জ্যামিতিক ড্রইং এক ধরনের রেখাভিত্তিক ড্রইং। বিভিন্ন প্রকার রেখা, বৃত্ত, বৃত্তচাপ, কোণ, ত্রিভূজ ও অন্যান্য জ্যামিতিক উপদানের সমন্বয়ে ও কাঙ্খিত মাগে বসিয়ে জ্যামিতিক ড্রইং অংকন করা হয়। রেখাভিত্তিক চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সরলরেখা, বক্ররেখা, সমান্তরাল রেখা, সব, সমকোণ, সুক্ষকোণ, স্বৰ্গকোণ, বিভিন্ন প্রকার ত্রিভুজ, চতুভূর্ণ এবং বৃত্ত ইত্যাদি।
বিভিন্ন কোণ সম্পর্কে বর্ণনা
মুইটি সরলরেখা একটা বিন্দুতে মিলিত হলে কোন উৎপন্ন হয়। কোণের পরিমান ও অবস্থার উপর ভিত্তি করে কোশের বিভিন্ন নামকরন করা হয়েছে। যেমন- সুক্ষ্মকোণ, স্থূলকোণ, সমকোণ, সরল কোণ, সম্পূরক কোপ, পূরক কোণ, সন্নিহিত কোণ, বিপ্রতীপ কোণ। চিত্রে বিভিন্ন প্রকার কোণ দেখানো হলো-
সুক্ষ্মকোণ (Acute Angle)
যে কোণ এক সমকোণ অপেক্ষা ছোট, তাকে সুক্ষ্মকোণ বলে।
স্থূলকোণ (Obtuse Angle)
যে কোন এক সমকোণ অপেক্ষা বড়ো কিছু দুই সমকোণ অপেক্ষা ছোট তাকে স্থূলকোণ বলে।
স্থূলকোণ অংকন প্ৰণালী
সম্পুরক কোণ (Angel)
দুইটি সন্নিহিত কোণের পরিমাণ ১৮০ ডিগ্রি হলে একটিকে অপরটির সম্পুরক কোণ বলে।
বিপ্ৰতীপ কোণ (Angel )
দুইটি সরলরেখা একটি বিন্দুতে ছেদ করলে চারটি কোণ উৎপন্ন হয়, বিপরীত দিকে অবস্থিত কোণকে বিপ্রতীপ কোণ বলে।
বিভিন্ন ত্রিভূজের বর্ণনা
তিনটি বাহু দ্বারা গঠিত সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রকে ত্রিভুজ বলা হয়।
পঠন অনুসারে ত্রিভুজের বিভিন্ন নামকরন করা হয়েছে। যেমন-
(১) সমবাহু ত্রিভুজঃ যে ত্রিভুজের তিনটি বাহু পরস্পর সমান, তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলে।
সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ: যে ত্রিভুজের দুইটি ৰাহু সমান, তাকে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ বলে।
সমকোণী ত্রিভুজঃ যে ত্রিভুজের একটি কোণ সমকোণ তাকে সমকোণী ত্রিভুজ বলে।
বিষমবাহু ত্রিভুজঃ যে ত্রিভুজের তিনটি বাল্ব অসমান তাকে বিষম বাহু ত্রিভুজ বলে।
সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ: যে ত্রিভুজের তিনটি কোণই সুক্ষ্মকোণ তাকে সুক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ বলে। সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ
স্থূলকোণী ত্রিভুজঃ যে ত্রিভুজের একটি কোণ স্থূলকোণ তাকে স্থূলকোণী ত্রিভুজ বলে।
২ আয়তক্ষেত্র (Rectangle)
যে চতুর্ভুজের বিপরীত বাহু পরস্পর সমান এবং কোণগুলো সমকোণ তাকে আয়তক্ষেত্র বলে।
অংকন পদ্ধতি ৬০ মিমি. সমান লম্বার AB ভূমি নিয়ে A ও B বিন্দুতে দুটি লম্বা দাগ টানতে হবে এবং A ও B বিন্দুকে কেন্দ্র করে লম্ব দুটি থেকে ৪০ মি.মি দূরত্ব ডিভাইডার কম্পাস দিয়ে কেটে নিলে C ও D দুটি কিছু পাওয়া যাবে। এখন, C ও D বিন্দু যোগ করলে ABCD একটি আয়তক্ষেত্র অংকিত হবে।
৩ রম্বস (Rhombos )
যে চতুর্ভুজের চারটি বাহু সমান কিন্তু কোনো কোণ সমকোণ নয় তাকে রম্বস বলে।
বিভিন্ন বহুভুজের সম্পৰ্কে বৰ্ণনা
চারের অধিক সরলরেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ ক্ষেত্ৰকে বহুভুজ বলে। বাহুর দৈর্ঘ্যের উপর ভিত্তি করে বহুভুজকে দুই ভাগে ভগ করা হয়। যেমন-
১. সুষম বহুভুজ (Regular Polygon )
২. বিষম বহুভুজ (Irregulur Polygon )
সুষম বহুভুজ (Regular Polygon )
যে বহুভুজের সব ৰাহু গুলো সমান তাকে সুষম বহুভূজ (Regular Ploygon )বলে। বাহুর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে বেশ কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন: পঞ্চভুজকে বড়ভুজ, সপ্তভুজ, অষ্টভুজ, নবভুজ, দশভুজ ইত্যাদি। এদেরকে ইংরেজিতে যথাক্রমে পেন্টাগন, হেক্সাপন, হেন্টাগন, অন্টাগন, ন্যানোগন, ডেকাগন বলে।
২. বিষম বহুভুজ (Irregulur Polygon )
যে বহুভুজের বাহুগুলো পরস্পর সমান নয় বা অসম তাকে বিষম বহুভুজ (Irregular Polygon) বলে। এরুপ বিষম বহুভুজের ক্ষেত্রে বহুভুজটিকে ত্রিভুজ এবং চতুর্ভুজে রূপান্তর করে আলাদা আলাদা ক্ষেত্রফল বের করা হয়। পরে ক্ষেত্রফলগুলো একত্রে যোগ করলে ৰহুভুজটির ক্ষেত্রফল পাওয়া যায় ।
১০. কৌণিক সেকশন
কৌণিক সেকশনকে সংক্ষেপে কৌণিক বলে।কৌণিক হলো কার্ড বা বক্ররেখা। একটি খাঁড়া বৃত্তীয় শঙ্কুকে (Right Circular Cone) &এর অক্ষ বরাবর বিভিন্ন অবস্থানে অঙ্গ দিয়ে কাটলে বিভিন্ন ধরনের কাটা অংশ বা কার্ড পাওয়া যায়। যেসন-বৃত্ত, উপবৃত্ত, পরাবৃত্ত ও অধিবৃত্ত।
১১. উপবৃত্ত(ELIIpse)
তির্যক তল (Oblique plane) দিয়ে শত্রুর একপাশে অবস্থিত শত্রু উৎপন্নকারী সকল রেখাকে (generators) কর্তন করলে যে কার্ড বা বক্ররেখা উৎপন্ন হয়, তাকে উপবৃত্ত বা Ellipse বলে।
উপজের প্রধান অংশসমূহ হচ্ছে-
(১) বৃহৎ অক্ষ (Major Axis),
(২) ক্ষুদ্র অক্ষ (Minor Axis), center
(৩) উপকেন্দ্র (Focl),
(8) কেন্দ্র (Center) এবং
(৫) নিয়ামক বা দিকাক্ষ (Directrix) |
উপবৃত্ত বা Ellipae অংকনের পদ্ধতি
Concentric Circle পদ্ধতিতে চিত্রের ন্যায় উপবৃত্ত অংকনের ধাপসমুহ: অংকন অধিবৃত্ত (Parabola):শঙ্কু উৎপন্নকারী রেখাদ্বয়ের কোনো একটির সাথে কর্তিত ভলকে সমান্তরালভাবে রেখে শত্রুর অক্ষ কর্তন করলে যে কার্ত উৎপন্ন হয় তাকে অধিবৃত্ত (Parabola) বলে।
স্কেল সম্পর্কে ধারনা
বস্তুর প্রকৃত আকার শীট অপেক্ষা বড়ো, ছোটো বা সমান হতে পারে। এরুপ ক্ষেত্রে বস্তুকে মানানসই উপস্থাপন করার সুবিধার্থে বস্তুর আকারের নির্দিষ্ট ছোট বা বড় অনুপাতে ড্রইং করা হয়। একে ফেল বলে। বস্তুর আকার বড়ো হলে ছোটো বা সংকুচিত স্কেলে ড্রইং করা হয়। অপর দিকে, বন্ধু খুব ছোটো হলে বড়ো বা বর্ধিত ফেলে ড্রইং করলে দেখতে বা পাঠ করতে সুবিধা হয়। আবার একের অধিক ড্রইং একটি মাত্র শীটে উপস্থাপন করলে মানানসই স্কেল বেছে নিতে হয়।
স্কেলের তালিকা
স্কেলের তালিকা তৈরিতে স্কেলের শ্রেণি বিন্যাসের উপর জোর দেয়া হয়। স্কেলের শ্রেণি বিন্যাস স্কেলের গঠনের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।
স্কেলের শ্রেণিবিন্যাস (Classification of Scale)
ক্ষেত্রের শ্রেণি বিন্যাস নিম্নরূপ -
(১) গ্রেইন ফেল,
(২) ডায়াগনাল স্কেল,
(৩) ভার্নিয়ার ফেল,
(৪) আইসোমেট্রিক স্কেল এবং
(৫) কর্ড স্কেল বা স্কেল অৰ কৰ্ড (Scale of chords)
বিভিন্ন প্রকার স্কেলের বিবরণী
১ প্লেইন স্কেল (Plain Scale)
গ্রেইন বা সাধারন স্কেলের লম্বা দিকের এক বা দুই প্রান্তদেশে ইঞ্চি বা সেন্টিমিটারে এবং তাদের ভগ্নাংশ দ্বারা অংকিত হয়।
উদাহরণ : মিটার ও ডেসিমিটার পাঠ করার জন্য ১/৫০ আর, এফ-এর একটি প্লেন স্কেল তৈরি কর এবং এই ক্ষেপে ৫ মিটার ৪ ডেসিমিটার পাঠ দেখাও।
আট মিটার পাঠ নেয়া যায় এমন একটি প্লেইন স্কেল তৈরি করতে হবে যার স্কেল দৈর্ঘ্য হবে ১৬ সেমি. । সুতরাং ১৬ সেমি. লম্বা একটি সরলরেখা নিয়ে তাকে সমান ৮ ভাগে ভাগ করতে হবে এবং এর বামের একটি ঘরকে সমান ১০ ভাগে ভাগ করতে হবে।
২. ডায়াগনাল স্কেল (Diaganal Scale)
সুক্ষ্মমাশ নেওয়ার কাজে ডায়াপনাল স্কেল ব্যবহার করা হয় । এই ক্ষেত্রে একক ইঞ্চি বা অন্য একককে হরাইজোনটাল এবং ভার্টিক্যাল দিক বরাবর ১০ বা ৮ ভাগে উভয় প্রান্তে ভাগ করা থাকে। হরাইজোনটাল দিকে নিচের ১ম বিন্দুর সাথে উপরের ২য় বিন্দু কোণাকুনি যোগ করা যায়। এভাবে ক্রমান্ময়ে ১০ টি বিন্দু যোগ করা হয়। এখন, ভার্টিক্যাল দিকের বিন্দুগুলো থেকে সমান্তরাল লাইন টানলে একটি ভায়াপনাল স্কেল তৈরি হবে।
উদাহরন
১। মিটার, ডেসিমিটার এবং সেমি, এর মাপ নেওয়া যায় এমন একটি ডায়াগনাল স্কেল গঠন কর যার আর, এফ - ১/২৫ এবং এই স্কেলের সাহায্যে ২০ সেন্টিমিটার পাঠ দেখাও ।
স্কেলের দৈর্ঘ্য= ১/২৫দ্ধ ২০ সেমি. = ৮ সেমি.
৮ সেমি. লম্বা একটি সরলরেখা নিয়ে তাকে সমান ৪ ভাগে ভাগ করতে হবে এবং এর বামের একটি ঘরকে সমান ১০ ভাগে ভাগ করতে হবে। প্রদত্ত পাঠ চিত্রে প্রদর্শিত
স্কেলেরআর,এফ:
বাস্তব বস্তুর সাথে তুলনা করে ড্রইং এ অংকিত বস্তুর আকার কেমন হবে তাদ্বারা বুঝার কৌশলকে আর.এফ বলে।
মিটার ও ডেসিমিটার পাঠকরার জন্য ১/৫০ আর, এফ এর একটি প্লেইন স্কেল তৈরি কর এবং এই স্কেলে ৫ মিটার ৪ ডেসিমিটার পাঠ দেখাও
মিটার পাঠ নেয়া যায় এমন একটি প্লেইন স্কেল তৈরি করতে হবে যার স্কেল দৈর্ঘ্য হবে ১৬ সেমি.
সুতরাং ১৬ সেমি. লম্বা একাটি সরলরেখা নিয়ে তাকে সমান ৮৮ ভাগে ভাগ করতে হবে এবং এর বামের একটি ঘরকে সমান ১০ ভাগে ভাগ করতে হবে।
স্কেলের ব্যবহারিক ক্ষেত্ৰ:
১. প্লেইন স্কেল: রৈখিক মাপ যেমন- দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা মাপ নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।
২. ডায়াগনাল স্কেল: ভগ্নাংশের মাপ নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।
৩. ভার্নিয়ার স্কেল: সুক্ষ্ম মাপ নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।
৪. আইসোমেট্রিক স্কেল: আইসোমেট্রিক প্রজেকশন ড্রইং করার আগে অর্থোগ্রাফিক প্রজেকশন ড্রইং করার জন্য আইসোমেট্রিক স্কেল ব্যবহার করা হয়।
৫. কর্ড স্কেল বা স্কেল অব কর্ড: যে কোনো মাপের কোণ পরিমাপ করার জন্য কর্ড স্কেল বা স্কেল অব কর্ড ব্যবহার করা হয়।
অনুন্ধানমূলক কাজ
তোমার প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি যে কোন একটি ড্রাফটিং ওয়ার্কশপ পরিদর্শন কর।
এর কর্মপরিবেশ ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ে নিন্মোক্ত ছকে তোমার মতামত দাও
ড্রইং-এর প্রতীক, পরিমাপ এবং সারফেস ফিনিশ (Drawing symbols, Measurement and Surface Finish)
ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রইং এ মেটেরিয়ালস সিম্বল বা প্রতীক জানা খুবই আবশ্যক ।
১. মেটিরিয়াল সিম্বল বা প্রতীক (Symbols): মূলত সিম্বল বা প্রতীক ব্যবহার করে মেকানিক্যাল, সিভিল, ইলেকট্রিকাল, ইলেকট্রনিক, পাইপ লাইন অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রইং -কে সংক্ষিপ্ত সহজ ও বোধগম্য করার সাংকেতিক চিহ্নকে প্রতীক বা সিম্বল বলা হয়। সিম্বলকে নিম্বরলিখিত ভাগে ভাগ করা হয়েছে
(১) মেটেরিয়াল সিম্বল
(২) লাইন সিম্বল
(৩) গ্রাফিক সিম্বল
(৪) কম্পোনেট সিম্বল
মেটিরিয়াল সিম্বল আবার কয়েক প্রকার । যথা
(১) কনস্ট্রাকশন মেটিরিয়ল সিম্বল
(২) হ্যাজার্ডস মেটিরিয়ল সিম্বল
ড্রইং-এর প্রতীক তালিকা : কন্সট্রাকসন মেটিরিয়ল এবং এর সিম্বল নিচে দেওয়া হয়েছে ।
আরও দেখুন...