ক্ষুদ্র হউক, তুচ্ছ হউক, সর্ব সরম-শঙ্কাহীন-
কর্ম মোদের ধর্ম বলি কর্ম করি রাত্রি দিন।
আজকে আমরা যা করছি, তার ওপর নির্ভর করে আমাদের আগামীকাল। কবিতায় যতীন্দ্রমোহন বাগচী তাই কাজকেই বলেছেন ধর্ম। তবে পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ার শর্ত হিসেবে কাজকেই অনিবার্য হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং নিজের সৌভাগ্যকে ডেকে আনার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। তবে সকল কাজই আমাদের করতে হবে আনন্দ আর স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়ে।
পৃথিবীর কঠিনতম কাজের মধ্যে একটি হলো- পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা। মনে করো, পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার প্রতি তোমার প্রবল আগ্রহ; তাই তুমি যদি কখনও পাহাড়ে ওঠার সুযোগ পাও তাহলে দেখবে, সারা দিন বিপজ্জনক পথে পাড়ি দেওয়ার পরও সাফল্যের উত্তেজনায় কষ্টটা মনে থাকছে না। বরং পরদিন সকালে উঠে আবারও পাহাড়ের কঠিন বরফ আর হিমবাহ ঠেলে ঠিকই লক্ষ্যে পৌঁছানোর আপ্রান চেষ্টা করছ। পাহাড়ে ওঠার এত শারীরিক পরিশ্রম সত্ত্বেও কোনো ক্লান্তি বা অবসাদ তোমাকে স্পর্শ করতে পারছে না। অর্থাৎ কাজের প্রতি ভালোবাসা ও আগ্রহ থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শরীরকে যেকোনো কষ্ট সহ্য করার জন্য প্রস্তুত করে তোলে। তাই কাজের ব্যস্ততা ও কঠোর পরিশ্রমের পর দিনশেষে কখনই বলা যাবে না, খুব ক্লান্তি লাগছে; বরং নিজেকে বলতে হবে- 'আমি মোটেই ক্লান্ত নই।' এতে প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী ধীরে ধীরে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসবে এবং মনের অবসাদ দূর হবে।
নিজ হাতে করি কাজ, নেই তাতে কোনো লাজ' এই চরণটি আমাদের সবার মনে আছে, তাই না? আমরা সবাই বিশ্বাস করি- নিজের হাতে কাজ করলে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবারে সুখ-শান্তিও বিরাজ করে। একইভাবে বিদ্যালয়ের পরিবেশকে সুন্দর ও আনন্দদায়ক রাখার জন্য আমাদের যা কিছু করণীয়, সেগুলো নিয়মিত করলে বিদ্যালয়ে কাটানো সময়টুকু আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবে। এভাবেই ছোট পরিসরে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমরা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ আচরণে অভান্ত হয়ে উঠব। ব্যক্তি হিসেবে সমাজে তখন আমাদের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাবে; এই প্রয়োজনের কারণেই একসময় আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। আমরা সবাই এই পথেই হাঁটতে চাই।
ছক ১.১: ফিরে দেখা
যেসব 'নিজ কাজ' আমি নিয়মিত করি | |
যেসব 'পারিবারিক কাজ' আমি নিয়মিত করি | |
বিদ্যালয়ের যেসব কাজ আমি নিয়মিত করি | |
সমাজের যেসব কাজ আমি নিয়মিত করি | |
অভিভাবকের মতামত ও স্বাক্ষর: | নিয়মিত কাজগুলো করতে গিয়ে আমি যা অনুভব করছি |
আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি, পারিবারিক কাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হলো আর্থিক কাজে সহায়তা করা। আমরা বিভিন্নভাবে পরিবারকে আর্থিক কাজে সহায়তা করতে পারি; যেমন: নিজের পোশাক দোকানে না পাঠিয়ে নিজেই ইগ্রি করলে কিছু ব্যয় কমে, পরিবারের বিভিন্ন কাজ নিজে করলে গৃহকর্মী বাবদ খরচ কমে যায়, অল্প দূরত্বের রাস্তা হেঁটে খরচ বাঁচানো যায়, কিংবা অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা বন্ধ করলেও কিছু খরচ কমে। এর ফলে কিছু অর্থ সঞ্চয় হয়, অর্থাৎ তাতে পরিবারের আর্থিক সহায়তা হয়। এ ছাড়া আরও কিছু কাজ রয়েছে, যেমন: পোশাকে নকশা/ডিজাইন করা, পিঠা/আচার/নাশতা জাতীয় খাবার/কারুপণ্য/কার্ড/গয়না ইত্যাদি তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করা, গৃহস্থালি বর্জ্য থেকে সার তৈরি ও বিক্রয়, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট তৈরি, বাড়ির পুরোনো জিনিসের যথাযথ/পুনঃব্যবহার, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া ইত্যাদি ধরনের কাজের মাধ্যমে আমরা পরিবারের আয়ে অবদান রাখতে পারি বা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে পারি। সপ্তম শ্রেণিতে আমরা পারিবারিক আয় বৃদ্ধিমূলক কাজের পরিকল্পনা করেছি এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী তা বাস্তবায়নের উদ্যোগও গ্রহণ করেছিলাম। এ বছরও আমরা একটি পরিকল্পনা করব এবং তা বাস্তবায়ন করব।
একক কাজ
তুমি তোমার পরিবারের যেসব কাজে সহযোগিতা করো, সেখান থেকে আর্থিক কাজগুলো শনাক্ত করে তালিকাটি পূরণ করো এবং এর আনুমানিক আর্থিক (সাপ্তাহিক/মাসিক হিসেবে) মূল্য নিরূপণ করো। |
---|
ছক ১.২: পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে সহযোগিতামূলক কাজের তালিকা
আর্থিক সহযোগিতামূলক কাজ | সম্ভাব্য আয় (আনুমানিক আর্থিক মূল্য) |
---|---|
|
দৃশ্যপট ১: নকশিকাঁথার ফোঁড়
শেরপুরের শিক্ষার্থী জামিল আর তার বড় বোন গত বছর তাদের মায়ের কাছ থেকে নকশিকাঁথার ফোঁড় শিখেছিল। অবসর সময়ে ছোট ছোট টুকরা কাপড়ে অল্প করে নকশা তুলে সেই কাপড় গ্লু দিয়ে কাগজের টিস্যুবক্সের ওপর লাগিয়ে দেয়। এভাবে ফাইল কভার, পেনস্ট্যান্ড, শোপিস, হোল্ডিং ব্যাগ ইত্যাদি পণ্য বানিয়ে ছবি তুলে তার মায়ের সামাজিক যোগাযোগের পেজে পোস্ট দেয়। প্রতিদিনই পেজে ক্রেতার কাছ থেকে অর্ডার আসতে থাকে। গত ছয় মাসে তাদের পেজের জনপ্রিয়তা বেশ বেড়ে গেছে। এভাবেই তারা এখন বাবা-মাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করছে
দলগত কাজ
দৃশ্যপট ১ এর মতো নিজেদের এলাকায় প্রসার ও প্রচলন রয়েছে এমন কয়েকটি পণ্য, কৃষ্টি বা ঐতিহ্য খুঁজে বের করো। সেগুলোর মধ্যে এমন কিছু আছে কি না, যা দিয়ে তোমাদের বয়সী কেউ ইচ্ছা করলে নতুন কোনো আইডিয়া তৈরি করতে পারে এবং তা থেকে পরিবারের আর্থিক কাজে সহায়তা করতে পারে? দলের সবাই মিলে আলোচনা করে এরকম একটি ভালিকা বানাও। |
---|
পূর্বের শ্রেণিতে আমরা পারিবারিক আয়-ব্যয় ও পারিবারিক বাজেট সম্পর্কে জেনেছি। পারিবারিক বাজেট হলো পরিবারকেন্দ্রিক আয়-ব্যয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা; অর্থাৎ পরিবারের আয়ের উৎস ও চাহিদার ভিত্তিতে ব্যয়ের খাত নির্ধারণ করে যে পূর্বপরিকল্পনা করা হয়, তার প্রকাশ বা উপস্থাপনাই হলো পারিবারিক বাজেট। পারিবারিক বাজেট পরিবারের সঞ্চয়ে প্রেরণা জোগায়; আর যেকোনো সঞ্চয় আমাদের বিনিয়োগ বাড়ায়। বিনিয়োগ থেকে আমরা পাই নিয়মিত আয়, যা আমাদের পরিবারে এনে দেয় আর্থিক স্বাচ্ছন্দও। তাই আমরা গত বছরের মতো এবছরও প্রতি মাসের জন্য নিয়মিত পারিবারিক বাজেট তৈরি করব, মাসের শেষে তা পর্যবেক্ষণ করব এবং শিক্ষকের কাছে জমা দেবো।
দৃশ্যপট ২: মজুত গোছাই
গতকাল মুক্তণ তার মা-বাবার সঙ্গে গ্রামে নানার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল। সেখান থেকে শহরে নিজেদের বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেল। বাসায় এসে মুক্তার মা বিছানা পরিষ্কার করছিলেন। তার বাবা রান্নাঘরে গেলেন ভাত রান্না করতে। তিনি ড্রামের ঢাকনা খুলে দেখেন চাল নেই। তখন তাঁর মনে পড়ল, বেড়াতে যাওয়ার আগের দিন মুক্তার মা চাল কেনার তাগাদা দিয়েছিলেন; কিন্তু কাজের চাপে তিনি বেমালুম ভুলে গেছেন। কী আর করা! এরপর বাবা-মেয়ে মিলে রুটি বানাতে গেলেন। সেখানেও আরেক ঝামেলা, অনেক ক্ষন ধরে খোঁজাখুঁজি করেও লবন পাওয়া গেল না। মুক্তার বাবা নিশ্চিত করে বললেন যে, তিনি এই মাসে দুইবার লবন কিনেছেন। কিন্তু লবণ তো লাপাত্তা। অবশেষে নানার বাড়ি থেকে আনা মাংসের ঝোলে বিনা লবণের রুটিই খেতে হলো সবাইকে।
দলগত কাজ
দৃশ্যপট ২ ভালোভাবে পড়ো। সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর সাজাও- ক) মুক্তাদের বাড়িতে এমন ঘটনা কেন ঘটছে বলে মনে করো? |
---|
মুক্তাদের পারিবারিক দৃশ্যপটটি আমরা খেয়াল করলে দেখতে পাই, পরিবারে দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্যের ক্ষেত্রে তাদের পরিবারে কোনো মজুদ পরিকল্পনা না থাকার কারণে প্রায়ই এরকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক মজুদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অতি সহজেই একটি পরিবার এ ধরনের সমস্যা এড়িয়ে চলতে পারে।
পারিবারিক মজুদ ব্যবস্থাপনা' কথাটি প্রধানত দুটি ধারণা নিয়ে গঠিত। একটি হলো 'পারিবারিক মজুদ' অন্যটি হলো 'ব্যবস্থাপনা'। এখানে 'পারিবারিক মজুদ' বলতে একটি পরিবার যেসব নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবহার করে, তার পর্যাপ্ত যথাযথ পরিমাণ জমা বা মজুদ থাকাকে বুঝায়। এ পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, লবণ, তেল, পেঁয়াজ, মরিচ, মাছ, মাংস, শাকসবজি ইত্যাদি। আর 'ব্যবস্থাপনা' বলতে বুঝায় নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের যথাযথ তালিকা তৈরি, সংগ্রহ বা ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার। ব্যবস্থাপনা যথাযথ করতে হলে লক্ষ রাখতে হবে, পরিবারে কোনো এক বা একাধিক নিত্য ব্যবহার্য পণ্য (চাল, ডাল, আটা, ময়দা, লবণ, তেল, পেঁয়াজ, মসলা ইত্যাদি) যেন পুরোপুরি শেষ হয়ে না যায়, যার কারণে আমাদের পরিবারে খাদ্য দ্রব্য তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটে। আবার কোনো এক বা একাধিক পণ্য অত্যধিক মজুদের কারণে পচে নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতির কারণ যেন না হয়। এছাড়া এক বা একাধিক পণ্য অত্যধিক মজুদের কারণে পরিবারের আয়ের একটি বড় অংশ উক্ত পণ্য ক্রয়ে ব্যয় হওয়ায় অন্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে যেন আর্থিক সংকটে পড়তে না হয়। সঠিক ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম শর্ত হলো- নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবহারে আমাদের সব সময়ই মিতব্যয়ী হওয়া। পরিবারের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও চাহিদা বিবেচনা করে সাপ্তাহিক বা মাসভিত্তিক মজুদ ব্যস্থাপনার পরিকল্পনা করা যেতে পারে। মজুদ ব্যস্থাপনার প্রথমেই একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি পরিবারে নিত্য ব্যবহার্য পণ্য কোনটি কী পরিমাণ লাগে তা অনুমান করতে হবে। তবে পারিবারিক প্রয়োজন ও সক্ষমতা বিবেচনা করে কিছু পণ্য একসঙ্গে ও কিছু পণ্য নৈমিত্তিক ভিত্তিতে ক্রয় করা যেতে পারে। একসঙ্গে বেশি পণ্য কিনলে তুলনামূলকভাবে কম দামে ক্রয় করা যায় এবং সময় ও বহন খরচেও সাশ্রয় হয়। তবে সকল ক্ষেত্রে পারিবারিক প্রয়োজন ও পণ্যের স্থায়ীত্ব বা পচনশীলতা এবং আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় রাখতে হবে।
পারিবারিক মজুদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা অতি সহজেই আমাদের পরিবারে দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্যের ঘাটতি বা অত্যধিক মজুদায়নের সমস্যার সমাধান করতে পারি:
ক) আগে ক্রয়কৃত মজুদ আগে ব্যবহার (দ্রুত পচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে):
কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় (যেমন: শাকসবজি, মাছ-মাংস)। ফলে এ জাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে যেটি আগে ক্রয় করা হয়েছে, সেটি আগে ব্যবহার করতে হবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান বা কক্ষ নির্ধারণ করে সেখানে সমজাতীয় পণ্যগুলো স্তরে স্তরে সাজিয়ে নিতে হবে যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের হিসাবের সঙ্গে বাস্তবের মিল থাকে এবং প্রতিটি পণ্য পরিবারের প্রয়োজনে সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।
খ) কী পরিমাণ মজুদ হাতে রেখে পুনরায় ক্রয়ের উদ্যোগ নিতে হবে তা নির্ধারণ:
আমরা লক্ষ করলে দেখতে পাই যে, প্রতিদিন আমাদের পরিবারে যে পরিমাণ চাল বা সবজি প্রয়োজন হয়, সেই পরিমাণ লবণ বা তেল প্রয়োজন হয় না। তাই প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে কী পরিমাণ মজুদ হাতে রেখে পুনরায় ক্রয়ের উদ্যোগ নিতে হবে তা হিসাব করে নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি দ্রব্যের পরিমান ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
গ) বেশি পরিমাণ/পাইকারি ক্রয়ের ব্যবস্থা করা:
আমরা জানি, কোনো একটি পণ্য একত্রে বেশি পরিমাণ বা পাইকারি আকারে ক্রয় করলে দামে ছাড় পাওয়া যায়, পরিবহন খরচ সাশ্রয় হয় এবং সময় বাঁচে। তাই পরিবারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা, পরিমাণ ও আর্থিক সচ্ছলতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পাইকারিভাবে পণ্য ক্রয়ের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।
চিত্র ১.২: একটি রান্নাঘরে এক মাসের মজুত সাজিয়ে রাখা
ঘ) কী পরিমাণ পণ্য নতুন করে কিনতে হবে তা নির্ধারণ: এ ক্ষেত্রে কী পরিমাণ পণ্য নতুন করে ক্রয় করলে অতি মজুদায়নের জন্য পণ্য নষ্ট হবে না, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তবে এর পাশাপাশি এটাও লক্ষ রাখতে হবে- অল্প মজুদের কারণে পরিবারের দৈনন্দিন কাজ যেন ব্যাহত না হয়। এ জন্য প্রতিদিনের পারিবারিক চাহিদা, পণ্যমূল্য, মজুদায়ন খরচ, বাট্টার (ছাড়ের) পরিমাণ ইত্যাদি বিবেচনা করে কী পরিমাণ পণ্য নতুন করে কিনতে হবে তা নির্ধারণ করতে হয়। এভাবে মজুদের পরিমাণ নির্ধারণ করাকে আমরা 'মিতব্যয়ী ফরমায়েশ পরিমাণ' বলে থাকি।
একক কাজ
ছক অনুযায়ী তোমার পরিবারের আগামী এক সপ্তাহের নিত্যব্যবহার্য পণ্যের একটি তালিকা তৈরি করো। এক সপ্তাহে কোন পণ্য কী পরিমাণে লাগবে তা হিসেব করো। বর্তমানে প্রতিটি পণ্য কী পরিমাণে আছে তা বের করো। এক সপ্তাহের জন্য প্রতিটি পণ্যের আর কী পরিমাণ ক্রয় করতে হবে তা বের করো। প্রতিটি পণ্য ক্রয়ে কতো টাকার প্রয়োজন হবে তা বের করো। (কাজটি অভিভাবকের সহায়তায় করতে হবে। ছকটি জীবন ও জীবিকা খাতায় লিখে নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ঘর তৈরি করো এবং সেখানে তথ্যগুলো লেখো।) |
---|
ছক..১.৩: সাপ্তাহিক পারিবারিক মজুদ পরিকল্পনা
নং | পণ্যের নাম | সপ্তাহে কী পরিমাণ প্রয়োজন? | কী পরিমাণ আছে? | কী পরিমাণ ক্রয় করতে হবে? | আনুমানিক মূল্য কত? (ঢাকায়) |
---|---|---|---|---|---|
১. | |||||
২. | |||||
৩. | |||||
৪. | |||||
৫. | |||||
মোট মূলা |
পারিবারিক মজুদ খতিয়ান (Stock ledger) বানাই
মজুদ খতিয়ান বা স্টক লেজার এমন একটি তালিকা, যাতে প্রতিটি পণ্য কী পরিমাণ মজুদ আছে, কী পরিমাণ নতুন পণ্য কিনতে হবে এবং পচনশীলতার বিষয়টি বিবেচনা করে আগে ক্রয়কৃত পণ্য আগে ব্যবহার করতে হয় ইত্যাদিসহ সার্বিক বিষয় উল্লেখ থাকে। একটি পরিবার যদি নিয়মিত মজুদ খতিয়ান অনুসরণ করে, তাহলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শূন্যতা বা আধিক্যের কারণে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। পণ্যের পচনশীলতার বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা দ্রুত পচনশীল পণ্যের জন্য একটি খতিয়ান ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের জন্য আলাদা একটি (দ্রুত পচনশীল নয়, এমন) মজুদ খতিয়ান ব্যবহার করতে পারি।
দৃশ্যপট ৩: রনিদের পরিবারের মজুদ তথ্য
বাবা-মা, দাদা-দাদি, আর দুই ভাই-বোন মিলে রনিদের পরিবার। রনি তাদের পরিবারের নিত্যপণ্যের মজুদের হিসাব বেশ কয়েক মাস যাবৎ সে নিজেই রাখে, ফলে ইতোমধ্যে তার পরিবার এর সুফলও পাচ্ছে, প্রতিটি পণ্যের চাহিদা সম্পর্কে তার একটি স্বচ্ছ ধারণাও জন্মেছে। রনি তার পারিবারিক মজুদ খতিয়ান বা স্টক লেজার মাস ভিত্তিতে রাখে এবং দ্রুত পচনশীল নিত্যপণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য দামে সাশ্রয় ও সময় বাঁচানোর জন্য মাসের শুরুতে ক্রয় করার ব্যবস্থা করে। তবে বাড়িতে অতিথির আগমন বা অন্য কোনো কারণে কোনো একটি নিত্যপণ্যের স্বল্পতা হলে রনিদের পরিবার মাসের অবশিষ্ট দিনগুলোর জন্য অতিরিক্ত পণ্যটুকুই কিনে নেয়। রনিদের পরিবারে জানুয়ারি-২০২৪ এর আংশিক মজুদ খতিয়ান বা স্টক লেজার (৪টি নিত্যপণ্যের) দেওয়া হলো।
আজকাল আমাদের দৈনন্দিন ব্যস্ততা বেড়েছে বহুগুণ। ব্যস্ততার কারণে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য বার বার বাজারে যাওয়া কিংবা অনলাইনে অর্ডার করা নিয়ে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয়। তাই কাজগুলোকে সহজ এবং সুশৃঙ্খলভাবে করার ক্ষেত্রে সহায়তা পাওয়া যায় পারিবারিক মজুদ খতিয়ান বা স্টক লেজার থেকে। আমরা পারিবারিক মজুদ ব্যবস্থাপনার কৌশল প্রয়োগ করে পরিবারের অর্থ সাশ্রয়সহ পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঠিক জোগান নিশ্চিত করতে পারি। পারিবারিক মজুদায়নের ক্ষেত্রে আমরা কখনোই নিত্য পণ্যের অতিমজুদায়ন করব না। অতিমজুদায়ন বাজারে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে, যা সবার জন্যই ক্ষতিকর।
একক কাজ
মজুদ খতিয়ান বা স্টক লেজার বানাই পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় তোমার পরিবারের একটি মাসিক/সাপ্তাহিক পারিবারিক মজুদের খতিয়ান বা স্টক লেজার তৈরি করো ও তা অনুসরণ করো। |
---|
বিদ্যালয়ভিত্তিক অনুষ্ঠান পরিচালনা (event management) করি
আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বাড়িতে, আশেপাশে, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে কত অনুষ্ঠান হতে দেখি। যেমন: বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন, জাতীয় দিবসগুলো উদ্যাপন, বিয়ে, গায়েহলুদ, জন্মদিন, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ব্যবসায়িক আইডিয়া শেয়ার, সংবর্ধনা, পুরস্কার বিতরণী, পণ্যমেলা, মোড়ক উন্মোচন, পুজা- পার্বণ, মিলাদ-মাহফিল, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, শিক্ষা সফর, পিকনিক, ক্যাম্পিং, র্যালি, ত্রাণ বিতরণ ইত্যাদি। এসব অনুষ্ঠান খরন অনুযায়ী সুশৃঙ্খলভাবে আয়োজন করার পেছনে অনেক পরিকল্পনা থাকে। এসব অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারা এক বিশেষ ধরনের পারদর্শিতা। প্রতিটি অনুষ্ঠানকে এর স্বকীয়তা, অভিনবত্ব, ভাবগাম্ভীর্য, অংশগ্রহণকারীদের চাহিদা, আয়োজকদের উদ্দেশ্য ইত্যাদি দিক বিবেচনায় নিয়ে সাজাতে হয়। একটি চমৎকার ও সুচারু পরিকল্পনা এবং উক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে তবেই সেটি হয়ে ওঠে সফল একটি অনুষ্ঠান। আর এ আয়োজন বা অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনাই আজকাল 'ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট' নামে পরিচিত। আমাদের ব্যস্ততার কারণে এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ইদানীং প্রসার পাচ্ছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নামের নতুন এই পেশা। সৃজনশীল আইডিয়া দিয়ে আকর্ষণীয় ও কার্যকরভাবে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করাই এই পেশার উদ্দেশ্য। এবার এসো, আমরা দুটি আয়োজন দেখি:
অভিভাবক সমাবেশ ১
সমাবেশের দিন সকালেই অভিভাবকগণ প্রতিষ্ঠানে চলে আসেন। কিন্তু তারা কোন কক্ষে বসবেন তা বুঝতে পারছিলেন না। কেউ দারোয়ানকে, কেউ শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করছিলেন। কক্ষে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় অনেক অভিভাবক পেছনে দাঁড়িয়ে থাকলেন। ৯.০০ টায় শুরু করার কথা ছিল, কিন্তু শুরু হয় ১০.৩০ মিনিটে। শ্রেণিশিক্ষক একা অভিভাবকদের প্রশ্নের জবাব দিয়ে শেষ করতে পারছিলেন না। সবাই খুব অসন্তোষ প্রকাশ করছিলেন। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই অনেকে উঠে চলে যাচ্ছিলেন। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও পারদর্শিতা নিয়ে যখন কথা বলা হচ্ছিল, তখন অনেকেই অনুপস্থিত ছিলেন। বেশ হইচইয়ের মধ্য দিয়েই সভাটি শেষ হয়।
অভিভাবক সমাবেশ ২
সমাবেশের দিন বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখেই কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিভাবকদের অভ্যর্থনা জানিয়ে কোথায় বসতে হবে তা দেখিয়ে দিল। কোন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হবে তা নোটিশ বোর্ডেও টানানো রয়েছে। কক্ষে অভিভাবকের সংখ্যা অনুপাতে আসন সাজানো থাকায় কোনোরকম বিশৃঙ্খলা হয়নি। সবাই বসার পর পূর্বনির্ধারিত সময়েই প্রতিষ্ঠান প্রধান (প্রধান শিক্ষক) ও শ্রেণিশিক্ষক সবাইকে স্বাগত জানিয়ে সভার কার্যক্রম শুরু করলেন। শুরুতেই শ্রেণিশিক্ষক 'অভিভাবক সভা'র উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করলেন। এরপর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কে অভিভাবকদের জানানো হয়। উক্ত বিষয়ে অভিভাবকদের কোনো প্রশ্ন আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয় এবং এক এক করে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সভার কার্যক্রম শেষ হয়। সবশেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়।
দলগত কাজ
উপরের দুটি অভিভাবক সভার মধ্যে কোনটি সফল হয়েছে বলে মনে করো এবং কেন? প্রথমটিতে কী ধরনের অব্যবস্থাপনা ছিল? একটি চমৎকার অভিভাবক সভা আয়োজনের জন্য কোন কোন দিক লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন বলে মনে করো? |
---|
অনুষ্ঠান আয়োজনে (event management) যা কিছু লক্ষ রাখব
একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা করার বিস্তারিত পরিকল্পনা বা প্রক্রিয়া হলো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। নিজের দক্ষতাকে সৃজনশীলভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব এ ধরনের কার্যক্রমে। এ ধরনের কার্যক্রমে যেসব দিক লক্ষ্য রাখতে হয়, সেগুলো হলো-
➤ দলগত যোগাযোগের মাধ্যমে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ: ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট একটি দলগত কাজ, তাই দলের প্রত্যেক সদস্যের মাঝে বোঝাপড়া ভালো হতে হবে। দলনেতাকে হতে হবে বিচক্ষন ও চৌকস। কে কতটা বিশ্বস্ত ও দায়িত্ববান এবং কোন কাজটি কাকে দিয়ে ভালোভাবে সম্পন্ন করানো যাবে, তা বুঝে নিয়ে দায়িত্ব বণ্টন করতে হবে। দলের প্রত্যেক সদস্য যেন কাজের প্রতি একনিষ্ঠ ও সক্রিয় থাকে, তা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনোরকম বিঘ্ন (কমিউনিকেশন গ্যাপ) যেন তৈরি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
➤ আয়োজনে অভিনবত্ব আনয়ন: যে ধরনের অনুষ্ঠানই হোক না কেন, তার আয়োজনে সৃজনশীলতার ছাপ থাকতে হবে। উপস্থাপনায়, ভাবগাম্ভীর্যে এবং সঞ্চালনায় যেন অভিনবত্ব থাকে; দর্শক যেন অনুষ্ঠানে এসে একঘেয়েমিতে না ভোগেন; আকর্ষণ ও বৈচিত্র্য খুঁজে পান, সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে।
চিত্র ১.৩: বিদ্যালয়ের একটি ইভেন্ট চলমান
➤ চাহিনা/উদ্দেশ্য অনুযায়ী অনুষ্ঠান সাজানো: একেক ইভেন্ট একেক রকমের উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়। যেমন- বিদ্যালয়ের নবীনবরণ মঞ্চ, বার্ষিক মিলাদের মঞ্চ কিংবা সরস্বতী পূজার মঞ্চ নিশ্চয়ই এক রকমের হবে না। অনুষ্ঠানের চাহিদা ভালোভাবে বুঝে নিয়ে সেভাবে সাজানো ও পরিচালনার পরিকল্পনা করতে হবে। উক্ত পরিকল্পনায় কোনো কিছু বাদ পড়েছে কি না, তা বারবার ফিরে দেখতে হবে।
➤ নিষ্ঠার সঙ্গে মিতব্যয়ী বাজেট প্রণয়ন ও পরিচালনা: অনুষ্ঠানটিকে নিজের বলে ভাবতে হবে। অযথা খরচ বা বাড়তি খরচ যেন না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। পরিমিত খরচের মধ্যে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারার কৌশল রপ্ত করতে হবে, যাতে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বিমুখ বা অসন্তুষ্ট না হয়ে যায়।
➤ আয়োজনে শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা এবং সকলের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা: যেকোনো অনুষ্ঠানেই এটি একটি অপরিহার্য দিক, যা অবশ্যই নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ গুরুত্বপূর্ণ অতিথি (ভিআইপি) থাকলে তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা উচিত। অতিথিদের মধ্যে কেউ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে হইল চেয়ারে চলাচলের ব্যবস্থা, শোনার জন্য মাইক্রোফোন কিংবা শোনার যন্ত্রপাতি (hearing aid), ভিন্ন ভাষাভাষীর জন্য অনুবাদ যন্ত্র ইত্যাদির ব্যবস্থাও রাখতে হবে। মঞ্চ, সাজসজ্জা ইত্যাদিতে নিরাপদ বৈদ্যুতিক লাইন ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রবেশ, আসন গ্রহণ, বহির্গমন ও চলাচলে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য স্টিকার, নির্দেশক সাইন ইত্যাদিসহ যাবতীয় ব্যবস্থা পরিকল্পনায় রাখতে হবে।
➤ নির্ধারিত সময়ের সধ্যেই আয়োজন সম্পন্ন করা: অনুষ্ঠানের জন্য পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী আয়োজন যেন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। অনুষ্ঠান শুরুর সময় নিয়ে বিড়ম্বনা যেন না হয়, এজনো নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠান শুরু ও সমাপ্ত করার রেওয়াজ তৈরি করতে হবে; এতে মানুষের আস্থা বাড়বে।
➤ আয়োজনে প্রয়োজনীয় সব জিনিসের প্রাছি/অনুমতি গ্রহণ ইভ্যানি নিশ্চিত করা: কিছু ইভেন্ট আছে যেগুলোতে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়, যেমন- শিক্ষাসফর বা ক্যাম্পিংয়ে যাওয়ার জন্য অভিভাবকের সম্মতিপত্র সংগ্রহ করা জরুরি। এমনও হতে পারে, যেখানে আয়োজন করা হবে, সেই মাঠ বা অডিটোরিয়াম অন্য কোনো সংস্থার, সে ক্ষেত্রে তাদের অনুমতি নিতে হবে। আবার কোনো ইভেন্টে হয়তো অতিথিদের আমন্ত্রণপত্রও পাঠাতে হতে পারে।
➤ আয়োজন শেষে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা: এটি ইভেন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা আমরা প্রায়ই স্কুলে যাই। ইভেন্টের পরপরই মাঠ বা কক্ষ, ময়লার ঝুড়ি, এখানে-সেখানে পড়ে থাকা সামগ্রী ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে। চেয়ার, টেবিল নির্দিষ্ট স্থানে ফেরত পাঠানোসহ যাবতীয় পরিচ্ছন্নতা সম্পন্ন করার পর আয়োজনের স্থান ত্যাগ করতে হবে। এলোমেলো বা অপরিচ্ছন্ন রেখে ইভেন্টের কাজ শেষ হয়েছে, তা কোনোভাবেই বলা যাবে না। এর ওপর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট দলের ভাবমূর্তি অনেকাংশে নির্ভর করে।
উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়াও অনেক ব্যাপার রয়েছে, যেগুলো একটি চমৎকার ইভেন্ট পরিচালনার জন্য প্রয়োজন। একটি সফল ও সুন্দর অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠুভাবে সংগঠন, শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ এবং নিয়ন্ত্রণ। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য যেসব দক্ষতা অনুশীলন ও চর্চা করা প্রয়োজন সেগুলো হলো-
যোগাযোগ দক্ষতা: ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্টের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য মৌখিক ও লিখিত দুই ধরনের যোগাযোগ দক্ষতাই প্রয়োজন। অনুষ্ঠানের জন্য সরাসরি কিংবা ফোনে কথা বলা, আমন্ত্রণপত্র তৈরি ও বিতরণ, অনুষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ, অনুষ্ঠানের প্রচার- প্রচারণা, মতামতের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্তের প্রতি কাজ করানো বা আকৃষ্ট করা (convinced) ইত্যাদি কাজ করার জন্য যোগাযোগে পারদর্শী হতে হবে। যেমন- অভিভাবক সমাবেশের জন্য তাদেরকে দাওয়াতপত্র পাঠানো, ফোনে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, ক্ষেত্রবিশেষে সভায় আসার জন্য অনুপ্রেরণা দেওয়া (কনভিন্সড করা), চেয়ারের ঘাটতি থাকলে ডেকোরেটর থেকে দর কষাকষির মাধ্যমে চেয়ার ভাড়া করা ইত্যাদি।
সংগঠন ও সময় ব্যবস্থাপনা দক্ষতা: ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্টের জন্য সাংগঠনিক দক্ষতা থাকা জরুরি। কারণ, একটি ইভেন্টের সাফল্য একক কোনো ব্যক্তির কাজের ওপর নির্ভর করে না। দলগতভাবে সবার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই কাজটি নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হয়। তাই সবাইকে কাজে সম্পৃক্ত করে কাজ করিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এর পাশাপাশি সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সফলভাবে কাজ করিয়ে নেওয়ার দক্ষতাও অর্জন করতে হবে।
বাজেট ব্যবস্থাপনা দক্ষতা: এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। ইভেন্টের নকশার ওপর ভিত্তি করে উপকরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় কিংবা ভাড়া করা, যাতায়াত খরচ, শ্রমিক মজুরি, বিশেষ কোনো সম্মানী ইত্যাদি সংক্রান্ত আয় ও ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ ও নির্বাহ করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী দক্ষতা: ইভেন্ট বা অনুষ্ঠান আয়োজন, পরিচালনা কাজে অবশ্যই সৃজনশীল হতে হবে। অনুষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী সাজসজ্জায় নতুনত্ব, সুশৃঙ্খল, আকর্ষণীয় ও অভিনব উপস্থাপনা ইত্যাদির ওপর এর সফলতা অনেকখানি নির্ভর করে। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী দক্ষতা বিকশিত করা সম্ভব।
আমরা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন কোর্স বা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সময় এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারব। বিভিন্ন ধরনের ইভেন্ট আয়োজনের মাধ্যনে আমাদের যে অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচয় হয়, তা চিন্তাকে সুশৃঙ্খলভাবে প্রকাশের ক্ষেত্র উন্মুক্ত করে। একসঙ্গে অনেক দায়িত্ব অর্পণ বণ্টন, নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করতে হয় বলে বহুমুখী প্রতিভার চমৎকার বিকাশ ঘটে। আমরা আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সহায়তায় নানা ধরনের ইভেন্ট আয়োজন করতে পারি। সাম্প্রতিককালে এটি একটি সৃজনশীল ও উদীয়মান পেশা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। নিজের সৃজনশীলতা, মেধা ও দক্ষতার প্রতিফলন ঘটানোর সুযোগ থাকে এই পেশায়। ইভেন্ট প্ল্যানার, ইভেন্ট ম্যানেজার, ইভেন্ট অর্গানাইজার, ইভেন্ট কো-অর্ডিনেটর ইত্যাদি হলো এই পেশায় জনপ্রিয় কিছু পদবি।
তোমরা ইতোমধ্যে নিশ্চয়ই জেনেছ, জনমনে সচেতনতা তৈরির জন্যও কিছু ইভেন্ট আছে যা সমাজের বিভিন্ন ধরনের অজ্ঞতা ও কুসংস্কার ইত্যাদি দুরীকরণে এবং বিভিন্ন দুর্যোগে সুরক্ষা বা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। আমরা এবার এরকম একটি সচেতনতামূলক ইভেন্ট নিয়ে একটি প্রকল্প বা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করব।
প্রজেক্ট ওয়ার্ক
ফায়ার ড্রিল বিদ্যালয়ে একটি ফায়ার ডিল আয়োজন করো। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক, অন্যান্য শিক্ষক এবং ক্লাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলোচনা করে একটি সুন্দর পরিকল্পনা করো। তোমরা তোমাদের স্কুলের বিএনসিসি, রোভার স্কাউটস ও গার্লগাইডের সহায়তায় ফায়ার ড্রিলটি আয়োজন করতে পারো (সম্ভব হলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কোনো কর্মীকে এই আয়োজনে সম্পৃক্ত করতে পারো।) |
প্রজেক্ট ওয়ার্কের জন্য সংকেত
ফায়ার ট্রিলের সার্বিক কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে তোমরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে কাজটি করতে পারো; যেমন-
ক) তথ্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ প্রদানকারী দল
খ) যোগাযোগ ও শৃঙ্খলা রক্ষাকারী দল
গ) বাজেট ও সরঞ্জাম প্রস্তুতিবিষয়ক দল
ঘ) পরিকল্পনা ও সার্বিক নির্দেশনা প্রদানকারী দল
৪) প্রতিবেদন প্রণয়নকারী দল
প্রতিটি দল নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে দায়িত্বের তালিকা ও পরিকল্পনা তৈরি করো। পরিকল্পনা অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ করে প্রশিক্ষক দল নিজেকে প্রশিক্ষক হিসেবে প্রস্তুত করো। প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিস। রোভার স্কাউট/গার্ল গাইডদের সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করো। ফায়ার ডিলের ভিডিও দেখে নিতে পারো। এই অধ্যায়ের 'কিছু তথ্য জেনে নিই' যেকেও আইডিয়া নিতে পারো। কী কী সরঞ্জাম লাগতে পারে, তার তালিকা বানাও, সাধ্যমতো সংগ্রহের চেষ্টা করো। নিজেরা একটা ভামি ড্রিল বা রিহার্সেলের মাধ্যমে কোথায় সমন্বয়ের ঘাটতি আছে, তা খুঁজে বের করো। এরপর পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধান আরও নিখুঁত করে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নাও। চূড়ান্ত দিনে নিজেদের সেরা কাজ উপহার দিয়ে সবাইকে চমকে দাও। প্রতিবেদনকারী দল প্রথম থেকে চূড়ান্ত দিন পর্যন্ত সবকিছু লিপিবদ্ধ করতে থাকো এবং ড্রিল শেষ করে পরদিন তোমাদের সংরক্ষিত রেকর্ড সবার সঙ্গে শেয়ার করো এবং অন্যদের মতামত বা ফিডব্যাক অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষকের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দাও।
চিত্র ১.৪: শিক্ষার্থীদের পরিচালনায় ফায়ার ঢিলের আয়োজন
একক কাজ ফায়ার ড্রিল পরিচালনায় কী কী সবল ও দুর্বল দিক তোমার চোখে পড়েছে তা উল্লেখ করো। |
---|
ছক ১.৪: ইভেন্ট মূল্যায়ন
সবল দিক | দুর্বল দিক |
---|---|
1. 2. 3. 4. 5. | 1. 2. 3. 4. 5. |
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে দলগতভাবে তোমরা কী কী সচেতনতামূলক ইভেন্ট পরিচালনা করতে পারো, তার একটি ভালিকা বানাও (সংকেত- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বৃক্ষরোপণ অভিযান, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ক র্যালি ইত্যাদি
'শো বোট' নামের একটি বিদেশি নাটকের বিখ্যাত একটি উক্তি, 'একমাত্র ভাগ্যবান তারাই, যারা কাজ করে আনন্দ পায়'। আর কাজটা আমাদের কাছে তখনই আনন্দদায়ক হবে, যখন এর মধ্যে আগ্রহ থাকবে কিন্তু একঘেয়েমি থাকবে না। কারণ, একঘেয়েমি আমাদের মাঝে ক্লান্তি আর আবসাদ বয়ে আনে। কাজের একঘেয়েমি দূর করার উপায় হলো কাজকে উপভোগ্য করে তোলা, কাজটি করার মাঝে বৈচিত্রা নিয়ে আসা। গবেষণায় দেখা যায়, কাজের প্রতি অনীহা দেখা দিলে শরীরে রক্তের চাপ এবং অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রা কমে যায়; অস্বস্তি, মাথা ব্যথা শুরু হয়; মেজাজ খারাপ হতে থাকে। অন্যদিকে কাজের প্রতি আগ্রহ ও আনন্দ অনুভব করলে রক্তের চাপ এবং অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে। তাই যেকোনো কাজ করার জন্য নতুন নতুন আইডিয়া খুঁজতে হবে, যা একই সঙ্গে নিজের ও অন্যের হতাশা ও ক্লান্তি দূর করবে। তাই চলো, আমরা যেকোনো কাজ আনন্দ নিয়ে করি এবং আনন্দে থাকি।
স্বমূল্যায়ন
ক) তোমার পরিবারে মজুত ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে তুমি কী কী পদক্ষেপ নিয়েছ?
খ) মনে করো, তুমি তোমার মায়ের ছোটবেলার বান্ধবীদের একটা মিলনমেলা আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছ। আনন্দঘন পরিবেশে দিনটি তাদের উপহার দেওয়ার জন্য তুমি অনুষ্ঠানটি কীভাবে পরিচালনা করবে তার একটি পরিকল্পনা করো।
গ) তোমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে '২১ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের লক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠানসূচি তৈরি করো।
এই অধ্যায়ে আমরা যা যা করেছি... ........ [প্রযোজ্য ঘরে টিক (√) চিহ্ন দাও]
ক্রম | কাজসমূহ | করতে পারিনি (১) | আংশিক করেছি (৩) | ভালোভাবে করেছি (৫) |
---|---|---|---|---|
1. | ফিরে দেখা ছকটি পূরণ | |||
2. | পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে সহযোগিতামূলক কাজের তালিকা | |||
3. | পরিবারের আর্থিক কাজে সহায়তা করার লক্ষ্যে নিজ এলাকার ঐতিহ্যবাহী কোনো পণ্য নিয়ে আইডিয়া তৈরি | |||
4. | মজুত ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা অর্জন | |||
5. | পরিবারের মজুত ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ | |||
6. | পারিবারিক মজুদের স্টক লেজার তৈরি | |||
7. | ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ধারণা অর্জন | |||
8. | ফায়ার ড্রিল ইভেন্টটি পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ | |||
মোট স্কোর: ৪০ | আমার প্রাপ্ত স্কোর | |||
অভিভাবকের মতামত: |
এই অধ্যায়ে নতুন যা শিখেছি,...........
|
শিক্ষকের মন্তব্য
|
(ফায়ার ডিলের জন্য তোমাদের নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন হতে পারে। এখানে তোমাদের কাজের সুবিধার্থে সাধারন কিছু তথ্য দেওয়া হলো।)
ফায়ার ড্রিল বা অগ্নি-সহড়ার উদ্দেশ্য
অগ্নিকান্ড বা যেকোনো জরুরি অবস্থায় নিরাপদে কীভাবে বের হয়ে আসা যায় এবং এ সম্পর্কে যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তা অগ্নিমহড়া বা ফায়ার ড্রিল নামে পরিচিত। অগ্নি ও অগ্নি দুর্ঘটনা থেকে বাসা, বাড়ি, প্রতিষ্ঠান এবং নিজেদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধান করা এবং সর্বত্র একটি নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখার জন্যই এ ধরনের আয়োজন করা হয়। অগ্নি দুর্ঘটনা কিংবা যেকোনো জরুরি অবস্থ্য মোকাবিলায় প্রস্তুতি রাখা এবং দুর্ঘটনাসহ সকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিকারে পূর্ববর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করাই ফায়ার ড্রিল আয়োজনের উদ্দেশ্য। এ ছাড়া নিরাপত্তার সঙ্গে অগ্নি দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সেফটি সরঞ্জামাদির ব্যবহার জানা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যা আমরা ফায়ার চিলের মাধ্যমে জানতে পারি।
ফায়ার ড্রিল আয়োজনে অগ্নি-নির্বাপক বাহিনী
অগ্নি-নির্বাপণ, উদ্ধারকাজ পরিচালনা ও আহত ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য অগ্নি নির্বাপক দলকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন: অগ্নি-নির্বাপক দল (firefighters), উদ্ধারকারী দল (rescue team) এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দল (first aid team)।
অগ্নি-নির্বাপক দল হলুদ রঙের অ্যাপ্রোন পরে থাকেন, অ্যাপ্রোনের পেছনে লাল রঙে (fire) 'আগুন' লেখা থাকে। প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর কাজ করে থাকে এই দলটি।
উদ্ধারকারী দল হলুদ রঙের অ্যাপ্রোন পরে থাকেন, অ্যাপ্রোনের পেছনে লাল রঙে (rescue) 'উদ্ধার' লেখা থাকে। এই দলটি আহত লোকদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করে থাকে।
প্রাথমিক চিকিৎসা দল সাদা রঙের অ্যাপ্রোন পরে থাকেন, অ্যাপ্রোনের পেছনে লাল রঙে (first aid) 'প্রাথমিক চিকিৎসা' লেখা থাকে। এই দলটি ঘটনাস্থলে আহত মানুষদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকে।
আগুন লাগলে করণীয়
➤ বিচলিত হওয়া যাবে না বা উপস্থিত বুদ্ধি হারানো যাবে না।
➤ জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) ও ফায়ার সার্ভিসের নম্বরে (১৬১৬৩) ফোন দিতে হবে।
➤বৈদ্যুতিক আগুনের ক্ষেত্রে মেইন সুইচ বন্ধ করতে হবে, তেলজাতীয় পদার্থ ও পানি বৈদ্যুতিক আগুন নেভাতে ব্যবহার করা যাবে না।
➤ পরিধানের কাপড়ে আগুন লাগলে ভেজা কম্বল জড়াতে হবে অথবা মাটিতে গড়াগড়ি দিতে হবে।
➤ তেলজাতীয় পদার্থ থেকে লাগা আগুনে পানি ব্যবহার করা বিপজ্জনক। বহনযোগ্য ফোমটাইপ ফায়ার
➤ এক্সটিংগুইশার বা শুকনা বালি বা ভেজা কাপড় ব্যবহার করতে হবে।
➤ মূল্যবান জিনিস সরানোর চাইতে মানুষের জীবন বাঁচানো জরুরি- এই বিষয়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
➤ উদ্ধারকাজ পরিচালনার সময় যতটা সম্ভব আক্রান্ত ব্যক্তির শালীনতার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
➤ধোঁয়া থেকে সাবধান থাকতে হবে, কারণ ধোঁয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে অনেক প্রাণহানি হয়।
সতর্ক ব্যবস্থা
➤ প্রতিটি বাড়িতে নিরাপত্তার স্বার্থে এক বালতি বালি রান্নাঘরে/হাতের কাছে রাখতে হবে।
➤ বাড়ির প্রতিটি তলায় ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখতে হবে এবং এর ব্যবহার সবাইকে শেখাতে হবে। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ফায়ার এক্সটিংগুইশার পরিবর্তন করতে হবে।
➤ বহুতল দালানে অবশ্যই ফায়ার এক্সিটের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
➤ ফায়ার সার্ভিসের নম্বর সহজেই যেকেউ দেখতে পায়, এমন জায়গায়/দেয়ালে সেঁটে রাখতে হবে।
➤ অগ্নিকাণ্ডের সময় অযথা উৎসুক ভিড় করে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না।
আরও দেখুন...