকান্ড নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হয়। এতে সংরক্ষিত জীবজন্তু এতে বিনষ্ট না হয় সেদিকেও যথাযথ নজর রাখা হয়। কোনো প্রকার ক্ষতি ছাড়া এ প্রক্রিয়ার সংরক্ষিত জীব বস্তুতে নেরুজ্জীবিত করা হয়। বর্তমানে এটি বহুল প্রচলিত ইন-ভিট্রো সংরক্ষণ পদ্ধতি।

বর্তমানে আমাদের দেশে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে যোগ্রিজারভেশন পদ্ধতির উপযোগিতা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সিলভার কার্প, কমন কার্প, রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছের শুক্রাণু সংরক্ষণে এ প্রক্রিয়ার উপযোগিতা দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মহিষের শুক্রাণু সংরক্ষণ সাফল্যের সাথে চলে আসছে। বিশ্বের বেশ কিছু দেশে বিপন্ন জীব এবং অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে এমন সব প্রাণীর গ্যামেট ও জনকে ক্রায়োপ্রিজারভেশনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণ ।

জীব প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভিদের সংরক্ষণ অনেক সময় বিভিন্ন আবহাওয়াগত কারণে কিছু প্রাণী বা উদ্ভিদের প্রাকৃতিক প্রজনন বাঁধাগ্রস্থ হয় এবং এদের সংখ্যা দ্রুত কমে যায়। এ অবস্থান টিস্যু কালচার, ক্লোনিং ইত্যাদি জীব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটিয়ে পুনরায় পরিবেশে জন্মানো হয়। এভাবে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।

উদ্ভিদ উদ্যান (Botanical Garden) উদ্ভিদ উদ্যান বলতে এমন রক্ষিত এলাকাকে বোঝায় যেখানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ প্রজাতিকে সংরক্ষণ করা হয় অথবা অন্য আবাসস্থল থেকে এনে শিক্ষা, গবেষণা, জিমপুল উৎস সংরক্ষণ ও উন্নয়নে ব্যবস্থাপিত হয়। সব দেশেই জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে, সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্ভিদ উদ্যান রয়েছে। পরিকল্পিত সংরক্ষণ ছাড়াও এসব উদ্যান বিনোদনেও অবদান রাখে। উদাহরণ-জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (National Botanical Garden)।

উদ্ভিদ উদ্যানগুলো অন্যস্থানে সংরক্ষণের জন্য সব চেয়ে সহজ উপায়। এখানে সংরক্ষিত নমুনাগুলো স্বাচ্ছন্দে বংশবৃদ্ধি করতে পারে এবং এদের পুনরায় বন্য অবস্থায় স্থানান্তর করা যায়। FAO এবং World Information and Early Warning System (WIEWS)-এর ডাটাবেজ-এ দেখা যায় পৃথিবীর ১৫০টিরও বেশি দেশে ২০০০ এর উপর উদ্ভিদ উদ্যান আছে। যে সমস্ত উদ্ভিদ প্রজাতি বন্য অবস্থায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেগুলোর অনেক বংশধরদের অস্তিত্ব খ কেবল উদ্ভিদ উদ্যানেই পাওয়া যায়। আবার যে সব প্রজাতি বিলুপ্তির প্রান্ত সীমানায় এসে পৌঁছেছে তাদেরও স্থান মিলেছে এবং উদ্যানে। কিউ এবং রয়াল বোটানিকাল গার্ডেনে আজও এমন ২০০ প্রজাতির উদ্ভিদ স্বাচ্ছন্দে বেঁচে আছে যা তাদের স্ব স্ব দেশের আবাসে 'রেড ডাটা বুক এ হুমকিরান্ত কিংবা বিপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

উদ্ভিদ উদ্যানের বিপন্ন উদ্ভিদ থেকে যে সব উদ্ভিদের শংকার কারণ সম্বন্ধে জানা যায়, কীভাবে সংরক্ষণ করা যায় সে বিষয়েও তথ্য পাওয়া যায়। এতে মানুষের মধ্যে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। বোটানিকাল গার্ডে উদ্ভিদদের সুপ্ত অবস্থার জন্য কারণ সমন্ধে একটা ধারণা পাওয়া যায় এখন থেকে। এতে করে মানুষের হওয়ার শিক্ষা নেয়। এখানে জনসাধারণ জানতে পারে কোন উদ্ভিদগুলো বিপন্ন ও সু পরে ইনবিল্লাহ উদ্ভিদের স্বাচ্ছন্দভাবে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা তা নয় কারণ এখান থেকে মানুষ উদ্ভিদের প্রতি অনুরাগী চিত্র সংরক্ষণ সমন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি হয়।

Content added By
Promotion