টার্কি পালন পদ্ধতি

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | | NCTB BOOK
11
11

টার্কি পালন পদ্ধতি

দুইভাবে টার্কি পালন করা যায়- 

০১. মুক্ত চারণ পালন পদ্ধতি ও 

০২. নিবিড় পালন পদ্ধতি

মুক্ত চারণ পালন পদ্ধতি 

মুক্ত চারণ পদ্ধতিতে এক একর ঘেরা জমিতে ২০০-২৫০টি পূর্ণ বয়স্ক টার্কি পালন করা যায়। রাতে পাখি প্রতি ৩-৪ বর্গফুট হারে জায়গা লাগে। চরে খাওয়ার সময় তাদের শিকারি জীবজন্তুর হাত থেকে বাঁচাতে হবে। ছায়া ও শীতল পরিবেশের জন্য খামারে গাছ রোপণ করতে হবে। চারণভূমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করতে হবে এতে পরজীবির সংক্রমণ কম হয়।

সুবিধা : খাবারের খরচ ৫০ শতাংশ কম হয়; স্বল্প বিনিয়োগ : খরচের তুলনায় লাভের হার বেশি। 

মুক্ত চারণ ব্যবস্থায় খাবার : 

টার্কি খুব ভালোভাবে আবর্জনা খুঁটে খায় বলে এরা কেঁচো, ছোট পোকামাকড়, শামুক, রান্নাঘরের বর্জ্য ও উঁইপোকা খেতে পারে, যাতে প্রচুর প্রোটিন আছে যা খাবারের খরচকে ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এছাড়া শিম জাতীয় পশুখাদ্য যেমন লুসার্ন, ডেসম্যান্থাস, স্টাইলো এসব খাওয়ানো যায়। চরে বেড়ানো পাখিদের পায়ের দুর্বলতা ও খোঁড়া হতে সুস্থ রাখার জন্য খাবারে ঝিনুকের খোসা মিশিয়ে সপ্তাহে ২৫০ গ্রাম হিসেবে ক্যালসিয়াম দিতে হবে। খাবারের খরচ যাতে কম হয় সে জন্য শাক সবজির বর্জ্য অংশ দিয়ে খাবারের ১০ শতাংশ পরিমাণ পূরণ করা যেতে পারে।

স্বাস্থ্য রক্ষা: মুক্তচারণ ব্যবস্থায় পালিত টার্কির অভ্যন্তরীণ (গোল কৃমি) ও বাহ্যিক (ফাউল মাইট) পরজীবি সংক্রমণের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি থাকে। তাই পাখিদের ভালো বিকাশের জন্য মাসে একবার ভিওয়ার্মিং ও ডিপিং করা আবশ্যক ।

 

নিবিড় পালন পদ্ধতি :

বাসস্থান টার্কিদের রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, শিকারি জীবান্ত থেকে বাঁচায় ও আরাম জোগায়। অপেক্ষাকৃত গরম অঞ্চলগুলোতে খামার করলে ঘরগুলো লম্বালম্বি পূর্ব থেকে পশ্চিমে রাখতে হবে। খোলা ঘরের গ্রন্থ ৯ মিটারের বেশি হওয়া চলবে না। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ঘরের উচ্চতা ২.৫ থেকে ৩.৩ মিটারের মধ্যে থাকতে হবে। বৃষ্টির ঝাপটা আটকাতে ঘরের চালা এক মিটার বাড়িয়ে রাখতে হবে। ঘরের মেঝে সা, টেকসই, নিরাপদ ও আর্দ্রতারোধক বন্ধ কংক্রিটের হওয়া বাঞ্ছনীয়। কম বয়সি এবং প্রাপ্ত বয়স্ক পাখির ঘরের মধ্যে অন্তত ৫০ থেকে ১০০ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং পাশাপাশি দুটি ঘরের মধ্যে অন্তত ২০ মিটার দূরত্ব থাকতে হবে। ভিপ লিটার পদ্ধতিতে টার্কি পালনের সাধারণ পরিচালনা ব্যবস্থা মুরগি পালনের মতো, তবে বড় আকারের পাখিটির জন্য যথাযথ বসবাস, ওয়াটারার ও ফিডারের জায়গার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

সুবিধা : 

১। উন্নত উৎপাদন দক্ষতাঃ 

২। উন্নততর পরিচালন ও ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ।

নিবিড় পালন ব্যবস্থার খাদ্যঃ 

নিবিড় পালন ব্যবস্থায় টার্কিকে ম্যাশ ও পেলেট (ট্যাবলেট) দুইভাবেই খাবার দিতে হবে। মুরগির তুলনায় টার্কির শক্তি, প্রোটিন ও খনিজের প্রয়োজন বেশি। সেজন্য টার্কির খাবারে এগুলোর আধিক্য থাকতে হবে। খাবার মাটিতে না দিয়ে ফিডারে দিতে হবে। যেহেতু পুরুষ ও স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শরি (এনার্জি) পরিমাণ আলাদা, ভাই ভালো ফল পাওয়ার জন্য তাদের পৃথকভাবে পালন করতে হবে। টার্কিদের সব সময় অবিরাম পরিষ্কার পানির প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালে ওয়াটারারের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে এবং আপেক্ষতৃক ঠাণ্ডা সময়ে খাবার দিতে হবে। পায়ের দুর্বলতা এড়াতে দিনে ৩০-৪০ গ্রাম হারে ঝিনুকের খোসার গুঁড়া দিতে হবে এবং খাবারে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হলে তা আস্তে আস্তে করতে হবে।

সবুজ খাদ্য : নিবিড় পদ্ধতিতে ড্রাই ম্যাশ হিসাবে মোট খাদ্যের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সবুজ খাবার দেয়া যায় । সব বয়সের টার্কির জন্য টাটকা লুসার্ন (প্রথম শ্রেণীর সবুজ খাদ্য) প্রয়োজন। এছাড়া খাবারের খরচ কম করার জন্য ডেসম্যান্থাস ও স্টাইলো কুচি করে টার্কিদের খাওয়ানো যেতে পারে । 

টার্কির খাবার তালিকা 

টার্কি মুরগির খাবার তালিকা এর পালনের উদ্দেশ্য, ধরণ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। আমাদের দেশে এখনো হাইব্রিড বা জেনেটিক্যালি পটেনশিয়াল টার্কি পালন শুরু হয়নি। তবে বানিজ্যিকভাবে হেরিটেজ টার্কি পালন হচ্ছে এবং টার্কি পালন দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

হেরিটেজ টার্কি আংশিক খোলা পদ্ধতিতে পালন করা লাভজনক। এই পদ্ধতিতে টার্কি পালন করলে খাদ্য খরচ কম হয়। সাধারণত এরা লতা পাতা, ঘাস, কলমি শাক, বাধাকপি, হেলেঞ্চা ইত্যদি শাক খেয়ে থাকে । টার্কির খাবার তালিকার একটি চার্ট নিচে দেয়া হলো। মোট খাদ্যের ২৫% থেকে ৫০% পর্যন্ত দানাদার খাদ্য দেয়া যেতে পারে।

 

টার্কির খাদ্য তালিকা

বানিজ্যিক বা সম্পূর্ন আবদ্ধ পরিবেশে টার্কি পালনে সাধারণত ৩ থেকে ৪ ধরনের খাদ্য দেয়া হয়। এর ফিড ফরমুলেশন পদ্ধতি অনেকটাই ব্রয়লার মুরগির মত। এর পুষ্টিমান নিম্নরুপ ।

 

 

Content added By
Promotion