ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। তিনি সর্বশক্তিমান। অসীম তাঁর ক্ষমতা। অশেষ তাঁর গুণ। তাঁর কোনো আকার নেই। তিনি নিরাকার। তবে তিনি যে কোনো আকার বা রূপ ধারণ করতে পারেন। তিনি তাঁর কোনো গুণ বা ক্ষমতাকে যে কোনো রূপে প্রকাশ করতে পারেন। আবার সাধকেরা তাঁর কোনো গুণকে রূপ দেন। এভাবে ঈশ্বরের কোনো গুণ বা শক্তি আকার পায়। রূপ পায়। এই আকার পাওয়াকে দেব-দেবী বলে। দেব-দেবী ঈশ্বরের সাকার রূপ। দেব-দেবীর শক্তি ঈশ্বরেরই শক্তি। দেব-দেবীর মধ্য দিয়েই ঈশ্বরের শক্তির প্রকাশ ঘটে। দেব-দেবী অনেক। যেমন- ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, দুর্গা, কালী, সরস্বতী, লক্ষ্মী, মনসা, কার্তিক, গণেশ প্রভৃতি। ঈশ্বর যে রূপে সৃষ্টি করেন, তাঁর নাম ব্রহ্মা। যে রূপে পালন করেন, তাঁর নাম বিষ্ণু। যে রূপে ধ্বংস করেন, তাঁর নাম শিব। দুর্গা শক্তির দেবী। সরস্বতী বিদ্যার দেবী। লক্ষ্মী ধন-সম্পদের দেবী।
শিব
ঈশ্বর যে দেবতারূপে সংহার বা ধ্বংস করেন, তাঁর নাম শিব। শিব মঙ্গলের দেবতা। মঙ্গলের জন্য তিনি। সকল অশুভকে ধ্বংস করেন। ধ্বংস করে তিনি জগতের ভারসাম্য রক্ষা করেন। তাঁর অনেক নাম- মহেশ্বর, মহাদেব, ভোলানাথ, নটরাজ ইত্যাদি।
শিবের গায়ের রং তুষারের মতো সাদা। তাঁর মাথায় জটা। তাঁর তিনটি চোখ। একটি চোখ কপালের মাঝখানে। কপালের উপরের দিকে বাঁকা চাঁদ। তাঁর দুটি বাদ্যযন্ত্র- ডমরু ও শিঙ্গা। ত্রিশূল তাঁর প্রধান অস্ত্র। তিনি বাঘের চামড়া পরিধান করেন। তাঁর বাহন হচ্ছে ষাঁড়।
যে কোনো সময়ে শিবের পূজা করা যায়। তবে বিশেষভাবে বিশেষ দিনে শিবপূজা করা হয়। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবপূজা হয়। এই তিথিকে শিবচতুর্দশী বলা হয়। এই রাত্রিকে বলা হয় শিবরাত্রি। শিবের উপাসকেরা শৈব নামে পরিচিত। শিবের পূজা করলে অশুভ ধ্বংস হয়। মঙ্গল হয়।
সরলার্থ: তিন কারণের (সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশের) হেতু শান্ত শিবকে নমস্কার। হে পরমেশ্বর, তুমিই গতি। তোমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করি।
দুর্গা শক্তির দেবী। সকল শক্তির মিলিত রূপ দুর্গা। দুর্গম নামে এক অসুরকে তিনি বধ করেন। এজন্য তাঁর নাম দুর্গা। তিনি জীবের দুর্গতি নাশ করেন। তাই তাঁকে দুর্গতিনাশিনীও বলা হয়। তাঁর অনেক
নাম- মহামায়া, ভগবতী, চণ্ডী, কালী ইত্যাদি। অতসী ফুলের মতো দুর্গার গায়ের রং। পূর্ণিমার চাঁদের মতো সুন্দর তাঁর মুখ। তাঁর তিনটি চোখ। এজন্য তাঁকে ত্রিনয়না বলা হয়। একটি চোখ কপালের মাঝখানে। তাঁর মাথার একপাশে বাঁকা চাঁদ। দেবী দুর্গার দশ হাত। এজন্য তাঁর আর এক নাম দশভুজা। দশ হাতে থাকে দশটি অস্ত্র। এই অস্ত্র শক্তির প্রতীক। তাঁর বাহন সিংহ।
ধর্মগ্রন্থ 'শ্রীশ্রীচণ্ডী'তে দেবী দুর্গার কাহিনি ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। সেখান থেকে জানা যায়, দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন। তাই তাঁর এক নাম মহিষাসুরমর্দিনী। তিনি আরও অনেক অসুরকে বধ করেন।
দুর্গাকে সর্বমঙ্গলা বলা হয়। কারণ তিনি সকল প্রকার মঙ্গল করেন। তিনি আমাদের শক্তি দেন। সাহস দেন। তিনি সকল দুঃখ-কষ্ট থেকে পরিত্রাণ করেন। দুর্গানাম স্মরণ করলে সকল বিপদ দূর হয়। 'দুর্গা দুর্গা' বলে যাত্রা করলে যাত্রা শুভ হয়। শরৎকালে দুর্গাপূজা হয়। এজন্য দুর্গাপূজাকে শারদীয় পূজা বলা হয়। বসন্তকালেও দুর্গাপূজা হয়। একে বাসন্তীপূজা বলা হয়। দুর্গাপূজায় শ্রীশ্রীচণ্ডী পাঠ করা হয়।
আরও দেখুন...