চিংড়ি একলিঙ্গ প্রাণী। যৌন জননের (Sexual reproduction) জন্য প্রাণিদেহে কয়েকটি বিশেষ অঙ্গ থাকে। এই অঙ্গ থেকে জননকোষ অর্থাৎ শুক্রানু অথবা ডিম্বাণু সৃষ্টি হয়। এদের প্রাথমিক জনন অঙ্গ বা পোনাড (Gomad) বলা হয়। জননকোষ প্রাথনিক জনন অঙ্গ থেকে সৃষ্টি হয়ে কয়েকটি নালীর মধ্য দিয়ে পরিশেষে ছিদ্র পথে বাইরে চলে আসে। এই নালীগুলোকে জনন নালী (Genital duct) ও ছিদ্রগুলো জনন ছি ( Gonopores) বলা হয়। এগুলোকে গৌণ জনন অঙ্গ (Secondary reproductive organ) বলা হয়। এই প্রাথমিক ও গৌণ জনন অঙ্গ দ্বারা সৃষ্ট জননতন্ত্রের সাহায্যে চিংড়ি জনন ক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে। এই অঙ্গতন্ত্রকে জননতন্ত্র (Reproductive system) বলা হয়।
চিত্র-১.১২: পুরুষ ও স্ত্রী চিংড়ির জনন অঙ্গ
চিংড়ির পুংজননতন্ত্র নিম্নলিখিত অঙ্গগুলো দ্বারা গঠিতঃ
ক) শুক্রাশয় (Testis): চিংড়ির দেহে একজোড়া নরম ও লম্বা শুক্রাশয় থাকে। শুক্রাশয় হৃদযন্ত্রের নিচে এবং যকৃত অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির ঠিক উপরে অবস্থান করে। শুক্রাশয়ের অগ্রভাগগুলো পরস্পর যুক্ত ও রেচনথলি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অঙ্গে অসংখ্য লবিউলস (Lobules) দেখা যায়। এ লবিউলের ভিতরে স্পার্মাটোসাইটস থেকে একটি করে স্পারর্মাটোজোয়া (Spermatozoa) তৈরি হয়। একটি পরিপক্ক শুক্রকীট (Sperm) দেখতে অনেকটা খোলা ছাতার মতো।
খ)শুক্রনালী ( Vasa deferentia): চিংড়িতে একজোড়া শুক্রনালী দেখা যায়। প্রতিটি শুক্রাশয়ের পশ্চাদপ্রান্ত থেকে একটি করে নালী বের হয়, একে শুক্রনালী বলে। শুক্রনালী প্রথমাংশ একসাথে কুন্ডলাকারে জড়িয়ে থাকে এবং এই অংশে যকৃত অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির উপরে অবস্থান করে এবং পরবর্তী অংশ বক্ষ প্রাচীরের মাধ্যমেই শুক্রকীট শুক্রাশয় থেকে পুংজনন ছিদ্রের দিকে অগ্রসর হয়।
গ) শুক্রথলি (Seminal vesicles): প্রতিটি শুক্রনালী পঞ্চমপদ উপাঙ্গের গোড়ায় এসে কিঞ্চিৎ স্ফীত হয়ে ক্লাব আকৃতির (Club shaped) থলিতে পরিনত হয়, এই থলিকে শুক্রথলি বলে। শুক্রথলিতে শুক্রকীটগুলো একত্রে দলবদ্ধভাবে অবস্থান করে। এগুলোকে স্পার্মাটোফোর (Spermatophore ) বলে।
ঘ) পুংজনন ছিদ্র (Male genital aperture): শুক্রথলি শুক্রনালীর মাধ্যমে পঞ্চম চলন উপাঙ্গের গোড়ায় অবস্থিত একটি ছিদ্র পথে উন্মুক্ত হয়। এই ছিদ্র পথকে পুংজনন ছিদ্র বলা হয়। পুংজনন ছিদ্রটি একটি ঢাকনা দ্বারা আবৃত থাকে। এই ছিদ্রপথে স্পার্মাটোফোর দেহের বাইরে চলে আসে।
চিংড়ির স্ত্রী জননতন্ত্র ডিম্বাশয়, ডিম্বনালী ও স্ত্রীজনন ছিদ্র এর সমন্বয়ে গঠিত।
ক) ডিম্বাশয় (Ovaries): চিংড়ির প্রধান জনন অঙ্গ ডিম্বাশয় হৃৎপিন্ডের নিচে ও যকৃত অগ্ন্যাশয়ের পিছনে উপরের দিকে অবস্থান করে এবং সম্মুখের দিকে রেনাল স্যাক বা রেচনথলি ও পশ্চাৎদিকে উদর খন্ডক পর্যন্ত বিস্তৃত। ডিম্বাশয় দুইটি সামনে ও পিছনের দিকে যুক্ত থাকে এবং মধ্যভাবে পরস্পর পৃথক হয়ে একটি ছোট ফাঁক সৃষ্টি করে। ডিম্বাশয়ের ভিতরেই ডিম্বাণুর সৃষ্টি হয়। ডিম্বাণুগুলো গোলাকার বিশেষ। পরিপক্ক ডিমে সাইটোপ্লাজমের কুসুমদানা ও মাঝখানে বড় নিউক্লিয়াস থাকে।
খ) ডিম্বানালী (Oviduets): পাতলা প্রাচীর দ্বারা ডিম্বনালী আবৃত থাকে। ডিম্বনালীর উৎপত্তি ডিম্বাশয়ের মধ্যভাগের বাহির অংশ থেকে হয়। এই নালীর প্রথম ভাগ অর্থাৎ উৎপত্তিস্থল স্ফীত হয় কিন্তু ক্রমশ সরু হয়ে বক্ষ প্রাচীর বরাবর অঙ্গীয় দেশে তৃতীয় চলনপদের দিকে অগ্রসর হয়ে কক্সার গোড়ায় অবস্থিত স্ত্রী জনন ছিদ্র পথে উন্মুক্ত হয়। ডিম্বাশয়ে উৎপন্ন ডিম্বানু ডিম্বনালীর মাধ্যেমে স্ত্রীজনন ছিদ্রের দিকে অগ্রসর হয়।
গ) স্ত্রীজনন ছিদ্র (Female genital apertures): ডিম্বনালী চিংড়ির তৃতীয় চলনপদের গোড়ার ভেতরের দিকে উঁচু স্থানে ছিদ্রপথে বাইরে উন্মুক্ত হয়। এই ছিদ্রকে স্ত্রীজনন ছিদ্র বলা হয়। স্ত্রীজনন ছিদ্র দিয়ে ডিম্বানু দেহের বাইরে নির্গত হয়।