টেবুলেটিং মেশিন

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | NCTB BOOK

টেবুলেটিং মেশিন হলো একটি প্রাথমিক বৈদ্যুতিক গণনা যন্ত্র যা ১৮৮০-এর দশকে আমেরিকান প্রকৌশলী হারমান হলেরিথ (Herman Hollerith) উদ্ভাবন করেছিলেন। এই যন্ত্রটি মূলত গণনার কাজকে স্বয়ংক্রিয় করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল, বিশেষ করে আদমশুমারি এবং পরিসংখ্যানের কাজের জন্য। টেবুলেটিং মেশিন আধুনিক কম্পিউটার এবং ডেটা প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তির বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

টেবুলেটিং মেশিনের গঠন এবং কার্যপ্রণালী:

  • টেবুলেটিং মেশিনটি একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যা ছিদ্রযুক্ত কার্ড (punched card) ব্যবহার করে ডেটা ইনপুট করত।
  • প্রতিটি কার্ডে ছিদ্র করা হতো, যা নির্দিষ্ট ডেটা প্রতিনিধিত্ব করত, যেমন সংখ্যা, লিঙ্গ, বয়স, বা অন্যান্য পরিসংখ্যান।
  • মেশিনটি এই ছিদ্রযুক্ত কার্ডগুলো স্ক্যান করে বৈদ্যুতিক সংযোগ তৈরি করত এবং সেই অনুযায়ী ডেটা গণনা ও টেবুলেশন করত।
  • মেশিনটি ছিদ্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে ডেটা পড়ত এবং তারপর সেই ডেটা একটি কাউন্টার বা টেবুলেটরে গণনা করে প্রদর্শন করত।

টেবুলেটিং মেশিনের ইতিহাস:

  • হারমান হলেরিথ ১৮৮০-এর দশকে আমেরিকার আদমশুমারির ডেটা দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে গণনা করার জন্য এই যন্ত্রটি তৈরি করেন।
  • ১৮৯০ সালের মার্কিন আদমশুমারিতে টেবুলেটিং মেশিন ব্যবহার করা হয়, যা গণনার সময় এবং খরচ উভয়ই নাটকীয়ভাবে কমিয়ে আনে।
  • হলেরিথ তার উদ্ভাবনকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে ১৮৯৬ সালে Tabulating Machine Company প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে IBM (International Business Machines) নামে পরিচিত হয়।

টেবুলেটিং মেশিনের ব্যবহার:

  • আদমশুমারি: মেশিনটি মূলত আদমশুমারির জন্য তৈরি হয়েছিল এবং এটি ডেটা প্রক্রিয়াকরণকে দ্রুত, নির্ভুল, এবং স্বয়ংক্রিয় করে তোলে।
  • বাণিজ্যিক ডেটা প্রক্রিয়াকরণ: পরবর্তীতে টেবুলেটিং মেশিন কর্পোরেট ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্যও ব্যবহার করা হয়, যেমন হিসাব, পণ্য মজুদ হিসাব, এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক ডেটার বিশ্লেষণ।
  • ব্যাংকিং: ব্যাংকিং সেক্টরে লেনদেনের ডেটা রেকর্ড এবং হিসাব করার জন্যও এটি ব্যবহৃত হতো।

টেবুলেটিং মেশিনের গুরুত্ব:

  • টেবুলেটিং মেশিন ডেটা প্রক্রিয়াকরণ এবং পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বিপ্লবী পরিবর্তন এনেছিল, কারণ এটি ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ার তুলনায় অনেক দ্রুত এবং নির্ভুল ছিল।
  • এটি আধুনিক কম্পিউটার ডেটা প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করে এবং পরবর্তীকালে বৈদ্যুতিক এবং ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • টেবুলেটিং মেশিনের প্রযুক্তি আজকের ডেটা সেন্টার এবং বড় ডেটা প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থার পূর্বসূরি ছিল।

টেবুলেটিং মেশিনের সীমাবদ্ধতা:

  • টেবুলেটিং মেশিন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ধরনের কাজ করতে সক্ষম ছিল, যেমন যোগ এবং সংখ্যা গণনা। এটি জটিল গাণিতিক কাজ বা প্রোগ্রামিংয়ের জন্য উপযোগী ছিল না।
  • ছিদ্রযুক্ত কার্ডের প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে ধীর এবং সময়সাপেক্ষ ছিল, যা ম্যানুয়ালভাবে কার্ডগুলি তৈরি ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করত।
  • এটি ম্যানুয়ালি ইনপুট করা ডেটার ওপর নির্ভরশীল ছিল, যার কারণে ডেটা ত্রুটির সম্ভাবনা থাকত।

টেবুলেটিং মেশিনের উত্তরাধিকার:

  • টেবুলেটিং মেশিন হারমান হলেরিথের উদ্ভাবন এবং এর পরবর্তী বিকাশ আধুনিক কম্পিউটিং এবং ডেটা প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
  • টেবুলেটিং মেশিন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে ইলেকট্রোমেকানিক্যাল কম্পিউটার এবং ডিজিটাল কম্পিউটার উদ্ভাবিত হয়।
  • IBM-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো টেবুলেটিং মেশিনের প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এবং পরবর্তীকালে আরও উন্নত কম্পিউটিং প্রযুক্তি তৈরি করে, যা বর্তমান সময়ের কম্পিউটার প্রযুক্তির ভিত্তি তৈরি করেছে।

টেবুলেটিং মেশিন প্রযুক্তির বিকাশ ডেটা প্রক্রিয়াকরণ এবং গণনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এটি আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

Content added By
Content updated By
Promotion