শিক্ষক ও সহপাঠীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে সমবেত গান/প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করো।
প্রিয় শিক্ষার্থী, যীশু এ পৃথিবীতে অবস্থানকালে অনেক শিক্ষা ও উপদেশ দিয়েছেন। তাঁর উপদেশের মূল উদ্দেশ্য হলো আমরা যেন ঈশ্বরের ভালোবাসা পেয়ে সুখী হতে পারি। এজন্য তিনি আমাদের অষ্টকল্যাণ বাণী বা আটটি সুখপন্থা দিয়েছেন। যীশুর দেয়া এ উপদেশ বাণী আমাদের কুপ্রবৃত্তি থেকে রক্ষা করে মানবিক গুণাবলি অর্জনে সাহায্য করে। এসো বাইবেল থেকে শিষ্যদের দেওয়া যীশুর উপদেশ বাণী শুনি।
খ্রীষ্টধর্মের মৌলিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ
যীশু অনেক লোক দেখে পাহাড়ের উপর উঠলেন। তিনি বসলে পর তাঁর শিষ্যেরা তাঁর কাছে আসলেন। তখন
তিনি শিষ্যদের এই বলে শিক্ষা দিতে লাগলেন :
“অন্তরে যারা নিজেদের গরিব মনে করে তারা ধন্য,
কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাদেরই।
যারা দুঃখ করে তারা ধন্য,
কারণ তারা সান্ত্বনা পাবে।
যাদের স্বভাব নম্র তারা ধন্য,
কারণ পৃথিবী তাদেরই হবে।
যারা মনে-প্রাণে ঈশ্বরের ইচ্ছামতো চলতে চায় তারা ধন্য,
কারণ তাদের সেই ইচ্ছা পূর্ণ হবে।
দয়ালু যারা তারা ধন্য,
কারণ তারা দয়া পাবে।
যাদের অন্তর খাঁটি তারা ধন্য,
কারণ তারা ঈশ্বরকে দেখতে পাবে।
লোকদের জীবনে শান্তি আনবার জন্য
যারা পরিশ্রম করে তারা ধন্য,
কারণ ঈশ্বর তাদের নিজের সন্তান বলে ডাকবেন।
ঈশ্বরের ইচ্ছামতো চলতে গিয়ে
যারা অত্যাচার সহ্য করে তারা ধন্য,
কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাদেরই।
“তোমরা ধন্য, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদের অপমান করে ও অত্যাচার করে এবং মিথ্যা করে তোমাদের নামে সব রকম মন্দ কথা বলে। তোমরা আনন্দ কোরো ও খুশি হোয়ো, কারণ স্বর্গে তোমাদের জন্য মহা পুরস্কার আছে। তোমাদের আগে যে নবীরা ছিলেন লোকে তাঁদেরও এইভাবে অত্যাচার করত। মথি ৫: ১-১২
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, ঈশ্বর আমাদের বিভিন্নভাবে আশীর্বাদ করেছেন যেন আমরা সুখী হতে পারি। লক্ষ কর, যীশু বলেছেন “অন্তরে যারা দীন”। যীশু বলতে চেয়েছেন যে সম্পূর্ণ নির্লোভ ও নিরাসক্ত অন্তরে থাকলে আমরা সুখী হবো। মানুষ ধনী বা দরিদ্র যা-ই হোক না কেন, সে যদি ধনসম্পদের মোহ থেকে মুক্ত হয়ে তার যা আছে তার সদ্ব্যবহার করে তবে ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেয়ে সুখী হবে।
“দুঃখ-শোকে কাতর যারা” : প্রভু যীশু এখানে সেই দুঃখ-শোকের কথা বলেছেন, যা ভক্তের অন্তরে জেগে উঠে নিজের বা পরের দুর্দশা-দুর্ভোগের জন্য, নিজের পাপ ও অযোগ্যতার জন্য, কিংবা জগতে যে-সব বড় অন্যায়-অধর্ম অবাধে চলে, তারই জন্য ।
“ধার্মিকতার জন্য ব্যাকুল যারা” অর্থাৎ যারা মনে-প্রাণে ধর্মিষ্ঠ হতে চায়, সবার জন্য যা ভালো তাই করতে চায়; যারা সবসময় ঈশ্বরের ইচ্ছামতোই চলতে চায়। যারা প্রতিনিয়ত প্রার্থনায় রত থাকে।
“অন্তরে যারা পবিত্র” : অর্থাৎ যারা যথাসাধ্য নিষ্পাপ হয়ে থাকার চেষ্টা করে, যাদের প্রতিটি অভিপ্রায়ে খাঁটি সততা থাকে, প্রতিটি কাজে অকপট সাধুতা থাকে।
যীশুর দেখানো আদর্শ নিজের জীবনে রূপায়িত করে আশপাশের মানুষকে সেই পুণ্য আদর্শে প্রভাবিত করাই যীশুর শিষ্য হিসেবে আমাদের কর্তব্য। প্রকৃত শিষ্যের ধার্মিক জীবন দেখে অন্য লোক এই কথা বুঝতে পারে যে, যীশুর পথ যথার্থ ধর্মের পথ এবং সে পথ যে প্রকৃত মঙ্গলের পথ, তা-ও সে অন্তরে অনুভব করে, আস্বাদন করে। যারা অন্যের জীবনে শান্তি আনার জন্য পরিশ্রম করে তারা ধন্য। এখানে শান্তি স্থাপনকারী মানুষদের ধন্য বলা হয়েছে কারণ তারা অন্যের সুখ-শান্তি চিন্তা করে ঈশ্বরের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠে।
বিচার-দিনের বিষয়ে দৃষ্টান্ত ও শিক্ষা
“মনুষ্যপুত্র সমস্ত স্বর্গদূতদের সঙ্গে নিয়ে যখন নিজের মহিমায় আসবেন তখন তিনি রাজা হিসাবে তাঁর সিংহাসনে মহিমার সঙ্গে বসবেন। সেই সময় সমস্ত জাতির লোকদের তাঁর সামনে একসঙ্গে জড়ো করা হবে। রাখাল যেমন ভেড়া আর ছাগল আলাদা করে তেমনি তিনি সব লোকদের দু'ভাগে আলাদা করবেন। তিনি নিজের ডান দিকে ভেড়াদের আর বাঁ দিকে ছাগলদের রাখবেন।
“এর পরে রাজা তাঁর ডান দিকের লোকদের বলবেন, “তোমরা যারা আমার পিতার আশীর্বাদ পেয়েছ, এস। জগতের আরম্ভে যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে তার অধিকারী হও। যখন আমার খিদে পেয়েছিল তখন তোমরা আমাকে খেতে দিয়েছিলে; যখন পিপাসা পেয়েছিল তখন জল দিয়েছিলে; যখন অতিথি হয়েছিলাম তখন আশ্রয় দিয়েছিলে; যখন খালি গায়ে ছিলাম তখন কাপড় পরিয়েছিলে; যখন অসুস্থ হয়েছিলাম তখন আমার দেখাশোনা করেছিলে; আর যখন আমি জেলখানায় বন্দী অবস্থায় ছিলাম তখন আমাকে দেখতে গিয়েছিলে।'
“তখন সেই ঈশ্বরভক্ত লোকেরা উত্তরে তাঁকে বলবে, ‘প্রভু, আপনার খিদে পেয়েছে দেখে কখন আপনাকে খেতে দিয়েছিলাম বা পিপাসা পেয়েছে দেখে জল দিয়েছিলাম? কখনই বা আপনাকে অতিথি হিসাবে আশ্ৰয় দিয়েছিলাম, কিংবা খালি গায়ে দেখে কাপড় পরিয়েছিলাম? আর কখনই বা আপনাকে অসুস্থ বা জেলখানায় আছেন জেনে আপনার কাছে গিয়েছিলাম?”
“এর উত্তরে রাজা তখন তাদের বলবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আমার এই ভাইদের মধ্যে সামান্য কোন একজনের জন্য যখন তা করেছিলে তখন আমারই জন্য তা করেছিলে।'
“পরে তিনি তাঁর বাঁ দিকের লোকদের বলবেন, ‘ওহে অভিশপ্ত লোকেরা, আমার কাছ থেকে তোমরা দূর হও। শয়তান এবং তার দূতদের জন্য যে চিরকালের আগুন প্রস্তুত করা হয়েছে তার মধ্যে যাও। যখন আমার খিদে পেয়েছিল তখন তোমরা আমাকে খেতে দাও নি; যখন পিপাসা পেয়েছিল তখন জল দাও নি; যখন অতিথি হয়েছিলাম তখন আশ্রয় দাও নি; যখন খালি গায়ে ছিলাম তখন আমাকে কাপড় পরাও নি; যখন অসুস্থ হয়েছিলাম এবং জেলখানায় বন্দী অবস্থায় ছিলাম তখন আমাকে দেখতে যাও নি।'
“তখন তাঁরা তাঁকে বলবে, ‘প্রভু, কখন আপনার খিদে বা পিপাসা পেয়েছে দেখে, কিংবা অতিথি হয়েছেন দেখে, কিংবা খালি গায়ে দেখে, কিংবা অসুস্থ বা জেলখানায় আছেন জেনে সাহায্য করিনি?”
“উত্তরে তিনি তাদের বলবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা যখন এই সামান্য লোকদের মধ্যে কোন একজনের জন্য তা কর নি তখন তা আমার জন্যই কর নি।”
তারপর যীশু বললেন, “এই লোকেরা অনন্ত শাস্তি পেতে যাবে, কিন্তু ঐ ঈশ্বরভক্ত লোকেরা অনন্ত জীবন ভোগ করতে যাবে।” মথি ২৫ : ৩১-৪৬
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
যীশু স্বর্গদূতদের নিয়ে আবার আসবেন। সেটি হবে তাঁর দ্বিতীয় আগমন। তিনি রাজা হিসেবে আসবেন। সমস্ত কর্তৃত্ব তাঁর হবে। যখন আসবেন তখন সব জাতির লোকদের তাঁর সামনে একত্র করা হবে। রাখাল যেমন মেষ ও ছাগ আলাদা করেন, সব লোকদের তিনি তেমন দু'ভাগ করবেন। ডান দিকে মেষদের রাখবেন। আর বাম দিকে ছাগদের রাখবেন। তারপর ডান দিকের লোকদের বলবেন, “তোমরা পিতার আশীর্বাদ পেয়েছো। তোমাদের জন্য যে জায়গা প্রস্তুত করা হয়েছে তার অধিকারী হও। কারণ আমার যখন খিদে পেয়েছিলো, তখন তোমরা আমাকে খেতে দিয়েছিলে। আমার যখন পিপাসা পেয়েছিলো, তখন তোমরা আমাকে জল দিয়েছিলে। আমি যখন অতিথি হয়েছিলাম, তখন তোমরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলে। আমার যখন পোষাক দরকার ছিলো, তখন তোমরা আমাকে পোষাক দিয়েছিলে। আমি যখন অসুস্থ হয়েছিলাম, তখন তোমরা আমার দেখাশোনা করেছিলে। আমি যখন জেলখানায় ছিলাম, তখন তোমরা আমাকে দেখতে গিয়েছিলে।”
তখন ডান দিকের সেই লোকেরা বলবে, “প্রভু, এ সমস্ত কাজ আমরা কখন করেছিলাম?” তখন যীশু বলবেন, “তোমরা যখন কোনো দূর্বল লোকের জন্য এ কাজগুলো করেছিলে, তখন আমারই প্রতি করেছিলে। আর যারা এ কাজগুলো করে নাই, তখন তারা আমারই প্রতি করে নাই। তাই তাদের জন্য রয়েছে অনন্ত দণ্ড। আর যারা করেছে তাদের জন্য রয়েছে অনন্ত জীবন।”
আরও দেখুন...