সাধারণ জ্ঞান হলো এমন একটা বিষয় যেটা আমরা কখনোই পড়িনা অথচ সবসময় পড়ি। আমাদের ‘সাধারণ’ জ্ঞানটা আসে আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকেই। কখনো কখনো আমরা লক্ষ্যই করি না যে আমরা একটা বিষয় সম্পর্কে জানি। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সাধারণ জ্ঞানটা এমন সাধারণ হলে চলে না, কিছুটা অসাধারণ হতে হয়। সাধারণ জ্ঞানে অসাধারণ হওয়া কি খুব কঠিন কিছু? মোটেই না। বরং কিছু নিয়ম মেনে পড়লে এরচে’ সহজ আর ইন্টারেস্টিং আর কিছুই হয়না।
১। আগ্রহ, ধৈর্য আর অবজারভেশন
সাধারণ জ্ঞান পড়তে আগ্রহটা খুবই জরুরি, কারণ এটার পুরোটাই বলতে গেলে মনে রাখার বিষয়। পরীক্ষার জন্য সাধারণ জ্ঞান পড়া শুরু করার আগে তোমাকে দেখতে হবে কোন টপিকগুলো পড়তে তুমি আগ্রহ বোধ করছো। এই আগ্রহের ক্ষেত্রটাই কিন্তু তোমার প্লাস পয়েন্ট হবে, এটাই তুমি বেশি ভালো পারবে। আরেকটা বড় ব্যাপার হচ্ছে ধৈর্য। এত এত সাল, সংখ্যা, নাম মনে রাখতে রাখতে তুমি হয়ত বিরক্ত হয়ে যাবে। তাই একবারে অনেক বেশি না পড়ে ধৈর্য ধরে ধীরে ধীরে পড়ো।
মনে রাখবে, গত এক শতাব্দীতে বা এক হাজার বছর আগে কবে কী ঘটেছে- সব মুখস্থ রাখা কারো পক্ষেই সম্ভব না। এক্ষেত্রে অবজারভেশন একটা ভালো কাজ। অবজারভেশন বলতে তুমি কী পড়ছো সেদিকে লক্ষ্য রাখাকে বুঝায়। না বুঝে তোতাপাখির মত মুখস্থ করে গেলে শেষমেশ কিচ্ছু মনে থাকবে না। কোনো ঘটনা কেন ঘটলো, তার আগে-পরে বিশেষ আর কী কী ঘটলো, সেইসব বিশেষ ঘটনার সাথে এই ঘটনা রিলেটেড কিনা, এই ঘটনা ঘটার পর ফলাফল কী হলো- এত কিছু হয়তো তোমার না জানলেও চলবে।
কিন্তু একটু অতিরিক্ত সময় নিয়ে কিছুটা বিস্তারিত পড়লে তোমারই লাভ, কারণ তাহলে জরুরি তথ্যটুকু তোমার ভালো মনে থাকবে। যেমন ‘জাহান্নাম হইতে বিদায় (১৯৭১)’ শওকত ওসমানের লেখা একটি উপন্যাস- এটা তুমি জানো। কিন্তু এখানে জাহান্নাম বলতে যে আসলে তৎকালীন পাকিস্তানকে বুঝিয়েছে এবং জাহান্নাম হইতে বিদায় বলতে যে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে আসাকে বুঝিয়েছে, এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরিটা জানা থাকলে তোমার আগের তথ্যটুকু বেশি মনে থাকবে।
২। পড়ো, দেখো এবং শোনো
শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের বই পড়া তোমাকে ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারে না। এর বাইরে খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন, জার্নাল প্রভৃতির দিকেও নজর রাখতে হবে। তবে এক্ষেত্রে তুমি এতদিন যেভাবে খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে গেছো, সেভাবে পড়লে হবে না, গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে, ভাবতে হবে। ব্রেইনস্টর্মিং করতে হবে। টিভির বিনোদন বা খেলার চ্যানেলটা বদলে মাঝে মাঝে দেশি-বিদেশি খবরের চ্যানেলগুলো অন করতে হবে। তোমার আশেপাশের মানুষেরা কোনো ঘটনাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করছে সেটা শোনো- এটা ঐ ঘটনাটাকে মনে রাখতে সাহায্য করবে।
৩। কী ঘটছে দুনিয়ায়, তুমি জানো তো?
সাম্প্রতিক ঘটনাবলী থেকে প্রশ্ন আসা প্রায় নিশ্চিত একটা ব্যাপার। তুমি হয়তো ভাবছো তুমি সাম্প্রতিক সব ঘটনাই জানো। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে হয়তো তুমি অনেক শুনেছো, জেনেছো। ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থী ছিলেন, তিনি ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ছিলেন- সবই হয়তো তোমার জানা, কিন্তু তিনি যে জার্মান বংশোদ্ভূত ছিলেন, এটা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। এত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে হয়তো প্রশ্ন করা হবেনা- কিন্তু এটাই সাধারণ জ্ঞানের বিশেষত্ব- সিলেবাস বলতে কিছু নেই, প্রশ্ন কোত্থেকে হবে কেউ জানেনা।
৪। নোট করো, একঘেয়েমি কাটাও, নিমোনিক বানাও
লিখে লিখে পড়লে বেশি মনে থাকে- এটা জানা কথা। সাধারণ জ্ঞান যখন লিখে বা নোট করে পড়বে তখন নিজের প্যাটার্নটাকে বেশি প্রাধান্য দেবে। কীভাবে পড়লে বেশি মাথায় থাকছে এটা লক্ষ্য করবে। নিজের সুবিধামত নিমোনিক বানিয়ে নেবে। যেমন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশসমূহের নাম মনে রাখতে “ফ্রি ডে তে আসুন” একটা ভালো নিমোনিক। এখানে ফ্রি- ফিনল্যান্ড, ডে- ডেনমার্ক, আ- আইসল্যান্ড, সু- সুইডেন, ন- নরওয়ে।
এভাবে নিজের পছন্দমত বানিয়ে নেবে। শ্রেণিবদ্ধ তথ্য একনাগাড়ে পড়ে গেলে একঘেয়ে লাগতে পারে, তাই তথ্যগুলো ‘assorted’ বা পাঁচমিশালি ভাবে রেখে পড়তে পারো। যেমন দেশের রাজধানীর নাম ছক ধরে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে দু’একটা দেশের মুদ্রার নাম বা উল্লেখযোগ্য স্থান-ঘটনা দেখে নিতে পারো। ভৌগোলিক ব্যাপার-স্যাপার পড়ার সময় হাতের কাছে ম্যাপ রাখতে পারো।
সাল বা সংখ্যা মনে রাখতে কয়েকটা সাল কো-রিলেট করে পড়ো। যেমন ভারত স্বাধীন হওয়ার ৩ বছর পরে প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হয়, অর্থাৎ ১৯৪৭ এ স্বাধীন হলে প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হয় ১৯৫০ সালে। নজরুল ‘জাতীয় কবি’ উপাধি যে বছর পান, সেবছরই ঢাবি তাকে ডি.লিট. উপাধি দেয়- ১৯৭৪ সালে। ঠিক এর দু’বছর পর তিনি একুশে পদক পান, তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয় এবং ঐ বছরেই মৃত্যুবরণ করেন- ১৯৭৬ সালে। ১৯৭৬ সালে আবার আরো দু’জন প্রখ্যাত ব্যক্তির মৃত্যু হয়- জসীমউদদীন এবং মাওলানা ভাসানী। এভাবে পড়ে দেখো, ভালোভাবে মনে তো থাকবেই, একঘেয়েও লাগবে না।
৫। আলোচনা করো- বন্ধুদের সাথে এবং গুগলের সাথে
বন্ধুদের সাথে গসিপের টপিকটা কিছুদিনের জন্য সাধারণ জ্ঞানে ট্রান্সফার করে ফেলো। “জানিস, অমুক এবার তমুক মেডিক্যালে চান্স পেয়েছে,” তোমার বন্ধু এটা বলার সাথে সাথে তুমি তাকে মনে করিয়ে দাও যে দেশে বর্তমানে সরকারি মেডিক্যাল আছে ৩৯টি! গুগলে ‘Upcoming Movies’ লিখে সার্চ না দিয়ে ‘ইসরাইলের রাজধানী কী’- এটা নিয়ে যে কনফিউশন ছিলো সেটা দূর করে ফেলো।
৬। সাধারণ জ্ঞানকে প্রতিদিনকার অভ্যাস বানাও
আম্মু যখন তোমাকে জোর করে শপিংয়ে নিয়ে যাবে, তখন তার উপর রাগ না করে তাকে শপিং করতে দাও, তুমি বরং পাশের দোকান থেকে একটা ম্যাগাজিন তুলে নিয়ে উলটে পালটে চোখ বুলিয়ে দেখো! ড্যান ব্রাউনের ‘এঞ্জেলস এন্ড ডিমনস’ পড়ার সময় এটা মাথায় নিয়ে নাও যে ‘সুইস গার্ড’ সুইজারল্যান্ড বা সুইডেনের নয়, বরং ভ্যাটিকানের সশস্ত্র প্রহরী দল। ঘুমাতে যাবার সময় সাধারণ জ্ঞানের বই বা খাতাটা নিয়ে বিছানায় শুয়ে কিছুক্ষণ পাতা উল্টাও। মনে মনে ভাবো কী কী পড়লে, কী কী পড়া যেতে পারে। অনলাইনে সাধারণ জ্ঞান টেস্ট দিয়ে নিজেকে পরীক্ষা করো। সময় পেলেই অনুশীলন করো, রিভিশন করো, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দুইদিন আগের পড়া তথ্যটা দুইদিন পরে তোমার মনে না-ও থাকতে পারে।