কুফর (كُفر)
ইমানের সর্বপ্রথম বিষয় হচ্ছে তাওহিদ বা আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস। এ তাওহিদসহ ইমানের অন্যান্য মূল বিষয়গুলোকে অবিশ্বাস ও অস্বীকার করার নাম কুফর।
কুফর (كُفر) শব্দের আভিধানিক অর্থ গোপন করা, আচ্ছাদন করা, ঢেকে রাখা, অকৃতজ্ঞ হওয়া, অবিশ্বাস করা, অস্বীকার করা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় মহান আল্লাহর অস্তিত্বকে অবিশ্বাস ও অস্বীকার করা কুফর। এছাড়া যে সকল ইসলামি বিধান কুরআন মাজিদ ও হাদিস দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত, তার কোনো একটিকে অবিশ্বাস ও অস্বীকার করাও কুফরের শামিল। কুফরে লিপ্ত ব্যক্তিকে 'কাফির' ( كَافِرُ )বলা হয়।
কুফরের ক্ষেত্র
কুফর ইমানের বিপরীত। আল্লাহর একত্ববাদ, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, নবি-রাসুল, আখিরাত, তাকদির (ভাগ্য), মৃত্যুর পরে পুনরুত্থান, জান্নাত-জাহান্নাম, কিয়ামত এসব বিষয়ের কোনো একটিকে অবিশ্বাস ও অস্বীকার করা কুফর। মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনার পর তাঁদের আদেশ-নিষেধ মেনে না চলা ফিসক বা পাপাচার, যা মানুষকে কুফরের দিকে ধাবিত করে। বিশ্বাসের যথার্থতা কাজের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়। আবার ইসলামের আদেশ-নিষেধসমূহ অবিশ্বাস করাও কুফর। সালাত, সাওম, হজ, যাকাত এগুলো ইসলামে ফরয ইবাদাত। এগুলো অবশ্যপালনীয়। এগুলোকে অস্বীকার করাও কুফর। এমনিভাবে মদ, জুয়া, সুদ, ঘুষ, অন্যায়ভাবে হত্যা ইত্যাদি হারাম কাজের কোনো একটিকে হালাল মনে করাও কুফরের অন্তর্ভুক্ত। তেমনি আবার হালাল জিনিস ও কাজকে হারাম মনে করাও কুফরের শামিল।
জোড়ায় আলোচনা আমাদের যেসব কথা ও কাজ কুফরির পর্যায়ে পড়ে তার একটি তালিকা প্রস্তুত করো। (পাঠ্যপুস্তকে উল্লিখিত কুফরের পর্যায়ভুক্ত কথা ও কাজ ব্যতীত আরো যেসব কথা ও কাজ কুফরের পর্যায়ভুক্ত তা জোড়ায় আলোচনা করে শ্রেণি শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক উপস্থাপন করো)।
|
কুফরের কুফল ও পরিণতি
কুফরের কুফল অনেক এবং এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রথমত কাফির ব্যক্তি পরম দয়াময় আল্লাহর প্রতি চরম অকৃতজ্ঞ। কারণ, সে আল্লাহর রাজত্বে বসবাস করে এবং আল্লাহর দেওয়া সকল নিয়ামত ভোগ করে আবার সেই আল্লাহকেই সে অস্বীকার করে। তাই এটি নৈতিক, মানবিক ও বিবেকের পরিপন্থী একটি ঘৃণিত কাজ।
আবার কুফর কেবল অকৃতজ্ঞতাই নয়, এর মাধ্যমে মালিকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হয়। তাই কাফির আল্লাহ বিদ্রোহী। কেননা, মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, লালনকর্তা ও রক্ষাকর্তা। তিনিই সবকিছুর একচ্ছত্র মালিক। কিন্তু কাফির আল্লাহর সত্তা, তাঁর মালিকানা এবং তাঁর গুণাবলিকে অস্বীকার করে এবং তাঁর বিধি-বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে। এটি ন্যায় ও দয়াবান মালিকের মালিকানায় থেকে অন্যায়ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য ও বিদ্রোহের বহিঃপ্রকাশ।
সর্বোপরি, কুফর জঘন্য পাপের কাজ। পরকালে এর শাস্তি হবে অনেক কঠোর। কুরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াতে কুফরের ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, 'যারা কুফরি করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোশাক, তাদের মাথার ওপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, যা দিয়ে তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চামড়া বিগলিত করা হবে এবং তাদের জন্য থাকবে লোহার মুগুর (হাতুড়ি)। যখনই তারা যন্ত্রণাকাতর হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, আস্বাদন করো দহন-যন্ত্রণা।' (সূরা আল-হাজ, আয়াত: ১৯-২২) অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِأَيْتِنَا أُولَئِكَ أَصْحَبُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خُلِدُونَ .
অর্থ: যারা কুফরি করে এবং আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে, তারাই জাহান্নামি, সেখানে (জাহান্নামে) তারা স্থায়ী হবে। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৩৯)
কুফর থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমরা আমাদের কথা, কাজ ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সদা সতর্ক থাকব এবং আল্লাহ তা'আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করব।
বাড়ির কাজ 'আল্লাহ তা'আলার নির্দেশনা মেনে চলি, কুফর থেকে নিজেকে দূরে রাখি' (উল্লিখিত শিরোনামের আলোকে তোমরা কুফর থেকে নিজেকে দূরে রাখার কৌশল বর্ণনা করে ২০০ শব্দের একটি প্রতিবেদন তৈরি করো)।
|
আরও দেখুন...