আমরা জন্ম মৃত্যু সম্পর্কে জানি। এবার জন্মান্তর নিয়ে পুরাণের সুন্দর একটি গল্প পড়ব।
জড়ভরতের কাহিনি: অনেক কাল আগে বিষ্ণুভক্ত এক রাজা ছিলেন। তাঁর নাম ছিল ভরত। রাজা ভরত পুত্রদের মধ্যে রাজ্য ভাগ করে দিয়ে তপস্যার জন্য বনে চলে যান। সাধনার ফলে রাজা ভরতকে বলা হয় সাধক ভরত বা মুনিভরত। একদিন তিনি নদীতে স্নান করতে গেলেন। সেখানে সদ্যোজাত মাতৃহারা একটি হরিণশাবক দেখতে পান। তিনি তাকে রক্ষা করার জন্য আশ্রমে নিয়ে আসেন। হরিণশাবকের যত্নে, আদরে তাঁর সময় কাটে। এর ফলে মুনির তপস্যা আর রইল না। এমনকি মৃত্যুর সময়ও এই হরিণ শিশুর কথা চিন্তা করতে করতে তিনি দেহত্যাগ করেন। শাস্ত্রে আছে মানুষ যেরূপ চিন্তা করতে করতে মৃত্যুবরণ করবে তার সেই রূপেই পুনর্জন্ম হবে। তাই ভরতমুনিকেও হরিণরূপে জন্মগ্রহণ করতে হলো।
তবে হরিণ হয়ে জন্মলাভ করলেও তিনি ছিলেন জাতিস্মর। পূর্ব জন্মের কথা তাঁর স্মরণে ছিল। তাই হরিণ জীবনেও তপস্বীদের আশ্রমের চারপাশে ঘোরাঘুরি করতেন আর ধর্মকথা শুনতেন। এভাবে তপস্যার কথা শুনতে শুনতে তিনি দেহত্যাগ করে পুনরায় মানবজন্ম লাভ করেন। মানুষ রূপে জন্মলাভ করে তিনি সবসময় ঈশ্বরচিন্তা করতেন। কারও সাথে বেশি কথা বলতেন না। জড়ের মতো থাকতেন। এজন্য তাঁকে জড়ভরত বলা হতো।
জন্মান্তরের সাথে কর্মবাদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কর্মফল অবশ্যই মানুষকে ভোগ করতে হয়। যে যেরকম কর্ম করে সে সেই রূপেই পুনর্জন্ম লাভ করে। খারাপ কাজ করলে খারাপ রূপে এবং ভালো কাজ করলে ভালো রূপে পুনর্জন্ম লাভ করবে। সুতরাং আমরা সবাই ভালো কাজ করব।
আম্মার অবিনাশিতা আমাদের মধ্যে আত্মা আছে। এই আত্মার কোনো বিনাশ নেই। আত্মার কখনও জন্ম হয়।
না। মৃত্যুও হয় না। পুনঃ পুনঃ তার উৎপত্তি বা বৃদ্ধিও হয় না। তিনি জন্ম রহিত, শাশ্বত, নিত্য এবং পুরাতন।
শরীরের বিনাশ হলেও আত্মার কোনো বিনাশ নেই। শুধু এক দেহ থেকে অন্য দেহে গমনাগমন আছে।
জন্ম ও কর্মফল : আমাদের আত্মার কোনো জন্ম নেই, মৃত্যু নেই। শুধু দেহ থেকে দেহান্তর হয়। এ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-
বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়
নবানি গৃহাতি নরোহপরাণি।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণ-
নান্যানি সংযাতি নবানি নেহী 2/22
শব্দার্থ : বাসাংসি বস্তু, কাপড়; জীর্ণানি, জীর্ণ, ছেঁড়া; যথা- যেমন; বিহায় পরিত্যাগ করে; নবানি- নতুন গৃহাতি- গ্রহণ করে; নরঃ- মানুষ; অপরাদি অন্য তথা, সেরূপ, তেমনি; শরীরাণি শরীর সমূহ; বিহায় ত্যাগ করে; জীর্ণানি- জীর্ণ বা পুরাতন; অন্যানি অন্য সংযাতি গ্রহণ করে; নবানি - নতুন দেহ; দেহী- দেহ ধারী, আত্মা।
সরলার্থ: মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, আত্মাও তেমনি জীর্ণ দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করে।
এই জন্মান্তরের সাথে কর্মফলের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। জীবের কর্ম অনুসারে তার পুনর্জন্ম হয়। এমনকি মৃত্যুকালে যিনি যে ভাব স্মরণ করে দেহত্যাগ করেন, তিনি সেই ভাবে ভাবিত রূপেই জন্মলাভ করেন। এ প্রসঙ্গে শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের একটি কাহিনিটি জেনেছি।
আরও দেখুন...