ড্রাফটিং যন্ত্রপাতির ব্যবহার (Uses of Drawing Tools & Instrument):
ড্রাফটিং কাজে যেসকল যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় তাদের বিবরণসহ ব্যবহার নিচে উল্লেখ করা হলো-
ড্রইং টেবিল (Drawing Table)
ড্রইং টেবিলের উপর ড্রইং বোর্ড রেখে অংকন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত এ ধরণের টেবিল এর উচ্চতা ৩ ফুট এবং টেবিলের উপরিতল সামনের দিকে ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রী কেন্দ্র চালু থাকে।
বোর্ড পিন/কীপ/সেলো টেপ (Board Pin):
বোর্ডে ড্রইং শীট আটকানোর জন্য বোর্ড পিন ব্যবহার করা হয়। এটি বৃদ্ধাঙ্গুলির চাপ দিয়ে বোর্ডের উপর আটকানো হয়। এছাড়া টি স্কয়ার এবং সেট স্কয়ার এর নড়াচড়া বোর্ড পিন বা ক্লিপ দ্বারা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ সকল ক্ষেত্রে ক্ষচ টেপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
ড্রইং বোর্ড (Drawing Board)
ড্রইং বোর্ডের উপর ড্রইং শীটকে আটকে রেখে অংকনজনিত কাজ করা হয়। নির্ধারিত ড্রইং বোর্ডের শ্রেনিবিদ্যাস-এর তালিকা টেবিলের মাধ্যমে দেয়া হলো-
ড্রইং বোর্ড দুই প্রকার। যথা-
১) ফ্লাট ড্রইং বোর্ড (Flat Drawing Board) এবং
২) অ্যাডজাস্ট্যাবল বা সমন্বয়যোগ্য ড্রইং বোর্ড (Adjustable Drawing Board)
১) ফ্লাট ড্রইং বোর্ড:
এই বোর্ডের উপরিভাগ সমতল ও মসৃণভাবে তৈরি। ক্লিপ বা বোর্ড পিন অথবা সেলো টেপ দিয়ে ড্রইং পেপার বোর্ডের উপরিতলে আটকানো হয়। ড্রইং বোর্ড সাধারণত নরম কাঠ যেমন- পাইন, ওক ইত্যাদি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। টি স্কয়ারের ক্রমাগত ঘর্ষনে বোর্ডের পার্শ্বটি বিকৃত ৰা ক্ষতিগ্রস্ত থেকে রক্ষায় বোর্ডের বাম দিকে পুরুত্বের মাঝ বরাবর এবোনাইটের একটি স্লিপ ঢুকানো থাকে যার উপর দিয়ে টি-ক্ষয়ারের স্টকটি সহজে যাতায়াত করতে পারে।
২) অ্যাডজাস্ট্যাবল বা সমন্বয়যোগ্য ড্রইং বোর্ড: এ ধরনের বোর্ডও সাধারনত নরম এবং হালকা ঠ দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। বর্তমানে ড্রইং বোর্ড তৈরিতে প্লাস্টিকের ব্যবহার লক্ষ করা যাচ্ছে। একটি অ্যাডজাস্ট্যাবল ফ্রেমের উপর ড্রইং বোর্ডটি বসানো থাকে। প্রয়োজনে ফ্রেমের উচ্চতা কম বেশী করা যায় এবং সুবিধামতো কোণে বেধে ড্রইং করা যায়। বোর্ডের সাথে ড্রইং শীট আটকানোর জন্য ক্লিপ বা সেলো টেপ ব্যবহার করা হয়।
টি- স্কয়ার (T- Square): টি স্কয়ারকে সংক্ষেপে টি বলে। অংকনের কাজে সমান্তরাল আনুভূমিক সোজা লাইন টানার জন্য ব্যবহৃত হয়। ইহা উৎকৃষ্ট মানের কাঠ দিয়ে তৈরি। দৈর্ঘ্য সাধারণত ২৪ থেকে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। লাইন টানার জন্য ব্যবহৃত কিনারাতে শক্ত কাঠ বা এবোনাইট বসানো থাকে। বর্তমানে প্লাষ্টিকের তৈরি টা ও পাওয়া যায়। টা-এর দুই অংশ আছে।
যেমন- ১) স্টক এবং ব্লেড (চিত্র নং- ২.১১)
সেট স্কয়ার (Set Square)
বাংলায় একে ত্রিকোনী বলে। দুইটি ত্রিকোনা নিয়ে একটি সেট হয়। এর একটি ৩০০-৬০০ এবং অপরটি ৪৫০-৪৫০ কোন বিশিষ্ট। টা স্কয়ার এবং সেট ক্ষয়ার সহযোগে বিভিন্ন প্রকার উলম্ব রেখা, সমান্তরাল রেখা অতি সহজে এবং কম সময়ে টানা যায়।
সেট করার ও টি করার এর সাহায্যে বিভিন্ন কোনে লাইন টানার উপায় নিচের চিত্রে দেখানো হলো-
স্কেল (Scale) :
ইহা কাঠ, স্টীল, প্লাস্টিক, কার্ড বোড ইত্যাদি দ্বারা তৈরি। দৈর্ঘ্য ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। স্কেলের অংকন ইঞ্চি বা মিলিমিটার বা উভয় এককে হতে পারে। রৈখিক মাপ করার কাজে স্কেল ব্যবহার করা হয়।
ডিভাইডার (কাঁটা কম্পাস) (Divider)
বাংলায় একে কাঁটা কম্পাস বলে। এর দুইটি বাহুই সূচালো। এই সূঁচালো বাহুর প্রান্ত দিয়ে বস্তুর মাপ নিয়ে কাগজে বসানো যায়। আবার ড্রইং পেপার থেকে মাপ নিয়ে স্কেলে পড়া যায়। ডিভাইডার- এর গঠন দুই প্রকার। যেমন-
১) সরল ভিভাইভার
২) স্প্রিং ডিভাইডার।
চাঁদা বা প্রটেক্টর (Protactor)
চাঁদা সাধারনত স্বচ্ছ প্লাস্টিক জাতীয় বস্ত্র দ্বারা তৈরি করা হয়। যাতে সরল রেখা ও বিন্দুর সাথে মিলিয়ে দাগ দিতে সুবিধা হয়। চাদাঁটি ০ থেকে ১৮০ তে অঙ্কন করা থাকে। নির্দিষ্ট কোনে সরলরেখা টানতে অথবা নির্দিষ্ট মাপের কোন অংকনের জন্য চাঁদা ব্যবহার করা হয়। নিচের চিত্রে চাঁদা দিয়ে কোন মাপার পদ্ধতি দেখানো হয়েছে
পেনসিল (Pencil)
ড্রইং শীট অস্থায়ী লেখা, লাইন টানা বা জ্যামিতিক অংকনের জন্য পেনসিল ব্যাবহার করা হয়। পেনসিল সীস (Lead) এর গুণ অনুসারে পেনসিলকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-
ক) শক্ত পেনসিল (Hard Pencil, Grade H-6H), বিভিন্ন গ্রেড বা মানের শক্ত পেনসিল বাজারে পাওয়া যায়। সবচেয়ে শক্ত পেনসিল হলো 6H ।
খ) মধ্যম পেনসিল (Medium Pencil, Grade HB), মধ্যম পেনসিলের একটি মাত্র গ্রেড আছে, আর তাহলোHBI
গ) নরম পেনসিল (Soft Pencil, Grade B 6B), 6B হলো সবচেয়ে নরম পেনসিল।
জ্যামিতিক বা ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রইং-এ যে সব রেখা টানা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১) সীমারেখা বা বর্ডার লাইন,
২) কেন্দ্র রেখা বা সেন্টার লাইন ও
৩) ছেদ রেখা বা সেকশন লাইন ।
ঐ ধরনের রেখা টানতে 2H পেনসিল ব্যবহার করা হলো।
অপরদিকে মাগাঙ্করেখা বা ডাইমেনসন লাইন, খালি হাতে নকশা করা, বৃত্ত, বৃত্তচাপ, বর্ষক রেখা বা এক্সটেনসন লাইন, স্ত্রীর মুখ বা অ্যারো হেড তৈরির জন্য সাধারণত 2H পেনসিল ব্যবহার করা হয়।
পেনসিল মুখ তৈরিকরণ: পেনসিল-এর মুখ দুই ভাবে তৈরি করা হয়। যেমন-
১) কোনাকৃতি (Conepointed)
২) চেপ্টাকৃতি (Chisel Pointed)
ডায়াগনাল স্কেল (Diagonal Scale)
সুক্ষ মাপ নেওয়ার কাজে ডায়াগনাল স্কেল ব্যবহার করা হয়। এ স্কেলে এক ইঞ্চি সম্মুখ দিকে কর্ড স্কেল এবং পশ্চাৎ ভাগে এর একশো তিন ভাগ পর্যন্ত মাপ নেওয়া উপযোগী ডায়াগনাল নীতিতে বিভাগ রেখা দেওয়া থাকে। খাঁড়া দিকের বিন্দুগুলো থেকে সমান্তরাল রেখা টানলে একটি ডায়াগনাল স্কেল তৈরি হবে। চিত্রে ডায়াগনাল ক্ষেল দেখানো হলো।
বো পেনসিল (Bow pencil)
বো পেনসিল এর অপর নাম কম্পাস। এর একটি পা সরু ও অপর পায়ে পেনসিল ধারনের ব্যবস্থা আছে। পা দ্বয়ের অপর প্রান্তগুলো একসাথে রিভেট বা স্প্রিং দ্বারা সংযুক্ত। বৃত্ত বা বৃত্তচাপ অংকনের কাজে বো পেনসিল ব্যবহার হয়ে থাকে। নিচের চিত্রে একটি পেনসিল কম্পাস দেখানো হলো।
লীড পেন্সিল (Lcad Pencil)
রি-ফীল সীস ব্যবহার করা যায় এমন কলমকে স্টাইলাস বলে কলমের মাথায় অবস্থিত বোতামে চাপ দিলে সীস বের হয়ে আসে। এই সীসের ব্যাস অপেক্ষাকৃত কম থাকে ফলে সাধারন পেনসিলের মতো বারবার মুখ তীক্ষ্ণ করার প্রয়োজন হয় না ।
স্টেনসিল (Stencil):
ইংরেজী ছোট বড় অর এবং সংখ্যার মতো ফাঁক বিশিষ্ট প্লাস্টিকের ছাঁচকে স্টেনসিল বলে। লেটারিং করার কাজে স্টেনসিল ব্যবহার করা হয়।
টেমপ্লেট (Tamplate)
পাতলা প্লাস্টিক কেটে তৈরী বিভিন্ন মাপের বৃত্ত, ও বহুভূজের পাত বিশেষ। এ দিয়ে অতি সহজে বৃত্ত, উপবৃত্ত ইত্যাদি অংকন করা যায়।
আরও দেখুন...