কী আছে আমার মাঝে

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - জীবন ও জীবিকা - Life and Livelihood - | NCTB BOOK
24

আজ শুধু অঙ্কুরিত, জানি কাল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাতা উদ্দাম হাওয়ার তালে তাল রেখে নেড়ে যাবে মাথা; তারপর দীপ্ত শাখা মেলে দেব সবার সম্মুখে ফোটাব বিস্মিত ফুল প্রতিবেশী গাছেদের মুখে।
কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতো আমরাও জানি, আমাদের মাঝে রয়েছে অনেক সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনা বিকশিত হয়ে একসময় সবার মুখে হাসি ফোটাবে। সৃষ্টিকর্তা সবার মাঝেই অপার সম্ভাবনা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। শুধু প্রয়োজন সেই সম্ভাবনার জায়গাটুকু খুঁজে বের করা। প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো বিশেষ কাজে রয়েছে বিশেষ দক্ষতা। তাই আমাদের কাজ হলো, নিজেকে আবিষ্কার করা। কী আছে নিজের মাঝে তা খুঁজে বের করে সেই গুণের নিয়মিত পরিচর্যায় আমরাও হয়ে উঠতে পারি আগামী শতকের সফল ব্যক্তিদের একজন!

আমরা সবাই কী সব ধরনের কাজ করতে পারি? নিশ্চয়ই না, আমাদের মধ্যে কেউ আছে গণিতে খুব ভালো, কেউ আছে বিজ্ঞানটা ভালো বোকে; আবার কেউ আছে ইতিহাসে দারুন মজা পায়। আবার আমাদের মাঝে কেউ খুব ভালো কথা বলে, কেউ ভালো লেখে, কেউ ভালো আঁকে, কেউ ভালো আবৃত্তি করে, কেউ ভালো তিলাওয়াত করে, কেউ ভালো নাচে কিংবা কেউ ভালো গাইতে পারে। একেকজন একেক কাজ ভালো পারে বা করে। বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে মানুষের রয়েছে বৈচিত্র্যময় গুণ, সামর্থ্য এবং আগ্রহের ক্ষেত্র। আমরা সবাই একজন থেকে অন্যজন বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকেই আলাদা। আমরা সবাই আলাদা বলেই পৃথিবী এতো সুন্দর। তাই আমাদের একেকজনের পছন্দ, অপছন্দ, অগ্রহের ধরনও আলাদা। নিজের পছন্দ, আগ্রহ, গুণ ও সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে তাই প্রত্যাশা সাজাতে হয়। তাহলে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস এবং প্রত্যাশা পূরণে সংকল্পবদ্ধ হয়ে কাজ করার স্পৃহা তৈরি হয়। আমরা এবার নিজেকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করব; খুঁজে বের করব কী আছে আমার মাঝে!

ছক ৬.১: আমার যা ভালো লাগে!

আমার পছন্দের কাজ

------------------------------------------------

------------------------------------------------

--------------------------------------------------

---------------------------------------------------

আমার যা অপছন্দ

------------------------------------------------

------------------------------------------------

--------------------------------------------------

---------------------------------------------------

আমার আগ্রহ, সামর্থ্য ও মূল্যবোধ

আমরা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে বিভিন্ন গল্পে দেখেছি, প্রত্যেক ব্যক্তির মাঝেই লুকিয়ে থাকে অনেক সম্ভাবনার বীজ। সময় এবং সুযোগ পেলে সেই সম্ভাবনার বীজ অঙ্কুরিত হয়, ডালপালা মেলে বিকশিত হয়ে বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়। তাই আমাদের নিজের ভেতরে লুকানো প্রতিভা আবিষ্কার করতে হবে। কোনটি ভালো লাগে আর কোন কাজে প্রবল আগ্রহ আছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। যে কাজের প্রতি আমরা আকর্ষণ অনুভব করি, বুঝতে হবে সেই কাজটাতেই আমার আগ্রহ। তাই আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা ব্যক্তির ভেতর থেকেই আসে, ফলে কাজের প্রতি তৈরি হয় আন্তরিকতা। একারণে আমাদের আগ্রহের জায়গা খুঁজে বের করা জরুরি।

একইসঙ্গে নিজের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য নিজের সামর্থ্য কী আছে তা-ও খুঁজে বের করতে হবে। নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে আমাদের সামর্থ্যের উন্নয়ন ঘটাতে হবে অর্থাৎ আরও দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। সামর্থ্য হলো জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ইত্যাদির সমন্বয়ে কোনো বিশেষত্ব বা গুণ কিংবা বলা যায়, কোনো কাজ করতে পারার সক্ষমতা।

চিত্র ৬.১: প্রিয় কাজে আমার আনন্দ!

আগ্রহ ও সামর্থ্যের পাশাপাশি আরেকটি বিষয় আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেটি হলো মূল্যবোধ। যে চিন্তাভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও সংকল্প মানুষের সামগ্রিক আচার ব্যবহার এবং কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে, তাকে আমরা সাধারণত মূল্যবোধ বলে থাকি। সমাজবিজ্ঞানী এফ. ই. স্পেন্সার বলেছেন, 'মূল্যবোধ হলো একটি মানদণ্ড, যা আচরণের ভালো-মন্দ বিচারের এবং সম্ভাব্য বিভিন্ন লক্ষ্য থেকে কোনো একটি পছন্দ করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়'। মূলকথা হলো, মূল্যবোধ আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণেও প্রভাব বিস্তার করে।

তবে সব সমাজে মূল্যবোধের প্রকাশ একই রকম না-ও হতে পারে। যেমন: ধরা যাক, শুভেচ্ছা বিনিময়ের কথা; কোনো কোনো দেশে কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সালামের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়; আবার কোনো দেশে কারো সঙ্গে দেখা হলে গুড মর্নিং অথবা গুড ইভিনিং জানিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়। কারও সঙ্গে দেখা হলে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে হয়, এটি হলো মূল্যবোধ, যার প্রকাশ একেক দেশে একেকরকম। সুতরাং আমরা বুঝতে পারছি, স্থান পরিবর্তনের কারণে মূল্যবোধ প্রকাশে পরিবর্তন ঘটতে পারে। আবার সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গেও অনেক সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়। এই কারণে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় দেশে ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিদ্যমান মূল্যবোধ বিবেচনায় রাখতে হয়। মনে রাখতে হবে, আমাদের আগ্রহ বা ইচ্ছার প্রতিফলনে মূল্যবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে প্রভাব বিস্তার করে।

দলগত কাজ

পোস্টার তৈরি
পেশাগত লক্ষ্য নির্ধারণে কী কী মূল্যবোধ বিবেচনায় রাখতে হবে, তা নিয়ে একটি পোস্টার বানাও।

অন্যের চোখে আমায় দেখি

এবার আমরা আমাদের খুব কাছের দুজন বন্ধু, দুজন শিক্ষক এবং দুজন অভিভাবকের (মা/বাবা/ভাই/বোন/ আত্মীয়/লালন-পালনকারী) সঙ্গে কথা বলে ছক ৬.২ এর কলামগুলো পূরণ করব। (তাদের সঙ্গে কথা বলে নিজেই লিখবে, লেখা শেষে তাদের স্বাক্ষর নেবে)

মনে রাখতে হবে, জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমরা এগুলো খুঁজে বের করছি, যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে তৈরির পথ বলে দিবে। তাই এই ছক ইচ্ছেমতো পূরণ করা যাবে না। অন্যেরটা দেখে পূরণ করলেও আমাদের কোনো কাজে আসবে না।)
ভবিষ্যতে আমরা নিজেকে কোথায় দেখতে চাই, তা নিয়ে প্রায়ই স্বপ্ন বুনি। তবে ভবিষ্যতে আমরা কী ধরনের কাজ করব বা করতে চাই, তা বোঝার জন্য নিজের আগ্রহ এবং সামর্থ্য দুটোই জানা প্রয়োজন। যেখানে অগ্রহ আছে সেখানে কাজ করে আনন্দ পাওয়া যায়, কাজ শেখাও যায় অনেক দ্রুত; আগ্রহ তখন আমাদের তাড়িত করে কাজটি করিয়ে নেওয়ার জন্য। অর্থাৎ ভেতর থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই প্রেষণা বা তাড়না তৈরি হয় কাজটি করার জন্য। অনেক সময় দেখা যায়, নিজের যথেষ্ট সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কাজে সাফল্য আসছে না, একধরনের অতৃপ্তি বা হতাশা কিংবা একঘেয়েমি কাজ করছে। জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ করার জন্য এই অতৃপ্তি তখন বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য সামর্থ্যের পাশাপাশি কাজের প্রতি আগ্রহও থাকা জরুরি। এ নিয়ে আমরা সপ্তম শ্রেণিতে একটি বিতর্কের আয়োজনও করেছিলাম, মনে আছে নিশ্চয়ই? এই ক্লাসে আমরা একটু ভিন্নভাবে আমাদের আগ্রহ কোথায় আছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। তবে মনে রেখো, এটা হলো একটি মজার পরীক্ষণ (টেস্ট) যা আমরা আনন্দের জন্য করতে যাচ্ছি।

একক কাজ

আমার পরিচয়
প্রথমে নিজের পরিচয় লেখো। এরপর ছকের মন্তব্যগুলো এক এক করে পড়ে নাও। প্রতিটি মন্তব্য তোমার ক্ষেত্রে কতখানি সত্য তার ভিত্তিতে মন্তব্যের পাশে যেকোনো একটি ঘরে টিক চিহ্ন দাও। তবে মনে রাখবে এখানে ভুল বা সঠিক বলে কিছু নেই। উত্তরটা দেওয়ার সময় শুধু ভালোভাবে ভেবে নেবে কোনটি তোমার ক্ষেত্রে কতটুকু প্রযোজ্য।

উদাহরণ হিসেবে তুমি কতটা বহির্মুখী তার জন্য ১, ৬,২০ ও ২৯ নম্বরের মন্তব্যগুলো বিবেচনা করবে। ধরা যাক, তুমি ১, ৬, ২০ ও ২৯ নম্বর মন্তব্যে যথাক্রমে একমত, সম্পূর্ণ একমত, সম্পূর্ণ একমত ও নিরপেক্ষ টিক দিয়েছ। তাহলে বহির্মুখী ঘরের জন্য তোমার স্কোর হবে ৩+৪+৪+২=১৩। এভাবে নিচের ছকে আট ধরনের ব্যক্তিত্বের ঘরে তোমার নম্বর দেওয়া শেষ হলে তোমাকে দেখতে হবে কোন ঘরে তুমি সবচেয়ে বেশি স্কোর পেয়েছ। তোমার স্কোর যেখানে বেশি হবে, ধরে নেওয়া যায় সেদিকে তোমার ঝোঁক বা প্রবণতা রয়েছে।

টেস্টের ফলাফল

সর্বোচ্চ স্কোর-
উক্ত স্কোরের অবস্থান যে ঘরে
আমার ঝোঁক/প্রবণতা

পেশাগত লক্ষ্য নির্ধারণ করি

আমরা আমাদের বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যগুলো এবার একটু বিশ্লেষণ করে দেখি। ছক ৬.২ থেকে এমন কিছু গুন খুঁজে পাওয়া যাবে, যা অনেকেই হয়তো বলেছেন। তাদের মতামতের সঙ্গে আমরা আমাদের গুণগুলো যাচাই করে দেখব। আমরা যখন কোনো কাজ করি, তখন নিজের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করব। সত্যিই আনন্দ পাচ্ছি কিনা, কাজটির প্রতি ভিতর থেকে টান অনুভব করছি কি না; কাজটি আমার পরবর্তী জীবনে সহায়ক হবে কি না ইত্যাদি আমাদের ভাবতে হবে। নিজের ভালো লাগার ক্ষেত্র খুঁজে যাচাই করার পর আমরা বলতে পারি, আমরা নিজেকে খুঁজে পেলাম! এভাবে বিভিন্ন ধরনের কাজ ও ভাবনার মাধ্যমে আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি, আমার নিজের মাঝে কী আছে?
এবার আমার আগ্রহ, সামর্থ্য ও মূল্যবোধ যা যা খুঁজে পেলাম, তার একটি তালিকা তৈরি করি।

ছক ৬.৪: আমার আমি

আমার আগ্রহ:

 

 

সামর্থ্য

 

 

মূল্যবোধ

 

 

ওপরের তালিকা পর্যালোচনার করে আমার নিজের কথা বলি (নিজেকে সম্ভাব্য কোন পেশার জন্য যোগ্য মনে করছ, কেন মনে করছ, কীভাবে সফল হতে চাও, তা বিবেচনায় রেখে 'আমি সম্ভাবনাময় একজন' নামে নিজেকে প্রকাশ করো)

আমি সম্ভাবনাময় একজন'

________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________

সম্ভাবনার কথা যা লিখেছ, তা এবার সহপাঠীদের সঙ্গে শেয়ার করো। নিজেকে সুন্দরভাবে সবার সামনে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দাও। আমরা সবাই দেখব, কে কত চমৎকারভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারো!
সপ্তম শ্রেণিতে আমরা সোয়াট বিশ্লেষণের অনুশীলন করেছিলাম। সেই কাজটি এই ক্লাসে পুনরায় করব। তবে এবার আমরা আমাদের যে পেশার জন্য নিজেকে সম্ভাবনাময় ভাবছি, সে পেশায় নিজেকে ভেবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমাদের ব্যক্তিগত সোয়াট বিশ্লেষণ করব।

আয়নায় নিজেকে আবিষ্কার করি

আমরা অনেকেই জনসমক্ষে কথা বলতে গিয়ে লজ্জা পাই; কখনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগি। এমনকি নিজের আত্মীয়স্বজন কিংবা মা-বাবার সামনেও নিজের কথা বলতে চাই না! কিন্তু নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে সবার সামনে নিজেকে চমৎকারভাবে তুলে ধরা খুব জরুরি। এই কাজটিতে ভালো করতে হলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলা অনুশীলন করা যায়। এতে নিজের খুঁত বের করা সহজ হয়; পাশাপাশি ভুল উচ্চারণ, অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি নিজেই সংশোধন করা যায়। এতে নিজের ওপর বিশ্বাস বাড়ে।

এমন হতে পারে, প্রথম দিনের অনুশীলনে অনেক বেশি ত্রুটি ধরা পড়েছে, তাতে মন খারাপ করার কিছুই নেই। যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কথা বলা লক্ষ করো। বিভিন্ন মাধ্যমে (মিডিয়ায়) যারা উপস্থাপনা করেন তাদের সুক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করো। তাদেরকে দেখে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস বাড়াও। তুমি আরও ভালোভাবে পারবে- এই বিশ্বাস নিয়ে আয়নায় দ্বিতীয়বার দাঁড়াও। এভাবে অনুশীলন করতে থাকো। এভাবে অনুশীলনের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল দিকগুলোও সবল হয়ে ওঠবে।

চিত্র ৬.৩: প্রতিবিম্বে নিজেকে খুঁজি

ছক ৬.৫: আয়নায় নিজেকে আবিষ্কারের অনুভূতি

প্রথমবার

 

 

দ্বিতীয়বার

 

 

তৃতীয়বার

 

 

লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন

প্রত্যেক ব্যক্তিই তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন নিজের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা, একাগ্রতা, পরিশ্রম এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনায় অসৎ উপায় কিংবা উদ্দেশ্য থাকলে কখনোই জীবনে সফল হওয়া যায় না। নিজের শ্রম, মেধা ও নিষ্ঠাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি ধাপের জন্য পরিকল্পনা করতে হয়। এখন আমরা শ্রম, নিষ্ঠা ও মেধা কাজে লাগিয়ে নিজের পছন্দের পেশায় সফল হওয়া একজনের গল্প শুনব।

 

স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প

ছোটবেলা থেকেই আয়েশা একটু ভিন্নরকম। তার বয়সী অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে দৌড়ঝাঁপ, খেলাধুলা এসবে তার আগ্রহ কম; বরং সারাক্ষণ বড় আপুর পাশে বসে তার কম্পিউটারের কাজ দেখতেই পছন্দ করে। আপু যখন বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে থাকেন, তখন তা দেখতে থাকে খুব মনোযোগ দিয়ে। এই আকর্ষণ থেকেই আয়েশার প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি। নিজের আগ্রহেই ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং কোর্স করতে থাকে। হঠাৎ একদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গুজব নিয়ে ব্যাপক ঝড় ওঠে। ভাইরাল হয়ে যাওয়া সেই গুজবের প্রতিক্রিয়ায় একটি এলাকায় শুরু হয় গোলাগুলি, জ্বালাও-পোড়াও। কয়েকজন মানুষ পুড়ে মারা যায় সেই ঘটনায়। এই বিষয়টি আয়েশাকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তোলে। আয়েশা দিনরাত এর সমাধান নিয়ে চিন্তা করতে থাকে। এরপর 'ব্যাড পোস্ট ফিল্টারেশন'-এর লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যেই সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করে। প্রথমে নিজেদের সংযোগে কাজটি ট্রায়াল দেয়; তাতে ইতিবাচক ফল পায়। এরপর যোগাযোগ শুরু করে অন্যান্য সার্ভারের সঙ্গে। এখানে সফল হওয়ার জন্য তাকে বেশ কিছু পরিমার্জন আনতে হয়। ট্রায়াল শেষ হলে প্রোগ্রামটি আয়েশা একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পাঠায়। সেখানে এটির ট্রায়ালে কিছু ভুল পাওয়ায় বাতিল করা হয়। আয়েশাও দমবার পাত্রী নয়। সে একাগ্রচিত্তে এর ভুলগুলো খুঁজে বের করে এবং নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে থাকে। একসময় নতুনভাবে সে এটিকে সাজাতে সক্ষম হয় এবং ট্রায়াল দিয়ে সফল হয়। ছয় মাস পর আবারও সে আন্তর্জাতিক সেই প্রতিযোগিতায় অনলাইনে অংশগ্রহণ করে। এবারের ট্রায়ালে সে উত্তীর্ণ হয়। একটি আন্তর্জাতিক সাইবার সিকিউরিটি সংস্থা তার প্রোগামটি কিনে নেয় এবং তাকে উক্ত সংস্থায় কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। আয়েশা এখন স্বনামধন্য সেই সিকিউরিটি সংস্থায় কাজ করে। তার নিখুঁত কাজের কারণে এখন কেউ চাইলেই দেশ বা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর কোনো পোস্ট দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারছে না। তার বিছানো জালে সেটি আটকে যায়। এর ফলে কত যে হানাহানি আর হিংসার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে দেশগুলো!

 

চিত্র ৬.৪: সাইবার সিকিউরিটি সংস্থায় কর্মরত আয়েশা

দলগত কাজ

আয়েশা তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কী কী পরিকল্পনা করেছিল তা ক্রমানুসারে সাজিয়ে একটি ফ্লোচার্ট তৈরি করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করো।

গল্পটিতে তোমরা নিশ্চয়ই দেখছ, আয়েশা তার লক্ষ্য ছোঁয়ার জন্য কীভাবে নিজের কাজের পরিক্রমা সাজিয়ে নিয়েছিল, যা তার স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করেছে। তাহলে চলো, আমরা একটু জেনে নিই, এই ধরনের কাজের পরিকল্পনা কীভাবে করতে হয়।

আমরা নিজের সামর্থা খুঁজে বের করার জন্য বেশ কিছু কাজ করেছি এবং নিজের সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছি। এবার আমরা নিজের মাঝে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করব। আমাদের পেশাগত লক্ষ্য অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা শুরু করব এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজের ভুলত্রুটি সংশোধন করে যোগ্যতার উন্নয়ন ঘটাতে সচেষ্ট থাকব।

কোনো লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করা হলে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর গতিপথের নকশা তৈরি করা প্রয়োজন হয়, যাকে বলা হয় লক্ষ্যে পৌঁছানোর কর্মপরিকল্পনা বা অ্যাকশন প্ল্যান। কর্মপরিকল্পনা হলো একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজের নির্দিষ্ট একটি তালিকা। এর মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কাজ বা পদক্ষেপগুলোকে ধাপে ধাপে সাজাতে হয়, ফলে কাজের অগ্রগতি পরিমাপ (ট্রাক) করা সহজ হয়। এটি হলো কৌশলগত পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার একটি অপরিহার্য অংশ। কর্মপরিকল্পনা ব্যক্তিগত

লক্ষ্য অর্জনের কৌশল হিসেবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক ব্য দলগত কোনো লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কর্মপরিকল্পনার কয়েকটি ধাপ রয়েছে যা অনুসরণ করা হলে পরিকল্পনা অনেক নিখুঁত হয় এবং সফলভাবে কাজগুলো সমাপ্ত করা যায়, এর পাশাপাশি কোনো চ্যালেঞ্জ থাকলে তা মোকাবিলার আগাম প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হয়। এখানে আমরা কর্মপরিকল্পনার কয়েকটি ধাপের সঙ্গে পরিচিত হব।

ধাপ ১-শেষ পরব্য নির্দিষ্ট করা: আমরা যেমন ট্রেনে ওঠার সময় কোন ষ্টেশনে নামব, তা নির্দিষ্ট করেই বাড়ি থেকে বের হই, ঠিক তেমনি পেশাগত লক্ষ্যের বিষয়েও একই কথা প্রযোজ্য। পেশার গন্তব্য কোথায় বা কোন পর্যায় পর্যন্ত আমরা পৌঁছাতে চাই, তা স্থির করে নিতে হবে। লক্ষ্য স্থির করা না হলে প্রস্তুতির উপাদানগুলো পরিকল্পনায় আনা সম্ভব হয়না। যদিও আমরা কোনো কিছুরই চুড়ান্ত গন্তব্য নিশ্চিত করে বলতে পারি না; তবু আমাদেরকে একটি সম্ভাব্য ষ্টেশন বা সীমানা স্থির করে নিতে হবে। সম্ভাব্য গন্তব্য স্থির করা হলে এর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য দিকগুলো চিহ্নিত করা সহজ হয়।

ধাপ ২-পদক্ষেপগুলোর তালিকা করা: গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য কী কী কাজ বা পদক্ষেপ নিতে হবে তার সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করতে হবে। যত ধরনের কাজ আছে, সবই এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। যেমন: আমাদের কেউ যদি ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হতে চাই, সে ক্ষেত্রে আমাদের গণিতে জ্যামিতির অংশ খুব ভালোভাবে শিখতে হবে, কম্পিউটারে ডিজাইন করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। হাতেও আঁকাআঁকি অনুশীলন করতে হবে। ইন্টেরিয়র-সংক্রান্ত বইপুস্তক পড়তে হবে, নানা নকশার ইন্টেরিয়র খুঁজে দেখতে হবে, এই বিষয়ে যারা কাজ করেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে, এই বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে হবে ইত্যাদি। এ রকম প্রতিটি লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কাজগুলোর একটি তালিকা তৈরি করতে হবে এই ধাপে।

ধাপ ৩-কাজগুলোর অগ্রাধিকার নির্দিষ্ট করা এবং সম্ভাব্য সময়সীমা স্থির করা: এই খালে সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলোর মধ্য থেকে কোন কাজগুলো কখন করা প্রয়োজন, তার ধারাবাহিক সময়সীমা নির্দিষ্ট করতে হয়। কোনো কাজ আছে যার প্রস্তুতি হয়তো আগামীকাল থেকেই নিতে হবে; তা না হলে মূল পরিকল্পনা অনুসরণ করে লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই যেটি আগে শুরু করা প্রয়োজন, সেটিকে আগে রেখে সময়সীমা স্থির করতে হবে। এভাবে গুরুত্ব, অগ্রাধিকার ও ধারাবাহিকতা বিবেচনায় রেখে টাইমলাইন বা সময়ক্রম সাজাতে হবে। উক্ত ক্রম অনুযায়ী কোনটির জন্য কতটুকু সময় লাগতে পারে, তার সম্ভাব্য হিসাব বের করে সাজাতে হবে। এটাকে অনেকে কাজের ডেডলাইনও বলে থাকেন। অর্থাৎ কোন কাজটি কখন সমাপ্ত করতে হবে তার শেষ সময় বা ডেডলাইন তৈরি করতে হবে।

চিত্র ৬.৫: সময়সীমা ও মাইলফলকের অবস্থানসহ একটি কর্মপরিকল্পনার নকশা

ধাপ ৪- মাইলফলক/মাইলস্টোন স্থির করা: কোনো লক্ষ্যেই একবারে পৌঁছানো সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে পৌঁছাতে হয়। যেমন কেউ যদি দেশের সেরা আবৃত্তিকার হতে চায়, তাহলে একবারেই সেরা হওয়া সম্ভব নয়। শুরুতে তাকে অনুশীলন করতে হবে নিয়মিত। চর্চার মাধ্যমে নিজে কতটুকু যোগ্যতা অর্জন করেছে, তা যাচাইয়ের জন্য তাকে স্কুল পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এরপর হয়তো তাকে উপজেলা, এরপর জেলা, এরপর বিভাগীয় পর্যায় এবং এরপর জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। সুতরাং এখানে স্কুল পর্যায়ে নির্বাচিত হওয়া তার জন্য প্রথম মাইলফলক বা মাইলস্টোন; উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচিত হওয়া দ্বিতীয় মাইলফলক, জেলা পর্যায় হলো তৃতীয় মাইলফলক। এভাবে অনেকগুলো মাইলফলকে তার অর্জন নিশ্চিত করতে করতে একসময় সে হয়তো জাতীয় পর্যায়ে সেরা হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং মাইলফলক হলো লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে ছোট ছোট অর্জন, যা একেকটি পিলার বা স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে।

ধাপ ৫-রিসোর্স যা লাগবে তা বাছাই করা: যেকোনো লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য অনেক ধরনের সামগ্রী, বইপুস্তক বা সম্পদ বা অর্থ বা মেধা প্রয়োজন হতে পারে। আমরা আমাদের জন্য পেশাগত যে লক্ষ্য স্থির করেছি, তার জন্য কী ধরনের রিসোর্স কী পরিমাণ লাগতে পারে তার তালিকা করতে পারি এই ধাপে। এখন আমি যদি একজন নার্সারি উদ্যোক্তণ হতে চাই, সে ক্ষেত্রে নার্সারি স্থাপনের জন্য প্রয়োজন হবে জমি, টব, প্লাস্টিক পট বা ব্যাগ, গাছের চারা, বীজ, সার, মাটি প্রস্তুতের জন্য ছুরি, কোদাল, নার্সারি সংক্রান্ত তথ্য পুস্তক, বইপত্র ইত্যাদি। এরকম যা যা প্রয়োজন হবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য, তা চিহ্নিত করতে হবে এই ধাপে।

ধাপ ৬-একনজরে দেখার মতো করে উপস্থাপন: পুরো পরিকল্পনাটি নখদর্পনে রাখার উদ্দেশ্যে এবং এর পটভূমি, মাইলফলক, সময়সীমা ও রিসোর্স ইত্যাদি একনজরে দেখার জন্য অনেকেই কর্মপরিকল্পনার একটা বিশেষ নকশা তৈরি করে থাকে। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় সহজেই পুরো পরিকল্পনার রূপরেখা যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে এমনভাবে এটি উপস্থাপন করতে হয়। এটি হতে পারে কোনো চিত্র, গ্রাফ কিংবা ফ্লোচার্ট। সব সময় মনে রাখার জন্য এবং কাজের সুবিধার্থে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা বড় বোর্ডে টানিয়ে রাখে। আমরা আমাদের কর্মপরিকল্পনার চার্ট বানিয়ে পড়ার ঘরে ঝুলিয়ে রাখতে পারি। ফলে সারাক্ষন চোখের সামনে থাকায় কাজটির প্রতি নিজ থেকে প্রেষণা বা অনুপ্রেরণা অনুভব করবো।

ধাপ ৭-তত্ত্বাবখান, মূল্যায়ন এবং সংশোধন: পেশাগত লক্ষ্য স্থির করে পরিকল্পনা করলেই আমরা সফল হয়ে যাব এমনটি নয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নিয়মিত কাজ করছি কি না, কাজে কোনো বাধা আসছে কি না, ভুল বা কোনো ঘাটতি থেকে যাচ্ছে কি না, পর্যান্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে কি না এবং ভুল সংশোধনের জন্য যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সম্ভাব্য সহজ উপায় নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ ইত্যাদি এই ধাপে করা হয়ে থাকে।

একটি চমৎকার কর্মপরিকল্পনা যেকোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তির সাফল্যে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। কর্ম পরিকল্পনার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে-

  • কার্যকর যোগাযোগ সৃষ্টিতে এটি ইতিবাচিক ভূমিকা রাখে
  • পুরো কাজটি সম্পন্ন করতে বা লক্ষ্যে পৌঁছাতে এটি সহায়ক (গাইড) হিসেবে কাজ করে
  • এর মাধ্যমে কাজের অগ্রাধিকার নির্বাচন করা সহজ হয়
  • কাজ চলাকালীন জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পায়
  • রিসোর্স সংগ্রহ ও কটন সহজ হয়
  • প্রতিবন্ধকতা বা চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে অগ্রিম জানা যায়
  • সমাপ্তি রেখা বা ডেডলাইন সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা পাওয়া যায়
  • সহজেই কাজের অগ্রগতি জানা যায়, ইত্যাদি।

একক কাজ

নিজের জন্য একটি পেশা নির্বাচন করো এবং উক্ত পেশায় নিজেকে সফলভাবে পাওয়ার জন্য উল্লিখিত সাতটি ধাপ অনুযায়ী একটি স্বল্পমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করো।

সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল তৈরি

ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে লেখাপড়া করতে গিয়ে তোমরা নিশ্চয়ই প্রোফাইল শব্দটির সঙ্গে পরিচিত হয়েছ। প্রোফাইল বলতে বোঝায় নিজের পরিচয়। সাধারণত ব্যক্তিগত প্রোফাইলে কোনো বিশেষ কাজ বা উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নিজের গুণাবলি, দক্ষতা, সামর্থ্য, পছন্দ-অপছন্দ, বিশেষ যোগ্যতা ইত্যাদিকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়।

দলগত কাজ

আমাকেই বেছে নাও
দলে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করো এবং দলের সবাই মিলে সামনে এসে উপস্থাপন করো।
ক) প্রোফাইল কী?
খ) প্রোফাইলে পেশাগত তথ্য উপস্থাপনের সময় কী কী বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন?
গ) প্রোফাইল তৈরি করা প্রয়োজন কেন?
(একদলের উপস্থাপনের সময় অন্যরা সবাই শুনব, উপস্থাপন শেষে সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন করব এবং উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ/ফিডব্যাক দেবো।)

সাধারণত চাকরির জন্য আমরা বায়োডাটা (bio-data) বা জীবনবৃত্তান্ত বা সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল তৈরি করে থাকি। একসময় আমাদের দেশে এটি বায়োডাটা নামেই বেশি পরিচিত ছিল। ইদানীং কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান একে রেজ্যুমি (resume) বলে এবং অতি সাম্প্রতিককালে এটি সেলফ প্রোফাইল বা ব্যক্তিগত প্রোফাইল বা সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল হিসেবে পরিচিত।
একসময় চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সঙ্গেই নির্দিষ্ট ছকে জীবনবৃত্তান্ত বা বায়োডাটা চাওয়া হতো। আজকাল বায়োডাটায় নতুনত্ব এসেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বায়োডাটা বা ব্যক্তিগত প্রোফাইল দেখেই প্রার্থীর তালিকা সংক্ষিপ্ত করে। আবার বিভিন্ন দেশে চাওয়া হয় বায়োগ্রাফি। এরকম নানা নামে নানা ধরনের পরিচিতি বা প্রোফাইল হতে পারে। তোমরা ইন্টারনেটে সার্চ করলে বিভিন্ন পেশার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোফাইল দেখতে পাবে। নিজের যোগ্যতাকে অন্যের কাছে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে পারাটাও একটা বিশেষ যোগ্যতা।

চিত্র ৬.৬: বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত প্রোফাইলের নমুনা

নিজের আগামী কর্মজগৎ বা পেশা নির্বাচন করার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছি। এসব কাজের মধ্য দিয়ে আমরা 'নিজের মাঝে কী আছে' তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। এখন আমরা নিজের মাঝে যা কিছু খুঁজে পেয়েছি, তা সমন্বিত করে একটি সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল তৈরি করব। উক্ত প্রোফাইল এমনভাবে তৈরি করব, যাতে তা আমাদের নির্বাচিত পেশার উপযোগী ও আকর্ষণীয় হয়। প্রোফাইল দেখে যেন নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ আমাদের উক্ত পেশার নির্ধারিত পদের জন্য উপযুক্ত মনে করেন। ব্যক্তিগত প্রোফাইলে সাধারণত নাম ও ঠিকানা, নিজেকে উক্ত কাজের জন্য যোগ্য মনে করার কারণ, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, মা ও বাবার নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয়তা, ধর্ম, লিঙ্গ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শখ, আগ্রহের ক্ষেত্র, গুণাবলি, দক্ষতাসমূহ, কাজের অভিজ্ঞতা, বিশেষ কোনো স্বীকৃতি (বিদ্যালয়/ বাড়ি/ নিজ এলাকায়। দেশে/ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে), প্রিয় ব্যক্তিত্ব, বিশেষ সামর্থ্য বা যোগ্যতা, নৈতিক মূল্যবোধ, রেফারেন্স ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। তবে পেশার ধরন ও চাহিদা অনুযায়ী এগুলোর ক্ষেত্রে ভিন্নতাও থাকতে পারে।

একক কাজ

জুরিবোর্ডের মুখোমুখি
নির্বাচিত পেশার উপযোগী একটি সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল তৈরি করে জুরিবোর্ডের মুখোমুখি বসি।

সবাই নিজের পেশার উপযোগী করে একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল A4 সাইজের কাগজে তৈরি করে নাও। শ্রেণিতে শিক্ষকের সহায়তায় লটারির মাধ্যমে ক্লাসের সবাইকে 'জুরি দল' ও 'চাকরিপ্রার্থী দল' এই দুইভাগে ভাগ করে নাও। এরপর জুরি দল থেকে ৪/৫ জন করে একেকটি জুরিবোর্ড গঠন করো। চাকরিপ্রার্থী দলকেও একইভাবে দলে ভাগ করে একেকটি বোর্ডের জন্য নির্বাচন করে নাও। এবার প্রথমে একটি জুরিবোর্ড সামনে গিয়ে বসবে। তখন উক্ত বোর্ডের জন্য নির্বাচিত দল থেকে যেকোনো একজন তার প্রোফাইল নিয়ে চাকরির ইন্টারভিউ দেবে। এভাবে জুরিবোর্ড প্রতিটি দল থেকে একজনের ইন্টারভিউ নেবে। জুরিগণ প্রার্থীর প্রোফাইল যাচাই করে উক্ত পেশা-সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন এবং এ পেশায় সে কেন নিজেকে যোগ্য। উপযুক্ত মনে করছে' কিংবা 'কেন উক্ত পেশার জন্য প্রতিষ্ঠান তাকে বেছে নিবে' এই ধরনের প্রশ্ন করতে পারো।)

প্রবল হওয়ার সাধ ও সাধনা যাহাদের প্রাণে আছে
তাদেরই দুয়ারে হানা দেই আমি, আসি তাহাদেরি কাছে।'

কথাগুলো তারুণ্যের কবি কাজী নজরুল ইসলামের। সাফল্যের সঙ্গে বন্ধুতা হলো সাধ ও সাধনার। কোনো কাজে বা লক্ষ্য পূরণে নিজের ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে শুরু থেকেই। নিজেকে সবার সেরা ভাবতে হবে। আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে। আমার দ্বারাই সম্ভব- এমন মনোভাব নিয়েই সামনে এগোতে হবে। তবে কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধা আসতে পারে, বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও সামনে আসতে পারে। শুরুর দিকে বারবার ব্যর্থতাও আসতে পারে। একবার বাধা পেলে বা ব্যর্থ হলে সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে, ভুলগুলো শুধরে নিয়ে নতুনভাবে নিজ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য দৃঢ় পদক্ষেপে কাজ চালিয়ে যেতে হবে; অর্থাৎ সাধনা বা পরিশ্রম ছাড়া সাফল্য কখনোই ধরা দেয় না।

আমরা টমাস আলভা এডিসন, জে কে রাওলিং, আইনস্টাইন, আব্রাহাম লিংকনসহ বিভিন্ন বিজ্ঞানি ও পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মের প্রবক্তাগণের জীবনীতে আমরা দেখতে পেয়েছি- তারা সবাই নিজ নিজ লক্ষ্যে অবিচল থেকে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে গেছেন বলেই সফল হয়েছেন। বদলে দিতে পেরেছেন পৃথিবীর ইতিহাস। আমরাও বিশ্বাস করি, কর্মক্ষেত্রে আগামীতে যে ধরনের পরিবর্তনই আসুক না কেন, আমরা তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে অবশ্যই মানিয়ে নিতে পারব। নিজের ভেতরের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের যোগ্যতাকে শানিত করে তুলব। জয় করব সকল বাধা-বিঘ্ন। সত্যি করে তুলব আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। তাই প্রেরণাদায়ী বরুণ (motivational speaker) ফারাহ গ্রে'র সঙ্গে সুর মিলিয়ে সবাইকে আহ্বান জানাই- 'নিজের স্বপ্নকেই পেশা বানিয়ে নাও, নয়তো অন্য কেউ তা করে ফেলবে।'

স্বমূল্যায়ন

ক) কোনো একটি কাজের জন্য কর্মপরিকল্পনা করা হলে তা থেকে আমরা কী কী দিকনির্দেশনা পেতে পারি?

 


খ) মনে করো তুমি একজন ওষুধবিশেষজ্ঞ বা ফার্মাসিস্ট অথবা নবায়নযোগ্য শক্তিবিশেষজ্ঞ হতে চাও। সে ক্ষেত্রে তোমার মাইলস্টোনগুলো কী হবে?

 


গ) তুমি যদি একজন কবি/লেখক/চিত্রশিল্পী হতে চাও, তাহলে তোমার কাজের একটি অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত করো এবং তালিকা অনুযায়ী সময়/নার্সারি ব্যবসায়ী নির্ধারণ করো।

 


খ) তুমি কীভাবে একজন সফল মুরগি খামারি হতে পারবে, তার একটি কর্মপরিকল্পনা ফ্লোচার্টে দেখাও।

 

 

 

Content added || updated By
Promotion