এই বিভাগে আমরা খাদ্য পরিকল্পনা, মেনু পরিকল্পনার নীতি, ১০০০ দিনের পুষ্টি সহ বিভিন্ন বয়সের শিশুদের
মেনু, ওজনাধিক্য ও ফল্ল ওজনের শিশুর খাদ্য পরিকল্পনা, অপুষ্টি, অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগ এবং এদের
লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে ধারণা লাভ করব। পরিবারের খাদ্য ব্যবস্থাপনা করতে হলে কয়েকটি
ধাপে তা করতে হয়। যেমন- ক্ষতিকর রাসায়নিক ও ভেজালমুক্ত খাদ্য ক্রয়, পুষ্টিমান বজায় রেখে তা কাটা,
ধোয়া এবং রান্না করা ইত্যাদি। এই বিভাগে আমরা এগুলো ধাপে ধাপে আলোচনা করব।
এই বিভাগ শেষে আমরা-
মেনু পরিকল্পনার নীতি ব্যাখ্যা করতে পারব।
বিভিন্ন ধাপে ১০০০ দিনের পুষ্টি পরিকল্পনার গুরুত্ব বর্ণনা করতে পারব।
• ওজনাধিক্য ও স্বল্প ওজনের শিশুদের সঠিক খাদ্য পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
শিশুর অপুষ্টিজনিত রোগ ও রোগের লক্ষণ জেনে তার প্রতিকার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে পারব।
• প্রোটিন, ক্যালরি, খনিজ লবণ ও ভিটামিনের অভাবজনিত রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার পদ্ধতি বর্ণনা
করতে পারব।
মৌসুম ও উৎসব অনুযায়ী খাদ্য নির্বাচন এবং সঠিক পদ্ধতিতে খাদ্য পরিবেশনের গুরুত্ব মূল্যায়ন করতে পারব।
• পরিবারের খাদ্য নির্বাচন, ক্রয় ও প্রস্তুতে সতর্ক থাকতে এবং ভেজাল খাদ্য ও ক্ষতিকর রাসায়নিক
পদার্থের প্রভাব বর্ণনা করতে পারব।
• ভেজাল খাদ্য ও খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের নাম, ব্যবহারের উদ্দেশ্য ও এসব খাদ্য
গ্রহণের ক্ষতিকর প্রভাব ব্যাখ্যা করতে পারবে।
• খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ করতে পারব।
• রান্নার প্রয়োজনীয়তা ও পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে পারব।
• রান্নার সময় পরিচ্ছন্ন ও সাবধানতা অবলম্বন করার উপায়সমূহ বর্ণনা করতে পারব।
• রান্নার সময় বিভিন্ন ধরনের সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য অর্জনে পরিকল্পনার মাধ্যমে অগ্রসর হতে হয়। আকর্ষণীয়ভাবে সুষম খাবার পরিবেশন
করার জন্য পূর্ব পরিকল্পিত ও লিখিত খাদ্য তালিকাকেই মেনু বলে। পরিবারের সদস্যদের সুষম আহার
পরিবেশনের জন্য মেনু পরিকল্পনা করে নেওয়া উচিত। পরিবারে দৈনিক তিন বেলার খাদ্য ছাড়াও শিশুর
পরিপূরক খাদ্য, রোগীর পথ্য, বিয়ে, জন্মদিন, অতিথি আপ্যায়ন ইত্যাদি উপলক্ষেও যেন পরিকল্পনা করেই খাদ্য
পরিবেশন ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন- ছাত্রাবাস, হাসপাতাল, বিমান রন্ধনশালা,
হোটেল এবং রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপনায় খাদ্য তালিকা বা মেনু পরিকল্পনা করা অত্যন্ত জরুরি। মেনু
পছন্দমতো হলে খাওয়ার আগ্রহ জন্মে। খাদ্যের সঠিক রং ও আকৃতি, ভালো রান্না, সুন্দর পরিবেশন ইত্যাদি
খাদ্য গ্রহণে আকৃষ্ট করে। মেনু পরিকল্পনার মাধ্যমেই পুষ্টি সম্বলিত আকর্ষণীয় খাবার পরিবেশন করা যায়।
সুপরিকল্পিত মেনু পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে এবং খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবেশনের কাজ সুষ্ঠু ও সহজ করে। মেনু
পরিকল্পনার প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলো দুইটি যথা- (১) খাদ্য গ্রহণকারীর চাহিদা এবং (২) রান্নার সুবিধা ।
মেনু পরিকল্পনার সময় বয়স, লিঙ্গ ভেদ,
উপজীবিকা, আবহাওয়া, মৌসুম, পরিবেশনের ধরন,
আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু খাবার, বাজেট, অভিজ্ঞ খাদ্য
প্রস্তুতকারক, কাজ বণ্টন, উদ্বৃত্ত খাদ্যের ব্যবহার,
তৈজসপত্র ও সরঞ্জাম রেসিপির ব্যবহার ইত্যাদি
বিভিন্ন বিষয়ের দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
মেনু পরিকল্পনার পুরুত্ব-
-সুষম খাদ্য পরিবেশন।
-আকর্ষণীয় ভাবে খাবার পরিবেশন।
-খাওয়ার আগ্রহ জন্মানো।
-খাদ্য গ্রহণে একঘেয়েমি দূর করা।
-অল্প খরচে বেশি পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা
করা।
মেনু পরিকল্পনার নীতি-
সুষম আহারের জন্য মেনু পরিকল্পনার সময় নিচের বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে-
• ৫টি মৌলিক খাদ্য গোষ্ঠী থেকে প্রতিদিনের খাদ্য নির্বাচন করতে হবে।
কমপক্ষে তিনটি খাদ্য গোষ্ঠী থেকে প্রতি বেলার খাদ্য নির্বাচন করতে হবে। এ ছাড়াও প্রোটিন শ্রেণির খাদ্য
থেকে যাতে প্রাণিজ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য কমপক্ষে এক বেলার খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকে তা
নিশ্চিত করতে হবে।
খাদ্যের স্বাদ, গন্ধ, বিভিন্ন রং, আকার ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে।
ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি নিষেধ বিবেচনা করে মেনু পরিকল্পনা করতে হবে।
ব্যক্তিগত ও শারীরিক সমস্যা যেমন- শিশুদের ঝালযুক্ত খাবার না দেওয়া, বৃদ্ধ বয়সে নরম খাবার দেওয়া, ব্যক্তি
বিশেষে অ্যালার্জিযুক্ত খাবার পরিবহার করা ইত্যাদি মেনু পরিকল্পনার সময় অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।
• রান্নার জন্য কতটা সময় ও শক্তি খরচ হবে তা মেনু পরিকল্পনার সময় দেখতে হবে। এমন খাদ্য তালিকা
করা ঠিক হবে না যাতে করে অনেক বেশি সময় ও শক্তি খরচ হয়।
• খাদ্যের বাহ্যিক উপস্থাপনা এমন হবে যাতে খাবার দেখে খাওয়ার আগ্রহ নষ্ট না হয়ে যায়। মেনু
পরিকল্পনার সময় খাদ্য পরিবেশনের ধরন কী হবে তা বিবেচনা করে মেনু পরিকল্পনা করলে খাদ্যের
বাহ্যিক উপস্থাপনা আকর্ষণীয় হয়।
-খাদ্য খাতে খরচের বিষয় বিবেচনা করে মেনু পরিকল্পনা করতে হবে। খাদ্য খাতে খরচের ২৫% মাছ,
মাংস, ডিম ও ডাল কেনার জন্য, ২০% দুধ, ২০% ফল ও সবজি, ২০% চাল, আটা ও বিস্কুট এবং
১৫% তেল ও চিনি কেনার জন্য ব্যয় করলে সুষম আহারের মেনু পরিকল্পনা করা সহজ হবে।
-খাবার যাতে একঘেয়ে না হয়ে যায় সেজন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের সমাহার ঘটাতে হবে এবং একটা
খাবারের পরিবর্তে অন্য আর একটা খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
একটা শিশুর ১০০০ দিনের পুষ্টি বলতে মায়ের গর্ভে অবস্থানকালে পুষ্টি ও জন্মের পরবর্তী দুই বছরের
পুষ্টিকে বোঝায়। অর্থাৎ এই সময়কালের পুষ্টি চাহিদাকে প্রধানত ২টি পর্বের সমষ্টি রূপে প্রকাশ করা যায়-
১০০০ দিনের পুষ্টি - জন্ম পূর্ববর্তী সময়ের পুষ্টি (মাতৃগর্তে ২৭০ দিন) + জন্য পরবর্তী ২ বছর বয়সের পুষ্টি
(१৩০ দিন )
একটা শিশুর জীবনের সুস্থ ভবিষ্যতের ভিত রচনার অন্যতম সময় হচ্ছে এই ১০০০ দিন। ১০০০ দিন
জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে এই সময়ের পুষ্টি চাহিদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের সঠিক পুষ্টি
শিশুর যথাযথ শারীরিক বর্ধন, মেধা বিকাশ এবং ভবিষ্যতের জন্য মেধাবী ও দক্ষ জাতি গঠনের হাতিয়ার।
গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে শিশুর বর্ধন ও বিকাশ ব্যাহত হয়। এই সকল শিশু জন্মের পরও সহজেই
অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়। ফলে শারীরিক বর্ধনের পাশাপাশি মানসিক বিকাশও ব্যাহত হয় এবং এদের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাহত হয়। তাই শিশুর স্বাভাবিক ও সুস্থ বিকাশের জন্য ১০০০ দিনের পুষ্টি অত্যন্ত
জন্ম পূর্ববর্তী সময়ের পুষ্টি - ১০০০ দিনের মধ্যে প্রথম প্রায় ২৭০ দিন একটি শিশু মায়ের গর্ভে অবস্থান
করে। এই সময় শিশু তার সার্বিক বর্ধনের জন্য মায়ের পুষ্টির উপর সম্পূর্ণ রূপে নির্ভরশীল থাকে। মায়ের
শারীরিক অবস্থা শিশুর পুষ্টিগত অবস্থাকে সরাসরি প্রভাবিত করে থাকে। শিশু মায়ের গর্ভে অবস্থান কালে
মা খাদ্য গ্রহণের ফলে যে পুষ্টি অর্জন করেন সেই পুষ্টি শিশুর দেহে স্থানান্তরিত হয়। তাই গর্ভবতী মায়ের
যথাযথ পুষ্টি সাধনের ফলে শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত হয়। যেহেতুে শিশু মায়ের কাছ থেকে পুষ্টি লাভ করে তাই
গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টি চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এই সময় মায়ের বর্ধিত পুষ্টি চাহিদা অনুযায়ী সুষম খাদ্য গ্রহণই
শিশুর পুষ্টি সরবরাহকে নিশ্চিত করতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়ের শক্তি চাহিদা বাড়ে সেই সাথে অন্যান্য পুষ্টি
উপাদানের চাহিদাও বেড়ে যায় এবং এই সময় গর্ভবর্তী মাকে সব ধরনের খাবার একটু বেশি করে খেতে
২৭০ দিনের (গর্ভাবস্থায়) বর্ধিত পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য গর্ভবর্তী
মাকে
• প্রতিদিন তিন বেলা খাবারের সাথে নিয়মিত এক মুঠ করে বেশি
খাবার খেতে দিতে হবে।
• ডিম, মাছ, মাংস, কলিজা, শাকসবজি, ঘন ডাল, হলুদ বর্ণের
সবজি ও ফল এবং তেলেভাজা খাবার অথবা তেল একটু বেশি
দিতে হবে।
৩ বেলা খাবারের পাশাপাশি আরও ২-৩ বার পুষ্টিকর নাশতা
দিতে হবে।
মায়ের গর্ভে শিশু মায়ের
কাছ থেকে পুষ্টি পায়
খাবারের সাথে একটা করে ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড, লৌহ
ট্যাবলেট গ্রহণ করতে হয়।
জন্ম পরবর্তী ২ বছর বয়সের সৃষ্টি জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ পান করাতে
-
হবে। দুধ ছাড়া কোনো ধরনের খাবার এমনকি পানিও দেওয়া যাবে না। ৬ মাস পর পুষ্টি চাহিদা আগের চেয়ে
বেড়ে যাওয়ায় শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধে শিশুর চাহিদা মেটে না তাই ৬ মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি
ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য দিতে হবে। জীবনের এই সময় অভি দ্রুত দেহের বৃদ্ধি ঘটে,
মস্তিষ্কের বর্ধন'ও এই বয়সেই সম্পন্ন হয় তাই এই সময় পুষ্টির চাহিদার প্রতি অবশ্যই যত্নবান হতে হবে।
সময়
জন্মের পর প্রথম
১৮০ দিন (জন্ম
থেকে ৬ মাস)
শিশুর জন্য ৭৩০ দিনের খাদ্যের ধরন
শিশুর জন্মের সাথে সাথে এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের
বুকের দুধ দিতে হবে।
মায়ের বুকের দুধ ছাড়া শিশুকে মধু, চিনির পানি, পানি,
তেল বা অন্য কোনো টিনের দুধ দেওয়া যাবে না।
২-৩ ঘণ্টা পর পর দৈনিক ৮-১২ বার মায়ের বুকের দুধ
দিতে হবে।
মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি পারিবারিক খাবার
চটকিয়ে নরম করে ২৫০ মি. লি. বাটির আধ বাটি
করে দিনে ২-৩ বার দিতে হবে।
প্রতিদিন মাছ বা ডিম বা মুরগির কলিজা বা মাংস,
ডাল, শাক, হলুদ সবজি ও ফল, তেল দিয়ে রান্না করা
খাবার এবং গরুর দুধ নিয়ে তৈরি খাবার দিতে হবে।
২০১৮
১৮১ ২৪০ দিন
(৭-৮ মাস)
খাদ্য পরিকল্পনা
११.
২৪১-৩৩০ দিন
(১-১১ মাস )
৩৩১-৭৩০ দিন
(১২-২৪ মাস)
মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি পারিবারিক খাবার ২৫০
মি. লি. বাটির আধ বাটি করে দিনে ৩-৪ বার দিতে
হবে এবং ১-২ বার ফলের রস দিতে হবে।
প্রতিদিন মাছ বা ডিম বা মুরগির কলিজা বা মাংস,
ডাল, শাক, হলুদ সবজি ও ফল, তেল দিয়ে রান্না করা
খাবার, দুধ দিয়ে তৈরি খাবার ও অন্যান্য পুষ্টিকর
খাবার দিতে হবে।
মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি প্রতিদিন মাছ বা ডিম বা
মুরগির কলিজা বা মাংস, ঘন ডাল, শাক, হলুদ সবজি
ও ফল, তেল দিয়ে রান্না করা খাবার, দুধ দিয়ে তৈরি
খাবার ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ২৫০ মি. লি. বাটির
এক বাটি করে দিনে ৩ বাটি খাবার ৩-৪ বার দিতে
হবে। এই সময় শিশুকে নিজে নিজে খেতে উৎসাহ
দিতে হবে।
কাজ - দেড় বছরের শিশুর বিভিন্ন ধরনের খাদ্য এবং পরিমাণ কেমন হবে দেখাও।
৪-৬ বছর বয়সের শিশুদের প্রাক বিদ্যালয়গামী শিশু বলা হয়। এই বয়সে শারীরিক বর্ধন দ্রুত হলেও শৈশব
কালের চাইতে কিছুটা মন্থর গতিতে ঘটে। এই বয়সের শিশুরা স্কুলে যাওয়া শুরু করে এবং খেলাধুলা করে
তাই এসময় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালন ঘটে বলে শক্তির খরচ বেশি হয়। প্রাক বিদ্যালয়গামী শিশুদের
পেশির গঠন, দাঁত, হাড়, রক্ত গঠন ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বড়দের তুলনায় বেশি হয়।
প্রাক বিদ্যালয়গামী (৪-৬ বছর বয়সের) শিশুদের পুষ্টির গুরুত্ব -
-
বয়স অনুযায়ী এই বয়সী শিশুর স্বাভাবিক বর্ধন বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত ক্যালরি ও প্রোটিন
জাতীয় খাদ্য গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ও খেলাধুলার জন্য যথেষ্ট শক্তির প্রয়োজন হয়। এই জন্য
কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও ধাতব লবণ সমৃদ্ধ খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে।
• শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি গুরুত্বপূর্ণ।
লোহা ও ফলিক এসিড রক্ত গঠনের জন্য প্রয়োজন হয়।
ত্বকের ও চোখের সুস্থতার জন্য ভিটামিন- এ, বি ও সি সমৃদ্ধ খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অতএব আমরা দেখতে পাই যে, ৪-৬ বছর বয়সের শিশুদের স্বাভাবিক ওজন, উচ্চতা, সুস্থতা, পড়ালেখা ও
খেলাধুলার ক্ষমতা এবং দক্ষতা বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন শিশুর খাদ্যে ছয়টি পুষ্টি উপাদানেরই পর্যাপ্ত
উপস্থিতি অত্যাবশ্যক। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পেতে হলে মৌলিক
খাদ্য গোষ্ঠির প্রতিটি গ্রুপ থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য প্রতিদিনই নির্ধারিত পরিমাণে শিশুকে গ্রহণ করতে হবে।
এ বয়সের শিশুদের খাদ্য তালিকা তৈরির সময় কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। যেমন-
(ক) শিশুদেরকে প্রতিদিন কমপক্ষে তিন বেলা প্রধান খাবার ও দুই বার পুষ্টিকর নাশতা দিতে হবে। এই
পুষ্টিকর নাশতা শিশুর স্কুলে থাকাকালীন একবার এবং বাসায় থাকাকালীন একবার দিতে হবে।
তাহলে পুষ্টির অভাব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
(খ) প্রতি বেলার প্রধান খাবারে অর্থাৎ সকাল, দুপুর ও রাতের বেলায় মৌলিক গোষ্ঠির বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন
ধরনের খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। যেমন- উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ উভয় উৎস থেকেই প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।
(গ) প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের রঙিন শাকসবজি ও টক জাতীয় ফল এবং মৌসুমী ফল
অবশ্যই থাকতে হবে।
(ঘ) প্রতি বেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালরি সমৃদ্ধ ও তরল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
(ঙ) অতিরিক্ত তেলে ভাজা ও মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণে সচেতন হতে হবে। যারা পরিশ্রমের কাজ করে না
বা খেলাধুলা করে না তারা এই ধরনের ক্যালরিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ অবশ্যই পরিহার করবে। তা না হলে
শিশুকালেই শরীরের ওজন বেড়ে যাবে অর্থাৎ ওজনাধিক্যে আক্রান্ত হবে।
১১-১৫ বছর বয়সের শিশুদের বিদ্যালয়গামী শিশু বলা হয়। এই বয়সে শারীরিক বর্ধন দ্রুত হয়, ছেলেদের
চেয়ে মেয়েরা এই বয়সে দ্রুত লম্বা হয়। এই বয়সে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ক্ষেত্রে পুষ্টির চাহিদা বেশি
হয়। বর্ধনের গতি বৃদ্ধির কারণে শক্তির চাহিদা বাড়ে। এছাড়াও প্রোটিন, ভিটামিন ও ধাতব লবণের চাহিদাও
বাড়ে। এই বয়সের শিশুরা খেলাধুলা করে তাই তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্কোর সঞ্চালন ঘটে বলে বেশি
শক্তির খরচ হয়। বিদ্যালয়গামী শিশুদের পেশি, দাঁত, হাড়, রক্ত ইত্যাদির গঠনের জন্য বিভিন্ন পুষ্টি
উপাদানের চাহিদা বেশি হয়।
বিদ্যালয়গামী (১১-১৫ বছর বয়সের) শিশুদের পুষ্টির গুরুত্ব -
১১-১৫ বছর বয়সের শিশুদের দ্রুত বর্ধন বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন জাতীয় খাদ্য
গুৰুত্বপূৰ্ণ।
বিদ্যালয়গামী শিশুদের শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা, পড়ালেখা এবং বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায়
অংশগ্রহণের জন্য যথেষ্ট শক্তির প্রয়োজন হয়। এই শক্তি মেটানোর জন্য কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট
জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন ও ধাতব লবণ সমৃদ্ধ খাদ্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিদ্যালয়গামী শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি গুরুত্বপূর্ণ।
ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের লৌহ ও ফলিক এসিড বেশি প্রয়োজন হয় কারণ মেয়েদের মাসিকের
জন্য প্রতিমাসে যে রক্তের অপচয় ঘটে তা পরিপূরণের জন্য অর্থাৎ রক্ত গঠনের জন্য প্রয়োজন হয়।
ত্বকের ও চোখের সুস্থতার জন্য ভিটামিন- এ, বি ও সি সমৃদ্ধ খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অতএব আমরা দেখতে পাই যে, ১১-১৫ বছর বয়সের শিশুদের স্বাভাবিক ওজন, উচ্চতা, সুস্থতা, পড়ালেখা,
খেলাধুলার ক্ষমতা ও দক্ষতা বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন খাদ্যে ছয়টি পুষ্টি উপাদানেরই পর্যাপ্ত উপস্থিতি
অত্যাবশ্যক। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পেতে হলে মৌলিক খাদ্য গোষ্ঠির
প্রতিটি গ্রুপ থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য প্রতিদিনই নির্বাচন করতে হবে। এই বয়সী শিশুদের খাদ্য তালিকা
তৈরির সময় কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। যেমন-
(ক) ১১-১৫ বছর বয়সের শিশুদেরকে প্রতিদিন কমপক্ষে তিন বেলা প্রধান খাবার ও দুই বার হালকা নাশতা
দিতে হবে। এই বয়সে শিশুরা বেশ দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকে। স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি তারা
খেলাধুলাও করে থাকে, ফলে প্রচুর শক্তির খরচ হয়। তাই স্কুলে থাকাকালীন একবার এবং বাসায়
আরও একবার পুষ্টিকর নাশতা দিতে হবে। তাহলে অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার
সম্ভাবনা কমে যাবে।
(খ) প্রতি বেলার প্রধান খাবারে অর্থাৎ সকাল, দুপুর ও রাতের বেলায় মৌলিক খাদ্য গোষ্ঠির বিভিন্ন শ্রেণির
বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
(গ) প্রতিদিনই উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ উভয় উৎস থেকেই প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। দিনে অন্তত একবার প্রাণিজ
প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।
(ঘ) প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ও রঙিন যেমন- হলুদ, সবুজ, লাল, বেগুনি ইত্যাদি।
বর্ণের টাটকা শাকসবজি ও তাজা টক জাতীয় ফল অবশ্যই থাকতে হবে।
(ঙ) পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল জাতীয় খাদ্য প্রতি বেলায় গ্রহণ করতে হবে।
(চ) মিষ্টি জাতীয় খাবার ও অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার গ্রহণে সচেতন হতে হবে। যারা পরিশ্রমের কাজ
কম করে বা একেবারেই করে না বা খেলাধুলা করে না তারা এই খাদ্যগুলো গ্রহণ থেকে অবশ্যই বিরক্ত
থাকবে। তা না হলে শরীরের ওজন বেশি বেড়ে যাবে অর্থাৎ ওজনাধিক্যে আক্রান্ত হবে এবং নানা ধরনের
জটিল রোগের সূচনা হবে।
একবিংশ শতাব্দিতে শিশুদের ওজনাধিক্য একটা মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এই
সমস্যাটি বর্তমানে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতেও দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের
শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা বাড়ছে।
ওজনাধিক্য কাকে বলে
এক কথায় ওজনাধিক্য হচ্ছে শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়া। অর্থাৎ বলা যায় যে, কারও
শরীরের ওজন যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়, তখন সেই অবস্থাকে ওজনাধিক্য বলে। প্রত্যেক বয়সের
জন্য স্বাভাবিক ওজনের নিম্ন সীমা ও উচ্চ সীমা আছে। দেহের ভজন যখন সেই বয়সের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ
সীমা অতিক্রম করে যায় তখনই ওজনাধিক্য দেখা দেয়।
ওজনাধিক্যের কারণ-
দেহের ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি
খাওয়া। আমরা প্রতিদিন যদি ক্যালরি বহুল খাদ্য দেহের প্রয়োজনের চেয়ে
বেশি গ্রহণ করি এবং পরিশ্রম কম করি ও অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করি তা
হলে এই অতিরিক্ত ক্যালরি আমাদের দেহে ফ্যাট আকারে জমা হবে এবং
ধীরে ধীরে দেহের ওজন বৃদ্ধি পাবে। এই ভাবে দেহের ওজন বৃদ্ধি
পাওয়ার ফলে ওজনাধিক্য দেখা দেবে।
প্রতিদিন প্রয়োজনের
দেহের
ওজন বৃদ্ধি
অসংক্রামক
রোগে আক্রান্ত
হওয়ার প্রবণতা
জীবনের
কি বুদ্ধি
প্রয়োজনের চেয়ে বেশি
খাওয়ার ফলে ওজনাধিক্য
হ
তুলনায়
বেশি ক্যালরিযুক্ত খাদ্য
গ্রহণ এবং কম পরিশ্রম করা
শুধু খাদ্য গ্রহণ করলেই সুস্থ থাকা যাবে না। সুস্থ থাকতে হলে সুষম খাদ্য গ্রহণ যেমন প্রয়োজন তেমনি
প্রয়োজন নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, খেলাধুলা ও নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন।
ওজনাধিক্যের কুফল -
-
শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে
যায়। যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, পিত্তথলির পাথর, রক্তে চর্বির আধিক্য, ক্যান্সার
ইত্যাদি। এছাড়া জীবনের আয়ু কমে আসে। এই কারণে শরীরের ওজন কোনোভাবেই বাড়তে দেওয়া ঠিক
নয়। শিশুকালে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া শরীরের জন্য একেবারেই ভালো লক্ষণ নয় কারণ এর ফলে অল্প বয়সেই
বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যায়।
ওজনাধিক্য শিশুর খাদ্য ব্যবস্থা-
শরীরের ওজন বেশি হলে অবশ্যই খাদ্য সংক্রান্ত নিম্নলিখিত নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে।
শস্য ও শস্য জাতীয় খাদ্য যেমন- ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি ইত্যাদি নির্ধারিত পরিমাণে খেতে হবে। এই
খাবারগুলো বেশি খেলে ওজন বেড়ে যাবে। মনে রাখতে হবে ভাত রুটির পরিবর্তে সমপরিমাণ পোলাও,
খিচুরি, পরটা ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। কারণ এই খাবারগুলোতে তেল বা ঘি থাকায় ভাত ও রুটির চেয়ে
প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ ক্যালরি পাওয়া যায়। তাই গোলাও, খিচুরি, পরটা ইত্যাদি খেতে হলে ভাত ও রুটির
অর্ধেক পরিমাণে গ্রহণ করছি বহনীয়।
নাধিকা শিশুরা কম চো
• প্রতিবেলার খাদ্য তালিকাতে যথেষ্ট পরিমাণ শাকসবজি, মৌসুমী ফল ও টক ফল থাকতে হবে। এই
খাবারগুলো বেশি খাওয়া যাবে।
• প্রতিদিন প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য ভাল, बानাম, মাছ, মাংস ও ডিম পরিমিত
পরিমাণে পাওয়া যাবে।
শিশুদের খাদ্য তালিকায় দুখ থাকা প্রয়োজন। তাই চিনি বা গুড় ছাড়া দুধ গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে
এবং সুখের তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।
• নাশতা হিসাবে সব সময় কম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য যেমন- শাকসবজি ও ফল বাছাই করতে হবে। যে
সকল খাদ্যে ক্যালরি বেশি থাকে সেই খাদ্য গ্রহণে শরীরের ওখান আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। তাই ক্যালরি
বহুল খাদ্য যেমন- তেলে ভাজা ভুনা খান, বি, মাখন, চিনি ও গুড় দিয়ে তৈরি মিষ্টি জাতীয় খানা,
বেকারির তৈরি খাদ্য, কেক, পেস্ট্রি, বিস্কুট, সব ধরনের সফট ড্রিংকস, চকলেট, ক্যান্ডি, আইসক্রিম,
ইত্যাদি বাদ দিতে হবে।
ওজন কমানোর জন্য শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম ও অন্যান্য খাবার রান্নার সময় অবশ্যই কম তেল দিয়ে
রান্না করে খেতে হবে। তেলের ব্যবহার কমাতে হবে। অর্থাৎ রান্নার সময় খুব কম তেল দিয়ে রান্না করতে
হবে। ডুবো ফেলে ভাজা সব ধরনের খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
• ক্ষুধা লাগলে বিভিন্ন ভাজা, প্যাকেটজাত ও বেকারির খাবারের পরিবর্তে মৌসুমী ফল খাওয়ার অভ্যাস
করতে হবে।
• সফট ড্রিংকস বোতলজাত কেনা জুসের পরিবর্তে ডাবের পানি ও রসালো ফল খাওয়ার অভ্যাস করতে
হবে। এতে করে যেমন- অর্থের সাশ্রয় হবে তেমনি বেশি পুষ্টি পাওয়া যাবে এবং শরীরের ওজন কমাতে
সাহায্য করবে।
মনে রাখতে হবে শরীরের বাড়তি ওজন কমানোর জন্য অবশ্যই নিয়মিত প্রতিদিন ব্যায়াম বা পরিশ্রম
করতে হবে। পরিমিত আহারের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম বা পরিশ্রম, নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন ও
পর্যাপ্ত ঘুম এবং সর্বোপরি সার্বিক সচেতনতা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
শিশুদের শরীরের ওজন বেশি থাকা যেমন সমস্যা তেমনি ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকাও সমস্যা। কারণ
এর ফলেও নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যাটি বর্তমানে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতেও দেখা
যায়। আমাদের দেশে সাধারণত নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দেয় ।
এক কথায় স্বপ্ন ওজন হচ্ছে শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হওয়া। অর্থাৎ বলা যায় যে, কারও শরীরের
ওজন যখন সাভাবিক ওজনের চেয়ে কম হবে, তখন সেই অবস্থাকে স্বল্প ওজন বলা হবে। নির্দিষ্ট বয়সের
জন্য সাভাবিক ওজনের নিম্ন সীমার চাইতে যখন শিশুর ওজন কম হয় তখন তাকে স্বপ্ন গুঞ্জন বলা হয়।
স্বপ্ন ওজনের কারণ -
দেহের ওজন কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো প্রয়োজনের চেয়ে কম খাওয়া ও পরিশ্রম বেশি করা। আমরা
প্রতিদিন যদি দেহের প্রয়োজনের চেয়ে কম খাদ্য গ্রহণ করি, পরিশ্রম বেশি করি এবং অনিয়মতান্ত্রিক
জীবনযাপন করি তাহলে ক্যালরি গ্রহণের চেয়ে ক্যালরি খরচ বেশি হবে। এর ফলে আমাদের দেহের সঞ্চিত
শক্তি ফ্যাট ভেঙে শক্তির চাহিদা পূরণ হবে। এই অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে ধীরে ধীরে দেহের ওজন কমে
যাবে। এই ভাবে দেহের ওজন কমে যাওয়ার ফলে যায় ওজন দেখা দেবে। দীর্ঘদিন জটিল কোনো রোগে
ভোগার পরও শরীরের ওজন কমে যেতে পারে।
• প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য
গ্রহণ
• পরিশ্রম বেশি করা
দীর্ঘদিন জটিল রোগে ভোগা
দেহের ওয়ান
কমে যাওয়া
বিভিন্ন রোগে
আক্রান্ত হওয়ার
প্রবণতা বৃদ্ধি
জীবনের ঝুঁকি
স্বপ্ন ওজনের কুফল -
শরীরের ওজন কম হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন-
কর্মশক্তি কমে যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় সহজেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়,
রক্তচাপ কমে যায়, মেধাশক্তি কমে যায় ইত্যাদি।
স্বপ্ন ওজনের শিশুর খাদ্য ব্যবস্থা
শরীরের ওজন কম হলে অবশ্যই খাদ্য সংক্রান্ত নিম্নলিখিত নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে।
শস্য ও শস্য জাতীয় খাদ্য যেমন- ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি ইত্যাদি পর্যান্ত পরিমাণে খেতে হবে। ভাত
রুটির পরিবর্তে পোলাও, খিচুরি, পরটা ইত্যাদি খাওয়া যাবে। এই খাবারগুলোতে তেল বা ঘি থাকায়
ভাত ও রুটির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ ক্যালরি পাওয়া যায়। তাই ক্যালরি কম খাওয়ার কারণে যাদের
শরীরের ওজন কমে যায়, তারা শরীরের ওজন বাড়ানোর জন্য ক্যালরি বহুল এই খাদ্যগুলো গ্রহণ করলে
ক্যালরি অল্প খেলেও প্রয়োজনীয় ক্যালরি গ্রহণ করতে পারবে।
প্রতিবেলার খাদ্য তালিকাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি ও মৌসুমী ফল থাকতে হবে।
প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য ডাল, বাদাম, মাছ, মাংস ও ডিম অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে।
খাদ্য তালিকায় দুধ ও দুধের তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করা ভালো। মিষ্টি জাতীয়
খাবারগুলো থেকে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি যথেষ্ট ক্যালরিও পাওয়া যাবে। যা শিশুদের ওজন
দ্রুত বাড়াতে সাহায্য করবে।
যে সকল খাদ্যে ক্যালরি বেশি থাকে সেই খাদ্য গ্রহণে শরীরের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। তাই নাশতা
হিসাবে গ্রহণের জন্য সব সময় বেশি ক্যালরি যুক্ত খাদ্য বাছাই করতে হবে।
ওজন বাড়ানোর জন্য শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম ও অন্যান্য খাবার রান্নার সময় বেশি তেল দিয়ে রান্না
করতে হবে।
মনে রাখতে হবে শরীরের ওজন বাড়ানোর জন্য অবশ্যই নিয়মিত প্রতিদিন তিন বেলা খাদ্য গ্রহণের
পাশাপাশি আরও দুইবার পুষ্টিকর নাশতা শিশুকে খেতে দিতে হবে।
কোনো বেলার খাবার বাদ দেওয়া বা প্রয়োজনের তুলনায় কম খাওয়া যাবে না।
ওজন বাড়ানোর জন্য নিয়মিত পর্যান্ত আহারের পাশাপাশি, পর্যান্ত ঘুম, বিশ্রাম ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন
যাপন অবশ্যই প্রয়োজন।
• শারীরিক পরিশ্রম বাড়ালে ক্যালরিযুক্ত খাদ্য গ্রহণও বাড়াতে হবে। তা না হলে শরীরের ওজন কমে যাবে।
• শিশুর কোনো রোগের কারণে ওজন কম হলে অবশ্যই সেই রোগের চিকিৎসা করতে হবে।
সর্বোপরি সার্বিক সচেতনতা শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১. জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শিশু নিচের কোন খাবারটি খাবে?
ক. চিনির পানি
খ. মায়ের দুধ
গ. টিনের দুধ
ঘ. খিচুরি
শরীরের ওজন বেশি হলে নিচের কোন খাদ্যটি বাদ দেওয়া উচিত ?
ক. শাক
খ. ভাত
গ. ডাল
ঘ. পরটা
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও
জোরিনের ছেলে এবার স্কুলে ভর্তি হয়েছে। ছেলের সুসাস্থ্যের ব্যাপারে জেরিন বেশ সচেতন। তাই
ছেলেকে সে সবসময় সকল পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার খেতে দেয়।
৩. জেরিন তার ছেলেকে প্রতিদিন কতবার প্রধান খাবার খেতে দেবে?
ক. দুইবার
. তিনবার
গ. চারবার
ঘ. পাঁচবার
৪. জেরিনের ছেলেকে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে দেওয়ার কারণ-
হাড়ের সুগঠন
ii. মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশ
iii. পেশির সুগঠন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. 13॥
গ. ii ও iii
খ. ও iii
ঘ. i, ii ও iii
সৃজনশীল প্রশ্ন
১. রাবেয়া খাতুনের পরিবারে প্রতিদিনের মেনুর পূর্ব পরিকল্পনার তেমন একটা রেওয়াজ নেই। বাড়তি
ঝামেলার কথা চিন্তা করে শাকসবজি তেমন একটা রান্না করা হয় না। প্রতিবেলাতেই শুধু মাছ, মাংস,
ডিম ইত্যাদি রান্না করা হয়। সম্প্রতি তার পরিবারে নতুন অতিথির আগমনের কথা শুনে পুত্রবধু নাঈমার
জন্য ডাক্তারের পরামর্শে বিশেষ একটি খাদ্য তালিকা করে দিলেন।
ক. কোন বয়সের শিশুদের প্রাক বিদ্যালয়গামী শিশু বলা হয়।
খ. বিদ্যালয়গামী শিশুদের অধিক পুষ্টির প্রয়োজন কেন?
গ. নাঈমার জন্য আলাদা খাদ্য পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্যের জন্য রাবেয়া খাতুনের মেনু কতটুকু উপযোগী? মূল্যায়ন কর।
২. গার্মেন্টসকর্মী রেহানার ৯ বছর বয়সী ছেলেটির ওজন দিন দিন কমে যাচ্ছে। সে কোনো বেলাতেই পেট
ভরে খাবার খায় না। সারাদিন ঝালমুড়ি, চানাচুর, চিপস ইত্যাদি খেতে বেশি পছন্দ করে। স্কুল থেকে
ঘরে ফিরেই সে খেলতে চলে যায়। ইদানীং ক্লাসের পড়া শিক্ষক বুঝিয়ে দিলেও আগের মতো সে
ভালোভাবে বুঝতে পারে না। স্কুলের পরীক্ষাগুলোতেও ধীরে ধীরে ভালো ফলাফল অর্জন করতে ব্যর্থ
হচ্ছে।
ক. ওজনাধিক্য কাকে বলে?
খ. মেনু বলতে কী বোঝায়?
গ. রেহানার ছেলেটির সমস্যার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. কী ধরনের খাদ্যাভ্যাস রেহানার ছেলের জন্য প্রয়োজন? উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
খাদ্যের কাজ হলো পুষ্টি সাধন করা। কিন্তু যদি কোনো কারণে নীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত ক্যালরি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ
না করা হয় বা যে খাদ্য গ্রহণ করা হচ্ছে তার মধ্যে এক বা একাধিক পুষ্টি উপাদানের অভাব থাকে বা চাহিদা
অনুযায়ী কম খাদ্য গ্রহণ করা হয় তাহলে গৃহীত খাদ্য শরীরের চাহিদা মেটাতে পারবে না। তখন কিছুদিনের
মধ্যেই এই পুষ্টি উপাদানগুলোর অভাবজনিত বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। পুষ্টি উপাদানগুলোর অভাবে আমাদের
শরীরে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় তাদেরকেই অভাবজনিত রোগ বা অপুষ্টিজনিত রোগ বলে।
অপুষ্টিজনিত রোগগুলোর মধ্যে প্রোটিন ক্যালরি অপুষ্টি, রাতকানা, রক্ত স্বল্পতা, গলগণ্ড, রিকেট,
অস্টিওম্যালেসিয়া, বেরিবেরি, পেলেগ্রা, স্কার্ভি উল্লেখযোগ্য ।
প্রোটিন ক্যালরি অপুষ্টি -প্রোটিন ও ক্যালরির অভাবে যে অপুষ্টি দেখা দেয় তাকে প্রোটিন ক্যালরি অপুষ্টি
(Protein Calorie Malnutrition) বা পিসিএম (PCM) বলে। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনুন্নত দেশ
সমূহে শিশুদের ক্ষেত্রে প্রধান অপুষ্টিজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে পিসিএম একটি সমস্যা। সাধারণত ২ ধরনের
পিসিএম দেখা দেয়।
(১) কোয়াশিয়রকর বা গা ফোলা রোগ-
সাধারণত ১-৪ বছর বয়সের শিশুরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। শিশুদের খাদ্যে প্রোটিনের অভাবে
কোয়াশিয়রকর বা গা ফোলা রোগ দেখা দেয়।
কারণ-
(ক) মা বারবার গর্ভবর্তী হলে কোলের শিশুকে বুকের দুধ থেকে সরিয়ে দিয়ে কার্বোহাইড্রেট বহুল খাদ্যে
অভ্যন্ত করলে খাদ্যে প্রোটিনের অভাব হয়। ফলে কোয়াশিয়রকর দেখা দেয়।
(খ) ডায়রিয়া, হাম ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হলে অসুস্থতার সময় এবং রোগ ভোগের পরে দীর্ঘদিন পুষ্টিকর
খাদ্য হতে বঞ্চিত হলে শিশুর দেহে প্রোটিনের ঘাটতির ফলে কোয়াশিয়রকর হয়।
• স্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পানি জমার পরও শরীরের ওজন কমে যায়।
হাত, পা ও মুখে পানি জমে।
ত্বক ফেটে যেতে পারে ও ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
• চুল পাতলা, বিবর্ণ ও দুর্বল গোড়াযুক্ত হয়।
মুখ ফুলে গোল হয়ে চাঁদের মতো দেখায়। একে “মুনফেস ” বলে।
শিশু সাধারণত উদাসীন থাকে, কোনো কিছুতেই উৎসাহ থাকে না।
ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
(২) ম্যারাসমাস বা হাড্ডিসার রোগ-
সাধারণত জীবনের প্রথম ২ বছর বয়সের শিশুদেরই এই রোগ বেশি দেখা যায়। তবে যে কোনো বয়সেই হতে
পারে। শিশুদের খাদ্যে প্রোটিন ও ক্যালরির অভাব হলে ম্যারাসমাস বা হাড্ডিসার রোগ দেখা দেয়।
কারণ-
(ক) খাদ্যের অপর্যাপ্ততা খাদ্যের অপর্যাপ্ততাই এর প্রধান কারণ। মায়ের দুধ কমে গেলে যদি পরিপূরক খাদ্য
-
দেওয়া না হয় তাহলে দেহে প্রোটিন ও ক্যালরি উভয়েরই অভাব ঘটে।
(খ) সংক্রামক ব্যাধি বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে অথবা বারবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে এবং সেই
সময় প্রয়োজনমতো খাবার গ্রহণ না করতে পারলে শিশু হাড্ডিসার রোগে আক্রান্ত হয়।
-
(১) বয়সের তুলনায় শিশুদের
শরীরের ওজন শতকরা ৬০ ভাগের নিচে
নেমে যায়।
(২) হাত, পা ও মুখ শীর্ণ হয়ে, চামড়া
কুঁচকিয়ে বৃদ্ধ ব্যক্তির মতো দেখায় ।
(৩) অস্থির প্রকৃতির হয় ও দুর্দশাগ্রস্ত
দেখায়।
(৪) পেটকে অনেকটা বাটির মতো দেখায়।
এই অবস্থাকে "পট বেলি" বলে ।
(৫) ক্ষুধা থাকে ।
ম্যারাসমাসে আক্রান্ত শিশু
প্রোটিন ক্যালরি অপুষ্টি জনিত রোগের প্রতিকার প্রোটিন ক্যালরি অপুষ্টির প্রতিকার করার জন্য -
(ক) ক্যালরি ও প্রাণিজ প্রোটিন সমৃদ্ধ যথাযথ পুষ্টিকর খাবার প্রদান করতে হবে। বারবার অল্প খাবার দিতে
হবে। ধীরে ধীরে খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। অসুস্থতা বেশি হলে খাবার নরম করে রান্না করে বারবার
দিতে হবে। দুই বছরের শিশুকে বাইরের খাদ্যের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। নিয়মিত
ভিটামিন ও খনিজ লবণের ট্যাবলেট দিতে হবে।
(খ) সংক্রামক রোগের চিকিৎসা করতে হবে।
প্রোটিন ক্যালরি অপুষ্টিজনিত রোগের প্রতিরোধ - প্রোটিন ক্যালরি অপুষ্টির প্রতিরোধ করার জন্য -
(১) ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে। ৬ মাস পূর্ণ হলে বুকের দুধের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের
পুষ্টিকর পারিবারিক খাবার দিতে হবে। ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইন নিতে হবে, পাশাপাশি অন্যান্য
খাবারও দিতে হবে।
(২) সংক্রামক রোগ হলে চিকিৎসা করতে হবে এবং সেই সাথে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
(৩) নিয়মিত শিশুর ওজন নিতে হবে এবং তা রেকর্ড করতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই সাস্থ্য রক্ষার জন্য সর্বোত্তম পন্যা।
আমরা জানি যে, খাদ্যের মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনগুলো আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক
ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে। এই ভিটামিনগুলোর অভাবে আমাদের নানা ধরনের অপুষ্টিজনিত সমস্যা দেখা
যায়। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যাগুলোর কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ
সম্পর্কে নিচের ছকে দেওয়া হলো।
অনুশীলনী
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১. কোয়াশিয়রকর রোগের অপর নাম কী?
ক. চিলোসিস
পেলেগ্রা
গ. গা ফোলা
ঘ. হাড্ডিসার
২. নিচের কোনটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলা
ক. কলা
. কাঁঠাল
গ. পেয়ারা
ঘ. তরমুজ
নিচের উদ্দীপকটি মনোযোগ দিয়ে পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও
জহুরার ৬ বছরের ছেলেটির পা দুইটি ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। মাথাটাও বাক্সের মতো দেখায়।
এ ব্যাপারে সাস্থ্যকর্মীর কাছে জানতে চাইলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিলেন।
৩. জহুরার ছেলের কোন রোগটি হয়েছে?
ক. পেলেগ্রা
খ. রিকেট
গ. বেরিবেরি
ঘ, গয়টার
৪. জহুরার ছেলের জন্য করণীয়-
i. ছোট মাছ ও দুধ খাওয়ানো
ii. চিনি ও রুটি খাওয়ানো
iii. প্রতিদিন সূর্যোলোকে ১০ মিনিট বসানো
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. ও॥
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
সৃজনশীল প্রশ্ন
১. শ্রমজীবি সালমার ৪টি সন্তান। সে সন্তানদের যত্নের ব্যাপারে তত মনোযোগী নয়। তার ছোট ছেলেটি
প্রায়ই পেটের পীড়ায় ভোগে। ইদানীং সে অনেক শুকিয়ে গেছে। বাচ্চাটির শরীরের চামড়া কুঁচকে গেছে।
পেট শরীরের ভিতর ঢুকে গর্ত হয়ে গেছে। সালমা ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার তাকে প্রয়োজনীয়
পরামর্শ দিয়ে বললেন একটু সচেতন হলে তার সন্তান এ রোগে আক্রান্ত হতো না ।
ক. ভিটামিন ডি-এর অভাবে কোন রোগ হয়?
খ. অপুষ্টিজনিত রোগ বলতে কী বোঝায়?
গ. সালমার ছেলের কোন রোগ হয়েছে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সালমার ছেলের রোগ সম্পর্কে ডাক্তারের মন্তব্যটির যথার্থ মূল্যায়ন কর।
পারিবারিক খাদ্য পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিবারের আয় অনুযায়ী সুষম খাদ্যের
ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে আরও কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেমন- খাদ্যাভ্যাস, জীবিকা, আকর্ষণীয়
ও সুস্বাদু খাবার, বিশেষ দৈহিক চাহিদা ও অনুমোদিত পরিমাণ, পরিবেশনের ধরন ও সময় মৌসুম ও
আবহাওয়া, উপলক্ষ বা আনুষ্ঠানিকতা, আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদির সুবিধা, রন্ধনকারীর দক্ষতা, সঠিক রেসিপির
প্রয়োগ, উদ্বৃত্ত খাদ্যের ব্যবহার ইত্যাদি।
মৌসুম অনুযায়ী খাদ্য নির্বাচন-
যে ঋতুতে যে শাকসবজি ও ফলমূল পাওয়া যায় সেটিই তখনকার খাদ্য তালিকায় রাখা একান্ত বাঞ্ছনীয়। কারণ
ঋতুকালীন শাকসবজি, ফলমূল দামে সস্তা, পুষ্টি উপাদান বহুল এবং যাদে-গন্ধে স্বকীয়তা থাকে।
মৌসুম/আবহাওয়া মানুষের খাদ্য গ্রহণ ও চাহিদার উপরও প্রভাব বিস্তার করে। যেমন— শীত প্রধান অঞ্চলে
মানুষের তাপশক্তি বজায় রাখার জন্য অতিরিক্ত শক্তির দরকার হয়। অপরদিকে গ্রীষ্ম প্রধান দেশে
তুলনামূলকভাবে কম খাদ্য শক্তি দেওয়া যেতে পারে। এজন্য শীত প্রধান দেশে মাখন, তেল, ডিম, কফি, কোকো
ইতাদি খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
এছাড়া ঋতুভেদে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ফলমূল আমাদের দেশে সহজলভ্য থাকে। তাই খুব সহজেই
খাদ্য তালিকা সুষম ও বৈচিত্র্যপূর্ণ করা যায়।
বিভিন্ন মৌসুমে সহজলভ্য ফলমূল ও শাকসবজি—
গ্রীষ্ম ও বর্ষা কাল
আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, বেল, তরমুজ, বাঙি,
লেবু, লটকন, পেঁপে, আনারস, ঢেড়স, ডাটা,
বেগুন, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, পটল, মিষ্টিকুমড়া, চাল ইত্যাদি।
কুমড়া, শশা ।
শীতকাল
জলপাই, বরই, কামরাঙা, টমেটো, লালশাক,
পালংশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, লাউ
উৎসব অনুযায়ী খাদ্য নির্বাচন
মেনু বা খাদ্য তালিকা তৈরি বা প্রতিদিনের খাদ্য পরিকল্পনার ক্ষেত্রে উপলক্ষ একটি বড় ভূমিকা পালন করে।
নিত্যদিনের খাদ্য ছাড়াও বিভিন্ন উপলক্ষে ভিন্ন আয়োজনের সাথে বিশেষ ধরনের খাদ্য ব্যবস্থার প্রচলন
আছে। ছোট বড় যে কোনো ধরনের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে মেনু একটি বিশেষ আকর্ষণের বিষয়। কারণ উপলক্ষ
ভেদে খাদ্য তালিকায় ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন: বিয়ে, গায়ে হলুদ, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, মিলাদ,
মৃত্যুবার্ষিকী ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন উপলক্ষে ভিন্ন ভিন্ন খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয়
অনুষ্ঠান যেমন: ঈদ, পূজা-পার্বণ এবং দেশীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠান যেমন: পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি উপলক্ষেও
খাদ্য গ্রহণে ভিন্নতা দেখা যায়। ঘরোয়া উৎসবের খাদ্য পরিকল্পনা এবং ঘরের বাইরে উদযাপিত উৎসবের
খাদ্য পরিকল্পনায়ও ভিন্নতা দেখা যায়। এছাড়া উৎসবের ধরন ও আমন্ত্রিত অতিথিদের বয়স, বুচি, দৃষ্টিভঙ্গি
ইত্যাদি অনুযায়ী খাদ্য পরিকল্পনা ভিন্ন হয়।
পরিবেশনের সময়কাল এক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যেমন: মধ্যাহ্ন ভোজ, নৈশ ভোজ কিংবা
বৈকালিক চা চক্র' ইত্যাদি।
উৎসব ভেদে খাদ্য পরিকল্পনার ধরন :
জন্মদিন
কেক
মিলাদ
(১)
বিবাহ উৎসব
বিরিয়ানী / পোলাও
পিকনিক
১)
পোলাও/বিরিয়ানি
১) বড় জিলাপি
২) রোস্ট
২) মুরগির রেজালা / রোস্ট
৩) গরু/খাসির রেজালা
২) লাড্ডু/সন্দেশ
৩) সিঙ্গাড়া
২) কাবাব/ভেজিটেবল চপ
৩)
গরু/খাসির রেজালা
(৩) পিঠা
৪) সবজি/নিরামিষ
৪) চটপটি
৫) সালাদ
৪) সালাদ
৪) নিমকি
৫) কোমল পানীয়
৬) বোরহানি
৫) দই/মিষ্টি/পানীয়
৫) কলা
পাঠ ২ খাদ্য পরিবেশন
১)
৭) দই/মিষ্টি
খাদ্য পরিবেশন বলতে বোঝায় “কোনো সুনির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন করে খাদ্য পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতকৃত
খাদ্য সামগ্রী গ্রহণের জন্য উপস্থাপন করা।" সুন্দর পরিবেশনের উপর খাদ্য গ্রহণের তৃপ্তি অনেকখানি নির্ভর
করে। খাদ্য পরিবেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। যেমন- টেবিল সার্ভিস, বুফে সার্ভিস, পাস-অন সার্ভিস, ট্রে
সার্ভিস, প্যাকেট পরিবেশন ও পরিচারকের মাধ্যমে পরিবেশন। ঘরে বা বাইরে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশনের
ব্যবস্থা সুষ্ঠু হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
খাদ্য পরিবেশন ব্যবস্থার ধরন অনুষ্ঠানের প্রকৃতি ও পরিবেশনের ভিন্নতার উপরেও নির্ভর করে।
বিভিন্ন পরিবেশন পন্যতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পরিবেশন পাতিগুলো প্রধানত দুই ধরনের। যথা-
(ক) অনানুষ্ঠানিক পতিগৃহে, পিকনিক কিংবা ভ্রমণে অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতি প্রযোজ্য।
(4) নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান উপলক্ষে পরিষ্ঠক পদ্ধতিতে পরিবেশন
করা হয়। যেমন: বিয়ে, শাকারিক প্রীতিভোজ, হোটেল রেস্তোরাঁ, অফিসিয়াল পার্টি, সেমিনার ইত্যাদি।
তবে আমাদের দেশে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক দুই ধরনের বিশ্ব দেখা যায়। আমাদের দেশে বর
প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
খোদ পরিবেশন
গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রী বা আপ্যা
পাদ্য পরিবেশন করেন। এই
ধরনের পরিবেশন পর আমাদে
দেশে বেশি আন্তরিকতাপূর্ণ আ
বলে মনে করা হয়।
• পরিচারকের মাধ্যমে খাদ্য পরিবেশনে
খাবার উপভোগ করার সুযোগ পান।
ট্রে-পরিবেশন বিভিন্ন শিক্ষা অফিসের ক্যাফেটেরিয়াকে টে
পরিবেশনের প্রচলন দেখা যায়।
প্যাকেট পরিবেশন- বিপদ, মমিনার, বিভিন্ন সাজিক অনুষ্ঠানে প্যাকেট খাবার পরিবেশন করা হয়।
ফ্যাক্স, লাঞ্চ প্যাকেট বা ৰান্ধে সহজে অধিকসংখ্যক লোকের মধ্যে পরিবেশন করা যায় ।
• বুফে পরিবেশন এই পানা
-
একই সময়ে কয়েকটি টেবিলে একই ফরনের বাবা এবং প্লেট, গ্লাস, চামচ, কাপ ও
আনুন ाি । টেবিলের দুইপাশে বা টেবিলের পাশে একইভাবে
কোনো পাশ থেকে প্রতি প্রত্যেক প্রকার বাটে নিয়ে অধভাবে
বসে আনন্দের সাথে তা উপভোগ করতে পারেন, এই ধরনের পদ্ধতিকে ম-পরিবেশনও বলা
পরিবারের সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যথাযথ খাদ্য তালিকা তৈরি করা হয় এবং সে অনুযায়ী খাদ্য সামগ্রী
নির্বাচন ও ক্রয় করতে হয়। বাজার থেকে কী ক্রয় করা হবে তার উপর অনেকাংশে নির্ভর করে কী খাবার রান্না
হবে। কেননা অনেক সময় পরিবারের আর্থিক দিক বিবেচনা করে যা যা ক্রয়ের পরিকল্পনা থাকে যদি তা না
পাওয়া যায় তাহলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়। কাজেই পুষ্টি সম্পর্কে যদি পরিবারের সবাই সচেতন
থাকেন এবং প্রতিটি বিষয়ে সহযোগিতা করেন তবেই পারিবারিক পুষ্টির বিষয়টি নিশ্চিত করা সহজ হয়।
খাদ্য তৈরি ও পরিবেশন যথাযথ এবং আকর্ষণীয় করার জন্য খাদ্য নির্বাচন ও ক্রয় উল্লেখযোগ্য বিষয়।
পছন্দসই সতেজ ও সরস খাদ্য নির্বাচন করা সহজ ব্যাপার নয়। এর জন্য চাই অভিজ্ঞতা ও খাদ্য নির্বাচন
সংক্রান্ত জ্ঞজ্ঞান।
খাদ্য ক্রয়ে সতর্কতা অবলম্বনে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা উচিত। এগুলো হচ্ছে-
খাদ্যের মান ও গুণ যাচাই করা- এক্ষেত্রে উন্নত জাতের তাজা খাদ্য সমগ্রী এবং পুষ্টিমানের বিষয়ে সতর্ক
থাকতে হবে। যেমন- পচা-বাসি মাছ, মাংস ক্রয় না করা। প্রয়োজনে বিকল্প খাদ্য সামগ্রী কিনে প্রয়োজন:
মেটাতে হবে।
দাম যাচাই করে কেনা- বাজারে খাদ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতি হওয়াতে প্রায় প্রতিনিয়তই বাজারদর
উঠা-নামা করে। তাই বিক্রেতার চাপে বিভ্রান্ত না হয়ে দাম যাচাই করে নেওয়াই ভালো।
খাদ্যদ্রব্য যাচাই বাছাই করে ক্রয় করা— দ্রব্যমূল্যের আধিক্য এবং নির্দিষ্ট বাজেট এই দুয়ের টানাপড়েনে
সস্তায় কেনার পরিবর্তে বাজারে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য যাচাই বাছাই করে ক্রয় করতে হবে। সস্তায় পচা খাবার
ক্রয় থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। নিজের চাহিদামতো খাদ্যটি ক্রয়ে কিছুটা মূল্য বেশি দেওয়াও যুক্তিসঙ্গত।
আয়ের মধ্যে ক্রয় করা— আয়ের মধ্যে ক্রয় করাই নিরাপদ। এজন্য প্রায় একই মূল্যে বিকল্প কী কী কেনা
যায়, কোনটির মূল্য কেমন ইত্যাদি বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। প্রয়োজনে এসব বিষয়ে বাজারে
আসার পূর্বেই তথ্য সংগ্রহ করে নিতে হবে।
মাপ ও ওজনের প্রতি সতর্ক থাকা খাদ্য ক্রয়ে মাপ ও ওজনের জ্ঞান না থাকলে তা পুষ্টি চাহিদা পূরণেও
ব্যর্থ হয়। তাই সঠিক মাপ ও ওজনে সতর্ক হতে হবে।
• ঋতু অনুযায়ী সতেজ ও সজীব খাদ্য নির্বাচন ঋতুভেদে শাকসবজি যেমন সজীব ও তাজা থাকে তেমনি
-
খাদ্য উপাদানও পর্যাপ্ত থাকে।
কাজেই ক্রয়ের জন্য এমন খাদ্য বস্তু নির্বাচন করতে হবে যা পুষ্টি, রং, আকার এবং মানের বিচারে প্রথম
শ্রেণিতে পড়ে। বাসি, পচা, পোকা খাওয়া জিনিস কখনো ক্রয় করা উচিত নয়। এতে যেমন খাদ্যের অপচয় হয়
তেমনি অর্থেরও অপচয় হয়। উপরন্তু রমনের বা সংরক্ষণের পরও খাদ্যবস্তুর স্বাদ, গন্ধ, বর্ণ কিছুই সঠিক
থাকে না। তাই খাদ্য নির্বাচন ও ক্রয়ে দক্ষতা ও নৈপুণ্যতা থাকতে হবে।
পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য সব প্রাণীরই খাদ্য অপরিহার্য। খাদ্য শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াগুলো নিয়ন্ত্রিত করে
শরীরকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখে। খাদ্যের মাধ্যমে শরীর নামক ইঞ্জিনটি সচল, ত্রুটিমুক্ত এবং কর্মক্ষম
রাখার জন্য প্রত্যেক পরিবারেও চলে বিরামহীন প্রচেষ্টা। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের সুর্যাস্থ্য, পরিতৃপ্তি ও
চাহিদা অনুযায়ী বাজার থেকে দেখে শুনে খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করা হয়। তবে খাদ্য হিসাবে বাজার থেকে আমরা যে
বস্তু সামগ্রী ক্রয় করে থাকি তা শতভাগ ভেজালমুক্ত পাওয়া কঠিন। কেননা এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী মুনাফা
লাভের উদ্দেশ্যে কাঁচা কিংবা রান্না করা খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করছে। এর ফলে
খাদ্যদ্রব্যের স্বাভাবিক পচনশীলতা রোধ হয়, বাহ্যিকভাবে পরিপক্ক ও ভাজা মনে হয় এবং দীর্ঘসময় পর্যন্ত
সংরক্ষণ করা যায়। যেমন- কাঁচা মাছ, মাংস, পাকা ফল সতেজ রাখতে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। দুধ,
চিনিতে সাদা ভাব আনার জন্য ব্যবহার করা হয় হাইড্রোজ। অপরিণত ফল পাকানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
কার্বাইড। বিভিন্ন খাবারকে আকর্ষণীয় করার জন্য ব্যবহার করা হয় কৃত্রিম রং। এমনকি খাদ্যশস্য, ফলমূল,
সবজি, ইত্যাদি উৎপাদনের সময়ও বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবে মাঠ থেকে ফসল
উত্তোলন, প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে শুরু করে খাবার তৈরির সময়ও ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক
পদার্থ।
আমরা সকলেই প্রত্যেকদিন বাজার থেকে কিছু না কিছু পণ্য ক্রয় করছি এবং বিভিন্নভাবে বিক্রেতা দ্বারা
প্রতারিত হচ্ছি। বিক্রেতা পণ্য বিক্রয়ের সময় হয় ওজনে কারচুপি করছে অথবা অনেক জিনিসের সাথে খারাপ
কিছু মিশিয়ে ক্রেতার কাছে বিক্রয় করছে। কিছু কিছু বিক্রেতা এমন অনেক পণ্য বাজারে বিক্রয় করছে যা
মানুষের জীবনের প্রতি হুমকি স্বরূপ। এর কারণ হচ্ছে- কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অসৎ উদ্দেশ্যে কাঁচা কিংবা রান্না
করা খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ এবং অন্যান্য অখাদ্য দ্রব্য ব্যবহার করছে। যেমন- কাঁচা মাছ, পাকা
ফল সতেজ রাখার জন্য ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। মুড়ি আরও সাদা এবং আকারে বড় করার জন্য ব্যবহার
করা হয় ইউরিয়া। ওজন বাড়ানোর জন্য চাল, ডাল, মশলা ও অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যে ইট, বালু, কাঠের গুঁড়া,
পাথরের মতো অখাদ্য উপাদান মিশ্রিত করা হয়। এছাড়াও খাদ্য বস্তুর বাহ্যিক আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য নানা
ধরনের ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করা হয়। যেমন-
ময়দায় সাদা ভাব আনার জন্য কৃত্রিম পাউডার ব্যবহার করা হয়।
রান্নার মশলায় কাঠ, বালি, ইটের গুঁড়া এবং বিষাক্ত গুঁড়া রং ব্যবহার করা হয়।
চা পাতায় কাঠের মিহি গুঁড়া মেশানো হয়।
ভাজার জন্য পামওয়েল, পশুর চর্বি কিংবা অন্য গলনশীল চর্বি ব্যবহার করা হয়।
মাখন, মেয়নেজ হিসাবে ব্যবহৃত হয় অপরিশোধিত সস্তা চর্বি।
মাংসের কিমারূপে গরু-ছাগলের অব্যবহৃত উচ্ছিষ্ট অংশ ব্যবহার করা হয়।
এভাবে চাল, ডাল, তেল, লবণ থেকে শুরু করে শাকসবজি, ফলমূল, শিশুখাদ্য সবকিছুতেই ভেজাল দেওয়া
হচ্ছে। ভেজাল মেশানো এসব খাবার স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এসব খাদ্য গ্রহণের ফলে ডায়রিয়া, বদ হজম, বমি,
কিডনি, লিভারের সমস্যা, ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধিসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে। ভেজাল খাদ্য
গ্রহণের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীর রোগাক্রান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে। চিকিৎসকগণ মনে করেন
ভেজাল মিশ্রিত খাবার এক ধরনের Slowpoison। কেননা প্রতিদিন আমরা নিজের অজান্তে বিভিন্ন ধরনের
ভেজাল মিশ্রিত খাবার গ্রহণ করছি। যা আমাদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলছে। এর ফলে বেড়ে যাচ্ছে
নতুন নতুন রোগ ও আক্রান্তের সংখ্যা। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।
প্রতিরোধ ও করণীয়
ভেজাল প্রতিরোধের জন্য আমাদের সকলকে সচেষ্ট হতে হবে।
সরকারের ভেজাল বিরোধী আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগে আমাদের সবাইকে সহযোগিতা
ভেজালের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে।
ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্বন্ধে সাধারণ মানুষকে অবগত করতে হবে।
ভেজাল বিরোধী প্রচারণা বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে সমাজের সকল স্তরের মানুষের এবং বিভিন্ন
প্রচার মাধ্যমের সহযোগিতা নিতে হবে।
সর্বোপরি খাদ্যদ্রব্য ক্রয় ও গ্রহণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আমরা যেসব খাদ্যদ্রব্য খাই তার মাত্র কয়েকটি যেমন- অধিকাংশ ফল, কিছুসংখ্যক সবজি, বাদাম, খেজুরের
রস ইত্যাদি বাদে বাকি সবগুলো সংগ্রহের পর কোনো না কোনোভাবে খাওয়ার উপযোগী করে প্রস্তুত করে।
নিতে হয়। প্রস্তুত প্রক্রিয়া দ্বারা খাদ্যদ্রব্যের স্বাদ ও পুষ্টিমান প্রভাবিত হয়।
কাঁচা খাদ্যদ্রব্য থেকে ভোজ্য দ্রব্য তৈরিতে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। ধাপের সংখ্যা নির্ভর করে
সংশ্লিষ্ট খাদ্যের ভৌত অবস্থা, রাসায়নিক গঠন এবং ভোজ্য দ্রব্যের চাহিদার উপর।
করতে হবে।
পরিবারের জন্য খাদ্য নির্বাচন, ক্রয় ও প্রস্তুতে সতর্কতা
খাদ্যের কাঁচামাল থেকে ভোজ্য দ্রব্য তৈরি করতে সাধারণত যে ধাপগুলো অতিক্রম করতে হয় সেগুলো হলো-
খাদ্যদ্রব্য পরিষ্কার করা বা ধোয়া।
• গুঁড়া করা।
বর্জনীয় অংশ অপসারণ।
রান্না করা।
যথাযথ আকার ও আকৃতিতে টুকরা করা।
শাকসবজি ও মাছ, মাংস আমাদের দেহে পুষ্টি উপাদান সরবরাহের অন্যতম উৎস। আলু, মুলা, বীট, গাজর,
বাঁধাকপি, পালংশাক, লালশাক, কলমিশাক ইত্যাদি শাকসবজি আমাদের দৈনন্দিন আহারের অপরিহার্য
উপকরণ। শাকসবজির পাশাপাশি মাছ, মাংস ইত্যাদি প্রোটিন জাতীয় খাদ্য উপাদানের অন্যতম উৎস হিসাবে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শাকসবজি, মাছ, মাংস থেকে আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও প্রোটিন পেয়ে থাকি।
খাদ্যদ্রব্য থেকে ভোজ্য দ্রব্য তৈরির সময় ধোয়া, কাটা কিংবা প্রস্তুত করণের ত্রুটির জন্য কাম্য পুষ্টি উপাদান
প্রাপ্তি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
শাকসবজি, মাছ, মাংস পুষ্টিসম্মত উপায়ে কাটা ও ধোয়ার লক্ষণীয় বিষয়গুলো হচ্ছে-
-সবরকম শাকসবজি ও ফল কাটার আগেই পানি দিয়ে ধোয়া।
-পাতা সবজি যেমন- লালশাক, পালংশাক ইত্যাদির মাটি যুক্ত শিকড়ের অংশ ফেলে পাতাগুলো ধুয়ে নিয়ে
পরে কাটতে হয়।
খোসাযুক্ত সবজিগুলো যথাসম্ভব খোসাসহ বড় বড় টুকরা করে কাটতে হয়। কেননা খোসার ঠিক নিচেই
থাকে ভিটামিন সি।
-শাকসবজি কাটার পর পানিতে ভিজিয়ে রাখা উচিত নয়। এতে পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন বি ও ভিটামিন
সি-এর অপচয় হয়।
-শাকসবজি কেটে ফেলে রাখলে বাতাসের সংস্পর্শে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। তাই রান্না করার কিছুক্ষণ আগেই
কাটার কাজ সেরে নেওয়া ভালো।
-মাছ-মাংস দ্রুত পচনশীল খাদ্য দ্রব্য। তাই ক্রয় করার পরপরই অখণ্ড অবস্থায় প্রথমে ধুয়ে নিলে
ধুলা-বালিসহ অনেক ময়লা দূর হয়।
-মাছ-মাংসের বর্জনীয় অংশ বাদ দিয়ে সঠিক নিয়মে কেটে নিতে হয়।
-মাছ-মাংস কাটার পর পরিষ্কার করে পানিতে ভিজিয়ে রাখা উচিত নয়, এতে পুষ্টিমান নষ্ট হয়।
কাটা ও ধোয়ার পর অল্পসময়ের ব্যবধানে রান্নার কাজটি সম্পন্ন করতে হয়।
নানাবিধ প্রক্রিয়ায় খাদ্যকে জীবাণুমুক্ত করা, পরিপাক ও শোষণযোগ্য করা, ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষার জন্য
যে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি খাদ্যশিল্পে প্রয়োগ করা হয় তাকে প্রক্রিয়াজাতকরণ বলে।
খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মূল উদ্দেশ্য হলো-
১. খাদ্যকে ব্যবহার উপযোগী করা
২. পুষ্টিমূল্য বৃদ্ধি করা
৩. যাদ বৃদ্ধি করা
৪. অণুজীবের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা
৫. এক মৌসুমের খাবার অন্য মৌসুমে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা
৬. নতুন ধরনের খাবার তৈরি করা
প্রক্রিয়াজাতকরণের পদ্ধতি-
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কিছু প্রধান পদ্ধতি যা বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে
সেগুলো হলো-
-Heating/ তাপপ্রয়োগ
-Cooling / Freezing/ Chilling/ শীতলীকরণ, ঘনত্ব বৃদ্ধি ও বাষ্পায়ন
-Fermentation/ গাঁজন
-Irradiation/ তেজস্ক্রিয়তা
-Microwave-এর ব্যবহার
ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি
১) পাত্র নির্বাচন প্রথমে সংরক্ষণের উদ্দেশ্য অনুযায়ী পাত্র নির্বাচন করতে হবে। পাত্রটিকে তার ধর্ম
অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে।
২) খাদ্য নির্বাচন- ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রথমেই পরিপক্ক, তাজা, নিখুঁত ও উচ্চমানের ফল
বা সবজি সংগ্রহ করা হয়। এরপর আকার, আকৃতি, রং, পরিপক্কতা ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখে
grading করা হয়।
৩) ধোয়া— এই ধাপে প্রধানত নির্বাচিত খাদ্য পানিতে ডুবিয়ে বা ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। এর ফলে ফল বা
সবজিতে লেগে থাকা ধুলা-বালি, ময়লা, জীবাণু অপসারিত হয়।
৪) খোসা ছাড়ানো বেশিরভাগ ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণের আগে খোসা ছাড়ানো হয়। এ উদ্দেশ্যে
গরম পানিতে ১-২ মিনিট ডুবিয়ে রাখা হয়।
৫) কাটা— খোসা ছাড়ানোর পর ফল বা সবজিকে পছন্দমতো ও সুবিধামতো সমান আকারে কেটে নেওয়া হয়।
ভাপ দেওয়া কাটারপর ফল বা সবজিকে ফুটন্ত পানিতে ৫-১০ মিনিট ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করা হয়। এ প্রক্রিয়াকে
Blanching বলে। এর ফলে খাবারে উপস্থিত enzyme ধ্বংস হয়, খাবারের গন্ধ দূর হয়।
৭) লবণ পানি বা সিরাপ ঢালা ফলের সাথে ১৭৫০-১৮০° ফা. তাপমাত্রায় উত্তপ্ত চিনির সিরাপ এবং
সবজির সাথে একই তাপমাত্রায় উত্তপ্ত লবণ প্রবণ দিয়ে can বা বোতল পূর্ণ করা হয়।
৮) বায়ুশূন্যকরণ পারে যে বায়ু থাকবে সেটাকে ভিতর থেকে বিশেষভাবে বের করে নিতে হবে। পাত্রের
ঢাকনা আলগা করে দিয়ে ফুটন্ত পানিতে পাত্রের অংশ ডুবিয়ে উত্তাপ দিলে জলীয়বাষ্পের ঊর্ধ্বগতিতে
পাত্রের ভিতরের বাতাস বের হয়ে যায়, ৮০° সে. হলে বাতাস সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে আসে।
১) ঢাকনা লাগানো বায়ুশূন্যকরণের পর মেশিনের সাহায্যে হাত না লাগিয়ে পাত্রোর মুখ সম্পূর্ণ বায়ু
নিরোধকভাবে বন্ধ করতে হবে।
১০) নির্বাজনকরণ- বন্ধ টিনের কৌটাকে sterilizer এর মধ্যে স্টিমের সাহায্যে ৩০-৪০ মিনিট ধরে তাপ
দেওয়া হয়। ফলের ক্ষেত্রে ১০০°সে. ও সবজির ক্ষেত্রে ১১৬° সে. তাপমাত্রার প্রয়োজন। তাপ দেওয়া
শেষ হলে সাথে সাথে পানিতে ডুবিয়ে ঠাণ্ডা করা হয়।
১১) মোছা যাভাবিক তাপমাত্রায় এলে শুকনা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিতে হবে। যদি
পাত্রের গায়ে পানি থাকে তবে মরিচা ধরার সম্ভাবনা থাকে।
(১২) লেবেল লাগানো ও গুদামজাতকরণ— লেবেলে যাবতীয় প্রয়োজনাদি লেখা থাকে। যেমন- খাদ্যের নাম,
পরিমাণ, উপকরণ, সংরক্ষণের তারিখ ও মেয়াদকাল ইত্যাদি লেবেল লাগানোর পর পাত্রগুলোকে উপযুক্ত
পরিবেশে গুদামজাত করতে হয়।
পাত্র নির্বাচন খাদ্য নির্বাচন ধোয়া → খোসা ছাড়ানো কাটা ভাপ দেওয়া
লবণ পানি বা সিরাপ ঢালা → বায়ুশূন্যকরণ ঢাকনা লাগানো নির্বীজন করণ মোছা
→ লেবেল লাগানো গুদামজাতকরণ
ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণের ধাপ
এছাড়াও গৃহে আমরা রান্নাকরা খাবার এবং নিখুঁত, দাগমুক্ত ফল বা সবজি ০° সে. থেকে ৫° সে. তাপমাত্রায়
ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারি। মাছ, মাংস, সবজি, ফল ইত্যাদি পচনশীল খাদ্য ডিপফ্রিজের বরফ চেম্বারে - ১৮০
স. থেকে ৪০° সে. হিম ঠাণ্ডায় জমিয়ে ৬/৭ মাস পর্যন্ত রাখা যায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সবজি ও ফলমূল
হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য সংগ্রহ করতে হবে। অণুজীব ও এনজাইম নিষ্ক্রিয় করার জন্য খাদ্যকে ফুটন্ত পানিতে
(৮০° সে. ঊর্ধ্বে) ভাপে ২-৩ মিনিট তাপ দিয়ে নিতে হয়। তারপর গরম পানি থেকে সাথে সাথে হিমশীতল
পানিতে ডোবাতে হবে। তারপর সবজিটি (যেমন- ফুলকপি/টমেটো/মটরশুটি) ঠাণ্ডা করে সম্পূর্ণরূপে পানি ঝরিয়ে
পলিথিন ব্যাগে বাতাস বৃদ্ধ করে জমাটভাবে বরফের চেম্বারে রাখতে হবে। এভাবে প্রায় ৫/৬ মাস রাখা যায়।
এতে রং, বর্ণ, গন্ধ নষ্ট হয় না। গৃহে এভাবে সংরক্ষিত খাদ্য যথাসম্ভব ছোট ছোট প্যাকেটে রাখাই ভালো।
এতে একবার যে প্যাকেট খোলা হবে তা সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার হয়ে যায়। তা না হলে বরফে সংরক্ষিত খাবারটির
অতিরিক্ত অংশ বাতাসের সংস্পর্শে এসে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কাজ ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতির ধাপগুলো লেখ।
অনুশীলনী
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১. মাছের পচনশীলতা রোধে ব্যবহৃত ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান কোনটি?
ক. মবিল
খ. কার্বাইড
গ. হাইড্রোজ
ঘ. ফরমালিন
২. নিচের কোন সবজিটি রান্না না করেই খাওয়া যায়?
ক. আলু
গ. বরবটি
খ. গাজর
ঘ. বেগুন
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও
তাসনিমের জন্মদিন উপলক্ষে তার মা তাসনিমের কিছু বান্ধবী ও আত্মীয় যজনকে দাওয়াত করলেন।
অতিথির সংখ্যা বেশি হওয়ায় তিনি বসার ঘর ও খাবার ঘরে টেবিলে সব খাবার সাজিয়ে দিলেন।
অতিথিরা নিজেদের পছন্দমতো খাবার নিয়ে কেউ সোফায় কেউবা চেয়ারে বা খাটে বসে খেয়ে নিল।
৩. তাসনিমের মা খাদ্য পরিবেশনের কোন পদ্ধতিটি ব্যবহার করলেন?
ক. বুফে
খ. প্যাকেট
গ. টেবিল
ঘ. পাস-অন
৪. ব্যবহৃত পরিবেশন পদ্ধতিটির সুবিধা হলো-
i. আপ্যায়নকারীর দরকার নেই
ii. অল্প জায়গায় অনেকে খেতে পারে
iii. অল্প খাবারেও আপ্যায়ন করা যায়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
গ. i ও iii
ঘ. i, ii ও iii
সৃজনশীল প্রশ্ন
১. ঝুমুর পরবর্তী সময়ে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে শীতের কিছু সবজি কিনে আনল। কিন্তু ফ্রিজে সবজিগুলো
তুলে রাখার আগে ফুটন্ত পানিতে অল্প কয়েক মিনিট সিদ্ধ করে নিল। খাবারের জন্য শাক রান্নার সময়
ছোট ছোট টুকরা করে কেটে অনেকক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে নিল। হাতের কিছু কাজ শেষ করে সব শেষে
শাকগুলো রান্না করল।
ক. চা পাতায় কোন ভেজাল দ্রব্য ব্যবহার করা হয়?
খ. খাদ্যের Slowpoison বলতে কী বোঝায়?
গ. কুমুর সবজিগুলো ফুটানো পানিতে সিদ্ধ করল কেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. কুমুরের শাক রান্নার পদ্ধতিটি কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত? বিশ্লেষণ কর।
২. দীপা লক্ষ করল ইদানীং সে বাজার থেকে যে মাছ, মাংস ও সবজি কিনে আনে তা সংরক্ষণ করতে দেরি
হলেও নষ্ট হয় না এবং অনেকক্ষণ সতেজও থাকে। এতে দীপা বেশ খুশিই হয়। বিষয়টি নিয়ে সে স্বামীর
সাথে আলাপ করলে তিনি বললেন এ ধরনের খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। বিষয়টি
নীপাকে উদ্বিগ্ন করে।
ক. পিকনিকে কোন ধরনের পরিবেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়?
খ. খাদ্য পরিবেশন সুষ্ঠু হওয়া প্রয়োজন কেন?
গ. দীপার কিনে আনা জিনিসগুলো সতেজ থাকার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দীপার স্বামীর এরূপ মন্তব্য কতটুকু যথার্থ? বিশ্লেষণ কর।
খাদ্য রান্না করা “ভোজ্য দ্রব্য" তৈরির শেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য পর্যায়। খাদ্য রান্নার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে— খাদ্যকে গ্রহণ উপযোগী, সুস্বাদু, সুগন্ধময় ও আকর্ষণীয় করে তোলা। রান্না খাদ্যকে সহজপাচ্য ও পরিপাক উপযোগী করে। এ ছাড়াও খাদ্য দ্রব্যের অনেক ক্ষতিকর রোগজীবাণু রান্নার মাধ্যমে ধ্বংস করা যায়।
আদিম যুগের মানুষ কাঁচা অবস্থায় খাবার গ্রহণ করত। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষ আগুন জ্বালাতে শেখার পাশাপাশি রান্নার কৌশলও আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়। রান্নার প্রচলন বহু যুগ আগেই শুরু হয়েছে। রান্নার উদ্দেশ্যই হচ্ছে খাদ্য কর্তৃকে সহজপাচ্য করে দেহের কাজে লাগাবার উপযোগী করা এবং সেই সঙ্গে সুস্বাদু ও জীবাণুমুক্ত করা। রান্না বলতে খাদ্য বেছে, ধুয়ে, কেটে বা অন্য কৌশলে তৈরি করে চুলায় চাপানোকে বোঝায় । ভোজ্য দ্রব্য প্রস্তুতে রন্ধন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমেই খাদ্যের যাদ, বর্ণ, গন্ধ ইত্যাদি উন্নত হয়। বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে খাদ্য রান্না করা হয়। খাবার রান্নার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পূর্বে রান্নার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানা আবশ্যক ।
রান্না করার প্রয়োজনীয়তাগুলো হচ্ছে-
অধিকাংশ খাবারই মানুষের পক্ষে গ্রহণ উপযোগী থাকে না। রান্না করা খাবার নরম হওয়ার কারণে সহজে চিবানো ও গলাধঃকরণ করা যায়। এতে হজম দ্রুত হয়। রান্নার ফলে খাদ্যের যে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে তা পরোক্ষভাবে পরিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে। মাংস সিদ্ধ করা হলে তাপ ও পানির সংস্পর্শে মাংসের সংযোজক কলার কোলাজেন জিলেটিনে
পরিনত হয়ে সহজপাচ্য হয়ে উঠে। মূলত রান্নার ফলে খাদ্যবস্তুতে উপস্থিত উপাদনসমূহ দেহের
কাজের উপযোগী হয়ে উঠে।
তেল, মশলা, পেঁয়াজ প্রভৃতি রান্নায় ব্যবহৃত উপকরণ - খাদ্যবস্তুর বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ বৃদ্ধি করে খাদ্যকে আকর্ষণীয় করে। শস্যদানা ও সবজির শ্বেতসার কণা পানি ও উত্তাপে ফেটে যায় এবং ডেক্সট্রিন মলটজে পরিণত হয় যার স্বাদ মিষ্টি। ভাজা, সেঁকা, ক্যারামেল করা প্রভৃতি রান্না পদ্ধতির মাধ্যমে খাদ্যের যাদ বৃদ্ধি পায়।
ভোজ্যদ্রব্যের আকর্ষণ যেসব বিষয়ের উপর নির্ভর করে অনুধ্যে বুনট (Texture) উল্লেখযোগ্য। বুনট দ্বারা রান্না করা খাদ্যের অবয়বিক অবস্থা বোঝানো হয়; অর্থাৎ এটি মোলায়েম, শক্ত বা খসখসে কিনা। যেমন- কেক, পুডিং, পিঠা ইত্যাদি। রান্নার মাধ্যমে খাদ্যে তাপ প্রয়োগ করা হয়। বলে খাদ্যস্থিত রোগ-জীবাণু ধ্বংস হয়। এর ফলে খাদ্য জীবাণুমুক্ত হয় এবং দেহকে খাদ্যের বিষক্রিয়া এবং ক্ষতিকর পদার্থ থেকে রক্ষা করে।
রান্নার মাধ্যমে পচনশীল খাদ্যদ্রব্যে তাপ প্রয়োগ করা হয়। ৪৫°সে. ৬০° সে. তাপমাত্রায় বেশিরভাগ খাদ্যের জীবাণু ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ফলে খাদ্যবস্তু রেখে খাওয়া যায় অর্থাৎ রন্ধন পদ্ধতি পরোক্ষভাবে খাদ্য সংরক্ষণেও সহায়তা করে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, রান্নায় খাদ্যের স্বাভাবিক রং, গন্ধ, সংরক্ষণ করা হলে পুষ্টিমূল্যেরও অপচয় কম হয়।
রান্নার মাধ্যমে একই ধরনের খাদ্য উপকরণ দিয়ে একাধিক ভোজ্যদ্রব্য তৈরি করা যায়। এর ফলে ভোজ্য দ্রব্যে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করা যায়।
• প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে আবিষ্কৃত হয়েছে রন্ধনের নানা ধরনের পদ্ধতি। খাদ্যবস্তুটি কীভাবে খাওয়া হবে তার উপর নির্ভর করে রান্নার কোন পদ্ধতিটি অনুসরণ করা হবে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষ যে কারণে রান্নার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল আজও মানুষ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে ঠিক সেই কারণেই রান্না করে থাকে।
রান্নার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তবে রান্নার মাধ্যমে যাতে কোনোভাবেই খাদ্যের পুষ্টিমূল্যের অপচয় না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।
সামাজিক ও ব্যবহারিক জীবনের সুদীর্ঘ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজ আমরা বেশিরভাগ খাদ্যই রান্না করে খেতে
অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। রান্না মূলত একটা রাসায়নিক প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে কাঁচা খাদ্যদ্রব্যে তাপ প্রয়োগ করে
খাদ্য দ্রব্যের ভৌত অবস্থার রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটানো হয়।
প্রচলিত খাবারগুলো কয়েকটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়। রান্নার উষ্ণতা, পানি, বাষ্প,
তেল ও সময়ের ব্যবহারের তারতম্যের কারণেই বিভিন্ন পদ্ধতির রান্না বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে।
কেবলমাত্র সিদ্ধ বা কেবলমাত্র ভাজা খাবার মানুষের তৃপ্তি মেটাতে পারে না মানুষ চায় বৈচিত্র্য। একারণেই
আদিম যুগে মানুষ কেবল পুড়িয়ে খাবার খেলেও বর্তমান সভ্যযুগে রান্নার অনেক কৌশলের উদ্ভব হয়েছে।
রান্না করাকে সহজ ও দ্রুত করার জন্য মানুষ নানারকম প্রক্রিয়া বা রখন কৌশল ব্যবহার করতে শিখেছে।
রান্নার প্রচলিত পদ্ধতিগুলো হচ্ছে-
ক) অধিক তাপে ফুটানো বা সিদ্ধ – এই পদ্ধতিতে ১০০° সে. বা ২১২° ফা, উত্তাপে বেশি পানিতে খাবার
সিদ্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে সিদ্ধ করা পানি ফেলে দিলে পুষ্টির অপচয় হয়। ভাত, ডাল, সুপ, মাংস
ইত্যাদি এ পদ্ধতিতে রান্না করা হয়।
মৃদু তাপে সিদ্ধ – এই পদ্ধতিতে অল্প পানিতে অল্প তাপে ধীরে ধীরে বেশিক্ষণ ধরে খাবার ঢেকে রান্না
করা হয়। ফলে খাবার সুসিদ্ধ হয়। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, শাকসবজি, কাস্টার্ড, ফিরনি ইত্যাদি এ
পদ্ধতিতে রান্না করা হয়। এক্ষেত্রে তাপমাত্রার পরিমাণ ৮২° সে. থেকে ১০০° সে. পর্যন্ত হয়ে থাকে।
খাবারের পুষ্টিমান রক্ষায় এ পদ্ধতিটি অধিকতর কার্যকর।
গ) ভাপে সিদ্ধ করা এই পদ্ধতিতে খাদ্যবস্তুকে সরাসরি পানিতে না দিয়ে উত্তপ্ত পানির বাষ্পের সাহায্যে
সিদ্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে বড় পাত্রে পানি ফুটানোর সময় পাত্রের উপর একটা ছিদ্রযুক্ত কাঁঝড়ি বা তারজালি,
বাঁশের ঝাঁকা কিংবা কাপড় রেখে তার উপর খাবার ঢেকে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ১০০°সে. থেকে ১১২°সে.
পর্যন্ত তাপ ব্যবহার করা হলেও বাতাসের সংস্পর্শে না আসায় খাবারের পুষ্টির কোনো অপচয় হয় না।
পুডিং, ভাপা পিঠা, ভাপে ইলিশ, প্রেসার কুকারে মাংস সিদ্ধ ইত্যাদি এ পদ্ধতিতে রান্না করা হয় ।
ভাজা – ভাজা বলতে প্রায় ৩০০° সে. তাপে তেলে ডুবিয়ে খাবার রান্না করা বোঝায়। এ পদ্ধতিতে কম
তেলে বা বেশি তেলে খাবার ভেজে রান্না করা হয়। ডুবো তেলে ভাজলে খাবার বাতাসের সংস্পর্শে কম
আসে এবং দ্রুত ভাজা হয়। কোনো কোনো খাবার দীর্ঘসময় অল্প তাপে ডুবো তেলে ভেজে মচমচে করা
হয়। যেমন: চিপস, সিঙ্গারা, পেঁয়াজি, নিমকি ইত্যাদি। এতে খাবারের ক্যালরি মান বেড়ে যায়। সবজি
ভাজি, মাছ ভাজি, ডিমের ওমলেট ইত্যাদি আমরা অল্প তেলে ভাজি। এক্ষেত্রে খাবার ঢেকে ধীরে ধীরে
ভাজা হয়। এতে করে তেল বেশি পোড়ে না। খাবারের পুষ্টি কিছু রক্ষা হয়। ঢাকনা ছাড়া অল্প তেলে
খাবার ভাজি করলে চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন তেলে দ্রবীভূত হয়ে বাষ্পাকারে উড়ে যায়। এতে
পুষ্টিমূল্যের অপচয় হয়।
পোড়ানো বা বলসানো – এই পদ্ধতিতে আলু, বেগুন, মিষ্টি আলু, ভুট্টা ইত্যাদি খাবার সরাসরি আগুনে
পুড়িয়ে নেওয়া হয়। শিক কাবাব, বোটি কাবাব, তন্দুরী, মুরগির রোস্ট ইত্যাদি খাবারও এই পদ্ধতিতে
করা হয়। এভাবে খাবার রান্না করলে খাদ্যের পুষ্টিমূল্য বাতাসের সংস্পর্শে ও উত্তাপে অনেকটা নষ্ট
হয়।
চ) সেঁকা বা টালা খাবার সরাসরি গরম পাত্রে দিয়ে জলমুক্ত করা বা শুকিয়ে নেওয়ার পদ্ধতিই হলো সেঁকা
-
বা টালা। এই পদ্ধতিতে তেল বা পানি কোনো তরল পদার্থই ব্যবহার করা হয় না। খাদ্যস্থিত পানি
বাষ্পীভূত হয়ে যেটুকু উষ্ণতা ও সময় দরকার হয় তা দিয়েই রান্না সম্পন্ন হয়। এই পদ্ধতিতে গরম
বালিতে থৈ, মুড়ি, বাদাম টালা হয়। চিংড়ি, ছোট মাছ শুকনা কড়াইতে টেলে ভর্তা করা হয়।
ধনে-জিরা, শুঁটকি গরম খোলায় টালা হয়। গরম তাওয়ায় রুটি সেঁকা হয়।
বেকিং – এই পদ্ধতিতে ওভেন এবং বড় চুলায় (তন্দুর) বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর উপরে, নিচে এবং
-
চারদিকে সমানভাবে তাপ প্রয়োগ করা হয়। পাউরুটি, নানরুটি, কেক, বিস্কুট, মাছ, মুরগি ওভেনে
সম্পূর্ণরূপে বেক করে রান্না করা যায়। ওভেনে খাদ্য সামগ্রী অনুযায়ী তাপমাত্রা ও সময় নিয়ন্ত্রণের
ব্যবস্থা আছে।
মনে রাখা আবশ্যক যে রান্নার বিভিন্ন পদ্ধতি কেবলমাত্র রুখন শৈলীর বৈচিত্র্য নয় বরং খাদ্যের পুষ্টিমূল্য
বজায় রাখার বিজ্ঞানসম্মত কৌশলও বটে।
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার প্রস্তুতকরণ ও পরিবেশনের পূর্বশর্ত হচ্ছে রন্ধনকারীর ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বলতে একান্তভাবে তার নিজস্ব পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে নখ,
চুল, দাঁতের পরিচ্ছন্নতা থেকে পরিধেয় বস্ত্র, ব্যক্তিগত সুস্থতা, কাজ করার সময় পরিচ্ছন্নতার প্রতি
সচেতনতা ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
রন্ধনকারী রান্নার সময় পরিচ্ছন্নতা ও সাবধানতা রক্ষায় যেসব উপায় অবলম্বন করবেন সেগুলো নিম্নরূপ :
-রান্নার কাজ শুরুর পূর্বে সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
-হাতের নখ বড় হলে তাতে ময়লা জমে। রান্নার সময় সেসব ময়লা খাবারের মাধ্যমে
খাদ্যগ্রহণকারীর শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই রুখনকারীর নথ যথাসম্ভব ছোট রাখতে হবে।
রান্নাঘরে নানা ধরনের কাজ করা হয়। কোনো ময়লা জিনিস ধরার পর অথবা হাত দিয়ে মাথা,
-শরীরের যে কোনো স্থান চুলকানোর পর কখনো সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে খাবার স্পর্শ করা ঠিক
নয়।
-হাতে যদি ঘা, চর্মরোগ থাকে তাহলে খুব সহজেই রোগজীবাণু খাদ্যে সংক্রমিত হয়। এ অবস্থায়
খাবার রান্না বা পরিবেশন করা উচিত নয়।
-রন্ধনকারীর চুল ভালোভাবে বেঁধে নিতে হয়। তা না হলে খাবারের উপর তা পড়তে পারে। আবার
চুল খোলা থাকলে কিংবা ফিতা ঝোলানো থাকলে আগুন লেগে যেতে পারে।
- রন্ধনকারীর পোশাক পরিচ্ছদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। যে পোশাকই হোক না কেন তা
যেন জীবাণুমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন হয়।
-পরিধেয় পোশাক যেন ঢিলে-ঢালা না হয়। এতে ওড়নায় কিংবা আঁচলে আগুন লেগে যেতে পারে।
-রান্না করার সময় বারবার হাত ধোয়া হয়। এই ধোয়া হাত মোছার জন্য একটা নির্দিষ্ট গামছা বা
তোয়ালে থাকা প্রয়োজন। তা না হলে পরিধেয় পোশাকে মুছলে পোশাক নোংরা হবে কিংবা
পোশাকের ময়লা খাবারে যাবে।
-যতটুকু সম্ভব রান্নাঘরে কিচেন এপ্রোন পরার অভ্যাস করা উচিত। এতে পরিধেয় পোশাক ভালো
থাকে এবং রান্না ঘরের নিরাপত্তা বজায় থাকে।
-রুনকারীর হাতে গ্লাভস ব্যবহার করাই ভালো।
কাজ- রন্ধনকারীর ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার উপায়গুলো লেখ।
রান্নাঘরে গৃহিনী বা রন্ধনকারীকে আগুন, কাটা বাছায় ধারালো যন্ত্রপাতি ও রান্নার বিভিন্ন ধাতব সাজসরঞ্জাম
নিয়ে কাজ করতে হয় । আমাদের দেশের রান্নাঘরগুলো তেমন প্রশস্ত হয় না। রান্নাঘরের অপরিসর আয়তনে
উত্তপ্ত পরিবেশে রান্নার ব্যস্ততায় অসতর্ক হওয়া মাত্র যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটা অসম্ভব নয়। রান্নাঘরে সাধারণত
যেসব দুর্ঘটনা ঘটে সেগুলো হচ্ছে- পুড়ে যাওয়া, কেটে যাওয়া, পিছলে যাওয়া ইত্যাদি।
পুড়ে যাওয়া-
সরাসরি জ্বলন্ত চুলা থেকে দাহ্য বস্তুতে আগুন লেগে পুড়ে যেতে পারে। শাড়ির আঁচল, ওড়না, চুলের ফিতায়
অসাবধানতাবশত আগুন লেগে তা শরীরে ছড়িয়ে পড়লে শরীর, হাত, মুখ পুড়ে যেতে পারে। রান্নার তেল:
ছিটকে হরহামেশাই পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এসব দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য যেসব সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত -
-রান্না করার সময় চুল, শাড়ির আঁচল, ওড়না আঁটসাঁট করে পরিপাটি করে নেওয়া উচিত।
-রান্নার পর চুলা সম্পূর্ণরূপে নিভিয়ে ফেলতে হবে। দিয়াশলাইয়ের কাঠি কখনো জ্বলন্ত অবস্থায়
ফেলা উচিত নয়।
-রান্নাঘরের গ্যাসের লাইন, ইলেকট্রিক লাইন ত্রুটিমুক্ত কিনা মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে নেওয়া
প্রয়োজন।
-গ্যাসের চুলায় আগুন ধরানোর পূর্বে রান্নাঘরের জানালা খুলে নিতে হয়। - তা না হলে গ্যাস
লিকেজে আগুন প্রজ্বলিত হয়ে রান্নাঘরে আগুন লেগে যাওয়ার ভয় থাকে। চুলা থেকে হাড়ি
নামানো বা নাড়ানোর জন্য গরম প্রতিরোধক কাপড়ের তৈরি মোটা প্যাড বা লোহার বেড়ি
ব্যবহার করতে হয় ।
-কখনো তেলের কড়াইয়ে উচ্চতাপ প্রয়োগ করতে নাই এতে আগুন লেগে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আগুন
লাগলে পানি না ঢেলে ঢেকে দিলে আগুন নিভে যায়। এক্ষেত্রে কখনোই পানি দেওয়া উচিত নয় ।
কর্তনজনিত দুর্ঘটনা – কারণ ও সাবধানতা
রান্নাঘরে আরও একটি সাধারণ দুর্ঘটনা হলো কেটে যাওয়া। কাটার কাজ করার সময় ছুরি, বটি দিয়ে হাত
কেটে যেতে পারে। যথাস্থানে দা-বটি না রাখা হলে অসতর্ক মুহূর্তে কেটে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটে।
অনেক সময় ভাঙা কাচের পাত্র, জং ধরা টিন, ভাঙা প্লাষ্টিকের ঢাকনা এলুমিনিয়াম বা অন্যান্য ভাঙা
হাঁড়ি-পাতিলের কোণা লেগে হাত কেটে যায়। যেখানে লাকড়ির চুলা ব্যবহার করা হয় সেখানে লাকড়ি কিংবা
তার কাঁটার খোঁচায় হাত কাটতে পারে।
এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের উপায় হচ্ছে-
কাটার সরঞ্জামগুলো কাজ শেষ করার পর নির্দিষ্ট স্থানে গুছিয়ে রাখতে হবে। অবশ্যই ছোট
ছেলেমেয়েদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
কাটার সরঞ্জামগুলোর ধার এমন হওয়া উচিত যাতে কাটার কাজে বেগ পেতে না হয়। এক্ষেত্রে
ছোট-বড় ভিন্ন ভিন্ন ধারালো ছুরি-বটির ব্যবস্থা থাকা দরকার।
• ত্রুটিপূর্ণ, ভাঙা হাঁড়ি-পাতিল ও কাটার সরঞ্জাম বাদ দিতে হবে।
কাচের জিনিস ভেঙে গেলে হাত দিয়ে নয় বরং ঝাড়ু দিয়ে ময়লার ট্রেতে তুলে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।
পিছলে পড়া
রান্নাঘরের মেঝেতে পানি, মাড়, তরকারির খোসা প্রভৃতি পড়ে থাকলে কাজের সময় অসাবধানতাবশত
পিছলিয়ে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে হাত, পা বা কোমরে চোট পাওয়া, মাথা ফাটা কিংবা
শরীরের যে কোনো অংশের হাড় ভাঙার মতো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এক্ষেত্রে সতর্কতামূলক বিষয়গুলো হচ্ছে-
রান্না ও কাটা বাছার কাজ শেষ করে অপ্রয়োজনীয়, উচ্ছিষ্ট অংশ সরিয়ে ফেলে স্থানটি পরিষ্কার
করে ফেলতে হবে।
ভাতের মাড়, তেল, ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত পানি মেঝেতে পড়ার সাথে সাথেই মুছে ফেলতে হবে।
রান্নাঘর সবসময় শুকনা রাখতে হবে।
রান্নায় ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি রান্নাঘরে ছড়িয়ে থাকলে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই
কাজ শেষে এগুলো গুছিয়ে ফেলতে হবে যাতে পায়ে বেঁধে না যায়।
রান্নঘর গুঁড়া সাবান, গরম পানি দিয়ে ঘষে নিলে রান্নাঘরের মেঝে পিচ্ছিল হয় না।
মনে রাখা উচিত গৃহিনী বা রন্ধনকারীর সতর্কতাই রান্নাঘরের দুর্ঘটনা প্রতিরোধের অন্যতম উপায়।
অনুশীলনী
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। অধিক তাপে ফুটিয়ে রান্নার তাপমাত্রা কত?
(ক) ১০০° সে
(খ) ২০০° সে
(11) 300°
(N) 800° 0
২। নিচের কোন খাবারটি মৃদুতাপে সিদ্ধ করে রান্না করা হয়।
(ক) ডাল
(গ) পিঁয়াজি
(গ) পায়েস
(খ) সুপ
নিচের উদ্দীপকটি মনোযোগ দিয়ে পড় এবং ৩৩৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও
কান্তা পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রায়ই বিকেল বেলা বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে চপ, মাছের কাটলেট
ইত্যাদি তৈরি করে। খাবারগুলো মুখোরোচক বলে সবাই খুব পছন্দ করে।
৩। কান্তা বিকেলের নাস্তা তৈরিতে রান্নার কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে।
(ক) মৃদুভাপে সিদ্ধ
(গ) বেকিং
(4) der
৪। কান্তার তৈরি খাবারগুলোতে আছে-
(i) ভিটামিন এ ও ডি
(II) ভিটামিন ই ও কে
(iii) ভিটামিন সি ও বি
নিচের কোনটি সঠিক?
(~) 1, iis iii
সৃজনশীল প্রশ্ন
১। পুষ্টিবিদ ড. আনোয়ারা একদিন সকালে তার মেয়ে শুভেচ্ছাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে গেলেন।
শুভেচ্ছা লক্ষ করল দোকানী রুটি তাওয়ায় না ভেজে বিশেষ ধরনের মাটির চুলার ভেতরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে
এবং একটু পর ফোলানো রুটি বের করে আনছে। শুভেচ্ছাকে তার মা বললেন এটা রান্নার একটা
পদ্ধতি। তিনি আরও বললেন খাদ্যকে দেহের গ্রহণ উপযোগী করার জন্যই রান্নার প্রয়োজন ।
মৃদুতাপে রান্নার তাপমাত্রা কত ?
রান্নার সময় ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বলতে কী বোঝায়?
(গ) রেস্টুরেন্টে যে পদ্ধতিতে রুটি তৈরি করা হলো তা ব্যাখ্যা কর।
(ঘ) খাদ্য রান্না সম্পর্কে ড. আনোয়ারার মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।
২। রান্না ঘরে চুলায় সমুচা ভাজার সময় তাড়াহুড়া করে তেলের কড়াই নামাতে গিয়ে গরম ভেল পড়ে রিমার
হাত পুড়ে যায়। মায়ের চিৎকার শুনে রিমার মেয়ে দৌড়ে রান্না ঘরে গেলে মেঝেতে রাখা বটি দিয়ে তার
পা কেটে যায়। রিমার স্বামী তাদের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।
(ক) রান্নার কাজ শুরু করার পূর্বে কী করতে হবে?
ক্যালরিবহুল খাদ্য রান্নার পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা কর।
(গ) কোন ধরনের সতর্কতার অভাবে রিমা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
(খ) রান্নার কাজে রিমার অসতর্কতা ভবিষ্যতে আরও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে- বিশ্লেষণ কর।