উত্তল আয়না (Convex Mirror)

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পদার্থ বিজ্ঞান - আলোর প্রতিফলন (Reflection of Light) | | NCTB BOOK
5

তোমরা যদি কখনো একটা চকচকে চামচের নিচের বা পেছনের অংশে নিজের চেহারা দেখার চেষ্টা করে থাকো তাহলে নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ যে সেখানে তুমি তোমার চেহারাটা সোজা দেখালেও সেটি হবে তুলনামূলকভাবে ছোট। চামচের এই অংশটা উত্তল আয়নার মতো কাজ করে। সত্যিকারের উত্তল আয়না একটা প্রকৃত গোলকের অংশ হয়। ধরা যাক, গোলকটির ব্যাসার্ধ r এবং তার একটা অংশ কেটে তার উত্তল অংশটির দিক থেকে আলোর প্রতিফলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই আয়নায় একটা সমান্তরাল আলো ফেলা হলে আলোটি চারদিকে ছড়িয়ে যাবে, ছড়িয়ে যাওয়া আলোক রশ্মিগুলো যদি আয়নার কেন্দ্রের দিকে বর্ধিত করি তাহলে মনে হবে সেটা বুঝি একটা বিন্দু থেকে ছড়িয়ে গেছে। ঐ বিন্দুটিকে বলে ফোকাস বিন্দু। উত্তল আয়নার যে পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলন হয় তার কেন্দ্রবিন্দুটিকে বলে মেরু বিন্দু এবং এই বিন্দু থেকে ফোকাস বিন্দুর দূরত্বটিকে বলে ফোকাস দূরত্ব (f)। 

একটা গোলীয় আয়নাকে আমরা সব সময়ই একটা গোলকের অংশ হিসেবে কল্পনা করতে পারি। ঐ গোলকটির ব্যাসার্ধ যদি r হয় তাহলে ফোকাস দূরত্ব হবে r/2 | 

 

Content added By
Content updated By

গোলীয় উত্তল আয়নায় প্রতিবিম্ব

5

আমরা আগেই বলেছি চামচের বাইরের অংশটা গোলীয় উত্তল আয়নার মতো কাজ করে এবং সেখানে তুমি নিজেকে দেখতে চাইলে ছোট এবং সোজা একটা প্রতিবিম্ব দেখতে পাও। যার অর্থ আমরা গোলীয় উত্তল আয়নার প্রতিবিম্বটি সব সময়ই ছোট দেখার কথা গোলীয় উত্তল আয়নায় কীভাবে প্রতিবিম্ব তৈরি হয় সেটি বোঝার জন্য আলোক রশ্মি গোলীয় উত্তল আয়নায় কীভাবে প্রতিফলিত হয় সেটি জানতে হবে। সেটি নির্ভর করে আলোক রশ্মি কী কোণে গোলীয় উত্তল আয়নায় এসে পড়ছে তার উপর। আমরা তিনটি বিশেষ আলোক রশ্মির প্রতিফলনের নিয়ম জানলেই কীভাবে প্রতিবিম্ব তৈরি হয় সেটি ব্যাখ্যা করতে পারব: 

(i) আলোক রশ্মি কেন্দ্রমুখী হলে সেটি লম্বভাবে প্রতিফলিত হয়ে যেদিক থেকে এসেছে ঠিক সেদিকেই ফিরে যায়। 

(ii) প্রধান অক্ষের সমান্তরাল রশ্মিটি প্রতিফলনের পর মনে হবে যেন রশ্মিটি ফোকাস বিন্দু থেকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। 

(iii) আলোক রশ্মির দিক পরিবর্তন করা হলে এটি যেদিক থেকে এসেছে ঠিক সেদিক দিয়ে ফিরে যায়। কাজেই কোনো আলোক রশ্মি  ফোকাস অভিমুখী হলে সেটি প্রধান অক্ষের সাথে সমান্তরাল হয়ে প্রতিফলিত হবে। 

      

  চিত্র 8.06: উত্তল আয়নায় একটি বস্তু XY ফোকাস দূরত্বের ভেতরে রাখা হলে প্রতিবিম্ব X'Y' ছোট দেখায়

আমরা এখন এই তিনটি নিয়ম ব্যবহার করে প্রতিবিম্ব তৈরি করতে পারব।8.06 চিত্রে একটা উত্তল আয়নার সামনে XY একটি বস্তু রাখা আছে Y বিন্দু থেকে আলো R বিন্দুতে এলে সেটি লম্বভাবে প্রতিফলিত হয়ে আবার Y বিন্দুর দিকেই ফিরে যায়, যার অর্থ XY বস্তুর Y বিন্দুর প্রতিবিম্বটি এই YO রেখার কোথাও হবে। সেটি ঠিক কোথায় জানতে হলে X বিন্দু থেকে অন্যদিকে আরেকটি রশ্মি আঁকতে হবে, আমাদের সেটি করার প্রয়োজন নেই কারণ X বিন্দুটির প্রতিবিম্বটি বের করে সেখান থেকে আমরা এটি জেনে নেব। x বিদুর প্রতিবিম্ব বের করার জন্য দুটি রশ্মি আঁকতে হবে, একটি আগের মতো সরাসরি বিন্দুর সাথে যুক্ত করি। YR রশ্মিটি যে রকম লম্বভাবে প্রতিফলিত হয়ে Y এর দিকে ফিরে গিয়েছিল এই রশ্মিটিও ঠিক একইভাবে N বিন্দুতে প্রতিফলিত হয়ে x এর দিকে ফিরে যাবে। দ্বিতীয় রশ্মিটি YR এর সাথে সমান্তরালভাবে আঁকা যেতে পারে, সেটা উত্তল আয়নার P বিন্দুতে স্পর্শ করলে মনে হবে যেন F বিন্দু থেকে ছড়িয়ে যাচ্ছে কাজেই আমরা FP কে যুক্ত করে Q এর দিকে বাড়িয়ে দিতে পারি। FP রেখাটা OX রেখাকে X' বিন্দুতে ছেদ করেছে, যার অর্থ X বিন্দুর প্রতিবিম্বটি হবে X' বিন্দুতে। X' থেকে OY রেখার ওপর লম্ব টানলে সেটা Y' বিন্দুতে ছেদ করবে। যেহেতু আমাদের মনে হবে X বিন্দুর প্রতিফলনটি আসছে X' বিন্দু থেকে সে কারণে আমাদের মনে হবে Y বিন্দুর প্রতিকলনটি আসছে Y' বিন্দু থেকে। কাজেই X'Y' হবে XY এর প্রতিবিম্ব। 

দেখাই যাচ্ছে X'Y' সব সময় XY থেকে ছোট এবং XY উত্তল আয়না থেকে যত দূরে থাকবে XY হবে তত ছোট। প্রতিফলনের নিয়ম ব্যবহার করে উত্তল কিংবা অবতল আয়নায় প্রতিবিম্ব আঁকার এই পদ্ধতিটি ভালো করে জেনে রাখা দরকার, এটি পদার্থবিজ্ঞানের খুব প্রয়োজনীয় একটা পদ্ধতি। 

বোঝাই যাচ্ছে X'Y' থেকে আসলে সত্যিকারের আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে না, আমাদের শুধু মনে হচ্ছে বুঝি প্রতিবিম্বটি এখানে আছে। কাজেই এটা অবাস্তব প্রতিবিম্ব। সাধারণ আয়নার প্রতিবিম্বের সাথে তুলনা করে আমরা বলতে পারি 

(a) এই প্রতিবিম্বটির অবস্থান হবে ফোকাস বিন্দু এবং মেরু বিন্দুর মাঝখানে। বস্তুটি যত দূরে থাকবে প্রতিবিম্বটি ফোকাস বিন্দুর তত কাছে তৈরি হবে। 

(b) এই প্রতিবিম্বটি অবাস্তব 

(c) এটি সোজা 

(d) এটা ছোট, বস্তুটি আয়না থেকে যত দূরে যাবে প্রতিবিম্বটি তত ছোট হতে থাকবে। 

 

Content added By
Content updated By
Promotion