Academy

ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ

Latest Technologies - ব্লকচেইন (Blockchain) - Cryptography এবং Blockchain | NCTB BOOK

ক্রিপ্টোগ্রাফি হলো ডেটা এনক্রিপশন এবং ডিক্রিপশনের একটি প্রক্রিয়া, যা তথ্যের গোপনীয়তা, নিরাপত্তা, এবং সততা বজায় রাখতে সহায়ক। ব্লকচেইন এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করে লেনদেনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়। এটি ব্লকচেইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ব্লকচেইন নেটওয়ার্ককে আক্রমণ এবং প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করে।

১. ক্রিপ্টোগ্রাফির মৌলিক ধারণা

  • ক্রিপ্টোগ্রাফি এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে ডেটাকে এনক্রিপ্ট (গোপন কোডে রূপান্তর) করে এমন একটি ফর্ম্যাটে পরিবর্তন করা হয় যা শুধু নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা বা সিস্টেমই ডিক্রিপ্ট (গোপন কোড ভেঙে পড়া) করতে পারে।
  • এই প্রক্রিয়ায় এনক্রিপশন (Encryption) এবং ডিক্রিপশন (Decryption) দুটি প্রধান ধাপ থাকে:
    • এনক্রিপশন: ডেটা বা বার্তা এমন একটি ফর্ম্যাটে রূপান্তর করা হয় যা অপরিচিত বা অননুমোদিত ব্যক্তিরা বুঝতে পারে না।
    • ডিক্রিপশন: সেই এনক্রিপ্ট করা ডেটাকে আবার মূল ফর্ম্যাটে ফিরিয়ে আনা হয়, যা কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কী ব্যবহার করে করা সম্ভব।

২. ক্রিপ্টোগ্রাফির ধরণ

  • সিমেট্রিক কী ক্রিপ্টোগ্রাফি (Symmetric Key Cryptography):
    • এখানে একটি একক কী ব্যবহৃত হয়, যা ডেটা এনক্রিপ্ট এবং ডিক্রিপ্ট করতে ব্যবহৃত হয়।
    • সুবিধা হলো, এটি দ্রুত এবং সহজ। তবে অসুবিধা হলো, কীটি গোপন রাখতে অসুবিধা হয় কারণ উভয় পক্ষকেই কী শেয়ার করতে হয়।
  • আসিমেট্রিক কী ক্রিপ্টোগ্রাফি (Asymmetric Key Cryptography):
    • এটি ব্লকচেইনে ব্যবহৃত সবচেয়ে প্রচলিত ক্রিপ্টোগ্রাফি পদ্ধতি। এখানে দুটি কী ব্যবহৃত হয়: একটি পাবলিক কী এবং একটি প্রাইভেট কী
    • পাবলিক কী উন্মুক্ত থাকে এবং অন্যরা ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু প্রাইভেট কী সম্পূর্ণ গোপন এবং শুধুমাত্র ব্যবহারকারী নিজে ব্যবহার করে।
    • আসিমেট্রিক কী ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্লকচেইনে লেনদেনের নিরাপত্তা, ডেটা এনক্রিপশন, এবং স্বাক্ষর যাচাই করতে ব্যবহৃত হয়।
  • হ্যাশিং (Hashing):
    • হ্যাশিং একটি প্রক্রিয়া, যা একটি ইনপুট ডেটাকে নির্দিষ্ট আকারের এবং নির্দিষ্ট লেন্থের একটি আউটপুটে রূপান্তর করে, যাকে হ্যাশ ভ্যালু বা ডাইজেস্ট বলা হয়।
    • ব্লকচেইনে, হ্যাশ ফাংশন প্রতিটি ব্লক এবং লেনদেনের তথ্যকে হ্যাশ করে, যা ব্লকগুলোর মধ্যে সংযোগ এবং তথ্যের ইমিউটেবিলিটি নিশ্চিত করে।

৩. ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে ব্লকচেইনে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ

  • ডিজিটাল স্বাক্ষর (Digital Signature):
    • প্রাইভেট কী ব্যবহার করে একটি ডিজিটাল স্বাক্ষর তৈরি করা হয়, যা নির্দিষ্ট তথ্য বা লেনদেনের স্বাক্ষর নিশ্চিত করে।
    • পাবলিক কী ব্যবহার করে এই স্বাক্ষর যাচাই করা যায়, যা নিশ্চিত করে যে তথ্যটি সত্যিই সেই ব্যক্তির পক্ষ থেকে এসেছে।
  • লেনদেনের নিরাপত্তা:
    • ব্লকচেইনে প্রতিটি লেনদেন এনক্রিপ্ট করা হয় এবং এর জন্য পাবলিক-প্রাইভেট কী ব্যবহার করা হয়, যা নিশ্চিত করে যে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সিস্টেম লেনদেনটি অনুমোদন করতে পারে।
    • এছাড়া, প্রতিটি লেনদেন ব্লকে রেকর্ড করা হয় এবং হ্যাশিংয়ের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে, যা পরিবর্তন বা জালিয়াতি প্রতিরোধ করে।
  • ইমিউটেবল রেকর্ডস (Immutable Records):
    • ব্লকচেইনের ব্লকগুলো ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশের মাধ্যমে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে।
    • একবার একটি ব্লক চেইনে যুক্ত হলে, সেই ব্লকের তথ্য পরিবর্তন করা যায় না কারণ তা করলে পরবর্তী সমস্ত ব্লকের হ্যাশ পরিবর্তন করতে হবে, যা কার্যত অসম্ভব।
  • বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization):
    • ব্লকচেইন একটি পিয়ার-টু-পিয়ার (P2P) নেটওয়ার্কে কাজ করে, যেখানে প্রতিটি নোডের কাছে ব্লকচেইনের একটি সম্পূর্ণ কপি থাকে।
    • যদি কেউ ব্লকচেইনের তথ্য পরিবর্তন করতে চায়, তবে তাকে নেটওয়ার্কের অধিকাংশ নোডের অনুমতি পেতে হবে, যা বাস্তবে করা কঠিন এবং অপ্রায়োজনীয়।

৪. ক্রিপ্টোগ্রাফির বাস্তব ব্যবহার

  • ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন: বিটকয়েন, ইথেরিয়াম এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করে লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
  • স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট: ব্লকচেইনে স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট তৈরি ও কার্যকর করতে ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করা হয়, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণের ভিত্তিতে কার্যকর হয়।
  • ডিজিটাল আইডেন্টিটি এবং অথেন্টিকেশন: ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করে ডিজিটাল আইডেন্টিটি নিরাপদ করা যায় এবং ব্যবহারকারীর অথেন্টিকেশন নিশ্চিত করা যায়।
Content added By
Promotion