গঠন:
বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলোর একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন হচ্ছে ওআইসি। এর পুরো নাম Organization of Islamic Co-operation (OIC)। বাংলায় একে বলা হয় “ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা' । আমরা জানি, দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে ইসরাইল ও এর পশ্চিমা বিশ্বের মিত্রদের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধের একপর্যায়ে ১৯৬৯ সালের ২১শে আগস্ট ইসরাইল অতর্কিতে মুসলমানদের পবিত্র মসজিদ আল আকসায় অগ্নিসংযোগ করে ।
সমগ্র মুসলিম বিশ্ব এর তীব্র নিন্দা জানায় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে । এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিসরে ১৪টি মুসলিম রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । ঐ সম্মেলনে মুসলিম রাষ্ট্রের প্রধানদের নিয়ে একটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । সে অনুযায়ী ১৯৬৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২২ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত ২৪টি মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে মরোক্কোর রাজধানী রাবাতে এক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সম্মেলনে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থরক্ষায় একটি সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং ২৫শে সেপ্টেম্বর তারিখে ওআইসি গঠিত হয় । মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী টেংকু আব্দুর রহমানকে ওআইসির প্রথম সেক্রেটারি জেনারেল বা মহাসচিব নিযুক্ত করা হয় । এভাবেই শুরু হয় ওআইসির যাত্রা। শুরুতে এর সদস্য সংখ্যা ছিল ২৩ । বর্তমান ওআইসির সদস্যসংখ্যা ৫৭। বিশ্বের সব মুসলিম রাষ্ট্রই এর সদস্য। ওআইসির সদর দপ্তর সৌদি আরবের জেদ্দায় ।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বজায় রেখে শত্রুর কবল থেকে ইসলামি স্থানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও বহিঃশত্রুর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা ওআইসির প্রাথমিক লক্ষ্য । এছাড়া ওআইসির আরও কিছু উদ্দেশ্য আছে ।
১. ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও সংহতি জোরদার করা;
২. সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা; ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সদস্য
৩. বর্ণবৈষম্যবাদ ও উপনিবেশবাদ বিলোপ করা;
8. ইসলামি পবিত্র স্থানগুলোর নিরাপত্তা বিধান করা, পবিত্র ভূমিকে মুক্ত করা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রামকে সমর্থন করা;
৫. মুসলমানদের মর্যাদা রক্ষা এবং মুসলিম জাতির সংগ্রামকে জোরদার করার জন্য সাহায্য করা;
৬. আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সমর্থন করা;
৭. সংস্থাভুক্ত সকল দেশ ও অন্যান্য দেশের সাথে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা;
৮. দেশসমূহের স্বাধীনতা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো; এবং
৯. কোনো সংঘর্ষ দেখা দিলে আলাপ-আলোচনা, মধ্যস্থতা, আপোস প্রভৃতির মাধ্যমে এর শান্তিপূর্ণ সমাধান ।
বাংলাদেশ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা:
বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলনে ওআইসির সদস্যপদ পায় । এই সদস্যপদ লাভের মধ্য দিয়ে মুসলিম বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে । শুরু থেকে বাংলাদেশ ওআইসির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আসছে। ওআইসিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশকে এর প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, অঙ্গসংগঠন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কমিটির সদস্য করা হয়েছে। ওআইসির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে যথাসম্ভব সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। যেমন-ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অব্যাহত সমর্থন জানিয়ে আসছে। ইরান-ইরাক যুদ্ধ বন্ধে প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আফগানিস্তানে রাশিয়ার আগ্রাসনকে নিন্দা জানিয়েছে । বসনিয়ায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য সৈন্য পাঠিয়েছে ।
বাংলাদেশ ওআইসিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি এর সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা লাভেও সমর্থ হয়েছে । ওআইসির সদস্যপদ বাংলাদেশকে বিভিন্ন মুসলিম দেশের স্বীকৃতি অর্জন এবং জাতিসংঘের সদস্যপদসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যপদ লাভে সাহায্য করেছে । যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে তেলসমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলোর সহযোগিতা পেয়েছে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, তেলসমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলোতে বাংলাদেশের বিশাল জনশক্তি রপ্তানি যা কর্মসংস্থানসহ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ছাড়াও শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ওআইসির সদস্য দেশগুলোর সহযোগিতা লাভ করে আসছে। প্রতিবছর বাংলাদেশের বহুসংখ্যক লোক পবিত্র হজ্জব্রত পালনের জন্য সৌদি আরব যায় । তাছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এবং পুরাতন মসজিদ সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ওআইসির কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পায় । গাজীপুরে অবস্থিত ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি' ওআইসির আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে ।
বস্তুত বাংলাদেশ ওআইসির সদস্য হওয়ার পর থেকে এর নীতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
আরও দেখুন...