কৈশোরের বৈচিত্র্যময় পথচলায় আমরা এক একজন যাত্রী। এই যাত্রাপথে আমরা নানা ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। কোনোটা আনন্দের, কোনোটা বা মন খারাপের। কৈশোরের যাত্রাপথে এই যে নানা ধরনের ঘটনা ও পরিস্থিতি, তা সবার ক্ষেত্রে যেমন এক নয় আবার এর ফলে উদ্ভুত চ্যালেঞ্জ এবং তা মোকাবিলার কৌশলও কিন্তু এক নয়। পরিস্থিতিভেদে, ব্যক্তিভেদে এই কৌশল হয় ভিন্ন ভিন্ন। আর এটাই স্বাভাবিক। এটাকে মেনে নিয়েই যথাযথ কৌশল প্রয়োগ করে নিজের জন্য যা কল্যাণকর তাই বেছে নিতে হয়।
আমরা এখন একটা চিঠি একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ব। চিঠিটা আমাদের এক বন্ধু বর্ণিলের। ও অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। কিছুদিন আগে বর্ণিল স্কাউট থেকে দেশের বাইরে জাম্বুরি ক্যাম্প এ অংশগ্রহণ করে এসেছে। চলো ও চিঠিতে আমাদের কী বলতে চায় তা জেনে নিই:
বর্ণিল আমাদেরকে চিঠিতে মনের আকুতির কথা জানিয়েছে। ও আমাদের সাহায্য চেয়েছে। আমরাও ওর মতো কৈশোরে আছি। আমরা কি বর্ণিলের পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছি? আমরা কি তাকে নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে সহযোগিতা করতে পারি? নিশ্চয়ই তা পারি। তবে তার জন্য প্রথমে প্রয়োজন এ সময়ের আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা ও সচেতন হওয়া। নিজেদের কৈশোরের সময়টা কীভাবে পার করছি, কী ধরনের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা অর্জন করছি এবং কী চ্যালেঞ্জ বা ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছি আর তা মোকাবিলাই বা কীভাবে করছি, আমাদের এই সব অভিজ্ঞতাগুলোই বর্ণিলকে বুঝতে, তার পাশে দাঁড়াতে ভূমিকা রাখবে। শুধু আমরাই কেন আমাদের মতো আরও যারা কৈশোরের এ সময়টা পার করছে তাদের অভিজ্ঞতাও বর্ণিলের পরিস্থিতি বুঝতে এবং তাকে সহযোগিতা করতে সাহায্য করবে।
তাহলে চলো এবার আমাদের নিজেকে ভালোভাবে জানার ও উপলব্ধির যাত্রাটা শুরু করা যাক:
আমরা এখন কৈশোরের অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি তাই না? আমরা বুঝতে পারছি নিশ্চয় আমাদের শরীর ও মন নানা ধরনের পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা এ পরিবর্তনগুলো আমাদেরকে কী ধরনের অনুভূতি দিয়েছে আমরা কী তা বলতে পারব? আমরা একটু ভাবব এবং ভাবনাগুলো এক কথায় বা একটি বা দুটি শব্দে পাঠ্যপুস্তকের 'আমার মনের জানালা' বক্সের খালি মেঘগুলোতে লিখব।
আমরা এতক্ষণ আমাদেরকে নিয়ে ভাবলাম আর নিজেকে নিয়ে একটু ভাবতে কার না ভালো লাগে বলো? আবার ভাবনাগুলো অক্ষরে অক্ষরে সাজিয়ে মেঘবন্দি করলাম। থাকুক মেঘগুলো বইয়ের পাতায় আটকে। যখনই ফুসরত পাব অনুভব করব মেঘের প্রশান্তি। বর্ণিলের সাথে আমাদের নিশ্চয় মিল পেয়ে গেলাম। ওর মত আমাদেরও মাঝে মাঝে আনন্দময় সময় কাটে। তখন প্রশান্তি বোধ করি। আবার কখনও কখনও বেদনা নিয়ে পার করি মন খারাপের সময়গুলো।
সাথী, আরিফ, নিশি ও অর্ক বড়ুয়া- ওরাও আমাদের মত বয়ঃসন্ধিকাল পার করছে। এবার আমরা ওদের গল্পগুলো পড়ে নিই। দেখে নিই ওদের পরিস্থিতি ও অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী সাহায্য পেতে পারি।
গল্প-১ সাথীর মন ভালো না। তার গতকাল থেকে ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে। ঋতুস্রাবের সময় তার শরীরে খুব অস্বস্তি হয়। পেট ব্যথায় শরীর অসাড় হয়ে যায়। মা তাকে শুধু বলেছে এসব কথা কাউকে বলা যাবে না, এগুলো খুবই মেয়েলি ব্যাপার, কেউ যেন বুঝতে না পারে। তাই সে তার এই শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে খুবই মানসিক অশান্তিতে ভোগে। তার মনে হয় সবাই যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে, তাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। সে স্কুলে যেতে চায় না, সারাদিন নিজের রুমে বসে থাকে। মাঝে মাঝে তার কান্না পায় ও রাগ হয় এটা ভেবে তার সাথেই কেন এমন হচ্ছে! কিন্তু আগামীকাল তো তার স্কুলে পরীক্ষা। তার তো স্কুলে না গিয়ে উপায়ও নেই! তার এই অবস্থায় পড়াশুনা করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। কী হবে ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছে না। |
গল্প- ২ আরিফ বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ও একটু চঞ্চল স্বভাবের ছেলে। বিদ্যালয়ে ওর অনেক বন্ধু । আরিফের খাবারের প্রতি আকর্ষণ একটু বেশি বিশেষ করে বাইরের খাবারের প্রতি। আর দিন দিন ওর ওজন বাড়তে শুরু করেছে। খেলাধুলায় ওর বন্ধুরা ওকে নিতে চায় না। ওকে মোটা বলে ক্ষেপায়। বন্ধুদের এ ধরনের আচরণ ওকে খুব কষ্ট দেয়। ও নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নেয়। অষ্টম শ্রেণিতে উঠার পর আর একটা সমস্যা ওকে ঘিরে ধরেছে। ওর মুখে অনেক ব্রণ উঠেছে। খুব অস্বস্তিতে পড়ে ও। ব্রণ খোঁচানো ওর একটা বদ অভ্যাস হয়ে যায়। ফলে মুখে ব্রণগুলো আরও বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। বন্ধুরা ওকে নিয়ে হাসাহাসি করবে এ নিয়ে ও চিন্তায় পড়ে যায়। ইদানিং সে অনেকটাই বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। মানসিকভাবে খুবই বিষণ্ণ থাকে। |
গল্প-৩ নিশি পড়ালেখায় খুব মনোযোগী। ইদানিং নিশির মনে একটা ইচ্ছা উকি দিচ্ছে। তা হলো জুডো শিখবে। এটা আত্মরক্ষামূলক খেলা। এটা যেহেতু বিদ্যালয়ে শেখার সুযোগ নেই তাই তাকে দূরে যেয়ে সেন্টারে শিখতে হবে। ওর বান্ধবী কেয়াও জুডো শেখার জন্য ঐ সেন্টারে ভর্তি হয়েছে। আর জুডো শেখার কথাটা বাবা মাকে বলতেই ওর পড়ার ক্ষতি হবে কারণ দেখিয়ে তারা সরাসরি না করে দেন। এতে নিশির খুব মন খারাপ হয়। নিশি তার মা বাবার সাথে কথা প্রায় বন্ধ করে দেয়। ফলে শুরু হয় নিশির সাথে তার মা বাবার মনোমালিন্য.... |
গল্প-৪ অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্ক বড়ুয়া ভাইবোনদের মধ্যে ছোট। বাবা মার আদরেই ও বড় হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই একটু অভিমানী স্বভাবের। ওর পরিবারের লোকজন এটা জানত। তাই ওকে প্রশ্রয়ও দিত। আর ছোটবেলা থেকেই কেউ ওকে যদি অবহেলা করত তাহলে কেঁদে ফেলত। এমনকি খেলাধুলায় হেরে গেলে, মনমতো কিছু না পেলেই মন খারাপ করত এবং কাঁদত। যা নিয়ে ওর ভাই বোন, বন্ধু এমনকি মা-বাবাও ক্ষেপাত। বলত ওর কান্না করা ঠিক না। কান্না ভালো ছেলেদের মানায় না। মেয়েরাই শুধু কান্না করে। কিন্তু তারপরও অর্ক কান্না চেপে রাখতে পারত না। আর এজন্য সে হীনমন্যতায় ভুগত। |
গল্পগুলো পড়ে সাথী, আরিফ, নিশি ও অর্ক বড়ুয়া সম্পর্কে অনেকে কিছু জানতে পারলাম। বুঝতে পারলাম ওরা বয়ঃসন্ধিকালের চ্যালেঞ্জ এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এবার চলো ওদের তথ্যগুলো নিয়ে নিচের ছকটা পূরণ করি।
নাম | কী কী চ্যালেঞ্জের মধ্যে তারা আছে | মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ নিয়েছে | সমস্যা সমাধানে কেমন ভূমিকা রাখছে |
| |||
| |||
| |||
|
আমরা জানি বয়ঃসন্ধিকাল, পরিবর্তনের সময়। এই পরিবর্তনকে ঘিরে আমরা বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই। কখনও কখনও তা বলতে পারি, কখনও পারি না। লজ্জা হয় ও ভয় পাই, কে কীভাবে নেবে তা মনে করে। আবার বলতে পারিনা বলে অনেক সময় চ্যালেঞ্জ বেড়ে যায়, ঝুঁকির মুখে পড়ে কষ্ট পাই এবং ক্ষতির সম্মুখীন হই। বর্ণিলের মতই অসহায় বোধ করি। তাই ঝুঁকিমুক্ত থাকতে এ বয়সের চ্যালেঞ্জগুলো ও তা মোকাবিলার উপায় জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে নিজেদের সাথে সাথে বর্ণিলের মতো আমাদের অন্য বন্ধুদেরও সহযোগিতা করতে পারব।
তাহলে বয়ঃসন্ধিকালে কী কী চ্যালেঞ্জের কথা আমরা জানি বা শুনতে পাই এবার আমরা সেগুলো ছোট ছোট কাগজে লিখব। এ বিষয় নিয়ে কারো সাথে পরামর্শ করার কোনো প্রয়োজন নেই। নিজে যা বুঝি তাই লিখব। লেখা হয়ে গেলে কাগজটি ভাঁজ করে শিক্ষকের কাছে দেবো কিংবা শিক্ষকের নির্দেশ মতো একটা বক্সে রাখব। আর হ্যাঁ একটা কথা মনে রাখব, কাগজে আমরা আমাদের কোনো পরিচয় লিখব না। আমরা যেহেতু কাগজে নাম লিখছি না, সুতরাং কেউ আমাদেরকে চিহ্নিত করতে পারবে না। যত ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা আমরা জানি, শুনি বা আশংকা করি তা লিখে শিক্ষকের কাছে রাখা বক্সে ফেলব।
শিক্ষক আমাদের লেখা চ্যালেঞ্জগুলোর একটি তালিকা করেছেন। এরপর আমরা ছোট দলে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার উপায় আলোচনা করেছি। এই তালিকার সাথে বর্ণিলের পরিস্থিতিরও কিছু কিছু মিল রয়েছে। আমরা আশা করছি এখন আমরা তাকে সাহায্য করতে পারব।
চলো এবার তাহলে বয়ঃসন্ধিকালে যে চ্যালেঞ্জেগুলোর মুখোমুখি হতে পারি সে বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নিই। অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি হচ্ছে মাসিক বা ঋতুস্রাব সংক্রান্ত সমস্যা।
মাসিক বা ঋতুস্রাব মেয়েদের জীবনে স্বাভাবিক একটি বিষয়। প্রতিমাসে জরায়ু থেকে রক্তক্ষরণকেই মাসিক বলে। প্রত্যেক মেয়েরই বয়ঃসন্ধিকালের একটি সময়ে ঋতুস্রাব শুরু হয়। কার কখন শুরু হবে সেটি নির্ভর করে তার শারীরিক গঠন, পুষ্টি এবং বংশগতির বৈশিষ্ট্যের উপর। সাধারণত ১০-১৬ বছরের মধ্যেই প্রতিটি মেয়ের মাসিক শুরু হয়ে যায়। যদি কারো স্তনের বিকাশ শুরু হওয়ার তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে মাসিক শুরু না হয় অথবা ১৬ বছর পার হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
ঋতুস্রাবকালীন হালকা ব্যথা হওয়াটা স্বাভাবিক। শরীরে হরমোনের প্রভাবে মেয়েদের জরায়ুর সংকোচন প্রসারণ হয়ে থাকে যার ফলে এই ব্যথা হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় এই ব্যথার কারণে কেউ কেউ দিনের স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। তলপেটে গরম সেঁক দিলে ব্যথার উপশম হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব বা বমি করা ইত্যাদি লক্ষণও থাকতে পারে। ঋতুস্রাবের সময় যেসকল সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলো হলো:
তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা
অনেকের মাসিকের সময় তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। অনেক কারণের মধ্যে এন্ডোমেটিওসিস নামক রোগের কারণে এই প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। এই রোগ হলে অস্বাভাবিকভাবে জরায়ুর বাইরে ডিম্বাশয়ে, জরায়ুর পিছনে, খাদ্যনালীতে, মুত্রথলিতে জরায়ুর মতো রক্তক্ষরণ হয়। ডিম্বাশয়ে যখন এ রোগ হয় তখন একটি থলিতে মাসিকের রক্ত জমা হয়ে থাকে। সেটি তখন একটি টিউমারের আকার ধারণ করে যাকে বলে এন্ডোমেট্রিওমা বা চকোলেট সিস্ট। এই সময়ে পেটে অস্বাভাবিক ব্যথা হয়ে থাকে। প্রতি মাসে রক্ত জমা হতে হতে সিস্টটি বড় হতে থাকে এবং ডিম্বাশয়ের টিস্যু এবং ডিম্বাণু নষ্ট হতে থাকে। এই রোগের উপসর্গগুলো হলো-তলপেটে তীব্র ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, মলত্যাগের সময়ে ব্যথা। তবে সকলের সবগুলো উপসর্গ নাও থাকতে পারে।
চকোলেট সিস্ট হলে আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে শুরুতেই শনাক্ত করা গেলে এর ক্ষতিকর দিক থেকে ডিম্বাশয়কে রক্ষা করা যায়।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
ঋতুস্রাবের সময় কারও কারও স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। একে মেনোরিজিয়া বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বলে। বয়ঃসন্ধিকালে শরীর পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় না যার কারণে শরীরের যে প্রক্রিয়া এ রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে সেটি ঠিকভাবে কাজ করে না। এর ফলে অনিয়মিত মাসিকের সাথে সাথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। এতে শরীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং অবসাদ অনুভূত হয়।
এ সময় প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
অনিয়মিত মাসিক:
বয়ঃসন্ধিকালে প্রথম মাসিক শুরু হওয়ার পরে নিয়মিত হতে কখনো কখনো দুই বছর সময়ও লেগে যেতে পারে যা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। অনেক কারণে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে যেমন অপুষ্টি, থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিকতা, শরীরে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ প্রবণতা ইত্যাদি। সাধারণত একটি ঋতুস্রাবের প্রথম দিন থেকে পরবর্তী ঋতুস্রাবের প্রথম দিনের মধ্যবর্তী সময় গড়ে ২৮ দিন হয়ে থাকে। তবে অনিয়মিত মাসিকে মধ্যবর্তী এই সময় ২১ দিনের কম অথবা ৩৫ দিনের বেশি হয়।
ডিম্বাশয়ে ঠিকমত ডিম্বাণু তৈরি না হলে নিয়মিত মাসিক হয় না। মাসিকের পূর্বশর্ত হলো ডিম্বাণু তৈরি হওয়া এবং নিঃসরণ বা ওভুলেশন হওয়া। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম বা পিসিওএস নামে একটি সমস্যার জন্য ডিম্বাশয়ে ঠিকমত ডিম্বাণু তৈরি হয় না বা বড় হয় না, ফলে মাসিক হয় না। কোনো কোনো সময়ে ২-৩ মাস এমন কি তারও বেশি সময় ধরে মাসিক বন্ধ থাকে এবং তারপরে কোনো এক সময়ে হরমোন কমে যাওয়ার কারণে মাসিক শুরু হয়ে যায়। এই মাসিক ওভুলেশন ছাড়াই শুরু হয় বলে অনেক সময় পরিমাণে বেশি হয় এবং অনেকদিন থাকতে পারে।
সাধারণত কিশোরী বয়সেই পিসিওএস সমস্যা দেখা দেয়। এর উপসর্গগুলো হলো-
১. মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
২. মুখমন্ডল ও উরুতে অবাঞ্চিত লোম গজানো।
৩. মুখে ব্রণ হওয়া ৪. মুটিয়ে যাওয়া।
৫. ঘুমের মধ্যে শ্বাস স্বল্পতা।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম বা পিসিওএস রোগের কারণে ঔষধ ছাড়া ডিম্বাণু হয় না বলে ভবিষ্যতে বাচ্চা হতে অসুবিধা হতে পারে। তবে এই রোগে সবসময়েই ঔষধ প্রয়োগ করার দরকার হয় না। পিসিওএস রোগের প্রথম চিকিৎসাই হলো ওজন কমানো। ওজন কমানোর জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। একটি হলো ব্যায়াম এবং অন্যটি সঠিক খাদ্যাভ্যাস যেটাকে লাইফ স্টাইল মডিফিকেশন বা জীবনাচারণের পরিবর্তন বলা হয়। এই জীবনাচরণের পরিবর্তনের মাধ্যমে ৫-৭% ওজন যদি কমানো যায়, তাহলে ওভুলেশন শুরু হয় এবং মাসিক ফিরে আসে।
এছাড়াও বয়ঃসন্ধিকালে আরও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারি। সেগুলো হচ্ছে- মুড সুইং, ভয় ও উৎকণ্ঠা, মা-বাবার সাথে মনোমালিন্য, ব্রণ ইত্যাদি।
এবার এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশলগুলো শিক্ষক ও লাইব্রেরির রিসোর্সবুকের তথ্য থেকে জানব। এবং সেগুলো নিয়ে জোড়ায় বসে আলোচনা করব। এরপর আলোচনার ভিত্তিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কয়েকটি কৌশল অপর পৃষ্ঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল ছকের ফাঁকা ঘরগুলোতে উল্লেখ করব।
প্রথমে আমরা গল্পের সাথে নিজেদের যে চ্যালেঞ্জগুলোর মিল পেয়েছি তা বের করেছি। এরপর নিজেদের জানা ও শোনা চ্যালেঞ্জগুলো থেকে তালিকা করেছি। এবার সেগুলো মোকাবিলার পরিকল্পনা করব। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যে তথ্যগুলো পেয়েছি তা ব্যবহার করে আমার পরিকল্পনাটি নিচের 'চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমার পরিকল্পনা' ছকে আমি আমার মতো করে লিখব।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমার পরিকল্পনা
আমার চ্যালেঞ্জ | যেভাবে মোকাবিলা করতে চাই |
নিজের জন্য পরিকল্পনা করেছি। এবার আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বর্ণিলের চিঠির উত্তর লিখব। উত্তর লেখার আগে আমরা ওর চিঠিটা তাহলে আরেকবার পড়ে নিই।
নিজের পরিকল্পনা হলো, বর্ণিলের চিঠিরও উত্তর দিলাম। নিজেদের বিদ্যালয়ের, প্রতিবেশী, আত্মীয়, যারা বাসার বিভিন্ন কাজে আমাদের সহযোগিতা করেন তাদের যদি আমার সমবয়সী ছেলে বা মেয়ে থাকে যাদের এই বিষয়ে জানাতে অথবা এমন কেউ যার আমাদের মতো স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়নি আমাদের এই অভিজ্ঞতা থেকে তেমন একজনকে যদি সহযোগিতা করি কেমন হয় বলোতো? আমার মাধ্যমে সে তার চ্যালেঞ্জ খুঁজে পেতে এবং তা মোকাবিলার উপায় শিখতে পারল। তাহলে আমরা একটু ভেবে নিই কাকে আমি সাহায্য করতে চাই। এরপর তাকে জানাতে সহযোগিতা করতে ধাপে ধাপে কী কী করব তা ঠিক করে নিই এবং তার তথ্য অপর পৃষ্ঠার ছক অনুযায়ী সংরক্ষণ করি।
নাম ও পরিচয়
তার কী কী চ্যালেঞ্জ ছিল? আমি তা মোকাবিলায় কী সহযোগিতা করলাম আমার অভিজ্ঞতা সে কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পেরেছে? এখন সে কেমন আছে? (১ মাস পরে ) |
বছরের বাকি সময়ে নিজের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অভিজ্ঞতা থেকে আমি যেকোনো দুটি চ্যালেঞ্জের জন্য অপর পৃষ্ঠার 'বয়ঃসন্ধিকালীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার রেকর্ড' ছকটি পূরণ করব।
বয়ঃসন্ধিকালীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার রেকর্ড
তারিখ | চ্যালেঞ্জ | মোকাবিলায় যা করেছি | আমার অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি |
| |||
|
আমার অগ্রগতি, আমার অর্জন
অপর পৃষ্ঠার ছকটি আমার অভিভাবক ও শিক্ষক পূরণ করবেন। আমি নিজেও পূরণ করব। এর মাধ্যমে আমি আমার অগ্রগতি সম্পর্কে জানব, কোথায় আরও ভালো করার সুযোগ আছে তা খুঁজে বের করব। দলগত কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আমার অংশগ্রহণের বিষয়ে সহপাঠীদের মতামত জেনে নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট অংশে লিখে নেবো। আমার অভিভাবক বইয়ে সম্পাদিত কাজ দেখে মন্তব্য লিখবেন। সমস্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষক আমাকে স্বীকৃতি দিবেন। কী ভালো করেছি, কীভাবে আরও ভালো করতে পারি, সে উপায় জানাবেন।
মূল্যায়ন ছক ১: আমার অংশগ্রহণ ও পাঠ্যপুস্তকে করা কাজ
নিজের মন্তব্য | সহপাঠীর মন্তব্য | অভিভাবকের মন্তব্য | শিক্ষকের মন্তব্য | |
স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ গ্রহণ | ||||
শ্রদ্ধাশীল আচরণ
| ||||
সহযোগিতামূলক মনোভাব | ||||
পাঠ্যপুস্তকে সম্পাদিত কাজের মান |
মূল্যায়ন ছক ২: বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ ব্যবস্থাপনা ও উদ্বুদ্ধকরণ
মন্ব্যব | বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা বা চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে বের করার সচেতনতা | বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা বা চ্যা- লেঞ্জগুলোক ব্যবস্থাপনার দক্ষতা | অন্যকে বয়ঃসন্ধিকালীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সহযোগিতার দক্ষতা |
নিজের মন্তব্য
| |||
অভিভাবকের মন্তব্য | |||
শিক্ষকের মন্তব্য |
আরও দেখুন...