মি. মৃদুলের একটাই ছেলে । এখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে । শুরু থকেই মায়ের সাথে স্কুলে যায় । কত কিছু খাওয়ার বায়না । কেক, বার্গার, ফাস্টফুড, চকলেট, আইসক্রীম, কোমল পানীয় তার ভীষণ পছন্দের । বাবা অফিস থেকে ফিরতে মিষ্টি ও ফলমূল প্রায়সই নিয়ে আসেন । ছেলের ভাত-রুটি ও স্বাভাবিক খাদ্যের প্রতি আগ্রহ নেই বললেই চলে । ইদানিং দ্রুত মুটিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে বাবা-মা বিষয়টি ততটা আমলে নেননি । এখন একটু থেকে একটু হলেই ঠাণ্ডা, জ্বর, পেটের পীড়া লেগেই থাকে । বড় ডাক্তারের কাছে নেয়া হলে ডাক্তার সাহেব সব জেনে-শুনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যা বললেন তার অর্থ দাঁড়ায়, ছেলেকে আদর করে ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত যে খাদ্য খাওয়াচ্ছেন তা তার শরীরের বিভিন্ন কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে । হরমোনে নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। তাই ছেলেকে বাঁচাতে এ সকল অপখাদ্য খাওয়ানো বন্ধ করুন । মি. ও মিসেস মৃদুল ভাবছেন, তাদের দোষেই ছেলের আজ এ অবস্থা ।
প্রাণী, গাছপালাসহ সকলের জীবন ধারণের জন্যই খাদ্যের প্রয়োজন । মানুষ তার বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই খাদ্য গ্রহণ করে । এই খাদ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ স্বভাবজাত । তাই নানান ধরনের খাদ্য-দ্রব্য, ফলমূল, তরি- তরকারি এগুলো নিয়ে সারা বিশ্বে জমজমাট ব্যবসায়। খাদ্য ও খাদ্য জাতীয় সামগ্রী একটা পচনশীল বিষয় । ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণেও খাদ্য-দ্রব্য দ্রুত নষ্ট হয়। তাই ব্যাকটেরিয়া ও পচনশীলতা থেকে রক্ষায় এ ধরনের পণ্যে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও খাদ্যের রং, ঘ্রাণ, স্বাদ, সৌন্দর্য, ঘনত্ব ইত্যাদি বাড়াতেও এরূপ রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার লক্ষণীয় । একটা সীমিত পর্যায় পর্যন্ত এ সকল পণ্যে রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর বিষয়টি অনমোদিত হলেও এর সুবাদে সর্বত্রই ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের প্রতিযোগিতা চলছে । উন্নত দেশগুলোতে এগুলো নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের মত দেশে তা নেই । সেখানকার ক্রেতারা শিক্ষিত ও সচেতন হওয়ায় এর ব্যবহার সীমিত পর্যায়ে থাকছে । কিন্তু আমাদের দেশে ক্ষতিকারক রাসায়নিকের ব্যবহার মারাত্মক। আইন থাকলেও তার প্রয়োগের অভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে এর ব্যবহার করছে। ক্রেতাসাধারণ একদিকে অসচেতন ও অন্যদিকে অসহায়। কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছাড়াই খাদ্যদ্রব্য, মাছ, তরি-তরকারি, ফলমূলসহ সর্বত্রই ব্যাপকভাবে ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য; যেমন- নাইট্রেটস (Nitrates), সালফাইডস (Sulfdes), ফর্মালিন (Formalin), সালফার ডাইঅক্সাইড (Sulphur Dioxide), অ্যালজিনেট (Alginate) ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ফল পাকাতে ক্ষতিকারক কার্বাইড (Carbide) ব্যবহৃত হচ্ছে । খাদ্যকে আকর্ষণীয় রংযুক্ত করতে বিভিন্ন কালারিং এজেন্ট (Coloring agent) ব্যবহার করা হচ্ছে । এর ফলে বিভিন্ন বয়সের মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সামনে পড়ছে। কোষের ক্ষতি করায় কান্স্যারের ঝুঁকি বাড়ছে । পরিপাক তন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করায় কিডনি, লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে মারাত্মক রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। শরীরে মেদ ও চর্বি সৃষ্টি হওয়ায় হার্টের সমস্যা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। ব্লাডপ্রেসার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি মরণঘাতি রোগ ব্যাপকভাবে বাড়ছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যাওয়ায় নানান ধরনের রোগ সংক্রমন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মানুষকে রক্ষায় ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই ।
আরও দেখুন...