ক্ষত, ক্ষতের প্রকাভেদ ও প্রতিকার

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা - খেলাধুলার দুর্ঘটনা | NCTB BOOK

শরীরের কোনো তন্তু ছিন্ন অথবা দুই বা ততোধিক অংশে বিভক্ত হলে বা তন্তু ছিদ্র হলে তাকে ক্ষত বলে। সাধারণভাবে ত্বক কেটে রক্তপাত হলে তাকেও ক্ষত বলে। ক্ষত পাঁচ প্রকার- S. পিষ্ট ক্ষত (Confused wound)। ২. ছিন্ন ভিন্ন ক্ষত (Lacerated wound)। ৩. কর্তনজনিত ক্ষত (Incised wound)। ৪. বিদ্ধ ক্ষত (Punctured wound) । ৫. মিশ্রজাতীয় ক্ষত (Mixed wound)। 

১. পিষ্ট ক্ষত : মানুষের দেহে সূক্ষ্মভাবে গ্রথিত কোষসমূহ ভারী বস্তুর আঘাতের ফলে চামড়ার কোনো ক্ষতি না হয়ে অন্তঃস্থ ক্যাপিলারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তপাত হয়। কিন্তু সেই রক্ত বাইরে বেরোতে না পেরে ভিতরে জমে থাকে তাকে পিষ্ট ক্ষত বলে। এই ধরনের ক্ষতে দৃশ্যমান রক্তপাত হয় না। 

২. ছিন্নভিন্ন ক্ষত : জন্তু জানোয়ারের আক্রমণে, মেশিনে থেঁতলালে ও গোলাগুলির আঘাতে যে ক্ষত হয় তাকে ছিন্নভিন্ন ক্ষত বলে। ক্ষতগুলো অসমান বা বিক্ষিপ্তভাবে থাকে।
 

৩. কর্তনজনিত ক্ষত : কোনো ধারালো অস্ত্র যেমন- ব্লেড, ক্ষুর, ছুরি, বঁটি, ভাঙ্গা কাচ দ্বারা কেটে যে ক্ষত হয় তাকে কর্তনজনিত ক্ষত বলে। এই ধরনের ক্ষতে ত্বক ও রক্তনালি মসৃণভাবে কেটে যায় এবং অবিরামভাবে রক্তপাত হয় সহজে বন্ধ করা যায় না ।
 

৪. বিদ্ধক্ষত : ক্ষতটা গভীর হয়। সে তুলনায় মুখের পরিসর বড় হয় না এ ক্ষতকে বিদ্ধ ক্ষত বলে। যেমন— সুচ, পেরেক, ছুরি, তার ও তারকাটা ইত্যাদি দ্বারা এ ক্ষত হয়। রক্তপাত প্রচুর হতে পারে নাও পারে।

৫. মিশ্রক্ষত : উপরে বর্ণিত একাধিক ক্ষত একত্র মিলে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয় তাকে মিশ্র ক্ষত বলে। যেমন- গুলির ক্ষত, ক্ষতের মুখের পরিসর ছোট এবং অভ্যন্তরে কতটা গভীর তা দেখে বোঝা যায় না। অপর দিকে যেখান দিয়ে গুলি বের হয়েছে সে স্থান বড় ও আকারে অসমানভাবে ক্ষত থাকে। এই ক্ষতটি একদিকে বিদ্ধক্ষত অপর দিকে ছিন্নভিন্ন ক্ষত। দুটি মিলিত হয়ে মিশ্রজাতীয় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। 

ক্ষতের প্রাথমিক প্রতিবিধান-
১. রোগীকে শুইয়ে দিতে হবে যেন রোগী সহজ ও নিশ্চলভাবে শুয়ে থাকতে পারে ।
২. ক্ষত স্থানকে হার্ট লেভেল বা হৃৎপিণ্ডের সমতার উপরে রাখতে হবে যাতে ক্ষত স্থান থেকে রক্ত চলাচল কমে রক্ত পড়া থেমে যায় ৷
৩. আহত হওয়ার সাথে সাথে আহত স্থানে বরফ লাগাতে হবে।
৪. রোগী যথাসম্ভব কম নড়াচড়া করবে।
৫. ক্ষতস্থান এন্টিসেপ্টিক পদার্থ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
৬. রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ চাপ দিতে হবে । 

৭. ক্ষতস্থানে কিছু শক্তভাবে ঢুকলে তা তুলে ফেলতে হবে।
৮. ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট বাঁধলে উক্ত জমাট রক্ত সরাতে চেষ্টা করবে না।
৯. শক পেলে প্রথমে তার চিকিৎসা করতে হবে।
১০. ক্ষতস্থানে জীবাণুমুক্ত প্যাড ব্যবহার করতে হবে।

১১. আহত অঙ্গকে ব্যান্ডেজ বেঁধে স্থির রাখতে হবে। 

১২. কোনো উত্তেজক দ্রব্য বা পানীয় পান করতে দেওয়া যাবে না। 

১৩. দ্রুত রোগীকে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে পাঠাতে হবে। 

একজন রোগীর ক্ষত চিকিৎসা করতে গেলে প্রতিবিধান করার কিছু জ্ঞান থাকা দরকার। 

ক. কীভাবে কেটেছে, তা কোন পর্যায়ে পড়ে, কর্তনজনিত ক্ষত/ছিন্নভিন্ন ক্ষত, পিষ্টক্ষত না বিদ্ধক্ষত ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত হতে হবে। 

খ. প্রথমে করণীয় ঠিক করে নেওয়া। রক্তক্ষরণ হলে প্রথমে তা বন্ধ করার ব্যবস্থা করা। তারপর ইনফেকশন যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করা। শক লাগলে তার প্রতিবিধান করা। 

গ. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সাথে যথারীতি ড্রেসিংয়ের ব্যবস্থা করা, রক্তক্ষরণ থাকলে তা বন্ধ করা। সেপটিক যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা। Toxoid Injection নিতে বলা ইত্যাদি।

ঘ. শক লাগলে প্রথমে শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া চালু করা । 

ঙ. রোগীর অবস্থা বুঝে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।

 

Content added By
Promotion