জিন এর ক্ষেত্রে কোনটি সঠিক নয়?

Created: 2 years ago | Updated: 5 months ago
Updated: 5 months ago

জিনঃ সাধারণত বংশধারার নিয়ন্ত্রণকারী একককে (unit) জিন বলা হয়। আধুনিক ধারণা অনুযায়ী, DNA-র দুই সূত্রের নির্দিষ্ট যে অংশ একটি পলিপেপটাইড উৎপাদনের সংকেত বহন করে সে অংশটিকে জিন বলে। মেন্ডেলের (Mendel) পরীক্ষা থেকে জিনের ধারণার সূত্রপাত হয়। মেডেল বলেন, বিভিন্ন জোড়া চরিত্র ভিন্ন ভিন্ন ফ্যাক্টর (factor) দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। এ ফ্যাক্টরকে পরবর্তীতে জিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে Johannsen বংশধারার নিয়ন্ত্রক বন্ধুকে Gene নাম দেন। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে Sutton ও Boveri বলেন যে বংশধারার বাহক ফ্যাক্টরগুলো (জিনগুলো কোমোজোমে থাকে। তাঁদের মতবাদ বংশধারার ক্রোমোজোমীয় মতবাদ (Chromosomal theory of heredity) নামে পরিচিত। ডিপ্লয়েড কোষে ক্রোমোজোমগুলো সবসময় জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে। এগুলোকে হোমোলোগাস (homologous) বা সমসংস্থ কোমোজোম বলে। সুতরাং জিনগুলোও সবসময় জোড়ায় জোড়ায় থাকে এবং ক্রোমোজোমের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে। একই জোড়ার দুটো জিন একই রকম বা একটি অন্যটি থেকে কিছুটা আলাদা হয়। হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের একই স্থানে অবস্থিত দুটি জিন কোনো বৈশিষ্ট্যের উপর আলাদা প্র বিস্তার করে। Bateson ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে এগুলোকে অ্যাপেলোম (allclomorph) বা অ্যালিল (allele) নামকরণ করেন।

যে সব বৈশিষ্ট্য বংশ পরস্পরায় সঞ্চারিত হয় তার প্রত্যেকটি আলাদা জিন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। বিভিন্ন জীবে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে। যেমন, পেঁয়াজের কোমোজোম সংখ্যা 2n 16. সোফিলা মাছিতে 2n 8 এবং মানুষে 2n 46: কিন্তু একটি জীবে অনেক বৈশিষ্ট্য থাকে। সুতরাং একটি উদ্ভিদ বা প্রাণীর ক্রোমোজোম সংখ্যা তার জিনের সংখ্যার চেয়ে অনেক কম হয়। তাই বলা যায় যে একটি ক্রোমোজোমে অনেক জিন থাকে।জিনকে বিভিন্ন এককরূপে প্রকাশ করা হয়। যেমন- রেকন, মিউটন ও সিসট্রন।

১. রেকন (Recon) : এটি জিন রিকম্বিনেশন এর একক DNA অণুর যে ক্ষুদ্রতম একক জেনেটিক রিকলি অংশ গ্রহণ করে তাকে রেকন বলে। রেকন এক অথবা দুজোড়া নিউক্লিওটাইড দিয়ে গঠিত।

২. মিউটন (Muton) : একে জিন মিউটেশনের একক বলা হয়। DNA অণুর যে ক্ষুদ্রতম অংশে নিউ (mutation) সংঘটিত হয়, তাকে মিউটন বলে। এক বা একাধিক নিউক্লিওটাইড যুগল নিয়ে মিউটন গঠিত হয়ে যায়।

৩. সিসট্রন (Cistron) : এটি জিনের কার্যকর একক। DNA অণুর যে খণ্ডাংশ কোষীয় বস্তুর কার্যকলাপ নিে করে তাকে সিস্টন বলে। Escherichia coli ব্যাকটেরিয়ার একটি সিস্টানে প্রায় ১৫০০ টি নিউক্লিওটাইড থাকে। প্রতিটি সিসট্রনে অনেক রেকন ও মিউটন থাকে। তাই রেকন ও মিউটন অপেক্ষা সিস্টোনের দৈর্ঘ্য অনেক বে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জিন ও সিটন প্রায় সমতুল্য (equivalent) অর্থ বহন করে। সম্প্রতি জানা গেছে, একটি বাক্যের মধ্যে যেমন অর্থবহ বিভিন্ন শব্দের মধ্যে সামান্য তফাৎ বা ফাঁক তেমনি একটি জিনের জন্য নির্দিষ্ট DNA অংশে অর্থবহ কতগুলো নিউক্লিওটাইডের পরে অর্থহীন কিছু নিউক্লিয়াস থাকতে পারে। অর্থবহ অংশের নাম এক্সন (exon) ও অর্থহীন অংশের নাম ইউন (intron)। অর্থবহ ও DNA-তে যেভাবে থাকে সেভাবেই mRNA তে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু স্প্রাইসিং (splicing) প্রক্রিয়ায় mRNA অর্থহীন অংশ বা ইন্ট্রন বাতিল হয়ে প্রোটিন অণু তৈরি হয়। তাই অর্থবহ অংশগুলো জুড়ে একটি জিনের যে রূপ প্রকাশিত হয় প্রোটিন অণুতে। আদি কোষে জিন প্রকাশ অপেরন মতবাদ আদি কোষে (যেমন-Ecoll) জিন প্রকাশের একক (unit) হচ্ছে Operon ( অপেরন)। (Jacob & Monod, 1961) জিন সম্পর্কে অপেরন মতবাদ (Operon hypothesis) প্রচলন করেন। তাঁদের মা কতগুলো জিনের সমন্বয়ে একটি অপেরন গঠিত হয় এবং আদি কোষে এদের পারস্পরিক ক্রিয়ায় কার্যকরী জিনের চিনি যোটিন স্যাতে প্রকাশ ঘটে। প্রতিটি আদি কোষে একাধিক অপেরন থাকে, যেমন- ল্যাক্টোজ অপেরন (ল্যাক্টোজের উপস্থিতিতে ক্রিয়াশীল), ট্রিপ্টোফ্যান অপেরন (ট্রিপ্টোফ্যান না থাকলে বিনাশীল) ইত্যাদি। নিম্নেবর্ণিত চারটি অংশ নিয়ে অপেরন

১. গাঠনিক জিন (Structural gene): এটি এনজাইম সংশ্লেষ করে।

২. উদ্দীপক বা প্রোমোটার জিন (Promoter gene): এখানে RNA-পলিমারেজ এনজাইম সংযুক্ত হয়।

৩. চালক জিন বা অপরেটর জিন (Operator gene): এটি গাঠনিক জিনের প্রোটিন উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রণ করা

৪. নিয়ন্ত্রক জিন বা রেগুলেটর জিন (Regulator gene): এটি অপারেটর জিনকে নিয়ন্ত্রণ করে।

আদি কোষ ও প্রকৃত কোষের জিনগত কিছু পার্থক্য নিম্নরূপ

১. আদি কোষে একাধিক জিন কাছাকাছি থেকে অপেরন গঠন করে। কিন্তু প্রকৃত কোষে জিনসমূহ পৃথকভাবে অবস্থান করে, এরা অপেরন গঠন করে না।

২. আদি কোষে অপেরনের মাধ্যমে নিকট সম্পর্কযুক্ত একাধিক জিন ট্রান্সকাইন হয়ে থাকে, কিন্তু প্রকৃত কোষ পৃথকভাবে ট্রান্সক্রাইব হয়ে থাকে।

৩. আদি কোষে প্রতিটি জিনে নিজৰ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই (হরমোন রেসপন্স এলিমেন্ট নেই) কিন্তু প্রকৃত প্রতিটি জিনে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে, এদের প্রোমোটারের কাছে 'হরমোন রেসপন্স এলিমেন্ট' থাকে। চা আদি কোষে বিভিন্ন জিনকে ট্রান্সক্রাইব করতে এক ধরনের RNA-পলিমারেজ অংশ নেয়, কিন্তু এরা নি বিশেষ বিশেষ জিন ট্রান্সক্রাইব করতে বিভিন্ন ধরনের RNA-পলিমারেজ অংশ নেয় (প্রকৃত কোষের RNA- ৩ ধরনের, এসব কোষের প্রোমোটার বহু ধরনের)।

৪. আদি কোষে পলিমারেজ দ্বারা প্রোমোটার পুন:ক্রিয়াশীল করতে একটি পেপটাইড সাবইউনিট সম্পৃক্ত প্রকৃত কোষে ট্রান্সক্রিপশনের সূচনা পর্বে বহু প্রোটিন সম্পৃক্ত হয়।

৫. সংখ্যা : একটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর কোষে ৫০,০০০-এর বেশি দিন থাকতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রে ক্রোমোজোম ১-এ সবচেয়ে বেশি (২৯৬৮টি) জিন থাকে এবং Y ক্রোমোজোমে সবচেয়ে কম (২৩১টি) জিন থাকে। ক্ষুদ্রতম জিনে ৭৫টি নিউক্লিওটাইড এবং বৃহত্তম জিনে ৪০,০০০টি নিউক্লিওটাইড রেকর্ড করা হয়েছে।

জিনের বৈশিষ্ট্যঃ

১. জিন হচ্ছে বংশগতির উপাদান যা কতকগুলো সুনির্দিষ্ট কাজের সাংকেতিক তথ্য বহন করে। এগুলো বিপাকীয় কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজেদের প্রকাশ করতে পারে।

২. জিন DNA দিয়ে গঠিত। আকৃতি ও সংযুক্তি অপরিবর্তিত রেখে জিনের আত্মোৎপাদন ক্ষমতা আছে

৩. মিউটেশন (mutation)-এ অংশগ্রহণ করে যা অভিযোজন ও বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪. জিনের উপাদানসমূহকে পুনঃবিনয় করার জন্য নতুন জিন গঠিত হয়। একটি ক্রোমোজোমে অসংখ্য জিন থাকে। জিন কোমোজোমে রৈখিক সজ্জাক্রমে (linearly arranged) বিন্যস্ত থাকে।

৫. ক্রোমোজোম দেহে প্রত্যেক জিনের স্থান নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের ঐ নির্দিষ্ট স্থানটিকে ঐ বিশেষ জিনের লোকাল (locus) বলা হয়।

৬. জীবের একেকটি বৈশিষ্ট্যের জন্য একাধিক জিন কাজ করে, অর্থাৎ একেকটি বৈশিষ্ট্য একাধিক জিনের সম্মিলিত

৭. ক্রিয়ার ফল। যেমন, ড্রোসোফিলা নামক মাছির চোখের রঙ প্রায় ২০টি জিন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। মানুষের চামড়ার রঙের ক্ষেত্রেও আছে বেশ কয়েক জোড়া জি

৮. কোন কোন ক্ষেত্রে একটি মাত্র জিন কয়েকটি বৈশিষ্ট্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন, অ্যালবিনো (albino) মানুষদের

৯. দেহের চামড়া, চুলের রঙ ইত্যাদি একটি মাত্র জিনের মিউটেশনের ফলে সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে একটি মাত্র জিন দেহের বিভিন্ন অংশের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে।

১০. কোন কোন ভাইরাস (যেমন- উদ্ভিদ ভাইরাস) RNA জিন দিয়ে গঠিত।

জিনের কাজঃ

১. জিন জীবদেহে যাবতীয় বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের (ফিনোটাইপ) প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে।

২. জিন জীবের সাংগঠনিক ও বিপাকীয় বৈশিষ্ট্যকে প্রোটিন, এনজাইম অথবা হরমোন সংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রকাশ করে।

৩. জীবদেহের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনগুলো বংশগতির একক হিসেবে বংশ পরম্পরায় সঞ্চারিত হয়।

৪. জিন প্রজাতি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের সংরক্ষণকে নিশ্চিত করে।

৫. DNA-স্থিত জিনগুলো ট্রান্সক্রিপশনকে নিয়ন্ত্রিত করে জীবকোষ তথা জীবদেহে প্রোটিন সংশ্লেষণের হারকেও নিয়ন্ত্রণ করে।

Content added By
Promotion